মন ফড়িং ২৪.

0
3412

মন ফড়িং ২৪.

– চিরতরে চলে যাও। তোমার কোনো স্মৃতি রাখতে চাইনা।
– এতো রাগ কেনো নিড্র মায়ের উপর?
– তোমার জন্য বাবার আজকে পাগল প্রায় অবস্থা। এলকোহল গিলবে আর পাগলের মতো বিহেভ করবে। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। সব তোমার জন্য।
– আমাদের জাতটাই তো ওরকম। বাঙালির মতো আবেগ আমাদের নেই। আমরা অন্য ধাতুর তৈরী।
– তাহলে আমার বাবাকে বিয়ে করলে কেনো?
– ওইযে বললাম আমাদের কাছে জীবন একটাই। যখন যা ইচ্ছা হয় করি। যখন যা ভালো লাগে নিজের করে নেই আর ভালো না লাগলে ডাস্টবিনে ফেলে দেই।
– তাহলে আমাকে ফেলছো না কেনো?
– শেষ মূহুর্তে এই নিড্রই তো পাশে ছিলো।
– মা যাও তো।
নিদ্রের মনে হলো তার মা কাঁদছেন। কাঁদতে কাঁদতে একসময় বিরক্ত হয়ে চলে যাবে।
– মা
– বলো নিড্র।
– ভালো আছো?
– না নিড্র। তাই তোমার কাছে আসা। তোমার কাছে বসলে আমার ভালো লাগে।
একমাত্র তুমিই তো আমাকে ভালোবাসো।
হয়তোবা ওই কারণে!
– শুধু আমি একা না, বাবাও তোমাকে ভালোবাসে। তা নাহলে বিয়ে করতো অন্য কাউকে।
– আমি কি সত্যিই কি কোনো ভুল করেছিলাম?
– যদি বাবার দিক থেকে ভাবি তাহলে ভুল করেছো আর তোমার দিক থেকে ভাবি তাহলে ঠিকই করেছো। প্রত্যেক মানুষ তার নিজ নিজ স্থানে সঠিক তাই তারা বেঁচে থাকতে পারে।
– বাবা আমি যাই?
– আচ্ছা যাও।
আসমা জামান পানের বাটা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলেন। লিলিকে দেখে বললেন
– রান্নাঘরের সিংকে পান রাখা আছে। ধুয়ে নিয়ে আসো তো।
আসমা জামান রুমের ফ্লোরে পাটি বিছিয়ে বসে পড়লেন। পাটিতে পা দুটি ছড়িয়ে দিয়ে পানের জন্য অপেক্ষা করছেন।
লিলি পান ধুয়ে আসমা জামানের রুমে এসে দরজা আটকে দিলো। পান হাতে দিয়ে আসমা জামানের পাশে বসলো।
আসমা জামান অদ্রির সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলেন। লিলির বয়সী মেয়েদের কাছেই যেকোনো পরিবারের আসল খবর জানা যায়। ঠিক একইভাবে ম্যাচুরিটি প্রাপ্তদের কাছ থেকে তেমন কোনো খবরই পাওয়া যায়না। লিলিকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়?
আসমা জামান লিলিকে বললেন
– অদ্রি তোমার কী হয়?
– আমার বোন।
– আপন বোন?
– নাহ মামাতো বোন।
লিলি বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে মিথ্যা টা বললো।
– ওর মা – বাবা নাই?
– আছে, তবে তারা আপুকে ত্যাজ্য করেছেন।
আসমা জামান চিন্তায় পড়ে গেলেন। এই মেয়েকে ত্যাজ্য করেছে? কী কারণে?
– কেনো?
লিলি অল্পসময় চুপ থেকে মাথার মধ্যে মিথ্যেটাকে সাজিয়ে নিলো। পুরোপুরি মিথ্যাও তো না। সত্যের সাথে কিছুটা মিথ্যা মিশিয়ে বলবে। তেমন বড় ব্যাপার না।
– আসলে ওনার বিয়ে হয়েছিলো। একজনের সাথে বিয়ের পরও সম্পর্ক থাকায় স্বামী নাকি আত্মহত্যা করেন। এই নিয়েই।
আসমা জামান কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। এতো নম্র ভদ্র মেয়ে এই ধরনের কাজ করতে পারে? মিথ্যা হলে তো মা – বাবা ত্যাজ্য করতোনা। কথায় আছে – ম্যানা মানুষ ত্যানা ছেঁড়ে!
নিদ্র কি জানে এসব কথা? মেয়েটা থাকেই ওভাবে আসলে ভিতরে উল্টো। ঘোমটার ভিতর খেমটা নাচ – প্রবাদটা মিলে গেলো। কী অভিশপ্ত মেয়ে রে! স্বামী সুইসাইড করেছে তার অপকর্মের জন্য।
রশীদ সাহেব বেশ বড় লিস্ট অদ্রির হাতে দিয়ে বললেন
– এখানে কী কী লাগবে, কতো খরচ হবে আনুমানিক হিসাব করেছি। তুমি চেক করে নাও।
– চেক করার প্রয়োজন নেই। ব্যাংকে যেতে হবে আগামীকাল। আপনার সময় হবে?
– হ্যাঁ, হবে। শ্যুটিং এর ব্যাপারে আপনার কী মতামত?
– তোমার ইচ্ছা।
– আপনি আমার বড়। আপনার সিদ্ধান্ত টা আমার জানা প্রয়োজন।
– না করে দেয়াই ভালো। আমার কেমন যেন লাগছে।
– আচ্ছা। আপনি ফোন করে ওনাকে না করে দিয়েন। আমি কথা বলতে গেলে উনি প্যাচানোর চেষ্টা করে রাজি করিয়ে ছাড়বে। রঙ করানোর কথা ছিলো না?
– লিস্ট চেক করে দেখো ঠিক আছে কিনা। তারপর লোকজন আনা যাবে।
– গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে সবকিছুর দায়িত্ব আপনার। আমি ওসব ঝামেলায় যাবোনা। নিদ্রকে সাথে নিয়ে সবকিছু করবেন। আপনার সাহায্য হবে। ওকে দিয়েই বেশি কাজ করাবেন আপনি শুধু ডিরেকশন দিবেন।
– আমিই তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু ও তো মেহমান তাই ভাবলাম….
– মেহমান কিন্তু সে আপনাকে কখনোই না করবেনা।
– আমাকে বাসায় যেতে হবে।
– আচ্ছা তবে রাতে খেয়ে যাবেন।
– অন্যদিন।
নাজমুল সাহেব নিদ্রকে নিজের রুমে ডেকে পাঠালেন। লিলি বেশ আনন্দের সাথেই কাজটা করলো।
নাজমুল সাহেব নিদ্রকে বললেন
– মনে হচ্ছে বসন্ত এসেছে জীবনে?
নিদ্র কথাটার অর্থ বুঝতে না পেরে বললো
– বসন্ত এসেছে মানে?
– আমি ভুলেই গিয়েছিলাম বাংলা সাহিত্য কেনো কোনো সাহিত্যই তোমার পড়া হয়না। নিদ্র তুমি শেষ মেষ মূর্খ রয়ে গেলা।
– আর কিছু বলার আছে?
– হ্যাঁ আছে। সোজাসাপ্টা ভাবেই বলি। তুমি নাকি প্রেম করছো?
নিদ্র ভ্রু কুঁচকিয়ে বললো
– কে বলেছে?
– প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন। বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে।
নিদ্র বুঝতে পারলো বাবা নিজেই বুঝতে পেরেছেন।
– প্রেম না ঠিক।
– তাহলে ঠিক কী?
– বন্ধুত্ব বলতে পারো।
– She is a nice lady. তুমি তার সাথে প্রেম কেনো বিয়েও করতে পারো।
– বাবা কীসব বলছো।
– নিদ্র তোমার বাবা ঠিকই বলছে। বুঝতে পারছি লজ্জা পাচ্ছো। লজ্জা পাওয়া ভালো। পড়াশোনা ঠিকঠাক মতো করলে আজকে আমিই তোমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতাম ওই মেয়ের কাছে।
যদি জিজ্ঞেস করে বসে – ছেলে কী করে?
– বলবা আমি কী করি।
– তুমি যা করো এই দেশে সেটাকে বলে, ” রংমিস্ত্রি! “
চলবে……!
© Maria Kabir

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে