মন ফড়িং ❤ ৩৭.
নীলুফার ত্রিদেবী অদ্রির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বললেন
– আপনি চা না কফি খাবেন?
– না কিছুই লাগবেনা।
– অবশ্যই লাগবে। চা বা কফি খেয়ে নার্ভগুলোকে সতেজ করবেন। তা নাহলে এই ক্লান্ত অবস্থায় আপনার সমস্যা পুরোপুরি বলতে পারবেননা। মন চাইবে আপনার বাসায় ছুটে গিয়ে স্বামীর বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে ইচ্ছা করবে।
কথাটা বলে নীলুফার হাসতে হাসতে বললেন
– কিছু মনে করবেন না। আপনি অনেক স্বামী আদুরে।
অদ্রি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নীলুফারের দিকে তাকিয়ে আছে। নীলুফার বুঝতে পেরে বললেন
– আপনি জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছেন আমি কীভাবে বুঝলাম?
অদ্রি মাথা নাড়ালো।
– ব্যাপারটা সোজা। আমার চেম্বারে ঢোকার সময় আপনার হাজব্যেন্ড যেভাবে ধরে নিয়ে চেয়ারে এনে বসালো তাতে আমার বুঝতে সমস্যা হয়নি। আর বারবার জিজ্ঞেস করছিলো আপনাকে, খারাপ লাগছে? আমি থাকবো পাশে?
– ও পাশে থাকলে ভালো হতো।
– না। আপনার তো আগেও একবার বিয়ে হয়েছিলো তাই না?
– হ্যাঁ।
নীলুফার এসিস্ট্যান্ট লতিফকে দুই কাপ চা আনতে বলে অদ্রির দিকে মুচকি হেসে বললেন
– আপনার সমস্যাটা বলুন।
অদ্রি কিছুক্ষণ চোখ বুজে থেকে বলতে শুরু করলো
– আসলে আমি আমার প্রথম স্বামীকে দেখতে পাই।
– উনি কি মারা গেছেন?
– হ্যাঁ, প্রায় ৩-৪ বছর হয়ে গেছে উনি মারা গেছেন।
– কবে থেকে দেখতে পারছেন?
– আমার দ্বিতীয় বিয়ের পরেরদিন থেকে। বিয়ের দ্বিতীয় দিন আসলে আমরা একসাথে থাকতে শুরু করি। আমাদের বাসররাত ছিলো। রুমে ঢুকেই ওনাকে নিদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম।
– শুধু কি দাঁড়িয়ে থাকে? কোনো অঙ্গভঙ্গী বা আপনার সাথে কোনো কথাবার্তা বলে?
– বিকট ভাবে হাসে, খুবই বিশ্রী হাসি। কথাবার্তা বলতে মাঝেমধ্যে বিড়বিড় করে কিছু বলে ঠিক বুঝতে পারিনা। আর…..
নীলুফার খেয়াল করলেন অদ্রি ঘামতে শুরু করেছে। কপাল বেয়ে ঘাম টপটপ করে পরছে। এসির মধ্যে থেকেও এভাবে ঘামছে? এর অর্থ মিথ্যা বলছেনা অদ্রি।
লতিফ দুই কাপ চা রেখে যাওয়ার সময় নীলুফার বললেন
– ভাই, ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করুন তো।
লতিফ মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে চলে গেলেন।
নীলুফার চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বললেন
– চা খেয়ে নিন। আর এতো ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।
অদ্রি আমতা আমতা করে বললো
– আচ্ছা।
চায়ে চুমুক দিয়ে নীলুফার কিছু একটা ভাবছিলেন। অদ্রি ভীতস্বরে বললো
– নিদ্রকে ডাকা যাবে?
– নিদ্র?
– আমার হাজব্যান্ড।
– ওহ হ্যাঁ তাই তো। আমি চাচ্ছিলাম তার সামনে আপনার প্রথম স্বামী বিষয়ক কোনো কথা আপনি না বলুন। এর পিছনে কারণ আছে। কোনো পুরুষ বা নারী তার সঙ্গীর মুখে অন্য নারী বা পুরুষের কথা শুনতে পছন্দ করেনা। তার উপর সে যদি প্রাক্তন হয়ে থাকে তো ব্যাপারটা খারাপ দিকেও গড়ায়। আপনার অতীত সে জানতে পারে স্বাভাবিক কিন্তু বিষয়টাকে সে ইগ্নোর করতে চায়। আপনার স্বামী এমনিতেই খুব চিন্তায় আছেন। কারণ আপনি অতীতকে ছাড়তে পারছেননা। বুঝতে পারছেন আমি কেনো না করছি?
– হ্যাঁ।
নীলুফার অন্যমনস্ক হয়ে চায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। অদ্রি চা শেষ করে টেবিলের উপর কাপ রেখে দিলো।
নীলুফার বিরক্ত হয়ে বললেন
– পানি আনতে এতো সময় লাগে? কেয়ারলেস পাব্লিক। আপনি শুরু করুন।
হাতে ডায়েরি আর কলম নিয়ে কিছু একটা লিখতে শুরু করলেন নীলুফার।
– আমার প্রথম স্বামীর পুরুষত্ব ছিলোনা। আমার যখন বিয়ে হয় তখন কেবল এসএসসি পাশ করে ইন্টারে ভর্তি হয়েছি। আর তার বয়স তখন ৩৫-৪০ তো হবেই। সে তার মান রাখার জন্যই বিয়ে করেছিলেন। বাসররাত তো দূরে থাক উনি কোনোদিনও আমাকে স্পর্শ করেননি। নিদ্রের সাথে বিয়ের দ্বিতীয় দিন মূলত আমাদের বাসররাতেই প্রথম তাকে দেখি। আর সে বলছিলো – তোমাকে আমি আমার সাথে যেহেতু জড়াতে দেইনি সেহেতু অন্যের সাথেও দিবোনা।
আর একটা কথা বলেছিলো – তোমাদের মেয়ে হবে। মেয়েটা দেখতে তোমার মতো হবে। কারণ তুমি তো বেশিদিন ওদের সাথে থাকবেনা।
সেদিনের পর থেকে তাকে আমি প্রায় সবসময়ই দেখি। নিদ্র আমার কাছে আসলেই সে বিকট ভাবে হাসে। বিশ্রী সেই হাসি।
নীলুফার খেয়াল করলো অদ্রি সামনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে।
নীলুফার নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলেন
– সে কি আশেপাশেই আছেন?
অদ্রি মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বললো।
– আমার পিছনের দেয়ালে?
– হ্যাঁ।
– আচ্ছা সে তো কোনোদিন আপনাকে স্পর্শ করেননি। আপনি তার কাছে যেতেন না?
– আমার বাচ্চার খুব সখ ছিলো। আর যেহেতু সে আমার স্বামী তার কাছে যাওয়াটা স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু সে বরাবরই আমাকে ইগ্নোর করতো।
– সে কীভাবে মারা যান?
– সুইসাইড করেছিলেন।
– কারণ?
অদ্রির হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। হঠাৎ করেই মাথা ঘুরিয়ে চেয়ারের সাথে কাত হয়ে পড়ে গেলো। নীলুফার সাথে সাথেই লাফ দিয়ে উঠে এসে অদ্রিকে কোনোরকমে ধরলেন। লতিফকে ফোন করে নিদ্রকে আসতে বললেন।
নিদ্র আর নাজমুল সাহেব চেম্বারে ঢুকে অদ্রিকে ফ্লোরে পরে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেলেন।
নীলুফার বললেন
– আমি ওনাকে উঠাতে পারছিলাম না তাই ফ্লোরে পরে আছে।
নিদ্র আর নাজমুল সাহেব অদ্রিকে পাশে রাখা বেডে শুয়ে দিলেন।
নীলুফার চেম্বার থেকে বের হয়ে গেলেন। ১০ মিনিটের মাথায় মধ্যবয়সী একজন ডাক্তার সাথে নিয়ে ফিরলেন।
অদ্রিকে পাশের ক্লিনিকে ভর্তি করা হলো। নাজমুল সাহেব অদ্রির পাশে রইলেন আর নিদ্রকে ডা. নীলুফার এর কাছে পাঠালেন।
ডা. নীলুফার নিদ্রকে বললেন
– আপনার স্ত্রীর অতীত সম্পর্কে যা জানুন বলুন। ওনার কাছ থেকে তেমন কিছুই জানতে পারিনি। খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে। আর ওনার মানসিক অবস্থা খুব খারাপ।
– রোগটা ধরতে পেরেছেন?
– হ্যাঁ কিছুটা। সিজিওফ্রেনিয়া। আর আপনার স্ত্রীর মধ্যে একটা ভয় লুকিয়ে আছে। সেটা হচ্ছে মেয়ে বাচ্চা হলে উনি মারা যাবেন। এরকম কিছু একটা।
এই ভয়টাকে জয় করতে হবে। আপনাদের বাচ্চা নিতে হবে। তা নাহলে আজীবন এই ভয় আপনাদের শান্তি দিবেনা। সবসময় ভয়ে থাকবেন এই যেন কিছু হয়ে গেলো। বুঝতে পারছেন?
– জি।
– তাহলে আপনি যতটুকু জানেন ততটুকুই বলুন। আমার কিছু জানার প্রয়োজন হলে প্রশ্ন করবো।
নিদ্র ঠিক কোথা থেকে শুরু করবে ভেবে পাচ্ছেনা।
চলবে……!
© Maria Kabir
nice next kobe deben …….
àato late keno post koren jeno vulei jai…. golpo take………..all the best plssss next post very soon …