মন ফড়িং ❤ ১৩. 

0
3102
মন ফড়িং ❤
১৩.
অদ্রি ধীরে ধীরে এগোতে লাগলো। ঘুম ঘুম চোখে সবকিছুই কেমন ঝাপসা লাগছে। নিদ্রের রুমের দিকে যতো এগোচ্ছে ততই কেউ একজনকে বেশ ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে। কেউ একজন আর কেউই না লিলি!
এতো রাতে লিলিকে এখানে দেখে অবাক হয়েই অদ্রি জিজ্ঞেস করলো
– লিলি এখানে এতো রাতে কী করছিস?
লিলি ভাবতেই পারেনি অদ্রির এইসময় এখানে উপস্থিত হবে। কিছু একটা না বললেই নয়। লিলি বিরক্তি নিয়ে বললো
– এমনি।
– এখানকার লাইটটা জ্বালাস নেই কেনো?
– ইচ্ছে হয়নি তাই!
– এই তোর কী হয়েছে রে? মুখে মুখে কথা বলার সাহস পাস কোথা থেকে?
– তুমি প্রশ্ন করবা আর আমি উত্তর দিলেই দোষ!
– ভদ্রভাবে উত্তর দেয়া যায়না?
লিলি দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
– তুমি কোথাকার কী যে, তোমার সাথে ভদ্র ব্যবহার করতে হবে?
রাগে শরীর কাঁপছে অদ্রির। এতটুকু মেয়ে তাকে কী বললো? সেদিনই মেয়েটাকে এক আবর্জনা থেকে তুলে এনে নিজের ছোটো বোনের মতো রেখেছে। আর সে কী না!
লিলির ডান গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। চিৎকার করে বলতে শুরু করলো
– আবর্জনা, আবর্জনাই থাকে!
ছাদ থেকে অদ্রির চিৎকার শুনে রিতা প্রায় দৌঁড়ে নেমে এলেন।
কিছু বুঝে ওঠার আগে অদ্রি রিতাকে বললো
– লিলি যেন আমার সামনে না আসে। বেয়াদব মেয়ে, কথাবার্তার কোনো শ্রী নেই।
রিতা লিলিকে বললেন
– যাও নিজের রুমে যাও।
লিলি চলে যাওয়ার পর রিতা অদ্রিকে বললেন
– এতো রাতে ঘুম ভাঙলো কীভাবে?
অদ্রি মাথার ঘোমটা নামিয়ে দিয়ে বললো
– খুব তৃষ্ণা লেগেছিলো। রুমে পানিও নাই তাই ভাবলাম নিচে নেমে পানি খেয়ে আসি। আর তখনই দেখলাম লিলি এখানে দাঁড়িয়ে আছে….
রিতা অদ্রির কথার মাঝেই বললেন
– আমি নিজ হাতে তোমার রুমে খাবার পানি আর গ্লাস রেখে এসেছি।
– না তো, আমি পেলাম না তো।
– আচ্ছা চলো তোমার রুমে চলো। তুমি শোবে আর আমি খাবার পানি নিয়ে আসি।
রিতা অদ্রির রুমে ঢুকে লাইট জ্বালিয়ে দেখলেন বিছানার পাশে ছোটো টেবিলে খাবার পানি আর গ্লাস রাখা।
অদ্রিরও ছোটো টেবিলের উপর চোখ আটকে গেলো।কিছুক্ষণ আগেও তো এখানে পানি ছিলো না তাহলে কীভাবে আসলো?
রিতা অদ্রিকে বললেন
– কাঁচা ঘুম ভেঙেছিলো তো তাই হয়তোবা দেখতে পাওনি।
আর লিলির বিষয় নিতে এতো চিন্তা করার কিছুই নাই। বেশি রকম বেয়াদবি করলে ওর বাসায় ফেরত পাঠিয়ে দিলেই হবে।
তিন গ্লাস পানি শেষ করার পরও অদ্রির মনে হচ্ছে তার তৃষ্ণা মেটেনি।
আর পানি খেতে হবেনা তোমাকে। তুমি এখন ঘুমাও – রিতা কথাটা বলে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো। অদ্রি বললো
– ছাদের দরজা তালা দেয়া হয়েছে?
রিতা বলল
– না, আমি আজকে ওখানেই ঘুমাবো।
– ভয় লাগবেনা?
রিতা হেসে বললেন
– তুমি ঘুমাও তো।
লিলি বিছানার উপর শুয়ে কাঁদছে। অদ্রির তাকে এভাবে থাপ্পড় মারাটা ঠিক হয়নি। সে দেখে নেবে!
এই বাসায় সে কাজের বিনিময়ে থেকেছে, বিনে পয়সায় না! দু’দিন যাবত রিতা কোথাকার কে এসে তার জায়গা নিয়ে নিবে? এতো সহজ নাকি!
অদ্রির মতো একজন মেয়ের সাহস কীভাবে হয় এসব তাকে বলার?
অদ্রির ঘুম আসছে কিন্তু ঘুমাতে ইচ্ছা করছে না। কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে আমার তাকে নিয়ে। যদিও সে আমার কিনা জানা নেই।হবেও কিনা সেই নিশ্চয়তা নেই। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সবারই জানার ইচ্ছা থাকে কিন্তু ক’জনই বা জানতে পারে। যদি কোনো ভাবে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানা যেত।
 বার্গারে বড়সড় কামরায় দিয়ে চিবুতে চিবুতে নিদ্র বললো
– আমার টাকা জমানো হয়ে গেছে। এখন তারিখ বলো টিকিট কাটবো।
আসমা জামান পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললেন
– তোর বাবা দুটো টিকিট গতরাতে আমাকে দিলো।
নিদ্র বেশ অবাকই হলো।
– তাই নাকি? দেখো তো আসল টিকিট কিনা? থাকে সবসময় নেশার ঘোরে তার আবার কোনো ঠিক আছে?
– আসলই তো মনে হলো।
– দেখলে না রুমের মধ্যে উল্টো করে বই পড়ছিলো।
– তা তো দেখলামই। তোর বাবাকে সাথে নিয়ে গেলে কেমন হয়?
– খুবই বাজে হবে। পুরো আনন্দটাকে বিসর্জন দিয়ে দিতে হবে।
নাজমুল সাহেব ছেলের কথা উত্তরে বললেন
– no my son, you are wrong.
– বাবা খেতে বসো।
আসমা জামান প্লেটে বার্গার আর স্যুপের বাটিতে স্যুপ দিয়ে বললেন
– নিদ্র ঠিকই বলেছে। তোর আজকাল যে,অবস্থা তাতে রাস্তায় ন্যাংটা হয়ে বের হওয়াটাই বাকি আছে!
নিদ্র হাসতে হাসতে বললো
– তা তুমি ঠিকই বলেছো।
নাজমুল সাহেব চাপা স্বরে বললেন
– ছাড়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি কই?
– বাবা মিথ্যা বলো না। তুমি মোটেও ছাড়ার চেষ্টা করছো না।
– তাহলে তোর চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট করলাম।
– কোন চ্যালেঞ্জ বাবা?
– এইযে তোদের সাথে যাওয়ার।
– তুমি সত্যি কোনো ঝামেলা বাঁধাবে না?
– যদি বাঁধাই তাহলে আমাকে ফেরত পাঠায় দিবি। ব্যস ঝামেলা শেষ।
নাজমুল সাহেব মনে মনে নিজেকে বাহবা দিলেন। কতো সুন্দর করে গুছিয়ে মিথ্যে কথাটা বললেন তিনি কিন্তু কেউই ধরতে পারলো না। আসলে তিনি তিনটি টিকিট কিনেছেন। সাথে অনেক কেনাকাটাও করেছেন। এতো দিন পর দেশে যাচ্ছে খালি হাতে যাওয়া যায় নাকি?
বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিদ্রের হঠাৎ মনে হলো অনেক দিন পর তার বুকের উপর থাকা বোঝাটা কিছুটা হালকা হয়েছে। তার খরচ কিছুটা হলেও কমবে বাবা সাথে গেলে। মোবাইলের স্ক্রিনে অদ্রির ছবিটাতে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো নিদ্রের। সুখের কান্না কিছুটা অন্যরকম হয়। যদিও পুরুষদের কাঁদতে নেই।
যদি ও রাজি না হয় তখন সে কী করবে?
ভাবতেও ভয় হয়, যে ও ফিরিয়ে দিতে পারে! যদি দেয় তখন…..?
নেগেটিভ চিন্তা করে লাভ নেই। আপাতত পজিটিভ কিছু ভেবে ভালো থাকা যাক।
তাকে কাছে পাওয়ার মাঝে আত্মতৃপ্তি থাকবে। অদ্রির ঠোঁটে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে ওর দেহের শিহরণ দেখার মাঝে, উপভোগ করার মাঝে আনন্দটাই অন্যরকম। ঠোঁটে গভীরভাবে চুমু এঁকে দেয়ার আহবান টাও অসম্ভব সুন্দর অনূভুতি জাগাবে।অদ্রির দেহের প্রতিটি শিহরণ দেখার অদম্য ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত সে।
নিশ্বাসের সাথে অদ্রির দেহের অধিকারটাও যে তার চাই !
চলবে…..!
© Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে