মন ফড়িং ২৭.
রশীদ সাহেব সকালের দিকেই রংমিস্ত্রি নিয়ে চলে এলেন। ১০ জনের একটা দল একসাথে কাজ করবেন। বিয়ের দিন আসতে মাত্র ১ সপ্তাহ বাকি। দু’দিনের মধ্যে রঙের কাজটা অন্ততপক্ষে সারতে হবে।
রশীদ সাহেব নিদ্রের দরজায় টোকা দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠেছেন কিন্তু নিদ্রের কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছেনা। ৮ টা বাজে এখনো গাধাটা ঘুমুচ্ছে। গতকাল বারবার বলে গেছেন, যেন সকালেই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে অপেক্ষা করতে। কিন্তু ফ্রেশ হওয়া তো দূরে থাক, ঘুমই ভাঙেনি!
রশীদ সাহেবের চিল্লাচিল্লিতে লিলি নিদ্রের রুমের সামনে এসে হাজির।
– কিছু হইছে চাচা?
রশীদ সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন
– কুমিরের মতো ঘুমাচ্ছে গাধাটা। আমি একা এতো কাজ কীভাবে সামলাবো?
অদ্রি চায়ের জন্য নিজেই ডাইনিং এর দিকে যাবে বলে রুম থেকে বের হলো। বের হওয়ার পরপর রশীদ সাহেবের ডাকাডাকি শুনে সেও এগিয়ে আসলো। লিলির খুব মেজাজ খারাপ হলো অদ্রিকে দেখে। এই মহিলার হাত ধরেছিলো নিদ্র। দেখতে তো আহামরি কিছুই না।
– চাচা আপনি ডাইনিং রুমে গিয়ে বসুন। চা নাস্তা করুন আমি দেখছি।
অদ্রি নরম সুরে কথাটা বললো।
রশীদ সাহেব বিরক্ত স্বরে বললেন
– দেখো পারো কিনা। ছেলেটার কোনো জ্ঞান বুদ্ধি নেই।
নাজমুল সাহেব সোফায় বসে ইংরেজি লেখকের বই পড়ছিলেন। আসমা জামান ছেলেকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন, তার বাবার বাড়ি একবার হলেও যাওয়ার জন্য। আর এই বাড়িতে তার একদমই ভালো লাগছেনা। আশেপাশে না হোক একটু দূরে হোটেল নিলে ভালো হয়। নাজমুল সাহেব রাজি না। এই বাড়িটায় তার থাকতে ভালো লাগছে। নীরবতার কারণেই আর তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। স্মোক করতে হয় বাথরুমে গিয়ে। বাথরুম বাদে যেখানেই স্মোক করতে যান সেখানেই রীতা এসে হাজির হন। বেশ বিপদে পড়েছিলেন। কীভাবে কী করা যায়? শেষমেষ বাথরুমের কথা মাথায় আসলো।
খাওয়া দাওয়া কোনো কিছুরই কমতি নেই সেখান থেকে হোটেলে যাওয়ার কোনো মানেই হয়না।
আসমা জামান ছেলের সাথে না পেরে রশীদ সাহেবকে ধরলেন। রশীদ সাহেব অবাক হয়ে বললেন
– কোথাও কোনো সমস্যা?
আসমা জামান ভাবলেন অদ্রির কথাটা বলে দিবেন। পরোক্ষণেই ভাবলেন, অদ্রি রশীদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
– না। এরকম অচেনা কারো বাসায় এভাবে থাকাটা ঠিক না। তাই বললাম।
– অচেনা কই?
– তোমার চেনা কিন্তু আমাদের তো অচেনা।
– খালাম্মা এসব নিয়ে ভাববেন না। বাড়ি রঙ করবে। জিনিসপত্র সাবধানে রাখবেন।
আসমা জামান ব্যর্থ হলেন। অন্য কোনো উপায়ে কাজটা করতে হবে। না হয় নিদ্রকে নিয়ে আবার ফিরে যাবেন। এই মেয়ে নিদ্রকে খেয়ে ফেলবে।
অদ্রি, লিলিকে বললো
– যাও নিজের কাজে। এখানে কী?
– রঙিন ভাইজান দরজা খুলছেনা তাই….
– আমি দেখছি তুমি যাও।
লিলি বাধ্য হয়ে চলে গেলো।
অদ্রি দরজায় টোকা দিয়ে বললো
– আচ্ছা আর কতো ঘুমাবেন? আপনার না আজকে খুব সকালে উঠার কথা?
কিছুক্ষণ পর নিদ্র দরকা খুলে বললো
– আরে আমি ঘুমাতে গেলামই রাত ৩ টায়।
– ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন। আপনাকে ডাকতে ডাকতে রশীদ চাচা ক্লান্ত হয়ে গেছেন।
নিদ্র দুষ্ট হাসি হেসে বললো
– একটা জরুরি কথা ছলো আপনার সাথে।
– সে কথা পরেও বলা যাবে।
অদ্রি দ্রুত পা বাড়ালো।
অদ্রি গাঢ় নীল রঙের থ্রিপিস পড়েছে, চোখে কাজল নিয়েছে। বিষয়টা নিদ্রের চোখে স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছে। বেশ ভালোই লাগছে অদ্রিকে। গতকালের কথা সে রেখেছে। ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে দরজা আটকে ব্রাশ করতে বাথরুমে ঢুকে গেলো।
অদ্রিকে দেখে আসমা জামানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। মেয়েটাকে সকাল সকাল তারই সামনে আসতে হলো?
অপয়া মেয়ে মানুষ। পুরুষ ছাড়া এদের চলেনা। আসমা জামান বুঝতে পেরেছেন কী কারণে তাদের এখানে এতো সাবলীলভাবে থাকতে দেয়া হয়েছে। প্রথমে স্বামীকে খেয়েছে, স্বামীর পরে আর কাকে কাকে খেয়েছে কে জানে। এখন আবার নিদ্রের পিছনে লেগেছে।
দেখোতো আবার সেজেছেও। আসমা জামান একেবারেই সহ্য করতে পারছেনা অদ্রিকে।
চায়ের কাপ নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে চা খাচ্ছিলো। লিলি রান্নাঘর থেকে হাফ প্লেটে রুটি এনে অদ্রির সামনে রেখে দিলো।
নিদ্র ডাইনিং টেবিলের চেয়ার টেনে অদ্রির মুখোমুখি বসলো।
আসমা জামান এতে আরো রেগে গেলেন।
নিদ্র ফিসফিস করে অদ্রিকে বললো
– আপনাকে সুন্দর লাগছে।
অদ্রি বললো
– পরেও বলা যেতো। এখানে বলাটা কি দরকার ছিল খুব?
– আপনাকে তো বলার জন্য ডেকেছিলামই কিন্তু পাত্তাই দিলেন না।
– তাই না?
লিলিকে ডেকে নিদ্রের জন্য নাস্তা দেয়ার কথা বলে চায়ের কাপ নিয়ে উঠবে এমন সময় আসমা জামান ভাবলেশহীন কণ্ঠে বললেন
– শুনেছি তুমি নাকি বিধবা?
অদ্রি একটা ধাক্কা খেলো। এইভাবে কথাটা কেনো বললেন?
– জি।
– তাহলে এতো সাজগোজ করেছো কেনো? আর পর পুরুষের সাথে এতো কথা, হাসাহাসি কীসের?
লজ্জায় অদ্রির মুখ লাল হয়ে গেলো। প্রশ্নের উত্তর ভেবে পাচ্ছিলো না। মাথাটা কেমন যেন ভার হয়ে যাচ্ছে।
অতীত ভুলতে গিয়েও আবার ফিরে আসছে। কী বলবে সে?
আসমা জামান এমন কথাও বলতে পারেন অদ্রি ভাবতেও পারেনি।
লিলি রান্নাঘর থেকে কথাগুলো শুনে আনন্দ পাচ্ছিলো। কিন্তু পাশে রীতা থাকায় প্রকাশ করলোনা। লিলি চাচ্ছে, আরো কিছু বলুক। সে যে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে সেটা যদি আসমা জামানকে বলা যেত!
অদ্রি প্রায় দৌঁড়ে সিড়ি বেয়ে উঠে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। কান্না চাপিয়ে রাখতে পারছিলো না আর।
নিদ্র, নাজমুল সাহেব হতভম্ব হয়ে আসমা জামানের দিকে তাকিয়ে রইলো।
তাদের মাথায় আসছেনা কীভাবে এ ধরনের কথা বলতে পারলো?
একজন নারী হয়ে অন্য নারীকে এভাবে খোঁচা দেয়াটা কি ঠিক????
চলবে…..!
© Maria Kabir
প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন => ??????