#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পর্ব৫
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে দুদিন হলো।প্র্যাক্টিক্যাল এখনো বাকী।আগে থেকেই শালিক সেগুলো গুছিয়ে রেখেছিলো বিধায় অলস সময় পার করতে হচ্ছে শালিককে।একে তো প্রচন্ড গরম তার ওপর লোড শেডিং।বিরক্ত হয়ে বারান্দায় বেরিয়ে আসে শালিক।গাছ গুলোও কেমন যেন নেতিয়ে পরেছে।নিচে রাখা কোকাকোলার খালি বোতলটা নিয়ে বেসিন থেকে পানি ভরে আনে শালিক। গাছে পানি স্প্রে করতে গিয়ে আহানের বাইকের মতো বাইক দিয়ে ক্যাপ পরা এক তরুণকে যেতে দেখে শালিক।প্রথমে আহান ভাবলেও পরে মনের ভুল ধরে উড়িয়ে দেয় বিষয়টাকে।এক ইই বাইক তো অনেক জনের ইই থাকতে পারে।আর আহান তো ক্যাপ পরে না।
শালিকের ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই কলিংবেলের আওয়াজ হয়।শালিক গিয়ে দরজা খুলে আহানকে দেখতে পায়।ক্যাপ পরা অবস্থায় ইই। তাহলে আহানকে চিনতে শালিকের ভুল হয় নি।আহান ভেতর ঢুকে।
” হঠাৎ এতদিন পর?”
” আমার মামাবাড়ি আমি যখন খুশী আসবো তোকে এর কৈফিয়ত দিতে হবে?”
ভাবলেসহীন উত্তর দেয় আহান।শালিক কিছু বলে না।আহান সোফায় গিয়ে বসে,,,,
” মামী কই?”
” রান্নাঘরে।”
” আর বুড়ি?”
” ঘুমায়।”
আহান ফোন নিয়ে বসে।শালিক আর কথা বলে না।সাড়ে তিনটা বাজে এখনো শালিকের গোসল করা হয়ে উঠেনি।রান্নাঘর থেকে মিসেস শান্তা বকছেন।মাথা ধরেছিলো।সেই যে একটা ঘুম দিয়েছিলো শালিক।লোডশেডিং না হলে মনে হয় না ঘুম ভাঙতো।শালিক গোসলে যায়।যাওয়ার আগ দিয়ে মিসেস শান্তাকে আহানের আসার আর গোসল থেকে বের হয়ে চা খাওয়ার কথা বলে যায়।
প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে শালিক গোসল করে।এই ভ্যাবসা গরমে পানির সংস্পর্শে আসলে আর ছাড়তে মন চায় না।শালিক ওয়াশরুমে থাকতেই মিসেস শান্তা বলে গেছেন সে একটু পাশের বাসায় যাচ্ছেন।ভাবী ডেকেছে।চা তিনি মগে ঢেলে টেবিলে রেখে গেছেন।
শালিক গোসল করে ভেজা কাপড় গুলো বারান্দায় মেলে দিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।আকাশ ধুসোর কালো মেঘে ছেয়ে গেছে।ঠান্ডা বাতাস বইছে।কারেন্ট আছে তারপরও ঘরে যেতে মন চাইছে না শালিকের।কিরকম যেন গরম ঘরটা।আহান সোফায় বসে খেলা দেখছে। হঠাৎ ওর চোখ যায় টেবিলে রাখা দোয়া ওঠা মগে।পাগলিটা এখনো চা নেয় নি।শরবত হলে খাবে নাকি চা টা?
” শালিক?চা টা নে।”
কোনো উত্তর আসে না।শালিকও আসে না। সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় তন্ময়। টেবিল থেকে চায়ের মগটা নিয়ে শালিকের দিকে এগোয়।শালিকের লম্বা কালো চুল গুলো ভেজা।টপ টপ করে পানি পরছে।মেয়েরা যদি জানতো তাদের ভেজা চুলে কতটা মায়াবী লাগে তাহল্ব হয়তো সব সময় চুল ভিজিয়ে রাখতো।আহান অশান্ত দৃষ্টি ফিরায়। চায়ের মগটা এগিয়ে দিয়ে বলে,,,
” ধর মগটা। এখন না খেলে কিছুক্ষণ পর শরবত হয়ে যাবে।”
শালিক পিছন ফিরে তাকায়।চায়ের মগ হাতে নেওয়ার পূর্বেই বিদ্যুৎ চলে যায়।আকাশ ফেটে আলোর ঝংকার দিয়ে বজ্রপাত ঘটে।শীতল বাতাসের সঙ্গে আসছে বৃষ্টির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা।শালিক আঁৎকে উঠে। অস্পষ্ট গলায় বলে,,,,
” আহি ভাইয়া।”
” আছি আমি।ভয় পাস না।”
আস্বস্ত করে বলে আহান।শালিক পিছিয়ে যায়।তৎক্ষনাৎ তার পিঠ গিয়ে ঠেকে আহানের প্রসস্থ বুকে।লম্বা ভেজা চুলের শীতল স্পর্শে ঠান্ডা হয়ে যায় আহানের বুক।ভিজে যায় আহানের টি শার্ট।আহান পুনরায় মগটা এগিয়ে দেয়।
” চা টা নে।”
শালিক চায়ের মগ নেয়।আহান পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালায়।শালিক নিজেকে আহানের প্রসস্থ বুকের মধ্যে আবিষ্কার করে।লজ্জায় সে তৎক্ষনাৎ সরে দাঁড়ায়।আহান নীরব হাসি দিয়ে বলে,,,,
” সরলি যে?খারাপ লাগছিলো বুঝি?”
” নাহ এমনি।তোমার শার্ট ভিজে গেছে।সাদ ভাইয়ার আলমিরা থেকে একটা বের করে এনে পরতে পারবো।”
” তার আর দরকার হবে নাহ।”
” কেন?”
” সেটা তুই বুঝবি না। মাথামোটা যে।”
শালিক কিছু বলে না।সে জানে কিছু বললেই আহান তাকে ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলবে।অপমান করবে।নিজের ভালো তো পাগলও বুঝে সেখানে শালিক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ।
______💗
আনান সাধারণ রেস্ট্রুরেন্টে কম যায়। কিন্তু জুঁইয়ের জন্য প্রতিদিন আনান কফি খাওয়ার জন্য হলেও এই রেস্ট্রুরেন্টে আসে।কিন্তু জুঁইয়ের দেখা আর পায় না।সাত-আট মাস এভাবেই চলে যায় আনানের।পড়াশোনা কাজকর্ম কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে পারছে না।সামনেই ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা।আহান জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে পড়ায় মন দেওয়ার কিন্তু বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। জৈষ্ঠের খড়ায় হঠাৎ প্রেমের শীতল ঝড়ো হাওয়া জুঁই।আর সেই ঝড়ো হাওয়াকে পাগলের মতো খোঁজছে আনান।ছোট থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা আনান কিভাবে যেন প্রেয়সীকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে।
আনান সোমবারকে কুফা মনে করে।কারণ এই বারেই আনান পৃথিবীতে আসে।এই বারেই সে বাবাহারা হয় আর এইবারেই তার মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন।কিভাবে যেন আনানের জীবনের সবচে খারাপ মুহুর্ত গুলো এই বারকেই ঘিরে থাকে।বাংলা ব্যকরণে একটি প্রচলিত কথা আছে। ❝মেঘ দেখে করিস নে ভয়।আড়ালে তার সূর্য হাসে।❞
অবশেষে আনানের জীবনে কালো মেঘ কেটে যায়।বৃষ্টির পরে জ্বলমলে রোদের মিষ্টি স্নিগ্ধ আলোর মতো করে জুঁইয়ের দেখা পায় আনান।সৌভাগ্য ক্রমে আনানের অর্ডার নিয়ে জুঁই ইই আসে।অবশেষে ওপর ওয়ালা আনানের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন।অবশেষে।
” স্কিউজমি ম্যাম।”
” ইয়েস স্যার।হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?”
” একচুয়ালি আই হ্যাভ সামথিং টু টেল ইউ।এক কাপ কফি খাওয়া যাবে আমার সাথে?”
আনানের কথা শুনে জুঁইয়ের মনে সন্দেহ জাগে।কি এমন কথা আছে ছেলেটার।কফি খাওয়ারও রিকুয়েষ্ট করছে আবার।ঘাবলা তো কিছু আছেই।কৃত্রিম একটা হাসি দিয়ে বলে,,,
” সরি স্যার আমার ডিউটি আওয়ার চলছে।”
” ফ্রী পাবো কখন বা কবে আপনাকে?”
” কথাটা বলা কি খুব আর্জেন্ট?”
” জ্বী।”
” আর ঘন্টা দুয়েক পরে ফ্রী পাবেন ইনশাআল্লাহ।”
” জ্বী ধন্যবাদ। ”
” মোস্ট ওয়েল্কাম।”
_______💗
প্র্যাক্টিক্যাল খাতাগুলো সাইন করে ফেরার পথে আহানকে দেখতে পায় শালিক।বেশ কিছুদিন ধরেই শালিক খেয়াল করছে আহান ক্যাপ পরছে মাথায়।কেন যেন শালিকের মনে হচ্ছে আহান তার চুলের কিছু একটা করেছে।জানে শালিক এ সম্পর্কে আহানকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে আহান তাকে ধমক দিবে।তাও সে আহানকে জিজ্ঞাসা করবে।নিজে নিজেই বিরবির করে বলে,,
” রিস্ক হ্যেয় তো ইস্ক হ্যেয়।”
বুক ভরে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে আহানের কাছে যায় শালিক।
” ভাইয়া!”
শালিকের ডাক শুনে আহান ওর দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকায়।গম্ভীর গলায় বলে,,,,
” কিছু বলবি?”
” হু অনেক কিছু বলবো।”
” বল।”
” তুমি ক্যাপ পরছো যে ইদানীং। ”
” তোর জেনে লাভ কি?মাই লাইফ মাই রুলস মাই মুড।”
” & শালিক্স কোয়েশ্চেন। ”
” গিলে খেয়ে ফেল।আমি বলবো না।”
” বললে কি হবে?”
” বললাম না আমার মর্জি।”
” নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের কৌতুহল থাকে বেশি।”
” তোর কৌতুহলে আমার কিছু যায় আসে না।”
” ওকে ফাইন।”
কথাটা বলে শালিক রাস্তায় বসে পরে।আহান থতমত খেয়ে যায়।ঘরে এমন করে মানা যায় কিন্তু রাস্তাঘাটে।শালিকের আচরণে আহানের বন্ধুরা মুখ টিপে হাসতে লাগে।আহান বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে।
” আচ্ছা ওঠ বলছি।”
” সত্যিই বলবে তো?”
” তোর কসম।”
শালিক আহানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়।আহান শালিককে নিয়ে দূরে সরে আসে একটু।বাচ্চা বাচ্চা চাহনিতে তাকায় আহান শালিকের দিকে।আস্তে করে বলে,,,
” কাওকে বলবি না তো?”
” না।”
আহান আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নেয়।তারপর ক্যাপ খুলে।ক্যাপ খোলায় শালিক যে আহানকে দেখতে পায় তারজন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।একটা চুলও যদি থাকে আহানের মাথায়।চোখ বড় বড় করে বলে,,,
” কে করলো তোমার এই সর্বনাশ?”
” আমি নিজেই।”
” তুমি?”
” হু আমিই।আম্মু চুল ছোট করতে বলছিলো।শা*লা নাপিত চুলের এমন সর্বনাশ করেছে শেষে রাগের…..
” রাগের চোটে তুমি তোমার সব চুল ট্রিমার দিয়ে ফেলে দিয়েছো।তাই তো?”
আহান হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ায়।শালিক আর হাসি আটকে রাখতে পারে না।ফিক করে হেসে দেয়।হাসতে হাসতে বলে,,,
” তুমি তো কালো আছো ভাইয়া।এখন একটা ইয়ায়া বড় ভুড়ি হলেই মানুষ ভাববে তুমি সরকারি চাকরিজীবি।তখন সুন্দরীর বাপেরা তোমার পিছন ঘুরবে।”
” ফাজলামো করিস না তুইও কিন্তু এইটে থাকতে নিজের আইভ্রু ভ্যানিস করেছিলি।”
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ