মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া পর্ব-১৭+১৮

0
636

#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭
মীরা হালকা সাজে তৈরি। শেহজাদ ও ড: আকবর রেহমানও কিছুক্ষণ আগে এসে পৌঁছেছেন। মীরার মামা, চাচারাও এসেছেন। ফ্রিশা একটু আগেই ঘুম থেকে উঠে গেছে। এখন সে মৃদুলা, নিহান ও সিয়ামের সাথে এখন খেলছে। এদিকে মীরা নিজের ঘরে দরজা এঁটে একাকি বসে আছে। সে ভীষণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। এখনো তো ফ্রিশার সাথে কথা হয়নি। ওর ইচ্ছে, সম্মতি বুঝে উঠতে পারেনি। যদি ফ্রিশা এতে খুশি না হয় তবে? যদি ফ্রিশা রাজি না হয় সে কী করবে? ভেবে ভেবেই অস্থির হলো। তখনি দরজায় খটখট আওয়াজ হলে উঠে দরজা খুলে সে। বাহিরে তার ছোটো ভাবি দাঁড়ানো। নিধি রম্যস্বরে বলল,

“চলো ননদী। তোমার ডাক পড়েছে।”

মীরার ওষ্ঠকোণে অজান্তেই হাসি ছড়ায়। মীরা রুম থেকে সবে বেরিয়েছে আর হুট করে ফ্রিশা এসে মীরার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে। মীরা থমকায়। মাথায় হাত রাখে বাচ্চা মেয়েটার। এই মেয়েটার দ্বিতীয় মা হতে চলেছে সে? পারবে তো? যদি অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেলে? ভয় হচ্ছে তার। হঠাৎ তার হৃদয় অজানা ভয়ে ব্যকুল হলো।
ফ্রিশা মাথা হালকা উঁচু করে খিলখিল ধ্বনিতে শুধায়,

“তুমি আমার মামনি হবে ফেইরি আন্টি?”

“মামনি?”

“ইয়াহ মামনি। দাদুমনি বলেছিল তুমি আমাকে মায়ের মতো ভালোবাসবে। তুমি আমার মা হবে। আমার সাথে থাকবে। দাদুমনিও আমাকে ভালোবাসে। তাই দাদুমনিকে আমি দাদুমনি ডাকি। তোমাকেও মামনি ডাকব।”

ফ্রিশা কী বুঝে এটা বলেছে মীরা জানেনা। তবে এতে মীরার একটুও খারাপ লাগলো না। সে মুচকি হেসে বলে,
“হুম। আমি তোমার মামনি হবো, বাচ্চা। আর ইউ হ্যাপি?”

“ইয়েস। অ্যাই অ্যাম সো হ্যাপি, মামনি।”

মীরার মন শান্ত হলো। প্রশান্তি স্থান দখল করলো ব্যকুল অস্থিরতার। নিধি মুচকি হেসে শুধায়,
“তো ফ্রিশার মামনি? এবার যাওয়া যাক?”

মীরা নিরব হাসলো। অতঃপর ফ্রিশার হাত ধরে পা বাড়ালো।

ড্রয়িংরুমে সবাই কথা বলছে কিন্তু একমাত্র শেহজাদ মাথা নিচু করে বসে আছে। এইনগেজমেন্টের তারিখটা হঠাৎ করে এগিয়ে আনার মূল কারণ সে নিজেও জানেনা। রেস্টুরেন্টে মীরার সামনে বসেই তার মনে হয়েছে এবং সে ফটাফট সেটা করেও ফেলেছে। কিন্তু এখন এর কারণ সে আবিষ্কার করতে পারছে না। তবে ফ্রিশার প্রফুল্লিত মুখশ্রী দেখে মনে হয়েছে, যা হচ্ছে আর যাই হোক খারাপ হচ্ছে না। সত্য তো এটাই যে সে বিয়েটা ফ্রিশার জন্যই করছে। তার জীবনে ভালোবাসা কখোনোই বিয়ের আগে তো আসেনি।

নিধি মীরাকে এনে শেহজাদের পাশে বসালো। মীরা আবার ফ্রিশাকে নিজেদের মাঝে বসিয়েছে। ড: আকবর রেহমান বলেন,

“সবাই এখানে রয়েছে। তাহলে রিং সিরেমনি শুরু করা যাক?”

রফিক তালুকদার হালকা হেসে সম্মতি দিলেন। মিসেস শাহিদা রিং বক্সটা শেহজাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,

“শেহজাদ, এই নাও আংটি। মীরার অনামিকায় পড়িয়ে দাও।”

শেহজাদ, মিসেস শাহিদার হাত থেকে আংটির বক্সটা নিলো। আংটির দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকাতেই পাশে বসা ফ্রিশা মীরার হাত টেনে এগিয়ে এনে বলল,

“বাবা, নাও পড়াও।”

মীরা শেহজাদের দিকে তাকালো তদ্রুপ শেহজাদও। ফের দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে মীরার অনামিকায় আংটিটা পড়িয়ে দিলো। ফ্রিশা আবার বলে,
“ফেইরি আন্টি, সরি সরি। মামনি, তুমিও বাবাকে রিং পড়াও।”

শেহজাদ মেয়ের মুখে ‘মামনি’ ডাক শুনে খানিক হকচকাল। মেয়ে তার এখনি মীরাকে মায়ের দার্জা দিয়ে বসেছে। মীরাকে রিং নিধি এগিয়ে দিলো। ফ্রিশা এবার তার বাবার হাত এগিয়ে আনলো। অতঃপর মীরা নত মস্তকেই আংটি পড়িয়ে দিলো। সবাই খুব খুশি। আলহামদুলিল্লাহ পড়ছে সকলে।

———

ছাদে দাঁড়িয়ে আছে মীরা ও শেহজাদ। আঁধারে ঢাকা সুবিশাল অম্বরে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে। বাতাসেও কেমন শীতলতা। ঝড় হওয়ার আশঙ্কা আছে। নিরবতার ক্ষীণ সুতা কে*টে শেহজাদ প্রশ্ন করে,

“আর ইউ হ্যাপি?”

মীরার অবিচল দৃষ্টি সম্মুখে। সে অনড়ভাবে জবাব দেয়,
“ইয়াহ। এটলিস্ট ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।”

শেহজাদ বিস্মিত হলো। শুধালো,
“ঠকে যাওয়া মানে?”

“মানে হচ্ছে, জীবনে ঠকে যাওয়ার থেকে কষ্ট আর কিছুতে নেই।”

“এজন্যই তুমি রাদিবকে বলেছিলে, তাকে বিয়ে করার থেকে বিপত্নীক কাউকে বিয়ে করা উত্তম?”

মীরা এবার ঘাড় ঘুরালো। অন্ধকারে শেহজাদকে দেখা না গেলেও সে ভ্রুঁ কুঁচকে চেয়ে বলল,
“রাদিব আপনাকে এগুলোও বলেছে?”

“ইয়াহ।”

মীরা ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“কথাটা আমি মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলাম। অবশ্য রাদিবের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার আগেই আকবর স্যার আমাকে আপনাকে বিয়ে করা ও ফ্রিশার মা হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমি তখন দোটানায় ছিলাম। তাই সময় যেভাবে যা চাইছে সেভাবেই চলছিলাম। দেন আমি রিয়েলাইজ করলাম, আপনি অন্তত আমাকে ধোঁকা দিবেন না! সেই সাথে আমি একটা বাচ্চার মা হতে পারব। একটা বাচ্চাকে আগলে রাখতে পারব।”

“এত বিশ্বাস?”

হাসলো মীরা। ফের বলল,
“বিশ্বাস জিনিসটা না মন থেকে আসে।”

শেহজাদও হালকা হাসলো।
________

সময়ের পরিক্রমায় আরও এক সপ্তাহ চলে গেছে। সামনের শুক্রবার বিয়ের ডেইট ধার্য করা হয়েছে। সামনের সপ্তাহের জন্য মীরা ভার্সিটি থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়েছে। তাই ওই তিন দিনের ক্লাস গুলো আগেই এক্সট্রা ক্লাস হিসেবে করিয়ে নিচ্ছে। এই সপ্তাহটা তার ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যেই যাবে। স্টুডেন্টদের কুইজও নিতে হবে। মীরার কলিগ কনক ম্যাম বলেন,

“মীরা, বিয়ের আগে এত প্রেশার যে নিচ্ছো, বিয়েতে সিক হয়ে যাবে তো। আমি তো শুনলাম তুমি বৃহস্পতিবার তোমার টিউমারিক ফাংশনের দিনও ক্লাস নিবে!”

মীরা পিসি থেকে নজর হটিয়ে কনক ম্যামের দিকে একবার তাকায়। তারপর হালকা হেসে আবার কাজ করতে থাকে। মীরার আরেক কলিগ সাবিহাও সেখানে উপস্থিত। সাবিহা বলে,
“এই সময় রিল্যাক্স করতে হয়। তাহলে স্কিণে গ্লো আসে। বেশি বেশি ঘুমাতে হয়। আর তুমি কী-না এক্সট্রা প্রেশার নিচ্ছো!”

মীরা এবার পিসির সামনে থেকে চেয়ার ঘুরিয়ে বলে,
“বৃহস্পতিবার তো আমার মাত্র একটা ক্লাস। তাও সেটা সাড়ে বারোটার দিকে। ওটাকে এগিয়ে সকাল সাড়ে আটটায় এনেছি। স্টুডেন্টদের এই দিনে ক্লাস কম থাকে। তাও ওদের কয়েকজনের নাকি পরবর্তী ক্লাস দুইটার দিকে। কতোটা সময় বসে থাকবে। ওরা যে আমার জন্য এতোটা করেছে, তার জন্য আমি গ্রেটফুল। ক্লাস নিয়ে বাড়ি চলে যাব। তারপর গিয়ে শাওয়ার, নামাজ, খাওয়া শেষে ঘুম দিয়ে উঠব।”

সাবিহা অবাক হয়ে শুধায়,
“সাজবে না?”

“না। সন্ধ্যায় জাস্ট শাড়ি ও ফ্লাওয়ার অর্নামেন্ট পড়ে ছাদে চলে যাব।”

“কী বলো? ছবি উঠাবে না? সাজবে না তাতে?”

“না গো। অবশ্য রাই ও জিনিয়া এসে আমাকে না সাজিয়ে ছাড়বে না! কিন্তু পার্লার এসবে যাব না। হেবি মেইকওভার নিব না। ইভেন আমি তো ভেবেছি বিয়ের সাজেও পার্লারে যাব না!”

সাবিহা এবার মুখ বন্ধ করতেই ভুলে গেছে! সে মুখে হাত দিয়ে কনক ম্যামকে বলে,
“ম্যাম, ওর কথা শুনেছেন? কী বলছে এই মেয়ে! আমার বিয়েতে আমি যতসম্ভব বেস্ট মেইকআপ আর্টিস্টের কাছে সেজেছি। তারপরও মনে হচ্ছিলো আরেকটু সুন্দর হলে পারফেক্ট হবে।”

কনক ম্যাম হেসে বলেন,
“মীরা পুরো আমার কিয়ারার মতো। কিয়ারার হেবি মেইকওভার পছন্দই না। ওদের স্কুলের ফাংশনে যখন ডান্স করে তখন ওর ফ্রেন্ডরা একেকজন পার্লার থেকে সেজে আসে। আর কিয়ারা! এতো নরমাল সাজে যে মনে হয় এর থেকে না সাজাও ভালো। ওর মেইকআপের প্রতি এত অনীহা!”

মীরা হেসে বলে,
“আমার কিন্তু অনীহা না, ম্যাম। আমি একটু ফ্রেশ লুক চাচ্ছি। রাই ও জিনিয়াই সেটা ক্রিয়েট করে দিতে পারবে। ফাউন্ডেশনের আস্তর লাগানোর ইচ্ছে নেই। তাছাড়া যেই গরম!”

“তা ঠিক বলেছ। যতোটা সিম্পল থাকা যায়, ততোটা শান্তি লাগবে।”

সাবিহা বলে,
“আমি তোমার ফ্রেশ ব্রাইডাল লুক দেখার জন্য সো এক্সাইটেড। দেখবে আমিই সবার আগে গিয়ে বসে আছি!”

তিনজনের মধ্যে হাসির ফোয়ারা ছুটলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
ক্লাসের গ্যাপে নিজের অফিস রুমের ডেস্কে বসে কাজ করছিল মীরা। তখন পিয়ন এসে জানায়, কেউ তার সাথে দেখা করতে এসেছে। মীরা আসতে অনুমতি দিয়ে দেয়। সচরাচর এভাবে কেউ আসার অনুমতি চায় না। কে এসেছে তবে? মীরা বেশি একটা ভাবলো না। নিজের কাজে মন দেয়। দুইটা ক্লাসের কুইজের খাতা গুলো দেখে ফেলছিল। হঠাৎ তার কর্ণকুহরে বাচ্চা কণ্ঠ পৌঁছানো মাত্রই তৎক্ষণাৎ মাথা উঁচু করে তাকায়। সামনে মিসেস শাহিদা ও ফ্রিশা দাঁড়ানো। ফ্রিশার পড়নে স্কুল ইউনিফর্ম। ফ্রিশা ছুটে এসে মীরার কাছে দাঁড়ালে, মীরা আগলে নিয়ে অবাক কণ্ঠে শুধায়,

“তুমি স্কুল থেকে এখানে এসেছ, বাচ্চা?”

“ইয়েস, মামনি।”

এবার মিসেস শাহিদা মুচকি হেসে চেয়ার টেনে বসে বলেন,
“তোমার মেয়ের জোড়ালো বায়না, সে আজ তার ফেইরি আন্টি ওরফে মামনির ভার্সিটিতে যাবেই। আর ফ্রিশার জেদ মানে তো!”

মীরাও হাসে। তারপর ফ্রিশার গাল টেনে দিয়ে হাসি মুখে মিসেস শাহিদাকে বলেন,
“ওর জেদই যে আপনার দিনটা মাতিয়ে রাখে তা তো বুঝতেই পারছি।”

মিসেস শাহিদা হেসে অফিস রুমটার চারিপাশে নজর দেয়। রুমে আরও দুটো ডেস্ক আছে কিন্তু এখন এখানে তারা তিনজন বাদে কেউ রুমে নেই। মীরা পিয়নকে ডেকে চা-নাস্তার ব্যবস্থা করতে বলে সাথে ফ্রিশার জন্য ক্যান্টিন থেকে জুস ও বার্গার আনতে পাঠায়। ফ্রিশা আশেপাশে দেখে প্রশ্ন করে,

“মামনি, তোমার রুমে আর কেউ নেই কেনো? বাবার রুমে তো আরেকটা আঙ্কেল আছে।”

“আছে তো। উনারা ক্লাসে আছেন, বাচ্চা। চলে আসবেন।”

ফ্রিশার বিরামহীন প্রশ্ন,
“ফেইরি আন্টি, তোমার রেড ভালো লাগে?”

“রেড? উম.. হ্যাঁ। কেন? তোমার ভালো লাগে না?”

“লাগে কিন্তু অল্প।”

মীরার হালকা হেসে অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
“তাই? তা হঠাৎ তোমার রেডের কথা মনে পড়লো কেন?”

“জানো মামনি, কাল তোমার জন্য শাড়ি কিনেছে দাদুমনি। দাদুমনি শুধু রেড শাড়ি দেখছিল। কিন্তু আমার ভালো লাগছিল না। আমি একটা পিঙ্ক শাড়ি দেখালাম। দাদুমনি বলে, তোমার নাকি রেডটাই পছন্দ হবে।”

মীরা মিসেস শাহিদার দিকে তাকায়। মিসেস শাহিদা বলেন,
“ও আসলে এই জন্যই এসেছে। লাল বেনারসি ওর একটাও পছন্দ হচ্ছে না। হেবি ডিজাইন হলে তো আরও আগে না।”

মীরা হেসে বলে,
“তাহলে রেড বাদ। পিঙ্ক তো অনেক সুন্দর। ফ্রিশারটাই ফাইনাল।”

ফ্রিশা খুশিতে ডগমগিয়ে ওঠে। মীরাকে জড়িয়ে ধরে গালে তার আদরের বহিঃপ্রকাশ করে বলে,
“দেখেছ দাদুমনি, ফেইরি আন্টির আমারটাই পছন্দ হয়েছে।”

মিসেস শাহিদা ও মীরা একে-অপরের দিকে চেয়ে হাসে। মিসেস শাহিদা প্রশ্ন করেন,
“ফ্রিশা, তুমি তোমার মামনিকে একবার মামনি বলছ আবার ফেইরি আন্টি বলছ যে?”

“আমার কাছে ফেইরি ডাকটা ভালো লাগে। তাই দুটো মিক্স করে ডাকি।”

“তুমি তো ফেইরি মামনিও ডাকতে পারো?”

“পারব?”

প্রশ্নটা ফ্রিশা মীরাকে করলো। মীরা মাথা হেলিয়ে সায় দিলে ফ্রিশা কিঞ্চিত ভেবে বলে,
“ফেইরি মাম্মাম বলব? ইটস সো কিউট!”

ইতোমধ্যে নাস্তা চলে এসেছে। মীরা হেসে বলে,
“আচ্ছা সেসব বলবেনে। এখন খেয়ে নাও। চলো তোমাকে হাত-মুখ ধুইয়ে আনি।”

মীরা, মিসেস শাহিদা ও ফ্রিশা ওয়াশরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে আসলো। অতঃপর হাসি-কথাতে নাস্তা খেয়ে নিলো।

_______

এদিকে শেহজাদের কাছে রাদিবের নাম্বার থেকে অনবরত বানোয়াট মেসেজ আসছে। শেহজাদ শুধু দেখছে আর ভাবছে, একটা মানুষ কতোটা নিম্ন শ্রেণীর হলে এতোটা উঠেপড়ে লাগতে পারে। এবার শেহজাদ এসবের এক*শন নিতে সাইবার ক্রা*ই*ম (যদিও জানিনা) সেক্টরে যোগাযোগ করে। রাদিবের ঝামেলা কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলে।

এদিকে শেহজাদ আজ বর্ণকে ইউনিভার্সিটিতে দেখেছে। শেহজাদ তাকে দেখে স্বাভাবিক বিহেভ করলেও বর্ণ তা করেনি। কেমন একটা এড়িয়ে গেছে। শেহজাদও সেসব নিয়ে খুব একটা ভাবেনি। তার ফুফিজান তাকে জানিয়েছে, ফ্রিশাকে সাথে নিয়ে তিনি ফ্রিশার জেদে মীরার ভার্সিটি গিয়েছেন। মেয়ের জেদের কারণটাও সে বুঝে গেছে। হালকা হেসে নিজের কাজে মন দেয়। শেহজাদের ক্লাস আর আধঘণ্টা পর। আজকে সে একটা কুইজ নিবে। তার প্রশ্ন করা প্রায় শেষ। শুধু আর দুটো প্রশ্ন বাকি। এমন সময় দরজায় নক হলে সে উঠে গিয়ে লক খুলে। দেখে বর্ণ। বর্ণর চোখ-মুখে ফুটে আছে মলিনতা। শেহজাদ নিজের জায়গায় এসে বসে। বর্ণও চেয়ার টেনে বসে চুপ করে আছে। শেহজাদই প্রথমে প্রশ্ন করে,

“পিএইচডির মাঝে এলে?”

“জি স্যার।”

“কাজ শেষ? তিন বছরের তো স্কলারশিপ থাকে।” (আমার ধারনা থেকে)

“কিছুটা বাকি, স্যার। একটা কাজে এসেছিলাম। সেটা হলো না। তাই আবার চলে যাওয়ার আগে একটু ভার্সিটিতে আসলাম।”

“ওহ আচ্ছা।”

আবার দুজনেই নীরব। বর্ণ ইতস্তত করে খানিক সময় নিয়ে শুধায়,
“স্যার, আপনি নাকি আবার বিয়ে করছেন?”

“হ্যাঁ।”

“মীরা কে?”

শেহজাদ মাথা নুইয়ে হাসে। অতঃপর বলে,
“ইউ নো ইট ওয়েল, বর্ণ!”

বর্ণর সাথে শেহজাদের চোখাচোখি হয়। কেমন নিষ্প্রাণ তার আঁখিযুগল। শেহজাদ আবার বলে,
“তুমি নিজে সব নষ্ট করেছ। এখন মীরার লাইফে কী হলো তা নিয়ে না ভেবে নিজের ফিউচারে ফোকাস করো।”

“জি স্যার। থ্যাংকিউ স্যার।”

বর্ণ উঠে দাঁড়ায়। শেহজাদও উঠে দাঁড়িয়ে শুধায়,
“শুনলাম তোমার এক ছেলে আছে? আমি বলব, যদি সম্ভব হয় ছেলের মাকে ফিরিয়ে আনো। তোমাকে ভালোবাসার মানুষ শতশত আসলেও তোমার ছেলেকে ভালোবাসতে হয়তো কাউকে তুমি নিজের লাইফে নাও পেতে পারো। তোমাদের ডিভোর্স তো হয়নি?”

“না স্যার। হয়নি। সেপারেশনে আছি। আপনার কথাটা আমি ভেবে দেখব। আসি, স্যার।”

শেহজাদ মুচকি হাসে। বর্ণ সালাম দিয়ে চলে যায়। শেহজাদ চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর তাড়াহুড়ো করে নিজের কাজ শেষ করে ক্লাসে চলে যায়।

______

দেখতে দেখতে আজ বৃহস্পতিবার। মীরা সকালে ক্লাস শেষ করে বেরিয়েছে মাত্র। এদিকে রাইমা তাকে কল করেছে যাতে এয়ারপোর্ট থেকে তাকে রিসিভ করে। জীবনে প্রথমবার সে বাংলাদেশে আসছে। মীরা তাকে কতোবার বলেছে আগে আগে আসতে, কিন্তু রাইমার তো স্বভাবেই নেই সেটা। ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মীরা উবার ডেকে উঠে পড়েছে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ। ঋতুভেদে গ্রীষ্মকাল যায় যায় হলেও আদোও কি যায়! তীব্র গরমে ও ক্লান্তিতে শরীর নেতিয়ে যায় যায় অবস্থা। মীরা এই সামান্য পথেও বারকয়েক ঘুমে ঢলে পড়েছে! অবশেষে এয়ারপোর্টে পৌঁছে। এয়ারপোর্টে গিয়ে রাইমাকে খুঁজে পেতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। রাইমা ও কুঞ্জ একসাথে এসেছে। কুঞ্জ আগে একবার বাংলাদেশে এসেছিল বলে তার কিছুটা ধারনা ছিল।
অতঃপর তিনজনে উবারে বসা। ড্রাইভার সহ তিন জন মনোযোগী শ্রোতার উদ্দেশ্যে চলছে রাইমার বিরামহীন কথার ফুলঝুরি। মীরা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেছে। ঘাড়ের কাছে কম্ফি কুশন দেওয়া ছিল বলে ঘুম যেন আরও ঝেঁকে এসেছে। কুঞ্জ বলে,

“রাই, মেয়েটা টায়ার্ড। সন্ধ্যা থেকে ওকে এক্টিভ থাকতে হবে। ঘুমাক।”

“উপস সরি। কতোদিন পর সামনাসামনি দেখছিলাম তো। তাই কথাগুলো আর কন্ট্রোল রাখতে পারিনি।”

“বুঝলাম। এখন ভালো মেয়ের মতো বসে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনো। মীরার ফোনের ম্যাপ বলছে আর বেশি সময় লাগবে না।”

এমনিতে হলে রাইমা ইচ্ছে করে কথা প্যাঁচাতো। কুঞ্জর সাথে কথার ভুল ধরে সে খুব মজা পায়। এরপর যখন কুঞ্জ মাফ চায় তখন অট্টোহাসিতে ফে*টে পড়ে। কিন্তু আজ মীরার ক্লান্ত ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখে আর ইচ্ছে হলো না। নিজেও এক হাতে মীরার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

_______

বাড়ি ফিরে মীরা ফ্রেশ হয়ে, নামাজ পড়ে, খেয়ে ঘুমাতে চলে গেছে। এদিকে মলি জাহানের সাথে রাইমার বেশ সখ্যতা হয়ে গেছে। রাইমা নিজের কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে। তাতে শারমিন, নিধি সহ মীরার চাচি, ফুফি, মামি, খালারাও যোগ দিয়েছে। দুপুরের খাবার খেয়ে যেন তাদের আড্ডার আসর বসেছে।
সন্ধ্যার আধঘণ্টা আগে মীরা ঘুম থেকে উঠে দ্রুত আসরের নামাজ পড়ে নিলো। তারপরেই দরজায় অনবরত ঠকঠক আওয়াজে বুঝে গেল কে এসেছে! দরজা খুলে দেখে তার সন্দেহই সত্যি। রাইমা হাতে বড়ো একটা প্লেটে করে কয়েক ধরনের ফ্রুট কে*টে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। আম, কলা, আঙুর, ড্রা*গ*ন, লিচু, তরমুজ, জাম, আপেল ও নাশপাতি। মীরা দরজা খুলতেই প্লেটটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,

“ফিনিশ দিস।”

মীরা অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়ে,
“মানে!”

“মানে সিম্পল। লক্ষী মেয়ের মতো প্লেটের সব ফ্রুট তোকে খেতে হবে।”

মীরা হা করে রাইমার মুখের দিকে চেয়ে আছে। রাইমা ওর মুখে এক টুকরো আপেল পু*ড়ে দিয়ে মুখটা বন্ধ করে দিলো। অতঃপর বলল,
“ফ্রুটে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। তোর স্কিনের জন্য বেস্ট। দুই-তিন দিন ধরে যা যাবে! সো ফিনিস দিস। বায়!”

এই বলে রাইমা রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাহির থেকে দরজার শিটকিনি সিস্টেম দিয়ে লাগিয়ে দিলো। মীরা অলস ভঙ্গীতে ফলভর্তি প্লেটের দিকে চেয়ে আছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে