মন ফড়িং ❤
১৮.
ডান হাতে ব্যথা পেয়ে অদ্রি চাপা স্বরে উঁহু বলে উঠলো। চোখ মুখে স্পষ্ট ব্যথার ছাপ। নিদ্র অদ্রির ডান হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো, ফোসকা টা গলে গেছে। মনে হয় তার হাতেই লেগে।
– স্যরি, আমি খেয়াল করিনি।
– স্যরি বলার কিছুই হয়নি। দোষ আমারই ছিলো।
ব্যথায় অদ্রির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করলো।
– এই প্লিজ কাঁদে না। আমার কাছে মনে হয় বার্ন ক্রিম আছে। ক্ষত স্থানে লাগালে কিছুটা ভালো লাগবে।
অদ্রি আপনি বিছানার উপর বসুন। আমার ব্যাগে খুঁজে দেখতে হবে। নিদ্র বার্ন ক্রিম খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
অদ্রি হাত নাড়াতেও পারছেনা। অসহ্যকর লাগছে। একটু আগেও সুন্দর সময় পার করছিলো আর এখন!
– বার্ন ক্রিমে কাজ হবে কিনা জানিনা। ফোসকা ফেটে গেছে।
ক্রিম দেয়ার সময় অদ্রি হাসতে হাসতে বললো
– এভাবে মানে এতো আস্তে আস্তে ক্রিম দিয়ে দিলে কোনোদিনও শেষ হবেনা দেয়া। আর এভাবে কেউ ক্রিম দিয়ে দেয়? ক্ষত স্থানে লাগছেই না। আশেপাশেই ঘোরা ফেড়া চলছে আরকি।
নিদ্র তোতলাতে লাগলো।
– ভয় লাগছে, যদি আপনি ব্যথা পেয়ে বসেন।
– ব্যথা অলরেডি পাচ্ছি। তাই দয়া করে একটু দ্রুত কাজ সারুন।
ক্রিম দেয়া শেষ হলে নিদ্র বললো
– আপনি তো দেখছি শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছেন দিনদিন। খাওয়া দাওয়া কি করেন না?
ওড়না ঠিক করে অদ্রি বললো
– করি বৈকি।
– আমার উপর রাগ হচ্ছে না আপনার?
– কেনো?
– না মানে ইয়ে আপনাকে এভাবে জাপটে ধরে…… মানে….
নিদ্রের ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে অদ্রি বললো
– রাগ না অভিমান ছিলো। এখন নেই, উবে গেছে!
নিদ্র অদ্রির গলায় গভীর চুমু দিলো। তারপর অদ্রির ঠোঁটে ঠোঁট চেপে তীব্রভাবে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। আনাড়ি ভাবে চুমু এঁকে দিয়ে নিদ্র বললো
– আপনার আরো কাছে আসতে পারবো আমি?
নিদ্রের গলায় গভীর চুমু দিয়ে বললো
– কেনো নয়? আমি আপনারই অপেক্ষায় ছিলাম।
– চলুন বিয়ে করে ফেলি।
– আপনার পরিবার রাজি হবে? আমি তো বিধবা মেয়ে।
অদ্রির ঘাড়ে মাথা রেখে নিদ্র বললো
– আপনার এই ডায়লগ দেয়া কবে বন্ধ হবে?
– এটা তো কোনো ডায়লগ না। আমার জীবনের গল্প।
অদ্রির ঘাড়ে নিদ্র নাক ঘষে বললো
– অতীত ছিলো আর কিছুই না। বর্তমানটা কেমন লাগছে?
– স্বপ্নের মতো ঠিক। মনে হচ্ছে একটা ঘোরের মধ্যে আছি। আপনার আনাড়ি চুমুতে মনে হচ্ছিল আমি আমাকেই হারিয়ে ফেলছি। একটু একটু করে হারাচ্ছিলাম নিজেকে।
– পুরোটা হারাতে চান?
কথাটা বলে নিদ্র অদ্রির ঠোঁটে গভীর চুমু দিলো।
– নিদ্র, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আর না প্লিজ।
– বাঁধ যেহেতু একবার ভেঙেই গেছে তখন নিজেকে আটকাই কীভাবে বলুন?
রিতা আসমা জামানের গল্পে বিরক্ত বোধ করছেন। কিছুই বলতে পারছেন না। বয়স্ক মানুষ তাই চুপচাপ সহ্য করছেন। এদিকে অদ্রি সেই কখন তার রুমে ঢুকেছে এখনো বের হয়নি। মেয়েটার অসুস্থতা বাড়লো কিনা কে জানে?
ডাকতেও সাহস পাচ্ছেন না। নিদ্র নামের ছেলেটার জন্য অদ্রি তার উপর রেগে আছে।
রশীদ সাহেব আগামীকাল আসলেই, তাকে দিয়ে নিদ্রকে ওই রুম থেকে বের করতে হবে।
– রিতা, শুটকি মাছ আছে নাকি?
– রান্না করাটা শেষ।
– কাঁচাটা তো আছে?
– আছে।
– তাহলে ভর্তা করো। বেশি করে ঝাল দিয়ে।
রিতা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে থালা বাসন ধুতে লাগলো।
লিলি বেশ মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে। রঙিন ভাইজান এসেছে, সেও তো রাতে খাবে। রান্না ভালো না হলে, ঠিকঠাক মতো খেতে পারবেনা। বেচারার কষ্ট হবে। ঝাল, নুন, তেল সব ঠিকঠাক মতো হতে হবে।
রঙিন ভাইজান আগের থেকে বেশি সুন্দর হয়ে গেছেন।
একজন মানুষ এতো সুন্দর কীভাবে হয়?
প্রায়ই ফরেইনার দের মতো দেখতে। রিতার জন্য সে সাজগোজ টাও করতে পারেনি।
লাল রঙের জামাটাও পড়ার সুযোগ পায়নি সে। চা দেয়ার অজুহাতে রঙিন ভাইজানের সাথে কথা বলা যেতো। এই রিতাটার জন্য সব মাটি হয়ে গেলো।
সে কি দেখতে খুব খারাপ নাকি? অন্ততপক্ষে অদ্রির চেয়ে সুন্দরী সে। ওরকম রোগা টাইপের চেহারার মেয়েকেই কাজের লোক হিসাবে মানায়, তাকে না।
– আমার ঘুম আসতে চাচ্ছে। তবে একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছে।
অদ্রিকে প্রশ্নটা করলো নিদ্র।
– শর্তটা কী?
– চুলে বিলি কেটে দিবেন?
– এখন না।
– কেনো কেনো?
– এখন ঘুমানো যাবেনা। রান্না হচ্ছে তারপর খাবেন। তারপর ঘুম।
– ম্যাডাম নিজে কি এরকম নিয়ম মেনে চলেন?
– আমার কথা বাদ দিন। আমি তো আমিই।
অদ্রির চুলে আঙুল চালিয়ে দিয়ে নিদ্র বললো
– এখন আপনি আর আমি মিলে আমরা হয়ে গেছি।
– আপনার তো লুসি আছে। কীভাবে সম্ভব শুনি?
– O my God! আমিই তো ওকে ভুলে গেছিলাম। আপনি কীভাবে মনে রাখলেন?
– আপনিই তো বলেছিলেন, ” আমার লুসি আছে। ” সে থাকতে আমি আর আপনি কীভাবে আমরা হই?
– ও কিছুই ছিলোনা। মোহ ছিলো ক্ষণিকের।
– আমিও কি ক্ষণিকের মোহ আপনার কাছে? আমার চেয়েও বেটার কাউকে পেলে আমিও মোহ হয়ে যাবো?
– আপনি আমার কাছে কী? এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। আপনার প্রতি আমার ফিলিংসটাও আমি ব্যাখ্যা করতে পারবো না।
লুসি আমার মায়ের নার্স ছিলো। সেই থেকে কথাবার্তা, পরিচয়। লুসিকে আমি ফিল করতে পারিনা কিন্তু আমি কারণে অকারণে আপনাকে ফিল করতে পারি। এইযে দেখুন না, আপনাকে কাছে পাওয়ার সাথে সাথেই নিজের উপরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি।
বিয়ের পূর্বে চুমু দেয়া, স্পর্শ করা হারাম কিন্তু আমি পারছিনা। এজন্যই বলছি, চলুন বিয়ে করে ফেলি।
– নিদ্র!
– বলুন।
– ভালোবাসি আপনাকে!
– আমারও একই অবস্থা!
চলবে…..!
© Maria Kabir
? Wow