মহুয়া পর্ব-০৮

0
891

#মহুয়া
#শার‌মিন_আক্তার_সাথী
পর্ব: ৮

১১!!
এমন অদ্ভুত সাহসী মে‌য়ে র‌কিব জীব‌নে খুব কমই দে‌খে‌ছে। পু‌লি‌শে থাকার ব‌দৌলতে ক্রি‌মিনাল তো জীব‌নে কম দে‌খে‌নি কিন্তু‌ অপরাধ করার পরও ম‌নে যে সামান্য অনু‌শোচনা থা‌কে না, এমন মানুষ খুব কম দে‌খে‌ছে, তাও একটা মে‌য়ের। নারী তো মমতার অপর নাম। যে নারী জন্মদান ক‌রেন নতুন প্রাণ, সে কিভা‌বে এতটা অমান‌বিক হ‌তে পা‌রে!
প্রচন্ড অহংকা‌রি মে‌য়েটা। মে‌য়েটার খারাপ দিক না থাকলে বা র‌কিব ব্য‌ক্তিগতভা‌বে না জান‌লে মে‌য়েটার অহংকার‌কে আত্ম‌বিশ্বাস ব‌লে ভে‌বে নিত হয়‌তো প্রথ‌মে। কিন্তু এগুলো তার আত্ম‌বিশ্বাস নয়, বরং ভয়ংকর অহংকা‌রি এবং উগ্র মে‌য়ে‌টি। ভয় বল‌তে তার মা‌ঝে তেমন নেই বল‌লেই চ‌লে। সে যে বর্তমা‌নে কারাগা‌রে ব‌ন্দি, তার যে শা‌স্তি হ‌তে পারে তা নি‌য়ে তার কো‌নো ভ্রুক্ষেপ নেই।‌ মে‌য়ে‌টির বাবা মে‌য়ে‌টি‌কে ছাড়া‌তে এসে‌ছিল কিন্তু র‌কিব সোজা ব‌লে দি‌য়ে‌ছে, আদাল‌তের লি‌খিত নো‌টিশ ছাড়া ছাড়‌বে না। মে‌য়েটা জে‌লের ভিতর ব‌সে ব‌সে পা দোলা‌চ্ছে। তার ম‌ধ্যে বিন্দু মাত্র ভয় বা অনু‌শোচনা নেই। র‌কি‌বের জানাম‌তে এ ধর‌নের মানুষ খুব ভয়ানক হয়। এরা নিজ স্বার্থ ছাড়া পৃ‌থিবী‌তে কিছু বো‌ঝে না। নি‌জের জন্য এরা সব কর‌তে পা‌রে, অন্যের জীবন নষ্ট কর‌তেও দুই বার ভা‌বে না। র‌কিবের আরও একটা বিষয় খুব খটকা লাগ‌ছে। মে‌য়েটা বার বার বল‌ছে আমার কিছু হ‌বে না আমি জা‌নি। আর আমি ফাস‌লে হৃদ‌য়ের বাবাও ফাঁস‌বে। র‌কিব রিদুর ছোট বেলা থেকে চি‌নে। সম্প‌র্কে ওরা খালাতো ভাই। কিন্তু রিদু ক্লিয়ার ক‌রে কিছু ব‌লে‌নি।

র‌কিব রিদু‌কে কল করল,
_” বল র‌কিব?
_”ভাবির কী অবস্থা?
_” মোটামু‌টি।
_” প্রেমা মুখ খু‌লে‌ছে?
_” না। মে‌য়েটা ‌তো খুব ভয়ানক। মুখ তো‌ খো‌লেই‌নি বরং বলতা‌ছে ও ফাঁস‌লে তোর বাবা‌কেও ফাঁসা‌বে। কিন্তু খালু কী ক‌রে‌ছেন?
_” আরে ব‌লিস না, মাস দুই আগে হৃ‌দিতার এন‌গেজ‌মেন্ট এর দিন কি ঝা‌মেলা হ‌য়ে‌ছে ঠিক জা‌নি না, ত‌বে প্রেমা অভি‌যোগ তু‌লে‌ছে বাবা না‌কি ওর সা‌থে নোংরা‌মি কর‌তে চে‌য়ে‌ছে।
_” ‌হোয়াট!
_” হ্যাঁ তাই তো আমা‌দের দুই প‌রিবা‌রে এত ঝা‌মেলা চল‌ছে।
_” খালুর মত মানুষ এমন কর‌বে। অসম্ভব! এ কথা খালু নি‌জে বল‌লেও আমি বিশ্বাস করব না। নিশ্চয়ই কো‌নো ভুল হ‌য়ে‌ছে।
_” আমরাও সেটা জা‌নি। বাবা তো লজ্জায় ঠিক ক‌রে কিছু বলছেন না। মনে হ‌চ্ছে বাবা নি‌জেও কিছু বুঝ‌তে পার‌ছেন না। আর প্রেমা যা বল‌ছে সব বা‌নোয়াট মিথ্যা ম‌নে হ‌চ্ছে। মে‌য়েটা ক্লিয়‌ার ক‌রে স‌ত্যি বল‌ছে না।
_” এখন ত‌বে কী কর‌বি?
_” প্রেমা ছাড়া স‌ত্যিটা কেউ জা‌নে না। প্রেমা চে‌য়ে‌ছিল বাবা ওর কা‌ছে ক্ষমা চে‌য়ে বিষয় সলভ কর‌বে। কিন্তু বাবার কথা সে যখন ‌কো‌নো অন্যায় ক‌রে‌ননি তবে ক্ষমা কেন চাই‌বেন? আর বাবার ধারণা প্রেমা ট্রাপ ক‌রে বাবা‌কে ফাঁ‌সি‌য়ে‌ছে।
_” ‌খালু‌কে ফাঁ‌সি‌য়ে প্রেমার কি লাভ?

_” সেটাই তো জা‌নি না। বাবার বলা কথামত তা‌কে ওখা‌নে কেউ ডে‌কে‌ছি‌লেন। বাবা রু‌মে ঢু‌কে দে‌খেন রুম অন্ধকার। রু‌মে ঢোকার সা‌থে সা‌থে কেউ তা‌কে ঝাপ‌টে ধ‌রেন। কিন্তু প্রেমার কথা বাবা রু‌মে ঢু‌কে দরজা বন্ধ ক‌রে প্রেমার সা‌থে নোংরা‌মি কর‌তে চে‌য়ে‌ছিল।
_” আই ক্যান’ট বি‌লিভ দিস। প্রথম কথা খালু এমন জীব‌নে কর‌বেন না। দ্বিতীয় কথা যেখা‌নে খালুর মে‌য়ের এন‌গেজ‌মেন্ট, বা‌ড়ি ভ‌র্তি এত মেহমান তার ম‌ধ্যে খালু নি‌জের সম্মান নিজে নিশ্চয়ই খুয়া‌বেন না।
_” সেটাই। ত‌বে প্রেমা স‌ত্যিটা স্বীকার না করলে স‌ত্যিটা বের করা সম্ভব না।
_” দে‌খি আমি পা‌রি কিনা এর সমাধান কর‌তে। ত‌বে প্রেমার কথামত ওকে জে‌লে পুর‌লে ও খালু‌কে ছাড়‌বে না। তা‌কেও জে‌লে ঢুকা‌বেন।
_” এখন কী করব?
_” আমা‌কে ভাব‌তে দে। দে‌খি কি করা যায়!

র‌কিব ফোন কে‌টে থানার ভিত‌রে যে‌তেই প্রেমা চে‌ঁচি‌য়ে বলল,
_” হ্যা‌লো অফিসার কী বলল আপনার ভাই?
র‌কিব বেশ অবাক হ‌য়ে বলল,
_” ভাই মা‌নে?
_” হৃদয় আপনার ভাই তো। তাও খালা‌তো।
_” আপ‌নি কিভা‌বে জান‌লেন?
_” হৃদয়-প্রিয়‌তির বি‌য়েতে দে‌খে‌ছিল‌াম আপনা‌কে। তাই তো তখন থে‌কে ভাব‌ছি, আপনা‌কে চেনা চেনা কেন লাগ‌ছে! আপনার মা-ই তো আপনার জন্য আমাকে পছন্দ ক‌রে‌ছি‌লেন। বি‌য়ে‌তে আমা‌কে দে‌খে তি‌নি তো ফিদা। কিন্তু আপনার ব্যাড লাক যে, আমি পু‌লিশ পছন্দ ক‌রি না, তাছাড়া অতি‌রিক্ত ফর্সা ছে‌লেদের আমি একদম পছন্দ ক‌রি না। তা‌দের দেখ‌লে মে‌য়ে মে‌য়ে ফিলিং পাই। তখন নি‌জে‌কে নি‌জের লেস‌বো ম‌নে হয়, তাই ওয়াক ক‌রে ব‌মি আসে। সে কার‌ণে প্রথম শু‌নেই রি‌জেক্ট ক‌রে‌ছিল‌াম।

র‌কিব বেশ চমকা‌লো প্রেমার কথায় সা‌থে প্রেমার ওকে করা অপমানটা গা‌য়ে বেশ লাগল।। ম‌নে ম‌নে বলল,
_” মা এমন ফা‌জিল মে‌য়েকে আমার জন্য পছন্দ ক‌রে‌ছি‌লেন? দেখ‌তে সুন্দর হ‌লে কী হ‌বে এম‌নি তো বজ্জা‌তের বাসা। ফা‌জিল মে‌য়ে তো‌কে জে‌লেই পঁ‌চিয়েই মারব।
‌প্রেমা আবার চেঁ‌চি‌য়ে বলল,
_” কি জনাব চুপ কেন?
আ‌সে পা‌শের পু‌লিশ, কনস্টেবল, র‌কিবের দি‌কে তা‌কি‌য়ে মুখ টি‌পে হাস‌ছে। র‌কি‌বের প্রচন্ড রাগ হ‌লো। পা‌শে থাকা ম‌হিলা পু‌লিশ‌কে ডে‌কে বল‌লেন,
_” আঁখি ‌ভিত‌রে ঢু‌কে ঐ বেয়াদপ মে‌য়েটার গা‌লে ঠা‌ঁটি‌য়ে দু‌টো চড় মার‌বেন। এত জো‌রে মার‌বেন যে‌নো ওর ফর্সা গা‌লে আঙু‌লের ছাপ প‌রে যায়।
আঁ‌খি ভিত‌রে ঢু‌কে স‌ত্যি প্রেমা‌কে ক‌ষি‌য়ে পরপর তিনটা চড় মারল। তারপর বাই‌রে আস‌তেই র‌কিব বলল,
_” আঁখি দু‌টো মার‌তে বল‌ছিলাম, তিনটা কেন মারলেন?
_” স্যার মেয়েটা চূড়ান্ত বেয়াদপ। দু‌টো মে‌রে মন ভ‌রে‌নি। তাই তিনটা মারল‌াম।
প্রেমা র‌কি‌বের দি‌কে অগ্নি দৃ‌ষ্টি নি‌ক্ষেপ করে বলল,
_” একটা মে‌য়েকে থানায় বন্দী ক‌রে তার উপর অত্যাচার কর‌ছেন, আপনা‌দের সবার চাক‌রি খা‌বো আমি।
র‌কিব মৃদু হে‌সে বলল,
_” ম্যাডাম পু‌লিশরা জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ওমন দুই চারটা চড় মা‌রে। সে ক্রি‌মিনাল হোক বা না হোক। এ‌তে উপর কতৃপক্ষ নাক গলায় না।
‌প্রেমা রা‌গে ফে‌টে প‌ড়ে ব‌লল,
_” হৃদ‌য়কে ভা‌লোয় ভা‌লোয় আমার উপর থে‌কে অভি‌যোগ উঠি‌য়ে নি‌তে ব‌লেন। নয়ত ওর বাবার না‌মে আমি ম‌লেস্ট করার মামলা করব।
_” প্রমাণ কি?
_” প্রমাণ না থাক‌লে এত জোর দি‌য়ে কথা ব‌লি কিভাবে? হৃদয়‌কে ফোনটা করুন। তা‌কে বল‌ুন তারপর বা‌কিটা সে নি‌জেই কর‌বে।

১২!!

প্রিয়‌তি নি‌জের সন্তান হারা‌নোর কথাটা জে‌নে গে‌ছে। তখন থে‌কে বেশ উত্তে‌জিত হ‌য়ে গে‌ছে। প্রচন্ড দুর্বল শরীর, তাছাড়া মাথায় খুব আঘাত পাবার কার‌ণে ওর অবস্থা ঋম‌নি অনেক খারাপ ছি‌লো। কিন্তু বাচ্চা হারা‌নোর কথা শু‌নে এখন অবস্থা অধিক খারাপ। রিদু চায়নি প্রিয়তি এত দ্রুত স‌ত্যিটা জানুক। কিন্তু সকা‌লে প্রেমা এসে সবটা ব‌লে দি‌য়ে‌ছে?

‌কি ভাব‌ছেন প্রেমা কিভা‌বে ‌জেল থে‌কে ছাড়া পে‌লে? কাল‌কের প‌র্বে বলব।

চল‌বে____

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে