মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া পর্ব-১৯+২০

0
638

#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৯
মাগরিবের নামাজ শেষে মীরা হলুদ রঙের জামদানী শাড়ি পড়ে বিছানায় বসেছে। মীরার বড়ো ভাবি মীরার চুড়ি ও ফুলের গহনাগুলো এনে রাখে। রাইমাও ও-কে সাজানো শুরুই করেছে তখন হুট করে জিনিয়া একটা মাঝারি আকৃতির বোলে উষ্ণ গরমপানি নিয়ে হাজির। মীরা ও রাইমার প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি জিনিয়ার দিকে। ওদেরকে আরও এক ধাপ অবাক করে দিয়ে জিনিয়া পানির বোল নিয়ে মীরার পায়ের কাছে মেঝেতে বসে পড়লো। অতঃপর মীরার পা ধরে পানিতে রাখলো। তৎক্ষণাৎ মীরা হকচকিয়ে পা সরিয়ে নিতে চাইলে জিনিয়া বলে,

“আরে আরে পা সরাচ্ছিস কেন? আমি পেডিকিউর করব তো!”

“হ্যাঁ?”

“হ্যাঁ রে হ্যাঁ। পানিতে শ্যাম্পু, লবন ও লেবুর রস দিয়ে এনেছি। এখনও মিক্স করিনি। সরি! ওয়েট মিক্স করে নিই।”

জিনিয়া পানিতে হাত ডুবিয়ে ফেনা তৈরি করে বলে,
“১০ মিনিট এভাবে বসে থাক। তারপর বাকি প্রসিডিউর করব।”

মীরা ক্লান্ত স্বরে বলে,
“এখন পা ডুবিয়েই রাখতে হবে?”

“হ্যাঁ হবে। তুই তো বসেই আছিস। রাইমা তোর মেইকআপ করে দিতে দিতে আমার কাজও শেষ হয়ে যাবে।”

রাইমা বলে,
“ঠিক বলেছ, জিনিয়া। বসেই থাকবি তো ও যা করতে বলছে কর। তারপর তোর সাজ হয়ে গেলে আমাদের জন্য বসে থাকবি।”

“আচ্ছা কর।”

জিনিয়া এবার উঠে গিয়ে নিজের মুখের মেইকআপ করতে বসে। আর বলে,
“মানুষের পা অনেক সেনসিটিভ। পায়ের বিভিন্ন স্থানে ম্যাসাজ করলে ব*ডির আদারস অর্গান সুস্থ থাকে। তাছাড়া তুই যতোই বলিস যে পার্লারে যাবি না বলে কিছু কম স্ট্রেস হবে। তা কিন্তু হবে না। ভাই, আমি তো বিয়ে করেছি। বসে থাকতে থাকতে কোমড় আর কোমড় থাকে না। তারউপর আনকম্ফর্টেবল শাড়ি-জুয়েলারি। সাউন্ডস প্রবলেম তো আছেই! তোর খালি মনে হবে, ‘আমি কখন এসব থেকে মুক্তি পাব আর ঘুমাব!’ তাই পেডিকিউরের মধ্যে হালকা একটু ম্যাসাজ থাকলে না, কিছুটা রিলিফ লাগে। এটা অবশ্য উচিত ফাংশনের পর করা। পার্লারেও কিন্তু এটা প্রবাইড করে।”
(পেডিকিউর পায়ের সৌন্দর্যের জন্য করা হলেও ম্যাসাজিংটা ইফেক্টিভ।)

মীরা জিনিয়াকে কাছে ডেকে মাথায় একটা চু*মু এঁকে দিয়ে বলে,
“ইউ আর সো কেয়ারিং। অ্যাই লাভ ইউ, জিনু!”

“লাভ ইউ টু, মীরু! এখন চুপচাপ বসে থাক। ভাবি, তোর জন্য ফ্রেশ ম্যাংগো জুস আনছেন।”

রাইমা হাঁক ছেড়ে বলে ওঠে,
“ভাবি, আমার জন্যও প্লিজ।”

নিধি আম কা*টতে কা*টতে প্রত্যুত্তর করে,
“আচ্ছা। সবার জন্যই আনব। ওদিকে হলুদের টেবিল সাজানোর সব কম্পিলিট হয়েছে কী-না তাও দেখতে হবে।”

রাইমা মুচকি হেসে বলে,
“এই ফার্স্ট আমি মুসলিম বাংলাদেশি বিয়ে এটেন্ড করছি। কুঞ্জকে বলেছি সব যেন ক্যামারেয়াতে কভার করে। বেচারা, হয়তো দৌড়াদৌড়ির উপরই আছে!”

“আরে করতে দাও। ছেলেদের কাজই এসব করা। এখন থেকে ট্রাই করলে ফিউচারেও তোমার সব কথা মানবে।”

মীরা বলে ওঠে,
“এই জিনু, থাম ভাই! তুই রাইকে চিনিস না! কুঞ্জদাকে ও যেভাবে নাকে দম করে রাখে! নেহাত কুঞ্জদা বলেই ও-কে মেনে চলছে। তুই আর ও-কে এসব করতে ইনকারেজ করিস না।”

জিনিয়া ভাব নিয়ে বলে,
“কতো দরদ উতলে উঠছে তোর, মীরু! শোন, এদের বশে রাখতে হলে একটু ডমিনেটিং হতেই হয়। তাছাড়া ভালোও তো বাসি। কেয়ারও করি। তুইও আস্তে আস্তে শিখেই যাবি।”

জিনিয়া ও রাইমা হেসে ওঠে একে অপরের সাথে হাতে তালি দেয়। মীরা মাথায় হাত দিয়ে হালকা হেসে নিরব থাকে। অতঃপর তার সাজ চলতে থাকে।

________

শেহজাদদের বাড়িতে হলুদের কোনো ফাংশন কিছু হচ্ছে না। মূলত শেহজাদের এসব পছন্দ না। ফ্রিশা জানতে পারলে জেদ করতে পারে ভেবে শেহজাদ নিষেধ করেছে যেন ফ্রিশাকে এই বিষয়ে না জানানো হয়। মিসেস শাহিদাও মেনে নেন। কারণ, এতসব কিছু দেখাশোনা করার জন্যও তো মানুষ লাগে। ড: আকবর রেহমানের ছোটো ভাই ও বোন কেউই দেশে থাকেন না। উনারা কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতে সেটেল।
শেহজাদ নিজের রুমে বসে বসে ল্যাপটপে আর্টিকেল দেখছে। হুট করে ফ্রিশা এক বাটি হলুদ নিয়ে এসে শেহজাদের গালে লাগিয়ে দেয়। হকচকিয়ে উঠে শেহজাদ। বাবাকে এতো আশ্চর্য হতে দেখে ফ্রিশা খিলখিল করে হেসে ওঠে। সে বলে,

“আজ তো হলুদ লাগাতে হয়, বাবা। তাই আমিই তোমাকে লাগিয়ে দিলাম।”

শেহজাদ কিছুক্ষণ মেয়ের পানে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে ভ্রুকুঞ্চন করে শুধায়,
“তোমাকে এসব কে বলেছে?”

“ফেইরিমাম্মামের ফ্রেন্ড বলেছে।”

“কখন?”

“একটু আগে আমি দাদুমনিকে বললাম ফেইরিমাম্মামকে কল করতে। তখন কলটা ফেইরিমাম্মামের ফ্রেন্ড রিসিভ করে। জানো বাবা, সেখানে অনেক সাউন্ড হচ্ছিলো। তখন বলেছে আজ নাকি হলুদ লাগায়। আমাকে তো ফেইরিমাম্মামের ছবিও দেখিয়েছে। সি লুকস সো প্রিটি। লাইক অ্যা রিয়েল ফ্লাওয়ার ফেইরি। তোমারও তো হলুদ লাগাতে হবে। তাই আমিও দাদুমনিকে বলে আন্টিকে (সার্ভেন্ট) দিয়ে হলুদ আনিয়েছি।”

শেহজাদ হালকা হেসে মেয়েকে নিজের কাছে এনে কোলে বসিয়ে বলে,
“ওহ আচ্ছা। শোনো মাম্মাম, হলুদ লাগানো মেন্ডেটরি না। যার যার চয়েজ। ইয়েস, ইট হ্যাজ মেডিসিনাল ভেলু এন্ড ইট ইজ সো ইফেক্টিভ।”

ফ্রিশা কৌতুহলী হয়ে শুধায়,
“তাহলে তুমি কেন লাগাতে চাও না, বাবা?”

শেহজাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দেয়,
“এমনিই। অ্যাই ডোন্ট লাইক ইট। তুমি এখন যাও, ঘুমিয়ে পড়ো। রাত দশটার বেশি বাজে।”

ফ্রিশা মুখ ভার করে হলুদের বাটি নিয়ে চলে আসে। মিসেস শাহিদা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনলেন। শেহজাদ গায়ে হলুদ এসব পছন্দ করে না, তারও একটা কারণ আছে। সে এটা চাইলেও ভুলতে পারে না।

এদিকে সন্ধ্যা আটটা থেকে টানা বসে থাকতে থাকতে মীরার প্রচণ্ড ক্লান্ত। ফুলের সাজে তাকে ফ্রিশার সম্বোধিত ফেইরির মতোই লাগছে। মীরার কলিগরাও কিছুক্ষণ আগেই হলুদ লাগানোর পর খাওয়া-দাওয়া করে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। এখন মেহেদী আর্টিস্ট ওর এক হাতে মেহেদী পড়াচ্ছে। এদিকে ফটোগ্রাফারের যেন সব ক্যাপচার করতে হবে! মুখ থেকে হাসি সরানোই যাবে না। মীরা তার বড়ো ভাবিকে ডেকে বলে,

“ভাবি, আমি এখান থেকে উঠতে চাই। ইমরান, জায়েদদের বলো গান এসব বন্ধ করাতে।”

মীরার খালাতো বোন জান্নাত এসে বলে,
“কী বলো, আপু? মাত্রই সবাই হলুদ দিয়ে শেষ করলো। এখন মেহেদী পড়ানোর ফাংশন হচ্ছে তো।”

“কর তোরা। আমি রুমে যাব। আমার ব্যাকপেইন প্রবলেম আছে।”

মেহেদী আর্টিস্ট বলে,
“আপু, মেহেদীটা পড়ানো পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করুন। দুইজন মিলে দুহাতে মেহেদী পড়ানো শেষে আপনাকে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিব।”

মীরা ক্লান্ত দৃষ্টিতে নিজের হাতের দিকে চেয়ে বলে,
“আরেকজনকে ডাকুন। আর জলদি করুন, প্লিজ।”

মেহেদী আর্টিস্ট তার সাথে আসা আরও দুইজন আর্টিস্টদের মধ্যে আরেকজন আর্টিস্টকে ডেকে আনেন। অতঃপর যত দ্রুত সম্ভব কাজ করতে থাকেন।

_________

রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি সময়ে মীরা বাড়ির ছাদের স্টেজ থেকে উঠে নিজের রুমে আসতে পেরেছে। দুই হাত ভর্তি তার মেহেদী। কোনো রকমে বিছানার সাথে বালিশে হেলান দিয়ে বসে হাত উঁচু করে রাখে। হাতের উপরের পৃষ্টের মেহেদী এখনও ভেজা। রাইমা, জিনিয়া, নিধি, শারমিন, জান্নাত, মীরার মামাতো বোন, ভাবি, চাচাতো বোনদের সবারই দুই হাতের চার পৃষ্টের মধ্যে দুই দুই করে মেহেদী পড়া শেষ। মেহেদী আর্টিস্ট তিন জন ছাড়াও ভাবি ও কাজিনরা নিজেরা নিজেরাও মেহেদী পড়েছে।
কিন্তু ওদের মধ্যে ক্লান্তি ভাবটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তখনি মিসেস মলি জাহান এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ এনে মীরাকে বলে,

“নে এটা খেয়ে নে। ক্লান্তি কম লাগবে।”

মীরা অসহায় চোখে চেয়ে বলে,
“আমি ফ্রেশ হতে পারলে আমার ক্লান্তি কম লাগবে। কিন্তু মেহেদী না শুকানো অবধি পারছি না।”

“শুকিয়ে যাবে। তুই আগে গ্লাসের দুধটুকু খা। তারপর তোকে আমি খিচুড়িও খা*ইয়ে দিব।”

“মা! আবার খাবারও! আমি খাব না।”

মলি জাহান মৃদু ধ*মকে উঠলেন। তিনি বললেন,
“চু*প! খাবিনা মানে কি! খেতে হবে। খিচুড়ি রান্নাটা দেরি করে হয়েছে বলে স্টেজে বসার আগে খাওয়াতে পারিনি। এখন চুপচাপ খেয়ে নিবি নয়তো তোর বাবাকে বলব। গ্লাসটা ধর।”

মিসেস মলি জাহান, মীরার হাতে দুধের গ্লাসটা ধরিয়ে দিয়ে খাবার আনতে গেলেন। মীরার মা যেতেই রাইমা দুষ্টুমি করে বলে,

“তোকে এনার্জি গেইন করতে হবে, বেবি! নয়তো কালকে এনার্জি পাবিনা তো!”

রাইমার কথা শুনে রুমে থাকা মীরার ভাবিরা, কাজিনরা ও বান্ধবী সবাই হেসে ওঠে। জিনিয়া আবার আরেকধাপ এগিয়ে বলে,
“স্যারকে ফোন করব? না মানে তোর হাতের মেহেদী দেখাতে। আমার বিয়ের সময় তো…”

মীরা রাগ দেখিয়ে জিনিয়াকে থামিয়ে জিনিয়াকে নিজের কাছ থেকে ধা*ক্কা দিয়ে বলে,
“চু*প! বেশ*রমের দল। আর একটা এমন টাইপের কথা বললে রুম থেকে বের করে দিব।”

“আচ্ছা যা বললাম না। তবে কাল রাতে কিছু লাগলে আমাদের নির্দ্বিধায় কল করতে পারিস। মানে এডভাইস আরকি! যতোই হোক, স্যারের বাসায় তো আমরা তোর সাথে যেতে পারব না।”

“থাম না প্লিজ। আম্মু আসবে এখনি।”

“ওকে। বাট কল কিন্তু…”

মীরা এবার চোখ রাঙালে জিনিয়া থেমে গেলেও রুমে থাকা সবার মাঝে যেন হাসি একপ্রকার ম*হামা*রির মতো ছড়িয়ে পড়ে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২০
মিষ্টি গোলাপি রঙের বেনারসি পড়ে স্টেজে বসে আছে, মীরা। মীরাকে ঘিরে তার কাজিনরা, ভাবিরা, বন্ধু-বান্ধব ও কলিগরা হাস্যরসে মেতে আছে। চলছে ফটোশুট। এখনও বরযাত্রী এসে পৌঁছায়নি। চারিদিকে মরিচবাতির আলোকসজ্জায় কৃষ্ণাভ সায়াহ্নে যেন অজস্র তারাদের মেলা বসেছে। ঝলমলে সন্ধ্যা আজ মুখরিত নতুন অধ্যায় রচনাতে। পবনে তার আলাদা ছোঁয়া। মীরার ওষ্ঠকোণে ফুটে আছে স্নিগ্ধ হাসি। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য একটা কমিউনিটি সেন্টারের রুফটফ পুরোটা বুকিং করা হয়েছে। একদম টপ রুফটফে বর ও কনের জন্য কম্বাইন্ড স্টেজ। এদিকে কুঞ্জ প্রথম থেকেই সবটা ক্যামেরায় রেকর্ড করছে। তাকে কিঞ্চিত ক্লান্তও দেখাচ্ছে। ব্যাপারটা রাইমার নজর এড়ায়নি। সে খাবার এনে মীরাকে খাইয়ে আবার খাবার নিয়ে এসেছে। এবার সে ঘুরে ঘুরে কুঞ্জকে খাওয়াচ্ছে। সেইসাথে ঝ*গড়া তো ফ্রি! স্টেজ থেকে ওদের এই খুনশুঁটি দেখে বাকিরাও হাসছে। মীরার এক ফ্রেন্ড বলে,

“সত্যিরে, রাইমা মেয়েটা অনেক কিউট। বিকেলে যার সাথে ঝ*গ*ড়া করে শেষ! রফাদফা অবস্থা! এখন দেখ, তাকে নিজ হাতে খাওয়াচ্ছেও।”

মীরা হেসে বলে,
“ও এমনি। কখোনো উড়নচণ্ডী তো কখোনো আদুরে ও যত্নশীল। দ্যাটস হোয়াই অ্যাই লাভ হার এন্ড মিস সো ব্যাডলি।”

জিনিয়া, মীরার কাঁধে সামান্য ধা*ক্কা দিয়ে রম্যস্বরে বলে,
“স্যার থাকতে তুই রাইমাকে মিস করিস! ছি ছি মীরা!”

জিনিয়ার সাথে উপস্থিত সকলে হেসে ওঠে। মীরা ও-কে দুই ঘা লাগিয়েও সেরেছে। হঠাৎই সোরগোল পড়ে গেল। একে একে মীরার পাশ থেকে সকলে উঠে নিচে নামলো। রুফটফের গেইটে বরপক্ষ এসেছে। মীরার ফ্রেন্ড ও কাজিনরা গেইট ধরলেও ফ্রিশা তার বাবার হাত ছেড়ে ছুটে ভেতরে চলে এসেছে। তারপর মৃদুলার হাত ধরে টপ রুফটফে একাকি বসে থাকা মীরার কাছে যায়। মীরাকে দেখা মাত্রই ফ্রিশা গালে হাত দিয়ে বলে ওঠে,

“ইউ আর লুকিং সো বিউটিফুল, ফেইরিমাম্মাম! লাইক অ্যা কুইন।”

মীরা মুচকি হাসে। অতঃপর হাত বাড়িয়ে ফ্রিশাকে কাছে ডাকে। ফ্রিশা ও মৃদুলা, দুজনেই গিয়ে মীরার দুইপাশে বসে। মীরা ওদেরকে দুইহাতে আগলে নিয়ে প্রথমে মৃদুলা ও পরে ফ্রিশাকে বলে,

“মাই বার্বিডল এন্ড মাই প্রিন্সেস।”

দুজনের ললাটে উষ্ণ ঠোঁ*টের স্পর্শ এঁকে দেয়। ফ্রিশা বলে,
“জানো ফেইরিমাম্মাম, বাবাকে কিংয়ের মতো লাগছে। গোল্ডেন শিওয়ানি! গোল্ডেন ব্রুজ।”

“বাচ্চা, ওটা শেরওয়ানি। প্রিন্সেসের বাবা তো কিং হয়ই।”

“ইয়েস, এন্ড প্রিন্সেসের ফেইরিমাম্মাম কুইন হয়।”

ফ্রিশা আদুরে ভঙ্গিতে মীরার দিকে তাকায়। মীরা যেন মুগ্ধ। তার দৃষ্টি এক মায়াবি মুখশ্রীতে রুদ্ধ হয়েছে। অক্ষিকোণে জলবিন্দুদের উপস্থিতি ঝর্ণা বয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। মীরা টিসুর সাহায্যে আড়ালেই তা মুছে নিলো। ফের বলল,

“তুমি টায়ার্ড তো। ওয়েট, আমি জুস আনাচ্ছি।”

মীরা কাউকে বলে জুস আনালো। ফ্রিশা এক ঢোকে খেয়েও নিয়েছে।

গেইটের ঝামেলা দীর্ঘসময় স্থায়ী হয়নি। ড: আকবর রেহমান কোনো বাক্যব্যয় ছাড়াই মিটিয়ে নিয়েছেন। সবাই এখন শেহজাদকে নিয়ে স্টেজে আসে। মীরার পাশে বসানো হয় তাকে। আসার পথে শেহজাদ মাথা উঁচু করেনি। দেখেনি মীরাকে। তার জন্য এটা দ্বিতীয় বিয়ে হলেও এভাবে বরবেশে বিয়েটা এবারই প্রথম। সবার সামনে মীরার সাথে চোখাচোখি হলে যদি মীরা অস্বস্তিতে পড়ে! তাই নিরবে এসে পাশে বসেছে। ফ্রিশা ওদের মাঝে বসে বলে,

“বাবা, দেখো। ফেইরিমাম্মামকে কত সুন্দর লাগছে। একদম কুইন কুইন। তুমি কিং, ফেইরিমাম্মাম কুইন আর আমি প্রিন্সেস।”

শেহজাদ মেয়ের দিকে একবার চেয়ে নিরব হাসে। মীরাও ফ্রিশার হাত ধরে নত মস্তকে লাজুক হাসে। সামনে দাঁড়িয়ে কুঞ্জ ওদের তিনজনের একটা সুন্দর ক্যান্ডিড ছবি ক্যাপচার করে নিয়েছে। ভাড়া করা ক্যামেরাম্যান এবার ছবি তোলার জন্য ওদেরকে নিজের ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকতে বলে। অনেক অনেক ছবি তোলা হয়। এখন মীরার বাবা রফিক তালুকদার ও ড: আকবর রেহমান কাজিকে নিয়ে স্টেজের কাছে আসে। কাজি সবকিছু লিখে ও বলে প্রথমে শেহজাদকে ‘কবুল’ বলতে বলে। শেহজাদ চোখ বন্ধ করে। অক্ষিপটে ভেসে উঠে তার প্রথমা স্ত্রীর মুখখানা। ওষ্ঠকোণে তার স্নিগ্ধ হাসি। নিঃসন্দেহে ফিওনা সুন্দরী। হবে নাই বা কেন? রাশিয়ান মা ও আমেরিকান বাবার মেয়ে সে। ভেসে উঠে ফিওনা তার বিয়ের সাজে। হালকা বেবি পিংক গাউনে। শেহজাদের কল্পনায় ফিওনা বলছে,

“মাই ইমেনস লাভ ফর ইউ উইল নেভার ইন্ড। বাট মাই লাভ ওয়ান্টস ইউ টু বি ভেরি হ্যাপি এন্ড লিভ উইথ লাভ। (তোমার প্রতি আমার অসীম ভালোবাসা কখনো শেষ হবে না। কিন্তু আমার ভালোবাসা চায় তুমি খুব সুখে থাকো এবং ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকো।)”

ফ্রিশার ডাকে চোখ খুলে শেহজাদ।
“বাবা, ‘কবুল’ বলো? হোয়াট আর ইউ থিংকিং?”

শেহজাদ মেয়ের দিকে একবার চেয়ে নিরব হাসে। মীরাও ফ্রিশার হাত ধরে নত মস্তকে লাজুক হাসে। সামনে দাঁড়িয়ে কুঞ্জ ওদের তিনজনের একটা সুন্দর ক্যান্ডিড ছবি ক্যাপচার করে নিয়েছে। ভাড়া করা ক্যামেরাম্যান এবার ছবি তোলার জন্য ওদেরকে নিজের ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকতে বলে। অনেক অনেক ছবি তোলা হয়। এখন মীরার বাবা রফিক তালুকদার ও ড: আকবর রেহমান কাজিকে নিয়ে স্টেজের কাছে আসে। কাজি সবকিছু লিখে ও বলে প্রথমে মীরাকে কবুল বলতে বললে মীরার নেত্রকোন বেয়ে দুই ফোঁটা অশ্রকণা টুপ করে তার নিজের হাতেই পড়ে। ধিমি স্বরে তিনবার ‘কবুল’ পড়ে পাশে দাঁড়ানো ছোটো ভাবিকে জড়িয়ে নিরবে অশ্রুপাত করতে থাকে। সবার মাঝে আলহামদুলিল্লাহ র*ব ওঠে।
অতঃপর শেহজাদকে ‘কবুল’ বলতে বলে। শেহজাদ চোখ বন্ধ করে। অক্ষিপটে ভেসে উঠে তার প্রথমা স্ত্রীর মুখখানা। ওষ্ঠকোণে তার স্নিগ্ধ হাসি। নিঃসন্দেহে ফিওনা সুন্দরী। হবে নাই বা কেন? রাশিয়ান মা ও আমেরিকান বাবার মেয়ে সে। ভেসে উঠে ফিওনা তার বিয়ের সাজে। হালকা বেবি পিংক গাউনে। শেহজাদের কল্পনায় ফিওনা বলছে,

“মাই ইমেনস লাভ ফর ইউ উইল নেভার ইন্ড। বাট মাই লাভ ওয়ান্টস ইউ টু বি ভেরি হ্যাপি এন্ড লিভ উইথ লাভ। (তোমার প্রতি আমার অসীম ভালোবাসা কখনো শেষ হবে না। কিন্তু আমার ভালোবাসা চায় তুমি খুব সুখে থাকো এবং ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকো।)”

ফ্রিশার ডাকে চোখ খুলে শেহজাদ।
“বাবা, ‘কবুল’ বলো? হোয়াট আর ইউ থিংকিং?”

শেহজাদ মেয়ের কৌতুহলী ও উদ্বেগী মুখাবয়ব পর্যবেক্ষণ করে মীরার দিকে তাকায়। মীরা মুদিত নয়নে নত মস্তকে বসে নিজের আঙুল খুঁটছে। দৃষ্টি স্থির রেখেই শেহজাদ ‘তিন কবুল’ বলে দেয়। অতঃপর সবার মাঝে আনন্দ ধ্বনি। মিষ্টি মুখ করাচ্ছে একে অপরকে।
তারপর মীরার কাজিনরা আয়না ও ওড়না নিয়ে আসে। আয়নাটা ফ্রিশার হাতে দেয়। অতঃপর তিনজনের মাথাে উপর ওড়না ছড়িয়ে দিয়ে একই সাথে আয়নায় মুখ দেখানোর ব্যবস্থা করে। গোলাকার আয়নায় একই সময়ে ভেসে উঠে তিনটি মুখচিত্র। ফ্রিশা উচ্ছাসিত কণ্ঠে বলে,

“কিং, কুইন এন্ড লিটল প্রিন্সেস!”

ফ্রিশার মতো বাকিরাও খুশি। ওড়না সরানোর পর হঠাৎই মীরার কর্ণকুহরে কারও অপ্রত্যাশিত ডাক বেজে ওঠে। মীরা ও শেহজাদ দুজনেই সম্মুখে তাকিয়ে দেখে বর্ণ দাঁড়ানো। বর্ণর বুকের সাথে বেল্ট দিয়ে আগলে রাখা তার ছেলে বর্ষণ ও হাতে লাল গোলাপের তোড়া। বর্ণর পেছনে তার বাবা-মা। বর্ণ এগিয়ে এসে হাসি মুখে বলে,

“বেস্ট উইশেস ফর ইউ গাইজ। অ্যাই উইল প্রে দ্যাট বোথ অফ ইউর লাইভস উইল বি ফিলড উইথ লাভ এন্ড হ্যাপিনেস। হ্যাপি ম্যারিড জার্নি।”

বর্ণ গোলাপের তোড়াটা সামনে বাড়িয়ে দেয়। মীরা ও শেহজাদ উঠে দাঁড়িয়ে একে-অপরের পানে তাকায়। অতঃপর মিষ্টি হেসে তোড়াটা নিয়ে বলে,

“থ্যাংকিউ বর্ণ। তোমার জন্যও অনেক অনেক শুভ কামনা।”

“আজ রাতেই আমার ফ্লাইট। এবার সাথে করে বাবা-মাকেও নিয়ে যাচ্ছি। কিছুদিন সেখানে থেকে আসবে। স্যার, আপনার কথা অনুযায়ী আমি বর্ষণের মায়ের সাথে কথা বলেছি। অ্যাই হোপ, সেখানে গিয়। সব সলভ হয়ে যাবে।”

শেহজাদ মুচকি হেসে বলে,
“বেস্ট অফ লাক।”

বর্ণর বাবা এসে মীরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“নিজের ছেলের কর্মকাণ্ডে আমরা খুবই লজ্জিত। মাফ করে দিও মা।”

মীরা দ্রুত বলে ওঠে,
“না না আঙ্কেল। আপনি কেন মাফ চাচ্ছেন! আমার ভাগ্যে ছিল বলেই হয়েছে। আমি এখন আর বর্ণর প্রতি অভিযোগ রাখিনি। আমি চাই ও সুখে থাকুক।”

বর্ণর মা তার ছেলের কাছ থেকে নাতিকে নিজের কোলে নিয়ে মীরাে কাছে এগিয়ে আসে। বলে,
“একবার ও-কে কোলে নিবে? দোয়া করে দিও যেন ওর মধ্যে ওর বাবার কোনো খারাপ দোষ না আসে।”

মীরা, বর্ষণকে কোলে নিলো। বর্ষণের চেহারায় তাে বাবা মুখশ্রীর ছাঁপ স্পষ্ট। জাপানি মায়ের থেকে হয়তো শুধু নাকটাই পেয়েছে। মীরা, বর্ষণে কপালে আদরের স্পর্শ এঁকে বলে,
“ভালো মানুষ হও, ভালো থেকো।”

তারপর শেহজাদও বাচ্চাটাকে কোলে নিলো। আদর করে বর্ণর কোলে দিয়ে বলল,
“ভালো থেকো।”

বর্ণ ও তার বাবা-মা বিদায় নিয়ে চলে যায়। মীরা ও শেহজাদ দুজনে একসাথে ফ্রিশাকে আগলে নিয়ে একে-অপরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে