#মাইনাসে_মাইনাসে_প্লাস (পর্ব ৪)
নুসরাত জাহান লিজা
লিলি এই মুহূর্তে বসে আছে রোমেনার পাশ ঘেঁষে, হাসিমুখে এতটা আন্তরিক ভঙ্গিতে তিনি কথা বলছিলেন যে লিলির পরিকল্পনা প্রায় ভন্ডুল হয়ে যাবার উপক্রম।
“আন্টি আমার একটা কথা বলার ছিল আপনাকে, ভীষণ জরুরি।”
তৌহিদা প্রমাদ গুনলেন। তার নিজের শোবার ঘরে যে ছোট্ট পরিসরের জরুরি আলোচনা সভা বসেছে তাকে তিন সদস্য বিশিষ্ট রুদ্ধদ্বার বৈঠক বললে ভুল হবার কথা নয়।। রোমেনা তাকে ইশারায় মাথা ঠান্ডা রাখার ইঙ্গিত দিয়ে বলল, “তোর দুধ চার মতো টেস্ট আর কোথাও পাই না৷ একটু খাওয়াবি আজকে?”
তৌহিদা ইঙ্গিত বুঝে বেরিয়ে গেলে রোমেনা লিলির হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে বললেন,
“বলো মা, আমি তোমার সব কথা আজ শুনব।”
সরাসরি নিজের অসম্মতি জানাতে যেন বাঁধল এতে, সে নিজের মাথা খাঁটিয়ে একটু ঘুরপথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিল। গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে শুরু করল,
“আমি অনেক বে”য়া”দ”ব। ভীষণ মুখরা ধরনের। কিছু ভালো না লাগলে মুখের উপরে সেটা না বলতে পারলে গলায় কেমন কুটকুট করে। তাছাড়া রাস্তায় মা ‘রা’ মা’ ‘রি’ও করেছি অনেকবার, একেবারে র ক্তা র ক্তি কাণ্ড।” অর্ধেক সত্যির সাথে অর্ধেক মিথ্যা মিশিয়ে নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ফিরিস্তি দিল হবু শাশুড়ির কাছে৷
“সাংঘাতিক, মা”রা”মা”রি কেন করেছিস? নিশ্চয়ই কোনো কারণ ছিল?”
লিলির মনে হলো সত্যি বললে ওর বিপক্ষে যাবে, সে এটা চায় না৷ রোমেনার সম্বোধন ‘তুই’ তে নেমে এসে গলার আন্তরিকতা বাড়িয়েছেন, এটা সে খেয়ালই করেনি।
এবারও সে খানিকটা ইতস্তত করে বলল, “আমি তো ইউটিউব কন্টেন্ট বানাই। ওরা আমাদের রাইভাল ছিল তাই।”
“তোমার ভিডিও আমি নিয়মিত দেখি। ওরা কোন চ্যানেলের ছিল?”
লিলি উত্তর দিতে পারল না, সত্যি সত্যি সে রাস্তায় দাদাগিরি ফলিয়েছিল দুই তিনবার, তবে সেটার যৌক্তিক কারণ ছিল। মেয়েদের দেখে শিস বাজানো, পেছন থেকে বাজে কথা বলা এসবই কারণ ছিল।
রোমেনা প্রশ্রয়ের হাসি হেসে বললেন, “যে গুছিয়ে মিথ্যা বলতে পারে না, সত্য বলতে ভয় পায় না, অপছন্দের কথা সাচ্ছন্দ্যে প্রকাশ করতে পারে কাউকে ছোট না করে, এমন মেয়ে আমার বেশি পছন্দ। তোর প্রতি আমার ভালোলাগা আরও বেড়ে গেল কেন জানিস? আমার খানিকটা তারুণ্য যেন তোর মধ্যে খুঁজে পেলাম। তবে আজ মিথ্যা বলার চেষ্টা না করে সরাসরি বললেই পারতি কিন্তু।”
লিলিকে যেন কেউ মহাশূন্য থেকে শক্ত পাথুরে মাটিতে আঁছড়ে ফেলেছে এমন অনুভূতি হলো। সে উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে নিল। প্রত্যাশার ফানুস আচমকা ফুটো হয়ে গেলে যেমন চুপসে যায়, সেভাবেই চুপসে গেল লিলি। হতাশা ওর সমস্ত সত্তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরল যেন। সে অস্ফুটস্বরে মর্মাহত গলায় বলল,
“আমার এসব কাজকর্ম নিয়ে আপনার কোনো সমস্যা নেই?” গলায় তীব্র অবিশ্বাস।
“একদমই না। দেখ, তোর সুন্দর একটা মন আছে, আমি জানি। তুই অসুখী হবি না মা৷ আমার ছেলে দেখতে সুন্দর সেটা আমি জানি, কিন্তু ওর মনটা তার চাইতে কয়েক হাজার গুণ সুন্দর। বাইরেরটুকু যদি সোনা হয় ভেতরটা একেবারে খাঁটি মহামূল্য হীরা, একেবারে কোহিনূর! তোর মতো এমন চমৎকার হৃদয়ের একজন মানুষের সাথে আরেকজন চমৎকার হৃদয়ের মানুষের জোড়া খারাপ হবে না, এটুকু বিশ্বাস আমার আছে।”
লিলি মুখ তুলে একবার রোমেনাকে দেখল, ভদ্রমহিলার চোখ মুখ পুত্র গর্বে জ্বলজ্বল করছে। এই প্রথম লিলির মনে হলো, ছেলের এত প্রশংসা করার কী আছে!
“এটাকে কিন্তু পুত্র স্নেহে অন্ধ মায়ের কথা বলে ভাবিস না, তুই আসবি তো দুদিন পরে, রতনে যেমন রতন চেনে, তুইও নেহালকে চিনতে পারবি। আমি দুটোই সন্তান পেটে ধরেছিলাম, আরও একটা দুটো থাকলে রত্নগর্ভা খেতাব পাওয়া থেকে আমাকে কেউই আটকাতে পারত না। আফসোস বুঝলি? এই আফসোস রাখার জায়গা আমার নেই, সেটাও আরেক আফসোস।”
প্রথম দিকের কথাগুলো সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললেও শেষের কথায় মিশে রইল রোমেনার সহজাত ভঙ্গিমা। নিজের রসিকতায় নিজেই হাসলেন ঘর কাঁপিয়ে।
লিলি প্রবল বিস্ময়ে অনুধাবন করল, ওর সামনে বসা এই অদ্ভুত অথচ স্নেহময় ভদ্রমহিলাকে তার মনে ধরেছে৷ আগেও তার সাথে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে, কিন্তু এভাবে তাকে কখনো সে উপলব্ধি করেনি৷ অবচেতনেই লিলির ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটল।
***
নেহাল ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল, আজকের ছুটিটা শুধু শুধু ন”ষ্ট হলো বলে খানিকটা রা”গ হচ্ছিল মায়ের উপরে। বাবার সাথে কথা বলার পরে সেটা একদম নেই। এখন ছাদে এসে আরও ভালো লাগছে। একটা ফুরফুরে বাতাস এসে গায়ে লাগছে। পড়ন্ত বিকেলের টকটকে সূর্যটা মেঘের আড়ালে ডুব দেবার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে৷ দিনের এই সময়টা নেহালের ভীষণ প্রিয়। কেমন একটা মন খারাপ করা বাতাসের সাথে সাথে কোথাও যেন ভালো লাগার আবেশ মিশে থাকে এই লালচে গোধূলি আকাশে৷ কিছু পাখি দলবেঁধে নীড়ে ফিরছে, দিনের শেষে সব মানুষই একটা শান্তির নীড় চায়, অন্য প্রাণীরাও বোধহয়। একই দিগন্তে একই সময়ে বৈপরীত্য ভরা দুটো অনুভূতির কী দারুণ সহাবস্থান!
“মায়ের কাছে শুনলাম, লিলিকে দেখতে যেতে না পেরে তোর মন খারাপ। তাই আমি চলে এলাম।”
নওরীনের গলার স্বরে নেহালের ভাবনার তাল কেটে গেল, বহু বহু ক্রোশ দূরের আবীর রঙা আকাশ থেকে ওর দৃষ্টি নেমে এলো সদ্য পাশে এসে দাঁড়ানো নওরীনের দিকে।
“তাকে না দেখলে আমার মন খারাপ হতে যাবে কেন?”
“একবার দেখা হোক, তখন নিজেই বুঝবি কেন।”
“তুই কখন এলি সেটা বল, আমি অনেকক্ষণ থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি৷ তোকে দেখলাম না তো!” প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বলল নেহাল।
“সে তুই কীসের আর কার ভাবনায় ডুবে ছিলি তা তুইই ভালো জানিস। আমি তোর ভাবনা বুঝতে পারি। তাই মুশকিল আসান করতে চলে এলাম।”
“তা, কী মুশকিলে আমি পড়েছি? যার জন্য তোর চলে আসতে হলো আমাকে উদ্ধার করতে?”
“কিছুদিন পরে বিয়ে, অথচ এখনো হবু বউকে দেখার সৌভাগ্য হলো না, এর চাইতে বড় বি প দ কী আর এই জগতে একটাও আছে বৎস!” নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল নওরীন।
নেহালও বোনের সাথে খুঁনসুটিতে যোগ দেবার লো”ভ সামলাতে পারল না, “এত বড় বি প দ থেকে কীভাবে পরিত্রাণ মিলতে পারে আমার বললে কৃতার্থ হই নূরু আপা।”
এই পর্যায়ে নওরীন নেহালকে আ ক্র ম ন করে বসল। পিঠে কয়েক ঘা পড়ল। আগে যখনই নওরীন ওকে আপু বলে ডাকতে বলত, সে ততবারই বলত ‘নূরু আপা’। এভাবে ডাকলেই নওরীন রে গে আ*গু*ন হয়ে যেত, আর নেহাল এটাই বেশি বেশি বলত। এখনও সুযোগ পেলেই বলে।
“তুই একটা হ ত চ্ছা ড়া ফা জি ল।”
“আর তুই এই পৃথিবীর সবচাইতে ভালো মেয়ে৷ এটা কি তুই জানিস?” খুঁনসুটি ভুলে আচমকাই নরম গলায় বলল নেহাল।
“কীভাবে, শুনি?” চকিত প্রশ্ন নওরীনের।
“সব বললে ভাবের চোটে তোর পা মাটিতে পড়বে না৷ আমি চাই তোর পা মাটিতেই থাকুক। আকাশে উড়লে আমার বোনকে কোথায় পাবো? তাই সেসব থাকুক৷ একটা বলি।”
“বল, পরে বাকিগুলো শুনব অবশ্যই। ফ্রি-তে আকাশে ওড়ার সুযোগ হেলায় হারানো ঠিক হবে না।”
নেহাল হেসে বলল, “তোর মনে আছে, তুই স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে তোর ব্যাগের পকেটে রাখতি। আমি প্রতিদিন সেটা চু রি করতাম। তবুও তুই প্রতিদিন একই জায়গায় টাকাটা রাখতি। তুই আসলে সেটা আমার জন্যই রাখতি প্রতিদিন৷ আমি ভাবতাম আমার বুদ্ধিতে টাকা সরাচ্ছি। আসলে সেটা ছিল আমার প্রতি তোর ভালোবাসা। বুঝতে সময় লেগেছিল, কারণ তুই কয়েকদিন পরপর এই টাকা নিয়ে আমার সাথে ঝগড়াও করতি, যাতে আমি না বুঝি সেটা আমার জন্য।” দু’জনেই কেমন আবেগপ্রবণ হয়ে গেল, স্মৃতিকাতরতা গ্রাস করল।
কত সময় নিমিষেই বয়ে যায়, পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু অনুভূতিগুলো একইরকম রঙিন রয়ে যায়৷ ওদের যদি ষাট বছর বয়সও হয়, সম্পর্কটা এমনই ঝরঝরে, নির্মল থাকবে, এটা দু’জনেরই দৃঢ় বিশ্বাস।
নেহাল, নওরীনের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল। মেয়েটা সবসময় এত হাসিখুশি কী করে থাকে! অথচ মা না হতে পারার যন্ত্রণা সে প্রতিমুহূর্তে হৃদয়ে লালন করছে। বিয়ের দ্বিতীয় বছরেই সুখবর পেয়েছিল, কিন্তু যখন পাঁচ মাস, তখন একটা দু র্ঘ ট না য় বাচ্চাটাকে ধরে রাখা যায়নি। ডাক্তার জানিয়েছে আর মা হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
তখন নওরীন উদ্ভট একটা পা গ লা মি করে বসে। রিয়াদকে জোর করতে থাকে ওকে ডিভোর্স দিয়ে যেন আরেকটা বিয়ে করে।
রিয়াদ সেসময় চমৎকার ভূমিকা পালন করেছিল, প্রায় ট্রমাটিক সিচুয়েশন থেকে নওরীনকে টেনে বের করেছিল, তার ভালোবাসা আর সহমর্মিতা দিয়ে। সেই প্রস্তাব দৃঢ়ভাবে নাকচ করে দিয়ে বলেছিল,
“শুধু সন্তান দিতে পারবে বলে একজনকে বিয়ে করব? যেখানে ভালোবাসা থাকবে না, শুধু জৈবিক কারণ থাকবে আর একটা চাওয়া পূরণ করার দায় থাকবে। এটা কি আরেকটা মেয়ের সাথে প্র তার ণা নয়? আমি সেই দায় নিয়ে শেষ হয়ে যাই এটা চাও? আমাদের মধ্যে এত ভালোবাসা, বোঝাপড়া, কত স্বপ্ন সব সন্তান হবে না বলে শেষ হয়ে যাবে? আল্লাহ দেননি যখন, তখন হয়নি, তিনি যদি কখনো চান তখনই নাহয় বাবা-মা হলাম। তাছাড়া আমরা তো সমব্যথীও, একে অপরের ভালো-মন্দ সকল সময়ে পাশে থাকার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমস্যাটা তো আমারও হতে পারত৷ তখন কি তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গিয়ে আরেকটা বিয়ে করতে? যদি তোমার উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয় তবে আমি তোমার কথায় রাজি হতে পারি, আর যদি ‘না’ হয়, ভবিষ্যতে কোনোদিন এই কথাটা মুখে আনবে না।”
নওরীন নিজের গো এরপর আর ধরে রাখতে পারেনি। এমন ভালোবাসা পায়ে ঠেলার সাধ্য তার হয়নি। চেষ্টা করে যাচ্ছে এখনো দু’জনে।
প্রায় তিন বছর আগের ঘটনা, কিন্তু কথাগুলো এখনও নেহালের স্পষ্ট মনে আছে। সব মানুষের মধ্যেই কিছু না কিছু অপূর্ণতা আছে, কারো সুখের, কারো ভালোবাসার, কারো সন্তানের, কারো অর্থের, কারো আবার অন্যকিছুর।
নওরীনই প্রথম এই গোমট ভাব কাটাতে ভূমিকা রাখল।
“এত গুণকীর্তন আমার পেটে সইবে না, নে এটা দেখ। আর বল তোর সন্তরণের পথ পেলি কিনা!”
নেহাল ওর দিকে বাড়িয়ে দেয়া ছবিটা হাতে নিল। একটা অল্পবয়সী তরুণী মেয়ে, খানিকটা রোগাটে লম্বাটে মুখ, তবে চোখজোড়ায় অদ্ভুত এক দীপ্তি খেলা করছে। প্রাণবন্ত হাসিতে উদ্ভাসিত মুখটা। যেন অত্যন্ত মজার কোনো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সে, খিলখিলিয়ে হাসছিল।
প্রকৃতিতে টুপ করে সন্ধ্যা নেমে এলো, আঁধার ঘনিয়ে এলো চারদিকে। সবকিছু ছাপিয়ে নেহালের মনে হলো, এই হাসিটা যেন ওর কানে বাজছে। সহস্র আলোকবর্ষ দূর থেকে হাসির ঝংকার অতি ধীরলয়ে এগিয়ে আসছে ওর দিকে৷
***
লিলির অস্থিরতা বেড়েছে, যখনই মনে হচ্ছে পরের সপ্তাহে ওর বিয়ে তখনই রাজ্যের তিক্ততা ওর মনে এসে জড়ো হচ্ছে৷ গতকালই সবাই এসে বিয়ের দিনক্ষণ পাকা করে গেছে। কোহিনূর হিরা নেহালও এসেছিল। কিন্তু দুজনের কথা বলার তেমন সুযোগ হয়নি। নেহালের বোন ওদের দুজনের সাথে বসেছিল সর্বক্ষণ। সব মায়ের কারসাজি, এটা লিলি জানে।
ফুঁসতে ফুঁসতে চ্যাট গ্রুপে সে লিখল, “আমি পালিয়ে যাব।”
মিতু উত্তর দিল, “তোর না শাশুড়ি পছন্দ হয়েছে?”
“তাতে কী! বিয়ে কি শাশুড়িকে করব নাকি! করব তো শাশুড়ির ছেলেকে।”
“শাশুড়ির ছেলের দোষ কী?” তরী লিখেছে।
“তার দোষ নেই, সে হীরা আমি, কাঁচ। হীরায় কাঁচ কা টে যেমন তেমনি একসাথে থাকলে আমার জীবন ধ্ব ং স।”
“আরেকবার ভেবে দেখ।”
“কোনো ভাবাভাবি নেই।”
“ছেলে কিন্তু সুন্দর আছে।”
এই কথা শোনার পর আর এদের সাথে কথা চালিয়ে যাবার ইচ্ছা অবশিষ্ট রইল না। মানুষের একমাত্র যোগ্যতা কি দেখতে সুন্দর আর ভালো প্রফেশন? আর কোনো যোগ্যতা আছে কিনা সেটা কেউ বলছে না। ওকে বুঝবে কিনা, ও একটা আলাদা মানুষ, ইচ্ছেগুলোও আলাদা, সেগুলো কীভাবে মূল্যায়িত হবে তাও জানে না। চেহারা দেখে গলে যাবার মতো মেয়ে সে নয়। এমন অনেক সুন্দর ছেলে সে দেখেছে, যারা মায়ের আঁচলের তলায় সুবোধ বালক সেজে থাকে, কিন্তু বাইরে যা করে বেড়ায় তাতে করে তাকে সোজা ভাষায় বলে ‘লু চ্চা’।
দেখতে দেখতে বিয়ের সময় ঘনিয়ে আসতে থাকল। আর মাত্র তিনদিন বাকি। পরশু থেকেই লোকজন আসতে থাকবে। যা করার আজই করতে হবে। সে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল পালাবেই। চুপিচুপি একটা ব্যাগও গুছিয়ে ফেলেছে। সোহানের নাম্বারের ব্লক খুলে কল দিতে গিয়ে দিল না। এটার থেকে তো ওই বুড়ো ব্যাটা ভালো। কোনো ভেড়ার সাথে সে কেন যোগাযোগ করবে। সুতরাং নাম্বারটা আবারও ব্লকলিস্টে জায়গা করে নিল।
সপ্তাহখানেক লুকিয়ে থাকবে, এরপর ঝামেলা নেমে গেলে মায়ের কাছে ফিরে আসবে। এটাই আপাতত লিলির পরিকল্পনা। তবে তরী বা মিতুর কাছে গেলে আগেই ধরা পড়বে। তাই ওদের ইউনিভার্সিটির একটা বড় আপুকে কল দিল, তার সাথে ওর বেশ ভালো খাতির আছে৷ তার জন্য লিলি একবার একটা বক্তৃতার স্ক্রিপ্ট লিখে দিয়েছিল। সেখান থেকে সখ্যতা। তাকে বলল,
“আপু, আমার আম্মু কিছুদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে যাবে। আমি বাসায় একা।” সে সানন্দে আগবাড়িয়ে প্রস্তাব দিয়েছে তার সাথে থাকার জন্য।
কাউকেই কিছু না জানিয়ে ব্যাগটা নিয়ে নিজের রুম থেকে অতি সন্তর্পণে পা টিপে টিপে বেরিয়ে এলো লিলি। তরী আর মিতুকেও জানায়নি।
…….
(ক্রমশ)