মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া পর্ব-২৮+২৯

0
616

#copywritealert❌🚫
#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৮
“তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না (২)
ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর পাবো না।
ক্ষ্যাপা ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর পাবো না না না না ছেড়ে দেবো না।
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না। (২)
কথা: দ্বিজ ভূষণ
সুর: বৈষ্ণব কীর্তন
শিল্পী: লোপামুদ্রা মি
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে ইউটিউবে শুনে নিবেন।)

গান শেষ হতেই রাইমার টি*ম্পনি!
“কাকে হৃদমাঝারে রাখবিরে, মীরা? আমাদের বল।”

মীরা নিজের ভ্রদ্বয় কুঁচকে ফেলে বলে,
“তোর কপালে শ*নির দশা লেগেছে বুঝতে পেরেছি! দাঁড়া!”

মীরা উঠতে নিলে রাইমা পা*লানোর প্রস্তুতি নিয়ে বলে,
“ক্লাম ডাউন, বেইব। চি*ল! তুই মুখে না বললেও এখানে সবাই বুঝতে পারছে!”

“তুই! তোকে তো! কোথায় কী বলতে হয় তোকে আজকে উ*ত্তম-মধ্য*ম দিয়ে শেখাতে হবে দেখছি।”

মীরা উঠে ছুটতে নিবে তৎক্ষণাৎ শেহজাদ ওর ডান হাতের কব্জি ধরে থামায়। ওইদিকে নিধি, রাইমাকে আটকিয়ে ইশারায় মীরা ও শেহজাদের দিকে ইশারা করে। অতঃপর নিধি, রাইমা সহ সবাই মিটিমিটি হাসছে। শেহজাদ সকলের দিকে নজর বুলিয়ে কণ্ঠে কিয়ৎ রাগী ভাব এনে বলে,

“সিট ডাউন!”

মীরা ভয় না পেলেও কিছুটা লজ্জা পায়। তারপর শেহজাদ হাত ছেড়ে দিলে চুপচাপ সে শেহজাদের পাশে বসে পড়ে। এরপর আসে বাচ্চাদের কবিতা আবৃতির পালা। মৃদুলার কণ্ঠে বাংলা কবিতা ও ফ্রিশার কণ্ঠে ইংরেজি রাইম। পালাক্রমে চারজন বাচ্চা সদস্য মিলে বিভিন্ন গানের তালে যেভাবে পেরেছে নেচে সবাইকে হাসিয়েও ছেড়েছে।

_______

বিকেলে আসরের নামাজের পর মীরার পরিবার বেরোনোর প্রস্তুতি নেয়। একটু পরেই বের হবে। মীরার মা বলেন,
“শেহজাদ বাবা, তোমরা তো আজকে গেলে না। বৃহস্পতিবার কিন্তু অবশ্যই যাবে।”

“আপনি চিন্তা করবেন না, আন্টি। আমরা যাব।”

এরপর মীরার বাবা বলেন,
“তোমরা এলেই আমরা কাছের আত্মীয়-স্বজনদের আবার দাওয়াত করব। বিয়ের দিন তো জামাইয়ের সাথে ঠিক ভাবে পরিচিত হতে পারলো না।”

শেহজাদ সম্মতিসূচক হাসে। মীরা তার বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আই মিস ইউ। এতোদিন ইন্ডিয়াতে থেকেও এতোটা মিস করিনি যতোটা এই দুইদিনে করেছি।”

মীরার মা মলি জাহান, মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে আবেগী স্বরে বললেন,
“বিয়ে এমনি, মা। বিয়ের আগে যতো দূরেই থাকো, সেটার সাথে বিয়ের পরের সময়কার অনেক পার্থক্য।”

মায়ের ভেজা লোচনদ্বয় দেখে মীরার নেত্রকোণও ভিজে ওঠলো। মাকে জড়িয়ে আবেগময় পরিবেশের সৃষ্টি হলো। সেখানে উপস্থিত সকলেরই মন ভার ভার। হুট করে রাইমা ফ্রিশার কাছে গিয়ে কানে কানে কিছু বলে, ফ্রিশাে হাত ধরে মীরার কাছে নিয়ে আসে। ফ্রিশা মীরার ওড়না ধরে আকুল কণ্ঠে বললে,

“ডোন্ট ক্রাই, ফেইরিমাম্মাম। আই লাভ ইউ।”

মীরা তার মাকে ছেড়ে হাঁটি গেড়ে মেয়ের সামনে বসে। অতঃপর দুই হাতের আঁজলায় ফ্রিশার আদুরে মুখখানি আগলে বলে,
“আই লাভ ইউ টু, ফ্রিশামনি।”

“সো ডোন্ট ক্রাই। ইফ ইউ ক্রাই, দেন ফ্রিশা উইল স্টার্ট ক্রায়িং।”

“না, বাচ্চা। তোমার ফেইরিমাম্মাম কাঁদবে না। এই দেখো, আমি হাসছি।”

মীরা মুচকি হাসলে ফ্রিশাও হেসে মীরাকে জড়িয়ে ধরে। সবার মাঝে অন্যরকম আনন্দ পরিলক্ষিত হয়। কিছুটা দূর থেকে শেহজাদ নিষ্পলক এই দৃশ্য অবলোকন করে চলেছে। তার নেত্রপল্লব ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। হঠাৎ এক ফোঁটা অশ্রুবিন্দু তার বুকে ভাজ করে রাখা হাতে পড়তেই তৎক্ষণাৎ পিছনে ঘুরে চোখ মুছে অন্যত্র চলে যায়। নিজেকে কিছুটা সময় একা রাখতে চায় সে।

_____

প্রায় মিনিট দশেক পর শেহজাদ নিচে নেমে সবার সাথে মীরার পরিবারকে বিদায় দিলো। এরপর এলো রাইমা ও কুঞ্জর পালা। মীরা, শেহজাদ ও ফ্রিশা, এয়ারপোর্টে ওদেরকে ছাড়তে যায়। এয়ারপোর্টে পৌঁছে রাইমা, মীরাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“আই উইল মিস ইউ ব্যাডলি, ইয়ার। তুই কিন্তু ইন্ডিয়াতে অবশ্যই আসবি। আর আমাদের প্ল্যানিংটা মনে আছে তো তোর? একসাথে পিএইচডি করতে যাব। আর আমার বিয়েতে যদি তুই না আসিস তবে আমি ছাদনাতলায় যাবই না। তোর বেচারা কুঞ্জদা তখন আইবুড়ো থেকে যাবে!”
(আমি সঠিক জানিনা যে ছেলেরা আইবুড়ো থাকে কী-না?)

পাশ থেকে কুঞ্জ বলে,
“প্লিজ, বোন। বিয়েতে এসো। নয়তো তোমাে বান্ধবীকে তো চেনোই। যা বলে তাই করবে।”

মীরা ও শেহজাদ হেসে ওঠলো। ফ্রিশা ওদেরকে দেখে হাসছে। মীরা বলে,
“চিন্তন করবেন না, ভাইয়া। আপনার বিয়েটা হওয়ানোর জন্য হলেও আমরা যাব।”

তারপর আরও কিছুক্ষণ থেকে ওদের ফ্লাইটের সময় হয়ে গেলে ওদের বিদায় দিয়ে মীরা, শেহজাদরা চলে আসে।

_______

পরদিন সকালবেলা শেহজাদ ভার্সিটির জন্য তৈরি হচ্ছে। মীরা ডাইনিং টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে রুমে এসে বলল,
“নাস্তা রেডি। আসুন।”

এই বলে সে চলেই যাচ্ছিলো। শেহজাদ ও-কে থামায়। তারপর বিস্মিত হয়ে মীরার চুলের দিকে আঙুল তা*ক করে শুধায়,
“তোমার চুলে ফ্লোউর লেগে আছে। যু*দ্ধ করেছ নাকি!”

মীরা অবাক হয়ে আয়নার সামনে যেয়ে নিজের অবস্থা দেখে চোখ ছোটো ছোটো করে বলে,
“এটা ফ্রিশামনির কাজ! ও একটু আগে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে এসেছিল। তারপর থেকে মুখ চেপে হাসছিল। দেখেছেন! কী দুষ্টু!”

“ফ্রিশা? রিয়েলি? ও তো কিচেনে যায় না। গেলেও মেবি খুব রেয়ার।”

শেহজাদের অবিশ্বাস্য কণ্ঠ শুনে মীরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,
“আমি রান্না করার সময় নিজের মা*থায় আটা কেন লাগাবো? আর শুনুন, আপনার মেয়ে উপযুক্ত মানুষের অভাবে এতোদিন দুষ্টমি করতে পারেনি। এখন আমার মতো ভোলাভালা ফেইরিমাম্মাম পেয়ে দুষ্টমি করছে। কাল রাতে আমার সামান্য চোখ লেগে যাওয়াতে, আমার হাতে কালার পেন দিয়ে আমার নাম লিখে দিয়েছিল। দেখেন (নিজের জামার হাতা সামান্য উঠিয়ে)।”

শেহজাদ এবার হাসলো। ফের বলল,
“আসলেই সে দুষ্টমি করার জন্য উপযুক্ত মানুষ পেয়েছে!”

শেহজাদকে হাসতে দেখে মীরাও হাসে। তারপর মীরা লেগে থাকা আটা ঝেড়ে নিয়ে দুজনে একসাথে ডাইনিংটেবিলে যায়। সেখানে গিয়ে মীরা সবার সামনে পরোক্ষভাবে বলে,

“আজ না রান্নাঘরে ঘূর্ণিঝ*ড় হয়েছিল! তারপর বয়াম থেকে আটা উড়ে এসে আমার মা*থায় লেগেছে।”

মিসেস শাহিদা বুঝতে না পেরে শুধালেন,
“রান্নাঘরে ঘূর্ণিঝ*ড়! কী বলছো?”

“হ্যাঁ, ফুফিজান! ঘূর্ণিঝ-ড়ের নাম ফ্রিশা! তাই না, বাচ্চা?”

ফ্রিশা মুখ চেপে হাসছিল। এবার মুখ থেকে হাত সরিয়ে প্রকাশ্যে হাসতে হাসতে বলে,
” তোমাকে খুব ফানি লাগছিল, ফেইরিমাম্মাম।”

মীরা সরু দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
“ওহ তাই! তোমাকেও লাগিয়ে দেখব?”

“ওকে, লেটস গো!”

ফ্রিশা চেয়ার ছেড়ে উঠেও গেছে। ফ্রিশার এক্সাইটমেন্ট দেখে, মীরা বোকার মতো বলে,
“আরে…. আমি তো ফান করে বলেছি, বাচ্চা। খেতে বসো তুমি। চুল নোং*রা করার কোনো দরকার নেই।”

“শ্যাম্পু করে ফেলব। চলো।”

“না না। বসো তুমি। দেখো, আজকে সবার জন্য ডিমরুটি, সবজি ও চিকেন ভুনা করেছি। ডিফরেন্ট ব্রেকফাস্ট। টেস্ট করে বলোতো, কেমন হয়েছে?”

ফ্রিশা চেয়ারে বসে প্লেট এগিয়ে এনে রুটি ছিঁ*ড়ে মুখে দিয়ে কয়েক সেকেন্ড পর বলে,
“ওয়াও! ইটস ইয়ামি। আমাকে এরকম রুটিই বানিয়ে দিবে। কতো সুন্দর পুরো রুটিতে ছোটো ছোটো হোল।”

মীরা বেশ খুশি হয়। বাকি সবার দিকে তাকালে দেখে, তাঁরাও মজা করে খাচ্ছে। ড: আকবর রেহমান বলেন,
“মীরা, তুমি সপ্তাহের ছুটির দিন গুলোতে এগুলো বানাতে পারো। প্রতিদিন তো একই রকম ব্রেকফাস্ট ভালো লাগে না। ছুটির দিনে ডিফরেন্ট কিছু হলো।”

ফ্রিশা প্রতিবাদ করে বলে ওঠলো,
“আমি প্রতিদিন খাব।”

“তুমি প্রতিদিনই খাবে, ফ্রিশামনি। আমি তো ব্রেডের কথা বলছিলাম। তোমার মাম্মাম তো প্রতিদিন সবার জন্য বানাতে পারবে না। তারও ক্লাস আছে।”

“ওহ ওকে।”

ফ্রিশা মন খারাপ করে আস্তে আস্তে খাচ্ছে। মীরা তা লক্ষ্য করে বলে,
“তোমার জন্য প্রতিদিন বানাব। এখন জলদি খাও। ক্লাস আছে তো তোমার। আজ তোমাকে আমি নিয়ে যাব।”

ফ্রিশা খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি খেতে থাকে। শেহজাদ মেয়েকে ও স্ত্রীকে দেখে নিরবে হেসে খাওয়াতে মনোযোগ দেয়।

________

ফ্রিশাকে নিয়ে ফ্রিশার স্কুলে এসেছে মীরা। ফ্রিশার ছুটি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছে মীরা। সেখানে আসা অন্য বাচ্চাদের গার্ডিয়ানরা হঠাৎ ফ্রিশার সাথে অচেনা গার্ডিয়ান দেখে মীরাকে এসে জিজ্ঞাসা করে,

“হ্যালো। আমি ফ্রিশার ফ্রেন্ড আনিতার মা।”

ফ্রিশা একা একা বসে ফোন ঘাটছিল। অচেনা কারও কণ্ঠে পরিচিত হওয়ার আভাস পেয়ে মৃদু হেসে জবাব দেয়,
“হ্যালো। আমি ফ্রিশার ফেইরিমাম্মাম।”

“ফেইরিমাম্মাম? সেটা আবার কী?”

“ও আমাকে ডাকে। এমনিতে আমি ওর মাম্মাম।”

“মাম্মাম? কিন্তু ফ্রিশার মা তো দুই বছর আগেই মা*রা গেছেন। তাহলে আপনি কে?”

মীরা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। জবাব দিতে কয়েক মূহুর্ত ভাবছে। কিন্তু অপরপাশের মহিলাটি তার অধৈর্য চেতনার পরিচয় দিয়ে ফের শুধায়,
“তাহলে কি আপনি ফ্রিশার স্টে*পমাদার!?”

চমকে উঠলো মীরা। অপরপাশের মহিলাটির কণ্ঠস্বরটা কেমন আশ্চর্যান্বিত ও উঁচু শোনালো মীরার কাছে। মুখশ্রীতেও কেমন একটা তাচ্ছিল্য ভাব ফুটে উঠেছে তার। মহিলাটির দৃষ্টিতে মীরার জন্য যেন উপহাসের অস্পষ্ট ছাঁপ দেখা যাচ্ছে। আরও ৪-৫ জন মহিলা এসে মহিলাটির পাশে দাঁড়ালো। মীরা নিজেকে ধাতস্থ করে জবাব দিলো,

চলবে ইনশাআল্লাহ,

#copywritealert❌🚫
#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৯
মীরা নিজেকে ধাতস্থ করে জবাব দিলো,
“আপনাদের ভাষায় আমি স্টে*পমা*দারই। আপনারা বলুন তো? এর মানে কী?”

উপস্থিত মহিলারা একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে একজন জবাব দিলো,
“কী আবার? বাবা দ্বিতীয় অথবা একাধিক বিয়ে করলে তারা সৎ মা হয়।”

আরেকজন বলে,
“এটা জিজ্ঞাসা করার কী আছে বুঝলাম না!”

মীরা তাচ্ছিল্য হেসে জবাবে বলে,
“স্টে*পমা*দার কি সবসময় নেগেটিভ হয়?”

“আপা, আপনি কী বলতে চাইছেন? আশেপাশে কী দেখেন না? খবরের কাগজ, নিউজ দেখেন না? মোস্ট অফ দ্যা টাইম নেগেটিভই হয়।”

একজন মহিলার জবাবে মীরা হাসলো। অতঃপর প্রত্যুত্তর করলো,
“জবাব তো আপনি দিয়েই দিলেন। মোট অফ দ্যা টাইম। নট অল টাইম। ধরলাম, ৯০% খারাপ হয়। ৫% খারাপ-ভালোর মাঝামাঝি। আর ৫% ভালো। এই রেশিওটা কেন আসছে জানেন? আপনাদের জন্য। নিজে তো স্বামীর আগের ঘরের বাচ্চা থাকলেও দেখবেন না! আবার কেউ যদি নিজের স্বামীর আগের ঘরের সন্তানকে আগলে রাখতে চায়, তাকেও বাজে কথা বলবেন। আবার নিজে সেধে গিয়ে কুম*ন্ত্রণা দিয়ে আসবেন। কিন্তু কেন? কারও সৎ মা হওয়া আর হাসবেন্ডের দ্বারা চিটেড হওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে বুঝলেন!”

আরেক মহিলা বলে ওঠে,
“আমাদের শেখাতে আসবেন না। বাচ্চাসহ পুরুষকে মানুষ কেন বিয়ে করে তা আমাদের ভালো করে জানা আছে।”

মীরা শক্ত চোয়ালে জোরপূর্বক হেসে শুধায়,
“ওহ তাই? তা কেন করে?”

“কেন আবার! টাকা-পয়সা দেখে। ফ্রিশাদের তো অবস্থা ভালো। হাইক্লাস সোসাইটির। লোভে তো পড়বেনই।”

মীরা সাথে সাথে প্রশ্ন তোলে,
“আমাকে দেখে কী আপনার লো ক্লাস মনে হয়? আমাকে চেনেন আপনি? কতোটুকু জানেন আমার সম্পর্কে?”

“আপনাকে চিনে আমরা কী করব! আপনিই তো কথা বাড়াচ্ছেন।”

“আমি কথা বাড়াচ্ছি? নাকি আপনাদের মধ্যে একজন এসেছিলেন পরিচিত হতে। নাকি আমি গিয়েছিলাম? এখন কি তবে এটিটিউট বলবেন? এটিটিউট হলে হোক, তাও কারও সাথে যেচে কথা বলতে গিয়ে তাকে ইনসাল্ট তো করি না। আমার ক্লাস নিয়ে যেহেতু কথা উঠলো তখন আমি নিজে যেচেই বলে দেই। আমার ফ্যামিলি মিডেলক্লাস কিন্তু উনারা আমার কোনো অভাব রাখেনি। ফ্রিশার বাবা যেই প্রাইভেট ভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন, আমি সেখান থেকে অনার্স কম্পিলিট করে ইন্ডিয়ার এক ওয়েল নোওন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছি। তারপর সেখানে ১ বছরের জব অভিজ্ঞতাও আছে আমার। এখন তো একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে লেকচারারও। আমি মিডেলক্লাস হলেও আমার ডেজিগনেশন কিন্তু হাই ক্লাস। ক্লাস বিবেচনার ৩টা উপায়ের আমি ২ উপায়ে হাই ক্লাস। হাইলি এডুকেটেড এন্ড গুড মেন্টালিটি। কিন্তু আপনারা হয়তো হাইক্লাস সোসাইটি থেকে বিলং করেন কিন্তু মনমানসিকতা অনেক নিচু। এখন মানসিকতার সাথেই কিন্তু শিক্ষাটাও আসে। একজন অশিক্ষিত ব্যাক্তির মন-মানসিকতা যদি উন্নত হয় তবে সে সম্মানের পাত্র। কিন্তু একজন শিক্ষিত ব্যাক্তির নিচু মন-মানসিকতা হলে সে ধি*ক্কারের পাত্র। বলে না? দু*র্জন বিদ্যান হলেও পরিত্যাজ্য! আপনারাই তো যদি বাচ্চাদের বাসায় কখোনো নিজে পড়ান তবে পড়িয়েছেন। কিন্তু ভেবে দেখেছেন, যে আপনি নিজেই দু*র্জন! তাই অন্যের ক্লাস বিবেচনার আগে নিজের ক্লাস বিবেচনা করে নিবেন।”

মীরার উচিত কথা যেন সেই মহিলাদের গায়ে আ*গু*ন ধরিয়ে দিয়েছে! উনারা তেলে-বেগুনে জ্ব*লে উঠে কিছু বলতে নিতেই সেখানে স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল ও একজন ম্যাম হাজির হোন।

“সাইল্যান্ট। এটা স্কুল। কোনো নাটক-মঞ্চ না যে এভাবে চিৎকার, চেঁচামেচি করবেন!”

প্রিন্সিপ্যাল ফের বললেন,
“আমার পিয়ন আমাকে বলেছে। আপনারা সবাই জোট হয়ে একজনকে ইনসাল্ট করছেন।”

তাদের মধ্যে একজন বলে ওঠলো,
“আমরা তো কথা বলছিলাম। উনিই তো শুরু করলো।”

“আমি কিছুটা শুনেছি। ফ্রিশার বাবা আবার বিয়ে করলে আপনাদের কী? উনাদের ব্যাপার উনারা বুঝে নিবেন। আমরা তো প্রে করতে পারি। সবাই তো নেগেটিভ হয় না। যারা পজেটিভ, তাদের কাছে আপনাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য নজরও হার্ট করে। আই থিংক, আপনারা বুঝতে পেরেছেন।”

তারপর প্রিন্সিপ্যাল চলে যান। মীরাও সেখানে দাঁড়ায় না। গাড়িতে গিয়ে বসে। কান্না আসছে তার। কিছুক্ষণ আটকানোর চেষ্টা করে, ড্রাইভারকে বলে,

“ভাইয়া, আপনি একটু আশেপাশে থেকে ঘুরে আসুন। এই টাকাটা রাখুন, চা-পানি খেয়ে আসুন।”

ড্রাইভার লোকটা একবার তাকিয়ে মীরার মুখের অবস্থা দেখে টাকাটা নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। মীরা ঝরঝর করে মুখ চেপে কেঁদে ফেলে। আজকের কথাগুলো তার খুব খারাপ লেগেছে। কী এমন করেছে যে সেখানে সবাই তাকে খারাপ নজরে দেখছে! কিছু সময় পর চোখ মুছে লম্বা শ্বাস নিয়ে তার মাকে কল করে। মলি জাহান তখন সবজি কা*টছিলেন। ফোনের রিংটোন কানে আসতেই তিনি নিহানকে ডেকে ফোনটা দিয়ে যেতে বলেন। নিহান একছুটে এসে দাদিকে ফোন দিয়ে আবার একছুটে চলে যায়। মলি জাহান স্ক্রিণে মীরার নাম দেখে হাস্যজ্জ্বল মুখ নিয়ে ফোন রিসিভ করেন। অপরপাশ থেকে মেয়ের ভাঙা কণ্ঠে সালাম আসলে তিনি সালামের জবাব দিয়ে শুধান,

“কী হয়েছে, মীরু? তোর কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন?”

“মা, আমি যদি কখোনো খারাপ হয়ে যাই?”

মীরার কণ্ঠে জড়তা স্পষ্ট বুঝতে পেরে মলি জাহান ফের জিজ্ঞেসা করলেন,
“তুই খারাপ হতে যাবি কেন? কী হয়েছে স্পষ্ট করে বল।”

“মা! বড়োমা তো তোমার নিজের বোন ছিল, তাই তুমি বড়ো ভাইয়াকে দেখে রেখেছ। কিন্তু ফ্রিশার মায়ের সাথে তো আমার কোনো র*ক্তের সম্পর্ক নেই। তাহলে যদি আমি কোনোদিন অন্যসব স্টে*পমা-দারদের মতো ফ্রিশার সাথে রুড বিহেভ করে ফেলি!”

মলি জাহান এবার কিছুটা হলেও মেয়ের মন খারাপের কারণ আন্দাজ করতে পারলেন। তিনি শান্ত স্বরে বললেন,
“আমি জানি তুই হবি না। এসব নিয়ে ভাবার কী দরকার! কার ভাগ্যে কী আছে আমরা তো জানিনা। তুই বর্তমানে ফোকাস কর। ভবিষ্যৎ এমনিই সুন্দর হবে।”

মীরার ওষ্ঠকোণে কিছুটা হাসির রেখা ফুটে ওঠলো। সে বলল,
“আই লাভ ইউ, মা।”

“লাভ ইউ, সোনা।”

“রাখছি। তুমি যা করছিলে করো।”

মীরা ফোন রেখে লম্বা করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে একটু সময় ঘুমানোর কথা ভাবলো। ঘাড়ের কাছে কম্ফোর্টার দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।

_________

ফ্রিশাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে মীরা। পানি-জুস খেয়ে একটু বসে। তারপর ফ্রিশাকে ইউনিফর্ম বদলে শাওয়ার নিয়ে আসতে বলে, নিজেও শাওয়ার নিতে চলে যায়। শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে বিছানায় রাখা ফোনটাকে ভাইব্রেট হতে দেখে সেটাকে উঠিয়ে দেখে শেহজাদের নাম্বার থেকে কল আসছে। মীরা রিসিভ করে সালাম দিলে, শেহজাদও জবাব দিয়ে বলে,

“ফ্রিশাকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছ?”

“হ্যাঁ। একটু আগেই। এসেই ও-কে শাওয়ারে পাঠিয়ে নিজেও শাওয়ার নিয়ে বের হলাম।”

“ওহ ওকে। তবে কিছু হালকা-পাতলা খেয়ে নাও তোমরা।”

“আচ্ছা। আপনার কি এখন গ্যাপ?”

“হুম। ১০ মিনিট। ব্যাক টু ব্যাক দুটো ক্লাস আজ। আচ্ছা রাখছি। তোমরা রেস্ট করো।”

“ক্লাস শেষে লাঞ্চ করে নিয়েন।”

“হুম।”

শেহজাদ তারপর ফোন রেখে দেয়। মীরা লাজুক হেসে আয়নার সামনে তোয়ালে নিয়ে চুল মুছতে বসে। আয়নায় নিজেকে দেখে আরেকদফা লজ্জা পেয়ে যায়। তার গালের অংশ ঈষৎ র*ক্তবর্ণ হয়ে আছে। মাথা নুইয়ে মৃদু হেসে আয়নার সামনে থেকেই উঠে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে