#মনের ক্যানভাসে🌼
#পর্ব:৪
#Tabassum Ferdous Samiya
ভাইয়ার রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে সোজা ডাইনিং রুমের চেয়ারে গিয়ে বসলাম। বুকটা কেমন যেন ধুকপুক করছে। এর কারণ কি হতে পারে ভাইয়া আমার হাত ধরেছে নাকি আমি সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নিচে নেমেছি বলে এমন হাপিয়ে গেছি?আমাকে এভাবে দেখে খালামনি বলল,
“কিরে কি হলো এমন হাপাচ্ছিস কেন?”
খালামনির কথা শুনি আমি মনে মনে ভাবছি,
“খালামণিকে এখন কি বলবো যে,তার ছেলে আমার হাত ধরেছিল সেই জন্য দৌড়ে পালিয়ে এসেছি! না,না এই কথা কিছুতেই বলা যাবে না খালামণি কিনা কি ভাবে আবার।”
আমার ভাবনার মাঝে হঠাৎ খালামনি আবার বলে উঠলেন,
“সায়রা কি হয়েছে বলবি তো কিছু আমায় নাকি!এমন হাপাচ্ছিস কেন তুই?আর নাদিরা,জায়ান তো এখনো আসলো না? তুই তো ওদের ডাকতে গিয়ে ছিলি ওরা কি এখনো উঠেনি?”
খালামনিকে দেখলাম সবার প্লেটে খাবার পরিবেশন করতে করতে আমার সাথে কথা বলছেন। আমি খালামণিকে বললাম,
“ও কিছু না খালামনি সিঁড়ি দিয়ে একটু দৌড়ে নেমেছি বলে এমন হাপিয়ে গেছি। আমি আপু আর ভাইয়াকে ডেকে দিয়ে এসেছি,ওরা ফ্রেশ হয়ে আসবে এখন।”
খালামণি আমার কথার প্রতি উত্তরে বললেন,
“আচ্ছা ঠিক আছে ওরা তাহলে আসুক,তুই খেতে বসে পর।সেই কোন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেছিস এখনো খাওয়া হলো না তোর।”
খালামনির কথা মত আমিও চুপচাপ খেতে লাগলাম।আমার মনের মাঝে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু কোন প্রশ্ন নেই উত্তর পাচ্ছিনা! তখনই আপু আর ভাইয়া এসে টেবিলে বসলো।আমি একবার মাথা তুলে ভাইয়ার দিকে তাকালাম,দেখি তিনি আমার দিকে রাগী চাহনিতে তাকিয়ে খালামনির পাশে চেয়ার বসলেন। আমি শুকনো একটা ঢোক গিলে খাবার খাওয়াতে মনোযোগ দিলাম। খালামণি তখন জায়ান ভাইয়াকে ভার্সিটির ব্যাপারে কিছু কথা বলছিলেন, তাদের কথার মাঝে হঠাৎ খালামণির ফোনটা বেজে উঠলো, ফোনের ওপাশের কথা তো শুনতে পেলাম না কিন্তু ফোনের এপাশের খালামনির রিঅ্যাকশন দেখে বেশ বুঝতে পারলাম খালামণি অনেক খুশি। ফোনে কথা বলা শেষ হলে খালামনি বলল,
“আজকে রাফসান আর ওর পরিবারের সবাই আসবে আমাদের বাসায় দুপুর।”
খালামনির কথা শুনে নাদিরা আপু একটু লজ্জা পেল মনে হয়,তার জন্য তাড়াতাড়ি খেয়ে টেবিল থেকে উঠে চলে গেল।আমি তো বুঝতে পারলাম না রাফসান ভাইয়েরা আসবে সে জন্য আপু এত লজ্জা পেল কেন?
আমি আমার খাওয়া থামিয়ে খালামণিকে বললাম,
“খালামণি নাদিরা আপু কেন রাফসান ভাইয়া কথা শুনে এমন লজ্জা পেয়ে চলে গেল?”
খালামনি খাওয়া শেষ সেই জন্য উঠে দাঁড়িয়ে আমার কথা শুনে হেসে ফেলল আর বলল,
“আরে বোকা মেয়ে তুই এটাও বুঝিস না? থাক ভালোই হয়েছে এখন এত বুঝতে হবে না।আর একটু বড় হয়েনে,তারপর যখন তোর বিয়ে দিব তখন বুঝবি কেন তোর নাদির আপু এমন লজ্জা পেল!”
খালামণির কথা শুনে, জায়ান ভাইয়া খাওয়ার মাঝে কেশে উঠলেন,আর আমি বোকার মত গোল গোল চোখ করে তাদের দুজনকে দেখতে লাগলাম। খালামণি জায়ান ভাইয়াকে এমন কাশতে দেখে বললেন,
“কি হলো তোর আবার জায়ান পানি খায়!”
খালামনির কথার প্রতি উত্তরে জায়ান ভাইয়া বললো,
“হ্যাঁ, আম্মু পানি খাচ্ছি তুমি যাও তোমার কাজ করো।আর যদি কোনো বাজার লাগে তাহলে আমাকে বলো, আমি গিয়ে বাজার থেকে নিয়ে আসি সে গুলো!”
আমার খাওয়া শেষ তাই আমি চুপচাপ খালামণি আর জায়ান ভাইয়া কথা শুনছি। খালামণি জায়ান ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
“না তোর আর এখন এই রোদে বাইরে যেতে হবে না। আমি বাসার কেয়ারটেকার কে বলে সব বাজার আনিয়ে নিবো। তুই বরং এখন রুমে যা,এখন তো আর কোন কাজ নেই।”
কথাটা বলে খালামণি আবার কিচেনে চলে গেল।আর আমরা দুজন মুখোমুখি ডাইনিং টেবিলে বসে আছি। খালামণি চলে যেতে জায়ান ভাইয়া গম্ভীর গলায় বললেন,
“হাত ধুয়ে আমার রুমে আয় তোর সাথে কথা আছে।”
আমি জায়ান ভাইয়ের কথা শুনে,একটু চমকে গেলাম! এখন আবার কি বলবে? তখন মিথ্যে বলেছি বলে কি এখন তার জন্য বকা দিবে নানা? আমি কিছুতেই যাব না।এই ছেলেকে বিশ্বাস নেই,যদি আমাকে মাইর দেয় তখন কেমন হবে?কে বাঁচাবে আমায় তার হাত থেকে? আমার ভাবনার মাঝে জায়ান ভাইয়া আবার ধমক দিয়ে বলল,
“কি হলো কথা কানে যায় না তোর এখনো বসে আছিস কেন যা হাত ধুয়ে আয়।”
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে একবার ভাইয়ার দিকে তাকালাম,কিন্তু তিনি আগের মতই রাগী চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমার বোঝা শেষ হাজার কাঁদো কাঁদো মুখ করি না কেনো,তাতে কোনো লাভ হবে না।আমাকে যেতেই হবে তাই কোন উপায় না পেয়ে,আমি বসা থেকে ভয়ে ভয়ে উঠে হাত ধুয়ে সোজা ভাইয়ার রুমে চলে গেলাম।
চলবে