মহুয়া পর্ব-২৫ এবং শেষ পর্ব

0
1852

#মহুয়া
‌লেখা: শার‌মিন আক্তার সাথী

পর্ব: ২৫ (অন্ত‌িম পর্ব)

‌প্রেগ‌নে‌ন্সি টেস্ট কি‌টে রি‌পোর্ট প‌জে‌টিভ দে‌খে তি‌থি প্রথ‌মে র‌কিব‌কে কল করল। তারপর বলল,
“কোথায় তু‌মি? মা‌নে ব্যস্ত?”
“না তেমন ব্যস্ত না। ঘন্টাখা‌নিক আপাতত ফ্রী আছি।”
“তাহ‌লে সদর হাসপাতা‌লের সাম‌নে, ক‌নিকা ডায়গ‌নিস্টিক সেন্টা‌রের সাম‌নে আসো। আমি সেখা‌নে আছি।”
“‌কো‌নো সমস্যা তি‌থি?”
“আ‌সো তারপর বল‌ছি।”
র‌কিব সেখা‌নে আসার পর দেখল তি‌থি রাস্তার সাম‌নেই দাঁড়া‌নো। তি‌থি‌কে দে‌খে বলল,
“কী হ‌য়ে‌ছে? এত জরু‌রি তলব?”
“আমা‌কে বা‌ড়ি নি‌য়ে চ‌লো, শরীরটা ভা‌লো লাগ‌ছে না।”
র‌কিব বাইক নি‌য়ে এসে‌ছি‌লো। তি‌থি বাই‌কে ব‌সে বলল,
“বা‌ড়ি চ‌লো সব বল‌ছি।”
বা‌ড়ি ফেরার পর রু‌মে গি‌য়ে তি‌থি বলল,
“র‌কিব আমি প্রেগ‌নেন্ট।”

র‌কিব সা‌থে সা‌থে উচ্ছ্বা‌সিত হ‌য়ে বলল,
“ওয়াও। হোয়াট এ গুড নিউজ! আমি বাবা হব?”
ব‌লেই তি‌থির কপা‌লে চুমো খে‌য়ে তি‌থির দি‌কে তা‌কিয়ে আবার মি‌ইয়ে গেল। মিন মিন ক‌রে বলল,
“‌কিন্তু কিভা‌বে?”
‌তিথি প্রচন্ড রে‌গে বলল,
“তু‌মি জা‌নো না কিভা‌বে?”
“না মা‌নে ——!”
“না মা‌নে কী? সে‌দিন এত ক‌রে বলল‌াম আজকে থাক। তু‌মি শুন‌লে না। তারপর বললাম একটা ইমা‌জে‌ন্সি পিল এনে দাও, তাও আন‌লে না।”
র‌কিব আবার মিন মিন ক‌রে বলল,
“ভু‌লে গে‌ছিলাম।”
“‌তোমার সে ভুলটা এখন সাত সপ্তা‌হের একটা ভ্রুন। আমি এখন কী করব ব‌লো?”
“র‌কিব নিশ্চুপ।”
“মাত্র মে‌ডি‌কে‌লে চান্স পেলাম। এত কষ্ট ক‌রে মে‌ডি‌কে‌লে চান্স পেলাম। দিন রাত এক ক‌রে পড়া‌লেখা ক‌রে ত‌বে সরকা‌রি মেডি‌কে‌লে চান্স পে‌য়ে‌ছি। এখন বাচ্চাসহ আমি কী ক‌রে পড়া‌শোনা করব? কী ক‌রে সব সামলা‌বো? এত প্রেসার কী ক‌রে নিব?”

র‌কিব কী বল‌বে ভে‌বে পা‌চ্ছে না। লাস্ট মান্থ তিথির পি‌রিয়‌ডের পর পরই ওদের যখন মি‌টিং হ‌য়ে‌ছিল। তখনই তি‌থি ব‌লে‌ছিল য‌দিও আমার সেইভ পি‌রিয়ড চল‌ছে তাও আমি রিক্স নি‌তে চাই না। একেক মে‌য়ে‌দের ওভু‌লেশ‌নের টাইম একেক সময়। আমি রিক্স নি‌তে পারব না। কিন্তু র‌কিব ব্যাপাটায় এত গুরুত্ব দেয়‌নি। তারপ‌রের দিন ও কিছু জরু‌রি কা‌জে বান্দরবান যায় সেখান, থে‌কে রাঙ‌ামা‌টি তারপর সি‌লেট। এভা‌বে ক‌রে ক‌রে প্রায় এক মা‌সের বে‌শি সময় ওকে তি‌থির থে‌কে বাই‌রে থাক‌তে হয়। ক‌দিন আগেই ফি‌রে‌ছে। ত‌বে আজ এমন কিছু শুন‌বে তা চিন্তাও ক‌রে‌নি। য‌দিও খবরটা শু‌নে র‌কিব ম‌নে ম‌নে খুব খু‌শি। কারণ বাবা হওয়ার খু‌শি সব‌চে‌য়ে বি‌শেষ। ত‌বে তি‌থির কথা ভে‌বে খারাপ লাগ‌ছে। খু‌শিটা প্রকাশ কর‌তে পার‌ছে না।

র‌কিব কী বল‌বে ভে‌বে পা‌চ্ছে না। তি‌থি মাথা চে‌পে বিছানায় ব‌সে আছে। র‌কিব একটু রু‌মের বাই‌রে গে‌লো। তারপর ফোন বের ক‌রে কাউ‌কে ফোন দি‌য়ে বলল,
“আ‌মি আজ আর আসব না। ওদিক একটু সাম‌লে নি‌য়েন। কো‌নো জরুরি কাজ আস‌লে ফোন কর‌বেন। আজ একেবা‌রে সন্ধ্যার পর আসব।”
তারপর রু‌মে ঢু‌কে দেখল তি‌থি ওদের বি‌য়ের ছ‌বিটা দেখ‌ছে আর কাঁদ‌ছে। র‌কি‌বের খুব খারাপ লাগ‌ছে। তি‌থির পা‌শে ব‌সে ওকে বু‌কে নি‌য়ে বলল,
“তুুমি য‌দি মা হওয়ার জন্য তৈরী না থা‌কো তাহলে ——-!
কথাটা ব‌লে চুপ ক‌রে গেল রকিব। এবরশন কথাটা বল‌তে ওর বুকটা কেঁ‌পে উঠছে। র‌কিব নি‌জের অনুভূ‌তি‌তে নি‌জেই চমকা‌লো। এর আগে নিজ হা‌তেও কত খারাপ লোক‌দের এনকাউন্টার ক‌রে‌ছে। কত লোক‌দের মৃত্যুর খবর অনায়া‌সে তার আত্মীয় স্বজন‌দের দি‌য়ে‌ছে অথচ আজ নি‌জের সন্তানকে মারার কথা বল‌তে গলা কাঁপ‌ছে ওর। হোক বাচ্চাটা অনাগত, হোক সে সাত সপ্তা‌হের ছোট্ট ভ্রুন। তবুও তো তারই অংশ। তা‌কে মারার কথা ভাব‌তেই পা‌রে না। বাচ্চাটা‌তো অবৈধ না। তাদের খুব য‌ত্নের ভা‌লোবাসার অংশ বাচ্চাটা। র‌কিব‌কে চুপ থাক‌তে দে‌খে তি‌থি বলল,
“তাহ‌লে কী এব——-!”
এতটু‌কো বল‌তেই তি‌থিরও গলা কাঁপ‌ছে। শব্দ‌ ক‌রে কাঁদ‌তে কাঁদতে বলল,
“আ‌মি পারব না র‌কিব। একটা নিষ্পাপ প্রাণ‌কে পৃ‌থিবী আসার আগেই আমি মার‌তে পারব না। ও তো আমা‌দেরই অংশ।”

দুজ‌নেই চুপ হ‌য়ে গেল। পু‌রো রুম জুড়ে পিনপাতন নীরবতা বিরাজ কর‌ছে।

‌সে‌দিন দুপু‌রে তিথির মা আর র‌কিবের মা বিষয়টা জে‌নে দুজ‌নেই চিন্তায় পড়‌লেন। বাচ্চা আর মে‌ডি‌কে‌লের পড়া সামলা‌নো মু‌খের কথা না। তি‌থি কী এত বড় দা‌য়িত্ব নি‌তে পার‌বে? তি‌থি ধীর গলায় বলল,
“পারব?”
র‌কি‌বের মা বলল,
” তি‌থি ভে‌বে বল‌ছো তো তু‌মি?”
“‌জি।”
আস‌লে রি‌পোর্ট পাবার পর থে‌কেই আমি ভে‌বে যা‌চ্ছি। মা যে রা‌ধেঁ সে চুলও বা‌ঁধে। হয়ত কষ্ট হ‌বে ত‌বে আমি পারব য‌দি আপনারা আমার পা‌শে থা‌কেন তো।”
র‌কি‌বের মা বল‌লেন,
“‌তা তো সবসময়ই‌ তোমার পা‌শে আমরা আছি।”
‌তিথির মা বলল,
“‌তি‌থি তুই ভা‌লো ভাবছিস তো?”
“হ্যাঁ মা। আজ না হয় ক্যা‌রিয়া‌রের চিন্ত‌া ক‌রে বাচ্চাটা‌কে নষ্ট ক‌রে ফেললাম। তারপর নি‌জের সন্তা‌নের লা‌শে পা দি‌য়ে ক্যা‌রিয়ার গড়লাম, খুব বড় হলাম, নাম কামালাম, প্র‌তিপ‌ত্তি পেলাম কিন্তু তা কী আমা‌কে মান‌সিক শা‌ন্তি দি‌তে পার‌বে? মানু‌ষের প্রথম সুখ তো ম‌নে থা‌কে। ক্যা‌রিয়ার টাকায় তো বা‌হ্যিক সুখ। আমি আমার সন্তান‌কে মে‌রে ম‌নের সুখ নষ্ট কর‌তে চাই না। তাছাড়া মে‌ডি‌কে‌লের স্টু‌ডেন্ট হওয়ার খা‌তি‌রে দেখেছি, শু‌নে‌ছি অনে‌কেই প্রথম বাচ্চা নষ্ট করার পর আর মা হ‌তে পা‌রে‌নি। আমি এমন রিক্স নি‌তে পারব না। আমি আমার সন্তান‌কে পৃ‌থিবীতে আনব, তা‌কে স‌ুন্দর একটা জীবন দিব আর নি‌জের ক্যা‌রিয়ারও গড়ব। হয়‌তোখিুব কষ্ট হ‌বে, ত‌বে ম‌নে শা‌ন্তি থাক‌বে। তাছাড়া মা তু‌মি আছো আমার আরেক মা আছে আমার চিন্তা কী। বাবার মৃত্যুর পর তো তু‌মি আমার কা‌ছেই থাকছো এবং ভ‌বিষ্য‌তে থাক‌বে। ত‌বে তু‌মি তোমার মে‌য়ের সন্তান‌কে সামলা‌তে পার‌বে না মা? তাছাড়া র‌কিব আছে, মা আছে।”
‌তি‌থির এত সুন্দর বুঝদার কথা শু‌নে জাহানার চোখে পা‌নি এসে পড়ল। ম‌নে ম‌নে ভাব‌লেন, ক‌বে তার মে‌য়ে এত বুঝদার হ‌লো? স‌ত্যি একটা মে‌য়ে মা হ‌তে যায় তখন সে প‌রিপক্ক বু‌দ্ধিম‌তি হয়।”

‌তি‌থির কথা শু‌নে র‌কি‌বের মা বল‌লেন,
“‌বেঁচে থাক মা। জীব‌নে খুব উন্ন‌তি কর।”
র‌কিব কো‌নো কথা না ব‌লে রু‌মে চ‌লে গেল‌। তি‌থি ওর পিছন পিছন গি‌য়ে বলল,
“কী হ‌লো চ‌লে এলে যে? আমার সিদ্ধান্ত তোমার পছন্দ হয়‌নি?”
র‌কিব তি‌থি‌কে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
“আজ তু‌মি আমার প্রাণটা বাঁচা‌লে। বার বার ম‌নে হ‌চ্ছিল তু‌মি য‌দি বাচ্চা ন‌ষ্টের কথা ব‌লো তখন আমি হয়ত দম বন্ধ হ‌য়ে ম‌রেই যাবো।”
‌তিথি মৃদু হে‌সে র‌কিব‌কে বলল,
“আমা‌র সাম‌নের জা‌র্নিটা খুব ক‌ঠিন। তোমা‌কে পা‌শে চাই খুব ক‌রে।”
“সবসময় ছায়ার মত পা‌শে থাকব।”

২৯!!

আট মা‌সের ফোলা পেটটা নি‌য়ে হাঁট‌তে চল‌তে বেশ কষ্ট হয় প্রিয়‌তির। হাত পা‌য়ে পা‌নি এসে ফু‌লে কলার মত হ‌য়ে‌ছে। পেট‌কে ধ‌রে কোনম‌তে বিছানায় গা এলি‌য়ে দি‌লো। ম্যা‌ক্সিটা পে‌টি‌কোটসহ হাটু পর্যন্ত উঠে গে‌ছে, এখন সেটা নামা‌নোরও শ‌ক্তি নেই ওর গা‌য়ে। শরীরটা এত ক্লান্ত লাগ‌ছে, চোখ জু‌ড়ে শুধু ঘুম আর ঘুম। গতকাল রা‌তে একটুও ঘুম হয়‌নি ওর। বাচ্চাটা পে‌টের ম‌ধ্যে খুব ন‌ড়াচড়া কর‌ছিল। কোন পাশ ফি‌রে শু‌য়ে শা‌ন্তি পায়নি। বিছানায় শোয়ার সা‌থে সা‌থে ঘু‌মি‌য়ে পড়ল।
রিদু রু‌মে ঢু‌কে দেখল প্রিয়‌তি অনে‌ক আলুথালু হ‌য়ে ঘু‌মি‌য়ে আছে। রিদু প্রিয়‌তির ম্যা‌ক্সিটা ঠিক ক‌রে দি‌য়ে ম‌নে ম‌নে বলল, মা হওয়া মু‌খের কথা না! আগে বুঝতাম না মা‌য়ে‌রা বাচ্চা জন্ম দেয়ার সময় কত কষ্ট ক‌রে কিন্তু গত ক‌য়েকমাস যাবত নি‌জের স্ত্রী‌কে দে‌খে বুঝলাম আস‌লে একটা মে‌য়ের কত ধৈর্য্য। আল্লাহ সকল মা‌য়ে‌দের উপর নি‌জের রহমত সর্বদা ব‌র্ষিত করুক।

‌প্রিয়‌তির কপা‌লে চু‌মো এঁকে ফ্যানটা চালু ক‌রে দিল। বেশ ঘে‌মে গে‌ছে ও। প্রেগ‌নেন্ট মে‌য়ে‌দের না‌কি প্রচুর গরম লা‌গে। প্রিয়তিও গরম একদম সহ্য কর‌তে পা‌রে না ইদা‌নিং। মাত্রই র‌কিব ফোন ক‌রে বলল, সেও বাবা হ‌বে। কথাটা শুনে রিদু বেশ খু‌শি হ‌য়ে, প্রিয়‌তি‌কে খবরটা শোনা‌তেই এসে‌ছি‌লে‌া কিন্তু প্রিয়‌তি ঘু‌মে দে‌খে আর জাগা‌লো ন‌া।

‌রিদু ম‌নে ম‌নে বলল,
“গত কয়েকমাস যাবত জীবনটা সুন্দর, স্বাভা‌বিক চল‌ছে এমন চল‌তে থাক‌লে আলহামদু‌লিল্লাহ্। ত‌বে এখ‌নো প্রেমার কথা ভাব‌লে ভয় ক‌রে ওর। য‌দিও প্রেমার সা‌থে বহু মাস যাবত দেখা সাক্ষাৎ নেই। কিছুদিন আগে শু‌নে‌ছে কোন বড় বিজ‌নেসম্যানকে বি‌য়ে ক‌রে‌ছে। হয়ত তা‌কেও ট্রা‌পে ফে‌লে বি‌য়ে ক‌রে‌ছে। নয়ত এত ধনী লোক প্রেমার মত ফা‌জিল‌কে কেন বি‌য়ে কর‌বে? যা হোক ফা‌জিলটা নি‌জের মত থাকুক। জাহান্না‌মে যাক তা‌তে আমার কিছু না। আমি আমার প্রিয়‌কে নি‌য়ে খুব সু‌খে আছি।”

৩০!!

‌প্রেমার সা‌থে ‌প্রিয়‌তির শেষ দেখা হয়ে‌ছি‌লো তি‌থির বাবার যে‌দিন মারা যান সে‌দিন। তখন প্রিয়‌তির কেবল তিন মাস চ‌লে। তি‌থি নি‌জের বা‌ড়ি গি‌য়ে পা‌নি পর্যন্ত পান ক‌রে‌নি প্রেমার ভ‌য়ে। প্রিয়তির বাবা মা নি‌জের কৃতক‌র্মের জন্য বহু আগে থে‌কেই পস্তা‌চ্ছে। কারণ প্রেমা যে হা‌রে তা‌দের জায়গায় জায়গায় ছোট ক‌রে‌ছে তা‌তে তা‌দের য‌থেষ্ট শিক্ষা হ‌য়ে‌ছে। কিন্তু যখন সন্তান হা‌তের নাগা‌লে চ‌লে যায় তখন অধিকাংশ সময়ই তাকে ফেরা‌নো সম্ভব হয় না।
তারা প্রিয়‌তির সা‌থেও চেষ্টা ক‌রে সম্পর্ক স্বাভা‌বিক কর‌তে পা‌রে‌ননি। প্রিয়‌তির ম‌নের ভয়, যেটা ওর বাবা মা ওর ম‌নে ঢু‌কি‌য়ে‌ছে, তা ‌তো এত সহ‌জে কাটা‌নো সম্ভব না। প্রিয়‌তির সা‌থে কথা হয় ত‌বে, প্রিয়‌তি তা‌দের থে‌কে সবসময় একটা দূরত্ব বজায় রা‌খে, তারা যতই দূরত্ব কমা‌তে যায় প্রিয়‌তি কোনোনা কো‌নো ভা‌বে আবার এড়ি‌য়ে চ‌লে। নি‌জের বাবা মা‌কে ভা‌লোবাস‌লেও তা‌দের দেয়া কষ্টগু‌লো এখ‌নো ভুলতে পা‌রে‌নি। প্রিয়‌তির বাবা মা প্রেমার সঙ্গ দি‌তে গি‌য়ে নি‌জের বা‌কি দুই ছে‌লে‌ মে‌য়েকেই প্রায় হা‌রি‌য়ে ফে‌লেছেন। প্রিয়ম ক‌য়েকমাস আগে কাতা‌রে কা‌জের ভিসা নি‌য়ে চ‌লে ‌গে‌ছে। নি‌জের প্রিয় মানুষ হারা‌নোর বেদনা কাটা‌তে হ‌লে স্থান প‌রিবর্ত‌নের চে‌য়ে সুন্দর কিছু হয় না। স্থান প‌রিবর্তনের ফ‌লে প্রিয়ম স‌ত্যি দ্রুত তি‌থি‌কে হা‌রা‌নোর শোকটা কা‌টি‌য়ে উঠ‌ছে। সেখা‌নে সারাক্ষণ নি‌জে‌কে কা‌জের মা‌ঝে ডু‌বি‌য়ে রা‌খে। যা‌তে ব্যস্ততা মনের দরজায় ভা‌লোবাসার কড়া নাড়ার সময় না দেয়। ত‌বে ইদা‌নিং হি‌মি নামক এক মে‌য়ের সা‌থে ওর ফেইসবু‌কে ভা‌লো বন্ধুত্ব গ‌ড়ে উঠে‌ছে। মে‌য়েটা‌কে প্রিয়‌মের ভা‌লো লাগ‌তে শুরু ক‌রে‌ছে।

৩১!!

হৃ‌দি ফয়সা‌লকে ফোন ক‌রে বলল,
“‌কোথায় তু‌মি?”
“ই‌য়ে মা‌নে বন্ধু‌দে‌র সা‌থে মিট কর‌তে এসেছিলাম।”
“রাত বা‌রোটা বা‌জে তু‌মি বন্ধুদের সা‌থে দেখা কর‌তে গে‌ছো? আজ বা‌ড়ি‌তে ফির‌তে হ‌বে না, থাকো তু‌মি বন্ধু‌দের সা‌থে।”
‌বেচারা ফয়সাল মুখে চিন্তার ভাব এনে ম‌নে ম‌নে বলল,
“‌কোন কুক্ষ‌ণে যে এ দজ্জাল মে‌য়ে‌কে ভা‌লো‌বে‌সে‌ছিলাম। পুর‌া পু‌লি‌শের মত ব্যবহার ক‌রে হিটলার রানী। ত‌বে এ দুষ্টুটা‌কে ভা‌লোবা‌সি। জা‌নি দুষ্টুটাও আমা‌কে ভীষণ ভা‌লোবা‌সে। তারপর মে‌সেজ ক‌রে বলল, আমার হৃ‌দি সোনা, ময়নাটা, তোমার জন্য ছোট্ট সারপ্রাইজ আছে। বন্ধু‌দের সা‌থে সেটাই একটু ডিসকাস কর‌ছিলাম। শীঘ্রই আমা‌দের বি‌য়ের ছয়মাস হ‌বে তো সে কার‌ণে।”

ফয়সাল জা‌নে এতেই হৃ‌দি ঠান্ডা হ‌বে। মে‌য়েরা যত দ্রুত অভিমান ক‌রে, তা‌দের অভিমান ভাঙা‌নোর উপায়ও খুব সহজ। প্রিয় মানুষটার দেয়া, ছোট ছোট জিনি‌সেই মে‌য়েরা খুব খু‌শি হয়, আবার তার দেয়া ছোট ছোট ক‌ষ্টেই তা‌দের হৃদয় ভে‌ঙে যায়। মে‌য়েরা হ‌চ্ছে বৃ‌ক্ষের মত, যত যত্ন কর‌বেন তখন সুন্দরভা‌বে নি‌জের শাখা প্রশাখা মে‌লে সংসার সুন্দর কর‌বে, ফু‌লে ফু‌লে আর সুঘ্রা‌ণে সংসার মাতা‌বে। অয‌ত্নে বৃ‌ক্ষের মতই ম‌রে যা‌বে, নে‌তি‌য়ে যা‌বে। বৃ‌ক্ষের য‌ত্নে যেমন বে‌শি কিছু লা‌গে না শুধু পা‌নি আর মা‌ঝে মা‌ঝে নতুন মা‌টি আর সার। তেমনি নারীর য‌ত্নে বে‌শি কিছু লা‌গে না, শুধু ভা‌লোবাসাই য‌থেষ্ট।

৩২!!

এভা‌বেই একেক গ‌তি‌তে একেক জ‌নের জীবন চল‌ছে, চল‌বে। জীবন যেমন তার গ‌তিতে চ‌লে? হা‌সি আনন্দ মি‌শি‌য়ে। তেমনই জীব‌নের মতই সবার জীবন চল‌ছে। ত‌বে কিছু মানুষের জীব‌নে ভা‌লোবাসার তীব্র নেশা থা‌কে।

মহুয়া একটা ফু‌লের নাম যেমন তেম‌নি একটা নেশা জাতীয় দ্র‌ব্যেরও নাম। মহুয়া যেমন মানু‌ষের ম‌স্তি‌ষ্কে নেশা ধরায়। ভা‌লোবাসাও একটা নেশা। ভা‌লোবাসার নেশা খুব বড় নেশা। একবার যা‌কে সে নেশায় পে‌য়ে ব‌সে সে আর নেশামুক্ত হ‌তে পা‌রে না। মহুয়ার নেশা হয়, ভা‌লোবাসাও তীব্র নেশা হয়। যেমন নেশায় ডু‌বে‌ছে প্রিয়‌তি-রিদু, তি‌থি=র‌কিব, ফয়সাল-হৃ‌দি। হৃয়ত প্রিয়ম আর প্রেমা ভা‌লোবাসার নেশায় ডুব‌তে পা‌রে‌নি। ত‌বে হয়ত তা‌দের জীব‌নেও এক‌দিন প্রে‌মের রঙ আস‌বে।
সবারই জীব‌নে ভা‌লোবাসার নেশা হওয়া প্র‌য়োজন। কারণ ভা‌লোবাসা পৃ‌থিবীর শুদ্ধতম অনুভু‌তির আরেক নাম।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে