মন ফড়িং ❤ ২০.

3
3676
মন ফড়িং ❤
২০.
আসলেই কি ভালোবাসে?
নাকি শুধুমাত্র দেহের প্রতি চাহিদা? নিদ্র কাছে আসলেই ঠোঁটে, গলায়, কোমড়ে স্পর্শ করবে। এমন কেনো?
 কাছে বসে তো গায়ে হাত না দিয়েও তো ভালোবাসা যায়।
 তাহলে ও কেনো এমন? সকাল টাই তার নষ্ট করে দিয়ে গেলো। একটু না করাতেই রাগ করে অমনি চলে গেলো। পাশে একটু বসলো না!
রুমে গিয়ে কী করছে কে জানে! সারারাত ঘুমায়নি সেটা ওর চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চোখ মুখে চিন্তার গভীর ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো। একজন মানুষের কখন রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়?
 খুব বড় ধরনের চিন্তাভাবনা নিয়ে যখন ব্যস্ত থাকে, তখন। আমার জন্যই ও চিন্তিত ছিলো, আর আমিই কিনা এরকম বাজে ব্যবহার করলাম?
সারারাতের চিন্তার পর একটু স্বস্তি খোঁজার জন্যই হয়তোবা তার এতো কাছে এসেছিলো। আর সে কিনা এমন ভাবে….
আর এমন না যে নিজের কাছে ওর এই ধরনের পাগলামি খারাপ লাগে।
অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম হয়। অজানা অচেনা অনুভূতি তড়িৎ গতিতে তার পুরো শরীরে বয়ে যায়।
ওর নিশ্বাস আর শরীরের গন্ধটা আরও বেশি অস্থিরতা তৈরি করে। অস্থিরতা টাই সহ্য হয়না তার।
যেখানে সে ভালোবাসে কিনা শিওর না সেখানে এভাবে স্পর্শ করতে দেয়াটা ঠিক না।
মাথার বাপ দিকে খুব ক্ষীণ একটা চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়েছে। ব্যথাটা বেড়ে যাবে অদ্রির মনে হলো।
অদ্রি তাকে এভাবে অপমান করতে পারে ভাবতেও পারছেনা নিদ্র। ভালোবাসলে স্পর্শ করবে – এটাই স্বাভাবিক। পুরো এক রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে সে। অদ্রি কি সেটা জানে? কতোটা চিন্তার আর কষ্টের একটা রাত ছিলো সে ভাবতেও পারে? পুরো রাত তো নাক ডেকে ঘুমিয়েছে, সে কি বুঝবে! কিছুই না।
বাস্তবতা অনেক কঠিন। ভালোবাসলেই তাকে কাছে পাওয়া যায়না।
নিদ্রের চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এমন ভাবে রিজেক্ট হতে হবে ভাবতেই পারছেনা সে।
এখনই সবকিছু ছেড়ে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে তার।
কার জন্য এতো দূর থেকে সে ছুটে এসেছে সে?
এই মানুষটার জন্য?
ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে গোসল সেরে নিলো নিদ্র। ১ ঘণ্টা যাবত গোসল করলো নিদ্র। কিছুই ভালো লাগছেনা, অসহ্য।
সকালের নাস্তা করে ব্যথার মেডিসিন খাওয়ার পরে কিছুটা ভালো লাগতে শুরু করলো। রিতা তাকে বিছানা থেকে নামতে সাহায্য করাতে একটু সুবিধাই হলো।
নিদ্র কি নাস্তা করেছে নাকি রাগ করে আছে? রিতাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা যাবেনা। সন্দেহ জাগলে সমস্যা।
– খালা মনি?
– হ্যাঁ বলো।
– সবার নাস্তা করা শেষ?
– হ্যাঁ।
– আপনি করেছেন?
– করবো।
– সবারই তো শেষ?
রিতার মনে পড়লো ওই নিদ্র নামের ছেলেটাকে সে নিচে নামতেই দেখেনি।
– না একজন নাস্তা করেনি। নিদ্র নামের ছেলেটা আজকে নিচেই নামে নাই। খুব অদ্ভুত ছেলে। গতকাল রাতে তোমার অজ্ঞান হওয়ার পরে ওই ছেলেই কোলে নিয়ে বিছানা অবদি নিয়ে এসেছিলো।
ছেলেটার গেঞ্জিতে রক্ত মেখে অবস্থা খারাপ ছিলো।
– আপনি ট্রে তে করে খাবার নিয়ে আসবেন?
– আমিই তাহলে দিয়ে আসবো?
– না, আমিই পারবো। এক হাতে ধরতে পারবো।
অদ্রি বাম হাতে ট্রে নিয়ে নিদ্রের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক বার নক করার পর নিদ্র দরজা খুলে দিলো।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো
– কিছু বলবেন?
– আমাকে ভিতরে আসতে তো দিবেন?
নিদ্র দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো।
– ট্রে টা তো ধরবেন।
নিদ্র ট্রে নিয়ে ছোটো টেবিলের উপর রেখে দিলো। অদ্রি বললো
– দরজাটা আটকান। আপনার সাথে আমার কথা আছে।
– না, এভাবেই বলুন। আমি আপনার কথার অমান্য করতে চাচ্ছি না।
– দরজা আটকান। এটাও আমার কথা।
অগ্যতা নিদ্রকে দরজা আটকে দিতে হলো।
বিছানার উপর আয়েশ করে বসে অদ্রি বললো
– নাস্তা কেনো করেননি?
নিদ্র দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বললো
– ঘুমাচ্ছিলাম।
– আপনার চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছেনা।
– কী বলার জন্য এসেছেন বলে চলে যান।
অদ্রির কিছুটা খারাপ লাগলো কথাটা শুনে। আসলে দোষ তো তার নিজেরই। না করারও একটা সিস্টেম আছে।
– নাস্তা এনেছি করে নেন।
– আপনি যান আমি করে নিবো।
– আপনি আমার সামনে নাস্তা করবেন। তারপর আমি যাবো।
নিদ্র রেগে গিয়ে বললো
– আমি সবসময় কেনো আপনার কথা শুনবো? আপনি তো কখনো আমার কথা শুনেন না।
নিদ্রের কাছে গিয়ে অদ্রি বললো
– আচ্ছা, এখন থেকে শুনবো। আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো?
নিদ্র চাপাস্বরে বললো
– রাগবো না কেনো? সারারাত আপনার চিন্তায় ঘুমাতে পারিনি। আপনাকে ভালোবাসি বলেই চুমু দেই, আদর করি, স্পর্শ করি। ভালোবাসলে তাকে কাছে পেতে প্রত্যেক পুরুষেরই ইচ্ছা করে। আমি একা নই, যার সাথেই রিলেশনে যাবেন সেই চাইবে।
তাহলে আমার ক্ষেত্রে কেনো এতো নিয়ম?
নিদ্রের বুকের উপর বাম হাত রেখে অদ্রি খুব আস্তে আস্তে বললো
– sorry আর হবেনা এমন। আপনি আমাকে যখন ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা স্পর্শ করতে পারেন।
– আমি মোটেও আপনাকে স্পর্শ করবো না। কোনোদিনও না।
অদ্রির সামনে একটাই উপায় – নিজ থেকে এগিয়ে যাওয়া। কারণ সে নিদ্রকে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে দেয়া যাবেনা। এমনও হতে পারে তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে।
নিদ্রের চিবুকে চুমু দিয়ে অদ্রি বললো
– সরি বললাম তো!
নিদ্র অন্যদিকে তাকিয়ে রাগে ফুসছে।
নিদ্রকে জড়িয়ে ধরলো এমনভাবে যে মাঝে এক চুল পরিমাণও ফাঁক রইলো না।
নিদ্র রাগীস্বরে বললো
– হয়েছে আর ঢং করতে হবেনা। নিজেই না করে নিজেই আবার আসে।
নিদ্রের চিবুকে চুমু দিয়ে বললো
– কী করবো বলুন? বড্ড ভালোবাসি যে।
– ছাই।
– না, আপনি একটা রত্ন। দেখুন তো কী পরিমাণ সুন্দর আপনি! আপনার সংস্পর্শ কোন মেয়ে চাইবেনা?
– অন্য কেউ চাইলেও। আপনি চান না।
– আচ্ছা রাগ করা থামান তো। এবার আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন তো। সকালে যেভাবে চুমু খেয়েছিলেন ঠিক তার চেয়ে দ্বিগুণ গভীর চুমু দিন তো। যেন আমি আমার খেই হারিয়ে ফেলি আপনার মাঝে। প্লিজ নিদ্র, না করবেন না।
নিদ্র দুই হাতে অদ্রির মুখ তুলে নিয়ে প্রথমে কপালে চুমু দিলো আলতো করে। তারপর গালে পাগলের মতো চুমু খেলো। অদ্রি অস্থিরতায় নিজেকে সামলে নিতে পারছিলোনা। মনে হচ্ছে একবারেই মিশে যেতে নিদ্রের সাথে।
নিদ্র আলতো করে অদ্রির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে চুমু খেতে শুরু করলো। চুমুর তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। অদ্রি পুরোপুরি ভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেললো।
প্রতিটা চুমুতে ভালোবাসা, অস্থিরতা, অভিমান মিশে আছে নিদ্রের। নিদ্র যে কতোটা অস্থির হয়ে আছে তার প্রতিটি চুমুতে প্রকাশ পাচ্ছে।
অদ্রির বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়েছে। শেষ হবে কবে কে জানে???
চলবে…..!
© Maria Kabir

 

3 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে