মন ফড়িং ২৩.
জানালার পাশে টেবিলে পানির জগে কদম ফুল পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়েছে। এতো বড় বাড়িতে একটা ফুলদানি পাওয়া যায়নি। নিদ্র বেশ অবাক হয়ে বললো
– সত্যি কোনো ফুলদানি নেই?
– না। কাল বাজার থেকে আনা যাবে।
– কিন্তু ততক্ষণে ফুল গুলো তো শুকিয়ে যাবে।
নিদ্র বেশ চড়া গলায় কথাটা বললো।
অদ্রি কোনো কথা না বলে লিলিকে ডাকলো। লিলি বিরক্তি নিয়ে অদ্রির রুমে এসে উঁকি দিয়ে দেখলো, নিদ্র অদ্রির হাত ধরে দাঁড়িয়ে কিছু একটা বলছে। নিদ্রের মেজাজ খারাপ হয়ে আছে তার চেহারায় স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে।
লিলি ভাবতেই পারেনি এমন কোনো দৃশ্য দেখতে হবে তাকে! ধাক্কাটাকে সামলে নিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে অদ্রিকে ডাকলো।
লিলির কণ্ঠ শুনে নিদ্র দূরে সরে দাঁড়ালো। অদ্রি স্বাভাবিকভাবেই বলল
– আয় ভিতরে।
লিলি মাথা নিচু করে ভিতরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
– সবচেয়ে বড় পানির জগটাতে পানি ভরে নিয়ে আয়। আর দুই কাপ চা নিয়ে আসবি।
নিদ্রকে বললো
– চায়ের সাথে কিছু খাবেন?
নিদ্র বললো
– না।
লিলি চুপচাপ নিচে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। প্রথমে চা দিবে নাকি পানির জগ? আর নিদ্র ওভাবে হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো কেনো? ওদের মধ্যে প্রেম হচ্ছে? কিন্তু কীভাবে সম্ভব অদ্রি তো বিধবা মহিলা। আর নিদ্র তো বিয়েই করেনি। লিলির খুব খারাপ লাগতে শুরু হয়েছে। মনের বিরুদ্ধে পানির জগ দিয়ে আসলো।
নিদ্র কদম ফুল গুলো জগের মধ্যে লিলির সামনেই রাখছে। কতোটা সুন্দর দেখতে নিদ্র!
অদ্রি লিলিকে বললো
– চা নিয়ে আয়। আর রিতা খালামনি কই?
– আমি দেখিনি।
– আচ্ছা। দেখা হলে বলিস, আমি ডেকেছি।
চা দিয়ে যাওয়ার সময় লিলি অদ্রির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। নিদ্র তখনও ফুল গুলো ঠিক করছিলো। লিলিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো
– লিলি কেমন আছো?
লিলি বেশ সুন্দর করে বললো
– ভালো। আপনি কেমন আছেন?
– ভালো। শুনলাম তুমি নাকি আমার রুমে গিয়েছিলে?
লিলি হতভম্ব হয়ে বললো
– আমি গিয়েছিলাম আপনার রুমে কোনো এঁটো থালাবাসন আছে কিনা দেখার জন্য।
– তোমাকে কষ্ট করে নিতে আসতে হবেনা। আমি নিজ দায়িত্বে দিয়ে আসবো।
লিলি চলে যাওয়ার পর নিদ্র, অদ্রিকে বললো
– লিলির তাকানোটা আমার পছন্দ হচ্ছেনা। আপনার দিকে কীভাবে তাকায় যেন!
– আমাকে ঠিক পছন্দ করছেনা। আমি কিন্তু ওকে তেমন কিছুই বলিনা।
– আপনি ওকে শাসন করছেন?
– সেদিন রাগের বসে থাপ্পড় মেরেছিলাম।
– এটাই তো ভুল করেছেন। এই বয়সী মেয়েদের আদর করে বুঝাতে হয়।
– আদর করে বুঝিয়ে দেখেছি লাভ হয়না।
– মহা ঝামেলা।
– বাদ দিন। চা খান ঠান্ডা হচ্ছে।
– উঁহু অদ্রি চা কেউ খায় না পান করে।
– ওই তো পান করুন।
নিদ্র চায়ে চুমুক দিয়ে বললো
– চলুন বিয়েটা সেরে ফেলি।
– একটু ধৈর্য ধরুন তো আপনি।
অদ্রি রান্নাঘরে রিতার সাথে কথা বলছে এমতাবস্থায় রশীদ সাহেব এসে বললেন
– অদ্রি একজন ভদ্রলোক এসেছেন তোমার সাথে কথা বলতে চায়।
অদ্রি বললো
– আমার সাথে? কী কারণে?
– এই বাড়িটা তার পছন্দ হয়েছে। শ্যুটিং করতে চাচ্ছে।
অদ্রি থতমত খেয়ে বললো
– শ্যুটিং?
– উনি নাকি ডিরেক্টর।
– আমার তো বিশ্বাস হচ্ছেনা।
– তারপরও তুমি কথা বলে দেখো।
অদ্রি মাথার ঘোমটা ঠিক করে বসার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। বসার ঘরে ছোটো সোফায় একজন ৩০-৩২ বছরের পুরুষ বসে আছেন। তার চোখ পুরো বাড়ির এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছু একটা ভাবছেও। অদ্রি একটু দূরে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে সোফায় বসলো।
ভদ্রলোক সালামের উত্তর দিয়ে বললেন
– আমি নাহিদ আলম। ঢালিউডের বেশ ভালো ডিরেক্টর আমি। দেখুন আমি নিজের সুনাম বলছিনা। কথাটা বললাম যাতে আপনি চিনেন।
– আমি আপনাকে চিনি নাই। বাংলা সিনেমা কেনো কোনো সিনেমাই আমার দেখা হয়না।
– তাহলে আজকে নিরুপমা ছবিটা দেখবেন।
– কিছু বলার জন্য এসেছেন?
– ওহ হ্যাঁ। আমার নতুন ছবিতে ১০ মিনিটের একটা দৃশ্যে এরকম বাড়ির কথাই বলা আছে। এখন মফস্বলের দিকে এরকম বাড়ি এটাই পেয়েছি। আমি চাচ্ছিলাম এখানে শ্যুটিং করতে। যদি আপনি রাজি হতেন।
– দেখুন এখানে সম্ভব না। বাসায় মেহমান আছে তার উপর আমার ঠিক ভালো লাগেনা।
– মাত্র ১ দিনে আমাদের হবে।
– সম্ভব হবেনা, মাফ করবেন।
– প্লিজ ম্যাম। অনেক বিপদে পড়ে এসেছি।
এতোটা করুণা করে বলাতে অদ্রির মন খারাপ হয়ে গেলো। কিছু সময় চুপ থেকে বললো
– আমি পরে জানাবো।
– তাহলে মোবাইল নাম্বারটা রাখুন।
রশীদ সাহেবকে অদ্রি বললো
– চাচা, নাম্বারটি রাখুন।
নাহিদ আলমকে বললো
– আপনি রাতে খেয়ে যাবেন।
নাহিদ আলম বললেন
– খাবারের অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে। অন্যদিন খাওয়া হবে।
নিদ্র ঘুমিয়ে ছিলো। ছুলে যাওয়া অংশটা ব্যথা করছিলো। অদ্রি বুঝতে পেরেই ব্যথার মেডিসিন খাইয়ে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়েছিলো।
হাতের ব্যথাটা কমতেই নিদ্র ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ঘুমের ভেতরে নিদ্র বুঝতে পারলো তার মা এসে পাশে বসে আছেন। মাকে খুব সুন্দর লাগছে। নিদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন
– নিড্র তোমার হাতে ব্যথা?
নিদ্র বললো
– না।
– মিঠ্যা বলো না নিড্র।
– মা যাও তো।
– আমি তো চলেই গিয়েছি অনেক আগে।
চলবে…….!
© Maria Kabir