মন ফড়িং ৩৩.
প্রচণ্ড চিৎকারে নিদ্রের ঘুম ভেঙে গেলো। প্রায় লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠে আৎকে উঠলো নিদ্র। অদ্রির ডান হাত দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝড়ছে। বাম হাতে ধারালো ছুরি রক্তেমাখা!
নিদ্রের বুঝতে বাকি রইলোনা যে অদ্রিই নিজের হাত কেটেছে।
নিদ্র বিছানা ছেড়ে উঠে অদ্রির কাছে এগিয়ে যাবে আর তখনই অদ্রি চিৎকার করে বলতে শুরু করলো
– আপনি কাছে আসবেন না।
নিদ্র বললো
– প্লিজ মাথা ঠান্ডা করুন।
নিদ্রকে এগোতে দেখে অদ্রি বললো
– কাছে আসবেননা।
নিদ্র প্রায় দৌঁড়ে গিয়ে অদ্রির বাম হাতের ছুরি ধরে ফেললো আর এক হাত দিয়ে অদ্রিকে শক্ত করে ধরলো।
অদ্রি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলো। নিদ্র শক্ত করে অদ্রিকে ধরে রাখলো। হাতের রক্তে অদ্রির কামিজ, পায়জামা প্রায় ভিজে উঠেছে!
নিজেকে ছাড়াতে না পেরে অদ্রি নিজেই ছুরি ফেলে দিয়ে নিদ্রকে জাপটে ধরে বললো
– উনি আপনাকে বাঁচতে দিবেনা যদি আমি আপনার সাথে থাকি। আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যান। প্লিজ নিদ্র।
– আমি পারবোনা।
– তাহলে আমাকে মরতে দিন।
নিদ্রের রাগ মাথায় উঠে গেলো শেষের কথাটা শুনে।
নিদ্র চিৎকার করে বললো
– আপনার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। ইখলাস সাহেব মারা গেছেন। মৃত মানুষেরা কখনো ফিরে আসেনা।
নিদ্রের দুই হাতের মধ্যেই অদ্রি সেন্সলেস হয়ে গড়িয়ে পড়লো।
নাজমুল সাহেবের ঘুম ভেঙে গেলো মেয়েলি কণ্ঠের চিৎকার শুনে। দ্বিতীয় বার কোনো সাড়াশব্দ না শুনে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন। খানিকক্ষণ পর পুরুষ কণ্ঠের চিৎকার শুনে প্রায় লাফিয়ে বিছানা ছেড়ে নামলেন। নিদ্রের কণ্ঠ যতদুর বুঝতে পেরেছেন। খারাপ কিছু ঘটে গেলো নাকি?
দোতলায় উঠে অদ্রির রুমের দরজার সামনে দাঁড়াতেই বুঝতে পারলেন খারাপ কিছু ঘটেছে। দরজা নক করলেন।
– কে?
– নিদ্র আমি তোর বাবা।
নিদ্র খুব সাবধানে অদ্রিকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে দরজা খুললো।
নিদ্রের শরীরে রক্ত দেখে প্রায় আৎকে উঠে বললেন
– এই ছেলে রক্ত কীভাবে এলো?
নিদ্র কথা বলতে পারছেনা। গলার কাছে কান্নাটাকে আটকে রেখে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষমতা আপাতত নিদ্রের নেই।
হাতের ইশারায় বিছানার উপর অদ্রিকে দেখিয়ে দিলো। নিদ্র ফ্লোরে বসে পড়ে দুহাত দিয়ে মুখ চেপে রাখলো!
নাজমুল সাহেব অদ্রির কাছে গিয়ে বুঝতে পারলেন ডান হাতটা গভীর ভাবে কাটা।
নাকের কাছে হাত দিয়ে নিশ্বাসের তাপে নাজমুল সাহেব বুঝতে পারলেন, এখনো জীবিত। যেভাবে পরে ছিলো তাতে মৃত মানুষের মতোই লাগছিলো।
রাত দুইটার সময় মফস্বলের হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া অসম্ভব। ডাক্তার নিজেও তো মানুষ!
নাজমুল সাহেব আর রশীদ সাহেব প্রায় পাগলের মতোই ছুটাছুটি শুরু করলেন হাসপাতাল জুড়ে। রীতা কাপড় দিয়ে অদ্রির হাত ধরে রেখেছেন কিন্তু রক্ত পড়া বন্ধ হয়নি।
নিদ্র হাসপাতালে আসেনি। সে রুমের এক কোণায় মুখ দু’হাতে চেপে ধরে বসে আছে। নাজমুল সাহেব ওকে আর ঘাটায়নি।
একজন ডাক্তারকে ফোন করে ডেকে আনা হয়েছে। চোখমুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে অদ্রির হাতের ক্ষত স্থানটা কিছুক্ষণ দেখে বললেন
– সুইসাইড কেস মনে হচ্ছে?
নাজমুল সাহেব বললেন
– সিজিওফ্রেনিয়ার রোগী।
ডাক্তার সাহেব আরো বিরক্তি নিয়ে বললেন
– বাসায় এভাবে রেখে দিয়েছেন কেনো? এখন রোগী মারা গেলে তো ডাক্তারের দোষ দিবেন।
– না, আপনার দোষ দিব না। আপনি ওর ট্রিটমেন্ট শুরু করেন।
চার ব্যাগ রক্ত লাগবে যার মধ্যে চার ব্যাগই হাসপাতালে ভাগ্যক্রমে পাওয়া গেছে। নিদ্রকে প্রায় জোর করেই হাসপাতালে নিয়ে আসলেন রশীদ সাহেব।
অদ্রির বেডের পাশের ছোটো টুলে আনমনে বসে রইলো নিদ্র।
অদ্রির জ্ঞান এখনো ফেরেনি।
বাসায় মেহমান আসতে শুরু করেছে। বিয়ের তারিখও এগিয়ে আসছে। রশীদ সাহেব না করতে চেয়েছিলেন কিন্তু নাজমুল সাহেব করতে দেননি।
বাসা ভর্তি মানুষ থাকলে অদ্রির খারাপ লাগাটা কমবে। এদিকে ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছে নাজমুল সাহেবের।
আগামী দুই সপ্তাহে তার সময় নেই। এই দুই সপ্তাহে অন্য কোনো অঘটন ঘটাবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
নাজমুল সাহেব ভাবতে ভাবতে প্রায় পাগলের মতো অবস্থা।
নিদ্র খুব চুপচাপ হয়ে গেছে। কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় তাছাড়া তার মুখে কোনো কথা নেই।
আসমা জামান রীতাকে বললেন
– অদ্রি পাগল হয়ে গেলো নাকি?
– জানিনা।
– পাগলই তো। এভাবে নিজের হাত কোনো সুস্থ মানুষ কাটতে পারে?
রীতা কিছু বললেন না। আসমা জামান তো ঠিকই বলেছেন কোনো সুস্থ মানুষ এরকম কাজ করতে পারেনা।
চলবে……
© Maria Kabir