#মহুয়া
#শারমিন_আক্তার_সাথী
পর্ব: ২
_” এই ঘোলা চোখের মেয়েটাকে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি। আমার মনে মেয়েটার নেশা হয়েছে। ঠিক মহুয়ার মত নেশা। মেয়েটার হৃদয় আমাকে গভীর নেশায় নেশাক্ত করে রেখেছে।
প্রিয়তি চোখ তুলে বলল,
_” মহুয়া কী?
_” মহুয়া এক ধরনের গাছ। যে গাছে সুন্দর ফুল ফোটে।
_” তবে মহুয়া ফুল দিয়ে কি নেশা করে?
_” না। মূলত মহুয়া ঔষধি গাছ। যার ফুল দেখতে অনেক মোহময়ী। কবি লেখকরা এ ফুল নিয়ে লিখেছেন বহু কবিতা, গল্প, উপন্যাস। তবে আমি যে মহুয়ার কথা বলেছি তা পাহাড়ি অঞ্চলের লোকেরা বিভিন্ন ফল দিয়ে তৈরী করে। যা খেলে নেশা হয়।
_” তুমি খেয়েছ কখনো।
রিদু মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
_” ইয়ে মানে দু একবার। খেতে স্বাদ দারুণ।
কপোট রাগ দেখিয়ে প্রিয়তি বলল,
_” ওহ তবে তলে তলে লুকিয়ে নেশা করাও হয়েছে?
_” আরে না না। বন্ধুদের সাথে বিয়ের আগে খেয়েছিলাম। বিয়ের পর খাইনি। বিশ্বাস করো।
_” হুঁ জানি।
রিদু প্রিয়তির গালে হাত বুলাল। ফর্সা গালে হালকা লাল রঙের চড়ের দাগ। প্রিয়তির গালে দাগ মানায় না। এমনকি ওর মুখ এতটা ফ্রেস যে ছোট্ট একটা তিল থাকলে তাকেও ওর সৌন্দর্য্যে ঘাটতি পড়ত। এত সুন্দর গালে চড়ের দাগ, সত্যি জঘণ্য লাগছে। রিদু প্রিয়তির গালে চুমো খেয়ে বলল,
_” খুব কষ্ট হয়েছে জান! ব্যথা লেগেছে খুব।
_” নাহ। ব্যথা লাগেনি তবে কষ্টটা মনে লাগছে। মা, প্রেমা দুজনই মেয়ে হয়েও আমাকে বুঝতে পারছেন না। সবাই মিলে আমার সংসারটা ভাঙার চেষ্টা করছে। তাদের বিশেষ করে মায়ের উচিত আমাকে সংসার সামলানো শেখানো কিন্তু তিনি উল্টা আমার সংসার ভাঙার প্রয়াস করছেন।
রিদু প্রিয়তির গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল,
_” তাদের দোষ দিয়েও তো লাভ নেই, সেদিন যা হয়েছে তারপর রাগ থাকাটা স্বাভাবিক। তবে তাদের রাগটা তারা ভুল জায়গায় দেখাচ্ছেন।
_” হ্যাঁ।
_” কষ্ট পেও না। সৃষ্টিকর্তা সব মঙ্গলময় করবেন।
_” আমার এসব ভালো লাগে না রিদু। কষ্ট হয় খুব। এ বাড়িতে তিথি আর ছোট মা (ছোট চাচি মানে তিথির মা) বাদে কেউ বোঝে না আমাকে। কিন্তু তিথি বা ছোট মা আমার মায়ের ভয়ে কিছু করতে পারেন না।
রিদু প্রিয়তিকে জড়িয়ে ধরে বসল। প্রিয়তি রিদুর বুকে মুখ লুকিয়ে রইল। রিদু মনে মনে ভাবল,
_” মাত্র তো চার মাসের পরিচয় আমাদের। তিন মাস হলো কেবল বিয়ের অথচ এই মেয়েটাকে আমি এত ভালোবাসি যে, মনে হয় ওকে ছাড়া পুরো পৃথিবী রংহীন। ওকে ছাড়া নিজেকে ভাবতে নিলে নিঃশ্বাস কেমন আটকে আসে। মনে হয় এখনি দম বন্ধ হয়ে মরে যাব। এ কেমন নেশায় বাঁধল মেয়েটা। সৃষ্টিকর্তা আমাদের মাঝে কেমন মায়া তৈরী করে দিলেন। এ মায়া তো যেমন তেমন নয়! শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থাকবে এ মায়া। এতদিনে প্রিয়তিতে যতটুকো চিনেছি তাতে এটা জোর দিয়ে বলতে পারি ও খুব নরম মনের মেয়ে। অল্পতে ভয় পায়, অল্পতে মানুষকে বিশ্বাস করে, অল্প আঘাতেই ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে চায়। ওকে সামলে রাখতে হবে। খুব সামলে রাখতে হবে। ঠিক কাঁচের পুতুলের মত যত্ন করে রাখতে হবে। নয়ত ও বড় আঘাত সহ্য করতে পারবে না। ভেঙে গুড়িয়ে যাবে। একদম চুরমার হয়ে যাবে।
প্রিয়তি রিদুর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
_” রাতে খেয়েছ?
_” নাহ।
_” তুমি?
_” হুঁ। তুমি কেন খাওনি?
_” খাবার বুঝি মুড আছে?
_” তাও ঠিক। যাও খাবার নিয়ে আসো। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
প্রিয়তি খাবার রুমে গিয়ে চুপচাপ খাবার আনল। প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি আনল। ভাবল রিদুকে খাইয়ে দিবে। রিদু প্রিয়তিকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলল,
_” না খেয়ে থাকবে না একদম।
_” হুঁ। তুমি খাও?
_” ঝামেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বাড়ির খানা হজম হবে না।
প্রিয়তি মন খারাপ করে মাথা নিচু করে রইল। রিদু বলল,
_” তোমাকে খাইয়ে আমি বাড়ি যাব।
_” আজ রাতে থাকো আমার সাথে প্লিজ! কতদিন তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাই না।
_” কেউ দেখে ফেললে?
_” দেখবে না।
_” যদি দেখে?
_” দেখলে কার কী? আমি আমার স্বামীর সাথে থাকব।
হাসল রিদু। প্রিয়তিকে খাইয়ে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়ল। প্রিয়তি রিদুর বুকে আঙুল ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,
_” আমাদের প্রথম দেখার কথা তোমার মনে আছে রিদু?
_” থাকবে না কেন? মিষ্টি রঙের একটা শাড়ি পরে আমার সামনে এসেছিলে না! আহ সে দিন গুলো কি ভোলার মত! স্বপ্নের মত দিন। রিদু প্রিয়তি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করল। ভাবনার গভীরে একটু একটু করে প্রবেশ করছিল। প্রবেশ করছিল ভালোবাসার গভীরে।
মাস চারেক আগে, কোনো এক সন্ধ্যায় রিদুর পরিবারসহ সবাই দেখতে এসেছিল প্রিয়তিকে। চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে প্রিয়তি তখন রেজাল্ট এর অপেক্ষায়। ওর বাবা আগেই বলেছিল অনার্স কমপ্লিট হলেই ওর বিয়ে দিবে। প্রিয়তিও তেমন মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিল। নিজের তেমন বিশেষ পছন্দ ছিল না। ছেলেপক্ষ দেখতে আসল, প্রিয়তি সেজেগুজে তাদের সামনে এসে বসল। তারা যা প্রশ্ন করল তার উত্তরও দিল সুন্দরভাবে। কিন্তু চোখ তুলে ছেলেকে দেখার মত সাহস হল না। শেষে যখন দুজনকে আলাদা করে কথা বলতে দেয়া হলো, প্রিয়তি মনে মনে খুশি হয়েছিল। যার সাথে বিয়ে হবে, তাকে আগে থেকে জানতে পারাটা ভালো। যদিও এত অল্প সময় জানাটা কষ্টকর। তবে মানুষের ছোট ছোট কিছু কথায়ও পুরো মানুষটাকে বোঝা যায়।
রুমে ঢুকে প্রিয়তি প্রথমবার রিদুর দিকে তাকাল। রিদুর চোখ গাঢ় বাদামি, চুল কোকড়া বেশ ঘন, ছেলেটা লম্বা বেশ, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা, সব মিলিয়ে চোখের দেখায় বেশ ভালো লেগে গেল প্রিয়তির। টুকটাক কথা হলো দু’জনার। তেমন কোনো কথা না। রিদু প্রিয়তে প্রথমে যে কথা বলল,
_” একটু পানি।
প্রিয়তি টেবিলে রাখা পানির গ্লাস এগিয়ে দিল। রিদু পানিটা খেয়ে বলল,
কোন বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন?
_” সাইন্স।
_” অনার্স?
_” পদার্থ বিজ্ঞান।
_” বাহ বাহ চমৎকার। তবে তো আপনার কাছে পানি চাওয়ার বদলে H2O চাওয়া উচিত।
_” অ্যাঁ
শব্দ করে হেসে রিদু বলল,
_” জাস্ট কিডিং। তা আপনার SSC আর HSC তে কত পয়েন্ট ছিল?
প্রিয়তি বেশ অবাক হয়ে মনে মনে বলল,
_” বিয়ের জন্য কনে দেখতে এসেছে নাকি অফিসের জন্য কর্মচারী। মনে হালকা খটকা লাগলেও প্রিয়তি বলল, SSC 4.44 আর HSC 4.75।
_” গুড। তবে তো আপনি মোটামুটি ভালো ছাত্রী ছিলেন। CGPA কত?
_” ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট পাইনি।
_” ওহ।
কৌতুহলি হয়ে প্রিয়তি জিজ্ঞেস করল,
_” আপনি কী জব ইন্টারভিউ নিতে এসেছেন?
_” কেন?
_” প্রশ্ন শুনে তাই মনে হচ্ছে?
মৃদু হেসে রিদু বলল,
_” ছেলে পক্ষের লোক যেমন প্রশ্ন করে যেমন, রান্না জানেন কিনা? কোরআন তেলায়ত করতে জানেন কিনা? পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন? দোয়া কুনুত পারেন কিনা? হাতের লেখা দেখি? একটু হেঁটে দেখান তো! এসব প্রশ্ন করা উচিত ছিল!
প্রিয়তি আমতা আমতা করে বলল,
_” না মানে?
_” দেখুন প্রিয়তি আজকালকার যুগে বিয়ের আগে খুব কম মেয়েই রান্নার কাজ জানে। বিয়ের পর এমনিই শিখে যায়। আমি মনে করি, রান্নার বিষয়টা বাঙালী মেয়েদের জিনে বসবাস করে। এরা জন্ম থেকে এ গুনটা পেয়ে থাকে। ঘর সামলানো তো মেয়েদের বৈশিষ্ট্য। যেহেতু মুসলমান ঘরের মেয়ে সেহেতু ধর্মকর্ম অবশ্যই জানেন। না জানলে পরে শিখে নিবেন। আর একজন গ্রাজুয়েট মেয়ের হাতের লেখা দেখতে চাওয়া বোকামি নয় কি? হাঁটতে কেন বলব? আমরা তো গরু বা কোনো পণ্য কিনতে বাজারে আসিনি যে, তাকে উল্টে পাল্টে দেখব। একজন সুস্থ মানুষের সাথে পরিচিত হতে এসেছি সো তাকে পণ্যের মত যাচাই না করে, মানুষের মতই দেখা উচিত। যেহেতু আমাদের পরিবার চায় আমরা দুজন সারাজীবন একসাথে থাকি, সেহেতু আমাদের উচিত নিজেদের মন মানসিকতা জানা, একে অপরের মনের খবর জানা, দুজন দুজকে বোঝার চেষ্টা করা। আর সেটা তো কয়েক মিনিটে সম্ভব নয়। আমি আপনার মোবাইল নাম্বার নিয়ে যাব, কথা বলব, দেখা করব দুজন দুজনকে বোঝার চেষ্টা করব। যদি সৃষ্টিকর্তা সত্যি আমাদের জোড়া লিখে রাখেন তবে বিয়ে হবে, নয়ত না। এখন এর চেয়ে গুরুত্বপ প্রশ্ন আপনাকে কী করব? এখন অাপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে নিঃসংকোচে করুন।
প্রিয়তি বাঁকা ঠোঁটে হাসল। ছেলেটির কথা ওর ভালো লেগে গেল। মানসিকতাও হয়ত ভালো। এখন দেখা যাক ভবিষ্যতে ওদের জন্য কি অপেক্ষা করছে। প্রিয়তি মৃদু হাসল শুধু। তখন শাড়ির ভারী আঁচলটা ওর মাথা থেকে পড়ে গেল। তখনই রিদু প্রিয়তির রেশমী ঘন কালো চুল দেখল। দেখেই ঘোর লেগে গেল, একরকম নেশার মত হলো। তবে ঘোরটা নিজের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখল।
সেদিনের মত রিদুরা চলে গেল। প্রিয়তি কোনো প্রশ্ন করেনি। পরেরদিন থেকে দুজনার ফোনে আলাপ শুরু হলো। টুকটাক, কয়েক মিনিটের কথা ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে ঘন্টায় গিয়ে পৌঁছাল। ঘন্টার পর ঘন্টা কথা হতে লাগল দুজনার। একদিন প্রিয়তি জিজ্ঞেস করল,
_” রিদু আপনার কি কারও সাথে আগে সম্পর্ক ছিল?
রিদু সরল মনে বলল,
_” হ্যাঁ। রিয়া নামের একটা মেয়ের সাথে ইন্টারে পড়াকালীন সম্পর্ক ছিল।
_” রিয়া কোথায়?
_” বিয়ে করে বর নিয়ে সুখে সংসার করছে।
_” মানে?
_” আমরা দুজন একই ক্লাসে পড়তাম। আকর্ষণ থেকে, ভালোলাগা তারপর প্রেম। ২য় বর্ষে মাঝামাঝি সময়ে রিয়ার বাবা ওর বিয়ে ঠিক করল। রিয়া আমাকে তখন বলেছিল ওর বাবার সাথে কথা বলতে, আমাকে বলল ওকে বিয়ে করতে। তখন কী কথা বলতাম? কিসের জোরে বিয়া করতাম? বয়স তো ১৮ ও হয়নি তখন আমার। নিজের পাঁচ টাকা লাগলে তাও বাবার কাছে চাই হত, বউকে কি খাওয়াতাম! ভয় পেয়েছিলাম খুব। কিন্তু রিয়ার কান্নাকাটি দেখে ওর বাবার সাথে কথা বলতে গেলাম। কিন্তু রিয়ার বাবা যা চড় মারল। বাম সাইডের দাঁত নড়ে গেছিল। মনে পড়লে এখনও ব্যথা পাই। তারপর রিয়া বলল, পালিয়ে যাবে। ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। ওই বয়সে পালিয়ে গিয়ে করবটা কি? রিয়াকে বলেছিলাম তুমি তোমার বাবার পছন্দে বিয়ে করে নাও। তারপর কি রিয়ার বিয়ে হলো। কদিন খুব ভেঙে পড়েছিলাম। পড়াশুনা মাচায় উঠতে বসেছিল কিন্তু বাবার শাসনে তাও উঠল না। রিয়া বিয়ের পর অবশ্য কলেজে আসেনি। শুধু পরীক্ষা দিতে আসত। কলেজ শেষ হবার পর তো তেমন দেখা হয়নি। শুনেছিলাম ওর বর পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়েছে। বছর তিন আগে দেখা হয়েছিল একবার। তখন আমি মাস্টার্স শেষ করে জব করছিলাম। ও তো পুরো মহিলা হয়ে গেছে। দুই সন্তানের গর্বিত জননী। এই ছিল ঘটনা।
প্রিয়তি হেসে বলল,
_” বাহ ছ্যাকা খেয়ে বাঁকা হওয়া প্রেম কাহিনী।
শব্দ করে হাসল রিদু। তারপর বলল,
_” ঐ একটু আধটু আরকি। তা আপনার?
_” আমার তেমন কোনো কাহিনী নেই। একটু বড় হবার পরই বাবা বলেছেন সম্পর্ক করলে ঠ্যাং ভেঙে দিবেন। তাহলে পড়াশুনা বন্ধ করে কোনো রিকশাচালক বা অজোপাড়াগায়ে অশিক্ষিত ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবেন। সে ভয়ে ছেলেদের দিকে তাকাতামই না। বন্ধুত্বও করিনি কখনো।
_” হা হা হা।
_” এতে হাসার কি হলো?
_” হাসব না? মানে রিকশাওয়ালা আর গ্রামে বিয়ে করার ভয়ে তুমি ছেলেদের সাথে কথা বলতে না? বন্ধুত্ব করোনি? ওপস সরি তুমি বলে ফেললাম।
_” সমস্যা নেই। তুমি শুনতে খারাপ লাগছে না। আপনি তো আমার বাবাকে চিনেন না। ঘাড়ত্যাড়া আর কঠিন রাগী মানুষ। যা বলে তাই করে। নিজে যা বুঝে তাই সঠিক, বাকি দুনিয়া কী ভাবছে তা নিয়া তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
_” ওহ।
_” তবে আমার একটা আফসোস আছে।
_” কী?
_” খুব ইচ্ছা ছিল কোনো ছেলের সাথে তুই তুকারির বন্ধুত্ব করব। কিন্তু বাবার ভয়ে করতে পারিনি। আর ভবিষ্যতেও সম্ভব নয়।
_” কেন নয়?
_” কলেজ শেষ, ভার্সিটি শেষ। এখন বন্ধুত্ব করব কার সাথে?
_” আমার সাথে।
_” আপনাকে তুই তুকারি কেন করব?
_” ওমা আর মাত্র পনেরো দিন পর আমাদের বিয়ে। তারপর তোমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হব আমি। সে হিসাবে আমাকে তুই বলতেই পারো।
_” না না। শুনতে বাজে লাগবে। তাছাড়া আপনি বয়সেও আমার চেয়ে বড়।
_” চুপ। বেশি কথা বলবি না। বয়স নিয়ে খোঁটা দিস কেন? আজ থেকে যখন তোর বন্ধুর প্রয়োজন হবে তখন আমি তোর বন্ধু। তখন না তো আমি তোর ফিওন্সি আর না বিয়ের পর বর। বুঝলি?
বেশ শব্দ করে হাসল প্রিয়তি। বলল,
_” ওকে দোস্ত।
_” গুড। এখন বল কি করতে মন চাচ্ছে?
_” দোস্ত তোর কাছে সিগারেট আছে খেতে মন চাচ্ছে।
_” না আমি ধুমপান করি না।
_” ওহো। ভালো ভালো খুব ভালো। তোর সাথে একটা বিষয় শেয়ার করি?
_” হুঁ।
_” হৃদয় নামের ছেলেটাকে শট করে রিদু ডাকলে কেমন হয়?
মৃদু হেসে রিদু বলল,
_” খারাপ না!
_” ছেলেটাকে বিয়ে করব কি?
_” চোখ বন্ধ করে বিয়ে করতে পারিস।
_” কেন?
_” কারণ আমি যতদূর জানি ছেলেটা তোকে ভালোবাসতে শুরু করেছে।
প্রিয়তি চুপ হয়ে গেল। রিদু এভাবে নিজের মনের কথা বলবে তা প্রিয়তি ভাবতে পারেনি। তবে এভাবেই প্রিয়তি রিদুর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল। শুরু হয়েছিল ভালোবাসার সম্পর্কও।
কিছুদিন ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছিল ওদের। বিয়ের দিন থেকেই দুজন যেনো দুজনার নেশায় বুদ। একে অপরকে ছাড়া কেউ কিছু বোঝে না। নেশা হয়ে গেছিল ওদের, ভালোবাসার নেশা।
চোখ বন্ধ করে রিদুর গলায় আদুরে ভঙ্গিতে নাক ঘষছে প্রিয়তি। রিদু প্রিয়তির চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল,
_” কি হয়েছে ময়নাপাখি? এমন করছ কেন?
_” তোমার ময়নাপাখির ভালোবাসা চাই। গভীর ভালোবাসা।
রিদু গভীরভাবে জড়িয়ে নিল প্রিয়তিকে। ছোট্ট বড় হাজারো ভালোবাসায় পূর্ণ করে দিতে লাগল প্রিয়তিকে। প্রিয়তিও কম যায় না ভালোবাসা প্রদানে। রাত গভীর হতে হতে ভালোবাসা গভীর থেকে গভীরতম দেশে পৌঁছাল। ভালোবাসা আদান প্রদানে রাতের মোহময়ী অনুভূতি ছাড়া কিছুই ছিল না। প্রিয়তির মা দরজায় কয়েকবার টোকা দিয়ে গেছে। প্রিয়তি রাগ করে বলেছে কারও সাথে কথা বলতে চায় না আপাতত।
ফজরের আযানের সময় রিদু চুপি চুপি চলে গেল। প্রিয়তি রিদু দুজনারই খুব খারাপ লাগে এটা ভেবে যে, স্বামী স্ত্রী হয়েও চোরের মত দেখা করতে হয় ওদের। যে পরিবার ওদের চার হাত এক করল, তারাই বিচ্ছেদের কারণ হচ্ছে। রিদু তো চলে গেল। কিন্তু যাবার সময় প্রেমা রিদুকে যেতে ঠিকই দেখল।
৪!!
সকাল বেলা।
প্রেমা প্রিয়তির মাথায় হাত দিয়ে বলল,
_” এত সকালে তোর চুল ভেজা কেন?
প্রিয়তি কিছু ঘাবড়ে গেলেও বলল,
_” মাথা ব্যথা করছিল, তাই মাথায় পানি দিয়েছি।
প্রেমা তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
_” ও তা সকালে গোসল করলে বুুঝি মাথা ব্যথা কমে!
রেহেনা প্রেমার কথা শুনে বলল,
_” কী হয়েছে প্রেমা?
প্রেমা ঝাঁঝাল গলায় বলল,
_” তোমার মেয়ের জামাই রাতে এসেছিল তার কাছে। দুজন সারারাত রাসলিলা করেছে। যার ফল হিসাবে তোমার মেয়ের চুল ভেজা।
প্রিয়তি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। রেহেনা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
_” ছি ছি প্রিয়তি। তোর লজ্জা করে না নাকি? রাত ভর একটা ছেলের সাথে কাটালি? এত জ্বালা তোর শরীরে?
লজ্জায় প্রিয়তির চোখ পানিতে ভরে গেল। নিজের মায়ের জঘণ্য কথাগুলো শুনে মরে যেতে ইচ্ছে করছে ওর। কান্না চেপে বলল,
_” মা যাকে ছেলে বলছ সে আমার স্বামী। ধর্ম মতে আইন মতে আমরা স্বামী স্ত্রী। আর একজন স্বামী যখন তখন তার স্ত্রীর কাছে আসতে পারে, তাতে তোমরা বাঁধা দেয়ার কেউ নয়।
_” তোর বাবাকে বলব তার প্রিয় মেয়ের কুকৃর্তি?
প্রিয়তি কান বন্ধ করে নিজের রুমে চলে গেল। অসহ্য লাগছে এ বাড়ির সবাইকে।
প্রেমা প্রিয়তির রুমে এসে বলল,
_” আমার জীবন যেখানে নষ্ট হচ্ছে তোকে সুখে থাকতে দি কি করে প্রিয়তি? আমার সাথে ন্যায় না হলে তোর সংসারও টিকবে না।
প্রিয়তি চিৎকার করে বলল,
_” কী ন্যায় করব? তুই খোলাখুলি ভাবে সত্যিটা বললে তো ন্যায় করব?
চলবে_______