মাইনাসে মাইনাসে প্লাস পর্ব-২৬

0
3050

#মাইনাসে_মাইনাসে_প্লাস (পর্ব ২৬.১)
নুসরাত জাহান লিজা

লিলির জীবন একটা বিশাল বড় ধাক্কায় পাল্টে গেছে আচমকা। এরপর আজই প্রথম সে ইউনিভার্সিটিতে এসেছে। নেহাল আর রোমেনা যেভাবে উৎসাহ দেন, তাতে সে নিজেকে একটু হলেও ফিরে পায়। চেষ্টা করে যাচ্ছে এই পরিবর্তিত জীবনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে।

নেহালই আজ ওকে পৌঁছে দিয়ে গেছে। ক্লাস করতে করতে অবচেতনেই একবার মনে হলো মা আজ নিশ্চয়ই ওর পছন্দের শুঁটকি ভর্তা করেছেন। পরক্ষণেই হোঁচট খেয়ে পড়ল বাস্তবের শক্ত মাটিতে। লিলির জন্য মা আর কোনোদিন পছন্দের খাবার বানাবেন না। কান্না পেলে বুক দিয়ে আগলে বলবে না,

“কাঁদিস না রে পাগলি।”

কেউ খেয়াল করার আগেই সন্তর্পণে চোখ দুটো মুছে নিল লিলি।

ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসে হাঁটছিল একা একা, তরী আজ আসবে না, মিতুও এখনো এসে পৌঁছায়নি। নেহালের উপরে রাগ হলো। আগে আগে আনার জন্য অস্থির। আর ওদিকে বন্ধুরাও ঠিক সময়ে পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত জানাতে পারে না।

“ফাজিলের দল।” তরী আর মিতুর উদ্দেশ্যে বলল লিলি। বিষফোঁড়ার মতো এখনই কোত্থেকে এসে হাজির হলো সোহান।

“লিলি, আমার ফোনটা একবার রিসিভ তো করবা তাই না?”

“একদমই না। তোমার কল কেন রিসিভ করতে হবে? তুমি কোন রাজ্যের রাজপুত্র?”

“একটা বিকেল সময় দাও আমায়!”

“তুমি এখন কার সাথে যেন ঘোরো? আমি মেয়েটাকে চিনি কিন্তু। তোমার এই যে মধুর মধুর কীর্তি সব তার কাছে চলে যাবে। ধনবান হবু শ্বশুরের হাতছাড়া হয়ে যাবে না?”

“কী বলছো এসব? তুমি আমাকে এভাবে ফলো করছো কেন? ”

“আহারে! আমার ভিআইপিরে! তোমাকে আবার ফলো করতে হবে? ফালতু কথা বলার মতো মন মেজাজ আমার নাই। যাও ভাগো। আর কখনো যদি তুমি আমার সামনে পড়ো, তবে তোমার ডিয়ারেস্ট গার্লফ্রেন্ডের কাছে তোমার মুখোশ খসে পড়বে।”

কোন ইঁদুরের কোন ওষুধ এটা সে ভালোই জানে।

সোহান লিলিকে একবার আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে দ্রুতলয়ে পা চালিয়ে বিদায় নিল। এই মেয়ে এটা অবশ্যই পারবে, ভীষণ সাংঘাতিক।

ততক্ষণে মিতুও চলে এসেছে। এসেই প্রস্তাব দিল,

“চল, তরীদের বাসায় যাই। আড্ডা দেয়া হবে, তোর ভালো লাগবে।”

প্রথমে নাকচ করে দিয়েছিল লিলি। পরে কী মনে করে রাজি হবে কিনা ভাবতে ভাবতে রোমেনাকে কল দিয়ে তরীর বাসায় যাবার কথা জানালো।

এরপরেই অবচেতনেই ডায়াল করল নেহালের নম্বরে। লোকটা ওর জন্য সত্যিকার অর্থেই ভীষণ চিন্তা করে। দুঃখে পাশে থাকে অনেকেই, কিন্তু সেটাকে নিজের মনে করে নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারে কয়জন! তবে নেহাল পারে এটুকু লিলি বেশ উপলব্ধি করতে পারে।

নেহালের সাথে কথা বলতে বলতে মনে হলো লিলি বদলে যাচ্ছে। আগে কখনো এই ফোন করে কোথায় যাচ্ছে জানানোর প্রয়োজন মনে করত না৷ কিন্তু আজ ভাবনারা দল বেঁধে এলো, অবচেতনে কিংবা জাগরণে।

তবে নিজের মনের মধ্যে আবিষ্কৃত হওয়া এই পরিবর্তনটুকু খারাপ লাগছে না লিলির। তবে ছোট্ট একটা আফসোস মনে জেগে উঠল, মা খুব করে চাইতেন সে একটু দায়িত্বশীল হোক, একটু বুঝুক তাকে। তৌহিদাকে হারিয়ে ফেলে সে বুঝতে পারল। কিন্তু…

***
নেহাল আজ অফিসের একটা কাজে টাঙ্গাইল এসেছে। এখানে মেলা চলছিল। চুড়ির দোকানের সামনে এসে লাল চুড়িতে চোখ আটকে গেল। লিলি দুই হাত ভরে কাচের চুড়ি পরে, ওর দেয়া লাল শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে যেন নেহালের সামনে এসে দাঁড়ালো। ঝিনঝিন শব্দটাও যেন মনশ্চক্ষে দেখতে পেল নেহাল।

চুলে বেলীফুল কিংবা বকুল ফুলের মালা জড়ানো থাকলে কেমন লাগবে! নেহাল মেলায় ফুলের মালা খুঁজতে শুরু করল। যেতে যেতে হয়তো নেতিয়ে যাবে ফুল, তাতে কী! ওর যত্ন আর আবেগ তো তরতাজা থাকবে।

লিলির মনের অবস্থা যেমন, তাতে হয়তো এখন পরবেই না এসব। তবুও কেন যেন নেহালের লোভ হয় বড্ড। এভাবে লিলিকে দেখতে।

লিলি নেহালকে ওর কল্পনার ঠিক কোন রঙে সাজাতে চায়! আদৌ চায় তো! কেন যেন ভারি কৌতূহলী হয়ে উঠে সে।
……..

#মাইনাসে_মাইনাসে_প্লাস (পর্ব ২৬.২)
নুসরাত জাহান লিজা

আগামীকাল পুষ্পিতার জন্মদিন। নওরীন চাইছিল এটা যেন খুব চমৎকারভাবে হয়। বাচ্চা মেয়েটাও মজা করতে পারবে। স্কুলে এখন ওর কিছু বন্ধুও হয়েছে। আগের মতো গোমড়া মুখে ক্লাসে বসে থাকে না। নিজেদের খুব কাছের কিছু মানুষ আর পুষ্পিতার নতুন বন্ধুরা আসবে।

নওরীন পুষ্পিতাকে নিয়ে বাসায় এসেছে এটা বলতে।

পুষ্পিতা চলে গেল লিলির ঘরে। রোমেনা নওরীনকে জিজ্ঞেস করলেন,

“তোর মেয়েটা ভীষণ আদুরে।”

নওরীনের মুখে তৃপ্ত হাসি, “হ্যাঁ মা। এখন ঘর ভরা ভরা লাগে।”

মেয়ের তৃপ্ত মুখ দেখে রোমেনা অদ্ভুত প্রশান্তি পেলেন।

“তোরা যখন ছোট্ট তখন আমি অনেক অসুস্থ হয়ে গেলাম৷ নেহালও তখন বেশ ছোটই। তুই সেই ছোট্ট বেলাতেই কেমন দায়িত্ব নিতে শিখলি। তোরা দুইজন যখন ঘরজুড়ে ছুটে বেড়াতি, আমার যে কেমন লাগত! এই খুশি বলে বোঝানো সম্ভব না। তুই এখন নিজেই মা। আমি না বললেও তুই ফিল করতে পারিস জানি।”

রোমেনার বলার ধরন নওরীনের ভীষণ ভালো লাগল। মা ইচ্ছে করে ওর অপারগতার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে এমনভাবে বললেন যেন সে সত্যিই পুষ্পিতার মা। মেয়েটা ওর নিজের গর্ভের না হলেও সে তো সত্যিকার অর্থে মা’ই। পুরো পৃথিবী কী বলল না বলল তাতে ওর কিছুই যায় আসে না। নিজের এবং পাশের মানুষদের বিশ্বাসটুকুই সব। পুষ্পিতা নিজেও তো তাই বিশ্বাস করে। আর কী চাই! সৃষ্টিকর্তা ওকে অন্যভাবে সন্তান তো দিয়েছেন।

নওরীন হেসে প্রশ্ন করল, “নেহাল কই মা? ও ফেরেনি এখনো?”

“না রে। ফিরবে হয়তো, রওনা দেবার আগে কল দিয়েছিল।”

***
লিলি ওর ছেলেবেলার পুতুলের বাক্সটা নিয়ে বসে ছিল। সেটা বুকে চেপে রেখেছিল। মায়ের স্পর্শে ছিল এটা, কিছুটা স্পর্শধূলি যদি অনুভব করা যায়। চোখ বেয়ে বর্ষা নেমেছে ততক্ষণে।

এরমধ্যেই আলতো পায়ের আওয়াজে সচকিত হয়ে চোখ মুছে নিয়ে ঘুরে তাকাতেই পুষ্পিতাকে দেখল।

“পুষ্প, এদিকে এসো? কখন এলে?”

“এখনই।”

“মা এসেছে?”

“হ্যাঁ। তুমি কী করছিলে মামি? পুতুল খেলছিলে?”

লিলি হেসে বলল, “খেলবে তুমি?”

“তোমার সাথে?”

“হ্যাঁ, আমার সাথে?”

পুষ্পিতাকে নিজের কোলে বসালো লিলি। পুতুলটা হাতে নিয়ে মেয়েটা মাথা দুলিয়ে যেন খুব জটিল কিছু ভাবছে এমন ভঙ্গিতে বলল,

“কিন্তু আমি তো বড় হয়ে গেছি। যখন ছোট ছিলাম তখন খেলেছি।”

“তাই? দেখি কত বড় হয়েছ? আমার থেকেও বড়?”

পুষ্পিতা কোলে বসেই লিলিকে পর্যবেক্ষণ করে বলল, “নাহ্! তোমার থেকে ছোট।”

“তাহলে?”

“তাহলে খেলব।”

“এই তো লক্ষী মেয়ে।”

“তুমিও লক্ষী মামি।”

লিলি অনেকদিন পরে মন খুলে হাসল। হাসতে হাসতেই আচমকা নিস্প্রভ হয়ে গেল। এই পুতুলে ওর মায়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তবুও এটা সে পুষ্পিতাকে দিয়ে দিল। হঠাৎ করেই যেন ছোট্ট মেয়েটার সাথে নিজের মিল খুঁজে পেল। দুজনের ব্যথাটুকু কেমন যেন মিলেমিশে গেছে। এটা পেয়ে যদি খানিকটা খুশি হয়, মা না-হয় ওই ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুটার মনের এক চিলতে আনন্দের মধ্যেই বেঁচে থাকুক।

“এটা তোমাকে দিলাম। আমার খুব প্রিয় জিনিস। তুমি যত্ন করে রাখবে তো!”

পুষ্পিতা কতটুকু বুঝল লিলি জানে না, তবে মেয়েটার চোখেমুখে খুশির ঝিলকটুকু ওকে স্পর্শ করল। আবারও এক টুকরো হাসি ফুটল লিলি ঠোঁটের কোণে।

সে মোবাইলটা হাতে নিয়ে পুষ্পিতার মিষ্টি উদ্ভাসিত মুখটাকে ধরে রাখল স্থিরচিত্রে।

নেহালের হোয়াটসঅ্যাপে ছবিটা পাঠিয়ে দিল। অনেকক্ষণ হয়ে গেল কোনো রিপ্লাই এলো না, অনলাইনেই নেই।

নওরীনকে নিতে এলো রিয়াদ। রাতে খাবার সময় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু নেহাল এখনো ফিরছে না। মোবাইলটাও বন্ধ।

রিয়াদ বলল, “এতক্ষণে তো চলে আসার কথা।”

রোমেনা চিন্তিত মুখে আশফাককে বলল, “হ্যাঁ। ওর কলিগ সাইদকে একবার কল দিও তো।”

আশফাক সাঈদের সাথে কথা বলে জানালেন, “ও বলল নেহালের সাথে আজ সকালে একবার কথা হয়েছে, আর কথা হয়নি। অফিস থেকে নেহাল একাই গেছে।”

লিলির কেমন অস্থির লাগতে শুরু করল। ওর মনে হলো মাকে অব্যক্ত কথা বলতে পারেনি। আজকের ছোট্ট ছবিটা পাঠিয়েছে। কিন্তু সেটাও এখনো দেখেনি। কেমন যেন আশঙ্কায় ছেয়ে গেল মন।

চিন্তিত অবশ্য সকলেই, তবে লিলির মুখের দিকে তাকিয়ে সবাই নিজেদের সংযত করল।

রোমেনা উঠে গিয়ে লিলির মাথায় হাত রেখে বললেন, “চিন্তা করিস না। চলে আসবে। জ্যামে আটকে আছে হয়তো।”

লিলির অভিব্যক্তিতে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। রোমেনার হাত ধরে শঙ্কিত গলায় বলল, “মা, ওর ফোনটা বন্ধ কেন?”

রোমেনা উত্তর দিতে পারলেন না। লিলি কাঁদছে। আরও যে দুই একজনের নাম্বার ছিল সবাইকে কল করা হলো। তেমন কিছু কেউ জানাতে পারল না। ওদিকে মেয়েটাকে সামলানো যাচ্ছে না। কান্নার দমকে ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছে না লিলি। যত রকম বাজে আশঙ্কা সব মনে উঁকি দিচ্ছে ওর। স্বভাবের বাইরে গিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সে।

আরও প্রায় চল্লিশ মিনিট পরে বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। নওরীন ছুটে গিয়ে দরজা খুলে নেহালকে দেখল।

সকলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

“ফোন বন্ধ রেখেছিস কেন?”

“আরে, চার্জ নেই। আর আমি মা’কে বলেছিলাম বেরিয়েছি। কিন্তু একটা পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল। ওর সাথে মেলায় গেলাম। ওখানে দেরি হলো। এরপর বাসে উঠে কল দিতে যাব কিন্তু দেখলাম চার্জ নেই।”

“এত ইরেসপন্সিবিলিটি তোর কাছ থেকে আশা করিনি নেহাল।” নওরীনের কথায় নেহাল সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,

“আচ্ছা, স্যরি।”

এবার নেহালের চোখ গেল লিলির দিকে। মেয়েটার কান্না থেমেছে, কিন্তু এখনো শরীর কাঁপছে। রোমেনা বললেন,

“আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। সবাই আয়৷ আর নেহাল, লিলির সাথে একটু কথা বল।”

“কী হয়েছে লিলি?” উদ্বিগ্ন গলায় প্রশ্ন করল নেহাল।

রোমেনা বললেন, “মেয়েটা তোর জন্য কেঁদে বুক ভাসালো। আর আমার গাধা পুত্রের কান্ড দেখো। ইশারাও বোঝে না।”

মুহূর্তেই ভারি গোমট পরিবেশে একটুখানি ফুরফুরে বাতাস ঢুকে সব কেমন হালকা করে দিল। নেহাল লজ্জা পেয়ে গেল। লিলি একবার নেহালের দিকে তাকিয়ে ভেতরে চলে গেল। বাকিরা মুখ টিপে হাসি আটকে রেখেছিল। নেহাল যেতে যেতে সমবেত হাসির শব্দ শুনতে পেল।

রোমেনার মাথা থেকে এখনকার নেহালের চিন্তা দূর হবার পাশাপাশি আরেকটা বিশাল পাথর ভার নেমে গেছে বুক থেকে। তিনি এই দুটো বিপরীত মেরুকে একসাথে জুড়ে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করেননি। লিলির খারাপ সময়ে নেহালের ভালোবাসাটুকু তিনি দেখেছেন, আজ লিলির নির্জলা ভালোবাসাটুকু চাক্ষুষ করলেন। এদের ক্ষেত্রে গাণিতিক সূত্রটা দারুণভাবে মিলে গেছে তবে। শুধু এটার আরেকজন স্বপ্নদ্রষ্টা তৌহিদা সুন্দরটুকু দেখে যেতে পারল না, এটাই অপূর্ণতা। কতটা খুশি হতো তৌহিদা।

***
ভেতরে আসতেই লিলি প্রায় ছুটে এসে ঝাপিয়ে পড়ল নেহালের প্রশস্ত বুকে। নেহাল লিলির মাথায় হাত রেখে বলল,

“এই মেয়ে, কী হয়েছে? মা বলল আমার জন্য কেঁদেছ। আমি ঠিক আছি তো।”

“আমি তোমার সাথে কোনো কথা বলব না।”

“এই তো বললে।”

“আর বলল না। তুমি ভীষণ বাজে লোক। বাজে সঙ্গে থাকতে নেই।”

“আরে, আমার ফোনে চার্জ ছিল না।”

“এরপর থেকে সবসময় ফোনে চার্জ রাখবে। চার্জার, পাওয়ার ব্যাংক যা পারো সব সাথে রাখবে। আমি যেন কখনো তোমার ফোন বন্ধ না পাই।”

“আচ্ছা, রাখব। এবার একটু শান্ত হও প্লিজ।”

“তুমি বুঝবে না নেহাল। আম্মুর ওভাবে…..”

এটুকু বলে একবার শ্বাস টেনে আবারও বলল, “আমি ভয় পাই। ইদানিং হারানোর ভয় পাই প্রবলভাবে। আমি আর হারাতে চাই না। আমার একবার মনে হয়েছিল আমি কেউ বাইরে গেলে তাকে কোনো খুশির মুহূর্ত শেয়ার করব না। এটা আমার জন্য কুফা।”

“ছিঃ লিলি। এসব কুসংস্কার।”

“আমি জানি। কিন্তু মন সবসময় মস্তিষ্কের কথা শুনে না।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে। যদি চার্জ শেষও হয়ে যায়, আমি আগে আগে তোমাকে জানিয়ে দেব। খুশি?”

লিলি তবুও বুকে মিশে রইল। ওর হৃদস্পন্দন নেহাল অনুভব করতে পারছে। লিলি কী নিজে জানে সে কোনো একদিনের অপ্রিয় মানুষটাকে এতটা ভালোবেসে ফেলেছে! মুখে না শুনেও নেহাল যেন ভালোবাসার সমস্তটুকু অনুভব করছে।

“তোমার জন্য কিছু জিনিস এনেছি। নেবে না?”

লিলি এতক্ষণে সম্বিতে ফিরল। নিজের এত আবেগপ্রবণ হয়ে যাবার লজ্জা ঢাকতেই যেন মুহূর্তে সপ্রতিভ হলো,

“আজ তো মোবাইল বন্ধ। সার্চ দেবার মতো কিছু নেইও তোমার কাছে। গুগলে কী করে সার্চ করলে?”

নেহাল নিজেও আজ হাসল, অপ্রতিভ হলো না। বরং বলল,

“প্রশ্রয় পেয়েছি তো, একটু সাহসী হয়েছি। এখন আর গুগল লাগবে না।”

“তা সাহসী ছেলে, কী এনেছো দেখি?”

নেহাল কাঁচের লাল চুড়ি বের করে লিলির দিকে বাড়িয়ে দিল।

“এখনো খুব বেশি সাহসী হতে পারোনি। সার্টিফিকেট দিতে পারছি না। বউয়ের জন্য চুড়ি আনলে হাতে পরিয়ে দিতে হয়।” ফিসফিসিয়ে বলল লিলি।

নেহাল হাতে পরিয়ে দিয়ে বেলি ফুলের মালাটা বের করে বলল, “এটা খোপায় গুঁজে দেব? নেতিয়ে গেছে অবশ্য।”

“যাক, শুকিয়ে গেলেও আমি এটা খোঁপায় গুঁজব, যদি তুমি পরিয়ে দাও।”

নেহাল কোথায় যেন ভেসে গেল৷ এই ছোট্ট উপহারে কারো মুখ এতটা ঝলমলে হয়ে উঠতে পারে নেহাল কোনোদিন ভাবতে পারেনি। সাথে অনেকদিন পরে লিলিকে চেনা রূপে ফিরতে দেখেও প্রশান্তি এসে ভীড়ল।

খোঁপায় মালা জড়িয়ে দিতে দিতে নেহাল বলল, “লাল শাড়িটা…”

“আমিও ভাবছিলাম। কাল পুষ্পের জন্মদিন। ওটাই পরব। সাথে এগুলো।”

“আমি কাল আবার মালা এনে দেব তাহলে।”

“সেটা দিও। তবে এটা আমি আমার ডায়েরির ভাঁজে রেখে দেব যত্ন করে।”
……..
(ক্রমশ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে