#মায়ের_মেয়ে
#অন্তিম_পর্ব
#ইয়াসমিন_খন্দকার
সময় গড়িয়ে চলে নিজের মতো। কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সেইদিন প্রেরণার মৃত্যুর পর কে*টে গেছে অনেক গুলো দিন। বলতে গেলে বছর। চলে গেছে ২০ টি বছর। এই ২০ বছরের মধ্যে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে।
সাদিক ও ময়নার ঘরে মিলি নামের একটি মেয়ে এসেছে। তবে সাদিক প্রেরণার মেয়ে পুতুলকে বেশি গুরুত্ব দেয়। অনেক বেশি ভালোবাসে। যার জন্য মিলির হিংসার শেষ নাই। আমেনা বেগম এখনো বেঁচে আছেন। এবং এই বয়সেও বেশ ভালোই আছেন। সবসময় ময়না আর মিলিকে নিয়ে পুতুলের পিছে লাগার ফন্দি করেন। কিন্তু পুতুলকে জব্দ করা এত সহজ নয়। কারণ সে হয়েছে একদম তার মা প্রেরণার মতোই। সৎ মায়ের অত্যা*চারিত কোন মেয়ে সে নয়। বরং প্রতিবাদী এক মেয়ে। যে সবসময় নিজের অধিকার জাহির করে। কখনো কাউকে এক চুল ছাড় দেয় না। তাই তো আজ সকলে তার প্রতি বিরক্ত। মেয়েটা একাই তিনজনের মাথা ব্যাথার কারণ। বি*ষ ফোড়ার মতো আটকে আছে সবার জীবনে।
ময়না আমেনা একসাথে মিলে এই ব্যাপারটা নিয়েই আলাপ করছিল। আমেনা বেগম বলছিল,“ওর মাকে যেভাবে পথ থেকে সরিয়ে ছিলাম ওর বেলাতেও মনে হয় তাই করতে হবে।”
ময়নাও তালে তাল মিলিয়ে বলতে থাকে,“হ তুমি তাই করো৷ এই মাইয়াডা আমার হাড় হাড্ডি জ্বালাইয়া রাইখা দিলো৷ এর একটা ব্যবস্থা তো করন লাগবোই।”
“তুই কোন চিন্তা করিস না। আমি এবার সব ব্যবস্থা করব ওকে পথ থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য।”
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে এই সমস্ত কথা শুনে নেয় পুতুল৷ রাগে তার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।
“তার মানে সৎ মা আর দাদি মিলে আমার মা*কে মে*রে ফেলেছিল। আমি আজ সব সত্যি জানতে পারলাম। এবার এদেরকে এদের খারাপ কাজের শাস্তি দেবার পালা। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি আমার মায়ের খু নিদের উপযুক্ত শাস্তি দেবোই।
কয়দিন থেকেই গ্রামে শোনা যাচ্ছে ভূতের উৎপাতের কথা। সবাই নাকি রাতে একটা লাল পেড়ে শাড়ি পড়া এলোমেলো চুলের নারীমূর্তি দেখতে পাচ্ছে।
এই নিয়ে গ্রামে বেশ গুজবও রটিয়েছে। অনেকে নিজের মতো গল্প বানিয়েও শুনিয়ে যাচ্ছে সক্কলকে।
ময়না ও আমেনাও ইদানীং বেশ ভীত হয়ে আছে। একদিনের কথা ময়না রাতে টয়লেটে গেলে সেই ছায়ামূর্তির দেখা পায়। ভয়ে শিউরে ওঠে চিৎকার দিয়ে পালায়। আবার আমেনাও একদিন নিজের ঘরের পাশে উদ্ভট শব্দ শুনে বাইরে এসে সেই ছায়ামূর্তি দেখে। এসব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করছিল তারা।
এমনই এক রাতের কথা। সাদিক কিছু জরুরি কাজে বাইরে গেছে। তার সাথে গেছে পুতুলও। বাড়িতে মিলি, ময়না আর আমেনা একাই। রাত ১২ টা বাজতেই বাড়ির মধ্যে বিভিন্ন অদ্ভুতুরে কাণ্ডকীর্তি ঘটতে থাকে। সবাই ভয়ে শিউরে ওঠে।
দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে এক ছায়ামূর্তি। এগিয়ে যায় আমেনার দিকে। আমেনা ভয়ে মাগো বাবাগো করে চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু তার এই চিৎকার কারো কানেই পৌঁছাতে পারে না। ছায়ামূর্তি একদম কাছে এসে বলে, “আপনি আমায় মে*রে ফেলেছিলেন তাই না মা? আমি আজ প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছি।”
“কে তুমি?”
“আমাকে চিনতে পারছেন না? আমি প্রেরণা।”
ময়না বলে,“তুমি কিভাবে ময়না হতে পারো? তোমাকে তো আমরা দুজনে মিলে মে*রে ফেলে দিয়েছিলাম।”
মিলি চমকে যায়। বলে,“এসব তুমি কি বলছ আম্মু? তোমরা কাকে খু*ন করেছ?”
“তোকে পরে সব বুঝিয়ে বলব। আপাতত চুপ থাক তো।”
ছায়ামূর্তি বলে,“আজ আমি নিজের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেব। তোদের দুজনের ঘাড় ম*টকে দেব।”
আমেনা ভয়ে ছায়ামূর্তির পা এর কাছে বসে পড়ে। মিনতি করে বলে,“এমন করো না। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।”
“ক্ষমা চেয়ে আর কি হবে? আপনি কি পারবেন আমার জীবন ফিরিয়ে দিতে?”
“তুমি যা চাও তাই করব। শুধু আমাদের ছেড়ে দাও।”
“বেশ তাহলে পুলিশের কাছে গিয়ে নিজেদের সব দোষ স্বীকার করে নিন।”
“আচ্ছা আমরা কাল পুলিশের কাছে গিয়ে সব স্বীকার করে নেব। যে আমরাই তোমাকে খু*ন করেছি।”
“তার আর প্রয়োজন হবে না, আমরা এসে গেছি।”
বলেই কিছু পুলিশ সদস্য চলে আসে। তাদের সাথে আসে সাদিকও। সাদিক ঘৃণাভরে বলে,“ছি আম্মা! তোমার থেকে এমন আশা করিনি। কি দোষ করেছিল প্রেরণা? কেন তুমি ওকে খু*ন করেছিলে?”
ছায়ামূর্তি নিজের আসল চেহারায় আসে। সে আসলে পুতুল। যে নিজের মাকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে এই সাজে সেজেছিল। পুতুল সবার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে,“তোমাদের প্রতিহিংসার জন্য আমায় মা হীনা বড় হয়ে উঠতে হয়েছে। তোমাদের আমি ঘৃণা করি। তবে আমি জানি আমার মা যেখানেই থাকুক আজ সে বড্ড খুশি হবে তোমাদের এই পরিণাম দেখে।”
পুলিশ আমেনা আর ময়নাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পুতুল সাদিককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। মিলি এসে পুতুলকে জড়িয়ে ধরে বলে,“তুমি কেঁদোনা আপু। আমিও আমার আম্মুকে কখনো ক্ষমা করবো না। তোমাকে আমি যতই অপছন্দ করি না কেন আমার আম্মুর এই চরম কৃত কাজ আমি সমর্থন করি না। সে শাস্তি ডিজার্ভ করে।”
পুতুল মিলিকে জড়িয়ে বাচ্চাদের মতো কাদতে থাকে। আজ সকলেই যেন তার কান্না থামাতে ব্যর্থ। এক মা হারা মেয়ের আর্তনাদে ভাড়ী হয়ে উঠেছে চারিদিকের পরিবেশ। এই পরিস্থিতি তে হয়তো শান্তনাও কাজ করে না। কাজ করে শুধু আবেগ,আবেগ,আবেগ, আবেগ আর আবেগ।
সব শেষে পুতুল নিজের মায়ের ছবির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজের চোখের জল মুছে সামান্য হাসার চেষ্টা করে বলে,“তুমি শান্তি পেয়েছ তো মা? তোমার দোষীদের আইন শাস্তি দেবে। দেখবে আমি ওদের ফা সিতে ঝুলিয়ে তারপর শান্তি তে নিঃশ্বাস নেব। তুমি ওপার থেকে আমার জন্য দোয়া করো। আমি যেন সামনে এগিয়ে যেতে পারি। আমি তোমার মেয়ে, আমার “মায়ের মেয়ে।”
The End