মহুয়া পর্ব-১৪

0
811

#মহুয়া
#শার‌মিন_আক্তার_সাথী
পর্ব: ১৪

” প্রেমার বিষ‌য়ে তু‌মি কী সব জা‌নো?”
” সব বলতে?”
” ওর কার সা‌থে কী রি‌লেশন ছি‌লো বা চা‌রি‌ত্রিক বিষ‌য়ে?”
” হঠাৎ এ প্রশ্ন কে‌নো?”
” তু‌মি কী জান‌তে প্রেমা বছর দুই আগে একটা এবরশন করি‌য়ে‌ছি‌লো?”

‌প্রিয়‌তি রিদুর বুক থে‌কে মাথা তু‌লে ওর মু‌খের দি‌কে তাকা‌লো? তারপর বলল,
” ঠিক বুঝলাম না। প্রেমার তো বি‌য়ে হয়‌নি তাহ‌লে বাচ্চা কিভা‌বে? আর এবরশনই বা কিভা‌বে হ‌বে?”
” বাচ্চা হওয়ার জন্য বি‌য়ে কর‌তে হ‌বে এ কথা তোমা‌কে কে বলল।”
” না মা‌নে?”
” তে‌ামার ম‌তে প্রেমার চ‌রিত্র কেমন?”
” ভা‌লো বল‌বো না খারাপ বুঝ‌তে পার‌ছি না! কারণ প্রেমা খুব অল্প বয়স থে‌কেই বি‌ভিন্ন ছে‌লের সা‌থে রি‌লেশ‌নে জ‌ড়ি‌য়ে‌ছে। ইঁচ‌রে পাকা খুব। তা‌দের কা‌রো সা‌থেই ও সি‌রিয়াস ছি‌লো না। কা‌রো সা‌থেই সম্পর্ক বে‌শি‌দিন টিকতো না। ক‌য়েকমা‌সের বে‌শি না। ত‌বে ও প্রেগ‌নেন্ট হ‌য়ে‌ছি‌লো বা এবরশন ক‌রি‌য়ে‌ছে এমন কিছু তো জানতাম না।”
” বছর দুই আগে প্রেমা খুলনা গি‌য়ে‌ছি‌লো কো‌নো কা‌জে?”

‌প্রিয়‌তি কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
” হ্যাঁ। আমার বড় খালার বা‌ড়ি খুলনা। ও সেখা‌নে প্রথ‌মে মাস খা‌নি‌কের জন্য বেড়া‌তে যায়। তারপর বা‌ড়ি ফি‌রে ব‌লে, সেখা‌নের কো‌নো প্র‌তিষ্ঠা‌নে না‌কি ছয় মা‌সের ফ্যাশন ডিজাইনিং এর কোর্স কর‌বে। আমরা বললাম তা‌ তো এখা‌নেও করা যায়, খুলনা যাবার কী প্র‌য়োজন? কিন্তু প্রেমা বরাবরই জে‌দি এক‌ঘে‌য়ে। ওর যা ইচ্ছা হ‌বে তাই কর‌বে। ওর কথার বাই‌রে তখন আর কেউ কিছু ব‌লে‌নি। সে সময় ও ছয় মা‌সের জন্য খুলনা গে‌লেও চার বা পাঁচ মাস পর ফি‌রে আসে। তখন কিছু‌দিন ও অসুস্থ ছি‌লো।”
” তোমার প‌রিবার জান‌তে চায়‌নি কী অসুস্থতা?
” হ্যাঁ ব‌লে‌ছি‌লো হঠাৎ মাই‌গ্রে‌নের প্রব‌লেম খুব বে‌ড়ে গে‌ছে, জ‌ন্ডিস না‌কি খুব বা‌জে ভা‌বে হ‌য়ে‌ছে। যার কার‌ণে শরীর এত অসুস্থ এবং বেড রেস্ট নি‌তে ব‌লে‌ছে ডাক্তার। যে‌হে‌তু ও নি‌জের বিষ‌য়ে কা‌রো হস্ত‌ক্ষেপ করা পছন্দ ক‌রে না, সে‌হেতু আমি অসুস্থতায় ওর দেখা শোনা ক‌রলেও তেমন নাক গলাই‌নি। অবশ্য নাক গলা‌লেও যে তেমন বি‌শেষ লাভ হ‌তো তা কিন্তু না।
” তোমার বাবা মা?”
” তারা তো প্রেমার কথা অকপ‌টে বিশ্বাস ক‌রে। ও যা ব‌লে তাই স‌ঠিক।”

‌রিদু তা‌চ্ছিল্য হে‌সে বলল,
” ওহ। বাঁ‌ধি‌য়ে রাখার মত বাবা মা তোমার। ছে‌লে মে‌য়ে কী ক‌রে না ক‌রে তার দি‌কে তা‌দের কো‌নো খেয়াল নেই। মে‌য়ে‌কে বিশ্বাস ক‌রে কিন্তু তা ব‌লে অন্ধ বিশ্বাস! নূন্যতম দা‌য়িত্ব‌বোধ নেই তাদের? তা‌দের তো জাদুঘ‌রে রাখা দরকার। এমন বাবা মা কয়জ‌নের কপা‌লে জো‌টে।”
” কী হ‌য়ে‌ছে সেটা তো বল‌বে? আর প্রেমার এবরশন হ‌লেও সে কথা তু‌মি কী ক‌রে জানলে?”

‌রিদু খা‌নিক সময় চুপ থে‌কে বলল।
” প্রিয়‌তি এখন আমি যা বলব, তার জন্য তু‌মি নি‌জে‌কে মান‌সিকভা‌বে শক্ত ক‌রো। কারণ কথাগু‌লো শোনার পর তোমার সাজা‌নো দু‌নিয়া‌তে একটা তান্ডব হ‌বে। কিন্তু তোমা‌কে নি‌জে‌কে সামলা‌তে হবে। প্রিয়‌তি একটা কথা ব‌লি, আমি তোমা‌কে এবং তোমা‌কেই ভা‌লোবা‌সি। আর এ ভা‌লোবাসা সারা জীবন একই রকম থাক‌বে।”
” কতক্ষণ যাবত গোল গোল ঘুরা‌চ্ছো। কী হ‌য়ে‌ছে সরাস‌রি ব‌লো তো?”

একটা লম্বা নিশ্বাস নি‌য়ে রিদু বলল,
” প্রেমা যে বাচ্চাটা এবরশন ক‌রি‌য়ে‌ছি‌লো তার বাবা আর কেউ নয় বরং আমি। যে কিনা তোমার স্বামী।”
হঠাৎ প্রিয়‌তির মাথাটা চক্কর দি‌য়ে উঠল। ম‌নে হ‌লো ভুল কিছু শু‌নে‌ছে বা রিদু মজা কর‌ছে। তাই বলল,
” মজা কর‌ছো? আমার ভা‌লোবাসার পরীক্ষা নি‌চ্ছো?”
রিদু প্রিয়‌তির হাতদু‌টো শক্ত ক‌রে ধ‌রে বলল,
” প্রিয়‌তি নি‌জে‌কে শক্ত ক‌রো। যা বলব তা মন দি‌য়ে শো‌নো। প্লিজ নি‌জে‌কে স্থির রে‌খো।”

‌প্রিয়‌তির মাথা অল‌রে‌ডি ঘুর‌তে শুরু ক‌রে‌ছে। তবুও নি‌জে‌কে স্থির রাখার স‌র্বোচ্চ চেষ্টা কর‌ছে। রিদু বলল,
” তখন আমি খুলনা একটা কোম্পা‌নি‌তে জব করতাম। তোমার খালার বাসাও ঐ একই এলাকায়। তোমার খালার বাসার পা‌শের বা‌ড়ি‌তে আমরা কয়জন ব্যাচলর মি‌লে ভাড়া থাকতাম। প্রেমাকে প্রথম তোমার খালা‌দের বি‌ল্ডিং-ই দে‌খে‌ছিলাম। প্রেমা যে স‌ত্যি সুন্দর তা সবাই মান‌তে বাধ্য। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। সব সুন্দর তো আর প্রকৃত সুন্দর নয়। কিছু সুন্দ‌র শুধু বা‌হি‌রে কিন্তু ভিত‌রে জঘণ্যও হয়। কিছু সুন্দর খুব বিষাক্ত হয়। যেমন কিছু ফুল দেখ‌তে সুন্দর কিন্তু তা থে‌কে মারাত্মক সব বিষ তৈরী করা হয়।
তেম‌নি প্রেমা রেইন‌বো বোয়া আর ব্লু কোরাল বিষধর সা‌পের মত সুন্দর। যারা দেখ‌তে ভংকর সুন্দর কিন্তু‌ প্রচন্ড বিষধর।‌ প্রেমার বা‌হ্যি‌ক সৌন্দ‌র্যের পাশাপা‌শি ওর কথা বলা বা চালচলন বেশ স্মার্ট। যা স‌ত্যি ছে‌লে‌দের খুব সহ‌জে মো‌হিতো কর‌তে পা‌রে। আমা‌কেও মো‌হি‌তো ক‌রে ফে‌লে‌ছি‌লো। প্রেমার প্রে‌মের জা‌লে আষ্টে পি‌ষ্টে জ‌ড়ি‌য়ে গি‌য়ে‌ছিলাম। প্রেমা ওখা‌নে প্রথম একমাস ছি‌লো তখন টুকটাক কথার বাহানায় আমা‌দের বন্ধুত্ব গ‌ড়ে ওঠে। ধী‌রে ওর প্র‌তি আমার আগ্রহ বা‌ড়ে আর আগ্রহ, আকর্ষণ এক পর্যা‌য়ে প্রে‌মে রূপ নেয়।

ওর চ‌লে আসার আগের দিন ওকে অা‌মি প্র‌পোজ ক‌রি। কিন্তু ও তখন কিছু না ব‌লে চ‌লে যায়। আমার অবস্থা পাগ‌লের মত হ‌য়ে যায়। ওর ঠিকানা জানতাম না বিধায় তোমা‌দের বা‌ড়ি তখন যে‌তে পা‌রি‌নি। গে‌লে হয়‌তো তু‌মিও দেখ‌তে তখন। তাছাড়া প্রেমার ফোনও বন্ধ পে‌য়ে‌ছিলাম তখন। ওর সা‌থে যোগা‌যোগ করার মাধ্যম তোমার খালা থাক‌লেও, তার কা‌ছে কী জান‌তে চাইতাম? বা কি‌সের ভি‌ত্তি‌তে তার কা‌ছে প্রেমার ঠিকানা চাইতাম। সাহস না থাক‌ায় তা আর হ‌য়ে ওঠে‌নি।

কিছু‌দিন পর প্রেমা আবার খুলনা যায়। আমি প্রাণ ফি‌রে পেলাম। জানা‌লো প্রেমাও আমা‌কে ভা‌লোবা‌সে। স‌ত্যি আমি সু‌খে ভাস‌ছিলাম তখন প্রেমার ভা‌লোবাসা পে‌য়ে। সব‌কিছু‌তে শুধু প্রেমা আর প্রেমা। হিতা‌হিত জ্ঞান বোধ হয় ক‌মে গি‌য়ে‌ছি‌লো। ভু‌লেও তখন ভাব‌তে পা‌রি‌নি আমি মরি‌চিকার ‌পিছ‌নে ছুট‌ছি। ধূ ধূ মরূভূ‌মি‌কে ও শুধু তৃষ্ণা‌র্তের পা‌নি দেখার মত ম‌রি‌চিকা ছি‌লো মাত্র। যার পিছ‌নে হাঁট‌তে গি‌য়ে চোরাবা‌লির গভীরেও হারা‌তে পা‌রি। ভা‌লোবাসায় অন্ধ ছিলাম আমি। ওর ভা‌লোবাসা লাগামহীন ছি‌লো।

সচারাচার দেখা যায় সম্প‌র্কে ছে‌লেরা যতটা দ্রুত এগো‌তে চায় মে‌য়েরা ততটা চায় না। কিন্তু আমা‌দের ক্ষে‌ত্রে উল্টো ছি‌লো প্রেমা দ্রুত সম্প‌র্কের গভী‌রে পৌঁ‌ছে যা‌চ্ছিলো যেটা আমি চ‌াইতাম না। আমি তো ওকে বি‌য়ে কর‌তে চাইতাম। কিন্তু বি‌য়ের কথা বল‌লে ও এড়িয়ে যে‌তো। কিন্তু সম্প‌র্কে গভীরতায় যে‌তে ওর কো‌নো আপ‌ত্তি ছি‌লো না। শত হোক আমি একটা ছে‌লে। নি‌জেকে কয়দিন নিয়ন্ত্রন করতাম। প‌রে নিয়ন্ত্র‌নের সব বাঁধ ভে‌ঙে গে‌লো। মাত্র দেড় দুই মা‌সের সম্প‌র্কেই আমরা গভীরতার সর্বোচ্চ পর্যা‌য়ে পৌঁ‌ছে যাই। তারপর হুট ক‌রে প্রেমা এক‌দিন আমা‌কে কিছু না ব‌লে চ‌লে আসে। ফোন বন্ধ, সোস্যাল মি‌ডিয়া থে‌কে দূ‌রে, একরকম গা‌য়েব হ‌লে গে‌লো।”

‌প্রিয়‌তি পাথ‌রের মত জ‌মে যা‌চ্ঠে। নি‌জের বোন আর স্বামীর প্রেম কা‌হিনী শুন‌ছে, তাও লাগামহীন প্রেম কা‌হিনী। মাথাটা ঝিম‌ঝিম কর‌ছে। কিন্তু প্রিয়‌তি আজ ম‌নে ম‌নে শপথ ক‌রে‌ছে যে, ক‌রে হোক নি‌জে‌কে শক্ত রাখ‌বে। সবটা শুন‌বে। প্রিয়তি রিদুর দি‌কে না তা‌কি‌য়ে বলল,
” তারপর?”

চল‌বে_________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে