#মন পায়রা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৪
কালো জিন্স,সাদা শার্টের উপর কালো ব্লেজার,জেল দিয়ে চুল গুলো আটকানো। খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে ইফাতকে। ইফাত এসে এনায়েত মির্জার পাশে দাঁড়ালো, এনায়েত মির্জা সকলের উদ্দেশ্যে গলা ছেড়ে,
– লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান আজকের পার্টি হচ্ছে আমার বড় ছেলে ইফাত মির্জার জন্য।আজ ওর জন্য আমাদের কোম্পানি বড় একটা ডিল পেয়েছে। আজ আমরা অনেক খুশি এই খুশিটা সবার মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার জন্য এই পার্টির এরেঞ্জ করলাম।
সবাই সম্মিলিত হাত তালি দিয়ে ইফাতকে শুভেচ্ছা জানালো।ইফাত আর ইনান দুই ভাই দেখতে বেশ, ইনান সাবিহার সাথে গল্প করছে।সাবিহা নিজ থেকেই ইনানের সঙ্গে কথা বলতে গেছে কারণ আগে থেকেই ইনানকে ওর ভালো লাগে কিন্তু কখনও সাহস করে কথা বলতে পারেনি আজ অনেক সাহস জুগিয়ে কথা বলতে গেছে। ইনান অনেক মিশুক সহজেই সাবিহার সঙ্গে মিশে গেছে।
ইফাত তার বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছে,অশমি একনজরে তাকিয়ে আছে ইফাতের দিকে,দৃষ্টি দিয়েই যেন ইফাতকে গিলে খাচ্ছে। পায়রা চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে তার বাবা-মা,চাচা-চাচী অন্যদিকে বড়দের সঙ্গে গল্প করছে,সাবিহা ইনানের সাথে। নিজেকে একা একা লাগছে তখনি আবরার এসে,
– একা একা দাঁড়িয়ে আছিস কেন পায়রা?
– আমি একা তাই একাই দাঁড়িয়ে আছি সঙ্গি পাবো কোথায়?
– আমি আছি তো।
পায়রা আর আবরারকে একসঙ্গে দেখে রাগে শরীর জ্বলছে ইফাতের।আরাফ ইফাতের কাছে এসে ফিসফিস করে,
– স্যার কুল রাগ কন্ট্রোল করুন এখানে সিনক্রিয়েট করলে আপনার বাবা রাগ করবেন।
ইফাত তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে আরাফের দিকে তাকাতেই আরাফ ভয় পেয়ে গেল।ইফাত বাঁকা হেসে,
– চিন্তা করো না আরাফ বাবা রাগ করবে তেমন কিছুই করব না আমি।
বলেই দু’টো কুল ড্রিংকস হাতে নিয়ে পায়রা আর আবরারের দিকে এগিয়ে গিয়ে,
– মি.আবরার ওয়াহিদ হাত খালি কেন? নিন কুল ড্রিংকস খান।
আবরার হাত বাড়িয়ে নিয়ে,
– থ্যাঙ্কস।
পায়রা ইফাতের হাসির আসল মানেটা বুঝতে পেরে সুযোগ বুঝে এখান থেকে সরে গেল।ইফাত কিছুক্ষণ আবরারের সঙ্গে কথা বলে পায়রার পাশে গিয়ে,
– কি ব্যাপার পায়রা আজ এত চুপচাপ ভদ্র হয়ে দাঁড়িয়ে আছো?
– আমি তো সবসময়ই ভদ্র।
– তাই নাকি আমি তো জানতাম না।
পায়রা যথা সম্ভব ইফাতকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।ইফাত বুঝতে পেরেছে কিন্তু তারপরেও পায়রার পিছনে লেগে আছে।পায়রা যতই ইফাতের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করুক ইফাত তো পায়রাকে ভালোবাসে।
ভালোভাবে পার্টি শেষ হয়ে গেল পুরোটা সময় ইফাত পায়রার সঙ্গে আঠার মতো লেগে ছিল।অশমি চেষ্টা করেও ইফাতের সাথে কথা বলতে পারেনি। বাড়ি ফাঁকা হয়ে গেছে যে যার যার মতো চলে গেল। শেখ পরিবারও বিদায় নিলো।পায়রা যেতেই ভেতরটা খালি খালি লাগছে ইফাতের।
বাড়িতে এসে পায়রা পোশাক না পাল্টেই সপাৎ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। পায়রার মা আসমা বেগম ঘরে এসে,
– কি রে তুই জামা-কাপড় না পাল্টে বিছানায় কি করছিস?
– ক্লান্ত লাগছে পরে চেঞ্জ করব।
– চেঞ্জ করে তারপর শুয়ে থাক।
– বললাম তো পরে।
পলাশ শেখ স্ত্রীর চেঁচামেচি শুনে পায়রার ঘরে এসে,
– কি হয়েছে এখানে?
– তোমার মেয়ে বাইরে থেকে এসে ফ্রেশ না হয়েই শুয়ে আছে।
– পায়রা মা এটা তো ঠিক নয় যাও গিয়ে চেঞ্জ করে নাও নইলে অসুস্থ হয়ে যাবে।
পায়রা হেসে,
– ঠিক আছে বাবা।
পায়রা ওয়াশরুমে চলে গেল আসমা বেগম অবাক হয়ে,
– আমি এত করে বললাম শুনল না আর তুমি একবার বলতেই দৌড় দিলো!
পলাশ শেখ ভাব নিয়ে,
– তুমি বুঝবে না বাবা-মেয়ের ভালোবাসা।
– তোমরা থাকো ভালোবাসা নিয়ে আমি তো কেউ না।
– আহা পায়রার মা সবকিছুতেই রাগ করো।
– হ্যা আমার রাগটাই সবাই দেখে।
দু’জনে কথা বলতে বলতে নিজেদের ঘরে চলে গেল।পায়রা ফ্রেশ হয়ে এসে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল।
__________________
কেটে গেছে চারদিন সকালে নাস্তা করে অফিসে চলে গেল ইফাত।ইনান ভার্সিটিতে গেছে, এনায়েত মির্জা আজ আর অফিসে যাননি।সাবিহা কলেজ ড্রেস পরে রেস্টুরেন্টে বসে আছে বারবার চারিদিকে তাকাচ্ছে কেউ তাকে দেখছে নাকি। ইনান এসে সামনের চেয়ারে বসতে বসতে,
– লেট হয়ে গেল রাস্তায় কি জ্যাম।
সাবিহার দিকে ভালো করে তাকিয়ে,
– সাবিহা কলেজ ড্রেস পরেই চলে এসেছ!
– বাসা থেকে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি কিন্তু তুমি দেখা করতে চাইলে তাই আর কলেজে না গিয়ে এখানে চলে আসলাম।
– আহা বয়ফ্রেন্ডের জন্য কলেজ ফাঁকি দিয়েছ! ভাবতেই ভালো লাগছে।
– কেন ভুল করেছি?
– একদম না এতে তোমার প্রতি ভালোবাসা বেড়ে গেছে তবে কলেজ কিংবা পড়াশোনায় ফাঁকি দেওয়া উচিত নয় তোমার বলা উচিত ছিল তুমি কলেজে যাবে।
– কলেজ ছাড়া বাড়ি থেকে একা একা বের হতে দেয় না সবাই এখনও আমায় বাচ্চা ভাবে।
– তুমি তো বাচ্চাই উহু তুমি আমার পিচ্চি গার্লফ্রেন্ড।
– এসব বললে তোমার সঙ্গে ব্রেকাপ করে দিব বলে দিলাম।
– আরে না না আমি মজা করলাম।
সাবিহা আগে থেকেই ইনানকে পছন্দ করত সেদিন পার্টিতে দু’জনের ভাব হয় নাম্বার আদান প্রদান হয় অনেক কথা হয় দেখা হয় এর থেকে ইনানেরও সাবিহাকে খুব ভালো লেগে যায়। তারপর আর কি দু’জন দু’জনকে মনের কথা বলে এখন প্রেম করছে।
ইনান সাবিহাকে নিয়ে ঘুরাঘরি করে বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে দিয়ে সোজা অফিসে চলে গেছে ইফাতের কাছে।
সাবিহা সবেমাত্র ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসল তারমধ্যে পায়রা ঘরে এসে সাবিহাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে,
– কলেজের নাম করে সারাদিন কোথায় ঘুরা হয়েছে?
সাবিহা আমতা আমতা করে,
– কি বলিস আপু আমি তো কলেজেই গিয়েছিলাম।
– মিথ্যে বলিস না রাখির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল ওর মাধ্যমে জানলাম তুই কলেজে যাসনি।
সাবিহা মনে মনে রাখিকে ইচ্ছে মতো বকা দিয়ে,
– আসলে আপু
– ছেলেটা কে?
– কাউকে বলবি না প্রমিস কর।
– আচ্ছা প্রমিস।
– ইনান।
– কিহহ! ইফাতের ভাই ইনান ভাইয়া?
– হুম আমরা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসি।
– কবে থেকে চলছে?
-মাত্র দু’দিন।
– বাহ ইনান ভাইয়া তো ইফাতের থেকেও ফাস্ট।
– আমি কি তোর মতো নিরামিষ নাকি? ইফাত ভাইয়া তোকে কত ভালোবাসে কিন্তু তুই সবসময় খারাপ ব্যবহার করিস। আমি এসব পারবো না ইনান অনেক সুন্দর আর ভালো ছেলে তাই প্রেম শুরু করে দিয়েছি।
– পাকা তুই আর ওই ইফাতকে আমার বিরক্ত লাগে।
– হু একদিন ঠিকই ভালোবাসবি কিন্তু দেরি যেন না হয়ে যায়।
– রাখ তোর পাকা কথা। উনাকে আমি কখনও ভালোবাসবো না।
– হুম দেখা যাবে কিন্তু তুই ইনানকে ভাইয়া বলিস ইফাত ভাইয়াকে বলিস না কেন?
– ইনান ভাইয়া খুব ভালো কিন্তু ইফাত সে গুন্ডা উনি সম্মান পাওয়ার যোগ্য না।
– তাহলে আর কি তুমি থাকো তোমার ইগো নিয়ে আমি তো ইনানকে প্রায় পেয়েই গেলাম।
_____________
ইফাত মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে ইনান ইফাতের কেবিনের ভেতরে সোফায় বসে গেইম খেলছে আর গুনগুন করে গান গাইছে।ইফাত আড়চোখে ভাইকে দেখে,
– প্রেমে পড়েছিস নাকি?
– কই নাতো।
– তাহলে পলাশ আঙ্কেলের ভাইয়ের মেয়ে সাবিহার পেছনে ঘুরঘুর করিস কেন?
ইনান মোবাইল সাইডে রেখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে,
– তুই জানলি কিভাবে?
– তুই যেভাবে আমার ঘটনা জেনেছিস।
– ফলো করছিলি আমায়।
– হুম।
– বুঝলি ভাইয়া তোর শালি আমার মন কেড়েছে সারাক্ষণ ওর ভাবনায় থাকি।
– আমার শালি?
– পায়রা তোর বউ হলে তো সাবিহা তোর শালিই হবে।
– তুই তো বিয়ে পর্যন্ত চলে গেছিস।
– কেন তুই কি বিয়ে করতে চাস না?
ইফাত অসহায় মুখে,
– চাই কিন্তু পায়রা আমাকে সহ্য করতে পারে না আমি ওকে ভালোবাসি বললে ও প্রতিত্ত্যুরে বলে আমায় নাকি ঘৃণা করে।
– আমাকে দেখ ভাইয়া মাত্র চারদিনের পরিচয়ে কিভাবে মেয়ে পটিয়ে প্রেম শুরু করে দিয়েছি।
– তুই কাউকে পটাসনি সাবিহা তোকে আগে থেকেই পছন্দ করত।
– তুই জানলি কিভাবে?
– আমাকে বলেছে ওর সঙ্গে আমার কথা হয় ওর থেকেই তো পায়রার খবর নিতাম তখনি বলেছিল।
– তাহলে পায়রার তোকে ভালো লাগে না কেন?
– জানি না।
– সমস্যা নেই ভাইয়া পায়রা তোকে ভালোবাসুক কিংবা না বাসুক তুই তো বাসিস বেশি তিড়িং বিড়িং করলেই তুলে এনে বিয়ে করে নিবি আমি আছি তোর পাশে।
ইনানের কথা শুনে মুচকি হেসে ইফাত বলল,
– জোর করে কখনও ভালোবাসা হয় না আর বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনও জোর করে হয় না।
________________
অশমি গাল ফুলিয়ে ছাদে বসে আছে। আবরার অশমির পাশে বসে,
– কিরে ছাদে বসে আছিস মন খারাপ?
অশমি কোনো উত্তর দিলো না। আবরার মাথায় হাত বুলিয়ে,
– কেন মন খারাপ আমাকে বল।
– বলে লাভ নেই তুই ঠিক করতে পারবি না।
– কে বলেছে পারবো না? তুই শুধু একবার বলে দেখ।
– আমি ইফাত ভাইয়াকে খুব ভালোবাসি কিন্তু ইফাত ভাইয়া নাকি পায়রাকে ভালোবাসে এখন কি হবে ভাইয়া।
আবরারের আগে থেকেই সন্দেহ ছিল কিন্তু এখন তার সন্দেহ পুরোপুরি সঠিক হয়ে গেছে। মনের আরও কিছু দিধা মেটানোর জন্য,
– পায়রা কি ইফাতকে পছন্দ করে?
– পায়রা তো ইফাত ভাইয়াকে সহ্য করতে পারে না তবে কতদিন আর ইফাত ভাইয়া যেমন মানুষ পায়রা ঠিক একসময় ইফাত ভাইয়ার প্রেমে পড়বে।
– এটা কখনও হতে দেওয়া যাবে না তুই তো পায়রার খুব কাছের খালাতো বোন কম বান্ধবী বেশি তুই ইফাতের সম্পর্কে ওর মন আরও বিষিয়ে দিবি।
– কি বলছিস ভাইয়া আমার এক তরফা ভালোবাসার জন্য এসব করব?
– এছাড়া আর কোনো উপায় নেই কারণ আমিও পায়রাকে ছোট বেলা থেকে ভালোবেসে আসছি মা ও পায়রাকে পছন্দ করে কিন্তু বলতে পারে না দু’বোনের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে।
– ভাইয়া!
– ইফাতের ভালোবাসাও এক তরফা ইফাত সুখী হলে আমরা সবাই অসুখী হব যা করার আমাদের দু’জনকে করতে হবে এছাড়া পায়রা তো আর ইফাতকে পছন্দ করে না।
অশমির মুখে হাসি ফুটেছে ভাইকে আশ্বস্ত করে,
– তুই যা বলবি আমি তাই করব ভাইয়া।
– এই তো আমার গুড গার্ল বোন।
চলবে………