#copywritealert❌🚫
#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৫
শেহজাদকে নিরব দেখে ভীত হলো ফিওনা। মনের অভ্যন্তরের ঝড়ের বহিঃপ্রকাশ তার নেত্রকোণ বেয়ে সরু অশ্রুরেখা ও রক্তিম মুখাবয়বই প্রকাশ করে চলেছে অবিরত। কান্নার শব্দগুলো যেন কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করে রেখেছে। শত চেষ্টার পরও গলা দিয়ে একটা শব্দও বের করতে পারলো না সে। এদিকে শেহজাদ বুঝতে পারছে না, সে কী করবে? ৬ বছরের বেশি সময় যাবত পরিচয় কিন্তু কখোনো ফিওনার জন্য তার তেমন কোনো অনুভূতি হয়নি। সে নিজের মনকে শান্ত করতে রোড সাইডের উঁচু জায়গায় বসলো। অতঃপর ফিওনাকে প্রশ্ন করলো,
“আর ইউর ফাদার এন্ড গ্র্যান্ডমা এওয়ার অফ দিস? (তোমার বাবা আর দাদি কি এটা জানেন?)”
ফিওনা বড়োসড়ো ঢোক গিলে, কোনোমতে বলল,
“দে নোও, আই লাভ ইউ। বাট এবাউট রিলিজিয়ন, আই ডিডেন্ট ডিসকাস উইথ দেম।”
“ওহ!”
প্রত্যুত্তর করো শেহজাদ ফের ভাবনায় ডুব দিলো। ফিওনার কণ্ঠস্বর তার কাছে স্বাভাবিক শোনায়নি। ফিওনার মুখের দিকে তাকালে লক্ষ্য করে, মুখশ্রীতে রক্তিমাভাব ফুটে ওঠেছে। বিকেলের শেষ সময়, সূর্যের তেজ মিয়িয়ে আছে। তাছাড়া আমেরিকায় এখন বসন্ত ঋতু। শীতের মৃদু আমেজ ও বসন্তের স্নিগ্ধতায় ভরপুর। তাহলে এই র*ক্তিম আভার কারণ কি শঙ্কা? হবে তাই হয়তো! এই ভেবে শেহজাদ ফিওনাকে বলল,
“লেটস গো।”
ফিওনা হতবুদ্ধির মতো শুধায়,
“হোয়ার?”
শেহজাদ উত্তর দিলো না। নিজেই ফিওনার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ফিওনাও নিরবে তাল মিলিয়ে চলতে লাগে। তারপর শেহজাদ ফিওনাকে নিয়ে নিজের বাড়ির কাছে আসে। ফিওনাকে বাড়ির ভেতরে যেতে বলে সে কোথাও একটা চলে যায়। ফিওনা দুরুদুরু হিয়ায় শেহজাদের বাড়ির ভেতরে ঢোকে। অদূর ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে তা সম্পর্কে ধারণা করতেও তার হৃদয় বারংবার কেঁপে ওঠছে। শেহজাদের বাবা-মা, ফিওনাকে দেখে খুশিই হয়। উনারা এখনও ফিওনার এখানে আসার কারণ জানেনা। ভেবেই নিয়েছে প্রত্যেকদিনের মতো আজও ফিওনা গল্প করতে এসেছে। প্রায় কিছু সময় পর হঠাৎ কলিংবেল বেজে ওঠে। শেহজাদের মা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখেন, শেহজাদ ফিওনার বাবা ও দাদিকে সাথে করে নিয়ে এসেছে। শেহজাদের মা উনাদের হাসিমুখে স্বাগত করেন। তারপর ছেলেকে জিজ্ঞাসা করেন,
“আজ কোনো কিছু আছে নাকি? হঠাৎ স্যার ও আন্টিকে নিয়ে এলে।”
“ওয়েট করো, মা। এখনি জানতে পারবে।”
শেহজাদ মাকে নিয়ে সবার কাছে যায়। সেখানে গিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে,
“ফিওনা চেইঞ্জড হার রি*লিজি**য়ন টু ম্যারি মি। নাউ ইউ গাইজ টেল মি, হোয়াট শুড আই ডু? আই ডোন্ট নো হাউ টু রিয়াক্ট। (আমাকে বিয়ে করার জন্য ফিওনা তার ধ*র্ম পরিবর্তন করেছে। এখন আপনারা বলুন, আমি কী করব? আমি বুঝতে পারছি না, কী প্রতিক্রিয়া দিব।)”
উপস্থিত সকলের চোখে মুখে বিস্ময়ের রেশ। সবাই একযোগে ফিওনার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো। ফিওনা ভীত অবস্থায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। ফিওনার বাবা প্রফেসর হ্যারি লম্বাশ্বাস নিয়ে বললেন,
“ইটস হার চয়েজ। সি ইজ ম্যাচিওর এনাফ টু মেইক হার অওন ডিসিশন। এন্ড আই রেসপেক্ট দ্যাট। (এটা তার পছন্দ। সে তার নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ম্যাচিওর। আর সেটাকে আমি সম্মানও করি।)”
ফিওনা অশ্রসিক্ত নয়নে ছুটে এসে নিজের বাবার বুকে আ*ছ*ড়ে পড়ে। ফিওনার দাদিও ছেলে ও নাতনীর কাছে এসে নিজের সাথে আগলে নিয়ে চোখের জল ছেড়ে বললেন,
“আই অলসো রেসপেক্ট হার ডিসিশন।”
শেহজাদ প্রতিক্রিয়াহীন ভাবে নিজের বাবা-মায়ের দিকে তাকায়। উনাদের থেকে ইশারায় উত্তর জানতে চাইলে শেহজাদের মা জবাবে বলেন,
“ফিওনাকে পুত্রবধূ করতে আমার কোনো প্রবলেম নেই। নাউ ইটস ইউর চয়েজ। ডু ইউ একসেপ্ট হার এজ অ্যা ওয়াইফ? অর নট? বিকজ ইউ আর সাপোসড টু লিভ উইথ হার ফর লাইফ।”
শেহজাদের বাবাও, নিজের স্ত্রীর সাথে সহমত পোষণ করেন। শেহজাদ খানিক সময় নিয়ে উপরের দিকে চেয়ে ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“ওকে। আই উইল ম্যারি হার।”
শেহজাদ ছাড়া সবার মাঝে এক আনন্দ অনুভূতি খেলে গেল। শেহজাদের বাবা, এখনি বিয়ে পড়ানোর জন্য চেনা এক হুজুরকে ফোন করতেও চলে গেছেন। সবার উৎসুকতা ও খুশি দেখে শেহজাদ হালকা হাসে। তারপর একটু একা থাকতে নিজের ঘরের দিকে যায়। বিয়ে করার ক্ষেত্রে তার নিজস্ব কোনো পছন্দ ছিল না। পরিবার যাকে ঠিক করবে, তাকেই বিয়ে করতো। এখানে তার পরিবার রাজি এবং সে একটা মেয়ের পছন্দকেও গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু তার খারাপ লাগছে এই কারণে যে, এই বিয়েটা হওয়ার পেছনের ঘটনাটা। সত্যি কি তার জন্য ফিওনার ডিভোর্স হয়েছিল? সে কারও জীবন নষ্ট হওয়ার কারণ হয়েছে, এটাই তার মনকে বারবার ক্ষ*ত-বিক্ষ*ত করে চলেছে।
রাত ৯টার পর হুজুর এসে বিয়ে পড়িয়ে দিয়ে যায়। রেজেস্ট্রি আগামীকাল হবে। ফিওনা পুরোটা সময় খেয়াল করছিল, শেহজাদের মধ্যে কোনো উচ্ছাস নেই। তাই ফিওনা নিজ থেকে এসে শেহজাদের পাশে বসে হাত ধরে বলে,
“টেক ইউর টাইম। ওয়ান ইয়ার, টু ইয়ার অর মোর। কিন্তু এট লাস্ট, বি মাইন। আই লাভ ইউ।”
শেহজাদ মুচকি হেসেছিল শুধু। সেদিনের পর সময় অনেক দ্রুত বইতে শুরু করলো। শেহজাদ পিএইচডির জন্য এডমিশন নেয়। প্রফেসর হ্যারিই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। ফিওনা ও শেহজাদের বিয়ের পাঁচ মাস পর, হঠাৎ প্রফেসর হ্যারির হার্ট অ্যা*টা*কে মৃ*ত্যু হয়। ওই সময়টাতে ফিওনা ও তার দাদি ভিষণ রকমের ভেঙে পড়েন। শেহজাদ, উনাদেরকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসে। বিয়েটা আরও চার মাস আগে হলেও সেদিন থেকেই শেহজাদ ও ফিওনার সংসার জীবন শুরু হয়। পিতৃবিয়োগের শোক কাটিয়ে ফিওনা আগের মতো নিজের ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্সে যোগ দেয়। আস্তে আস্তে সময়ের সাথে সব স্বাভাবিক হতে থাকে। বছর ঘুরতেই শেহজাদের বাবাও না ফেরার দেশে চলে যান। তখন অবশ্য আরেকটা দুর্ঘটনাও ঘটেছিল। যা তখন শেহজাদকে জানানো হয়নি। ফিওনার ২ মাসের প্রেগন্যান্সির মি*সক্যা*রেজ হয়ে গিয়েছিল। এমন একটা দিন যে শেহজাদ পিতৃবিয়োগের বেদনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেই সাথে নিজের অনাগত সন্তানকেও হারিয়েছে। তাছাড়া শেহজাদ ও ফিওনা জানতোই না প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে। হসপিটালে শেহজাদের বাবার মৃ*ত্যু ও লা*শ নিয়ে দৌড়াদৌড়িতে শেহজাদ শুধু ফিওনাকে পেটে ব্যাথার জন্য হসপিটালে ভর্তি করিয়ে বাবার দিকটার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সেদিনই ফিওনার মিস*ক্যা*রেজ হয়! এবং ফিওনা সবার মনের অবস্থার কথা চিন্তা করে ডাক্তারদের অনুরোধ করে যেন এই খবর আর কাউকে না জানায়।
সময়ের পরিক্রমায় আরও তিন বছরের মতো পেরিয়ে যায়। শেহজাদ পিএইচডি শেষ করে সবে একটা ইউনিভার্সিটিতে যোগ দিয়েছে। এরইমধ্যে ড: আকবর রেহমান ও মিসেস শাহিদা, শেহজাদকে কয়েকবার পরিবারসহ বাংলাদেশে আসতে বলেছেন। শেহজাদ প্রথমে এই বিষয়ে তেমন ভাবেনি। কিন্তু হঠাৎ একদিন একটা শপিংমলে ফিওনার এক্স হাজবেন্ড মাইকেলের সাথে দেখা হয়। মাইকেল নিজের পূর্বের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চায়। তখন সে মাইকেলের থেকে জানতে পারে, মাইকেল ফিওনার সাথে কোনো রুড বিহেভিয়ার বা চি*ট প্রথমে করেনি। বরং ফিওনাই মাইকেলের প্রতি উদাসীন ছিল। ওদের বিয়ের কয়েকদিন পর যখন মাইকেল লক্ষ্য করেছিল, ফিওনা ঘ*নিষ্ঠ মুহূর্তে আবেগহীন থাকে। তখন মাইকেল কারণ জিজ্ঞাসা করলে ফিওনা বলে দিয়েছিল যে, সে ঝোঁকের বশে বিয়েটা করেছে এবং সে মাইকেলকে ভালোবাসে না। তাই তার থেকে ভালোবাসা আশা না করতে। মাইকেল তারপরেও প্রায় অনেকদিন চেষ্টা করে ফিওনার মনে তার জন্য ভালাবাসার সৃষ্টি করতে। কিন্তু শেষে হার মেনে নিজেও ভালো থাকার উপার খুঁজে নেয়। মাইকেল এটাও বলে যে, ফিওনা যাকে মন-প্রাণ দিয়ে প্রথম থেকে ভালোবেসে এসেছে, সে কেউটা শেহজাদ। তাই মাইকেল শেহজাদের প্রতি একটা ক্ষোভ মনে পুষে রেখেছিল। এজন্যই সেদিন নিজের এরেঞ্জ করা পার্টিতে শেহজাদ ও ফিওনাকে দেখে প্রচণ্ড রে*গে গিয়েছিল। তারপর সেই পোস্টটাও রাগের বশেই দিয়েছিল। মাইকেল তো মাফ চেয়ে চলে যায় কিন্তু রেখে যায় শেহজাদের মনে প্রশ্নদের মূল। শেহজাদ বাড়ি ফিরে প্রথমেই ফিওনাকে নিজের সামনে বসিয়ে প্রশ্ন করে,
“হু ওয়াজ দ্যা হোস্ট অফ দ্যা পার্টি দ্যাট নাইট?”
ফিওনা আঁতকে ওঠে। নিজেকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক রেখে বুঝতে না পারার মতো করে শুধায়,
“হুইচ পার্টি?”
শেহজাদ চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
“আই নো, ইউ আর ওয়েল এওয়ার অফ দ্যাট। সো প্লিজ। টেল দ্যা ট্রুথ। আমাদের নিয়ে যেদিন কথা উঠলো। মাইকেল সিন*ক্রি*য়েট করলো। সেই পার্টির হোস্ট কে ছিল?”
ফিওনা অন্যদিকে ঘুরে অস্থির হয়ে কম্পনরত স্বরে জবাব দিলো।
“আই ডোন্ট নো। ইট ওয়াজ অ্যা রেনডম পার্টি। লেট ইট বি।”
“নো। আই অ্যাম নট, ফিওনা।”
শেহজাদ, ফিওনার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। একহাতে ফিওনার হাত ও আরেক হাতে ফিওনার থুতনিতে ধরে মুখ উঁচু করে চোখে চোখ মেলায়। ফের শুধায়,
“আই ওয়ান্ট টু নো দ্যা ট্রুথ থ্রো ইউর ভয়েস। (আমি তোমার মুখ থেকে সত্য জানতে চাই।)”
ফিওনা শেহজাদের চোখে স্পষ্ট ক্রোধ দেখতে পেলো। এটাও বুঝতে পারলো যে শেহজাদ জেনেই তাকে প্রশ্ন করছে। সে হতাশা মিশ্রিত নিঃশ্বাস ছেড়ে মাথা নিচু করে বলে,
“সরি। ইয়াহ, ইট ওয়াজ মাইকেল’স পার্টি, এন্ড আই নিও ইট। সরি, শেহজাদ।”
শেহজাদ ফিওনার হাত ছেড়ে বিছানায় মাথা নিচু করে বসে। হাতের আঙুল গুলো একবার মুষ্টিমেয় করছে তো আবার খুলছে। এমন অবস্থাতেই প্রশ্ন ছুঁ*ড়ে দেয়,
“কেন করলে এটা? টু ম্যারি মি? এজন্য আমার ক্যারেক্টারে আঙুল তুলে?”
ফিওনা ব্যকুল হয়ে শেহজাদের পায়ের কাছে বসে। মায়াভরা চাহনিতে বলে,
“নো নো শেহজাদ। তুমি ভুল জানো। আই জাস্ট ওয়ান্টেড হিম টু নো দ্যাট আই ওয়াজন্ট স্যাড বিকজ অফ দ্যা ডিভোর্স। আই অ্যাম হ্যাপি। ইউ আর অলওয়েজ বাই মাই সাইড। দ্যাটস ইট। (আমি চেয়েছিলাম সে জানুক যে বিবাহবিচ্ছেদের কারণে আমি দুঃখে নেই। আমি খুশি। তুমি সব সময় আমার পাশে আছ)”
শেহজাদ তাচ্ছিল্য হাসে। অতঃপর বলে,
“ঝোঁকের বশে বিয়ে করলে। দেন সাডেনলি ইউ রিয়েলাইজ, ইউ আর নট এভেল টু লাভ হিম। তারপর ডিভোর্স! এই সবকিছুর মধ্যে আমি কেন মাইকেলের কাছে কা*ল*প্রি*ট হলাম?”
ফিওনা শঙ্কা ও লজ্জায় মুখ হাত দিয়ে আড়াল করে নেয়। এসবকিছু শেহজাদের জানার কথা না। তাহলে কী শেহজাদ তার ডায়েরি পড়লো। সে দ্রুত ড্রয়ার চেক করে দেখলো, ডায়েরি তার স্বস্থানেই আছে। এটা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেই শেহজাদ ছোঁ মে*রে ডায়েরিটা নিয়ে বলল,
“এখন আমি সব দেখব। আর কি কি তুমি লুকিয়েছ।”
“প্লিজ, শেহজাদ। নো। গিভ ইট ব্যাক টু মি। প্লিজ।”
শেহজাদ শুনলো না। ফিওনা আরও কয়েকবার বলল, ছি*নিয়েও নিতে চাইলো। কিন্তু শেহজাদ আজ নিজের সিদ্ধান্তে অটল। সে ডায়েরি নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল। ফিওনা ব্যর্থ হয়ে সেখানেই বসে কাঁদতে থাকে। তাদের চার বছরের বিবাহিত জীবনে এই প্রথমবার সে শেহজাদকে রাগ করতে দেখছে। তাও যেন রাগের স্ফুলিঙ্গ বেড়েই চলেছে। ফিওনা খোলা বারান্দা দিয়ে আকাশপানে চেয়ে উপরওয়ালার কাছে আর্জি জানালো,
“প্লিজ, আল্লাহ। হেল্প মি। আমি শেহজাদকে ভালোবাসি। রিয়েলি ভালোবাসি।”
শেহজাদ, তার বাবার স্টাডি রুমে ঢুকে ডায়েরিটা পড়তে শুরু করলো। ফিওনা এখানে শুধু নিজের ইচ্ছা ও সিক্রেট গুলোই লিখে রাখে। দৈনন্দিন সব লিখে না।
রাত দশটায় শেহজাদ নিজের রুমে আসে। শেহজাদের মা ও ফিওনা দুজনেই সেখানে ছিলেন। শেহজাদের মা উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালেন,
“শেহজাদ, তুমি ঠিক আছ? দেখ যা হয়েছে, ভুলে যাও। চার বছর তো তোমরা ভালোই ছিলে। কিছু সত্য আমরা কেউ জানতাম না। তারপরও তো ভালো ছিলাম, বলো? কিছু সত্য সামনে না আসাই ভালো।”
শেহজাদ রো*ব*টের মতো বলে,
“জানো মা, আমার ইউনিভার্সিটিতে এই সেমিস্টার আজকে শেষ হলো। তাই শপিংমলে গিয়েছিলাম, তোমাদের জন্য শপিং করতে। কিন্তু যা জানতে পারলাম তাতে আমার কাছে… মা, তোমার ছেলের বউয়ের যে মি*সক্যা*রেজ হয়েছে, এটা জানতে?”
শেহজাদের মা অবাক হয়ে ফিওনার দিকে তাকায়। তারপর অবাকমিশ্রিত কণ্ঠে জবাব দেয়,
“মি*সক্যা*রেজ? কবে? ও প্রেগন্যান্ট হলো কবে?”
“ও নিজেও জানতো না যে প্রেগন্যান্ট। বাবার মৃত্যুর দিন মি*সক্যা*রেজ হয়েছিল। আমিই তো ও-কে পেটব্যথা নিয়ে হসপিটালে এডমিট করেছিলাম। তখন ডাক্তার বলেছিল, ফুড প*য়জ*নিংয়ের জন্য পেইন হচ্ছে। এতকিছু আমার থেকে লুকানোর মানে কী? বেবিটাতো আমারও ছিল।”
শেহজাদের মা ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে পাশ থেকে আগলে নিলেন। শেহজাদ ফের বলল,
“মা, আমি স্পেস চাই। আমি ফুফিজানের কাছে যাব। নিজের দেশে যাব। প্লিজ আমাকে আটকাবে না। এখানে থাকলে ওর সাথে সম্পর্ক আরও তিক্ত হবে। আমি পরশু ফ্লাইটেই চলে যাব। টিকিট বুক করাও হয়ে গেছে।”
ফিওনা ও শেহজাদের মা হতবাক হয়ে শেহজাদের দিকে চেয়ে আছে। ফিওনা কাঁদতে কাঁদতে শেহজাদের পায়ে পড়তে নিলে শেহজাদ সরে যায়। ফিওনা বলতে থাকে।
“প্লিজ, ডোন্ট গো। অাই অ্যাম সরি। আমি ভুল করেছি। লাস্টবার মাফ করে দাও।”
শেহজাদ কিছু না বলে ড্রয়ার থেকে নিজের পোষাক নিয়ে অন্য ঘরে চলে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
#copywritealert❌🚫
#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৬
দুইদিন পর শেহজাদ কারও কথা তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে প্লেনে চড়ে বসে। প্রায় তিন বছর পর সে নিজ জন্মভূমিতে যাচ্ছে। শেষবার সে তার মায়ের সাথে বাবার লা*শ নিয়ে বাংলাদেশ গিয়েছিল। আজ একা যাচ্ছে। তাও মনের ভেতর অভিমানের গাড়ো আস্তর নিয়ে। প্লেনে বসে শেহজাদ ভাবছে, সে তো চাইলেই পারতো সব ভুলে ফিওনার সাথে আগের মতো সব ঠিক করে নিতে। কিন্তু করলো না কেন? নিজের উত্তর নিজেই পায় না। শুধু নিজেকে ছোটো মনে হচ্ছে। সে তো হাসিল করায় বিশ্বাসি নয়। সে বিশ্বাস করে ভালোবাসা দিয়ে জয় করা। তবে ফিওনা তাকে হাসিল করতে এতোকিছু কেন করলো? এসব ভাবতে ভাবতে নিজের উপর তার রাগ হচ্ছে। অতঃপর মনকে শান্ত রাখতে প্লেনের লম্বা জার্নিতে ঘুমানোটাই উত্তম মনে করলো।
এদিকে ফিওনা এয়ারপোর্টের ফ্লোরে বসে নিজের দাদি ও শেহজাদের মাকে জড়িয়ে কাঁদছে। সে তো খুব ভালোবাসে। যেভাবেই হোক, সে চেয়েছিল নিজের ভালোবাসা নিজের হয়ে থাকুক। ভালোবাসাতে নাকি সবকিছু জায়েজ? তবে সে তো শুধু তিনটা সত্য আড়াল করেছিল!
কিছু সময় পর ফিওনা কিছুটা শান্ত হলে শেহজাদের মা আদুরে কণ্ঠে বলেন,
“ডোন্ট ওয়ারি। হি উইল বি ব্যাক। হি জাস্ট অ্যা লিটল বিট এংরি। এভরিথিং উইল বি ফাইন।”
ফিওনা জবাবে কিছু বলতে পারলো না। অতঃপর শেহজাদের মা ও ফিওনার দাদি, ফিওনাকে এয়ারপোর্ট থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে।
_____
বাংলাদেশে এসেই শেহজাদ ভার্সিটিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে জয়েন করে। সেমিস্টার ব্রেক শেষ হতেই সেও নতুন কর্মক্ষেত্রে মানিয়ে নিতে থাকে। ড: আকবর রেহমান ও মিসেস শাহিদা এতে বেশ খুশি। উনারা এখনও শেহজাদের এখানে আসার পেছনের কারণ সম্পর্কে অবগত নয়। দেখতে দেখতে এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন একটা খবর পায়। খবরটা এতোটাই ভ*য়ংক*র সুন্দর ছিল যে শেহজাদ ভার্সিটিতে নিজের ডেস্কেই বিস্মিত হয়ে বসে রয়। সে বাবা হচ্ছে। ফিওনা তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। এই খবরটা তার মা, তাকে দিয়েছে। খবরটা শুনে শেহজাদ নিজের অনুভূতি ঠিক বুঝতে পারলো না। কিন্তু তার খুব সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। এক নিমিষেই সব ভুলে হোয়াটসএপে ফিওনাকে কল লাগায়। ফিওনাও যেন এটারই অপেক্ষা করছিল। সঙ্গে সঙ্গে ফোন রিসিভ করে নিরব থাকে। অপরদিকে শেহজাদ চুপ। দুই পাশে পিনঃপতন নিরবতা বিরাজ করছে। দুজনেই চাইছে, অপরপক্ষ আগে কিছু বলুক। কিন্তু কিছু সময় পর ফিওনা আর শান্ত থাকতে পারলো না। সে শব্দ করে কেঁদে উঠলো। শেহজাদ ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে শীতল কণ্ঠে শুধালো,
“হোয়াই আর ইউ ক্রায়িং?”
কান্নারত স্বরে ফিওনা জবাব দিলো,
“ডোন্ট ইউ নো?”
“আই নো।”
“দেন, হোয়াই ডু ইউ স্টে সাইলেন্ট?”
ফিওনার কণ্ঠে অভিযোগ ও অভিমানের ভীড়। শেহজাদ হালকা হেসে বলল,
“ডাক্তার কী বলল? ফার্স্ট টাইম মি*সক্যা*রেজের জন্য কোনো হেলথ ইস্যু?”
ফিওনা আবারও একই ভুল করলো। সে এবারও রি*স্কের কথা আড়াল করে গেল । যদিও রি-স্ক সামান্য। ভেবেছে ডাক্তারের বলা মতো চললে সেটা ঠিক হয়ে যাবে। শেহজাদ বলেছে, সে প্রায় সাড়ে তিন পর ফিরে আসবে। এই সেমিস্টারটার সবে দেড় সপ্তাহ হয়েছে। ফিওনা তাতে ভিষণ খুশি।
সময়ের চক্রে সাড়ে তিন মাস সময়টাও পেরিয়ে গেল। আর মাত্র কিছু দিন পর ফিওনার প্রেগন্যান্সি সাত মাসে পড়বে। সে ইতোমধ্যে জেনে গেছে, তার মায়ের রোগটা সে পেয়েছে! তবে সেটা অতোটা ক্ষতিকর পর্যায়ে নেই। তার জড়ায়ুতে ছোটো একটা টি*উমা*র হয়েছে। ডাক্তার বলেছে, বাচ্চা জন্মের সময় টি*উ*মারও অপসারণ করা হবে। এখন সে কোনোভাবেই চায় না শেহজাদ আমেরিকায় আসুক এবং বিষয়টা জানুক। সে শেহজাদকে আসতে নিষেধও করে কিন্তু শেহজাদ চায় এই সময়ে তার স্ত্রীর পাশে কিছুটা সময় হলেও থাকতে। তাই সে আসে।
শেহজাদ আমেরিকায় আসার পর যে কয়টাদিন শেহজাদ আমেরিকায় ছিল, ততোদিন ফিওনা খুব কৌশলে জড়ায়ুর টি*উ*মা*রের ব্যাপারটা লুকিয়ে গেছে। শেহজাদের মাও এই সম্পর্কে অবগত নন। এদিকে ফিওনার দাদি অনেক অসুস্থ। তার জন্য আলাদা নার্স রাখা হয়েছে। ফিওনা ও শেহজাদের মা চায়, বাচ্চা জন্মের পর ওরা বাংলাদেশে যাবে। শেহজাদ যতদিন আমেরিকায় ছিল ততোদিন ফিওনার সবরকম যত্ন সে করেছে। ফিওনা কোনো না কোনো ভাবে শেহজাদকে ব্যস্ত রেখেছে যাতে শেহজাদ খোঁজ না করতে পারে। এতে ফিওনার বেস্টফ্রেন্ড ফিওনাকে সাপোর্ট করেছে! শেহজাদও সন্দেহ করেনি কারণ সে ভেবেছিল, ফিওনা নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত। তারপরও নিশ্চয়ই একই ভুল সে করবে না।
খুব দ্রুতই শেহজাদের দেশে ফেরার সময় এগিয়ে এসেছে। নির্দিষ্ট সময় পর শেহজাদ দেশে ফিরেও এলো। তারপর সব তার নিজ নিজ গতিতে চলতে লাগলো। শেহজাদ ফিরে আসার এক মাস পর হঠাৎ গভীর রাতে শেহজাদের হোয়াটসএপে কল এলো। বলা বাহুল্য যে, শেহজাদ ওই সময়টাতে সবসময় ফোনের ডাটা অন করে রাখতো। কারণ প্রেগন্যান্সির শেষ তিন মাস ও প্রথম তিন মাস খুব ক্রুশিয়াল। খুব সাবধানে থাকতে হয়। শেহজাদ আমেরিকায় তার পরিচিত, নিকটস্থ এক ড্রাইভারকে আগে থেকে বলে রেখেছে যাতে যেকোনো সময় দরকারে তাকে পাওয়া যায়।
হঠাৎ ফোনের রিংটোনে শেহজাদের ঘুম ছুটে যায়। তার মস্তিষ্কে আগে থেকে সেট করা মাঝরাতের সতর্কতায় দ্রুত ফোন রিসিভ করে। ফোনের অপরপাশ থেকে শুনতে পায়, ফিওনার ডেলিভারি পেইন ওঠেছে। কথাটা শোনামাত্র শেহজাদের শ*রীরে যেন হিমশীতল হাওয়া বয়ে গেল। সে কিয়ৎক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থেকে মায়ের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পায়। তদ্রূপ আর সময় ব্যয় না করে আমেরিকার পরিচিত ড্রাইভারকে ফোন করে ফিওনাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে বলে। এতোকিছুর মধ্যে শেহজাদ এক মূহুর্তও শান্তি পাচ্ছে না। অস্থিরতার পারদ যেন তার মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে! সে গিয়ে তার ফুফা ও ফুফিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে খবরটা জানায়। মিসেস শাহিদা, শেহজাদকে ধৈর্য ধরতে ও দোয়া করতে বলেন। ফজরের আজান হতে এখনও ঘণ্টাখানেক বাকি।
ফজরের পর ধরণীতে ভোরের শুভ্র আলো ফুটতেই শেহজাদের কাছে সুসংবাদ আসে। সে কন্যাসন্তানের পিতা হয়েছে। সি*জা*রের মাধ্যমে ফিওনা সুস্থ ভাবে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছে। প্রথম বাবা হওয়ার সংবাদে শেহজাদ নিজের খুশি, আনন্দ মুখে বা অভিব্যক্তিতে ব্যক্ত করতে পারছে না। নিজের কাছে নিজেকে সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে গণ্য হচ্ছে তার।
ড: আকবর রেহমান খুশিতে আমেরিকার ফ্লাইটের চারটা টিকেট কে*টে ফেলেছে। তার নাতনী হয়েছে বলে কথা! আজ রাতেই তারা রওনা হবে।
_____
আমেরিকায় পৌঁছে প্রথমবারের মতো নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে শেহজাদ যেন চোখের পলক ফেলতেই ভুলে গেছে। মেয়েকে কোলে নিয়ে সে সময়জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে অবস্থা। বিষয়টা শেহজাদের মা, ফুফা-ফুফি ও ফিওনার বেস্টফ্রেন্ড মারিয়া দেখে মিটিমিটি হাসে। অতঃপর শেহজাদের মা এগিয়ে গিয়ে নিজের ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলেন,
“এবার আমাদের নাতনীকে আমাদেরও একটু দাও। তুমি একটু ফিওনার সাথেও বসে কথা বলো। আসার পর একটু ‘এখন কেমন আছ?’ এটুকুতে কথা সেড়ে মেয়েকে নিয়ে পড়েছ। যাও এবার।”
এদিকে ফিওনা তার বেস্টফ্রেন্ডের হাজবেন্ড পিটারকে বলছে,
“শেহজাদ শুড নট নো দিস। বি কেয়ারফুল।”
“ইয়াহ। ডোন্ট ওয়ারি এবাউট দিস। এভরিথিং ইজ ফাইন। এন্ড ইউ আর ফাইন।”
শেহজাদ ফিওনার কাছে এসে পিটার বলা কথাটা শুনে হাস্যজ্জ্বল মুখে শুধায়,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
ফিওনা ও পিটার দুজনেই ভড়কে যায়। পিটার কী বলবে ভাবতে ভাবতেই ফিওনা জবাব দেয়,
“একচুয়ালি, টুডে দে আর গোয়িং টু ডিসচার্জ মি। সো…”
“ওহ। ওকে। থ্যাংকস পিটার। ইউ হেল্পড আস সো মাচ।”
পিটার মৃদু হেসে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। শেহজাদও ফিওনার পাশে বসে।
______
আমেরিকায় নিজের স্ত্রী, নবজা*তক কন্যা ফ্রিশার সাথে দুইদিন থেকে শেহজাদকে ফিরে আসতে হয়। আস্তে আস্তে সময় পেরোয়। ফ্রিশাও বড়ো হতে থাকে। কয়েক মাস পর ফিওনার দাদির মৃ*ত্যু হলে, শেহজাদ সবাইকে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করে। বাংলাদেশে এসে ফ্রিশাও একটু একটু করে বড়ো হতে থাকে। দেখতে দেখতে ফ্রিশার দুই বছর পেরোলে শেহজাদের মাও না ফেরার দেশে চলে যান। শেহজাদের বাবার পাশেই শেহজাদের মাকে শায়িত করা হয়।
সুখ-দুঃখ সবমিলিয়ে যেমন জীবন, তেমনি সময়ে সাথে সবকিছুকে স্বাভাবিকে আসতে হয়। ফ্রিশার তিন বছর বয়সে ফিওনা আবার প্রেগন্যান্ট হয়। এবারও আগের মতোই সমস্যা তবে আরও গুরুতর। প্রেগন্যান্সির তিন মাসেই টি*উ*মার অনেকটা বড়ো হয়ে গেছে। এবার শেহজাদ সবটা জানতে পারে। সে সত্যি ভাবতে পারেনি, ফিওনা তার থেকে এতবড়ো ঘটনা আড়াল করে যাবে। সবাই মিলে ফিওনাকে এ*বরশ*নের কথা বললেও ফিওনা নারাজ। কেন যেন তার মনে হচ্ছিল, এবার শেহজাদ তাকে মাফ করবে না। তাই এব*রশ-ন সে করতে চায় না। তারপর সাত মাসে পড়ার আগেই প্রচণ্ড পেটে ব্যাথা নিয়ে হসপিটালে ভর্তি হলে, ওটাই ছিল ফিওনার শেষ সময়।
ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড,,
শেহজাদ অতীতের স্মৃতি থেকে বেরিয়ে চশমা খুলে টেবিলে রাখলো। রাত এখন অনেক গভীর। রুমের দিকে উঁকি দিয়ে বুঝলো মীরা এতক্ষণে গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন। সে নিজে নিজে স্বগোতক্তি করে বলে,
“আমি চাইনি ফিওনার জন্য তোমার মনে কোনোরকম নেগেটিভ কিছু আসুক, মীরা। চাইলেই সবটা বলতে পারতাম। কিন্তু কী হতো? ফিওনা তো কখোনো তোমার লাইফ কম্পলিকেটেড করতে ফিরবেও না। তাহলে কেন আমি তোমার মনে থাকা ওর জন্য সম্মানটা নষ্ট করব? তুমি আর ফিওনা দুজনেই নিজেদের আলাদা আলাদা সময়ে আমার জীবনে এসেছ। কারও টাইমের সাথে কারওটায় মিল নেই। আমি চাই না তুমি ফিওনাকে খারাপ ভাবো। সে যা করেছে আমায় ভালোবেসে করেছে। যদিও সেসবকে আমি সাপোর্ট করি না। এটা তো সত্যি, ও আমাকে ওর নিজের চাইতেও বেশি ভালোবেসেছে। আমি সত্যি ফরচুনেট পার্সন। বাট অলসো আনফরচুনেট। এতো ভালোবাসা পেয়েও ভালোবাসার মানুষটাকে প্রকৃতির কঠোর সত্যতে হারিয়ে ফেলেছি।”
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে শেহজাদ উঠে দাঁড়ালো। শব্দহীন পায়ে রুমে প্রবেশ করে বিছানার ফাঁকা স্থানে শুয়ে পড়লো।
চলবে ইনশাআল্লাহ,