#মন পায়রা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
সূচনা_পর্ব
‘দেখুন ভালো করে বলছি আমাকে ছেড়ে দিন।নইলে আমি কিন্তু চেঁচামেচি করব সেটা কিন্তু আপনার জন্য খারাপ হবে।’
মূহুর্তের মধ্যে মেয়েটির গালে জুড়ে থাপ্পড় পরলো। মেয়েটি মেঝেতে ছিটকে পড়ে গেল টাইলস যুক্ত মেঝেতে মাথা লেগে ফেটে গেছে রক্ত বের হচ্ছে।ছেলেটি হাটু মুড়ে সামনে বসতেই মেয়েটি মুখ তুলে তাকিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে,
– আপনি আমাকে মারলেন ইফাত? আমার অপরাধ কি? কি করেছি আমি?
ইফাত চোয়াল শক্ত করে,
– হ্যা মেরেছি তোকে নিষেধ করেছিলাম না কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বলবি না তারপরেও কেন একটা ছেলের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছিলি? ছেলেটা তোর হাতে স্পর্শ করেছিল কিন্তু কিছু বললে না খুব ভালো লেগেছে ছেলেটাকে তাই না?
– আবরার ভাইয়ার কথা বলছেন? আবরার ভাইয়া আমার খালাতো ভাই উনার সঙ্গে কথা বললে সমস্যা কি?
– কথা বললে সমস্যা নেই তবে হেসে গড়াগড়ি খেয়ে কথা বললে সমস্যা।
– এই জন্য আপনি এভাবে আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন আমার গায়ে হাত তুললেন? আজ পর্যন্ত আমার গায়ে কেউ হাত তুলেনি একটা ধমক পর্যন্ত দেয়নি।
– এই জন্যই তো তোমার এমন অবস্থা দিনকে দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছো হিতাহিত জ্ঞান নেই যা ইচ্ছে তাই করছো, আচ্ছা পায়রা আমি যে তোমাকে এত ভালোবাসি বুঝো না কেন?
– আপনার ভালোবাসা বুঝার কোনো ইচ্ছে নেই আমার আপনাকে আমি ঘৃণা করি।
ইফাতের রাগ বেড়ে গেছে পায়রার গাল দু’টো চেপে ধরে,
– দরকার নেই বুঝতে হবে না আমাকে,এর পরে যেন আর কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বলতে না দেখি খুব খারাপ হয়ে যাবে।
পায়রা কোনো উত্তর দিলো না রাগে ক্ষোভে গাল দু’টো লাল হয়ে গেছে ইচ্ছে করছে ইফাতের মাথা ফাটিয়ে দিতে কিন্তু ইচ্ছে পূরণ করতে কখনোই পারবে না।
পায়রার হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে কপালে ব্যান্ডেজ করে দিল ইফাত। পায়রাকে নিয়ে নিজের গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভ করছে।পায়রা এখনও কাঁদছে ইফাত চুপ করে আছে।পায়রাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে আবারো গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল ইফাত। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় পায়রার ডাক পড়ে,পায়রার মা আর চাচী সোফায় বসে গল্প করছিলেন পায়রাকে দেখেই ডাক দিলেন।পায়রা তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে তার মা,
– তোর কপালে কি হয়েছে? ব্যান্ডেজ কেন?
– পড়ে গিয়ে ফেটে গেছিল তাই ব্যান্ডেজ করে নিয়েছি।
– পড়লি কিভাবে?
– আবার পড়ে গিয়ে দেখাই কিভাবে পড়েছি।
– রাগছিস কেন?
পায়রা তাদেরকে এড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। পায়রার মা-চাচী চিন্তিত হয়ে পড়েন।পায়রা বদমেজাজি একটা মেয়ে কারো কথা শুনে না কাউকে ভয় পায় না কিন্তু ইফাতকে দেখলেই ওর কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে যায়।
ইফাত হচ্ছে পায়রার বাবা পলাশ শেখের বিজনেস পার্টনার এনায়েত মির্জার বড় ছেলে, আর ছোট ছেলের নাম ইনান। বিজনেস সূত্রেই দুই পরিবারের এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে,দুই পরিবারের মধ্যেই বাড়িতে যাতায়াত আছে। ইফাত প্রথম পায়রাকে দেখেছিল ইনানের জম্মদিনের পার্টিতে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে দেশের বাইরে থাকায় পায়রাকে কখনও দেখেনি ইফাত। ইনানের জম্মদিনের কিছুদিন আগে দেশে ফিরেছিল আর সেদিন পায়রাকে দেখে নিজের মন হারায় আর তারপর পায়রার সম্পর্কে সব খবরাখবর নেয়।ইফাত নিজের মনের কথা কখনও চেপে রাখে না পায়রা ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরছিল সেদিন রাস্তায় হুট করে মনের কথা জানিয়ে দেয় ইফাত কিন্তু পায়রা সাথে সাথে না করে দেয়।ইফাত তো ইফাতই ছোট বেলা থেকে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে এবারও তাই পায়রার পিছনে জোকের মতো পরে আছে।
পায়রাকে অনেকবার সবার সামনে নাকানিচুবানিও খাইয়েছে যার কারণে পায়রা ইফাতকে একদম সহ্য করতে পারে না।
পায়রা ঘরে এসে বিছানায় বসে রাগে ফুঁসছে অনেক কান্না পাচ্ছে।যতটা রাগ হচ্ছে তার থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে,’ইফাত আমাকে মারলো! উনার সবকিছু মানা যায় কিন্তু আজকের ঘটনা? এই উনার ভালোবাসা কিভাবে আঘাত করল একটু কষ্ট হলো না?
পায়রা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখটা ভালো করে দেখে নিলো, গালে এখনও পাঁচটা আঙুলের দাগ স্পষ্ট।আর কান্না থামানো যাচ্ছে না এবার বাচ্চাদের মতো কেঁদেই দিলো সঙ্গে মনে মনে বকছে ইফাতকে।
ইফাত বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় থাকা দোলনায় বসে আছে। নিজের বারান্দায় দোলনা ইফাত বসিয়েছে দু’জনে বসার মতো দোলনা যখন রাগ হয় তখন এখানেই বসে। হাতে একটা ছুড়ি হঠাৎ করে নিজের হাতে ছুড়ি দিয়ে টান দিতেই কেটে গিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু করল।ব্যথায় চোখ বন্ধ করে নিলো ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে,
– এই হাত দিয়ে আমি আমার পায়রার উপর হাত তুলেছি কিন্তু কি করবো তোমাকে অন্য কারো সঙ্গে দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না খুব কষ্ট হয়।
ইফাতের মা ইতি বেগম খাবার নিয়ে এসেছিলেন।ইফাতকে ঘরে না পেয়ে বারান্দায় আসতেই যেন উনার প্রাণ পাখি উড়ে যাচ্ছিল, চেঁচিয়ে বললেন,
– ইফু হাত কাটলো কিভাবে বাবা? কত রক্ত বের হচ্ছে।
ইফাত কিছু বলল না ইফাতের মা দ্রুত ইনানকে ডেকে আনলো।ইনান এসে ভাইয়ের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে,
– ভাইয়া এইভাবে কেউ নিজের হাতের করুন অবস্থা করে?
– ব্যান্ডেজ করা শেষ এবার নিজের ঘরে যা।
– তুই একটা ঘাড়ত্যাড়া।
ইনান ইফাতের ঘর থেকে চলে গেল কিন্তু ইতি বেগমের কান্না থামছে না। কাঁদতে কাঁদতে বলছেন,
– তোর কি হয়েছে ইফু মা’কে বল। কেন সুইসাইড করতে যাচ্ছিলি? তোর কিছু হলে আমার কি হবে? মায়ের কথা একটাবার ভাবলি না।
ইফাত বিরক্ত হয়ে,
– উফ মা সুইসাইড করতে যাব কেন? রাগ উঠেছে তাই হাত কেটেছি তাও সামান্য কেটেছে সামান্য ঘটনা এত বড় করার কি আছে?
– তোর কাছে সামান্য হলেও আমার কাছে অনেককিছু অনেক কষ্ট করে জম্ম দিয়েছি তোর জীবনের মূল্য আমার কাছে অনেক।চল খেয়ে নিবি আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
– আমি খেয়ে নিব তুমি যাও।
– ডান হাতটাই কেটেছিস খাবি কিভাবে? চুপ করে আয় খাইয়ে দেই।
ইফাত জানে তার মা কোনো কথাই শুনবে না তাই চুপ করে মায়ের হাতে খেয়ে নিলো এতে ইফাতের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল।ইফাত আর ইনান বয়সের পার্থক্য তিন বছর। ছোটবেলায় দুই ভাই পাশাপাশি চেয়ারে একসঙ্গে বসতো আর তাদের মা ইতি বেগম দু’জনকে একসাথে এক থালে করে খাইয়ে দিতেন।বড় হওয়ার পর আর কখনও মায়ের হাতে খাওয়া হয়নি বলতে গেলে নিজেই খেতে চায়নি ইনান এখনও মায়ের হাতে খায় কিন্তু ইফাতের লজ্জা করে তবে আজ যেন অনেক ভালো লাগছে ইফাতের।
ইতি বেগম ইফাতকে খাবার খাইয়ে ব্যথার ওষুধ দিয়ে বিছানায় জোর করে শুইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এবার আর ইফাত বাঁধা দেয়নি ভালো লাগছে আজ মায়ের আদর। সবকিছু ভুলে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো ইফাত।ইফাত ঘুমাতেই ইতি বেগম ছেলের কপালে মমতাময়ী চুমু খেয়ে চলে গেলেন।
______________
মন খারাপ হলে মানুষ কান্না করে মন খারাপ দূর করার জন্য কিন্তু কান্না করেও আবার আরেক সমস্যা চোখ ব্যথা করে আবার তার সাথে সাথে মাথাও ব্যথা করে এক কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে গেলে আরেক কষ্ট হাজির।
কান্না করার কারণে পায়রার মাথা ব্যথা করছে চোখ ফুলে গেছে। বিছানায় এলোমেলোভাবে শুয়ে আছে রাতে খায়নি অনেকবার ডাকা হয়েছিল কিন্তু যায়নি। রাত অনেক হয়েছে কিন্তু পায়রার চোখে ঘুম নেই তখনকার দৃশ্য বারবার চোখের সামনে ভেসে আসছে। ভেতরটা বিষিয়ে উঠছে শোয়া থেকে উঠে কাউকে কল করে,
– ওই ইফাত মির্জার এতবড় সাহস আমার গায়ে হাত তুলেছে ওকে এর জন্য শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমি কিছুতেই শান্তি পাবো না।
অপরপাশের ব্যাক্তি কি বলল পায়রাই শুনতে পেল।পায়রা দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
– বেশি কিছু করতে হবে না যেই হাত দিয়ে আমায় আঘাত করেছে সেই হাতটার একটু করুন অবস্থা করে বেটাকে হাসপাতাল থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আয়।
পায়রা ফোনটা রেখে দিল শয়তানি হাসি হেসে,
– এবার ইফাত আপনি বুঝবেন এই পায়রা কি চিজ।
মন হালকা করে এবং মাথা ব্যথা কমাতে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো পায়রা।
____________
পায়রার ঘুম ভাঙলো বেলা এগারোটায়। রাতে দেরি করে শোয়ার জন্য এবং মাথা ব্যথার কারণে ঘুম দেরিতে ভেঙেছে।আজ আর ভার্সিটি যাওয়া হয়নি,রাতে না খাওয়ার জন্য অনেক খিদে পেয়েছে দ্রুত টেবিলে গিয়ে খাবার খেয়ে সোফায় চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
পায়রার চাচাতো বোন সাবিহা এসে,
– আপু কি হয়েছেরে তোর কাল মাথা ফাটিয়ে আসলি রাতে খেতে নামলি না আজ আবার দেরি করে ঘুম থেকে উঠে ভার্সিটি মিস দিলি।
– কোনোটাই ইচ্ছে করে করিনি।
– তোর আর ইফাত ভাইয়ার মধ্যে কি চলছে রে? সকাল সকাল ইফাত ভাইয়া ফোন করে তোর খবর নিলো?
পায়রা ব্রু উঁচিয়ে,
– উনি আমার খবর নিয়েছেন?
– হুম জিজ্ঞেস করল পায়রা কেমন আছে, খেয়েছে ভার্সিটি গিয়েছে।
– জিজ্ঞেস করতেই পারে স্বাভাবিক।
– আমাদের কেন জিজ্ঞেস করে না?
– উনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর আমায় কেন বলছিস?
সাবিহাকে এড়িয়ে বসা থেকে উঠে বাগানে চলে গেল পায়রা মনে মনে ভাবছে,’এই লোকটা এমন কেন?এই ভালোবাসি বলে চেঁচায় আবার নিজেই আঘাত করে কিছুক্ষণ পর কষ্ট পেয়ে খোঁজ খবর নেয়।পায়রা বাগানে যেতেই পেছন থেকে,
চলবে…….