#মন_দিতে_চাই
#১৩তম_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী
আমার জ্ঞান ফিরতে নিজের চোখের সামনে মুক্তোকে দেখতে পাই। প্রথমে স্বপ্ন মনে করলেও একটু পর বুঝতে পারলাম মুক্তো সত্যিই এসেছে। আমি হাসলাম তার দিকে তাকিয়ে। মুক্তো আমাকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করে বলল, তোমার কোন ক্ষতি আমি হতে দেব না ঝিনুক। আগের বার সামান্য ভুল বোঝাবুঝির জন্য তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু এবার আর তেমন কিছুই হতে দিবো না।
আমি বুঝলাম না কিছুই বোকার মতো তাকিয়ে থাকলাম মুক্তোর দিকে। উনি আমাকে ঝিনুক বলছেন কেন সেটাই আমার কাছে অস্পষ্ট ছিল। আমি কিছু জানতে যেতে চাইব তার আগেই কোত্থেকে হঠাৎ একজন মধ্যবয়সী লোক এসে আমার দিকে তাকিয়ে কান্নারত অবস্থায় বলল, তুই এতদিন কোথায় ছিলি ঝিনুক? জানিস তোর কত খোঁজ করেছি আমি। কিন্তু কোথাও তোকে খুঁজেই পাইনি। আমাকে না বলে কেন চলে এসেছিলিস তুই? আমি কি তোর কোন অযত্ন করেছি? নাকি এতে তোর মামির কোন হাত ছিল। স্নিগ্ধার বিয়ের দিন কেন তুই বেড়িয়ে এলি বল।
আমি কিছু বুঝতে না পেরে বললাম, কে আপনি? আমি তো আপনাকে চিনি না।
লোকটি অনেক বেশি আশাহত হলেন। মুক্তো বলল, উনি তোমার মামা। তুমি ঝিনুক। সেই মেয়ে যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সেই ঝিনুক তুমি। তোমার মামির জন্য আমাদের বিয়ে হয়নি। আমি সব জেনে গেছি।
আমার মাথায় হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যাথা হতে লাগল। আমি কিছুই মনে করতে পারছিলাম না।
আচ্ছা আমাকে তো কয়েকজন লোক এখানে ধোকাবাজি করে নিয়ে এসেছিল। যারা আমার নকল মা-বাবা সেজে আমাকে পাচার করতে চাইছিল। তাহলে আপনারা আমায় কোথায় খুঁজে পেলেন?
আমার প্রশ্নটা শুনে মুক্তো বলল, তুমি বেড়িয়ে আসার কিছুক্ষণ পর তোমার মামাও চলে আসে। তিনিও নিউজ পেপারে খবরটা দেখেই এসেছিলেন। এসেই তোমার খোঁজ করেছে প্রথমে। আমি তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক ছিলাম না। তখন উনি আমাকে সব ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে আমি বুঝতে পারি তুমি কোন বিপদে পড়ে গেছ। তাই আর সময় নষ্ট না করে গাড়ি নিয়ে তোমার খোঁজে বেড়িয়ে পড়ি। সৌভাগ্যবশত রহিমা খালা ভুলে তার ফোন তোমার ব্যাগে রেখে দিয়েছিল। সেই ফোনের লোকেশন চেক করে তোমাকে খুঁজে পেয়েছি।
আমি বুঝলাম অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। মুক্তো আমাকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরল। তার কাছেই শুনলাম প্রতারককারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। যাক তাহলে আর কোন সমস্যাই রইল না। আমি নিশ্চিত হয়ে রইলাম। এখন শান্তিতে থাকতে পারব।
বাড়ি ফিরে এসে মুক্তো জানাল আমাকে বিয়ে করতে চায়। যদিও আমার কোন স্মৃতিশক্তি নেই তবুও আমি মুক্তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাই। নিজের ঝিনুক পরিচয়টাকেই আমি সত্যি মনে করি। আর মুক্তোকে তো এমনিই আমি ভালোবাসি তাই তাকে বিয়ে করতেও আমার কোন আপত্তি নেই।
এক সপ্তাহ পর,
আজ আমার বিয়ে। গোটা বাড়িতে চলছে আয়োজন। সেরকম বড় করে নয় সামান্য ভাবেই বিয়ে হচ্ছে আমার আর মুক্তোর। মুক্তোকে যে আমি কত পছন্দ করি সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তার জন্য আজ সুন্দর ভাবে সাজছি।
স্নিগ্ধা আপি আমাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। শুনেছি সে নাকি আমার মামাতো বোন। যদিও আমার কিছুই মনে নেই। স্নিগ্ধা আপি আমাকে বলল, তোর কি এখনো কিছু মনে পড়েনি? আচ্ছা তুই আমার বিয়ের দিন পালিয়ে কেন এসেছিলি? জানিস বিয়ের দিন আমি পার্লারে সাজতে গেছিলাম। সেখান থেকে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যায়। বাড়িতে ফিরে তোকে আর দেখতেও পারি নি।
স্নিগ্ধা আপির কথা শুনে আমার অল্প অল্প কিছু কথা মনে পড়ে। আমি বলি, তার মানে তোমাকে মামি লুকিয়ে রাখেনি?
স্নিগ্ধা আপি বড় বড় চোখ করে তাকাল। আমি আপিকে বললাম, জানো আপি মামি তোমাকে লুকিয়ে রাখার নামে মিথ্যা কথা বলে আমাকে ভয় দেখিয়ে চলে আসতে বাধ্য করেছিল।
তোর সব মনে পড়েছে?
না সব না কিন্তু অল্প অল্প কথা মনে পড়ছে।
আম্মু তার পাপের শাস্তি পেয়েছে জানিস। প্যারালাইজড হয়ে আছে এখন। সৃষ্টিকর্তাই আম্মুকে তার পাপের শাস্তি দিয়েছে।
একটু পরেই মুক্তোর মা-বাবা এলেন আমার সাথে দেখা করতে। আজ তারা দেশে ফিরে এসেছে।
আমি তাদের সাথে হাসিমুখেই কথা বললাম। আমাকে বিয়ের আসরে নিয়ে যাওয়া হলো এরপর। আমার বিয়েও হয়ে গেল মুক্তোর সাথে।
অনেক অপেক্ষার পর মুক্তো আমাকে পেল। বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল একটি কমিউনিটি সেন্টারে। বিয়েটা হয়ে যেতেই আমি আর মুক্তো গাড়িতে উঠলাম। এখন এখান থেকে আমরা যাবো মুক্তোর বাড়িতে। যেটা আজ থেকে আমার ঠিকানা।
গাড়িতে খুব একটা বেশি কথা হলো না মুক্তোর সাথে।
মুক্তো আমার সাথে কথা বলায় খুব একটা আগ্রহী হয়তো নয়। আমার ভেশ খারাপ লাগল ব্যাপারটাতে। মুক্তোর বাড়িতে পৌঁছে দেখলাম মুক্তোর মা রহিমা খালা দাঁড়িয়ে আছেন। মুক্তোর না আমাকে বরণ করে নিলেন। যিনি আজ থেকে আমার শাশুড়ি। রহিমা খালা আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন।
❤️
এক হাত ঘোমটা দিয়ে বাসর ঘরে বসে আছি আমি। মুক্তো এখনো আসে নি। অথচ আমি তার অপেক্ষায় যে প্রহর গুনছি সেটা হয়তো উনি জানেনই না।
কিছুক্ষণ পর মুক্তো ফিরলেন। তাকে দেখে আমার খুশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি খুশি হতে পারলাম ন। কারণ মুক্তো একা ফেরেনি। মুক্তোর সাথে একটি মেয়েও এসেছে।
মুক্তো মেয়েটির সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে আছে যা দেখে আমার খুব হিংসা হলো। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই মেয়েটি বললো, আমি ইভানা। আমি সেই মেয়ে যার সাথে মুক্তো বিদেশে লিভ ইনে ছিল। মুক্তো তোমাকে বিয়ে করেছে কেন জানো? একমাত্র কারণ তুমি ওর জেদ ছিলে। বিয়ের দিন যখন ও গিয়ে তোমাকে বিয়ে করতে পায়নি তখন ওর মাথায় জেদ চেপে ছিল যে তোমাকেই কেবল ও বিয়ে করবে। সেই জেদ থেকেই তোমায় বিয়ে করেছি। নাথিং এলস। তাই তুমি বেশি আশা রেখোনা মুক্তোর থেকে। এখনই এই রুম থেকে বেরিয়ে যাও। আজ মুক্তোর সাথে তোমার নয় আমার বাসর হবে।
আমি হতবাক হয়ে গেলাম এই ইভানার কথা শুনে। অথচ মুক্তোকে স্বাভাবিক লাগছে। আমার খুব কান্না পেল। মুক্তোর দিকে তাকিয়ে অনেক আশা নিয়ে বললাম, এই মেয়েটা যা বলছে সেটা তো মিথ্যা তাইনা?
মুক্তো আমায় নিরাশ করে বলল, ও যা বলছে সেটা মিথ্যা নয়। তুমি বেরিয়ে যাও এই রুম থেকে। তোমাকে আমি বিয়ে করলেও কখনো স্ত্রীর স্বীকৃতি দেব না। তুমি শুধুই আমার জেদ বৈ আর কিছু নও।
আমি নিজের চোখের জল আটকে রাখতে পারলাম না। আমাকে কাঁদতে দেখে ইভানা বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, এসব ন্যাকামো করো না।
আমাকে টেনে টেনে ঘর থেকে বের করে দিল ইভানা। আমার মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। মুক্তোর মা-বাবা জরুরি কাজে আজই বিদেশে ফিরে গেছে। তাই এখন বাড়িতে রহিমা খালা ছাড়া কেউ নেই।
আমি রহিমা খালার রুমে গেলাম। এত রাতে আমাকে দেখে রহিমা খালা অবাক হলো। আমাকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বলল, আজ তো তোমার বাসর ঘরে থাকার কথা। এখানে কি করছ তুমি?
আমি রহিমা খালাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে সব বললাম। রহিমা খালাও প্রচণ্ড অবাক। মুক্তো যে এমন কিছু করবে সেটা তিনিও ভাবতে পারেন নি।
#চলবে
#মন_দিতে_চাই
#১৪তম_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী
বাসর রাতটা আমার জীবনে যেন এক অন্ধকার রাত হয়ে থাকল। যেদিন আমার স্বামীর সোহাগ পাওয়ার কথা সেদিন কিনা আমাকে এমন ঘটনার সাক্ষী হতে হলো। জীবনের প্রতিই বিতৃষ্ণা এসে গেল আমার। ইচ্ছে হচ্ছে নিজেকে শে*ষ করে দিতে।
রহিমা খালা আমার মাথায় ভরসার হাত রাখলেন। আমাকে বললেন, তুমি চিন্তা করো না। সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখো। উনি যা করেন ভালোর জন্যই করেন। দেখবে তোমার সাথেও ভালো কিছু হবে। একটা মেয়ের কাছে তার স্বামীর অধিকার সবার আগে। তুমি সেই অধিকার ছেড়ে দেবে না। এক্ষুনি যাও ঐ ডাই*নিটাকে ঘর থেকে বের করো।
রহিমা খালার কথায় প্রভাবিত হলাম আমি। মুক্তোর রুমের দরজায় এসে কড়া নাড়লাম। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো মুক্তো একা। আমি ভীষণ অবাক হলাম তাকে একা দেখে। প্রশ্ন করলাম, আপনি একা কেন? ঐ ইভানা কোথায়?
মুক্তো কোন কথা না বলে আমার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল। আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। তাহলে কি মুক্তো আমার থেকে কিছু লুকাতে চাইছে? আমি সিদ্ধান্ত নিলাম মুক্তো যাই লুকানোর চেষ্টা করুক আমি সেই সত্যি বের করে আনব। তাই আমি রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পর দেখলাম কেউ রুমের দিকেই আসছে। আমি একটু দূরে সরে এলাম। অজানা ব্যক্তি রুমের সামনে এসে দরজা নক করল। দরজা খুলে যেতেই ভেতরে ঢুকল। আমি কিছু বুঝলাম না। কে ছিল সেই ব্যক্তি?
❤️
মুক্তোর বন্ধু হ্যারি এসেছে তার রুমে। বিদেশে মুক্তোর সবথেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু সে। হ্যারি এমনি এমনি আসে নি। মুক্তো নিজে তাকে ডেকেছে। সেই কারণেই আজ হ্যারি এসে উপস্থিত হয়েছে। হ্যারি আজকেই দেশে ফিরল। মুক্তোর রিশেপসনের জন্যই মূলত তার বাংলাদেশে আসা।
হ্যারি মুক্তোকে জিজ্ঞাসা করল, বল তুই কেন আমায় জরুরি তলব করেছিস? আজ না তোর বাসর ঘর। তোর নিজের বউয়ের সাথে থাকার কথা। তা না করে একা কি করছিস ভাই?
মুক্তো উদাস হয়ে বলল, আমার ভাগ্য এত নিষ্ঠুর কেন তুই জানিস? আমি যেই ঝিনুককে পাওয়ার জন্য এত আশা নিয়ে ছিলাম। যাকে নিজের মন দিতে চেয়েছিলাম আজ তার থেকে দূরে সরে আসতে হচ্ছে।
তুই দূরে কেন সরে আসছিস সেটাই তো বুঝতে পারছি না৷ কাহিনিটা খুলে বল।
মুক্তো নিজের আলমারি থেকে কিছু রিপোর্ট কার্ড বের করে এনে হ্যারির হাতে দিল। হ্যারি রিপোর্ট দেখে হতবাক হয়ে গেল।
মুক্তো অশ্রুসিক্ত নয়নে বলল, বিয়ের আগের দিন আমি টেস্ট করাই। বিয়ের পর রিপোর্টটা আসে।
হ্যারি বলল, বাট এটা কিভাবে পসিবল ব্রো? আমার জানা মতে মানে আমি যতদূর জানি তুমি তো বিয়ের আগে কারো সাথে ফি*জিক্যাল হওনি। তাহলে তোমার এইচআইভি পজেটিভ কিভাবে হতে পারে?
আমার এক বছর আগে জরুরি ভিত্তিতে রক্ত নিতে হয়েছিল। জানিসই তো আমার কত বড় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল। আই থিংক সেই সময় যার রক্ত নিয়েছিলাম তার থেকেই এই রোগটা আমার শরীরে এসেছে।
এটা কিভাবে হতে পারে? রক্ত নেওয়ার আগে চেক করিস নি?
তুই তো জানিস আমার ব্লাড গ্রুপ বি নেগেটিভ। যেই রক্ত খুবই রেয়ার। তাই অনেক কষ্টে একজনকে পাওয়া গেছিল। সেই সময় তাই আমার মম ড্যাড তাড়াহুড়ো করে রক্ত নিয়েছিল।
হ্যারি দুঃখ প্রকাশ করে বলল, তাহলে তো ব্যাপারটা খুব খারাপ। এই রোগের তো কোন চিকিৎসাও নেই। তাহলে এখন তুই কি করবি?
মুক্তো মন খারাপ করে বলল, এখন মৃত্যুর অপেক্ষা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই। শুধু ঝিনুকের থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ আমি চাইনা আমার প্রতি সে দূর্বল হোক। এইজন্য আমি ইভানাকে দিয়ে আজ নাটক করিয়েছি। যাতে ঝিনুক আমার থেকে দূরে থাকে। নিজের জীবন নতুন করে গুছিয়ে নিতে পারে।
ইভানার কথা শুনে হ্যারির টনক নড়ে৷ ইভানা একজন ডাক্তার। হ্যারি, ইভানা ও মুক্তো তিনজন খুব ভালো বন্ধু। হ্যারি ইভানাকে একতরফা ভাবে ভালোবাসে৷ অনেকবার তাকে প্রপোজালও দিয়েছে। কিন্তু বারবার রিজেক্ট হয়েছে। রিজেক্ট হওয়ার একমাত্র কারণ ইভানা মুক্তোকে ভালোবাসে।
হ্যারির মনে এবার সন্দেহ বাসা বাধে। তাই সে মুক্তোকে প্রশ্ন করে, বাই এনি চান্স তুই কি ইভানার কাছে এই চেকআপ করতে গেছিলি?
মুক্তো মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বোঝায়।
হ্যারি কোন ভাবনায় মগ্ন হয়।
❤️
অনেকক্ষণ থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি আমি। মশার কামড় ছাড়া আর কিছুই খাইনি আমি। খুব খারাপ লাগছিল তাই। কান পেতেও ভেতরের কোন কথা শুনতে পারছি না জন্য। যেটা আরো বেশি বিরক্ত করছিল আমাকে। আমি বিরক্ত হয়ে রহিমা খালার কক্ষে পুনরায় যাই।
আমাকে দেখেই রহিমা খালা বলল, এভাবে ফিরে এসেছ কেন? তোমার উচিৎ ছিল নিজের অধিকার বুঝে নেওয়া।
আমি রহিমা খালাকে সব কিছু বলি। সব শুনে রহিমা খালা বলে, আমার মনে হয় কোন বিরাট ঘাপলা আছে এসবের মধ্যে। শোন মেয়ে একটু বুদ্ধি খাটাও। নিজের সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য তোমার উচিৎ একটু বুদ্ধি খাটানো। একটু চালাক না হলে এই কঠিন দুনিয়াতে টিকে থাকা মুশকিল।
আমি মাথা দুলালাম। শুয়ে পড়লাম রহিমা খালার পাশেই।
দ্বিতীয় দিন ঘুম থেকে উঠলাম। আজ আমার নতুন সংসার শুরু হওয়ার কথা ছিল। অথচ সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। সকালে উঠে সর্বপ্রথম মুক্তোর খোঁজ করতে তার কক্ষে গেলাম। গিয়ে দেখলাম সে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। তাই আমি আর কিছু বললাম না।
মুক্তো আমাকে পুরোদমে ইগনোর করে অফিসে চলে গেল। আমার খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। মুক্তোর এমন ব্যবহারের কারণ আমার অজানা। কিন্তু আমিও ঠিক করে নিয়েছি এসব ব্যবহার অযথা আর আমি সহ্য করবোনা। আমি এবার প্রতিবাদ করব। আমাকে বিয়ে করে এনে মুক্তো এতো অবহেলা করতে পারেন না। আমি কোন পুতুল নই। জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। এখন একটু সুখের মুখ দেখতে চাই।
দুপুরে স্নিগ্ধা আপি ফোন করল। তার সাথে কথা বলেই সময় যে কিভাবে অতিবাহিত হয়ে গেল বুঝতেও পারলাম না। স্নিগ্ধা আপি আমাকে মুক্তোর সাথে সংসার কেমন চলছে জিজ্ঞাসা করল। আমি মিথ্যা বললাম, যে আমরা অনেক সুখী আছি। সত্যিটা কাউকে জানাতে চাই না এখনই। আগে মুক্তোর সাথে একটা ফয়সালা করতে হবে।
রাতে মুক্তো বাড়ি ফিরল। খুব ক্লান্ত লাগছিল তাকে। আমি তার জন্য নিজে যত্ন করে পানি এগিয়ে নিয়ে গেলাম। অথচ সে পানির গ্লাস ছু*ড়ে ফেলল। আমার মাথার রাগ উঠে গেল আমি মুক্তোর দিকে আঙুল তুলে বললাম, এমন ব্যবহার আমার সাথে কেন করছেন আপনি? আপনার কোন এখতিয়ার নেই আমার সাথে এমন করার। ভুলে যাবেন না আপনি কবুল বলে আমাকে বিয়ে করেছেন। এখন আপনি আমাকে মেনে নেবেন না। এটা কি ইন্ডিয়ান সিরিয়াল নাকি? আপনি যদি আমাকে মানতে না পারেন তাহলে তালাক দিন। আমার কোন শখ নেই অবহেলায় সংসার করার। যেখানে আপনি অন্য কারো সাথে ছি আমার বলতেও লজ্জা করছে যে বাসর রাতে আপনি অন্য একটা মেয়ের সাথে ছিলেন।
এসবের মাঝে কোত্থেকে যেন ইভানা নামের মেয়েটা হাজির হলো। আমার কথা শুনে বোধহয় তার গায়ে লাগল। তাই সোজা এসে আমায় গা*লে থা*প্পড় দিল। থা*প্পড়ের শক্তি অনেক বেশি ছিল। আমার গাল লাল হয়ে গেল। মাথা ঘুরতে লাগল।
ইভানা আমাকে বিশ্রীভাবে লা*থি মারল। ঠিক পেট বরাবর ছিল লা*থিটা। লা*থি দিয়ে বলল, ইউ ব্লাডি বিচ। হাউ ডেয়ার ইউ? এভাবে বলছ কেন আমার নামে যেন আমি প্র*স্টি*টিউড।
#চলবে