মন ফড়িং ৪৬.শেষ পর্ব
নিদ্রের মনে হচ্ছে, এখনই তার জান বের হয়ে যাবে। অদ্রির চিৎকারের শব্দ তার কানে এখনো বাজছে। রাত তিনটার দিকে অদ্রির চিৎকারে নিদ্রের ঘুম ভেঙে যায়। অদ্রি দাঁতে দাঁত চেপে কান্না থামানোর চেষ্টা করছিলো। নিদ্রকে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠতে দেখে অস্ফুট স্বরে বলল
– খুব বেশি ব্যথা হচ্ছে নিদ্র। আমি ঠিক থাকতে পারছিনা।
নিদ্র কোনোমতে বিছানা থেকে নেমে রিতাকে ডাকতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রিতাকে ডেকে নিদ্র তার বাবার রুমের দিকে পা বাড়ালো। ভয়ে তার আত্মা শুকিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে।
রিতা রুমের লাইট জ্বালিয়ে অদ্রির কাছে গিয়ে বুঝতে পারলো, পানি ঠুসি ভেঙে গেছে। অদ্রির মুখ লাল টকটকে হয়ে আছে। রিতাকে কাছে পেয়ে অদ্রি বলল
– খালামনি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। তা নাহলে উনি আমাদেরকে বাঁচতে দিবেন না।
রিতা অদ্রির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন
– আল্লাহর রহমতে কিচ্ছু হবেনা। বাচ্চা হওয়ার আগে এমন ব্যথা হয়। আর তোমার পানি ঠুসিও ভেঙে গেছে। হাসপাতালে নেয়া ছাড়া উপায়ও নাই।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
নিদ্রের বাবা নাজমুল সাহেব চিন্তিত হয়ে বললেন
– এই রাতে এম্বুলেন্স পাওয়া যাবে নাকি? যদিও অনেক হাসপাতালের এম্বুলেন্স চব্বিশ ঘণ্টা সার্ভিস দেয়।
– বাবা আমি ভালো কিছু হাসপাতালের এম্বুলেন্স নাম্বার আর কনট্যাক্ট নাম্বার মোবাইলে সেভ করে রাখছিলাম।
– তাহলে গাধার মতো আমার সামনে দাঁড়িয়ে কী করছো? মোবাইল খানা এনে ফোন লাগাও। দেখো কোন হাসপাতাল ফোন রিসিভ করে আর কোন এম্বুলেন্স আসে!
নিদ্র স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা ; অদ্রি এখনো চিৎকার করে যাচ্ছে!
ভোর চারটায় অদ্রিকে হাসপাতালে শিফট করা হলো।
নিদ্রের মন বলছে, অদ্রির সাথে তার এটাই শেষ দেখা। লেবার রুম থেকে প্রাণহীন দেহটা…..
আর ভাবতে পারছেনা সে। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে তার।
চোখ বন্ধ করে সবকিছু ভুলে থাকার চেষ্টা করতে লাগলো নিদ্র। যা হবার সেটা হবেই – দাদীর বলা কথাটা বিরবির করে আওড়ে নিচ্ছে।
লেবার রুম থেকে একজন নার্স হাসিমুখে রিতার দিকে এগিয়ে এসে বললেন
– পরিষ্কার ওড়না বা কাপড় এনেছেন?
রিতা ভয়ে ভয়ে বললেন
– হ্যাঁ।
– তাহলে দুইটা পরিষ্কার কাপড় বা ওড়না নিয়ে আসেন। আপনাদের তো জোড়া আনন্দ আসছে।
নাজমুল সাহেব আর রিতার কোলে দুইজন নার্স বাচ্চাদেরকে দিয়ে বললেন
– জোড়া আনন্দ জোড়া বখশিশ চাই আমরা।
নাজমুল সাহেব মুচকি হেসে বললেন
– আগে বলেন, বাচ্চাদের মা কেমন আছে?
– আল্লাহর রহমতে ভালো আছে। নরমাল ডেলিভারি তো তাই ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছে। একটু পরে কেবিনে শিফট করা হবে।
নিদ্র কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। সবকিছু সত্যি ঠিকঠাক নাকি কোথাও ভেজাল আছে? বিশ্বাস হচ্ছেনা তার জীবনে কোনো ঘটনা ঘটলো তাও কোনো ঝামেলা ছাড়া?
নাজমুল সাহেব আর রিতা বাচ্চাদের কোলে নিয়ে নিদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন
– কাকে আগে কোলে নিবা?
নিদ্র বাচ্চাদের গোল গোল ফর্শা মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল
– এরা তো আমার মতো দেখতে হয়েছে। আচ্ছা বাবা ছেলে কোন জন আর মেয়ে কোন জন?
নাজমুল সাহেব জোরে হেসে বললেন
– তা তো বাছা আমি জিজ্ঞেস করিনি। সে পরেও দেখা যাবে। আগে তুমি তাদেরকে কোলে নাও।
– কিন্তু বাবা একসাথে দুইজনকে কীভাবে নিবো?
– একসাথে কেনো নিবে? একজন একজন করে নিবা।
– কিন্তু বাবা মনে করো আমি মেয়েকে আগে কোলে নিলাম, তখন ছেলে রাগ করবে না? আর ছেলেকে নিলে, মেয়ে রাগ করবে।
– ওরা কি বুঝে নাকি?
– না বুঝলেও। আমার মন শান্ত হবেনা। এক কাজ করো। আমি কেবিনে গিয়ে সোফায় বসি। তারপর দুইজনকে একসাথে কোলে দিও।
হাসপাতালে একদিন থেকে বাসায় ফিরে আসলো অদ্রি। সবকিছু অদ্ভুত লাগছে তার। ভেবেছিল বাচ্চাদের চেহারা দেখারও সুযোগ হবেনা তার। প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে যখন বাচ্চার কান্না কানে আসলো ; তখন পাশ থেকে একজন নার্স বললেন, আলহামদুলিল্লাহ মেয়ে হয়েছে।
একজন ইন্টার্নির ডাক্তার চিন্তিত স্বরে বললেন
– ওনার টুইনস হবে আপা। আমি ওনার ফাইল পত্র চেক করেছিলাম লেবার রুমে আসার আগে। আর এই দেখুন দেখুন আরেকজনের মাথা দেখা যাচ্ছে।
তার কিছু সময় পরে দ্বিতীয় বাচ্চার কান্নার শব্দে অদ্রির মনে হলো, সব কষ্ট, ব্যথা, যন্ত্রণা সহ্য করা আজ স্বার্থক হয়েছে।
বাচ্চাদের মুখ দেখার পরপর আত্মতৃপ্তি নিয়ে মনে মনে বলল
– আলহামদুলিল্লাহ। এখন শান্তিতে মরতে পারবো।
লেবার রুমের দেয়ালে ধীরে ধীরে ইখলাস সাহেবের কুৎসিত চেহারাটা আস্তে আস্তে ঝাপসা হতে লাগলো।
তারপর আর কিছু মনে নেই। চোখ খুলে নিদ্রকে বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে দেখে ; হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলো অদ্রি।
এটা স্বপ্ন নাকি বাস্তব?
নিদ্র বাচ্চাদের রেখে অদ্রির সিটের কাছে এসে, লম্বা হাসি দিয়ে বলল
– বাচ্চাদের মায়ের ঘুম ভাঙলো বুঝি?
অদ্রি হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু আদৌও হাসি হলো কিনা সেটা নিদ্রই ভালো জানে।
নিদ্র আলতো করে অদ্রির চিবুকে চুমু দিয়ে বলল
– রিতা খালাকে ডেকে আনি।
আসমা জামান নাতীর ঘরে পুতি হবার সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। তাও জোড়া পুতি এসেছে।
সাত দিনের দিনে আকিকা দিয়ে তাদের নাম রাখা হলো। আসমা জামানের দেয়া দুটো নাম রাখা হয়েছে।
রাতে বাসায় আসা মেহমান চলে যাবার পরে নিদ্র এক বাটি পায়েশ নিয়ে অদ্রির রুমে ঢুকলো। রিতা রান্নাঘরে কাজের ছুতোয় রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
অদ্রি বাচ্চাদের কাঁথা ভাজ করছিলো। নিদ্রকে আসতে দেখে বলল
– তো আপনার এখন আমাদের কথা মনে পড়লো?
– মেহমান দের বিদায় না করে আসা যায় নাকি?
– তা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু এখন আসলেন যে?
– আমি কি নৃপ, অদ্রিজাকে দেখতে আসতে পারিনা?
– আমি ভাবলাম আমাকে দেখতে এসেছেন। এখন মনে হচ্ছে, ভালোবাসাটা কমে গেছে!
নিদ্র এক চামচ পায়েস অদ্রির মুখের সামনে তুলে ধরে বলল
– ভালোবাসাটা এখন তিনগুণ হয়ে গেছে।
অদ্রি পায়েস মুখে পুড়ে নিয়ে বলল
– দাদীর দেয়া নাম আপনার পছন্দ হয়নি?
– পছন্দ হয়েছে কিন্তু এই নামের উচ্চারণ কয়জন সঠিকভাবে করবে সেই চিন্তায় আছি। আর নামের বিকৃতি তো ধরলামই না।
অদ্রি একটু সড়ে বসলো বিছানায়। নিদ্রকে ইশারায় বসতে বলল।
নিদ্র পায়েসের বাটি পাশের টেবিলে রেখে অদ্রির পাশে বসলো। অদ্রির কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বলল
– আপনি তো অসম্ভব রকমের সুন্দর হয়ে গেছেন। আমার তো নিজেকে কন্ট্রোল করাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নিদ্রের ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল
– কন্ট্রোল করতে হবে।
– আমার হিমালয় কন্যা কিন্তু আড়চোখে দেখছে আমাদের।
– ওরা ঘুমাচ্ছে তো।
– না ম্যাডাম, পেছনে তাকিয়ে দেখুন না একবার।
অদ্রি পেছনে ফিরে দেখলো, ঠিকই। অদ্রিজা বড় বড় চোখ করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ভ্রু খানিকটা কুঁচকে আছে।
অদ্রি হাসতে হাসতে বলল
– নেন দারোয়ান দুজন রেডি আমাদের পাহারা দেয়ার জন্য।
নিদ্র বলল
– দারোয়ান থাকতেও বাসায় চুরি হয়, ডাকাতি হয়। আমরাও তাই করবো। নৃপতি যদি হয় পাহাড়ের রাজা আর অদ্রিজা যদি হয় হিমালয় কন্যা তাহলে আমরাও তাদের বাবা – মা।
অদ্রি নিদ্রকে গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে বলল
– আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক সুখী।
নিদ্র বিরবির করে বলল
– আলহামদুলিল্লাহ আমরা অনেক সুখী।
নৃপ ঘুমন্ত মুখে হাসির রেখা আর অদ্রিজার জাগ্রত অবস্থায় হাসির রেখা দিয়ে এই গল্পের সমাপ্তি টানলাম।
সমাপ্তি!
~ Maria Kabir
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/