মা ১ম পর্ব

0
1732

মা ১ম পর্ব
লেখা – সাদমান সাঈদ চৌধুরী।

গভীর রাত। ফার্ম হাউজে নিজের বন্ধুর সাথে অশালীন সব কাজকর্মে মেতে উঠেছেন মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রী। এ যেনো তার রোজকার কর্মকান্ড। মিনিস্টার সাহেবের চোখের আড়ালেই তার স্ত্রী জড়িয়ে আছেন একাধিক এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ারে। মাঝে মাঝে নিজের ফার্ম হাউজে সময় কাটান সেসব বন্ধুদের সাথে।
আজও তেমন একটি রাত। শফিকের সাথে ড্রিংক, পার্টি এবং বিভিন্ন অশালীন কাজে মেতে আছেন মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রী জোহরা।
.
পরদিন সকালে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজ শুনে হতভম্ব হয়ে যান সবাই। “মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রী জোহরা’র লাশ পাওয়া গেলো তার নিজের ফার্মহাউজেই।”
ইতমধ্যেই সব টিভি চ্যানেলে বিভিন্ন ধরণের কথাবার্তা শুরু হয়ে গেলো মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রী জোহরার চরিত্র নিয়ে। এ সত্যটা সবার সামনে আসতোই, কারন মিডিয়া কোনো একটা টপিক পেলে সেটি কাঁটাছেড়া করে কথা বের করতে সময় নেয় না।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



পুলিশ ইনভেস্টিগেশন শুরু করেছে। ওসি সাহেব তার অফিসারদের বলে দিলেন,
— এই কেইসে অবহেলা করা যাবেনা। কোনো না কোনোভাবে আসল খুনিকে বের করতেই হবে।
.
সিনিয়র অফিসার হাসিব বললেন,
~ তাহলে আপনি কি তা ই ভাবছেন, যা আমি ভাবছি?
.
— তুমি কি ভাবছো জানি না হাসিব। কিন্তু তাকে জানিয়ে দাও দুপুরের মধ্যে আমার কেভিনে এসে রিপোর্ট করতে।
.
~ আই গট ইট স্যার। কিন্তু সে নিবে এই কেইসের দায়িত্ব?
.
— বলো, মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রীর কেইস।

দুপুর একটা বেজে ত্রিশ মিনিট। পুলিশ হেডকোয়ার্টারে প্রবেশ করলো এক সুদর্শন ব্যায়ামপুষ্ট দেহের একজন লোক। চেহারাটা বেশ পরিচিত হলেও অনেকদিন দেখা হয়নি এই চেহারা। কর্মচারীরা ও অফিসাররা দাঁড়িয়ে স্যালুট দিতে ব্যস্ত।
সোজা গিয়ে লোকটি প্রবেশ করলো ওসি সাহেবের কেভিনে।
ওসি সাহেব মুচকি হেসে বললেন,
~ চলে এসেছো? ওয়েলকাম মিস্টার স্টিফেন।
.
— থ্যাংক ইউ স্যার। ইট’স গুড টু বি ব্যাক।
.
~ মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রীর ঘটনা সম্পর্কে তো বোধয় জেনেই গিয়েছো এতক্ষণে।
.
— জ্বি। স্যার। তাহলে শুরু করবো?
.
~ অল ইয়রস্।
……
……
স্টিফেন হেডকোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে মিনিস্টার সাহেবের ফার্মহাউসের দিকে গেলো।
বেশ ভয়ংকরভাবেই মারা হয়েছে মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রীকে। ধারালো ছুরি পেটের মাঝ বরাবর গেঁথে দেওয়া হয়েছে। আর কপালে ছুরি দিয়ে কিছু একটা আঁকা হয়েছে। ত্রিকোণাকার। বেশ অদ্ভুদ।
স্টিফেন মেঝে থেকে মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রী জোহরার ফোনটি নিলো। আর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হলো।
স্টিফেন জোহরাকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর আগে জোহরার কপালে ছুরি দিয়ে গর্ত করে যে নকশাটি আঁকা হলো তার ছবি তুললো স্টিফেন। নকশাটির মধ্যে যেনো এক সমুদ্র রহস্য। কারন খুন করলে শুধু পেটে ছুরি ঢুকিয়ে চলে যেতো, কপালে ত্রিকোণাকার নকশাটি করতো না খুনী।
..
স্টিফেন হেডকোয়ার্টারে এসে টেকনিশিয়ান নূরকে ডাকলো এবং ছবিটা তাকে দেখিয়ে বললো,
— এই ত্রিকোণাকার নকশাটি সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারবে আমাকে?
.
~ স্যার ছবিটা আমাকে সেন্ড করেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আমি সব তথ্য বের করার।
.
— গুড। যাও।


স্টিফেন বিকেলের দিকে মিনিস্টার সাহেবের বাসায় গেলেন। কিন্তু মিডিয়ার কারনে মিনিস্টার সাহেবের বাসায় ঢোকার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিলোনা। গাড়িতেই বসেছিলো স্টিফেন। সন্ধ্যা হতে হতে মিনিস্টার সাহেবের কোনো সাড়া না পাওয়ায় চলে যেতে শুরু করলো মিডিয়ার মানুষেরা।
.
স্টিফেন মিনিস্টার সাহেবের বাসায় ঢুকলো। স্টিফেনকে দেখে মিনিস্টার সাহেব বেশ হতচকিত হয়ে গেলেন। তিনি যেনো মোটেও আশা করছিলেন না স্টিফেনকে দেখার।
স্টিফেন বললো,
— কি হলো স্যার? এতো অবাক হলেন যে?
.
~ না, মানে…তোমাকে এই কেইসের..মানে আমার স্ত্রীর কেইসের দায়িত্ব কে দিলো?
.
— সেটা বলছি কেমনে কি হলো। কিন্তু আপনি এতো ঘামছেন কেনো? বসে পড়ুন।
.
মিনিস্টার সাহেব কিছু একটা আড়াল করে বললেন,
~ না, তেমন কিছু না। আসলে সকাল থেকে মিডিয়ার মানুষেরা নাজেহাল করে ছাড়ছে তাদের সামনে কথা বলার জন্য। আমার স্ত্রী মরেছে, আমার কি এখন ইচ্ছা হবে তাদের সামনে গিয়ে বকবক করতে?
.
— তাও ঠিক।
.
~ বাই দ্যা ওয়ে, তোমাকে এই কেইসের দায়িত্ব দিলো কে?
.
— ওসি সাহেব হাসিবকে দিয়ে ফোন করিয়েছিলেন। আর আপনার স্ত্রীর কেইস হওয়াতে মানা করতে পারিনি।
.
~ ওহ।

স্টিফেন মিনিস্টার সাহেবকে বললো,
— কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করবো আপনার কাছে।
.
মিনিস্টার সাহেব পাশে থাকা টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি এক ঢোকে পান করে সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন।
স্টিফেন বললো,
— আপনি কি জানতেন আপনার স্ত্রীর কয়েকটা এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার আছে?
.
~ না, তবে গত এক সপ্তাহে কিছু উড়ন্ত খবর কানে এসেছিলো। আমি তেমন খেয়াল করিনি। আমি জানতাম সে ফার্ম হাউজে যায় তার বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিতে।
.
স্টিফেন কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। মনিস্টার সাহেবের বাসার চারিদিকে তাকালো। আর বললো,
— এক গ্লাস পানি পেতে পারি?
.
মিনিস্টার সাহেব বললেন,
~ অবশ্যই।
তিনি পাশের টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন জগে পানি শেষ। কয়েকবার ‘সালমা’ ‘সালমা’ করে ডাকলেন। হয়তো বুয়াকে ডাকছেন। কিন্তু কোনো সাড়া আসলোনা। শেষমেশ তিনি বললেন,
~ আচ্ছা বসুন, আমিই গিয়ে নিয়ে আসি।
.
মিনিস্টার সাহেব পানি আনতে গেলে স্টিফেন মিনিস্টার সাহেবের মোবাইলের কল রেকর্ডে গিয়ে একটা স্ক্রিনশট নিয়ে নিজের মোবাইলে নিয়ে নিলো। মোবাইলে পাসওয়ার্ড না দেখে স্টিফেন কিছুটা অবাক হলো।
.
মিনিস্টার সাহেব পানি নিয়ে আসলেন। দু ঢোক পান করে গ্লাস টেবিলে রাখলো স্টিফেন।
ঘরের বাঁ পাশের দেয়ালে কিছু সার্টিফিকেট লাগানো আছে একটা ছোট্ট মেয়ের। হয়তো স্কুলের মেরিট লিস্টে আসায় প্রাপ্ত সার্টিফিকেট। সার্টিফিকেটে নাম লেখা ছিলো সাইরা বিনতে। জন্ম তারিখ ১৩/০৩/২০১১। সানশাইন কিন্ডারগার্টেন স্কুল।
.
স্টিফেন দেয়ালের দিকে তাকিয়ে মিনিস্টার সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— এগুলো আপনার মেয়ের সার্টিফিকেট বোধহয়।
.
~ জ্বি।
.
— সে কোথায়?
.
~ তার নানীর বাড়িতে। আজ তার জন্মদিন। আমাদেরও যাওয়ার কথা ছিলো আজ তার নানীর বাড়ি। জন্মদিনটা ওখানেই করতাম, কিন্তু হলো না আর।
.
— আচ্ছা, তাহলে যাই এখন। পরে দরকার হলে কথা বলবো। দয়া করে কেইস সলভ্ হওয়ার আগে আউট অফ টাউন যাবেন না।
..
মিনিস্টার সাহেবের বাসা থেকে বেরিয়ে স্টিফেন হেডকোয়ার্টারে চলে আসলো। টেকনিশিয়ান নূরকে ডাকলো সে কেভিনে।
স্টিফেন বললো,
— কিছু জানতে পেরেছো ঐ চিহ্ন সম্পর্কে?
.
~ জি স্যার। আপাতত এইটুকু জানতে পেরেছি যে এই ত্রিকোণাকার চিহ্নটি অনেকটা ডেভিলের ধর্ম নির্দেশ করে। যারা শয়তান পূজারী বা শয়তানের উপাসনা করে, তারাই এই ধরণের চিহ্ন ব্যবহার করে।
.
স্টিফেন কিছুক্ষণ থমকে বললো,
— ব্ল্যাক ম্যাজিক?
.
~ না স্যার, ব্ল্যাক ম্যাজিক না। কিন্তু ঐ জাতীয় একটা কাজ। যার মাধ্যমে শয়তানের উপাসনা করা হয়, শয়তানের কাছে চাওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে এই ডেভিল ট্রায়াংগেলটি ব্যবহৃত হয়।
..
ঠিক এসময় হাসিব রুমে ঢুকলো, ঢুকে বললো,
~ স্যার, জোহরা মার্ডার হয় গতকাল রাত আনুমানিক ৩ টা ১৭’র দিকে। আর তার সাথে শেষ যে ব্যক্তি ফোনে কথা বলে তার নাম হলো শফিক। শফিক জোহরার বয়ফ্রেন্ড, আর সে কাল রাতে জোহরার সাথে ফার্ম হাউজে ছিলো। শফিকের সাথে মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রী জোহরার কথা হয় ১ টা ৪২’র দিকে। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো যে আপনি মিনিস্টার সাহেবের কল রেকর্ডের যে স্ক্রিনশট টি দিয়েছেন তার মধ্যে শফিকের নাম্বার চারবার রয়েছে। এর মানে মিনিস্টার সাহেব কাল রাতে শফিকের সাথে চারবার কথা বলেছেন। প্রথমবার ১১ টা ১৫ মিনিটে, দ্বিতীয়বার ১১ টা ৪৭ মিনিটে, তৃতীয়বার ১২ টা ৩৫ মিনিটে আর শেষবার ১ টা ২৭ মিনিটে, অর্থাৎ শফিক জোহরার সাথে কথা বলার ঠিক ১৫ মিনিট আগে। আর শফিক গতকাল রাত থেকেই পলাতক।
.
স্টিফেন তার মোবাইল থেকে সাথে সাথে মিনিস্টার সাহেবকে কল করলো, কল রিসিভ করতেই স্টিফেন বললো,
— স্যার, আপনি কি শফিক নামের কাউকে চিনেন?
.
স্টিফেন প্রশ্নটা করতেই মিনিস্টার সাহেব কেমনজানে নিরব হয়ে গেলেন। কয়েকবার ঢোক খিঁচে বললেন,
~ না। আসলে আমি শফিক নামের কাউকে চিনি না।
..
স্টিফেন ফোন কেটে দিলো। হাসিব বললো,
~ স্যার, এসব ডেভিল ট্রায়াংগেল সবই আমাদের গুমরাহ করার জন্য দেখানো হয়েছে। যাতে আসল খুনি আমাদেরকে এসব সুপারস্টিশাস বিষয়ে ব্যস্ত রেখে পালিয়ে যেতে পারে। সবই মিনিস্টার সাহেবের খেলা। আমি নিশ্চিত মিনিস্টার সাহেবই মারিয়েছেন তার স্ত্রীকে শফিকের দ্বারা।
.
স্টিফেন বললো,
— আচ্ছা যাই হোক, নূর, তোমার কাছ থেকে আমি আরো ভালো কিছু আশা করি। এই ডেভিল ট্রায়াংগেল সম্পর্কে আমি আরো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তথ্য চাই।
.
~ ওকে স্যার।
.
— হাসিব, তুমি শফিককে খুঁজে বের করার ব্যবস্থা করো।
..
হাসিব গতকাল শফিকের ঠিকানা খুঁজে বের করে। আজ সকালে স্টিফেন আর হাসিব দুজনই।শফিকের বাসায় যাওয়ার জন্য বের হয়।
তারা শফিকের বাসার কাছে পৌঁছালেই দেখতে পায় শফিকের বাসা থেকে মিনিস্টার সাহেব বের হচ্ছেন। বের হয়ে তিনি আশেপাশে অনেকটা চোরের মতো উঁকিঝুকি করে গাড়িতে উঠে চলে গেলেন। হাসিব বলে উঠলো,
~ স্যার দেখবেন, আমার কথাই সত্য হবে। এই মানুষটি খুব তীক্ষ্ণ মস্তিষ্কের। তাইতো, আপনার মাথায় সুপারস্টিশাস বিষয়ের জাল বুনে নিজেই নিজের স্ত্রীকে খুন করে অনায়াসে পার পেয়ে যাচ্ছে।
.
— আমি বলছিনা যে তোমার ধারণা ভুল। কিন্তু আমাদের অকাট্য কোনো প্রমাণ নেই। গেস ওয়ার্ক করে আমরা একজন মিনিস্টারের উপর কখনোই খুনের অপবাদ সিতে পারবোনা। ঘুরেফিরে দাগ আমাদের ডিপার্টমেন্টের উপরই আসবে।
.
~ আপনি ভালো বুঝেন স্যার, কিন্তু আমার মনে হয় মিনিস্টার সাহেব অনেক বড় গেইম খেলছেন।
.
— তা সময় বলে দিবে। এখন শফিকের বাসায় ঢুকতে হবে। চলো।
..
স্টিফেন আর হাসিব শফিকের বাসায় ঢুকলো। কিন্তু ভিতরে গিয়ে দেখলো কেউই নেই। চারিদিকে খোঁজার পরও শফিককে পেলোনা তারা।
শফিককে না পেয়ে স্টিফেন আর হাসিব হেডকোয়ার্টারে ফেরত আসলো।
স্টিফেন আর হাসিব স্টিফেনের কেভিনে কেইস নিয়ে আলোচনার সময় হঠাৎ স্টিফেনের কেভিনের দরজায় নক করা হলো। স্টিফেন ভিতরে আসতে বললো বাহিরে থাকা মানুষটিকে।
তারা দেখলো মানুষটি আর কেউ নন, মিনিস্টার সাহেব। মিনিস্টার সাহেব স্টিফেনের কেভিনে ঢুকে স্টিফেনের সামনে বসে পড়লেন। চোখেমুখে কাঁদো কাঁদো ভাব তার।
.
স্টিফেন মিনিস্টার সাহেবকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,
— কি হলো আপনার?
.
~ স্টিফেন, আসলে আমি নিজের অপরাধ শিকার করতে এসেছি।
.
— মানে?
.
~ আমিই আমার স্ত্রীকে খুন করেছি।
.
— কি বলছেন আপনি এসব?
.
~ হ্যা স্টিফেন। আমিই আমার স্ত্রীর খুন করেছি। অ্যারেস্ট মি।
..
হাসিব বলে উঠলো,
~ আমি তো জানতাম আপনিই খুন করেছেন। এতো নাটক করার দরকার ছিলোনা।
.
স্টিফেন বললো,
— কিন্তু কেনো?
.
হাসিব বলে উঠলো,
~ কি কেনো স্যার! নিজের স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের খবর পেয়ে মেরে ফেলেছে আরকি।
.
মিনিস্টার সাহেব বললেন,
— অ্যারেস্ট করেন আমাকে।
.
ঠিক তখনই মিনিস্টার সাহেবের কল আসলো একটি। মিনিস্টার সাহেব কলটি রিসিভ করলেন, মিনিস্টার সাহেব খানিক চুপ থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন। মোবাইলটি পরে গেলো তার হাত থেকে।
স্টিফেন বললো,
— কি হলো মিনিস্টার সাহেব?
.
~ আমার বড় ভাইয়ের ফোন ছিলো। আমাদের বাসার ছাদের পানির ট্যাংকে বড় ভাবির লাশ পাওয়া গিয়েছে।
.
এ কথা শুনেই স্টিফেন তার টিম নিয়ে মিনিস্টার সাহেবের বাসায় চলে গেলো। ছাদে গিয়ে দেখলো ট্যাংকের ভিতর মিনিস্টার সাহেবের বড় ভাবীর লাশ। লাশ ট্যাংক থেকে বের করা হলো। লাশের গলাই হাতে আঙুলের দাগ। বোঝা যাচ্ছিলো যে গলা টিপে মেরে, তারপর লাশকে ট্যাংকে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের জিনিস যা স্টিফেনকে আবারো নড়িয়ে চড়িয়ে দিলো, তা হলো এই লাশের কপালেও ছুরি দিয়ে ত্রিকোণাকার একটা চিহ্ন আঁকা হলো ঠিক যেমনটা মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রীর কপালে আঁকা ছিলো। স্টিফেন চিহ্নটির ছবি তুললো, আর লাশকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিলো।
স্টিফেন মিনিস্টার সাহেবের বড় ভাইয়ের রুমে গেলো।তার বড় ভাইয়ের কাছে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলো। মিনিস্টার সাহেবের বড় ভাইয়ের এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে মিনিস্টার সাহেবের মেয়ের সমবয়সী। একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে। স্টিফেন বললো,
— বাচ্চারা কোথায়?
.
~ ওরা পড়ছে ম্যাডামের কাছে।
.
— একটু কথা বলতে চাই।
.
~ ওকে স্যার, কিন্তু আমাদের বাচ্চারা যেনো কিছুই বুঝতে না পারে।
.
— নিশ্চিত থাকেন স্যার।
..
স্টিফেন রিডিং রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো মিনিস্টার সাহেবের মেয়ে ও মিনিস্টার সাহেবের বড় ভাইয়ের ছেলে পড়ছে তাদের ম্যাডামের কাছে।
স্টিফেন গিয়ে বসলো বাচ্চাদের পাশে, বললো,
— কিসে পড়ো তোমরা?
.
~ আংকেল, আমরা ক্লাস থ্রী তে পড়ি।
.
— কোন স্কুলে?
.
~ সানশাইন কিন্ডারগার্টেন স্কুল।
.
— আচ্ছা।
.
মিনিস্টার সাহেবের বড় ভাইয়ের ছেলে বললো,
~ আংকেল, আজ আমার জন্মদিন। আমাকে উইশ করেন।
.
— তোমার জন্মদিন আজ? শুভ জন্মদিন।
.
তখন মিনিস্টার সাহেবের মেয়ে সাইরা বলে উঠলো,
~ দুদিন আগে আমার বার্থডে ছিলো। কিন্তু আপনি উইশ করেননি আমাকে। ওকে করেছেন।
.
— আহহা, স্যরি স্যরি। নেক্সট ইয়ার মনে রাখবো।

স্টিফেন ম্যাডামকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— ম্যাডাম কি ঐ স্কুলের টিচার?
.
~ জ্বি।
.
— পড়ালেখা করছেন এখনো?
.
~ জি, বিবিএ শেষ করেছি মাত্র। এমবিএ পড়ছি। তাই ভাবলাম পার্ট টাইম জব হিসেবে কিন্ডারগার্টেনে জব করি।
.
স্টিফেন হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে বললো,
— ছোট থেকেই কমার্স নিয়ে পড়েছেন? নাকি সাইন্স পড়েছিলেন কোনো এক ধাপে?
.
~ না, কমার্স নিয়েই অড়েছি।
.
— আসলে এখন তো একটা ট্রেন্ড চলে, এসএসসি পর্যন্ত সাইন্স পড়ে, তারপর কমার্স নিয়ে বিবিএ করার। হাহা।
.
ম্যাডামও হাসলেন।
..
ম্যাডাম তার স্টুডেন্টদের বললেন,
~ আচ্ছা আজ ছুটি তোমাদের। হোমওয়ার্ক গুলো করে রাখবা।
..
ম্যাডাম বের হওয়ার সময় একটা লাল বাক্স তার ব্যাগ থেকে পড়ে গেলো। বাক্সের উপর লেখা ছিলো ‘বায়োজলজি বক্স’।
স্টিফেন বললো,
— ম্যাডাম, আপনার বায়োলজি বক্স পড়ে গিয়েছে।
.
~ ওহ। থ্যাংকিউ।
..
বাহিরে এসে হাসিব স্টিফেনকে বললো,
~ কি মনে হয় স্যার? কে করতে পারে এসব? মিনিস্টার সাহেব তো এসে বলছিলেন যে খুন উনি করেছেন। তাহলে এখন আবার…
.
স্টিফেন বললো,
— আমি নিজেই এখন অনেক দ্বিধাদ্বন্দে। হতে পারে মিনিস্টার সাহেব তার বউয়ের পর, তার ভাবীকে খুন করে ট্যাংকে ফেলে তারপর আমাদের কাছে এসেছেন তার স্ত্রীর খুনের দায় নিতে। কারন ঠিক সেই সময়েই মিনিস্টার সাহেবের ভাবীর খুনের খবর পেয়েছি আমরা। তিনি হয়তো নিজেকে সন্দেহের চোখ থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে অ্যারেস্ট করার নাটক করেছেন, যাতে ২য় খুনের ফোনটি যখন আসে তিনি যেনো আমাদের সামনে থাকেন, আর আমরা যেনো তাকে সন্দেহের লিস্ট থেকে বাদ দিই। সব প্ল্যানিং হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। কিছু বলতে পারছিনা। কারন মিনিস্টার সাহেব এসেছিলেন তার স্ত্রীর খুনের দায় নিতে। কিন্তু মিনিস্টার সাহেবের স্ত্রীকে যেভাবে মাথায় চিহ্ন এঁকে মেরেছে, মিনিস্টার সাহেবের ভাবীকেও ঠিক সেইম প্রসেসে মারা হয়েছে। এর মানে এতে কোনো আলাদা আলাদা মানুষ জড়িত নেই। খুনী একজনই।
.
একটু পর টেকনিশিয়ান নূরের ফোন আসলো। সে তাড়াহুড়োর মধ্যে স্টিফেনকে হেডকোয়ার্টারে আসতে বললো।
..
#চলবে

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে