মন পায়রা পর্ব-০৭

0
921

#মন পায়রা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৭

‘একা একা দাঁড়িয়ে আছো কেন কারো জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে নাকি?’

আজ পায়রা বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়নি।একা একা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।পায়রাদের বাড়ি থেকে ইফাতদের বাড়ি বেশ কাছে বিশ মিনিটের দূরত্ব। ইফাত যেই রাস্তা দিয়ে অফিস যায় মূলত সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে পায়রা। পায়রারও ইফাতকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল একটা দিন ইফাতের সঙ্গ পাওয়ায় তার মনটাও ইফাতের প্রতি উতলা হয়ে উঠেছে কেন এমনটা হচ্ছে জানা নেই।
ইফাত অফিসে যাওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে নিজেই ড্রাইভ করছে।ইফাতের নিজের গাড়ি নিজেরই ড্রাইভ করতে ভালো লাগে পায়রাকে দেখতেই গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করল।পায়রা মনে মনে অনেক খুশি হয়েছে কিন্তু ইফাত যাতে বুঝতে না পারে সেজন্য স্বাভাবিক ভঙ্গিতে,

– রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছি ভার্সিটিতে যাব।

– তোমাদের গাড়ি কোথায়?

– আনিনি।

– কেন?

-আপনাকে বলবো কেন?

– তাও ঠিক কিন্তু মনে হয় না এখন রিক্সা পাবে আমি তো ওদিক থেকেই আসলাম আমার গাড়িতে উঠো তোমাকে দিয়ে আসি।

পায়রা এতক্ষণ এই কথাটাই শুনতে চাইছিল মনে মনে ভাবল,’সাথে সাথে রাজি হওয়া যাবে না সন্দেহ করবে।’

– কি ভাবছো মন পায়রা?

– আপনি যেতে পারেন।

– যাব কিন্তু তোমাকে নিয়ে যাব।

– আপনার অফিস তো অন্য রাস্তায়।

– তোমার চিন্তা করতে হবে কেন তুমি ভার্সিটি পৌঁছাতে পারলেই তো হয়।

পায়রা কিছু না বলে গাড়িতে উঠে পড়ল। ইফাত গাড়ি চালাচ্ছে পায়রা আড়চোখে বারবার তাকাচ্ছে ইফাতের দিকে আর বিড়বিড় করছে,’লোকটা এত সুন্দর কেন?’

পায়রার আচরণ অদ্ভুত লাগছে ইফাতের কাছে। অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে পায়রা তার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আর কিছু বিড়বিড় করছে।ইফাত এবার জিজ্ঞেস করেই ফেলল,

– কিছু বলবে পায়রা?

পায়রা ইফাতের কথায় হকচকিয়ে গেছে ভাবছে ইফাত কি দেখেছে, মনে আবার সাহস জুগিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে,

– বলার হলে ডাক দিতাম।

– তাহলে লুকিয়ে দেখছো কেন? তুমি চাইলে আমাকে ভালো করে তাকিয়ে দেখতে পারো।

পায়রার রাগ হচ্ছে সাথে লজ্জাও পাচ্ছে তবুও ইফাতকে বুঝতে দেওয়া যাবে না জানালার দিকে তাকিয়েই বলল,

– সত্যিই আপনাকে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম আপনাকে দেখলেই মেয়েরা ফিদা হয়ে যায় কেন?

– আমি সুন্দর,হ্যান্ডসাম তাই ফিদা হয় এতে ভাবার কি আছে?

– আমার তো তেমন মনে হয় না।

ইফাতের মুখের ভঙ্গি সিরিয়াস হয়ে গেল অসহায় কন্ঠে,
– সত্যি মনে হয় না?

– না দেখছেন না আপনাকে আমার ভালো লাগে না।

ইফাত চিন্তায় পড়ে গেল পায়রা মনে মনে হাসছে।গাড়িটা থেমে গেল পায়রা ইফাতের দিকে তাকিয়ে,
– গাড়ি থামালেন কেন?

– তোমার ভার্সিটির সামনে এসে গেছি।

পায়রা জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই ভার্সিটি দেখতে পেয়ে,
– এত তাড়াতাড়ি এসে গেলাম?

– তাড়াতাড়ি কোথায়?

পায়রা ইফাতকে রাগ দেখিয়ে নেমে ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকে গেল।ইফাত অবাক হয়ে তাকিয়ে,
– রাগ দেখাল কেন? আমি তো রাগার মতো কিছু করিনি।

পায়রাকে দেখে অশমি এগিয়ে এসে,
– তুই ইফাত ভাইয়ার গাড়ি করে এলি কেন?

– কেন তোর সমস্যা?

– সমস্যা হবে কেন আসলে ভাইয়া আর আমি তোর জন্য অপেক্ষা করেছিলাম।

– অপেক্ষা করতে গেলি কেন?

– না ভাবলাম আজ একসাথে আসি কিন্তু খালামণির কাছে শুনলাম তুই বেরিয়ে গেছিস আর এখন ইফাত ভাইয়ার গাড়ি থেকে নামলি কি চলছে রে তোদের?

– বললাম না ইফাত আমাকে পছন্দ করে।

– কিন্তু তুই তো করিস না।

– করি না তবে করতে কতক্ষণ।
____________

ইফাত অফিসে এসে নিজের কেবিনে বসে আছে কাজে মন বসছে না মন ছটফট করছে।আরাফ কাশি দিয়ে,
– স্যার এনি প্রবলেম?

– আচ্ছা আরাফ আমাকে দেখতে কেমন লাগে?

আরাফ চমকে গিয়ে,
– বুঝলাম না স্যার।

– আমাকে দেখতে কেমন লাগে?খুব খারাপ দেখতে আমি?

– আপনি দেখতে খারাপ হবেন কেন স্যার! অফিসের কত মেয়ে আপনার জন্য পাগল।

– তাহলে পায়রা বলল যে?

– মেডামের কথা বাদ দিন তো উনি আপনার সঙ্গে মজা করেছে হয়তো।

– হতে পারে।

আরাফের কথায় আস্বস্ত হয়ে ইফাত কাজে মন দিল।আরাফ বাইরে গিয়ে অনেক হেসেছে তার স্যার প্রেমে পড়ে রাতারাতি পাল্টে গেছে।
_____________

পায়রার মন টিকছে না বাড়িতে,ইফাতের কথা মনে পড়ছে আর আনমনে মুচকি হাসছে। সাবিহার ঘরে গিয়েছিল কিন্তু সাবিহা ইনানের সঙ্গে ফোনে প্রেম করতে ব্যস্ত। বিছানায় এপিট ওপিঠ হয়ে শুয়েও ছটফটানি কমাতে পারছে না নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করল,’পায়রা তুই কি ওই খারাপ লোকটার প্রেমে পড়েছিস? উহু মোটেও ওই লোকের প্রেমে পরবো না কিন্তু মন তো উনাকে মিস করছে।না না কিছুতেই উনাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না তাহলে উনি জিতে যাবেন আর আমি কিছুতেই ইফাতের কাছে হারবো না।

ইফাত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে দেখছে।ইতি বেগম ঘরে এসে ছেলের হাবভাব পর্যবেক্ষণ করে,
– ইফু এভাবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস?

ইফাত মা’কে দেখে টেনে ঘরে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে,
– আচ্ছা মা আমাকে দেখতে খারাপ লাগে?

– তুই আমার রাজপুত্রের মতো দেখতে বড় ছেলে তোকে কেন খারাপ লাগবে? মাথা খারাপ হয়েছে?

– ওহ তুমি আমার ঘরে এসময় কিছু বলবে?

– না দেখতে আসলাম কি করিস? জানিস ইনানও প্রেম করছে।

– এখন আবার ইনানকে নিয়ে পড়েছ।

– আমি দেখে আসলাম কার সঙ্গে যেন হেসে কথা বলছে।

– হয়তো বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছে।

– বন্ধুর সঙ্গে এভাবে কথা বলে?

– এখনকার সময় এভাবেই কথা বলে।

– কি সময় এলো আমার দু’টো ছেলের অবস্থা খারাপ করে দিচ্ছে।

– মা আমরা বড় হয়েছি ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছি তোমাদের অসম্মান হবে এমন কোনো কাজ আমরা করব না আমাদের নিয়ে চিন্তা করে প্রেশার বাড়িও না তো।

– যেদিন নিজের ছেলে-মেয়ে হবে সেদিন বুঝবি।

বলেই ইতি বেগম ইফাতের ঘর থেকে চলে গেলেন।ইফাতের মায়ের এমন আদর ভালোই লাগে দরজা আটকে শুয়ে পড়ল।ইফাতের মোবাইলটা বেজে উঠল স্ক্রিনে চোখ রাখতেই চোখ মুখ বিষ্ময়ে ভরে গেছে ভেতরে ভালো লাগা কাজ করছে।কলটা ধরে ফোন কানে ধরল দু’পাশে নিরবতা বিরাজ করছে।ইফাত নিজেই বলা শুরু করল,

– আমি ভাবতেই পারছি না আমার মন পায়রা আমাকে কল দিয়েছে! কিন্তু কথা বলছো না কেন চুপ করে থাকার জন্য কল দিয়েছ?

পায়রা মনের সঙ্গে অনেক যুদ্ধ করে অবশেষে হেরে গিয়ে ইফাতকে কল দিল কন্ঠস্বর শোনার জন্য।ইফাত এর আগেও অনেকবার কল দিয়েছিল তাই নাম্বার ছিল কিন্তু পায়রা ইফাতকে ব্লক মেরে দিয়েছিল।আজ ব্লক খুলে কল দিয়েছে পায়রা বলল,

– আসলে নাম্বারটা মোবাইলে দেখতে পেলাম চিনতে না পেরে নাম্বারের মালিক জানার জন্য কল দিয়েছিলাম।

– তুমি তো আমাকে ব্লক করে দিয়েছিলে তাহলে নাম্বার সামনে এলো কিভাবে?

– ইয়ে মানে ব্লক লিস্ট চেক করছিলাম কিন্তু এই একটা নাম্বার পরে থাকতে দেখলাম, কেন ব্লক করেছি কাকে করেছি মনে করার জন্য কল দিলাম।

– এখন কি আবার ব্লক করবে?

– হুম, আপনি ঘুমাননি এখনও?

– শুয়ে ছিলাম তখন তোমার কল আসলো।

– বিরক্ত করলাম আপনাকে।

– ভাবলে কি করে তোমার জন্য আমি বিরক্ত হব।

পায়রা আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তাই বলল,
– গুড নাইট রাখলাম।

– এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে?

– না।

– তাহলে?

– আমি ভাবলাম আমার জন্য আপনার ঘুমের সমস্যা হচ্ছে।

– তোমার জন্য আমার কোনো সমস্যা হয় না কারণ তোমাকে আমি ভালোবাসি তোমার সবকিছুই আমার ভালো লাগে সত্যি কথা বললেই হয় তোমার ঘুম পেয়েছে।

– আমার ঘুম পায়নি এমনিতেও আমি দেরি করে ঘুমাই।

পায়রা এটাই চাচ্ছিল ইফাত যেন তার সঙ্গে কথা বলে আর তাই হলো। দু’জনের মধ্যে অনেক কথা হচ্ছে সবচেয়ে খুশি ইফাত এই প্রথম পায়রা তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছে।
______________
ভোরের আলো ফুটে গেছে অথচ ইফাতের ঘুম থেকে উঠার নাম নেই।ইফাত প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে উঠে নাস্তা করে অফিসে চলে যায় কিন্তু আজ ঘুম থেকেই উঠেনি।ইতি বেগম এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ছেলেকে ডাকতে আসলেন,

– ইফু সাড়ে নয়টা বেজে গেছে এখনও ঘুমাচ্ছিস অফিসে যাবি কখন? সারা রাত কি ঘোড়ার ঘাস কেটেছিস যে পরে পরে ঘুমাচ্ছিস?

ইফাত চোখ ঢলে দরজা খুলে দিতেই ইতি বেগম হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে বিছানা গুছাতে শুরু করলেন ইফাত বিছানায় বসে,
– বিছানা আমি গুছিয়ে নিব মা আরেকটু ঘুমিয়ে নেই তারপর।

– সারা রাত কি করেছিস?

– তোমার হবু বউমার সঙ্গে কথা বলেছি।

ইতি বেগম বালিশটা রেখে ইফাতের দিকে তাকিয়ে,
– পায়রার সঙ্গে! কিন্তু তুই না বললি পায়রা তোকে পছন্দ করে না।

– করেই তো না কিন্তু কাল হঠাৎ করেই কথা বলল।

– প্রেমের লক্ষন মনে হয় পায়রাও তোর প্রেমে পড়েছে।

– তোমার কথা সত্যি হলে ভালোই হবে।

– আজ অফিসে যাবি না?

– একটু পরে যাব।

সারা রাত কথা বলার কারণে পায়রারও ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে আজও ভার্সিটি মিস করেছে। পায়রা ভার্সিটি না যাওয়ায় সাবিহাও কলেজে যায়নি।সাবিহা একটা ফাঁকিবাজ মেয়ে কোনো কারণ পেলেই কলেজ ফাঁকি দেয়। পায়রা বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে চোখ বন্ধ সাবিহা বিছানায় ধপ করে বসে,

– আপু আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হল কেন?

– ইফাতের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ঘুমাতে দেরি হয়ে গেছে।

সাবিহা চোখ বড় বড় করে অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে,
– তুই ইফাত ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলেছিস! তার মানে তুই ইফাত ভাইয়ার প্রেমে পড়েছিস?

পায়রা বিরক্ত হয়ে,
– উফ আস্তে কথা বল সবাই শুনবে।

– সত্যি তুই ইফাত ভাইয়াকে পছন্দ করিস?

– ভালোই লাগে যতটা খারাপ মনে করেছিলাম তার থেকেও ভালো আমাকে ভালোবাসে আর ইগনোর করা ঠিক হবে না।

– ভাইয়াকে বলে দিয়েছিস!

– উহু বলতে পারিনি আমি উনার কাছে হারতে চাই না এছাড়া কেমন একটা ছ্যাচড়া লাগবে।

– ভালোবাসায় আবার হার জিত বলে কিছু আছে এগুলোকে ছ্যাচড়া বলে না ছ্যাচড়া বললে এত অপমান ইগনোরের পরেও ভাইয়া তোর পেছনে পরে থাকতো না। তোকে দেখার জন্য সবার চোখের আড়ালে ছুটে আসত না।

– তাহলে কি বলিস মনের কথা বলে দেওয়া উচিত?

– অবশ্যই।

– কিভাবে বলবো লজ্জা করে।

– ঢং বাদ দে আমিও ইনানকে বলেছি তোকেও ইফাত ভাইয়া বলেছে।

– কিন্তু আমি কিভাবে বলবো?

– যেভাবে ইফাত ভাইয়া তোকে বলেছে সরাসরি গিয়ে বলে দিবি ইফাত আপনাকে আমারও ভালো লাগে যা হওয়ার হয়ে গেছে চলুন প্রেম করি কিংবা বিয়ে করে নেই।

– পাগল হয়েছিস।

– লজ্জা পেয়ে লাভ নেই এভাবে লজ্জা পেলে প্রেম আর বিয়ে করতে হবে না।

– উনাকে পাবো কোথায়?

– ঢং দেখলে বাঁচি না প্রতিদিনই তো দেখা হয় এছাড়া ফোন নাম্বার তো আছেই কোথাও দেখা করতে বল।

– আইডিয়া মন্দ নয়।

– আমাকে কিন্তু বড় একটা ট্রিট দিতে হবে।

– আচ্ছা আমার সুইট বোন দিব ট্রিট।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে