#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
মায়াবী হরিণী পর্ব ৫
লিখাঃ জামিয়া পারভীন তানি
“ তোমার ভাগ্নী তো বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে মুহিদুল। ” সুহানার কথা বুঝে উঠার আগেই তারানা বলল,
“ হ্যাঁ বাবা, তাও আবার আমার গণিত মাস্টারের সাথে। ”
ভিডিও কলের ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মুহিদুল ইসলাম। শুধু বলল,
“ ছোঁয়া এমন করতে পারলো! কতো আশা করেছিলাম ও পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবে। ”
“ এহহহ! মেয়ের কি যৌবন চাহিদা। ও তো এখন রঙ করতে ব্যস্ত, ও আবার পড়বে কখন? ”
“ মুখ সামলে কথা বলো সুহানা। ভুলে যেও না আমি ওর মামা হই। ওর সাথে কথা বলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করো৷ নইলে দেশে এসে তোমাকে দেখে নিবো৷ ”
“ ভাগ্নী প্রেম উথলে পড়ছে দেখছি, তা তোমার ভাগ্নী কই পালিয়ে গেছে দেখতে গেছি নাকি!”
“ তুমি একটা শয়তান মহিলা।”
বলেই ফোন কেটে দেয় মুহিদুল। বাবা বেছে বেছে এই শয়তান মহিলা টা কে ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিলো বলে মৃত বাবা কে মনে মনে দোষারোপ করতে থাকে। এইজন্যই বুঝি মা এই মেয়েকে পছন্দ করতো না। আহারে, মা টা আমার দুখ পেয়েই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে৷ যেমন মা, মেয়েটাও হয়েছে তেমন৷ শয়তানের পেট থেকে শয়তানই তো জন্মাবে। এগুলো ভেবে মন খারাপ করে নিজের ডিউটি তে মন দেয় মুহিদুল ইসলাম। প্রবাসে প্রচুর কষ্ট করতে হয়৷ ডে লেবার দের কষ্টের সীমা নেই৷ অথচ তাদের পরিবার এমন একটা ভাব ধরে, যেনো তাদের স্বামী বা বাবা বা ভাই খুব সুখে আছে। টাকা পাঠাচ্ছে বেহিসেবী। অথচ একবার ও খোঁজ নেয় না, তারা আছে কেমন? কিংবা তারা খাচ্ছে টা কি?
মুহিদুল আবারও দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে৷ হায়রে জীবন! সবই শুধু স্বার্থপরতা।
°°°
সারা ফিরে এসে বিছানার কোণে বসে পড়ে। খুব পরিশ্রম হয়েছে আজ৷ তবুও ঠোঁটের কোণে হাসির ছোঁয়া। ১০ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে ছোঁয়া কে ডাক দেয়৷ ছোঁয়া দৌড়ে আসে, যেন ডাকের অপেক্ষায় ছিলো।
“ গয়না গুলো অপির শাড়ির সাথে পুরো মিলে গেছে। অপি তো জানিয়ে দিয়েছে এই গয়না গুলো সে কিনবে৷ কিন্তু.. . “
বলে একটু থেমে আবার বলল,
“ বাজার দামের চেয়ে কম দিবে বলেছে। ”
ছোঁয়া হাসলো, বলল,
“ দিয়ে দিন মা, বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেক মেয়ে আসবে। যদি কেউ পছন্দ করে, আবার অর্ডার করতে পারে৷ ”
সারা ও হাসলো, মেয়েটার বুদ্ধি আছে বৈকি।
এরই মাঝে ফারুক আসে ডিউটি শেষ করে। এসেই জিজ্ঞেস করে ,
“ মা মেয়েতে কি বিক্রির শলা পরামর্শ চলছে? ”
ছোঁয়া ফারুক কে খেয়াল করে আস্তে করে সরে আসলো। যাওয়ার সময় বলে গেলো,
“ বাবা আমি আসছি। ”
ফারুক অবাক হলো, সারা কে জিজ্ঞেস করলো,
“ আরেকজনের বাবাও হয়ে গেলাম রাতারাতি! ”
সারা হাসলো, হেসে বললো,
“ মেয়ে সন্তান কল্যাণ নিয়ে আসে। যেমন এই মেয়েটা আসতে না আসতেই পরিবারের জন্য কি পরিশ্রম টাই না শুরু করেছে দেখো। ”
বলে ছোঁয়ার বানানো গয়না দেখালো, আর বলল,
“ ফুল সেট বিক্রি করে ৪০০ মত লাভ থাকবে। ”
“ বাহহ! মেয়েতো ভালোই কাজের!”
“ দেখিও, এগুলো যদি আরও বিক্রি হয়, তাহলে হয়তো আরেকটু সুখের মুখ দেখবো আমরা। কারণ সেলাই করার চেয়ে এই কাজে লাভ বেশী। যদিও খাটনি প্রচুর, ধৈর্য লাগে অনেক। ”
ফারুক অবাক হয়ে বলল,
“ দেখো, অচেনা মেয়েকে আশ্রয় দিয়ে আবার বিপদ না আসে!”
সারা তবুও বিশ্বাসের সাথে বলল,
“ আল্লাহ আমাদের সাথে এমন করবেন না ইনশাআল্লাহ। ”
“ আচ্ছা চলো, খেতেও দিবে না নাকি!”
“ কেন দিবো না! ” বলে সারা হাসিমুখে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো।
ফারুক খাওয়া শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। সারাদিনে দাঁড়িয়ে থাকাই কাজ, খুব অল্প সময় বসার সুযোগ পায়। দুপুরে শুকনো রুটি খেতে যেটুকু বসার সুযোগ পায় সেটুকুই। এরই মাঝে সারা ঘরে আসলো ।
এসেই বলল,
“ ভাবছিলাম ড্রইংরুমে দুই ভাইয়ের থাকার তোষক টা বিছিয়ে দিবো। মেয়েরা একসাথে থাকুক, ছেলেরাও বড় হচ্ছে। ”
“ হু সেটাই করো, হাজার হোক বেগানা নারী ঘরে আছে৷ এক ঘরে সবাই থাকা ঠিক ও হচ্ছেনা। ”
সিড়িঘর থেকে ঢুকেই অল্প একটু জায়গা, এক কোণায় দুই ভাইয়ের তোষক টেনে নিয়ে আসে সারা। ছোঁয়া অবশ্য সাহায্য করেছে, কিন্তু বুঝেনি কেন বাহির করে দিলো বিছানা টা৷
রাত্রে ফাহাদ ফিরে এসে বাইরে বিছানা দেখে মন খারাপ করে। জিজ্ঞেস করে,
“ এখানে শুতে হবে?”
সারা তখনও হাসি মুখে বলল,
“ পড়াশোনা আমাদের ঘরে করিস, আর এখানে ঘুমাস। বিছানা তো আছেই, ঘুম হলেই হলো! কতো মানুষ তো শুবার জায়গা টুকুও পায়না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করো যে একটা থাকার জায়গা আমাদের আছে। ”
ফাহাদ মনে মনে ছোঁয়ার উপর বিরক্ত হয়ে গেলো, ওর জন্যই আমাদের আজ থেকে এখানে ঘুমাতে হবে।
নেহা ফিরে এসে দেখলো বাইরে বিছানা , কিছুই না বলে কাজ শেষ করে আসলো। এসেই মায়ের কানে কানে বলল,
“ ভালো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছো৷ ফাহাদের সামনে ছোঁয়া ইতস্তত বোধ করছিলো কালকে। ”
“ হাজার হোক, ছেলের বউকে তো পর্দা রক্ষার সুযোগ দিতেই হবে। ”
নেহা একটু হেসে ফাহাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘরে ঢুকলো। ছোঁয়া তখনও গয়না বানাচ্ছে। নেহা অবাক হয়ে যায়। এতো সুন্দর ডিজাইন! বলেই ফেললো,
“ ইশশ, কি সুন্দর করে বানাচ্ছো! আমার তো লোভ লাগছে খুব। ”
ছোঁয়া মুচকি হাসলো।
°°°
চারদিন পর,
ছোঁয়ার বানানো ৩ সেট গয়না বিয়ে বাড়িতে বিক্রি হয়ে যায়। ভাগ্যিস ছোঁয়া এক্সট্রা আরেকটা বানাচ্ছিলো, নইলে আরেকটা অর্ডার আছে। পরেরদিন ই লাগবে সেটা৷
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে না হতেই ছোঁয়া অস্থির হয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় ফুয়াদ আসামাত্র ইশারা করে ডাকে ফুয়াদ কে। ফুয়াদ বুঝতে না পেরে বলল,
“ আগে খেয়ে নিই, এরপর কথা বলছি। ”
ছোঁয়া মন খারাপ করে বসে থাকলো, ফুয়াদ খেয়ে রুমে আসামাত্র বলল,
“ আপনার কাছে ফোন আছে? ”
“ কাকে কল করবে?”
“ না মানে, একটু জরুরী ছিলো। ”
ফুয়াদ নিজের ছোট্ট ফোন টা ছোঁয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয়৷
চলবে….