#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
মায়াবী হরিণী পর্ব ৮ ( শেষ পর্ব)
লিখাঃ জামিয়া পারভীন তানি
“ বাচ্চারা তোমায় ভয় পায়, সেজন্যই হয়তো তোমাকে বলতে সাহস পায়নি। ”
সারা ভেবে না পেয়ে ফারুক কে বললো।
ফারুক প্রতি উত্তরে বললো,
“ তুমি কেন জানাওনি? তুমিও কি ভয় পাও?”
সারা মুখ নীচু করে জবাব দেয়,
“ সাহসে কুলায়নি, যদি রাগ করে বসো৷ ভেবেছিলাম ওরা বড় হয়ে যাক, নতুন করে আবার বিয়ে দিবো। তখন না হয় সবাইকে জানাতাম ।”
“ বিয়ে মানুষের একবার ই হয় জানোনা! ”
“ ও তো শখ করে বিয়ে করেনি, জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো৷ জোর করে বিয়ে টা মানা যায় না, ফুয়াদ ও মানতে পারেনি৷ এখন হয়তো মেয়েটার গুণ দেখে পছন্দ করতে শুরু করেছে। ”
“ আল্লাহর ইচ্ছে তে এই বাঁধন। ভালবাসা তৈরী হবেই। রাতে দেখলাম দুজন কে একসাথে ঘরে ঢুকতে, হয়তো ছাদে গিয়েছিল একসাথে! ”
“ আল্লাহ যেন ওদের কবুল করে নেয়। কিন্তু এইবার নেহার বিয়েটা দেওয়া উচিৎ। ”
“ ভালো পাত্র কোথায় পাবো! মেয়েকে যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিতে চাইনা।“ ফারুকের চোখেমুখে হতাশার ছাপ।
“ একজন আছে, যে নেহা কে পছন্দ করে। পরিবার ভালো, ছেলেও নতুন জব পেয়েছে৷ নেহা কে আগে থেকেই পছন্দ করে। তবে নেহা বিয়ে করতে নারাজ, নাকি চাকরি না পেলে বিয়ে করবে না৷ অথচ ছেলেটা নেহা কে পড়াতে চায়। ”
“ তুমি এসব কোথা থেকে জানলে?”
যেদিন তোমরা বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়েছিলে, সেদিন ফোন দিয়ে এসব বলেছে। আগামী কিছু দিন পর দেখা করতে চেয়েছে বাসায় এসে। পরিবার সহ আসতে চেয়েছে, কিন্তু নেহা না করে দিচ্ছে৷ পারলে মেয়েকে বোঝাও। বিয়ের পর কষ্ট করে হলেও পড়াশোনা বন্ধ করাবেনা এই শর্তে যেন বিয়ে টা করেই নেয় ।” সারা মানসিক অশান্তি তে ভুগছে মেয়েকে নিয়ে, তাই ফারুক বলল,
“ নেহা রাজি হবে, আমি বললে ও কথা ফেলবে না। কিন্তু ছেলেটাকে যদি নেহা অপছন্দ করে, তাহলে ওর বিয়ে ও ঘরে দিবোনা। ” ফারুকের স্পষ্ট জবাব, যা সারার হতাশা বাড়িয়ে দেয়। বয়স হলে অযথা দুশ্চিন্তা বাড়ে আর কি!
হঠাৎ ফারুক বলল,
“ ছেলে ছেলের বউ কে আলাদা ঘর দেওয়া টা প্রয়োজন। কিন্তু কিভাবে দিবো, আমরা কি বাইরে থাকলে ভালো হবে?”
“ তুমি যা ভালো মনে করো! আর কিছুদিন সময় নিলে ভালো হবে ।”
°°°
একবারে স্বপ্নের মতো লাগছে ছোঁয়ার কাছে। চট্টগ্রাম কলেজ এ সবাই চান্স পায়না৷ অথচ এটা তার ছোট বেলার স্বপ্ন ছিলো। ফুয়াদের পরিবারে এসে তার স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হয়েছে। মনে মনে হাজার বার সালাম দিলো ফুয়াদ কে, নতুন বাবা আর মা কে। এরা এতো ভালো একটা পরিবার, যারা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়ে কে হাসিমুখে মেনে নিয়েছে। ওদের মতো আল্লাহ ভীরু পরিবার এই প্রথম দেখেছে। শুকরিয়া করে অনেক, অনাথ হবাত পরও আল্লাহ এতো ভালো বাবা মা দিয়েছে ভেবে৷
দিন গুলো ভালোই কাটছে, নতুন ক্লাস, নতুন পড়া, নতুন কাজ ( যত ছোটই হোক না কেন) কাজকে কখনো হেলা করতে নেই। ওদিকে যে যার মতো ব্যস্ত জীবন। এরই মধ্যে নেহার বিয়ের সমন্ধ প্রায়ই পাকা। বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হয়ে গেছে। কিন্তু নেহার বিয়েতে কোন মত নেই৷ নেহার শুধু মনে হচ্ছে, “ বিয়ের ফলে সে পরাধীন হয়ে যাবে। তার আর ব্যাংকে চাকরি পাওয়া হলো না! সব স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হচ্ছে বাবার জন্য৷ কিন্তু আবির, সেও যদি তার কথার খেলাপ করে! তখন তার কিই বা হবে! ” সে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর ভয়াল থাবার কথা চিন্তা করে অসুস্থ হতে থাকে।
ছোঁয়া এসে নেহার চুলে তেল দেওয়া শুরু করলো রাতের বেলায়। নেহা একপ্রকার চমকে গিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকালো। ছোঁয়া বলল,
“ কি নিয়ে এতো ভাবছেন আপু? আমায় কি শেয়ার করা যাবে?”
নেহা উদাসীন হয়ে বসে থাকে। একপর্যায়ে কাঁদতে শুরু করলো। ছোঁয়া ভাবলো আপু বললে বলতেও পারে, তাকে সময় দেওয়া উচিৎ। এই ভেবে নেহার সব গুলো চুলে তেল লাগিয়ে দেয়। তেল দেওয়া শেষ করে চুল আঁচড়ে বেণি গেঁথে দেয়। পরে বলে
“ কি বিশ্রী অবস্থা দেখেছেন চুলের? একদম জট বেধে গেছে। ”
“ আর চুল কি হবে? এখন তো সংসার নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে। ”
“ মন খারাপ করবেন না আপু, হয়তো আপনিও শূন্য থেকে শুরু করতে পারবেন। তাছাড়া ভাই কে ভালোই মনে হয়েছে। আড়াল থেকে কথা শুনেছি। সব থেকে বড় কথা উনি আপনাকে ভালবাসে৷ ধরেন আপনার অন্যত্র বিয়ে হলো, সে ছেলে আপনাকে ভালো না বেসে অত্যাচার করতেও পারে! সব কিছু ভেবে দেখে আপনি মন থেকে মেনে নিন আপু। ”
ছোঁয়ার কথা গুলো এক দিক দিয়ে ঠিক। তবুও নেহার খারাপ লাগা শুরু হয়। নেহা শুধু মাথা নেড়ে সায় দেয় ছোঁয়ার কথার। বুঝিয়ে দেয়, মেনে নিবে সে এই বিয়েটা।
দুইদিন পর সম্পূর্ণ ঘরোয়া ভাবে নেহার বিয়েটা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের খরচ নেহার বাবার নেই এটা আবির বুঝতে পেরেছিলো নিশ্চয়ই। তাই তো নেহা কে বিয়ের আগে বলেছিলো , “ যে বিয়েতে সব চেয়ে খরচ কম সেই বিয়ে সব চেয়ে বরকতময়। ”
ফারুক আলী কে হয়তো বেশী খরচ করতে হয়নি, তবুও মেয়ের জামাই কে যথার্থ সম্মান করে। আবির মাত্র চার জন বরযাত্রী এনে বিয়ে করলেও নেহা কে একদম মনের মতো করে বউ সাজিয়ে নিয়ে যায়। তবে বেনারসি ছিলো কমলা রঙের, যা কিনা নেহার পছন্দের রঙ৷ কোন রকম হৈ হুল্লোড় ছাড়া নেহা কে শ্বশুর বাড়ি বিদেয় করে দেয় ফারুক আলী। বোন কে ছাড়া ঘরটা একদম ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ফুয়াদের। কখনো ভাই দুটো বোন কে ছাড়া থাকেনি ,তাই বিদায় বেলা নেহার দুই হাত দুই ভাই ধরে অঝোরে কাঁদছিলো। ছোঁয়া দূর থেকে এসব দেখে নিজেও খুব কেঁদেছে৷ ছোঁয়ার শুধু মনে হচ্ছিলো ,ইশ, তার যদি মা বাবা ভাই থাকতো, তাহলে হয়তো এভাবেই ভালবাসতো। আল্লাহ হয়তো সবাইকে সব কিছু দেয় না, দিলে মানুষ আল্লাহ কে ভুলে যেতো।
নেহার বিয়ের ৫ দিন পর ফুয়াদের এইচএসসি রেজাল্ট দেয়। ফুয়াদ নিজেও গোল্ডেন পেয়েছে। ছোঁয়া আজ এতো খুশি হয়েছে যে এশার ফরজ নামাযের পর দুইবারে চার রাকাআত নফল নামাজ পড়ে। নিজের জমানো টাকায় পায়েসের উপকরণ আনতে বলে । সারা খুশি হয়ে পায়েস রান্না করে সবার জন্য। সবার খাওয়া শেষ হলে ফুয়াদ বলল,
“ এটা ক্ষণিকের খুশি, যদি ভালো জায়গায় চান্স না পাই তাহলে এই আনন্দ বৃথা যাবে। ”
ছোঁয়া খুশি হয়ে বলল,
“ আল্লাহ চাইলে আপনি ইনশাআল্লাহ পারবেন। কেন হতাশ হচ্ছেন?”
“ তবুও..”
ছোঁয়া মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল,
“ অতীত এ যা হয়ে গেছে তা নিয়ে আফসোস করবেন না, আবার ভবিষ্যতে কি হতে পারে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। বর্তমান নিয়ে সুখে থাকুন৷ কেননা আপনার আমার ভবিষ্যৎ কেউ জানিনা। কখন মৃত্যু আসে জানিনা , তাহলে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করে নিজের শরীর খারাপ করার কি কোন মানে আছে?”
ফুয়াদ কিছু বলতে চেয়েও বললো না। মনে মনে ভাবলো, পড়াশোনা বাড়িয়ে দিলে ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবে। ছোঁয়ার সাথে কয়েকবার চোখাচোখি হলেও ফুয়াদ বেশী কথা না বাড়িয়ে নিজের শোবার জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। মেয়েটা অনেক ভালো, তবুও মন টা খারাপ লাগে। হয়তো সারাদিনের ক্লান্তিতে অদ্ভুত খারাপ লাগা গুলো তৈরী হয়৷
সময় প্রবাহমান, সময় বদলে যাচ্ছে , জীবনের চাহিদা ও পরিবর্তন হচ্ছে। আগে যা ভালো লাগতো এখন সেটা হয়তো ভালো না ও লাগতে পারে৷ ছোঁয়ার সাথে নেহার ফোনে কথা হয়। নেহা শুধু একটা কথাই বলে,
“ শ্বশুর বাড়ি মেয়েরা যে স্বপ্ন নিয়ে যায়, সবার সে স্বপ্ন পূরণ হয়না! সেই সব দুর্ভাগা দের মাঝে হয়তো আমি একজন। ”
ছোঁয়া আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পায় না৷ কিভাবে জিজ্ঞেস করবে? বুঝতেই পারে তার একমাত্র ননদ সুখে নেই। সারাদিন পরিশ্রম করে বাবা মায়ের ঘরে যে সুখ পাওয়া যায়, শ্বশুর বাড়ি তে সবাই সেটা পায় না। কিন্তু কিছু বলার সাধ্য মেয়েদের নেই। স্পষ্ট জবাব দিলে মেয়ে হয়ে যায় তর্ক কারী বেয়াদব বৌ। আর নীরবে সহ্য করলে, মিনমিনে শয়তান, রাতের বেলায় ছেলের কান ভাঙায়। শ্বশুর শাশুড়ী কে কখনো কোন কাজ করে খুশি করা যায় না। অতিমাত্রায় ভালো শ্বশুর শাশুড়ী ছাড়া৷
মাস তিনেক পর ফুয়াদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তে পরীক্ষা দেয়। ফুয়াদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটা সাবজেক্ট এ মেরিটে চান্স হয়। প্রাণী বিজ্ঞান, কেমিস্ট্রি, আর ফার্মেসী। কিন্তু ফুয়াদের মনের মতো একটা সাব্জেক্ট হয়নি এগুলো। কিন্তু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এর রেজাল্ট দেখে হতবাক হয়ে যায় ফুয়াদ । ১০ ম হয়েছে সে। এতো ভালো ফলাফল করবে আশাও করেনি। আল্লাহ যখন যাকে দেয় দুই হাত ভরে দেয় ব্যপার টা এরকম।
ফুয়াদ বাসায় এসে ছোঁয়া কে কোলে তুলে ইচ্ছেমতো ঘুরাতে শুরু করে । এই দ্বিতীয় বারের মতো ছোঁয়ার এর কাছাকাছি ফুয়াদ। নিজের মনের আনন্দ প্রকাশ স্বরূপ ছোঁয়ার পেটে একটা কিস দিয়ে বসে। একে লজ্জা, দুই এ উত্তেজনা। ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে ফেলে। হঠাৎ ফুয়াদ ছোঁয়াকে কোন থেকে নামিয়ে জড়িয়ে ধরে।
“ আচ্ছা তুমি আমার থেকে দূরে থাকতে পারবে?”
“ নাহহ, কিভাবে পারবো?”
“ আমি চুয়েটে চান্স পেয়েছি। সেখানেই ভর্তি হবো, তুমি এখন থেকে একা একা ই থাকবে, আর আমি মেসে। ”
ছোঁয়া খুশি হয়, কিন্তু মন খারাপ করে বললো,
“ আপনি ওইখানে গিয়ে মডার্ণ মেয়ের প্রেমে পড়ে যাবেন না তো!”
“ ঘরে সুন্দরী বউ রেখে পরমহিলা দেখে পাপ কামিয়ে কি করবো?”
“তাই…”
“ একদিন সব সুখ এনে দিবো তোমায় ইনশাআল্লাহ। সেদিন আমাদের মিলন হবে আল্লাহ চাইলে। মনের সাথে মন, আত্মার সাথে আত্মা। ”
“ আল্লাহ আপনার সহায় হোক। ”
অবশেষে কয়েকদিন মা বাবার থেকে বিদায় নিয়ে ফুয়াদ ভর্তি হতে চলে যায়। ছোঁয়ার শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনা বাকি। মাঝে মাঝে আসবে ছেলে টা, শুধু পথ চেয়ে বসে থাকতে হবে। তবে চোখে রঙের স্বপ্ন, ফুয়াদ একদিন তাকে মন থেকে ভালোবাসবে।
সমাপ্ত
মায়াবী হরিণীর দ্বিতীয় সিজনের অপেক্ষা করুন। তখন জানতে পারবেন, ফুয়াদের সাথে কি ছোঁয়ার মিল হয়েছিলো! নেহা আর আবিরের দাম্পত্য জীবন কেমন কাটছে? ফাহাদ কি করছে এখন? ছোঁয়ার মা কেন জেলে? এই সিজনে এতো কিছু দেওয়া হলোনা বলে দুঃখিত। এই পর্যন্ত কেমন লেগেছে আপনাদের জানাবেন। অবশ্যই ভুল গুলো দেখিয়ে দিবেন। শুকরিয়া।
Onnek balo legeche. Sesson 2 golpo chai plzzzz
Season 2 kobe ashbe.
Sure dite parbo na,writer er opor depend, writer ekhono season 2 likhe nai
Writer r kotodin pre season 2 likhben? It’s already been 1 year
1 year hye gelo. R kotodin pr writer season 2 likhben?!
1 year hye gelo, r kotodin pr writer season 2 likhben?
Writer season 2 r kotodin pr likhben? It’s already been 1 year
Writer season 2 r kotodin pr likhben? 1 bochor to hyei gelo