মা ২য় পর্ব (অন্তিম)

0
1127

মা ২য় পর্ব (অন্তিম)
..
..
একটু পর টেকনিশিয়ান নূরের ফোন আসলো। সে তাড়াহুড়োর মধ্যে স্টিফেনকে হেডকোয়ার্টারে আসতে বললো।
স্টিফেন হেড কোয়ার্টারে পৌঁছালো। নূরের কেভিনে গিয়ে দেখলো সে ল্যাপটপে কিছু একটা পড়ছে। স্টিফেন বললো,
— এতো তাড়াহুড়ো করে কেনো ডাকলে?
.
~ স্যার, মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রীর মাথায় যে ত্রিকোণাকার চিহ্নটি দেখতে পেয়েছিলেন। সেই চিহ্নটির পুরো কুন্ডলি বের করে ফেলেছি।
.
— তুমি যেনে অবাক হবে, একটু আগে মিনিস্টার সাহেবের বাসায় তার বড় ভাবীর লাশ পাওয়া গিয়েছে। আর সেই লাশের মাথায়ও সেইম চিহ্নটি ছিলো।
.
~ হোয়াট! এর মানে আমি যা এতক্ষণ পড়েছি, সবই তো মিলছে।
.
— কি পড়েছো এতক্ষণ?
.
~ স্যার চিহ্নটি, অর্থাৎ ডেভিল ট্রায়াংগেলটি সম্পর্কে অনেক তথ্য পেয়েছি।
.
— কেমন তথ্য?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



~ স্যার, এটি কোনো নরমাল ডেভিল ট্রায়াংগেল না। এটি ব্ল্যাক ম্যাজিক থেকে অনেকটা আলাদা। এই চিহ্নটির নাম ডেভিল’স মম্। ডেভিল’স মম্ একটা জাতের মতো। এই জাতের লোকেরা ডেভিল’স মম্ নামক দেবীর উপাসনা করে। এই জাতীর প্রধান ধর্মীয় চিহ্ন হলো এই ত্রিকোণাকার চিহ্নটি। এটি খুব পুরোনো একটি ধর্ম। একসময় এই ধর্মের খুব প্রচলন ছিলো, বিশেষ করে আমেরিকা এবং কানাডায়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই ধর্ম এবং এই ধর্মের লোক প্রায় বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু এখনো আমেরিকার কিছু ক্ষুদ্র এলাকায় এ ধর্মের চর্চা হয়। এ ধর্মের মানুষেরা বেশ উগ্রবাদী। তারা মানুষ হত্যা করে ডেভিল’স মম্ কে খুশি করতে। এই ধর্মে ১৭ সংখ্যাটিকে খুব শুভ সংখ্যা মানা হয়। কারন তারা বিশ্বাস করে যে ১৭ তারিখেই নাকি তাদের দেবী, অর্থাৎ ডেভিল’স মম্ তার পুত্র ডেভিলকে গর্বে ধারণ করেছিলেন। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের জিনিস যা যেনে অবাক হবেন তা হলো, মার্চ মাসের ১৭ তারিখই ডেভিলকে গর্বে ধারণ করেছিলো তাদের দেবী। মার্চের ১৭ তারিখ তারা এক অদ্ভুদ পূজা করে। এই দিনে নাকি যেসব মহিলাদের বাচ্চা হয়না তারা ডেভিল’স মম্ কে একটি নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন করে খুশি করতে পারলেই নাকি ডেভিল’স মম্ এর আশির্বাদে তাদের গর্বে সন্তান এসে যায়
.
— আর সেই নির্দিষ্ট কাজটি কি?
.
~ নয়শ নব্বই বাচ্চার মা’কে খুন করে, তাদের কপালে ত্রিকোণাকার চিহ্নটি একে কপালের রক্ত এনে ডেভিল’স মম্ এর চরণে ফেলতে পারলেই নাকি কাজটি সম্পাদিত হয়।
.
— তাহলে এই নিয়মেই মারা হয়েছে মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রী ও তার বড় ভাবীকে। কিন্তু এরা তো মাত্র দুজন। তাহলে নয়শ নব্বই বাচ্চার মা খুন করতে হবে, ব্যাপারটা বুঝলাম না। তারা কি নয়শ নব্বই জন মহিলা খুন করবে? খুন করলেও খুনের কোনো একটা প্যাটার্ন তো অবশ্যই থাকবে। যখন যাকে ইচ্ছা তাকে তো আর খুন করবেনা। কোনো একটা প্যাটার্ন তো অবশ্যই অনুসরণ করবে।
.
~ স্যার এমনকি হতে পারে যে তারা শহরের একটার পর একটা ফ্যামিলি টার্গেট করে সেই ফ্যামিলির মহিলাদের মেরে আরেকটা ফ্যামিলি টার্গেট করে?
.
— তাহলে নূর, তোমার মতে এখনকি তাদের টার্গেটে মিনিস্টার সাহেবের ফ্যামিলি?
.
~ হতে পারে।
.
— তাও, নয়শ নব্বইটা বাচ্চার মা খুন করা, ব্যাপারটা আজিব লাগছে না? কারন এই টাইপ কেইস আমরা আগে পাইনি কখনো। কারন ১৭ ই মার্চ যদি ডেভিল’স মম্ এর চরণে রক্ত দিতে হয়, তাহলে সময় তো আছে শুধু দুদিন। এতো দিনে তো তাদের নয়শ নব্বই বাচ্চার মায়ের খুনের শেষ পর্যায়ে থাকা কথা। একটু হলেও তো খবর পেতাম যে শহরে এক অদ্ভুদ প্রসেসে খুন হচ্ছে।
.
~ তাও ঠিক।
.
— তুমি কি আমাকে এই সম্পর্কে আর কোনো তথ্য দিতে পারবে?
.
~ না স্যার। আর কোনো কিছুই নেই এই চিহ্ন সম্পর্কে। এগুলোও অনেক কষ্টে বের করেছি।
.
— আচ্ছা। গুড জব।
.
~ থ্যাংকিউ স্যার।
..
স্টিফেন তার কেভিনে চলে গেলো। খানিক পর হাসিব এক লোককে নিয়ে প্রবেশ করলো স্টিফেনের কেভিনে। দেখতে ঠিকঠাক ও বেশ সবল দেহের একজন লোক। স্টিফেন বললো,
— কে এটা?
.
~ স্যার, এটাই শফিক। যে সেদিন রাতে মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রী জোহরার সাথে ফার্ম হাউজে ছিলো।
.
— আচ্ছা, তাহলে এই সেই খুনি, যে এতদিন পালিয়ে বেড়াচ্ছিল।
..
শফিক হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বললো,
~ স্যার, আমি করিনি কিছু। আমি করিনি।
..
স্টিফেন শফিককে সজোরে চর মেরে মেঝেতে ফেলে দিয়ে কলার ধরে উঁচিয়ে তাকে বললো,
— আমাদের সাথে চালাকি করবিনা, কিছু না করলে এতদিন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলি কেনো?
.
~ স্যার, স্যার আমি খুব খারাপভাবে ফেঁসেছি। আমার কোনো হাত নেই এখানে। আমাকে মিনিস্টার সাহেব…
.
এইটুকু বলেই অজ্ঞান হয়ে গেলো শফিক। তার পুরো কথা শুনতে পারলোনা স্টিফেন আর হাসিব। স্টিফেন কন্সটেবল ডেকে শফিককে হাসপাতালে এডমিট করতে বললো, আর তার জ্ঞান ফিরলেই স্টেটমেন্ট রেকর্ড করতে বললো।
..
হাসিব স্টিফেনকে বললো,
~ স্যার আপনার এখনো কোনো সন্দেহ আছে যে মিনিস্টার সাহেবই এসব খুন করেছেন?
.
স্টিফেন নিশ্চুপ ভঙ্গিতে অন্যমনস্ক হয়ে রইলো।
.
হাসিব আবার বললো,
~ সোজা হিসেবটা বুঝছেন না স্যার, কোনো জামাই-ই চুপ থাকবেনা বউয়ের এসব কর্মকান্ড দেখার পর। মিনিস্টার সাহেব তো আর নেহা ধুপিয়া না যে বউয়ের চার-পাঁচটা এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার আছে শুনেও “ইট’স হার চয়েস” বলে চুপ থাকবে। নিশ্চয় এসব জেনে মিনিস্টার সাহেবের খারাপ লেগেছে আর তিনি তার স্ত্রীকে মারিয়েছেন। আর মাথায় যে চিহ্ন এঁকেছে তা শুধুমাত্রই আমাদের মিসলিড করার জন্য। কারন মিনিস্টার সাহেবের বড় ভাবীকে মেরে বাড়ির টেঙ্কে ফেলা হয়েছে আর বাসার মানুষ বা উনার বাসায় দীর্ঘদিন থাকা মানুষ ছাড়া এটা আর কেউ করতে পারবেনা।
.
— এক্সাক্টলি! মানুষটা যে মিনিস্টার সাহেবের বাসার হতে হবে এটা তো কোনো কথা না। এমন কোনো মানুষও তো হতে পারে যে মিনিস্টার সাহেবের বাসায় দীর্ঘদিন থাকেন বা দীর্ঘদিন আসা যাওয়ার মধ্যে আছেন। যে মিনিস্টার সাহেবের বাসার প্রতিটি জায়গা চেনে এবং মিনিস্টার সাহেবের বাসায় রোজ আসা যাওয়া আছে।
.
~ আপনি কাকে বোঝাতে চাইছেন?
.
— আমি খুব নির্দিষ্টভাবে কাউকে বলবোনা, কিন্তু মিনিস্টার সাহেবের মেয়ে আর তার বড় ভাইয়ের ছেলেটিকে যে ম্যাডামটি পড়ায় তাকে দেখে কেমনজানে লাগলো। অস্বাভাবিক। না, অস্বাভাবিক না। কিছু উলটপালট দেখতে পেয়েছি মেয়েটার চোখে। কিছুটা ভীতি আর কিছুটা চালাকি এক সাথে খেলা করছিলো মেয়েটার আঁখিযুগলে।
.
হাসিব হতভম্ব হয়ে বললো,
~ স্যার, বুঝলাম না কিছু।
.
— থাক ওদিকটা বাদ দাও, তোমার ছোট্ট মস্তিষ্কে এত চাপ দিতে চাই না। আসল কথাটা বলি। আমি যখন ম্যাডামটার কাছে জিজ্ঞেস করলাম যে সে কি নিয়ে পড়ে, ম্যাডামটা জবাব দিলেন তিনি বিবিএ শেষ করে এমবিএ পড়ছেন।
.
~ তো?
.
— পুরো কথা শোনো আগে।
.
~ স্যরি স্যার।
.
— মেয়েটা পড়ছে এমবিএ। তার ব্যাকগ্রাউন্ডেও সে সাইন্স নিয়ে পড়েনি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে ম্যাডাম যখন তার স্টুডেন্টদের ছুটি দিয়ে বের হচ্ছিলেন তখন তার ব্যাগ থেকে একটা বক্স পড়ে যায়, আর সেটি ছিলো বায়োলজি বক্স। এখন কমার্সের স্টুডেন্টের কাজে বায়োলজি বক্সের কাজ কি সেটা বুঝলাম না। আর বায়োলজি বক্সের ভেতর কি কি যন্ত্র থাকে তাও কারো অজানা নয়।
.
~ হতে পারে এটা অন্য কারো। যা সে আজ নিয়ে এসেছে এবং কো-ইন্সিডেন্সলি আপনিও দেখে ফেলেছেন।
.
— তোমার কাছে কো-ইন্সিডেন্স মনে হলেও, ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ রহস্যময়ী ঠেকে। কারন আমি বডি ল্যাংগুয়েজ বেশ ভালোভাবেই পড়তে পারি।
.
~ তো কি করবেন এখন?
.
— আমি সাইনশাইন কিন্ডারগার্টেন স্কুলে যেতে চাই। মনে হচ্ছে কিছু একটা আছে ওখানে। আর একটু ঘুরে আসলে মন্দ কি? তুমি ওসি সাহেবকে বলে দিও যে আমি কেনো সানশাইন কিন্ডারগার্টেনে যাচ্ছি। কেনো সন্দেহ করছি ডিটেলস জানিয়ে দিও।


স্টিফেন গেলো সানশাইন কিন্ডারগার্টেনে স্কুলে। প্রধান শিক্ষিকার রুমে নক করে প্রবেশ করলো স্টিফেন। কার্ড দেখিয়ে নিজের পরিচয় দিলো। প্রধাণ শিক্ষিকা লুলুয়ান মারজান বললেন,
~ বসেন স্যার। কি সাহায্য করতে পারি আপনার?
.
— ম্যাম, গত দুদিনে আপনার স্কুলের দুটো স্টুডেন্টের মা খুন হয়েছে। এ সম্পর্কে কিছু জানেন?
.
~ জ্বি অবশ্যই জানি। মিনিস্টার সাহেবের ফ্যামিলিতে খুন হয়েছে। পুরো শহর জানার কথা। কিন্তু আপনি এখানে আসলেন যে?
.
— না ম্যাম, ভয় পাবেন না। আমি জাস্ট জিজ্ঞেস করতে এসেছি যে ঐ দুজন তো বাচ্চা নিয়ে স্কুলে আসতেন, তাদের কি কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ আছে?
.
~ জ্বি না, উনাদের কারো সাথে কোনো ঝগড়া ছিলোনা। আর তাদের ঘরের মহিলারা খুব কমই আসতেন, কারন তারা আমাদের স্কুলের মাসিকে এক্সট্রা টাকা দেন তাদের ছেলে মেয়েকে বাসায় দিয়ে আসার জন্যে। আর মিনিস্টার সাহেবের পরিবারের সাথেও আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো। এমনকি মিনিস্টার সাহেবের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী, যিনি প্রেগন্যান্ট, মিনিস্টার সাহেব দুষ্টমি করে বলেছিলেন, ম্যাডাম আপনাদের স্কুলের স্টুডেন্ট আরেকটা আসবে।
.
— আচ্ছা, আপনাদের স্কুল থেকে মিনিস্টার সাহেবের ঘরের বাচ্চাদের যে ম্যাডামটি পড়াতে যায়, তার নাম কি?
.
~ তার নাম ইলিয়ানা।
.
— আচ্ছা।
.
~ সে খুব পছন্দ করে মিনিস্টার সাহেবের বাসার ছেলে মেয়েদের। গত দুদিনে দুজনের বার্থডের জন্য অনেক প্রিপারেশন করেছিলো, চকলেটও দিয়েছে ওদের। আগামীকাল মিনিস্টার সাহেবের ৩য় ভাইটির ছোট ছেলের বার্থডে। সে ছোট্ট খুব, তার জন্যও ইলিয়ানা বেশ কিছু প্ল্যান করেছে।
.
হঠাৎ স্টিফেনের মনে হলো যে কে যেনো বাহিরে দাঁড়িয়ে তার আর প্রধানশিক্ষিকার কথা শুনছে। স্টিফেন চেয়ার থেকে উঠে দৌঁড়ে রুমের বাহিরে উঁকি দিলো। দেখলো স্কুলের মাসি মেঝে পরিষ্কার করছে। স্টিফেন মাসিকে জিজ্ঞেস করলো,
— মাসি, এখানে কি কাউকে দেখেছেন?
.
~ না, তো ছ্যার।
.
স্টিফেন আবার রুমে প্রবেশ করলো। প্রধানশিক্ষিকা জিজ্ঞেস করলেন,
~ কি হলো স্যার?
.
— না, মনে হলো যে কেউ একজন বাহিরে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছে।
.
~ ওহ। মিনিস্টার সাহেবের বাসার বাচ্চাদের বার্থডেও খুব সুন্দর প্যাটার্নে। একদিন পর একদিন।
..
স্টিফেন কথাটি শুনে হঠাৎ গম্ভীরভাবে কি যেনো একটা ভাবতে শুরু করলো এবং হঠাৎ উঠে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো। স্টিফেন স্কুল হতে বের হতেই হাসিবকে কল করলো। হাসিব রিসিভ করে বললো,
~ কোনো ইনফরমেশন পেয়েছেন স্যার?
.
— এসব বাদ দাও। আচ্ছা তুমি কি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছো?
.
~ কোন বিষয়?
.
— যেদিন মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রীর খুন করা হয়েছে, সেদিন মিনিস্টার সাহেবের মেয়ের বার্থডে ছিলো। যেদিন মিনিস্টার সাহেবের বড় ভাইয়ের স্ত্রী খুন হয়েছে, সেদিন মিনিস্টার সাহেবের বড় ভাইয়ের ছেলের বার্থডে ছিলো। এবং আগামীকাল মিনিস্টার সাহেবের ৩য় ভাইয়ের ছেলের বার্থডে।
.
~ তাহলে খুনীর নেক্সট টার্গেট কি মিনিস্টার সাহেবের বড় ৩য় ভাইয়ের স্ত্রী?
.
— হতে পারে। কারন এটাই হয়তো সেই প্যাটার্ন, যে প্যাটার্নের খোঁজে আমরা ছিলাম। হয়তো খুনী বাচ্চাদের বার্থডে হিসেবে মা’দের খুন করছে।
.
~ তাহলে কি করা যায় স্যার?
.
— মিনিস্টার সাহেবের বাড়িতে জোরদার পাহারা দাও। স্পেশিয়ালি মিনিস্টার সাহেবের ৩য় ভাইয়ের স্ত্রীকে। তিনি যেনো একটা মুহুর্তের জন্যও একা না থাকেন।।
.
~ ওকে স্যার।
….
….
স্টিফেন হাসপাতালে গেলো। শফিকের একটু একটু জ্ঞান ফিরেছে। শফিক খুব চেষ্টা করছে স্টিফেনকে কিছু বলার। স্টিফেন রুম থেকে সবাইকে বের করে দিলো। একা বসেই শফিকের সব কথা শুনলে। শফিক ধীরে ধীরে স্টিফেনকে সব খুলে বললো।
স্টিফেন শফিকের বক্তব্য শুনে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে মিনিস্টার সাহেবের বাড়িতে গেলো। পুলিশ কড়া নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছে বাড়ির চারপাশে। স্টিফেন বাড়িতে ঢুকতেই দেখলো মিনিস্টার সাহেবের পরিবার তাদের বাড়ির ছোট বউকে ধরাধরি করে গাড়িতে তুলছে। মিনিস্টার সাহেবের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী প্রেগন্যান্ট, হয়তো ডেলিভারির সময় হয়েছে তাই পেইন উঠেছে। মিনিস্টার সাহেব যেতে যেতে বলে গেলেন,
~ খেয়াল রাখিও একটু আমার শেঝোর স্ত্রীকে। আমি শুনেছি বার্থডে প্যাটার্নটির কথা।
.
স্টিফেন নিশ্চুপ হয়ে শুধু শুনেই ছিলো। এ ধরণের পরিস্থিতি দেখলে সে সর্বদা নিশ্চুপ ভঙ্গিমা ধারণ করে। পুরোনো কিছু স্মৃতি নড়েচড়ে খেলতে শুরু করে তার মস্তিষ্কে।
.
স্টিফেন মিনিস্টার সাহেবের বাসার উপরে গিয়ে দেখলেন। সবকিছুই নরমাল আছে। রিডিং রুমে গিয়ে দেখলো বাচ্চারা বসে আছে একা। তাদের ইলিয়ানা ম্যাডাম আসেনি আজ।
.
হঠাৎ স্টিফেনের ফোনের রিং বেজে উঠলো। স্টিফেন ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে এক তরুণী বলে উঠলো,
~ চিনেছো?
.
— হুম। তোমার কলের অপেক্ষায় ছিলাম। আমি জানতাম আমার সাহায্য তোমার লাগবেই।
.
~ শাট আপ মিস্টার। আমার কোনো ইচ্ছে নেই আমার কাজে তোমাকে নেওয়ার। ভাগ্যক্রমে আবার দেখা হয়েছে আর আমাদের লক্ষ্যও সেইম।
.
— তাহলে ফোন করার কারন?
.
~ তোমার মতো অফিসার এতো তুচ্ছ ভুল ও বোকামি করবে তা আগে জানা ছিলোনা।
.
— মানে, আমি কি বোকামি…
.
~ চুপ! একদম চুপ। টানা তিনজনের বার্থডে দেখেই আনতাজে বলে দিলা যে নেক্সট খুন হবে শেঝো ভাইয়ের স্ত্রীর। যত্তসব। যাকে সন্দেহ করেছিলে তোমার সন্দেহ একদম সঠিক। কিন্তু সে মানুষটি এখন মিনিস্টার সাহেবের বাসায় যায়নি, হাসপাতালে গিয়েছে। তার মানে বার্থডে প্যাটার্নটি নিতান্তই একটি ছলনা। প্যাটার্ন অন্যকিছু। কিন্তু সেই মানুষটি কেনো হাসপাতালে গেলো? আই থিংক তোমার নয়শ নব্বই বাচ্চার মা সম্পর্কে আরেকটু ভাবা উচিত।
.
— তুমি ছয়মাস ধরে গবেষণা করে জানতে পারোনি এর মানে কি? আর আমি সংখ্যাটি সম্পর্কে জানলাম মাত্র দুদিন আগে।
.
~ তোমার জন্য কোনো ব্যাপার না একটু মাথা খাটালে।
.
— তাহলে মানছো তো আমি তোমার চেয়ে বেশি চালাক?
.
~ উফফ! শাট আপ।
..
স্টিফেন ফোনে মেয়েটির গর্জানি এবং শ্বাসন শুনে একটুও অবাক কিংবা বিচলিত হয়নি। মনে হচ্ছে এই গর্জানি আর শ্বাসন তার খুব পরিচিত, এবং হয়তো মেয়েটিও।
.
স্টিফেন আরো কিছুক্ষণ ভাবতে লাগলো সংখ্যাটি নিয়ে। নয়শ নব্বই বাচ্চার মা। স্টিফেন সংখ্যাটিকে আরেকটু বিভক্তভাবে ভাবলো অর্থাৎ নয় নয় শূন্য বাচ্চার মা। হঠাৎ স্টিফেনের চোখ পড়লো মিনিস্টার সাহেবের বাসার দেয়ালের দিকে। যেখানে মিনিস্টার সাহেবের মেয়ে সাইরার সার্টিফিকেট লাগানো আছে। সে জন্মতারিখ খেয়াল করে দেখলো যে মিনিস্টার সাহেবের মেয়ের জন্ম ১৩-০৩-২০১১। অর্থাৎ গত ১৩ই মার্চ মিনিস্টার সাহেবের মেয়ের ৯ বছর পূর্ণ হলো, আর সেদিনই তার মা খুন হয়েছে। আর মিনিস্টার সাহেব বলেছিলেন তার বড় ভাইয়ের ছোট ছেলেটি সাইরার সমবয়সী এবং গত ১৫ই মার্চ তার বার্থডে ছিলো। যেহেতু সে সাইরার সমবয়সী অর্থাৎ তার সেদিন ৯ বছর পূর্ণ হলো, সেদিনই তার মাকে খুন করা হলো। অর্থাৎ ৯৯ হিসাব করেই দুজনের মাকে খুন করা হয়েছে। বাকি থাকে ০ (শূন্য)। আর আজ মিনিস্টার সাহেবের ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ডেলিভারির জন্য এবং নবজাতকটির জন্ম আজ হবে আর তার বয়স হবে ০ (শূন্য)। তাহলে ৯৯০ বাচ্চার মা বলতে বোঝানো হয়েছে ৯ বছর, ৯ বছর এবং শূন্য বয়সের বাচ্চার মা’কে খুন করে তাদের রক্ত নেওয়া। এর মানে পরবর্তী টার্গেট মিনিস্টার সাহেবের শেঝো ভাইয়ের স্ত্রী না, বরং ছোট ভাইয়ের স্ত্রী!
স্টিফেন দৌঁড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ফোন করে হাসিব আর পুলিশদের বলে দিলো হাসপাতালে আসতে। স্টিফেন পুনরায় সে তরুণীকে ফোন করে বললো,
— প্যাটার্ন জন্মদিনেরই ছিলো, কিন্তু একটু অন্যভাবে। তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো হাসপাতালে। আমিও যাচ্ছি।

স্টিফেন হাসপাতালে পৌঁছে উপরে উঠলো। মিনিস্টার সাহেবের ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর ডেলিভারি হয়ে গিয়েছে। সবাই বেবি ওয়ার্ডে বাচ্চাকে দেখছে আয়নার বাহির থেকে। স্টিফেন মিনিস্টার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলো,
— বাচ্চার মা কোথায়?
.
~ ছোট’র স্ত্রীকে এনেস্থিসিয়া দেয়া হয়েছে তো, আর দূর্বলতার কারনে তার এখনো জ্ঞান ফেরেনি। কেভিনে শুইয়ে রাখা হয়েছে।
.
— তার সাথে কে আছে?
.
~ একটা নার্স আছে।
.
স্টিফেন রেগে বললো,
— শুধু নার্স? এতো কেয়ারলেস কেনো আপনারা?
.
~ কিন্তু কি হলো?
.
— কোথায় রাখা হয়েছে বাচ্চার মা’কে?
..
স্টিফেন গেলো বাচ্চার মা’কে যে কেভিনে রাখা হয়েছে সেখানে। গিয়ে দেখলো বিছানায় কেউ নেই। নার্স মেঝেতে পড়ে আছে।
স্টিফেন তাড়াহুড়ো করে কেভিন থেকে বের হয়ে ডানে বাঁয়ে তাকাতেই দেখলো এক মহিলা হুইল চেয়ারে মিনিস্টার সাহেবের ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছে। আর মিনিস্টার সাহেবের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী অজ্ঞান থাকার কারনে মাথা হেলিয়ে পড়ে আছেন হুইল চেয়ারে।
স্টিফেন কোনো শব্দ না করে দৌঁড় দিলো মহিলাটির পেছনে। হঠাৎ মহিলাটি পেছনে ফিরে স্টিফেনকে দেখে নিলো আর সেও হুইল চেয়ার নিয়ে দৌঁড়াতে শুরু করলো।
দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে মহিলাটি হঠাৎ হুইল চেয়ার নিয়ে মর্গের বিশাল কামরায় প্রবেশ করলো। স্টিফেনও মর্গে প্রবেশ করলো। কিন্তু মর্গে প্রবেশ করেই মহিলাটি অন্ধকারে হুইল চেয়ার নিয়ে কোথায় হারিয়ে গেলো। আলো এতোই কম ছিলো যে কয়েক মিটারের চেয়ে বেশি দূরে দেখা যাচ্ছেনা। স্টিফেন ধীর পায়ে মর্গের চারদিকে খোঁজা শুরু করলো। অনেকসময় মর্গের বেডে শুইয়ে রাখা লাশগুলির সাথেও ধাক্কা খাচ্ছে সে। কিন্তু মহিলাটি কোথায় লুকিয়ে গেলো। স্টিফেন একটি পিলারের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। স্টিফেন পিলারে ডান দিক থেকে বাম দিকে ফিরতেই ধাক্কা খেলো একজনের সাথে। স্টিফেনের সাথে ধাক্কা খেয়েই মেয়েটি চিৎকার দিয়ে উঠার সময় স্টিফেন মেয়েটির মুখ চেপে ধরলো। শুধু চোখগুলোই দেখা যাচ্ছিলো মেয়েটির। স্টিফেন এমনভাবে তাকিয়েছিলো যেনো এই আঁখিযুগল বেশ পরিচিত তার। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এই সেই চোখ যে চোখে ভীতি আর চালাকি একসাথে খেলা করে সর্বদা। চোখের শেষ প্রান্তে হালকা লেপ্টে যাওয়া কাজল। ভ্রু দুটো কুঁচকে ‘উমম..উমম..’ করে কি যেনো বলতে চাইছে মেয়েটি। স্টিফেন বুঝলো যে মেয়েটি স্টিফেনকে তার মুখ হতে হাত সরাতে বলছে। স্টিফেন মেয়েটির মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেখলো মেয়েটি আর কেউ নই, মিনিস্টার সাহেবের বাসার বাচ্চাদের ম্যাডাম ইলিয়ানা।
স্টিফেন বললো,
— তুমি এখানে কি?
.
~ তুমিই তো ফোন করে আসতে বলেছিলে হাসপাতালে। তোমাকে দেখলাম একটি মহিলাটির পিছু নিতে নিতে মর্গে ঢুকলা, তাই আমিও ঢুকলাম। ছাড়ো এখন, মর্গ অনেক বড়। মহিলাটি বাচ্চার মা’র সাথে কোনো অঘটন ঘটানোর পূর্বেই খোঁজা শুরু করো।
..
ইলিয়ানা স্টিফেনের কাছ থেকে দূরে গিয়ে খুঁজতে এদিক ওদিক যেতেই স্টিফেন ইলিয়ানাকে হেঁচকা টেনে নিজের দিকে নিয়ে আসলো। ইলিয়ানাও স্টিফেনের বুকে গুঁজে গেলো। ইলিয়ানা রেগে বললো,
~ কি শুরু করলে এস…
.
স্টিফেন ইলিয়ানার ঠোঁটে তর্জনী চেপে তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
— চুপ একদম চুপ। ঐ যে দূরের দুটি বেড দেখো। একটাতে বাচ্চার মা শুইয়ে দিয়ে আরেকটাতে মহিলাটি নিজে শুয়ে পর্দা দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। যাতে আমরা চলে যাওয়ার পর সে বেরিয়ে যেতে পারে। তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো। মহিলাটিকে অনুভব করাও যে আমরা চলে গিয়েছি। আজ হাতেনাতে না ধরলে আমিও স্টিফেন না।
..
স্টিফেনের বাঁ হাত ইলিয়ানার কোমরে। ইলিয়ানা স্টিফেনের দিকে ঝুঁকে আছে। শক্ত হাতে মুষ্টি বেঁধে ধরে আছে স্টিফেনের শার্টের কলার। দুজন দুজনার মুখোমুখি। স্টিফেন চুপচাপ তাকিয়ে আছে ইলিয়ানার দিকে। ইলিয়ানা নিরবতা ভেঙে বললো,
~ আমি না জানালে তো সেই বার্থডে প্যাটার্ন নিয়ে বসে থাকতে, গাধা। এখন বুঝলে আমি কি জিনিস? স্টিফেন গার্সিয়ার মতো তীক্ষ্ণ মস্তিষ্কের মানুষেরও মাঝেমধ্যে মেয়েদের বুদ্ধি প্রয়োজন হয়।
..
স্টিফেন এখনো বাকহীনভাবে তাকিয়ে আছে ইলিয়ানার দিকে। ইলিয়ানার ঠোঁটের পাতার উপরে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। বেশ মায়াবি লাগছে। স্টিফেনের সাথে খুঁনসুটিতে তার চুলের কিছু অংশ চেহারায় এসে গিয়েছে। স্টিফেন তার হাতের আলতো স্পর্শে ইলিয়ানা চুলগুলো তার কানের পিছে দিয়ে আসে। স্টিফেনের স্পর্শে ইলিয়ানা চোখ বন্ধ করে নিলো। স্টিফেন তার ফুল হাতা শার্টের স্লিভ দিয়ে ইলিয়ানার ঠোঁটে জমা ঘাম মুছে দিলো। ইলিয়ানা চোখ খুলে বললো,
~ হয়েছে?
.
— হ্যা।
..
ইলিয়ানা বললো,
~ আমার একটা আইডিয়া আছে। আমি এতোদিন ডেভিল’স মম্ এর উপর রিসার্চ করেছি। সেখানে..
.
স্টিফেন ইলিয়ানার কথার মাঝে বলে উঠলো,
— মাথা করেছো। দু ‘দুটো খুন হয়ে গেলো কিছু করতে পারোনি।
.
~ থাপ্পর খাবা? নাকি আমার আইডিয়া শুনবা?
.
— আচ্ছা বলো।
.
~ আমি এতোদিন রিসার্চে জেনেছি যে আমাদের দেশে এই ডেভিল’স মম্ এর অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে অনেকেই প্রতারণা শুরু করেছে এবং এই ভিত্তিহীন ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে সবাইকে উগ্রবাদী করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদের টার্গেট হলো যেসব মহিলারা মা হতে পারেনা তারা, মূলত তাদেরকে মা হওয়ার লোভ দেখিয়ে ম্যানুপুলেট করে খুন করানো হচ্ছে। এই মহিলাটিও তাদের ষড়যন্ত্রের শীকার হয়ে এই কাজ করছে। আমরা যদি মহিলাটিকে ধরার জন্য বসে থাকি তাহলে মহিলাটিকেই ধরতে পারবো কিন্তু আসল গ্যাং কে ধরতে পারবোনা। আসল গ্যাং কে না ধরলে তারা পরে আরো একজন সন্তানহীন মহিলাকে মা হওয়ার লোভ দেখিয়ে এ কাজ করবে।
.
— তাহলে তুমি কি করতে চাইছো?
.
~ আমরা এখন গিয়ে মহিলাটিকে ধরবো এবং তাকে দিয়ে আসল গ্যাং এ ফোন করিয়ে বলতে বলবো যে, খুন করা শেষ। পুলিশের জন্য সে মহিলার রক্ত নিয়ে বের হতে পারছেনা। গ্যাং কে আসতে হবেই।
.
— ইলিয়ানার মাথায় এতো বুদ্ধি আগে জানতাম না।
.
~ ঢং বন্ধ করো চলো। আর হ্যা, বন্দুক বের করবেনা। ভয় লাগে আমার।
.
— বন্দুক বের না করলে মহিলাটি ভয়ে গ্যাং কে ফোন করবেনা।
.
~ বললাম না বন্দুক বের করবেনা, ভয় লাগে।
.
— তাহলে কি দিয়ে ভয় লাগাবে মহিলাটিকে? বায়োলজি বক্স দিয়ে?
.
~ হ্যা। বায়োলজি বক্স দিয়ে। আমার বায়োলজি বক্স তোমার বন্দুকের চেয়েও পাওয়ারফুল।
.
— এতো চালাকচতুর একটা মেয়ে বন্দুক ভয় পায় বললেই তো মানুষ হাসবে।
.
~ হাসুক। আই ডোন্ট কেয়ার।
.
— ভীতুর ডিম একটা। এজন্যই তো বলি, তোমার আঁখিযুগলে সর্বদা ভীতি এবং চালাকি দুটোই একসাথে খেলা করে। আচ্ছা চলো।
..
স্টিফেন আর ইলিয়ানা গেলো বেড দুটির পাশে। ইলিয়ানা তার বায়োলজি বক্স থেকে কাটার আর কাঁচি বের করলো। স্টিফেন পর্দা সরাতেই মহিলাটি উঠে দাঁড়িয়ে পালাতে চেষ্টা করতেই ইলিয়ানা মহিলাটিকে ধরে তার গলায় কাটার এবং পেট বরাবর কাঁচি তাক করলো। মহিলাটি সাথে সাথে বসে পড়লো বিছানায়। স্টিফেন মহিলাটিকে দেখে বেশ অবাক হলো। কারন মহিলাটি আর কেউ না, সানশাইন কিন্ডারগার্টেনে স্কুলের মাসি। ইলিয়ানা বললো,
~ খেলা তো খুব সুন্দরই খেলেছেন মাসি। এবার যা বলবো তা মন দিয়ে শুনবেন এবং করবেন। তা না হলে যে কাটার আর ছুরি দিয়ে ব্যাঙ এবং রুইমাছ কাটা হয়, সেটা দিয়েই আপনাকে কাটতে সময় লাগবেনা।
.
স্টিফেন আর ইলিয়ানার কথামতো মাসি গ্যাং এর প্রধান ফ্রেড্রিক কে ফোন করলো। যার নির্দেশেই ডেভিল’স মম্ নামক উগ্রবাদী এই ধর্ম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নেমেছে এই গ্যাং।
.
মাসি ফ্রেড্রিককে ফোন করে বললেন,
~ ছার, আমি আফনের কথামতো তিন লম্বর খুনও করসি। কিন্তু হাসপাতাল থেইকা বাইরাইতে পারতাসিনা। আপনি যদি হাসপাতালের মর্গে আইসা রক্ত নিয়া দেবীর চরণে দিয়ে দেন তাহলে আমি মা হইতাম পারবো।
..
ফ্রেড্রিক রাজি হলো এবং বললো সে আধ ঘন্টার মধ্যে আসছে। আমি হাসিবকে মেসেজ করে দিলাম সব। আর মাসিকে বেডে বসিয়ে রেখে স্টিফেন আর ইলিয়ানা লুকিয়ে গেলো।
..
প্রায় পঁচিশ মিনিট পর গড়গড় শব্দে কে যেনো মর্গের দরজা খুললো। ধীরপায়ে একটা লোক প্রবেশ করলো মর্গে। মাসি হাত নাড়লেন তাকে দেখে। লোকটিও মাসির দিকে এগোতে শুরু করলো। এটাই ফ্রেড্রিক। ফ্রেড্রিক মাসির কাছে যেতেই হাসিব মর্গের লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে পুলিশ নিয়ে চারদিক থেকে ফ্রেড্রিক আর মাসিকে ঘিরে তাদের দিকে বন্দুক তাক করে। মিনিস্টার সাহেবের ফ্যামিলিও প্রবেশ করলো মর্গে।
স্টিফেন বলে উঠলো,
— দ্যাট’স এনাফ। আপনারর খেলা এখানেই শেষ মিস্টার ফ্রেড্রিক।
..
হাসিব বললো,
~ স্যার এটা কে?
.
— এটা হলো সো কলড্ ডেভিল’স মম্ নামক ধর্মের কান্ডারী। যে মাসির মতো সন্তানহীনদের ব্যবহার করে খুন করায়, এবং সে খুনের রক্ত দিয়ে ডেভিল’স মমের পূজা করে। এরা এমন এমন ফ্যামিলি টার্গেট করে যে ফ্যামিলির দুটো নয় বছরের বাচ্চা থাকে এবং একটা নবজাতক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাতে এরা নয়শ নব্বই বাচ্চার মা, অর্থাৎ নয়, নয়, শূন্য বাচ্চার মা খুন করতে পারে। আর সানশাইন কিন্ডারগার্টেনের মাসি দীর্ঘদিন ধরে মিনিস্টার সাহেবের ছেলেমেয়েদের দেখাশোনার কাজ করছে। আর মিনিস্টার সাহেব একদিন প্রধানশিক্ষিকাকে বলেছিলেন যে তাদের ঘরে নতুন বাচ্চা হবে, যা মাসি বাহির থেকে উঁকি দিয়ে শুনেছেন ঠিক তেমনভাবে, যেমনভাবে মাসি সেদিন উঁকি দিয়ে আমার আর প্রধান শিক্ষিকার কথাও শুনছিলেন। আর মাসি বাচ্চাদের দিয়ে আসার বাহানায় মিনিস্টার সাহেবের বাসায় যেতেন।তাই মাসি ভালোভাবেই জানেন কাকে কিভাবে খুন করতে হবে। আর মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রী যে ফার্ম হাউজে থাকতো রাতে তাও মাসি জানে। তাই সেদিন রাতে মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রী জোহরা আর শফিক যখন ফার্ম হাউজে ছিলো তখন শফিক কিছুক্ষণের জন্য বাথরুমে গিয়েছিলো। আর সে সুযোগে মাসি জোহরাকে খুন করে তার কাজ সেরে ফেলে। কারন শফিক আমাকে তার বক্তব্যে বলেছে যে সে বাথরুম থেকে বের হতেই জোহরার লাশ দেখে পালিয়ে যায়। আর শফিক জোহরার বয়ফ্রেন্ড না। শফিক একজন জার্নালিস্ট যাকে মিনিস্টার সাহেব হায়ার করেছিলেন এটা কনফার্ম হওয়ার জন্য যে আসলেই তার স্ত্রীর এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার আছে কিনা। শফিক জোহরার সাথে ফ্রেন্ডশিপের নাটক করেছে মিনিস্টার সাহেবের কথায় স্টিং অপারেশন করার জন্য। যার কারনে আমি মিনিস্টার সাহেবের কল রেকর্ডেও শফিকের নাম্বার পেয়েছি। আর শফিক তার ক্যামেরা ঠিক করতেই বাথরুমে গিয়েছিলো। সেদিন শফিক যেহেতু জোহরার সাথে ছিলো, তাই শফিক পুলিশের সন্দেহের তালিকায় এক নম্বরে। আর নির্দোষ শফিককে বাঁচাতেই মিনিস্টার সাহেব জোহরার খুনের দায় নিজের কাঁধে নিতে চেয়েছিলেন।
..
হঠাৎ স্টিফেনের পেছন থেকে ইলিয়ানা সবার সামনে এলো। ইলিয়ানাকে দেখে সবাই বেশ অবাক হলো। হাসিব বলে উঠলো,
~ স্যার, এই মেয়েটাকে না আপনি সন্দেহ করেছিলেন? যে কমার্সের স্টুডেন্ট হয়েও বায়োলজি বক্স নিয়ে ঘুরে।
.
— আসলে সবই তোমাদের দেখানোর জন্য নাটক করেছিলাম৷ ইলিয়ানা হলো একজন রিসার্চার। সে এসব অন্ধবিশ্বাস ও সুপারস্টিশাস বিষয় নিয়ে গবেষণা করে। সে রিসার্চের কাজেই এই স্কুলে জয়েন করেছে টিচার হিসেবে। আর কাকতালীয়ভাবে ইলিয়ানাও ডেভিল’স মম কমিউনিটির উপর রিসার্চ করছিলো। ইলিয়ানাকে আমি পাঁচ বছর আগে থেকেই চিনি। ইলিয়ানা আমার টিমের একটি সদস্য ছিলো। কিন্তু তার বন্দুক নিয়ে দূর্বলতা থাকার কারনে আমি তাকে আমার টিম থেকে বের করে দিই। আর বায়োলজি বক্স সে সেল্ফ ডিফেন্সের জন্য রাখে। কারন সে বন্দুক ভয় পায়। আমি তোমাদের সামনে ইলিয়ানাকে সন্দেহ করলাম কারন তোমরা যাতে ইলিয়ানার আসল পরিচয় টের না পাও। কারন দেয়ালেরও কান আছে, তাই কাউকে জানাতে চাইনি। আমার বার্থডে প্যাটার্নের যে ধারণা ছিলো তা ভুল ছিলো, পরে ইলিয়ানা কল করে আমাকে আবার ভাবতে বললো। ইলিয়ানার সাহায্যেই আমি এই রহস্যের সমাধান পেয়েছি।
..
স্টিফেন মাসিকে বললো,
— মা হওয়ার জন্য কেউ এতো নিচে নামতে পারে তা জানা ছিলোনা। একটা মা কখনোই এত নির্দয় হয়না, মা হয় মমতাময়ী। তোমার মতো মানুষরূপী জানোয়াররা বুঝবেনা ‘মা’ শব্দটির গভীরতা।
হাসিব, এরেস্ট করো দুজনকে। নিয়ে যাও এদের।
..
মিনিস্টার সাহেবের পুরো পরিবার স্টিফেনকে ধন্যবাদ জানালো। মিনিস্টার সাহেব কেঁদে দিলেন স্টিফেনকে ধরে। স্টিফেন বললো,
— আরে নতুন মেহমান এসেছে আপনাদের বাসায়। খুশি হোন আপনি। আর বাচ্চার মার খেয়াল রাখবেন। চলি আমি।
..
স্টিফেন পেছনে ফিরে দেখলো ইলিয়ানা নেই। স্টিফেন হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে দেখলো ইলিয়ানা আপন মনে ধীর পায়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে। স্টিফেনের খুব ইচ্ছে হচ্ছে ইলিয়ানাকে ডেকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে, একটু কথা বলতে। ইলিয়ানার সেই আঁখিযুগলের দিকে এক পলক দেখতে যেখানে ভীতি আর চালাকি একসাথে খেলা করে। স্টিফেনের কাছে বেশ মায়াবি লাগে এই মেয়েটাকে। কিন্তু স্টিফেনের সাহস নেই মেয়েটাকে পেছন থেকে ডাকার, কিছু একটা তাকে আটকে দেয় বারবার।
সে শুধু অপলকদৃষ্টিতে দেখেই আছে আপনমনে রাস্তার পাশে হাঁটতে থাকা ইলিয়ানার দিকে। ইলিয়ানার আপনমনে হাঁটার মধ্যেও সৌন্দর্য খুঁজে বেড়ায় স্টিফেন।
.
সে চেয়ে আছে সেই পথের দিকে যে পথে ইলিয়ানা হাঁটছে অজানা গন্তব্যের দিকে,
হয়তো এভাবেই চেয়ে থাকবে যতক্ষণ না মেয়েটি দৃষ্টিগোচর হয় তার চোখের সামনে থেকে।


#সমাপ্ত
.
গল্প_মা
লেখা – সাদমান সাঈদ চৌধুরী।

সবাইকে ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য। দয়া করে গল্পের মজা গল্পের মতো করে নিবেন। বাস্তবতার সাথে মেলাতে চেষ্টা করবেন না। ভালোবাসা রইলো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে