মন দিতে চাই পর্ব-৯+১০

0
2716

#মন_দিতে_চাই
#৯ম_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী

বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম আমি। কোথায় যাব কি করব জানি না। শুধু এটুকু জানি আজ আমায় এই সিলেট শহর থেকে চলে যেতে হবে। মামির শর্ত মেনে আমি চলে এসেছি। তাই এখন আর ফেরা সম্ভব না। স্নিগ্ধা আপির বিয়েটা মনে হয় এতক্ষণে হয়ে গেছে। খুশি হোক স্নিগ্ধা আপি। তার খুশির জন্যই তো আমি এতকিছু ত্যাগ করলাম।

আমি উঠে পড়লাম ঢাকাগামী একটি বাসে। আসার সময় জমানো কিছু টাকা নিয়েছিলাম। সেই টাকাই সাথে নিয়ে এসেছি। আমার সামনের জীবন হয়তো অনেক কষ্টকর হবে। তবুও আমাকে ভয় করলে চলবে না। এখনো আমার অনেক কাজ আছে। আমি জানি আমি চাইলে এখনো বিদেশে যেতে পারব। বিদেশে গিয়ে মুক্তোর সাথে দেখা করব।

সারারাত বাসেই কে*টে গেল। অবশেষে ঢাকা নামক অচেনা শহরে পা রাখলাম। জীবনে যেখানে সিলেটের বাইরে কোথাও পা রাখিনি সেখানে আজ এতদূর ঢাকায় আসতে হলো।

শহরে নেমে আমি অবাক। কত ভিড় এই শহরে। আমার তো এখানে চেনা জানা কেউ নেই। তাহলে এখন আমি কোথায় যাব?

উদ্দ্যেশ্যহীন ভাবে রাস্তায় হাঁটতে লাগলাম। আমার খুব খিদে পেয়েছে। এটা অবশ্য স্বাভাবিক। কারণ কাল সন্ধ্যে থেকে কিছু খাই নি। আমি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে গুনতে লাগলাম। এমন সময় একটা লোক এসে আমার হাত থেকে টাকা নিয়ে দৌড় দিল। হয়তো কোন চোর হবে। এই অচেনা শহরে এই টাকাগুলোই আমার শেষ সম্বল। তাই আমি দৌড় দিলাম লোকটার পেছনে। দৌড়াতে গিয়ে হঠাৎ একটি গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে দূরে ছিটকে পড়লাম। ব্যাস, তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। ধীরে ধীরে চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসে।

❤️
ধীরে ধীরে চোখ খুললাম আমি। চোখ খুলতেই চোখের সামনে অনেক বেশি সুদর্শন একজন পুরুষকে দেখতে পেলাম। তিনি এগিয়ে এসে আমাকে বললেন, আপনি ঠিক আছেন তো? আমার গাড়ির সাথে আপনার এক্সিডেন্ট হয়েছিল। আজ টানা একমাস ধরে আপনার জ্ঞান ছিল না। অবশেষে আজ আপনি সুস্থ হলেন।

আমি মাথায় হাত দিয়ে ছিলাম। নিজের ব্যাপারে কিছুই মনে করতে পারছিলাম না। কে আমি? কি আমার পরিচয়? মনে করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম আমি।

সুদর্শন পুরুষ আমাকে বলল, কি হলো বলুন কিছু।

আমি কিছু জানিনা। কিছু মনে করতে পারছি না। আমার নিজের ব্যাপারে কিছু মনে পড়ছে না।

আমি দেখলাম সুদর্শন পুরুষ সহ কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স উৎসুক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি মাথায় হাত দিয়ে আছি। কারণ নিজের ব্যাপারে কিছু মনে করতে না পেরে আমার মাথায় অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। একজন চিকিৎসক বলল, আপনি জোর করে কিছু মনে করার চেষ্টা করবেন না। এতে আপনার মস্তিষ্কে চাপ লাগতে পারে। আপনি শান্ত হন।

চিকিৎসকের কথা শুনে আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। একজন নার্স এসে আমায় শুইয়ে দিল। একটি ইঞ্জেকশন পুশ করতেই আমি পুনরায় জ্ঞান হারালাম।

জ্ঞান ফেরার পর আবার নিজের চোখের সামনে সেই সুদর্শন পুরুষকে দেখতে পাই। আমাকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে বললেন, ঠিক আছেন আপনি?

কি সুন্দর তার কন্ঠস্বর। মনে হয় মধু মেশানো। আমার কেন জানি মনে হতে থাকে এই কন্ঠস্বর আমি আগে কোথাও শুনেছি। আমার খুব চেনা এই গলার স্বর। আমি ভাবার চেষ্টা করলাম ভালো করে। কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছে না।

আমাকে কিছু ভাবতে দেখে সুদর্শন পুরুষ বলল, ডাক্তার বলেছে আপনি যাতে কোন কিছু জোর করে মনে করার চেষ্টা না করেন। তাই আপনি এমনটা করবেন না। একদিন দেখবেন ঠিকই সবকিছু মনে করতে পারবেন। ততদিন আমি আপনার দায়িত্ব নেব।

আমি আপ্লুত হয়ে গেলাম সুদর্শন পুরুষের কথা শুনে। বললাম, আপনি কি চেনেন আমায়?

না চিনি না। তবে আপনার দায়িত্ব নিতে চাই। যেহেতু আমার কারণেই আজ আপনার এই অবস্থা। আপনি তৈরি হয়ে থাকবেন। আমি কাল এসে আপনাকে এই হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাবো।

আচ্ছা।

আমি যেন সেই সুদর্শন পুরুষকে নিজের মনের মাঝে অজান্তেই অনেক বেশি স্থান দিয়ে দিচ্ছিলাম। জ্ঞান ফেরার পর যদিও আমি আগের কোন স্মৃতি মনে করতে ব্যর্থ হয়েছি। তবে এই পুরুষকে নিজের মনের মধ্যে বিশাল স্থান ঠিকই দিয়েছি।

যেমন দেখতে সুন্দর, তেমনই তার গলার স্বর। সবদিক দিয়ে অনেক বেশি উত্তম তিনি। আমি মুগ্ধতার সাথে দেখতে লাগলাম তাকে।

দেখতে দেখতে চোখের পলকে একটি দিন অতিবাহিত হয়ে গেল। আজ সেই সুদর্শন পুরুষের আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার কথা। আমি সকাল থেকে প্রহর গুনছি কখন সে আসবে আর আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে।

আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো মধ্যাহ্নে। সুদর্শন পুরুষ আমাকে এসে বলল, আপনি তৈরি হয়ে নিন। আমি এখান থেকে নিয়ে যাবো আপনাকে।

আমি সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালাম। একজন নার্সের সহায়তায় সুন্দর করে তৈরি হয়ে নিলাম। আমার কোন পোশাক না থাকায় সুদর্শন পুরুষ নিজে আমার জন্য একটি কালো শাড়ি কিনে এনেছে। সেই কালো শাড়িতে নিজেকে আবৃত করে নিলাম আমি।

চলে আসলাম সুদর্শন পুরুষটির সামনে। সুদর্শন পুরুষ একপলক আমার দিকে তাকিয়ে তার চোখ সরিয়ে নিল। অজানা কারণে আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আমি তো আয়নায় দেখলাম আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। তাহলে সুদর্শন পুরুষ কেন তাকালো না আমার দিকে? আমাকে কি তাহলে ভালো লাগছে না?

এরকম নানা ভাবনায় জর্জরিত রইলাম আমি। কিচ্ছু ভালো লাগছিল না৷ সুদর্শন পুরুষ আমাকে বলল, চলুন আমার সাথে। আপনাকে আমি আমার এক বান্ধবীর বাড়িতে রেখে আসবো।

তার মুখে এই কথাটা শুনে আমার মন আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল৷ আমি তো আশা নিয়ে ছিলাম যে এই সুদর্শন পুরুষ আমাকে তার নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে। কিন্তু এখন সে বলছে তার কোন এক বান্ধবীর বাড়িতে নিয়ে যাবে! আমি মন খারাপ করে বললাম, আপনার বান্ধবীকে তো আমি চিনি না। তাহলে আমি তার বাড়িতে কেন যাব?

সুদর্শন পুরুষ হাসল। কি মনোমুগ্ধকর সেই হাসি। যে কোন মেয়ে এই হাসি দেখলে তার মন দিতে চাইবে এই সুদর্শন পুরুষকে। আমিও নিজের মন দিতে চাই তাকে। কিন্তু একথা বোঝাতে পারছি না।

সুদর্শন পুরুষ হাসি থামিয়ে বলল, আমি আপনাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারব না। কারণ আমি নিজের বাড়িতে একা থাকি। আমার মা-বাবা দুজনেই বিদেশে থাকে। আমি একা দেশে থাকি। আর তাছাড়া আমিও তো আপনার কাছে অজানাই। আমার বান্ধবীকে ভরসা করতে পারেন ও একজন ডাক্তার। আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।

আমি কিছু বললাম না। মনটাই খারাপ হয়ে গেছে। সুদর্শন পুরুষ আমাকে নিজের গাড়িতে করে নিয়ে যেতে লাগল। সুদর্শন পুরুষ গাড়ি চালাচ্ছে আর আমি তার পাশে বসে আছি। যেতে যেতে নিজের বান্ধবীর ব্যাপারে আমাকে অনেক কিছু বললেন। তার বান্ধবীর নাম সুবর্ণা রায়। সে নাকি ঢাকা শহরে একাই থাকে। তার পরিবারের আপন বলতে কেউ ছোট। অনেক ছোট থাকতেই মা-বাবাকে হারিয়েছে। মামা-মামীর কাছে মানুষ। সুবর্ণা আপির ঘটনাগুলো শুনে আমার মাথায় প্রচণ্ড ব্যাথা হতে লাগল। কেন জানি মনে হলো এমন কোন ঘটনা আমিও জানি।

আমার দিকে তাকিয়ে সুদর্শন পুরুষ বলল, আপনি ঠিক আছেন তো?

হুম।

চিন্তা করবেন না। আমি মাঝে মাঝে এসে আপনার সাথে দেখা করে যাব।

কথা বলতে বলতে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম আমরা। সুদর্শন পুরুষ একটি বহুতল ভবনের সামনে গাড়ি থামিয়ে বললেন, এই ফ্ল্যাটের ৩য় তলায় থাকে সুবর্ণা। চলুন সেখানে।

আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। সুদর্শন পুরুষ আমাকে নিয়ে বহুতল ভবনে প্রবেশ করলেন। লিফটে করে তৃতীয় তলায় পৌঁছালাম আমরা।

একটি রুমের দরজার সামনে এসে ডোরবেল বাজালেন সুদর্শন পুরুষ। সামান্য কিছু সময় পর এক সুদর্শনা রমনী এসে দরজা খুলে দিল। টানা টানা চোখ, শুভ্র গায়ের রং, আমার থেকেও অনেক বেশি সুন্দরী সে। যেন সাক্ষাৎ পরি।

দরজা খুলেই সেই সুদর্শনা রমনী সুদর্শন পুরুষের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, মুক্তো তুই এসে গেছিস!

#চলবে

#মন_দিতে_চাই
#১০ম_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী

সুবর্ণা আপি মুক্তো আর আমাকে ভেতরে যেতে বলল। আমি সুবর্ণা আপির মুখ থেকেই প্রথম জানতে পারলাম যে সুদর্শন পুরুষের নাম মুক্তো। যেমন দেখতে সুন্দর তেমন তার নামও অনেক সুন্দর। এমন সময় আমার মাথাতে একটি প্রশ্ন এলো। সবারই তো এক একটা নাম আছে। তাহলে আমার কি কোন নাম নেই?

আমি খুব করে চেষ্টা করলাম মনে করার কিন্তু ব্যর্থ হলাম। হাজার চেষ্টা করেও নিজের নাম মনে করতে পারলাম না।

সুবর্ণা আপির বাড়ির ভেতরে যেতেই সে আমাদের বসতে দিল। তার ব্যবহার অনেক ভালো। সুন্দরী মেয়েদের ব্যবহারও বোধহয় খুব সুন্দর হয়। সুবর্ণা আপি আমাদের চা-নাস্তা দিল। আমার নতুন যায়গায় কিছু খেতে লজ্জা করছিল। তখন সুদর্শন পুরুষ মানে মুক্তো বলল, লজ্জা না করে খেয়ে নিন। এখন থেকে তো আপনাকে এখানেই থাকতে হবে।

এতবার একই কথা শুনে আমার মন মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। মুক্তো কি জানেন না আমার মনের কথা? আমি যে তার সাথে থাকতে চাই। একরাশ অভিমান সাথে নিয়েই আমি চায়ে বিস্কিট ডুবিয়ে খেতে লাগলাম। চা এর মধ্যে চিনি নেই বললেই চলে। একটু মুখে দিতেই আমার বমি এসে গেল। বিস্কিটটাও কেমন নোনতা। সুবর্ণা আপি তো ডাক্তার। ডাক্তাররা বুঝি এমন খাবারই খায়। তাই আমি আর এই নিয়ে বেশি কিছু ভাবলাম না।

মুক্তো সুবর্ণা আপির সাথে হেসে হেসে কথা বললেন। আমি বুঝতে পারলাম তাদের মধ্যে বন্ধুত্বটা অনেক গভীর। কথার ছলে সুবর্ণা আপি মুক্তোকে বলল, তা তুই আর কতদিন এভাবে দেশে বসে থাকবি? সেই কবে যে পরিবারের সাথে লন্ডনে গেলি তারপর তো আর ফিরলি না। এখন একটা মেয়ের জন্য দেশে পড়ে আছিস!

ও কোন সামান্য মেয়ে নয়। আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে ঐ মেয়ে। ওকে খুঁজে বের না করা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই। আমি দেখতে চাই ও এখন কেমন আছে, কোথায় আছে।

কিভাবে খুঁজবি তুই মেয়েটাকে? নাম ছাড়া তো আর কিছুই জানিস না। ওর মামার বাড়িতে খোঁজ করেছিস?

না করিনি। আমি ঐ ঘটনার পর আর সিলেটে ফিরিনি। বিদেশে ছিলাম কয়েকদিন। তারপর মাথায় জেদ চেপে বসল দেশে ফিরব। তাই চলে এলাম। ঢাকায় আসতেই এই মেয়েটার সাথে এক্সিডেন্ট হলো। এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় আর খোঁজ নেওয়ার সুযোগ হয়নি। তবে ভাবছি এখন খোঁজ নেবো।

জানিস আমার না মাঝে মাঝে খুব হিংসা হয় আবার করুণাও হয় ঝিনুক নামের মেয়েটার উপর। একটা মেয়ে তোর মতো এতো ভালো একটা ছেলেকে রিজেক্ট করল। আর তুইও না দেখে তার প্রেমে পড়ে গেলি। আচ্ছা সত্যি করে বল তো মেয়েটাকে কি তুই সত্যি দেখিস নি?

ড্যাড ওকে দেখে পছন্দ করেছিল। আমি ওকে দেখিনি। তুই তো জানিস আমি বিয়ে নিয়ে একটা থ্রিলে ছিলাম। ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল একেবারে বিয়ের দিন নিজের বউকে দেখব। তাই আজ অব্দি মেয়েটার ছবি দেখিনি।

ছবি না দেখে ওকে খুঁজে চলেছিস? আদৌ কি খুঁজে পাবি?

জানি না। মম ড্যাডের সাথে তো এখন রাগ করে যোগাযোগ বন্ধ করেছি। কারণ বিদেশে ফিরে তারা আবার নতুন করে আমার বিয়ে ঠিক করেছিল। যেটা আমি চাই নি। এত ঘটনা ঘটেছে আমার সাথে যে কাউকে কিছু না বলে দেশে চলে আসি। এখানে আমাদের বিজনেসের হয়ে কাজ করছি। মম ড্যাড আমার খোঁজ নেয়না। আমিও তাদের সাথে যোগাযোগ করছি না।

এভাবে বসে থাকলে কি ঝিনুককে পাওয়া যাবে?

গড নোস। এখন তিনিই একমাত্র ভরসা। আমি আর এসব নিয়ে ভাবতে চাই না। আমার মানসিক শান্তির প্রয়োজন।

তাদের কথোপকথন এতক্ষণ ধরে মনযোগ দিয়ে শুনলাম আমি। ঝিনুক নামের মেয়েটার কথা শুনে খুব হিংসা হলো আমার। বুঝলাম ঝিনুক নামের মেয়েটাকে হয়তো মুক্ত ভালোবাসে। আমার সুদর্শন পুরুষের মনে অন্য কেউ রাজ করবে সেটা আমি কিভাবে মেনে নেই?

আমি তো ওনার মনের অধিকারী হতে চাই। সুবর্ণা আপি এবার আমার দিকে খেয়াল করে বললেন, এই মেয়েটার নাম কি?

এতক্ষণে আমার দিকে নজর পড়ল মুক্তোর। মুক্তো বলল, সত্যি তো আমি এটা ভেবে দেখিনি। এই মেয়েটার নাম কি হতে পারে? ওর তো কিছু মনেই নেই।

সুবর্ণা আপি বলল, ওকে বরং তুই একটা নাম দে। সেই নামেই নাহয় ওকে ডাকব আমরা।

আমি ওর কি নাম দেব? ওকে দেখে আমার একটা নামই মনে পড়ে দিশা। কারণ ওর জীবনের কোন দিশা নেই। তাহলে আজ থেকে ওকে এই নামেই ডাকব।

দিশা হুম অনেক সুন্দর নাম। ওর সাথে মানিয়েও ছে।

❤️
আমাকে রেখে চলে গেছে মুক্তো। আমার মনটা ভাড়ি খারাপ হয়ে গেল। সুবর্ণা আপি আমার কক্ষে আসল। আমাকে বলল, এই মেয়ে তাড়াতাড়ি খেতে চলে আয়। খেয়ে বাড়ির সব কাজ করবি কিন্তু। তোকে বসিয়ে খাওয়াতে পারব না।

সুবর্ণা আপির ব্যবহার খুব খারাপ লাগল আমার। মুক্তোর সামনে তো ভালো ব্যবহার করল। আর সে যেতেই কিরকম ব্যবহার শুরু করল। আমি যেহেতু এখানে আশ্রিতা হিসেবে আছি তাই তার কথা শুনতে বাধ্য। মন খারাপ নিয়েই খেতে বসলাম।

আমার সামনে সুবর্ণা আপি পোলাও, মুরগীর মাংস সহ কত সুন্দর সুন্দর খাবার খেলো। আর আমাকে খেতে দিয়েছে ভাত আর ডাল। আমি শুকনো মুখ নিয়ে তাই খেলাম।

সুবর্ণা আপি নাকি অনাথ ছিল। মামা-মামির অত্যাচারে মানুষ হয়েছে। তাহলে সে এমন কেন? তার তো কষ্ট বোঝা উচিৎ। আমি যতদূর বুঝলাম তার নিজের সাথে হওয়া অন্যায়ের কারণে সে এমন হয়েছে। এমন অনেক মানুষ আছে পৃথিবীতে যাদের সাথে ঘটা অন্যায়ের কারণে তারা সাইকো হয়ে যায়। নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়ের জন্য নির্দোষ মানুষদের উপর শোধ তোলে। এভাবে তারা ভাবে তাদের প্রতি হওয়া অন্যায়ের শোধ তুলছে। এটা একটি ভয়ানক মানসিক ব্যাধি।

যাইহোক খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আমাকে সব কিছু পরিস্কার করতে হলো৷ সুবর্ণা আপি আমাকে দিয়ে বাড়ির প্রায় সকল কাজই করিয়ে নিলেন। আমার খারাপ লাগলেও নিজেকে বোঝালাম এখন আমার নিজের জন্য হলেও এসব করতে হবে।

সুবর্ণা আপি একটু পরেই হাসপাতালে চলে গেল। আমি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। সুবর্ণা আপি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই এমন কিছু আমার চোখে পড়ল যা আমার পুরো ধারণা বদলে দিল। আমি বুঝতে পারলাম সুবর্ণা আপি কেন এমন ব্যবহার করল আমার সাথে।

আমি সুবর্ণা আপির ডাইরি ঘেটে দেখলাম। সেখানে সে তার নিজের সাথে হওয়া সকল অন্যায়ের কথা লিখেছে। তার মামা-মামি তার উপর অকথ্য অত্যাচার চালাতো। এগুলো পড়ে আমার স্মৃতিতেও আফসা আফসা কিছু ভেসে ওঠে। তাহলে আমার সাথেও এমন কিছু হয়েছিল? আমি মনে করার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। তবে এতটুকু আমি বুঝতে পেরেছি যে সুবর্ণা আপি স্বাভাবিক নয়। আমার উপর অত্যাচার করে তার নিজের প্রতি হওয়া অত্যাচারের শোধ তুলছেন তিনি। আমি ভাবলাম এখানে থাকা আমার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই যে করেই হোক এখান থেকে চলে যেতে হবে। এমন সময় ডোরবেল বেজে উঠল। আমি গিয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পেলাম মুক্তো এসেছে। আমি কোন কিছু না ভেবে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। এক এক করে তাকে সব ঘটনা বললাম। সব শুনে মুক্তো বলল, আপনাকে এখানে থাকতে হবে না। আমি আপনাকে নিজের সাথে নিয়ে যাবো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে