মন ফড়িং ৩০.

3
3456

মন ফড়িং ৩০.

 

নির্ঘুম রাতের ছন্দটা ঠিক সুখকর হয়না আবার কিছু সময় হয়। খুব কষ্ট, চিন্তা থেকে যখন নির্ঘুম রাত পার হয় তখন মোটেও সেটা সুখকর হয়না। অদ্রিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিদ্র জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো! অস্থিরতায় ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। জানালা দিয়ে আকাশটা পুরোপুরি দেখা যায়। আর নিচের বাগানটাও। এই বাগানে দাঁড়িয়ে প্রথম অদ্রিকে দেখেছিলো সে। সেদিন ওকে যতোটা বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিলো আজকেও ঠিক সেরকম দেখাচ্ছে। অতীত এভাবে ফিরে আসবে ভাবতেই কেমন লাগছে। ঘুম তো আসছেই না, বিছানায় শুয়ে থাকতেও ভালো লাগছেনা।

 

আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে। চিন্তার ভার টা কমেছে।

নিকষ কালো চাদরের উপর ছোটো ছোটো মুক্তা জ্বলজ্বল করছে। পুরো আকাশটা যেন কালো চাদর আর তারা গুলো হচ্ছে জ্বলন্ত মুক্তা!

অদ্রিকে যদি দেখানো যেতো, হয়তোবা ওর ভালো লাগতো। আর কতদিন ওকে কাছে পাবে সেই নিশ্চয়তা নেই। হয়তোবা দেখা যাবে অদ্রি হারিয়ে গেছে। শরীর ঠান্ডা হয়ে যাবে, নিশ্বাসের উঠানামা বন্ধ হয়ে যাবে।

না, নিদ্র ভাবতে পারছেনা। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে মাথার মধ্যে। জানালা খোলা রেখেই বিছানায় শুয়ে পড়লো নিদ্র।

ঘুমের মেডিসিনের কারণেই অদ্রি এখন শান্ত। তা নাহলে কী যে করতো, ভাবতেও ভয় লাগে নিদ্রের।

আবোলতাবোল ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো নিদ্র।

 

আসমা জামানের ঘুম আসছে না। নাজমুলের যেমন ফরেইনার বিয়ে করে জীবন শেষ হয়ে গেলো নিদ্রেরও তাই হবে বলে মনে হচ্ছে। নিদ্রের জন্য খুব খারাপ লাগছে তার। মা ছাড়া এই ছেলেকে কতো না কষ্টে বড় করেছে সে! এমনও রাত কেটেছে নিদ্র কান্না থামায়নি। সারারাত জেগে থাকার পর সকালে নাস্তা বানানো, ঘরের কাজ করতে হয়েছে তাকে। নাজমুল তো তখন ছেলের দিকে তাকিয়েই দেখিনি।

সেই নিদ্র মাঝে বেশ আনন্দেই কাটিয়েছে দিন। এখন কী হবে কে জানে?

 

নাজমুল সাহেব ড্রয়িংরুমে বসে বেশ আরামেই স্মোক করছেন। রীতা এখন ঘুমে মগ্ন আছে। এই ফাঁকে স্মোক করা ছাড়া উপায় নেই। বাথরুমে গিয়ে স্মোক করতে তার ভালো লাগেনা। তার কথা – হাগা মুতা করার জায়গায় কিছু খাওয়া যায় নাকি? স্টুপিড মহিলা! স্মোক আজকাল ৮০% মানুষ করে আর সে করলেই সমস্যা। অদ্রিকে ব্যাপারটা জানালে কেমন হয়?

মাথা নষ্ট নাকি তার? ছেলের বউয়ের কাছে স্মোকিং এর কথা বলা যায়না।

অদ্রিকে বিয়ে করে নিদ্রের ভালো হয়েছে। ওর এখন দরকার একজন বউ যার মধ্যে ম্যাচুরিটি থাকবে অত্যধিক মাত্রায়। অদ্রির মধ্যে ম্যাচুরিটি আছে, তবে অত্যধিক মাত্রায় কিনা তার জানা নেই। তার উড়নচণ্ডী ছেলেটা এবার সাংসারিক হবে।

বৃষ্টির শব্দে নিদ্রের ঘুম ভেঙে গেলো। অদ্রি এখনো ঘুমুচ্ছে। কখন ঘুম ভাঙবে কে জানে! জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানি এসে ফ্লোর ভিজে যাচ্ছে। এখন যদি বৃষ্টির পানিতে গোসল করা যেতো?

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল ৬ টা বাজে। এতো সকালে বৃষ্টিতে ভেজা ঠিক হবেনা। বৃষ্টির কারণে ঠান্ডা পড়েছে। বিছানায় পায়ের কাছে কাঁথা রাখা। অদ্রির গায়ে কাঁথা জড়িয়ে দিয়ে সে নিজেও কাঁথার ভেতরে ঢুকে গেলো। ইশ কী আরাম!

সকালটা এতো ভালো লাগবে তার ভাবতেও পারেনি।

অদ্রি নড়ে উঠাতে নিদ্রের ভাবনায় ছেদ পড়লো। ঘুম ভেঙে যাবে নাকি?

এতো তাড়াতাড়ি ভাঙার কথা তো না। অন্ততপক্ষে সকাল ১০ টা পর্যন্ত ঘুমানোর কথা।

অদ্রির ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে তাকাতেই বুঝতে পারলো নিদ্র ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

অদ্রি ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো

– কতো বাজে এখন?

– ৬ টা ১৫।

– চা না কফি খাবেন?

– কিছুই না।

– বৃষ্টির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে তাই না?

– হ্যাঁ।

– এই সময় এক কাপ কফি আপনার সময়টা আরো সুন্দর করে দিবে। আমি বানিয়ে আনি।

– না। আপনি পাশে থাকলেই হবে।

– আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে নিদ্র। এতো সুন্দর বর পাবো আমি ভাবতেও পারিনি কখনো।

নিদ্র টুপ করে অদ্রির ঠোঁটে চুমু দিয়ে বললো

– এই ঠোঁটের তুলনায় কিছুই আমাকে বেশি আনন্দ দিতে পারেনা।

– আপনি না

– এই বৃষ্টি আরো বেশি সুন্দর হবে যদি আপনি আমাকে আদর করতে পারমিশন দিয়ে দিন।

অদ্রি লজ্জায় লাল টকটকে হয়ে যাচ্ছে। কী বলবে বুঝতে পারছেনা। পারমিশন তো দেয়াই আছে। না তো কখনো করেনি।

তাহলে এভাবে পারমিশন চাচ্ছে কেনো?

অদ্রির কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে নিদ্র বললো

– আচ্ছা ঠিকাছে কিছুই লাগবেনা আমার।

– আপনি কি জানেন, মৌনতা সম্মতির লক্ষ্মণ?

– আমি মূর্খ মানুষ ওসব কথার অর্থ বুঝিনা।

– মূর্খ তো আমিও। বেশ মিলে গেছে দুজনের।

– আপনি আমাকে পারমিশন টা দিলেন না। খুব খারাপ লাগলো।

অদ্রি নিদ্রের ডান হাত কোলের উপরে নিয়ে বললো

– পারমিশন দিয়ে দিলাম।

 

নিদ্র মুচকি হেসে বললো

– তো আপনি রেডি?

অদ্রি মাথা নিচু করে বললো

– হুম।

নিদ্র অদ্রির কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিলো।

নিদ্র যেন ডুব দিলো সম্পূর্ণ নতুন অধ্যায়ে। যেখানে একমাত্র অদ্রির বসবাস। যেখানে তাকে মাতাল করার জন্য মদের প্রয়োজন হয়না, অদ্রি হলেই যথেষ্ট!

প্রণয় নর – নারীকে এক অদ্ভুত অনুভূতির সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়। যার সাক্ষাৎ  প্রণয়ে জড়িয়ে থাকা নর – নারীই পেয়ে থাকে।

 

 

চলবে……!

 

 

© Maria Kabir

3 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে