মহুয়া পর্ব-২০

0
913

#মহুয়া
‌লেখা: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ২০

‌কিছুক্ষণ পর তি‌থি ছা‌দে আসল কিন্তু একা নয়, সা‌থে ওর বান্ধবী ঝুমা‌কেও নি‌য়ে আসল। প্রিয়ম দাঁ‌ড়ি‌য়ে ছি‌লো ছা‌দের একদম দ‌ক্ষিণ কর্ণা‌রে। মূলত ওদের ছা‌দের দ‌ক্ষিণ কর্ণা‌রে দাঁড়া‌লে নিচ থে‌কে বা আশে পা‌শের কেউ দেখ‌তে পা‌রে না উপ‌রে কারা আছে। পা‌শেই সি‌মেন্ট দি‌য়ে বড় পা‌নির ট্যাং‌কি বানা‌নো। তাছাড়া বেশ বড় বড় ক‌য়েকটা বাদাম গা‌ছে দ‌ক্ষিন কোনা‌কে আচ্ছা‌দিত ক‌রে রে‌খে‌ছে।
আজ যে‌হেতু শুধু আকদ হ‌বে তাই আত্মীয় স্বজন খুবই কম। তি‌থির মা তেমন আত্মীয়‌দের ব‌লেনি। আশে পা‌শের লোকজন বিকা‌লে আস‌বে। দুই একজন ম‌হিলারা যাও আস‌ছে তাও নিচ থে‌কে তি‌থির মা‌য়ের সা‌থে কথা ব‌লে চ‌লে যা‌চ্ছে। নি‌চে সবাই কা‌জে ব্যস্ত। ছা‌দে এখন কেউ নেই।

তিথির সা‌থে কাউ‌কে দে‌খে প্রিয়ম নি‌জের প্র‌তি তা‌চ্ছিল্য হাস‌লো। ম‌নে ম‌নে বলল,
” কা‌রো বিশ্বাস অর্জন কর‌তে সারা জীবন লে‌গে যায় কিন্তু‌ বিশ্বাস হারা‌নো এক মুহূ‌র্তের ব্যাপার। আমিও তি‌থির বিশ্বাস হা‌রি‌য়ে ফে‌লে‌ছি।”
‌তি‌থি প্রিয়‌মের কা‌ছে এসে বলল,
” হ্যাঁ ব‌লো?”
” আমা‌কে বিশ্বাস কর‌তে পার‌ছিস না?”
‌তি‌থি মাথা নিচু ক‌রে বলল,
” এ কথা কে‌নো?”
” না মা‌নে তোর সা‌থে একা কথা বলতে চে‌য়ে‌ছিলাম।”

ঝুমা বলল,
” তোরা কথা বল অা‌মি নি‌চে যাই।”
‌তি‌থি ঝুমার হাত ধ‌রে বলল,
” নি‌চে যে‌তে হ‌বে না, ছা‌দের ঐ পাশটায় দাঁড়া। কেউ আস‌লে ব‌লিস।”
” আচ্ছা।”
ঝুমা অপরপা‌শে যে‌তেই প্রিয়ম বলল,
” আমি কী এখন তোর বিশ্বা‌সের যোগ্য একদমই নেই?”
” তু‌মিই ব‌লো একটা মেয়ের সম্মা‌নের উপর‌ যে ছে‌লে হাত দেয়, তা‌কে আর যাই হোক মে‌য়েটা বিশ্বাস কর‌তে পারে কী?”
দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে প্রিয়ম বলল,
” হুঁ।”
” তু‌মি কিছু বল‌তে ডে‌কে‌ছি‌লে বোধ হয়।”
” আমি ক‌দি‌নের জন্য খুলনা যাচ্ছি। গতকাল রা‌তেই যাবার কথা ছি‌লো কিন্তু কিছু কা‌জের জন্য যে‌তে পা‌রি‌নি।”

‌তি‌থি র্নি‌বিকার ভ‌ঙ্গি‌তে জবাব দি‌লো,
” ওহ।”
” তোর খারাপ লাগ‌ছে না?”
” খারাপ কেন লাগ‌বে? আমা‌দের ম‌ধ্যে তো খারাপ লাগার মত সম্পর্ক নেই!”
মাথা নিচু ক‌রে প্রিয়ম বলল,
” কো‌নো সম্পর্ক নেই?”
” হ্যাঁ চাচা‌তো ভাই বো‌নের সম্পর্ক। আর কিছু নেই?”
” নাহ।”
” আচ্ছা র‌কিব‌কে তুই ভা‌লোবাসিস?”
” না।”
” যা‌কে ভা‌লোবাসিস না তা‌কে বি‌য়ে কর‌বি?”
” পা‌রিবা‌রিক বি‌য়েতে ভা‌লোবাসাটা প‌রেই হয় সবসময়। তাছাড়া র‌কিব‌কে ভা‌লো লা‌গে ত‌বে এখনও ভা‌লোবা‌সি না। হয়তো বি‌য়ের পর বাসব। কখ‌নো শু‌নে‌ছো স্ত্রী তার স্বামী‌কে ভা‌লোবা‌সে না!”
” বহু স্বামী স্ত্রী আছে যারা বছ‌রের পর বছর সংসার ক‌রেও একে অপর‌কে ভা‌লো বাস‌তে পা‌রে না।”

‌তি‌থি খা‌নিক সময় চুপ থে‌কে বলল,
” হয়‌তো কিছু থাক‌তে পা‌রে। ত‌বে বি‌য়ের মত প‌বিত্র সম্প‌র্কে জড়া‌নোর পর এম‌নি মায়া ভা‌লোবাসা হ‌য়ে যায়। আমা‌দের সমা‌জে তো বে‌শিরভাগই পা‌রিবা‌রিক বি‌য়ে তো তারা কী একে অপর‌কে ভা‌লোবা‌সে না? স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা অদ্ভুত মায়ার। না চাই‌তেও ভা‌লোবাসা মায়া সৃ‌ষ্টিকর্তা তৈরী ক‌রে দেন।”
” ওহ। তোর চাচা‌তো ভাই হিসা‌বে তোর বি‌য়ে‌তে কিছু‌ গিফ্ট তো কর‌তে পা‌রি?”
” হ্যাঁ পা‌রো।”

‌প্রিয়ম প‌কে‌টে হাত দি‌য়ে ছোট্ট একটা বক্স বের ক‌রে সেটা তি‌থির হা‌তে দি‌য়ে বলল,
” তোর জন্য।”
‌তি‌থি বক্সটা খু‌লে দেখ‌লো সুন্দর একটা স্ব‌র্ণের ব্রেস‌লেট। ‌সেটা দেখে বলল,
” এত দা‌মি উপহার আমি নি‌তে পারব না।”
” প্লিজ তি‌থি।”
” তু‌মি দ‌রকার হ‌লে আমার মা‌য়ের হা‌তে দাও। আমি নি‌তে পারব না। এত দা‌মি কিছু নি‌লে মা বকা দি‌বেন। তাছ‌াড়া আমি মা‌কে মিথ্যা বল‌তে পারব না।”
” তো‌কে মিথ্যা বল‌তে হ‌বে না। যা স‌ত্যি তাই ব‌লিস।”
তারপর প্রিয়ম এক সে‌কেন্ডও দাঁড়া‌ল না। হনহন ক‌রে ছাদ থে‌কে নেমে গে‌লো।

‌তি‌থিও ঝুমা‌কে নি‌য়ে নি‌চে চ‌লে আসল। তারপর ওর মা‌য়ের কা‌ছে গি‌য়ে চু‌পিচু‌পি বলল,
” মা তোমার রু‌মে আস‌বে একটু?”
” দেখ‌ছিস না কাজ কর‌ছি? হাত আটকা।”
” প্লিজ মা জরু‌রি কথা। প্রিয়ম ভাইর ব্যাপা‌রে।”
এবার জাহানা ভ্রু কুচ‌কে মে‌য়ের দি‌কে তা‌কা‌লেন। তারপর বলল,
” তুই যা আমি পাঁচ মি‌নিট পর আস‌ছি।”
হঠাৎ ক‌রেই তার খুব চিন্তা হ‌চ্ছে। প্রিয়ম আবার কিছু ক‌রেনি তো? না‌কি মে‌য়েটা আবার প্রিয়ম‌কে পছন্দ ক‌রে ফেলল? এসব সাত পাঁচ ভাব‌তে ভাব‌তে রু‌মে গে‌লেন। রু‌মে তি‌থির বাবা আর তি‌থি কথা বল‌ছে। তা‌কে দে‌খে তিথি বলল,
” মা দরজাটা বন্ধ ক‌রে এসো।”

‌কেন জা‌নি জাহানার খুব টেনশন হ‌চ্ছে। দ‌রজাটা বন্ধ ক‌রে তি‌থির পা‌শে ব‌সে বলল,
” তি‌থি প্রিয়ম আবার কিছু ক‌রে‌ছে না‌কি? ঝা‌মেলা টা‌মেলা কিছু?”
” না মা তেমন কিছু না। তারপর ব্রেস‌লেটটা দেখি‌য়ে বলল, এটা উপহার দি‌য়ে‌ছে আমা‌কে।”
জাহানা বেশ রে‌গে বল‌লেন,
” তুই নি‌লি কেন?”
” আমি নেই‌নি। তি‌নি আমার হা‌তে দি‌য়েই চলে গে‌ছে। তোমা‌কেও বলতে বল‌ছে।”
” তুই দেখা কর‌তেই বা গে‌লি কেন?”
” মা তু‌মি আমার দোষ কেন দেখ‌ছো? আমার ম‌নে কো‌নো দোষ থাক‌লে আমি তোমা‌কে বলতাম কেন? এটা লু‌কি‌য়ে নি‌জের কা‌ছে রাখ‌তে পারতাম না‌কি?”

জাহানা খা‌নিক দ‌মে গে‌লেন। মে‌য়ে স‌ত্যি বল‌ছে। য‌দি লুকা‌নোর উদ্দেশ্য তি‌থির হ‌তো ত‌বে সবটা বল‌তো না। তি‌থি ব্রেস‌লেটটা তার হা‌তে দি‌য়ে বলল,
” এটা দিয়ে তু‌মি যা খু‌শি ক‌রো। আমি এটা হা‌তে পর‌তে পারব না।”
তি‌থির বাবা বলল,
” তি‌থি কোথাও তুই প্রিয়ম‌কে পছন্দ ক‌রিস না তো?”
” তা‌কে পছন্দ হলে র‌কিব‌কে বি‌য়ে কর‌তে রা‌জি কেন হতাম?”
” তুই খু‌শি তো মা?”
” হ্যাঁ। কিন্তু ম‌নে ম‌নে বলল, তোমা‌দের খু‌শি‌তেই আমার খু‌শি।”

‌তি‌থি রুম থেকে বে‌রি‌য়ে গে‌লো। জাহানা তার স্বামী‌কে বলল,
” এ গিফ্ট আমি রাখব না। আমার মে‌য়ের অমঙ্গল হ‌বে। য‌দি ওর বাবা মা দি‌তো তাও মানা যে‌তো কিন্তু একা ছা‌দে ডে‌কে গিফ্ট দেয়ার বিষয়টা আমার পছন্দ হ‌লো না। প্রিয়‌তির মা জান‌লে দেখা‌ যা‌বে খুব ঝা‌মেলা কর‌বেন। ম‌হিলা‌কে তো চেনো। আমি বরং ফেরৎ দি‌য়ে আসি।”
‌তি‌থির বাবা বল‌লেন,
” তু‌মি বরং এক কাজ ক‌রো আজ দিও না। বি‌য়ের ঝা‌মেলাটা মি‌টে যাক। লোকজন যাবার পর নি‌রি‌বি‌লি সম‌য়ে ডে‌কে দি‌য়ে দিও। এখন লোকজ‌নের মা‌ঝে য‌দি সিন‌ক্রিয়েট হয়? ত‌বে দেখা যা‌বে তি‌থির বদনাম হ‌বে।”
” তা অবশ্য ঠিক। ত‌বে তোমার কথামতই কাজ করব।”

২৫!!

অব‌শে‌ষে মাগ‌রিবের নামা‌জের পর তি‌থি আর র‌কি‌বের শুভ প‌রিনয় সম্পান্ন হ‌লো। সবাই মি‌ষ্টি মুখ করল। রা‌তে খাওয়ার পর র‌কিব এবং বা‌কি সবাই চ‌লে যা‌বে। র‌কিবের বাবা নেই তাই ওর বড় চাচা এসে‌ছেন। রিদুর বাবা আসে‌নি, রিদুও আস‌তে চায়‌নি কিন্তু র‌কি‌বের জে‌দে হার মে‌নে‌ছে। প্রিয়‌তি‌কে তি‌থি আস‌তে ব‌লে‌ছি‌লো কিন্তু ওর শরীর খারাপ শু‌নে আর জোর ক‌রে‌নি। রিদু খাওয়া শে‌ষে তি‌থির বাবা মা‌য়ের সা‌থে দেখা কর‌তে যাবার জন্য যা‌চ্ছি‌লো তখন ওর হা‌তে টান প‌রে। পিছন ঘু‌রে দেখল প্রেমা ওর হাত ধ‌রে মিট‌মিট হাসছে।

চলবে_______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে