মাতৃত্ব – নিষাদ আহমেদ

0
783

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
মাতৃত্ব
নিষাদ আহমেদ

ভালোবেসে বিয়ে হয়েছিল নিশু আর নিষাদের। দু বছর চুটিয়ে প্রেম করেছে তারা।তারপর বাসায় জানালে দু-পরিবারের সবাই মেনে নেয়। লাভ ম্যারেজ নিয়ে নিশুর বাসায় কোন সমস্যা কোন সময়ই ছিলো না।
অনেক বেশি ভালবাসতো নিশু নিষাদ কে। নিষাদ কম ভালোবাসতো তা নয়। নিষাদের পুরো দুনিয়া জুড়ে তো ছিলো নিশু।
হ্যাঁ,ছিলো ! কিন্তু এখন তার জীবনের অলিগলিতে এখন নিশুর আনাগোনা নিষিদ্ধ।
বিয়ের তিন বছর পরেও নিশুর বাচ্চা হচ্ছিলো না। কিন্তু নিশু আর নিষাদ নিজেদের পরিবার বড় করতে চাইছিলো। নিষাদের বাচ্চার অনেক শখ। ও নিজের বড় ভাইয়ের ছেলে মেয়েদের অনেক আদর করতো। সে মানুষটার যখন নিজের বাচ্চা হবে না জানি কত আদর করবে খুশিতে পাগল হয়ে যাবে সে। নিশুর নিজেরও বাচ্চা অনেক পছন্দ, তাই তিন বছরেও বাচ্চা না হওয়ায় ভয় পাচ্ছিলো। খুব বেশি ভয় পাচ্ছিলো নিশু।
সেদিন যখন নিষাদ বললো, দেখো আমার পক্ষে তোমার সাথে থাকা সম্ভব নয়।তখন নিশু অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো অনেক্ষণ। তখন নিষাদ কে কেবল একটা প্রশ্নই করেছিল নিশু।
– কারণটা কি শুধু বাচ্চা?
নিষাদ বলল, হ্যাঁ,
নিষাদের মুখে হ্যাঁ শব্দটা শুনে যেনো নিশুর মরে যেতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু তা পারেনি নিশু।
নিশু ওকে আর কিছুই বলতে পারেনি কারণ নিশুর মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হচ্ছিল না।
শুধু দু-চোখ বেয়ে শ্রাবনের বারিধারা ঝরছিল।
পরের দিন সকালে কাউকে কিছু না বলেই বাবার বাসায় চলে এলো নিশু।
এমনকি নিষাদকেও কিছু বলেনি। ভেবেছিলো সারা দিন গেলে রাতেই অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার সময় ও নিশুকে সাথে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু না,নিষাদ এলো না এমনকি ওর একটা কলও এলো না
নিশু বার বার ফোনের পানে তাকিয়ে রইলো। নিষাদের একটা কলের আশায় ,কিন্তু তা আর এল না।
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছিল তার অতিতের কথা।
কতই না ভালোবাসতো নিষাদ তাকে।যেদিন হঠাৎ প্রচন্ড পেটে ব্যথায় মাঝ রাতে চিৎকার শুরু করেছিলো নিশু। নিশুর মনে হচ্ছিলো এখনই বুঝি তার প্রাণটা বের হয়ে যাবে।
মৃত্যু যন্ত্রণা কেমন হয় তা নিশু জানিনা। কিন্তু সেই রাতের যন্ত্রণাটা তার কাছে মৃত্যু যন্ত্রণার চাইতে কোন অংশে কম ছিলো না।
নিশুকে ওভাবে চিৎকার করতে দেখে নিষাদ কেঁদেই দিয়েছিল।বলতে গেলে প্রায় পাগল হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছিল নিষাদের।
মাঝরাতে নিশুকে নিয়ে হসপিটালে ছুটে গেলো নিষাদ।
নানা রকম টেস্ট করে যখন ডাক্তার রিপোর্ট নিয়ে এসে ছিল বলতে গেলে এমন রিপোর্ট আসবে ভাবতেও পারেনি নিশু আর নিষাদ। রিপোর্ট শুনার পর জীবনের সব সুখ, আনন্দ, রঙ এলোমেলো হয়ে গেছে।
পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গিয়েছিল।
ডাক্তার যখন নিশু কে বলল ”
আপনি আর কখনও মা হতে পারবেন না” এ কথা শুনার পর নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছিলো না নিশুর। তাই আবার টেস্ট করালো। অন্য ডাক্তার দেখালো। সেও একি কথাই বলল,
নিশু নাকি কখনও মা হতে পারবে না। মা ডাকটা শুনতে পারবে না। নিশু কখনো মা হতে পারবে না।
প্রায় দু’দিন কারো সাথে কোন কথা বলেনি নিশু,এমনকি নিষাদের সাথেও নয়।
নিষাদও তেমন কিছু বলেনি তখন নিশুকে। সেদিন কষ্টটা এত প্রচণ্ড ছিল তবুও কাঁদেনি নিশু।
সেদিন মনকে শক্ত করে বলেছিল,
বাচ্চা হবে না তো কি হয়েছে ,নিশুর নিষাদ তো আছে।
নিশু নিষাদ কে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকবে।
কিন্তু নিশুর কপালে যে সে সুখটাও জুটলো না।
নিষাদও আর নিশুর রইল না।
নিশু মা হতে পারবে না এই খবরটা পাওয়ার পর থেকে নিষাদ মুখে কিছু না বললেও ওর মাঝে আশ্চর্য রকম কিছু পরিবর্তন দেখতে পেলো নিশু।
ওর মনে হচ্ছিল আগের সেই নিষাদকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলতে লাগলো।
আগের মত নিশুর সাথে কথা বলে না। নিশুর মাথায় ভালোবাসার পরশ নিয়ে হাত রাখে না।
কেমন যেন ওকে এড়িয়ে যেতে লাগলো।
নিশুকে আগের মত ভালবাসে না। অন্য রকম এক পরিবর্তন দেখতে পেলো নিশু তার মাঝে।
নিশু মা হতে পারবে না,
এই কথাটা শুনার পর এতটা কষ্ট পাইনি।
যত টা নিষাদ যখন বলল
তার সাথে থাকতে পারবে না ।
এই কথাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না নিশু। নিষাদতো কখনই এমন ছিল না।কত ভালোবাসতো নিশু কে।
এখন কি ভালবাসার চাইতে বাচ্চাটা বড় হয়ে গেল?
বাচ্চা না হতে পারার কষ্টটা কি আমার চাইতে নিষাদের বেশি??
একজন মেয়ের জন্য মা হতে না পারার কষ্টটা কি তা কেউ বুঝবে না। কখনই বুঝবে না। এটা বুঝার ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালা কাউকে দেয়নি।
পৃথিবীর সব কষ্ট সবাই উপলব্ধি করতে পারলেও এই কষ্ট কেউ বুঝবে না। কেউ না।এ কথাগুলো নিশু শুয়ে শুয়ে ভাবছিল।
আজ সাতদিন পার হলো নিশু চলে এসেছে।
নিশু চলে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিষাদ একটা বারও নিশুর খবর নেই নি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

৭ দিন পর নিশুর নামে একটা চিঠি এলো। কি হতে পারে ভেবে চিঠিটা খুলতেই নিশুর দুনিয়াটা যেনো থমকে গেলো।
নিষাদ ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছে।
নিশু যেনো কান্না করাটাও ভুলে গিয়েছে আজ।
এতদিন বাসায় কাউকে কিছু জানাইনি নিশু
আর এখন তো না জানানোর কোনো কারণই নেই। তাই বাবা মা জিজ্ঞেস করার সাথে সাথেই বলে দিলো নিশু।
আমি কখনো মা হতে পারব না। নিষাদ কখনো সন্তানের সুখ দিতে পারবো না। তাই নিষাদ আমার সাথে থাকবে না। তার বাচ্চা চাই বউ বা ভালবাসা নয়।
নিশু এসব মা-বাবাকে বলার সময় মনকে অনেক শক্ত করে ফেলে।যাতে চোখে পানি না আসে। নিশু নিজের দোষ মেনে নিয়ে চুপচাপ স্বাক্ষর করে দিলো।
মুহূর্তের মাঝেই বিবাহিত থেকে ডিভোর্সি হয়ে গেলো নিশু।
এরপর নিশু আর নিষাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করেনি।
কারণ যে নিশুকেই চায় না তার কাছে আর কিছুই চাওয়ার নেই নিশুর।
নিশু এখন নিজেকে স্বাভাবিক করার বা রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে যাই।
বাড়ির পাশে একটা স্কুলে জয়েন করে নিশু।
সারাদিন ক্লাস করে সময় থাকে না অতীতের কথা মনে করার। দিব্যি ভালোই যাচ্ছিলো নিশুর দিনকাল।
সারাদিন পরীক্ষা নিয়ে আজ অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে নিশু।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরেই নিশু একটা বড়সড় ধাক্কা খাই।
এই মানুষটাকে এতোদিন পর দেখব তা ভাবতেই পারেনি নিশু,
ওকে দেখে কেমন যেন চমকে গেছে।
– কেমন আছিস?
– ভালো আছি তুই কেমন আছিস?
– দিলি তো পর করে?
– আমি? কি করলাম?
– নিজের কষ্টগুলো নিজের কাছেই রেখে দিলি। আমাকে ভাগ দেয়া গেলো না?
নিশু ওর মুখের পানে তাকিয়ে রইলো ।ওকে বলার মতো কিছুই নেই নিশুর কাছে।
বাবা-মা আর নিষাদের পর যদি পৃথিবীতে কেউ নিশুকে ভালো চিনে বা বুঝে তা হলো এই নিশান।
যার সাথে এতক্ষণ নিশু কথা বলছিল।
নিশান নিশুর ছোটবেলার বন্ধু। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। নিশুর সুখ দুঃখের সাথী ছিল নিশান। নিষাদ নিশুর জীবনে আসার আগে একমাত্র নিশান ছিল নিশুর সুখ দুঃখের সাথী।যার সাথে সব শেয়ার করত।নিষাদ যখন নিশুর জীবনে আসে তাপর থেকে কেনো যেনো নিশান দূরে সরে গিয়েছিল ।
.
যেদিন নিষাদ আর নিশুর এঙ্গেজমেন্ট !
সেদিন নিশু শুনতে পায়,
হুট করেই নাকি নিশান অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে আর কখনো আসবে না।
খুব কষ্ট পেয়েছিলো নিশু সেদিন। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ওকে না বলেই চলে গেলো। পর করে দিলো নিশুকে। যাওয়ার আগে একবার দেখা করা তো দুরের কথা একবার বলেও যায়নি নিশু কে।
এমনকি আর যোগাযোগও করেনি নিশুর সাথে।
এমন সময় ওকে পাবে নিশু ভাবতেই পারেনি।
.
এখন ইদানিং প্রায় প্রতিদিনই নিষাদের সাথে দেখা হচ্ছে নিশুর। নিশু যদি বলে সময় নেই আজ দেখা করতে পারবে না,
তাহলে নিশান নিশুকে স্কুল থেকে পিক করতে চলে যায়।
এতো বারণ করে নিশু তাও নিশান বলে এই বাহানায় তোকে তো অন্তত একবার দেখতে পারি ।

এখন নিশুর দিব্যি ভালোই যাচ্ছে দিনগুলো।
একদিন ভরা সন্ধ্যায় নিশান নিশুদের বাসায় আসে,
নিশু: কিরে তুই এ সময়?
নিশান:কেন আসতে পারি না?
নিশু: আরে না তা নয় এমনি বলছি। আয় বস।
নিশান: আজ বসতে আসিনি তোকে নিতে এসেছি।
নিশু: আমাকে? কোথায়?
নিশান: তুই জানিস তোর বিয়ে ঠিক হওয়ার পর কেন তোকে কিছু না বলেই হুট করে চলে গিয়েছিলাম ?
নিশু:হ্যাঁ, তুই তো আমাকে কিছু বলিসনি। না বলেই চলে গেয়েছিলি।
নিশান: বলিনি বলে তুই কখনো জানতেও চাসনি। আর জানার চেষ্টাও করিস নি।
নিশু: আসলে…
নিশান:তুই কখনোই বুঝতে পারিসনি আমি সত্যি তোকে কতটা ভালবাসি।
নিশানের মুখে ভালোবাসি” এমন কথা শুনবে নিশু কখনো আশা করেনি। নিশুকে অবাক হতে দেখে নিশান বলে, অবাক হচ্ছিস?
অবাক হওয়ারই কথা। কখনো তো বলিনি যে তোকে ভালোবাসি। তবে ভেবেছিলাম তুই বুঝবি কিন্তু বুঝলি না।আর কখনো বোঝার চেস্টাও করিসনি।
ভেবেছিলাম তোকে আমার পাওয়া হবে না কিন্তু দেখ ভাগ্যের লিখন তুই যে আমার ভাগ্যেই লিখা। বিধাতা তোকে আমার করে সৃষ্টি করেছেন। শুধু আমার করে।
এসব বলতে বলতে নিশান, নিশুর সামনে হাঁটু হাঁটু গেড়ে বসে পরলো,
আরো বলতে লাগলো,
নিশু,আমি তোকে বিয়ে করতে চাই। হবি আমার বউ ? করবি আমায় পূর্ণ ? আয় না প্লিজ আমার জীবনে শুধু আমার হয়ে।
ওর কথার কোনো জবাব দিতে পারলনা নিশু।
নিশু মনে মনে ভাবছে, হয়তো ও সব টা জানেনা বলেই এমন বলছে। যদি জানতে পারে আমি কখনো মা হতে পারব না। ওকে সন্তানের সুখ দিতে পারবো না তাহলে ওর সব ভালোবাসা ফুরিয়ে যাবে। আর থাকবে না নিশুর প্রতি ওর ভালোবাসা।
নিশু ওর কথার কোনো জবাব না দিয়ে বলল,
– আমি একটু একা থাকতে চাই প্লিজ তুই চলে যা।
জবাবে নিশান বলল,
আমি আজ তোকে নিয়ে যাবো।
নিশু: প্লিজ যা বলছি।একটু একা থাকতে দে আমাকে।
এটা বলেই নিশু ভাবনার জগতে চলে গেল।
বাবা অনেকদিন ধরেই আমাকে বলছে আবার বিয়ে করার কথা কিন্তু আমি জানি আমার মত অসম্পূর্ণ মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না আর আমি জেনে শুনে তো কারো জীবন নষ্ট করতে পারিনা। এসব ভাবতে লাগলো নিশু।
নিশুকে ভাবনায় বিভোর দেখে নিশান বলে,
– কি ভাবছিস এতো ? ভাবছিস আমি না জেনেই তোকে বিয়ে করতে চাইছি,
এইতো?
আমি কি আমার নিশু কে চিনি না।যার সাথে আমার শৈশব-কৈশব কেটেছে।যে ছিল আমার একমাত্র সুখ-দুঃখের সাথী।
নিশু একা থাকতে কি আমি নিশান অসম্পূর্ণ থাকতে পারি বল ? চাই না আমার কোনো সন্তান। আমি চাই শুধু তোর একটু ভালোবাসা।একটু তোর মনের মধ্যে জায়গা।
একটা সন্তান যদি ভালোবাসার পথে বাধা হয়। তাহলে চাইনা আমার সেই সন্তান। আমি তোকে চাই যে কোন কিছুর বিনিময়ে তোর ভালোবাসা চাই। তোকে আঁকড়ে বাঁচতে চাই। বলনা বাঁচবি আমার সাথে ? আমার হয়ে?
নিশান এ কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গেল।আর ওর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
নিশানের এ অবস্থা দেখে নিশু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা। এতদিনের জমানো কান্না গুলোকে আর আটকাতে পারলো না নিশু।নিশানের বুকে মাথা রেখে কেঁদে দিলো। ডুকরে ডুকরে অঝোরে কাঁদতে লাগলো নিশু। সাথে আকুতি করতে লাগলো নিশানের কাছে,
ননিশু: আমি মা হতে চাই….
নিশান:সত্যি!! হবি তো তুই আমার সন্তানের মা, হবি? পৃথিবীতে কত সন্তান আছে যাদের বাবা-মা নেই তাদের থেকে একজনকে না হয় আমাদের বাবা-মা বানাবে। আমাদের সন্তানের সুখ দিবে।আমাদের সন্তানের অভাব মুছে দেবে।চল না অন্তত একজনকে বাবা মার সুখ দেই। অন্তত একজনকে বাবা মার আদর থেকে বঞ্চিত না করি।অন্তত একজন মা-বাবাহীন সন্তানের মুখে হাসি ফোটায়।নিশুকে বুকের সাথে আকড়ে ধরে এই কথাগুলো বলতে লাগলো নিশান।
নিশুও নিজেকে নিশানের বুকে ঢেলে দিয়ে হাউমাউ করে কান্না করছে।এতদিনের চাপা কান্না যেন আজ বুক দুমড়ে-মুছড়ে বেরিয়ে আসতেছে।
নিশান: পাগলিটা আমার। তৈরী হয়ে নে। তোর জন্য একটা লাল টুকটুকে বেনারসি এনেছি। আমাদের সন্তান অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
নিশান,নিশুকে যোগ্য সম্মান দিয়ে ওর বউ করে নিয়ে গেলো নিজের ঘরে।
নিশু ভাবছে, একজনকে ভালোবেসে বিয়ে করে তো দেখলামই। এখন না হয় যে আমাকে ভালবাসে তার হয়ে যাই।দেখি সে আমাকে কি দেই,আর আমি তাকে কি দিতে পারি।
নিশানের পাগলামি যেনো দিন দিন বেড়েই চলেছে ।
প্রথম যেদিন নিশুকে নিয়ে গেলো সেদিন সে নিশুকে বলল,
নিশান: শুন বিয়ে হয়ে গেছে তাই বলে আপনি বা তুমি করে বলতে হবে না। তুই করে বলতি তুই করেই বলবি। আমি তোর তুইটাকেই ভালবাসি।আর এই তোর তুই টাকে আমি হৃদয়ে গেতে রেখেছি।
.এভাবে কাটছে নিশু আর নিশানের দিনগুলো।খুব সুখেই কাটছে।
একদিন সকাল সকাল নিশান ,শায়ানকে নিয়ে নিশুকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো।
বিয়ের এই তিন মাসে নিশান কখনো নিশু কে না বলে বের হয়নি।
আজ নিশান এভাবে হুট করে নিশুকে না বলে যাওয়াতে নিশুর প্রচন্ড ভয় লাগছে। সকাল থেকে অস্থির আর ব্যাকুল হয়ে আছে। না পারছে কিছু খেতে, না পারছে নিজেকে শান্ত করতে। অতিতের সব চিন্তা যেন মাথায় ভর করেছে আজ।
না জানে নিশু,নাকি আবার কোন বিপদ আসতে চলেছে তার জীবনে।
নিশানকে বার বার ফোন দিচ্ছিলো নিশু।কিন্তু না নিশান ফোন উঠাচ্ছে না।
মনের ভিতর ব্যাকুলতা আর হাজার চিন্তা নিয়ে ছটপট করতেছে নিশু। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল,এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না নিশু। এবার কেঁদেই দিলো। নিশুর কান্না দেখে নিশানের বাবা মা অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। ওনারা নিশু কেকে এত করে বুঝাচ্ছেন যে ও চলে আসবে, কিন্তু নিশু কিছুতেই নিজের মনকে বুঝাতে পারছে না। কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলিয়ে একাকার অবস্থা করে ফেলেছে ও। কান্না যেন থামছেই না।
সন্ধ্যার পরপরই কলিং বেলের শব্দে শুনে দৌড়ে যাই নিশু। দরজা খুলে শায়ানকে দেখেই নিশু যেনো থমকে যাই। নিশুকে দেখেই শায়ান বলল,
বাব্বাহ! একদিন তোমাকে ছাড়া আমরা বাপ-ছেলে ঘুরতে বেরিয়েছি এতেই এতো কান্নাকাটি। যাও তোমাকে ছাড়া আর কোথাও যাব না। আমাদের ছেলেটাও তোমার মতো হয়েছে শুধু কাঁদে।
নিশু ওকে দেখছে আর অবাক হচ্ছে। ও কি মানুষ ? না ও মানুষ নয়। ও নিশুর জন্য ফেরেশতা। নিশুর জন্য হয়তো ফেরেশতা। ওর কোলে ফুটফুটে সদ্য জন্ম নেওয়া আমাদের সন্তান। নিশান সকাল থেকে নিশুর জন্য সুখ আনতে গিয়েছিলো। মাতৃত্বের সুখ। নিশান কখন এতো কিছু করলো নিশু কিছু টেরই পেলো না। নিশুকে মূর্তির মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিশান বলল,
– নাও নাও তোমার ছেলেকে কোলে নাও।
এই বলে নিশান ছেলেকে নিশুর কোলে দিয়ে চলে যেতে নিলেই নিশু ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।এটা কোন দুঃখের কান্না নয়।এটা সুখের কান্না। মা হওয়ার কান্না। মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার কান্না।নিশুর কোল জুড়ে কেউ আসবে। নিশুকে মা বলে ডাকবে ভাবতেই পারেনি ও কখনো।
নিশান আজ নিশুকে মা বানালো। নিশুও মা হলো। আজ নিশু বুঝতে পারছে মাতৃত্বের সুখ।
নিশান আর নিশুর ছেলে, নিশু ওর নাম রাখলো
শায়ান।
.
.
.
আজ শায়ানের পাঁচ বছর হয়েছে। নিশুর মাতৃত্বকে পূর্ণ করেছে তার শায়ান। প্রথম যেদিন শায়ান নিশুকে মা বলে ডাকে নিশুর মনে হয়েছিল নিশু যেনো পৃথিবীর সব সুখ পেয়ে গেছে।
কলিংবেল বাজতেই নিশু এতক্ষণ অতিতের ভাবা স্মৃতি থেকে ফিরে আসলো।এতক্ষণ ধরে নিশু ভাবছিল তার সাথে ঘটে যাওয়া অতিতের কথা।
দরজা খুলতেই গুটিগুটি পায়ে শায়ান দৌড়ে নিশুর কাছে যায়।
নিশান,শায়ান কে বলে,
– বাবা আস্তে মা ব্যথা পাবে যে।
নিশু শায়ান কে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
– আমার বাবা তার বাবার সাথে নামাজ পড়েছে?
শায়ান:মা!বাবা আর আমি সামনে নামাজ পড়েছি।
নিশু: ওরে আমার বাবাটা।
শায়ান দৌড় দিতেই নিশু ওর পিছনে ছুটতে নিলে নিশান নিশুকে আঁকড়ে ধরে বলে,
এই যে ম্যাডাম একটু ধীরে এই অবস্থায় এতো ছোটাছুটি করে কেউ ?
নিশু: সরি….
শায়ান: দেখি আমার আম্মাজান কি করে?
নিশান নিশুর পেটে হাত বুলিয়ে আদর করতে থাকে। আল্লাহ নিশানের দোয়া কবুল করেছে ও বলেছিল নিশুকে, নিশু ওর সন্তানের মা হবো। আল্লাহ তাই করলেন নিশু এখন নিশানের সন্তানের অন্তঃসত্ত্বা। আর মাত্র তিন মাস তারপরে নিশান আর নিশুর ঘর আলো করে আসবে তাদের দুজনের প্রথম সন্তান ।
ইনশাআল্লাহ।
নিশান আম্মাজান বলায় নিশু ওকে জিজ্ঞেস করলো,
নিশু: তুমি কিভাবে জানলে মেয়ে হবে ?
নিশান: আমি জানি কারণ আল্লাহ তো আমাদের ছেলে দিয়েছেনই তাই এখন ইনশাল্লাহ একটা মেয়ে দিয়ে আমাদের পরিবার পূর্ণ করে দিবেন।
নিশু: আমিন।
মনে মনে নিশু বললো, আল্লাহ তোমার সব দোয়া কবুল করুক।
.
শায়ান ওদের দিকে দৌড়ো এলো। এখন শায়ান কে ঘিরেই তাদের দুজনের সুখের পৃথিবী।
শায়ান আমার সন্তান। আমাদের সন্তান। আমাকে মা বানিয়েছে আমাদের শায়ান। আমার মাতৃত্বকে পূর্ণ করেছে আমাদের শায়ান। আমাকে মাতৃত্বের সুখ দিয়েছে শায়ান।
শায়ান কে জড়িয়ে এসব ভাবতে লাগলো নিশু ।
.
.
সমাপ্তি।
.
.
(আল্লাহ তা’আলা চাইলে সবই পারেন। তিনি সর্ব শক্তির উৎস। সেজন্য আমাদের ধৈর্য রাখা উচিত। কখনোই নিরাশ হওয়া ঠিক নয়। সন্তান আল্লাহ তা’আলার দেয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত।মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করার জন্য কত সন্তান আছে যাদের মা-বাবা নাই।অনেকে জন্ম থেকে মা-বাবার আদর পায় নি।তাদের একজন কে নিয়ে যদি আমরা মা-বাবার স্বাদ দিই।আর থাকবে না কোন পথশিশু।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে