মায়ের মেয়ে পর্ব-০২

0
566

#মায়ের_মেয়ে
#দ্বিতীয়_পর্ব
#ইয়াসমিন_খাতুন

প্রেরণার বিরুদ্ধে ময়না, আমেনা বেগম এর চক্রান্ত জোরালো হতে থাকে। তারা দুজনেই বেশ কূটবুদ্ধি সম্পন্ন মহিলা ছিল এবং দুজন মিলেই ছলনার পথ বেছে নেয়। আমেনা বেগম ময়নার সাথে মিলে পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মতে তার সিদ্ধান্ত হলো,“সাদিক শুধু আর শুধু বাচ্চার জন্য ওর প্রতি মায়া দেখাচ্ছে। এক কাজ কর, তুই ও সাদিকের সাথে ঘনিষ্ঠ হ। মানে গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা কর। নাহলে দেখবি ঐ প্রেরণার সমান গুরুত্ব তুইও পাবি।

ময়না আমেনা বেগম এর পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করতে শুরু করে। কিন্তু তাতে কোনই লাভ হয়না। কারণ ময়না কিছুতেই গর্ভবতী হয়না। এতে সে বেশ রেগে যায়।

প্রেরণার মাতৃত্বকালীন সময় বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে তার সাত মাসের গর্ভস্ততা কালীন সময় চলে আসে। এটা যেন আমেনা বেগম ও ময়নাকে আরো বেশি রাগিয়ে দেয়। কারণ সবকিছু তাদের পরিকল্পনার বাইরে ঘটছিল যা তাদের স্বার্থের পরিপন্থী বলে বিবেচিত হয়। সাদিক সন্তানের মায়ায় প্রেরণার সব কথা মেনে নেয়। ময়নাকে প্রেরণার হয়ে সব ধরনের কাজই করতে হচ্ছিল৷ আমেনা বেগমও এসব সহ্য করতে পারছিলেন না। এইজন্য তারা দুজন মিলে খুবই নিষ্ঠুরতম একটা পরিকল্পনা করে। আর সেই পরিকল্পনা ছিল প্রেরণাকে মে*রে ফেলা। এই পরিকল্পনা হাতে নিয়ে দুজন কাজ করতে থাকে।

আমেনা বেগম একদিন চুপি চুপি বাজারে গেলেন। বাজারে গিয়ে বিষ কিনে আনলেন। সেই বিষ এনে তুলে দিলেন ময়নার হাতে। ময়নাকে পরামর্শ দিলেন,“শোন এই বি*ষটা তুই প্রেরণার যে রাতের খাবার দিবি সেখানে মিশিয়ে দিবি। তাহলেই কাম খতম।”

“তুমি এসব কি বলছ ফুফু? আমারে কি জেলের ভাত খাওয়াতে চাও নাকি?”

“যাহ, বাবা! তুই জেলের ভাত খাবি কেন?”

“ঐ প্রেরণা বি*ষ খাইয়া মইরা গেলে তোমার ছেলে কি চুপ কইরা বইসা থাকব ভাবছ? সেও নিশ্চয়ই পুলিশ ডাকবো। আর যদি পুলিশ তদন্ত করে দেখে বি*ষ খাইয়া মইরা গেছে তহন তো দোষটা আমার উপরেই আইবো।”,

“তুই তো ঠিকই বলেছিস ময়না! আমি তো এই ভাবে ভাবিইনি!”

“এইজন্য তো তোমার বুড়ি মাথার বুদ্ধির উপর আমার ভরসা নাই।”

“আমাদের তাহলে কি করা উচিৎ ময়না?”

“আমাগো এমন কাম করতে হইবো যাতে সা*পও ম*রে আর লাঠিও না ভাঙে। আর সেই জন্য ঐ প্রেরণার বাচ্চা হওন পর্যন্ত আমাগো অপেক্ষা করনো লাগবোই। শুধু একটু ধৈর্য রাখ। ধৈর্য ধরলেই ফল পাওন যাইবো৷ তুই দেইখা লইও।”

“আচ্ছা।”

প্রেরণার সন্তান জন্মদানের সময় ঘনিয়ে আসতে লাগল। আমেনা বেগম ও ময়নাও তাদের দুষ্টু পরিকল্পনা রেডি করে রেখেছে। একদিন হঠাৎ করে প্রেরণার লিভার পেইন ওঠে। ময়না সেটা দেখতে পেয়েই আমেনা বেগমকে খবর দেয়। আমেনা বেগম খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলেন,“এই সুযোগের অপেক্ষাতেই তো ছিলাম। চল চল এখন কাজে লেগে পড়ি।”

দুজন মিলে আসে প্রেরণার বড় কোন ক্ষতি করতে। কিন্তু প্রেরণার ভাগ্য ভালো ছিল তাই সাদিক সঠিক সময়ে চলে আছে। সাদিক প্রেরণাকে এই অবস্থায় দেখে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। যা দেখে ময়না ও আমেনা বেগম একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে থাকে। দুজনে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে যায়।

প্রেরণাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা শুরু হয়। এদিকে আমেনা বেগম ও ময়না দুজনে একে অপরের সাথে মিলে পরিকল্পনা করতে থাকে কিভাবে প্রেরণাকে শায়েস্তা করা যাবে। অনেক ভেবে প্রেরণার জন্য চরম জঘন্য পরিকল্পনা করে আমেনা বেগম বলেন,“অনেক সহ্য করছি। আর না। এবার আমি ঐ প্রেরণাকে জব্দ করার উপায় পেয়ে গেছি৷ খুব জ্বালিয়েছে আমায়। এবার আমি ওরে এই পৃথিবী থেকে চিরকালের মতো তাড়িয়ে দিবো।”

ময়না উৎফুল্ল হয়ে বলে,“তুমি সত্য বলছ ফুফু? কিন্তু এটা কেমনে সম্ভব?”

“তুই শুধু দেখে যা আমি কি কি করি।”

———-
প্রেরণার সিজা*র চলতে থাকে। সাদিক বাইরে দাঁড়িয়ে হেটে পায়চারি করতে থাকে উত্তেজিত মনে। এরমধ্যে একজন নার্স একটি বাচ্চা কোলে নিয়ে বেরিয়ে আসে। নার্সটি বাচ্চাটিকে সাদিকের কোলে তুলে দিয়ে বলে,“এই নিন আপনার মেয়ে হয়েছে। সাদিক খুশিতে নিজের মেয়েকে কোলে তুলে নেয়। তারপর ডাক্তারকে প্রশ্ন করে,“আমার স্ত্রী কেমন আছে?”

“ওনার অবস্থা খুব একটা ভালো না। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে ডাক্তার ওনাকে বাঁচানোর প্রানপণ চেষ্টা করছেন। এখন সবটাই সৃষ্টিকর্তার হাতে।”

প্রেরণার এমন অবস্থা সাদিককে ভীষণ পীড়া দেয়।

দুই দিন পর,
সাদিকের জীবন অনেকটাই পরিবর্তন হয়। সে নিজের ছোট মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত। প্রেরণা এখনো চিকিৎসাধীন থাকায় নিজের মেয়ের দায়িত্ব তাকে একাই পালন করতে হচ্ছে। আমেনা বেগম, ময়না মাঝে মাঝে আলগা পিরিত দেখাতে আসলেও তাদের উপর সাদিক ভরসা পায় না।

আমেনা বেগম একদিন কিছু টাকা নিয়ে হাসপাতালে চলে আসেন। প্রেরণার কেবিনে দায়িত্বে থাকা নার্সকে তিনি বলেন,“এই যে শোনো তোমার সাথে একটা কথা আছে।”

“হ্যাঁ বলুন?”

“ঐ প্রেরণার মানে আমার বৌমার অবস্থা এখন কেমন?”

“আগের থেকে ভালো।”

“তুমি একটা কাজ করতে পারবা?”

“কি কাজ?”

“যখন ঐ কেবিন ফাকা হবে তখন আমাকে খবর দিতে হবে। তোমাকে এদিকটা খেয়াল রাখতে হবে। আর আমাকে জানাতে হবে।”

“কিন্তু এসব কেন বলুন তো?”

আমেনা বেগম ঐ নার্সের সামনে এক ব্যাগ টাকা ধরে বলেন,“ফল খেতে দিচ্ছি খাও। কোন গাছের ফল সেটা জানার চেষ্টা করো না।”

নার্স লোভী হয়ে যায়। তার চোখে টাকার লোভ ভেসে ওঠে।

এরপর যখন কেবিন ফাকা হয় তখন সে আমেনা বেগমকে খবর দেয়। আমেনা বেগম সেই সময় ঢুকে পড়ে প্রেরণার কেবিনে। প্রেরণা তখন ঘুমোচ্ছিল। আমেনা বেগম দ্রুত একটি বালিশ নিয়ে চেপে ধরে প্রেরণা মুখে। ময়নাও এসেছিল তার সাথে। প্রেরণা ছটফট করা শুরু করতেই তিনি ময়নাকে ইশারা দেন। ময়না প্রেরণার হাত গুলো জাপটে ধরে যাতে সে কিছু করতে না পারে। প্রেরণা বাঁচার জন্য প্রানপণ চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু কোন লাভ হয় না। আমেনা বেগম আরো বেশি শক্ত ভাবে চেপে ধরেন বালিশ। আর বলতে থাকেন,“ম*র মা* ম*র। তোর মৃত্যুই আমাদের শান্তি দেবে। অনেক জ্বালিয়েছিস এবার ম*র তুই।”

এক সময় প্রেরণা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ময়না আমেনা বেগমকে বলে,“ফুফু কাম খতম অবশেষে এই কাটা আমাদের জীবন থেকে বিদায় নিল।”

আমেনা বেগম বালিশটা সরিয়ে নিয়ে প্রেরণা নিঃশ্বাস নিচ্ছে কিনা পরখ করে নেন। শ্বাসক্রিয়া চলছে না দেখে তিনি প্রেরণার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। আনন্দ প্রকাশ করে বলেন,“আমাদের উদ্দ্যেশ্য তাহলে সফল হলো। এখন তাড়াতাড়ি এখান থেকে চল। কেউ যেকোন মুহুর্তে চলে আসতে পারে।”

“হ্যাঁ, চলো চলো।”

দুজনে বেরিয়ে আসে। অতঃপর আমেনা বেগম নার্সকে বলেন,“এদিকে কেউ আসে নি তো?”

“নাহ।”

“ভালো। তুই বেশ ভালো কাজ করেছিস। তোর কাজে আমি খুব খুশি। এই নে ধর তোর টাকা।”

”ধন্যবাদ।”

আমেনা বেগম ও ময়না আনন্দ করতে করতে বের হয়।

To be continue….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে