মিঠা প্রেম পর্ব-০৭

0
649

#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৭
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

রাত প্রায় তিনিটা।ঘুম ঘুম চোখে নিউজফিড স্ক্রোল করছে আনান।হঠাৎই হোয়াটসঅ্যাপে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ আসে।

” আমি আপনাকে গ্রহণ করিলাম।”

আননোওন নাম্বার থেকে এমন মেসেজ যে কারও মনে সন্দেহ সৃষ্টি করতে বাধ্য।আনান কিছুক্ষণ মেসেজটার দিকে তাকিয়ে থাকে।বক্ষে সাহস সঞ্চয় করে মেসেজ টাইপ করে।

” দুঃখিত।আপনাকে চিনতে পারছি না।”

” প্রেয়সীকে এত তাড়াতাড়িই ভুলে গেলেন।আপনি প্রিয় হিসেবে বড্ড বেমানান মশাই।”

এই মেসেজ সীন করা মাত্রই আনান এক লাফে উঠে দাঁড়ায়।মেঝেতে ধপ করে আওয়াজ হয়।চোখ কচলাতে কচলাতে তুষার ঘুম থেকে উঠে।

” কি হয়েছে রে আনান?”

” কিছু না তুই ঘুমা।”

জীর্ণশীর্ণ তালি দেওয়া ছেড়া কাঁথাটা দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে পরে তুষার।আনান কাঁপা হাতে মেসেজ টাইপ করে,,,,

” ভুল যদি না করি তাহলে আপনি আমার জুঁই ফুল।”

” যতটা মাথামোটা ভেবেছিলাম অতটাও মাথামোটা নন আপনি।”

” সপ্তাহ দুয়েকের মতো হয়ে গেলো।ভেবেছিলাম আমি হয়তো ব্যর্থ।যেহেতু আমার কপালে সব সময় ইই শনি লেগে থাকে।তাছাড়া আননোওন নাম্বার থেকে এমন মেসেজ আসলে একটু তো খটকা লাগেই।”

” সেভ করে নিন নাম্বার।না হলে পরবর্তীতেও আননোওন লাগবে।”

” আপনি বলার আগেই সেভ করে নিয়েছি।”

” কোন ইয়ারে পড়েন?”

” ফাইনাল ইয়ারে।তারপরে পুলিশের এসআই পোস্টের জন্য আবেদন করবো।ওই ভদ্রলোক আর নামমাত্র মায়ের ঘাড়ে বসে খেতে আর ভাল্লাগে না।”

” মা থেকেও এমন করছেন?আমার যদি মা থাকতো আমি মাথায় করে রাখতাম তাকে।”

” যে যা ডিজার্ভ করে।”

” বুঝলাম আপনি অনেক পাষাণ।”

” সেই পাষাণের হৃদয়েই আপনি প্রেমের বর্ষণ এনেছেন।”

” এসব কথা বলে লজ্জা দিবেন না।”

” আপনাকে বাইরে থেকে দেখে প্রথম দিকে আচার-আচরণে রসকষহীন মানুষ মনে হলেও আপনি ভালোই রসিক আছেন।”

” পৃথিবীটা স্বার্থপরতার সাম্রাজ্য।এখানে ভালো থাকতে হলে কঠিন হতেই হয়।”

জুঁই মেসেজ দেয়।কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো রিপ্লাই আসে না।ফোনের ওপরের স্ক্রিনে চেয়ে দেখে চারটার মতো বাজে।হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে আনান।জুঁইও ডাটা অফ করে চোখ বুজে।

_____💗

দেখতে দেখতে শালিকের এসএসএসির রেজাল্ট প্রকাশিত হয়।চার দশমিক সাত পাঁচ পেয়ে সে উত্তীর্ণ হয়।বিভাগ আর সে পরিবর্তন করে না।কলেজে বিজ্ঞান বিভাগেই সে ভর্তি হয়।আহান এখন শালিকের কলেজের সিনিয়র।আজ নবীন বরণ। আহান এক প্রকার জোর করেই শালিককে অডিটোরিয়াম থেকে ল্যাবের পাশের রুমটায় নিয়ে যায়।

” কি হয়েছে ভাইয়া?এভাবে আনলে যে!”

” জরুরী কথা আছে তোর সাথে।”

” কী কথা?”

আহান পাঞ্জাবীর ডান পকেট থেকে ফোন বের করে।হোম স্ক্রিন আর লক স্ক্রিনের ওয়াল পেপারে নিজের ছবি দেখে হতভম্ব হয় শালিক।

” গত চার বছর ধরে তোর ছবি আমার ফোনে ওয়াল পেপারে আছে।”

শালিক কিছু বলে না। বোকা বোকা চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে থাকে।অবাক কন্ঠে বলে,,,

” আমার ছবি তোমার ওয়াল পেপারের ফোনে?”

” শুধু ওয়াল পেপার নয়!”

কথাটা বলে ওয়ালেট বের করে আহান।ওয়ালেট খুলেও শালিক নিজের ছবি দেখতে পায়।মুখ শুকিয়ে যায় শালিকের।

” আমার প্রতি তোমার এতই ক্ষোপ যে আমার ছবি তুমি তোমার মানিব্যাগে রাখো আবার সেই মানিব্যাগ বামে রেখে ঘুরো!”

শালিক বোকা বোকা কথায় আহান কপাল চাপড়ায়।একটা মানুষ এতটা মাথামোটা হয় কি করে।মনটা চাচ্ছে অনন্ত জলিলের মতো হৃদপিন্ডটা বের করে শালিককে দেখাতে।যে হৃদপিন্ড কি বলে। কিন্তু তা তো আর সম্ভব নয়।মুখ ফুটে বলতেই হচ্ছে ভেতরের কথাটা।

” শোন।আমি তোকে ভালোবাসি আর সেটা অনেক দিন ধরেই।”

” ভালোবাসা বলে পৃথিবীতে কোনো কিছু। সব মরিচীকা।আর ব্যাডা মানুষের জাত খারাপ।”

” আসছে বাপ্পারাজ বেডি ভার্সন।তুমি খারাপ ব্যাডার সাথে প্রেম করে ধরা খাবা আর পুরো দোষ জাতটার ওপর দিবা?বললেই হলো?”

শালিক ভেংচি কাটে।আহান কড়া গলায় বলে,,,

” আগে গার্লসে পড়তি অত ভয় ছিলো না।তারপরও একটা ছোটখাটো অঘটন করেছিস।এখন ছেলেদের সাথে পড়তে হবে সাবধানে থাকবি।”

” থাকলাম না।তো কি হলো?”

জেদি গলায় বলে শালিক।আহান তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।

” কাজী অফিসে তুলে নিয়ে বিয়ে করে নিবো।”

” তুই মানিস বা না মানিস।শালিক শুধু আহানের।”

” আমি মানলাম না।শালিক কারও না।শালিক সিঙ্গেল ফরএভার।”

” থাকতে দিলে তো। আর তোর মানা না মানায় আমার কিচ্ছু যায় আসে না।”

কথাটা বলেই আহান চলে যায়।শালিক হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।ছেলেটা ভীষণ রকমের অদ্ভুত।আহানকে রহস্যের বিশাল ভান্ডার লাগে শালিকের কাছে।অথচ সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের রহস্য নিয়ে সৃষ্টি করেছেন। শালিক ছোটবেলায় আহানকে বউ সাজাতো তাই মনে হয় এই গুণটা পেয়েছে।শালিক মুখ টিপে হাসে।আহান তখনও যায় নি।পেছন না ঘুরেই সামনে থেকে বলে,,,

” ওইটার প্রতিশোধ নিতেই বিয়ে করবো।মনের ভিতর সফট কর্ণার আছে বলে ভাবিস না যা মন চায় তাই করবি।”

শালিক অবাক হয়ে যায়।দৌড়ে আহানের কাছে যায়।অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,,,

” তুমি মনের খবর জানলে কি করে?”

” ভালোবাসি যে।”

” আমিও তো তামিমকে ভালোবাসতাম।তাহলে কেন আমি বুঝতে পারি নি ওর ভালোবাসা মিথ্যে?”

” কারণ তুই মাথা*মোটা।”

” আমায় এভাবে অপমান করে তুমি কি পাও?”

” স্বর্গসুখ। ”

আহান চালু করে হাঁটা লাগায়।কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর থেমে যায়।পিছিয়ে আবার শালিকের কাছে আসে।শিষ দিয়ে বলে,,,

” নীল পাড়ের উজ্জ্বল সবুজ রঙের শাড়িতে তোকে মন্দ লাগছে না।”

” লাগার কথাও না।পরীকে কখনো অসুন্দর লাগে?”

” জীবনে ভাই এই লেভেলের ইই কনফিডেন্স দরকার।”

কথাটা বলে আহান চলে যায়।শালিকও অডিটোরিয়ামের দিকে পা বাড়ায়।

________💗

উত্তরা দিয়াবাড়ির লেকের পাশের ফুডকোর্টে বসে আছে আনান আর জুঁই।মিনিট পনেরোর মতো হলো চিকেন মাশালা অর্ডার দিয়েছে।হতে সময় লাগবে।এরই মধ্যে কুচকুচে কালো রঙের একটা হুলো বিড়াল এসে জুঁইয়ের পা ঘেষতে থাকে।জুঁই দেরি করে না।ধপ করে বিড়ালটাকে কোলে তুলে নেয়।আনান নাক সিটকোয়।সে আবার বিড়াল সহ্য করতে পায় না।

” এভাবে রাস্তার বিড়ালকে কোলে তুলে নেওয়ার মানে হয় জুঁই?”

” গায়ে ময়লা দেখে এভাবে নাক সিটকোচ্ছো?হতে পারে ওর গায়ে ময়লা কিন্তু মনটা পরিষ্কার নির্ভেজাল।মানুষের মতো নয়। তুমি আদর করবে?করো না!”

কথাটা বলে জুঁই আনানের হাত ধরে।জোর করে আনানের হাত দিয়ে আদর করায়।আনান ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।আনানের অবস্থা থেকে জুঁই ফিক করে হেসে দেয়।

” তোমার চোখে মুখে তো ভয়ের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।বিড়ালে কেউ ভয় পায়?”

আনান কিছু বলে না।খাবার চলে আসে।ব্যাগ থেকে স্যানিটাইজার বের করে জুঁই হাত পরিষ্কার করে আনানকে দেয়।আনানও হাত পরিষ্কার করে নেয়।জুঁই বিড়ালকে খাবার দেয়।আনান বলে,,,

” অর্ডার করলাম আমার বিড়ালের জন্য আর খাচ্ছে আরেক বিড়াল।”

” তোমার বিড়ালও খাবে।”

হেসে বলে জুঁই।আনানও হাসে।খাওয়া শেষ করে দুজন বেরিয়ে যায়।ফুডকোর্টের এদিকে কাঁচা রাস্তা থাকায় খালি রিক্সা খুব একটা আসে না।অগত্যা হেঁটেই দুজন স্টেশনের দিকে রওনা দেয়।জুঁই থাকে মিরপুর দশে।আর আনান আগারগাঁও। লাস্ট স্টেশন।দুই জায়গায় ইই মেট্রোরেলে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে।রাত আটটা পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু থাকে।আনান জুঁই উত্তরা সেন্টার স্টেশনে যায়।পুরো স্টেশন ফাঁকা৷ অথচ অন্যান্য স্টেশনে মানুষের জন্য টেকা দ্বায়।এত ভীড় হয়! উত্তরার এদিকে সুযোগ সুবিধা কম থাকায় মানুষ খুব একটা আসতে চায় না।১৮নং সেক্টরে যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা থাকার পরও অনেকেই চলে যাচ্ছে।বাজারঘাট, বাচ্চাদের স্কুল কলেজে সমস্যা হয়।যদিও একটি সুপারশোপ আছে।কিন্তু সেখানে মাত্রাতিরিক্ত দান যা মধ্যবিত্তের হাতের নাগালের বাইরে।আনান প্রথমে বন্ধুদের সাথে এখানে উঠলেও পরবর্তীতে হলে সিট পাওয়ায় সে হলেই চলে যায়।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে