মন ফড়িং ♥ ৫.

0
3163
মন ফড়িং ♥ ৫.
মন ফড়িং ♥ মন ফড়িং ♥ ৫.
মন ফড়িং ♥
৫.
খোলা চুলে বিলি কাটতে কাটতে নিদ্র বলল
– না খেয়ে থাকতে খুব ভালো লাগে আপনার?
অদ্রি কোনো উত্তর না দিয়ে চোখ বুজে থাকে। নিদ্র, কপালে ডান হাতের উল্টো পাশ রেখে একটু চাপাস্বরে বলল
– ঘুমানোর অভিনয় করাটা ঠিক হচ্ছেনা। আপনি অভিনয়ে মোটেও পটু নন।
অদ্রি এখনও চুপ।
নিদ্র কানের কাছে ফিসফিস করে বলল
– আপনার চুলে বিলি কাটছি, আপনার বিরক্তিকর লাগছেনা?
অদ্রি একশব্দে বলল
– না।
– কেনো?
– কারণ শুনতে হবে না!
নিদ্র চুলের মাঝ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল
– তাহলে আমিও আর আপনার চুলে বিলি কাটবোনা।
অদ্রি চোখ খুলে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো। ছেলেটা মিটিমিটি হাসছে। চোখের কোণে হাসি লেগেই আছে।নিদ্র দেখতে এতো সুন্দর কেনো? বেশিক্ষণ তাকাতেও ভয় লাগে। যদি নিজেরই নজর লেগে যায়?
– নিদ্র !
নিদ্র অন্যদিকে তাকিয়ে বলল
– বলুন।
– আপনাকে ছুঁয়ে দেখতে পারি?
নিদ্র বলল
– না।
– কেনো?
– কারণ শুনতে হবে না।
অদ্রি খুব জোড়ে হাসতে হাসতে শুরু করলো।
হাসি থামিয়ে বলল
– আপনি বাচ্চাদের মতো পুরোটাই। আসলে মাথাটা কেমন ভার হয়ে ছিলো। আপনার বিলি কাটাতে বেশ ভালো লাগছিলো।
– মাথাটা ভার কেনো হয়েছিল?
– বমি হয়েছিলো সকালের দিকে। তখন থেকে মাথাটা ভার।
– কারণ টা কি আমি বলবো?
– না, আমিই বলি। রাতে খাইনি, সকালেও বেশ দেরি করে চা খেয়েছি। তারপর হুট করে গা গুলিয়ে বমি….
– আমাকে ছুঁয়ে দেখতে চাইলেন?
নিদ্র, অদ্রির বিছানার বালিশের পাশে বসে আছে। অদ্রি বালিশে আধশোয়া অবস্থায় হেলান দিয়ে আছে। আধশোয়া অবস্থা ছেড়ে উঠে বসলো। কিন্তু নিদ্রের প্রশ্নের উত্তর দিলোনা।
নিদ্র বলল
– এতো অভিমান কি ভালো?
– আপনি অভিমানের কিছু বুঝেন?
– বুঝি কিনা জানিনা, তবে পাশের মেয়েটি যে অভিমানে জমে আছে সেটা বুঝি।
অদ্রি, I am very sorry! আর কখনোই এমন হবেনা। সত্যি বলছি আমি।
অদ্রির কাছে, খুব কাছে যাওয়ার সাহসটা এখনো জমাতে পারেনি। কাছে গিয়ে হুট করে জড়িয়ে ধরলে বা হাতটা চেপে ধরে চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে বা দূরে কোথাও তাকে নিয়ে হারিয়ে যেতে পারলে অভিমানের কালো মেঘটা দূর হতো আমাদের মাঝের। তার সাথে প্রত্যেকটা মূহূর্ত্ব কে অনুভব করা যেতো। তার বিষন্নতার সেই চেহারা যদি সারাজীবনের জন্য মুছে দেয়া যেত তাহলে তার সাদামাটা মুখের চাহনিতে আর বিষন্নতা লুকিয়ে থাকতো না। তার চোখ দুটোতে আর কষ্টের জল থাকতোনা। তার চোখ দুটোতে আমার দেয়া স্বপ্নের রঙ থাকতো কানায় কানায় ভরে।
হ্যাঁ, ভালোবাসি কিন্তু তার অনুমতি ছাড়া তাকে ছুঁয়ে দেখার দুঃসাহস আমি করতে পারিনা।
অদ্রি আমাকে ছুঁয়ে দেখতে চায়, কতটুকুইবা ছোবে? হাতটাকে আলতো স্পর্শ করবে। বিদ্যুতের মতো একটা কঠিন শকও আমাদের লাগতে পারে। উষ্ণ স্পর্শ পাবার লোভ কে সামলাতে পারে? তাও ভালোবাসার সেই মানুষটির কাছ থেকে!
অদ্রি আস্তে আস্তে নিদ্রের কাছে এসে সত্যিই হাতটি আলতোভাবে  ছুঁয়ে দিলো।
কয়েক সেকেন্ডের মাথায় হাতটা সরিয়ে নিলো।
নিদ্র ঠাট্টার সুরে বলল
– ব্যস এটুকু? হাত কীভাবে ধরতে হয় জানেন না?
খপ করে অদ্রির হাত ধরে ফেলল নিদ্র। অদ্রি বিরোধিতা না করে চুপচাপ বসে বসে দেখতে লাগলো নিদ্রের চঞ্চলতা।
অদ্রির হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিদ্র তার হাতের আঙ্গুলগুলো দিয়ে, হাতটাকে শক্ত করে চেপে ধরলো।
– দেখেছেন ম্যাডাম এভাবে হাত ধরতে হয়, যাতে ছেড়ে না যেতে পারে।
– হাতটাকে এখন ছাড়ুন, আমি ঘুমাবো।
– অনেক ঘুমিয়েছেন এখন গল্প হবে শুধু।
– কই অনেক ঘুমালাম? মাত্র একটু আগেই ঘুমিয়েছি।
নিদ্র অদ্রির খোলা এলোমেলো চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো।
– অদ্রি
– হুম
– আমার হবে?
– তাছাড়া কার আমি?
– খুব কাছের থেকে হবে? তোমার প্রত্যেকটা নিশ্বাসের সাক্ষী আমাকে করবে? তোমার প্রত্যেকটা চোখের পলকের সঙ্গী আমায় করবে? তোমার নিশ্বাসে আমার নিশ্বাস ভারী করতে দিবে?
তুমি বলছি রাগ হচ্ছেনা?
অদ্রি ভাবলো নিদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলবে।
অদ্রি, নিদ্রের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো নিদ্রের চেহারা পরিবর্তন হচ্ছে। ধীরে ধীরে সেই চেহারা চেনা কারো রূপ নিচ্ছে।
অদ্রি চিৎকার করে হাতটা ছাড়িয়ে দূরে সরে গেলো। সামনে যে বসে আছে সে নিদ্র না তার মৃত স্বামী ইখলাস সাহেব।
ইখলাস সাহেব তার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
চলবে……!
©  Maria Kabir