মায়ের মেয়ে পর্ব-০১

0
900

#মায়ের_মেয়ে
#প্রথম_পর্ব
#ইয়াসমিন_খন্দকার

বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি এসে নিজের স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের খবর শুনে চমকে গেল প্রেরণা। তার পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেল। প্রেরণার বিশ্বাসই হচ্ছিল না তার যে স্বামী তাকে এত ভালোবাসতো সে কিনা তাকে ছেড়ে আরেকটা বিয়ে করে নিলো!

নিজের পেটে হাত বুলাতে লাগল প্রেরণা। তার গর্ভে যে এখন বেড়ে উঠছে নতুন একটি প্রাণ। এমন সময় যে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে সেটা ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারে নি প্রেরণা।

প্রেরণার স্বামী সাদিক অপরাধী মুখ করে তার সম্মুখ পানে এসে দাঁড়ালো।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বলল,“আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও প্রেরণা। আমি নিজের ইচ্ছায় এই বিয়েটা করিনি। আম্মা বলেছিল এই বিয়েটা না করলে তিনি বি*ষ খাবেন। তাই আমি বাধ্য হয়ে..”

আর কিছু বলতে পারল না সাদিক। তার পূর্বেই প্রেরণা ঠাস করে তার গা’লে চ*ড় বসিয়ে দিলো। বাঘিনীর মতো গর্জন দিয়ে বলল, “তোমার থেকে আমি কোন অজুহাত শুনতে চাইনা। ঠ*কবাজ ছেলে একটা।”

প্রেরণার শাশুড়ী আমেনা বেগম দৌড়ে এসে আহাজারি করে বলা শুরু করলেন, “কে কোথায় আছ রে? একটু দেখে যাও রে। এই মেয়েটা আমার ছেলেকে মা*রল। নিজের স্বামীর গায়ে হাত তুলল। ছি ছি ছি!”

প্রেরণা আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলল, “আপনি চুপ করুন। আমি জানি আপনি সব নষ্টের গোড়া। আপনি তো শুরু থেকেই আমাকে পছন্দ করেন না। নিশ্চয়ই আপনি আপনার বোনের মেয়ে ময়নাকেই সাদিকের দ্বিতীয় বউ করে এনেছেন তাইনা?”

প্রেরণার ভাবনাকে ঠিক প্রমাণ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই রুম থেকে বেরিয়ে এলো ময়না। প্রেরণাকে দেখে তার চোখ মুখে আধার নেমে এলো। প্রেরণাও ময়নাকে দেখে ভীষণ রেগে গেল। তবে মোটেই ভেঙে পড়ার মতো মেয়ে নয় সে। প্রেরণা নিজের পেটে হাত রেখে মনে মনে বলল,“তুই একদম চিন্তা করিস না সোনা। আমি তোর মা তোকে কথা দিচ্ছি, তুই একটা সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে উঠবি। আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তো আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতাম। ঐ সাদিক নামের কা*পুরুষটাকেও তালাক দিতাম কিন্তু সেটা আর সম্ভব নয়। কারণ এখন যে তুই আমার মধ্যে বেড়ে উঠছিস। তবে তুই ভাবিস না, আমি এদের ছেড়ে দেব। এখন আমি এই বাড়িতে থেকে এদের সবাইকে এদের সবার উপযুক্ত শা*স্তি দেব। তুই শুধু দেখে যা। তোকেও কিন্তু আমার মতো হতে হবে।”

মনে মনে এসব কথা বলার পর প্রেরণা সাদিকের দিকে তাকালো। মনে ভীষণ রাগ থাকলেও দৃষ্টিতে নমনীয়তা আনল। এখন এদের জবাব দিতে চাইলে যে নমনীয়তা দেখাতেই হবে। প্রেরণা শান্ত ভাবেই বলল, “আমি তোমার সন্তানের মা হতে চলেছি সাদিক।”

কথাটা শোনামাত্রই সাদিক চমকে উঠল। ময়না, আমেনা বেগম একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করলেন। সাদিক উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“তুমি সত্যি বলছ প্রেরণা? তুমি আমার সন্তানের মা হতে চলেছ?”

“হ্যাঁ, সত্যি।”

ময়না কিছু একটা ইশারা করতেই আমেনা বেগম তাদের মাঝে ঢুকে বলে ওঠেন, “বললেই হলো নাকি? তুমি নিশ্চয়ই নিজের সংসার বাঁচানোর জন্য মিথ্যা বলছ তাইনা?”

“মিথ্যা বলা, ছলনা করা এসব আপনার কাজ আমার না। আমি যা বলেছি তা একদম সত্যি।”

কথাটুকু বলে নিজের ব্যাগ হাস্তাতে থাকে থাকে প্রেরণা। কাঙখিত রিপোর্ট টি পেতেই সেটি সবাইকে দেখিয়ে বলে,“বিশ্বাস না হলে এই রিপোর্টটাই দেখে নিন।”

আমেনা বেগম আর কিছু বলবেন কি তখনি সাদিক বলে ওঠে,“আমি ভীষণ খুশি প্রেরণা। আমি বাবা হবো, ভাবতেও আনন্দ লাগছে।”

প্রেরণা দূর্বোধ্য হাসল। এটাই চেয়েছিল সে। এখন নিজের পরিকল্পনা মোতাবেক এগোবে সে। প্রেরণা বলল,“তোমার এত খুশি হওয়ার কারণ নেই সাদিক। আমি স*তীনের ঘর করতে পারব না। তাই তোমার সাথে সংসারও হবে না। তাই আমার বাচ্চার অধিকারও তুমি পাবে না।”

“নাহ,এমনটা হতে পারে না। তুমি প্লিজ এমনটা করো না।”

প্রেরণা ভীষণই খুশি হয়। এমনটাই তো চেয়েছিল সে। তার পরিকল্পনা একদম সঠিক দিকেই যাচ্ছে। মনের খুশিকে মনে রেখেই প্রেরণা বলল,“আমি তোমাকে বাবা হওয়ার সুখ থেকে বঞ্চিত করতে চাই না৷ তবে আমার কিছু শর্ত আছে।”

“তুমি যা বলার বলো৷ আমি তোমার সব কথা শুনব।”

“এই ময়নাকে আমার খেদমত খাটতে হবে আর তোমার মাকে বাড়ির সব কাজ করতে হবে। তবেই আমি এখানে থাকব।”

আমেনা বেগম তেড়ে এসে বলেন,“বললেই হলো। ময়নাকে কি তুমি দাসীবাদী পেয়েছ নাকি হ্যাঁ?”

“ঠিক আছে। তাহলে আমি আজ এক্ষুনি এই মুহুর্তে এই বাড়ি ত্যাগ করছি। আর জীবনে এমুখো হবো না।”

প্রেরণা বেরিয়ে যাবে এমন সময়ই সাদিক তার পথ আটকে ধরল। বললো,“তুমি যেওনা প্রেরণা৷ তুমি যা চাও তাই হবে। আজ থেকে ময়না তোমার সব কাজ করে দেবে।”

ময়না বলে ওঠে, “আমি পারবো না।”

সাদিক ময়নাকে ধমকে বলে, “প্রেরণা যা বলছে তাই হবে। তোমাকে এখানে থাকতে হলে ওর খেদমত খাটতে হবে। আর নাহলে বেরিয়ে যাবে এখান থেকে।”

ময়না আমেনা বেগমের সামনে গিয়ে ন্যাকাকান্না করতে লাগল। বলল,“দেখ তো এই প্রেরণা আমাকে চা*করানী বানাতে চায়।”

আমেনা বেগম ময়নার হয়ে কিছু বলবে তো তার আগেই সাদিক স্পষ্ট করে বলে দিলো,“ব্যস, অনেক হয়েছে। আমি আর কিছু শুনতে চাইনা। আম্মা, ময়না তোমরা আমার কথা শুনে চলবে তো ভালো থাকবে। নাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”

আমেনা বেগম কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রেরণা বিজয়ী সূচক হাসে। নিজেকে নিয়ে আজ ভীষণ গর্ব অনুভব হচ্ছে। এতদিনে একটা কাজের মতো কাজ করতে পেরেছে সে।

প্রেরণা মনে করতে থাকে এই আমেনা বেগম বিয়ের পর থেকে কিভাবে তার উপর জুলুম করত। সাদিকের বাবা সাদ্দাম হোসেন পছন্দ করে প্রেরণাকে বাড়ির বউ করে এনেছিলেন। কিন্তু আমেনা এই বিয়ে মানে নি। কারণ সে ময়নাকে পুত্রবধূ করতে চাইত। তবু নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে বেশি কিছু করতে পারে নি। সাদ্দাম হোসেন যতদিন জীবিত ছিলেন সব ঠিকই ছিল৷ কিন্তু ১ মাস আগে হঠাৎ করে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। এরপর থেকে আমেনা বেগম আসল রূপ দেখাতে শুরু করেন। শাশুড়ীর অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে প্রেরণা বাপের বাড়ি চলে যায়। আর ফিরে আসতেই এত সব কাণ্ড ঘটতে দেখে। প্রেরণা হালকা একটা নিঃশ্বাস নেয়। ঘরে তার বিধবা মা। ভাইদের ঘাড়ে আর কতদিন বোঝা হয়ে থাকত। তাই তো বাস্তবতার সাথে মানিয়ে নিতে হলো।

তবে প্রেরণা মোটেই হার মানার পাত্রী নয়। নিজের শাশুড়ী, ঐ ময়না, সাদিক সবাইকে সে উপযুক্ত শা*স্তি দেবেই। আর সেটা এই বাড়িতে থেকেই৷ এমনটাই পণ করল সে। অতঃপর জোরে একটা শ্বাস টেনে ময়নার উদ্দ্যেশ্যে বলল, “এই ময়না আমার জন্য একটা চেয়ার নিয়ে আসো। আর সাথে একটা হাত পাখাও নিয়ে আসো৷ ভীষণ গরম লাগছে। একটু বাতাসের প্রয়োজন।”
“পারবো না”-ময়নার সাফ জবাব।

সাদিক হুংকার দিয়ে উঠল। ময়না ন্যাকাকান্না করতে করতে চেয়ার আনতে গেলো।

এসব বিষয় গভীর ভাবে পর্যালোচনা করলেন আমেনা বেগম। তিনিও খেলোয়াড় হিসেবে আনাড়ি নন। প্রেরণার মূল উদ্দ্যেশ্য তিনিও ঠাহর করলেন। তাই তো তিনিও মনে মনে ছক কষতে লাগলেন। তিনিও ভেবে নিলেন কিভাবে প্রেরণাকে প্রতি পদে হারিয়ে দেবেন।

এখন দেখার পালা কে কাকে বাজিমাত করতে পারে। প্রেরণার উপস্থিত বুদ্ধি নাকি আমেনা বেগমের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কুচুটে বুদ্ধি।

To be continue….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে