#মন পায়রা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৮
‘ননসেন্স তোর সাহস হয় কিভাবে আমার পায়রার হাত ধরার? তোকে তো আমি মে’রে’ই ফেলব।’
কথাগুলো বলে অনবরত একটা ছেলেকে মা’রতে শুরু করল ইফাত। মুখে কয়েকটা ঘুষি দেওয়ার কারণে নাক মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে পায়রা অনেক চেষ্টা করেও ইফাতের হাত থেকে ছেলেটাকে ছাড়াতে পারছে না।ইফাত ছেলেটাকে মে’রে’ই যাচ্ছে পায়রা আর না পেরে ইফাতের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। ইফাত ছেলেটাকে ছেড়ে পায়রার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ আগের ঘটনা, পায়রা নিজের মনের কথা জানানোর জন্য ইফাতকে মেসেজ করে একটা ঠিকানা দিয়ে দেখা করতে বলে।সেই জায়গায় পায়রা এসে ইফাতের জন্য অপেক্ষা করছিল।পায়রা একটু তাড়াতাড়ি চলে এসেছিল তাই জন্য বসে ছিল কিন্তু কোত্থেকে একটা পরিচিত ছেলে আচমকা পায়রার সামনে এসে হাত ধরে, ‘পায়রা কি সমস্যা তোমাকে প্রপোজ করার পর থেকে তুমি আমাকে এড়িয়ে চলো কথা বলো না কেন? গতকাল ভার্সিটিতেও গেলে না।’
ইফাত এসে আশেপাশে তাকিয়ে পায়রাকে খুঁজছিল আর তখনি তাদের দিকে নজর যেতেই মাথায় রাগ উঠে গিয়েছিল কোনো কথা না বলেই সেখানে উপস্থিত হয়ে ছেলেটিকে অনবরত পে’টা’নো শুরু করে।পায়রা অনেকবার নিষেধ করার পরেও কথা শুনেনি।
ইফাতের হাত থেকে ছাড়া পেতেই ছেলেটার কিছু বন্ধু ছেলেটাকে উঠিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে ছেলেটার অবস্থা খুব খারাপ।পায়রা ক্ষিপ্ত স্বরে,
– আপনি সত্যি সত্যি একটা অমানুষ এভাবে কেউ কাউকে মা’রে?
– ও তোমার হাত ধরেছিল।
– এই সামান্য কারণে আপনি ওর গায়ে হাত তুলবেন ছেলেটা আমাকে পছন্দ করে একদিন পর এখানে দেখে ভুলে হাত ধরে ফেলেছে তাই এভাবে মা’রতে হবে?
– কেন অন্য কেউ তোমার হাত ধরবে? তুমি জানো না তোমাকে অন্য কারো সঙ্গে দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।
– তবে আপনি কেন আমার হাত ধরেন?
– আমার সঙ্গে ওর তুলনা দিচ্ছো?
– আপনার সঙ্গে ওর তুলনা দিলে ওই ছেলেটাকে অপমান করা হবে। ছেলেটা আপনার মতো অমানুষ নয় আমি বলি কি আপনার মাথায় সমস্যা আছে ভালো একটা ডাক্তার দেখান আমি প্রথমেই আপনাকে ঠিক চিনেছি আপনার মতো ছেলেকে ঘৃণা ছাড়া কিছু করা যায় না।
– পায়রা তুমি কিন্তু..
– থামুন তো আপনার প্রতি দুর্বলতা তৈরি হয়েছিল কিছুটা ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিল মনের কথা জানানোর জন্য এখানে ডেকেছিলাম কিন্তু ভাগ্য ভালো তাই আবারো এমন একটা ভয়ংকর রূপ দেখলাম নইলে জীবনের বড় একটা ভুল করে ফেলতাম আর যাই হোক আপনার মতো অমানুষকে ভালোবাসা যায় না আই হেট ইউ ইফাত, আই হেট ইউ।
পায়রা আর দেরি না করে ইফাতকে রেখে চলে গেল ইফাত পায়রার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। অতিরিক্ত ভালোবাসার কারণে পায়রার সঙ্গে কাউকে দেখলেই মাথা খারাপ হয়ে যায় ইফাতের আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি কিন্তু পায়রার কথাগুলো কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না খুব কষ্ট অনুভব হচ্ছে।
পায়রা বাড়িতে এসে নিজের ঘরে বসে আছে তখন রাগ দেখিয়ে ইফাতকে আজেবাজে কথা বললেও এখন নিজের খারাপ লাগছে।সাবিহা আগ্ৰহ নিয়ে পায়রার ঘরে এসে বিছানায় হেলে,
– কিরে আপু এত তাড়াতাড়ি চলে এলি ইফাত ভাইয়াকে সব বলে দিয়েছিস? কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কিভাবে কি?
– একদম ওই লোকটার নাম আমার সামনে উচ্চারণ করবি না ওই লোকটা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই না।
– এটুকু সময়ে কি এমন হল যে তোর ভালোবাসা উবে গেছে?
পায়রা ওখানে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলল সাবিহাকে।সাবিহা পুরো ঘটনা শুনে,
– মানছি ইফাত ভাইয়া ভুল করেছে তাই বলে তুই এসব বলবি ভাইয়াকে?
– ভুল কিছু তো বলিনি আমি না থাকলে তো ছেলেটাকে একেবারে মে’রে ফেলত।
– শোন আপু আমার মনে হয় কি…
– একদম চুপ কিছু বুঝাতে আসবি না আমায় ওই খারাপ লোকের সম্পর্কে কিছু শুনতে চাই না নিজের কথা ভাব আমার কথা ভাবতে আসবি না।
– আপু!
– যা এখান থেকে একা থাকতে দে আমায়।
সাবিহা পায়রার রাগ দেখে আর কিছু বলল না নিজের ঘরে গিয়ে ইনানকে কল দিল।
_______________
ইফাত বাড়িতে এসে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বারান্দায় বসে আছে।মন খারাপের থেকেও কষ্ট হচ্ছে বেশি চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে গোসল করার পরেও ঘেমে গেছে টি-শার্ট ভিজে গেছে চুল গুলো কপালে লেপ্টে আছে। দেখতে বিভৎস লাগছে ইতি বেগম ছেলের এমন চেহারা দেখে ভেতরে ভেতরে আতকে উঠলেন ছেলের সামনাসামনি হতে মন সায় দিচ্ছে না তাই স্বামীকে ঘটনা বললেন।
এনায়েত মির্জা নিঃশব্দে এসে ছেলের পাশে বসলেন কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে,
– কি হয়েছে তোর?
নিজের কষ্ট বাবার কাছে লুকানোর জন্য নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে,
– কিছু না বাবা।
– ভুলে যাস না তুই আমার ছেলে আমি তোর বাবা। নিজের ছেলের মুখ দেখেই বুঝতে পারি তার মনে কি চলছে জানিস তো বাবা-মা বন্ধুর মতো তাই লুকাস না কিছু মনের সব জমানো কথা বলে দে মন হালকা হবে।
ইফাত একে একে সব খুলে বলল আজ বাবাকে খুব কাছের মনে হচ্ছে ভেতরটা যেন এবার কিছুটা হালকা হয়েছে। এনায়েত মির্জা সবটা মনোযোগ সহকারে শুনে,
– সামান্য কারণে আমার ছেলে মন খারাপ করে আছে? পায়রা কথাগুলো হয়তো রেগে বলেছে রাগ কমলে সরি বলে নিস তারপরও না শুনলে রাগ ভাঙ্গাবি।
– এটা রাগ নয় বাবা ও মন থেকে এসব বলেছে কিন্তু আমি তো ওকে ভালোবাসি কিভাবে থাকব পায়রাকে ছাড়া।
– আমি পলাশের সঙ্গে কথা বলি তোদের ব্যাপারে পলাশেরও তোকে পছন্দ বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে পায়রার রাগ ঠিক হয়ে যাবে।
– কিন্তু বাবা ওর সিদ্ধান্ত না নিয়ে কিভাবে?
– আমি এভাবে তোকে কষ্ট পেতে দেখতে পারবো না যা করার এবার আমি করব, আজ পর্যন্ত কোনো কিছুর জন্য তোদের দুই ভাইকে মন খারাপ করতে দেইনি আজ কিনা ভালোবাসার মানুষের জন্য মন খারাপ করবি আমি সহ্য করতে পারবো না তোর মা আর আমি আজ যাব।
ইফাত পায়রাকে নিজের করে পাওয়ার ভরসা পেল। এনায়েত মির্জা ইতি বেগমকে সবটা বলতেই তিনি মেনে নিলেন।
_______________
এনায়েত মির্জা এবং ইতি বেগম সন্ধ্যায় শেখ বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন তাদের দেখে শেখ পরিবার অনেক খুশি হয়েছে। পলাশ শেখ হেসে হেসে কথা বলছেন তাদের সঙ্গে।আবরার আর তার মা’কে আসার জন্য খবর দেওয়া হয়েছিল তারাও চলে এসেছে সবাই গল্প করছে। আসমা বেগম সবার জন্য চা নিয়ে এসে পরিবেশন করে গোমড়া মুখে,
– ভাই-ভাবী আপনাদের জানিয়ে আসা উচিত ছিল কোনো আয়োজন করতে পারলাম না বড্ড খারাপ লাগছে।
ইতি বেগম হেসে বললেন,
– এই জন্যই বলিনি এত আয়োজন দেখলে বারবার অতিথি মনে হয়।
– অতিথি হবেন কেন আপনারা আমাদের নিজেদের মানুষ।
এনায়েত মির্জা চায়ের কাপ হাত থেকে রেখে সবার দিকে একবার তাকিয়ে,
– বাড়ির সবাই তো মনে হচ্ছে এখানে আছে।
পলাশ শেখ বললেন,
– বাড়ির বড়রা সবাই আছে ছোটরা উপরে।
– বড়দেরই দরকার আসলে আজ আমরা অনেক বড় একটা কারণে এসেছি জানি না হুট করে বলা ঠিক হবে কিনা তবুও বলতে চাইছি বাকিটা আপনাদের সিদ্ধান্ত।
পলাশ শেখ প্রশ্ন করলেন,
– কি এমন জরুরী কথা এনায়েত?
– আমার বড় ছেলে ইফাতকে তো চেনো?
– চিনবো না কেন।
– ওর সম্পর্কে সব জানা তো?
– কি যে বলো এনায়েত তোমার দু’টো ছেলেই অনেক ভালো। ইফাতের মতো ছেলে লাখে একটা হয় একেবারে দায়িত্ববান ছেলে।
– আমি চাইছিলাম তোমার মেয়ে পায়রাকে আমার ছেলের বউ করে আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে, ইফাতের পায়রাকে খুব পছন্দ আমাদের কোনো মেয়ে নেই আমরাও একটা মেয়ে পেয়ে যাব।
উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। পলাশ শেখ হাস্যজ্জল মুখে,
– এটা তো আমাদের সৌভাগ্য,আমারও অনেকদিন ধরেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল আমাদের কোনো আপত্তি নেই আমরা রাজি।
– পায়রার মতামতটাও জেনে নেই।
আসমা বেগম হেসে বললেন,
– ওর মত নিতে হবে না পায়রাও রাজি সেদিন ইফাতের নামে কত সুনাম করছিল।
– তাহলে আজই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করি?
– আমার ইচ্ছে ছিল পায়রার পড়াশোনা শেষ হলে বিয়ে দেওয়ার কিন্তু।
– সমস্যা নেই এনগেজমেন্ট সেরে ফেলতে তো আপত্তি নেই।
– তা সেরে ফেলাই যায়।
দুই পরিবার মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে এনগেজমেন্টের তারিখ ঠিক করে ফেলেছে সবাই খুশি শুধু খুশি হতে পারেনি আবরার। রাতে অনেক জোর করার জন্য ইফাতের বাবা-মা রাতের খাবার খেয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। বাড়িতে ফিরতেই ইফাত তাদের কাছে এলো ইতি বেগম মুচকি হেসে,
– তোদের এনগেজমেন্ট ঠিক করে আসলাম আগামী সপ্তাহেই এনগেজমেন্ট।
– পায়রা রাজি হয়েছে মা?
– হুম রাজি।
পায়রাও ইতোমধ্যে জেনে গেছে প্রথমে বাবাকে আপত্তি জানায় কিন্তু পলাশ শেখ মেয়ের কথা কানে তুলেননি।
ইনান ইফাতের খাটে শুয়ে আছে, ইফাত মাথায় চাপড় মেরে,
– আমার বিছানায় কি করছিস তুই?
– শুয়ে আছি আর তোর গন্ধ নিচ্ছি ভাবী আসার পর তো আর এভাবে শুতে পারবো না।
– শুরু হয়ে গেছে নাটক।
– নাটক বল যাই বল তুই তো পায়রাকে পেয়ে গেছিস কিন্তু আমি তো সাবিহাকে পেলাম না।
– আগে পড়াশোনা কমপ্লিট কর এছাড়া সাবিহা তো আর পায়রার মতো নয় তোকে খুব ভালবাসে বিয়ের সময় হলে সাবিহার সঙ্গে তোর বিয়ে দিয়ে দিব।
– তোরা না দিলে পালিয়ে যাব। এবার বল পার্টি দিবি না?
– কিসের পার্টি?
– পায়রাকে পেয়ে যাচ্ছিস।
– কিছু হলেই তোর আর বাবার পার্টি চাই আগে পুরোপুরি পেয়ে নেই তারপর পার্টি,পায়রাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে সত্যি সত্যি রাজি তো?
– চাপ নিস না রাজি না হয়ে যাবে কোথায়।
– রাজি হলেই ভালো।
_______________
‘মা তোমার সামনে সবকিছু হল অথচ তুমি কিছু বললে না। তুমি জানো না আমি ছোট থেকেই পায়রাকে ভালোবাসি?’
– আমার কি করার ছিল আবরার আমিও তো চেয়েছিলাম পায়রাকে আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে আসব কিন্তু আসমা যদি রাগ করে সে জন্য বলতে পারিনি।আজ এনায়েত মির্জা ইফাতের জন্য পায়রার সম্বন্ধ নিয়ে আসলেন সবাই রাজিও হয়ে গেল আমি কি করতাম।
– সত্যি তোমার কিছু করার ছিল না ঠিক আছে এবার যা করার আমিই করব পায়রা শুধু আমার হবে ওই ইফাত মির্জা কি ভেবেছে সবসময় আমাকে হারিয়ে দিবে? নাহ আমি আর হারবো না পায়রাকে নিজের করে ওকে হারিয়ে দিব।
– কি করতে চাইছিস তুই?
– তা তো সময় হলেই দেখতে পাবে।
– এমন কিছু করিস না যাতে ওদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।
আবরার এর কোনো উত্তর দিল না বাড়ি থেকে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে গেল।
চলবে…..