মনের ক্যানভাসে পর্ব-০৩

0
2563

#মনের ক্যানভাসে🌼
#পর্ব:৩
#Tabassum Ferdous Samiya

আজকে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন তাই সবাই একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠবে। কিন্তু আমি প্রতিদিন এর মতো আজকেও ভোরে ঘুম থেকে উঠে ছাদে চলে আসেছি। ভোরের অল্প আলোতে প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখতে বেশ স্নিগ্ধ লাগে।সকাল বেলার ঝিরি ঝির বাতাসে এক অন্যরকম মাদ’কতা মিশে থাকে। এই ব্যস্ততম শহরে ভোর বেলার সকালটাই পারে মনকে একদম সতেজ করে তুলতে, দু’দণ্ড প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিয়ে ছাদের গাছ গুলোতে পানি দিতে লাগলাম।এই ভাবেই কখন যে অনেক টা বেলা পাড় হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি! এখন নিচে যেতে হবে, নিচে এসে দেখি ঘড়িতে নয়টা বাজে।এখনো তো কেউ ঘুম থেকে উঠে নাই,তাহলে এখন আমি একা কি করবো? এই সব কথা বলতে বলতে কলিং বেল বেজে উঠলো আমি গিয়ে দরজাটা খুলে দেখি খালামনি এসেছে।খালামনি কে ভেতরে আসতে বলে আমি দরজা বন্ধ করে দেয়।খালামনি ভেতরে এসে সোফাতে বসে আমার উদ্দেশ্যে বললেন,

“কিরে তুই এত সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়েছিস ওরা এখনো উঠেনি?”

“না খালামনি আপু রাতে একটু দেরি করে ঘুমিয়েছে তাই হয়তো ঘুম থেকে উঠতে দেরি হচ্ছে!”

আমার কথা শুনে খালামনি বললেন,

“এই ছেমে,মেয়ে গুলা যে রাত জেগে কি করে আমি বুঝিনা!রাতে ঘুমাবে না আর দিনে ঘুম থেকে উঠতে চাইবে না।আচ্ছা ওরা তাহলে ঘুমাক ওদের ডেকে তো লাভ হবে না।আমি যাই ফ্রেশ হয়ে আসি তার পরে তোর জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়ে দেই।”

আমি খালামনির কথা শুনে বললাম,
“আচ্ছা ঠিক আছে তুমি আগে ফ্রেশ হয়ে এসো, তার পরে না হয় ব্রেকফাস্ট বানাবে।”

খালামনি আর দেরি না করে সোফা থেকে উঠে খালামনির রুমে চলে গেলেন আর,আমি সোফায় বসে টিভি দেখতে লাগলাম। কিছু সময় অতি বাহিত হওয়ার পরে খালামনি তার রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে চলে গেলেন,আর যাওয়ার সময় আমাকে বললেন,

“সায়রা আমার কাছে একটু আয় তো মা,তোর সাথে কিছু কথা আছে।”

খালামনির ডেকে আমি সোফা থেকে উঠে কিচেনে চলে আসলাম আর খালামনি কে বলাম,
“কি বলবে খালামনি?”

খালামনি পরোটার জন্য ময়দা মাখাতে মাখাতে আমাকে বলো,

“কাল রাতে নাদিরা আমাকে ফোন করে সব কিছু বলেছে।তুই নাকি জায়ানের কাছে পড়তে চাস না?”

খালামনির কথার প্রতিউত্তরে আমি বললাম,
“আমার তোমার ছেলের কাছে পড়তে ভয় লাগে।তুমি তো চিনো খালামনি তোমার ছেলে কেমন,কথাই কথাই ধমক দেয় আবার কেমন রাগী চোখ করে তাকাই শুধু কি তাই,সব সময় মুখটা গম্ভীর হুতুম প্যাঁচার মতো করে রাখে।আচ্ছা খালামনি একটা কথা বলো তো , জায়ান ভাইয়া হওয়ার পরে কি তোমরা ভাইয়ার মুখে মধুর পরিবর্তে নিমপাতার রস মুখে দিয়ে ছিলে?”

খালামনি আমার কথা শুনে একটু হাসলেন,তার পরে আমাকে বললেন,

“এই মেয়ে তুই এই সব কথা কোথায় পাস বলবি আমায়? জায়ানের মুখে নিমপাতার রস দিব কেন? আসলে কি হয়েছে জানিস!জায়ান হয়েছে ওর দাদা ভাইয়ের মতো। আমার শ্বশুরমশাই নাকি সব সময় এমন গম্ভীর আর কম কথা বলতেন, বলতে পারিস একটু রাগী টাইপের লোক ছিলেন তিনি। জায়ানো ঠিক তেমন কিন্তু,মনের দিক থেকে আমার ছেলেটা অনেক ভালো। তোরা বুঝবি না আমি ওর মা আমি ঠিক বুঝি।”

খালামনির কথা শুনে আমি বললাম,
“আমিও চিনি তোমার ছেলেকে তিনি কত ভালো তা আমার জানা আছে।”
খালামনি বললো,”হয়েছে এত কথা না বলে যা তো তোর আপুকে আর জায়ানকে ডেকে নিয়ে আয়!আমার রুটি বানানো শেষ আমি খাবার টেবিলে দিচ্ছি।আর হ্যাঁ, শোন বাহানা না করে ছেলেটা তোকে যেমন করে পড়াতে চাচ্ছে ঠিক করে একটু ওর আছে পড়। তুই শান্ত মেয়ের হয়ে থাকলে জায়ান তোকে আর কিছু বলবে না দেখিস। তুই একটু শান্ত থাকলে জায়ান তোকে আর বকাও দিবে না।জায়ানের সামনে তো একটু শান্ত মেয়ে হয়ে থাকতে পারিস নাক!”

খালামনির কথা শুনে আমি আমার মুখটা গোমরা করে বললাম,

“খালামনি তুমি কি বলতে চাও আমি সব সময় দুষ্টুমি করি?”

খালামনির পরোটা বানানো শেষ তাই পরোটার প্লেট হাতে নিয়ে কিচেন থেকে বের হতে হতে বললেন, “আমি আবার কখন বললাম তুই সব সময় দুষ্টুমি করিস? তুই তো মাঝে মাঝে একটু দুষ্টুমি করিস! আচ্ছা,এখন এইসব কথা বাদ দে আগে খাবার খেয়েনে তারপর যত মন চায় কথা বলিস,এখন যা ওদের ডেকে নিয়ে আয়।”

আমি আর কথা বাড়ালাম না কারণ,আমার এখন হালকা খিদে পেয়েছে তাই কিচেন থেকে এক দৌড়ে আপুর রুমে চলে গেলাম। রুমে এসে দেখি আপু এখনো বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে,তাই আমি আপুকে দুই তিন বার ডাক দিলাম। ডাক দেওয়ার কয়েক মিনিট পরে আপু একটু নড়েচড়ে ওঠে বসলো আর বলল,

“কি হলো সায়রা এত ডাকছিস কেনো?আজ শুক্রবার একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিবি তো নাকি!”

আপুর কথা শুনে আমি একবার রুমের দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম আর আপুর উদ্দেশ্যে বললাম,
“আপু তুমি কি ঘড়ি দেখেছো একবার বেলা কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে তোমার? খালামনি নানুদের বাসা থেকে এসে পড়ল আর, তোমার এখনো ঘুম হলো না? তাড়াতাড়ি ওঠো খালামণি সবাইকে খাবার টেবিলে ডাকছে। আমি গেলাম কিন্তু তুমি তাড়াতাড়ি আসো।”

কথাটা বলে আপুর রুম থেকে জায়ান ভাইয়া রুমের সামনে আসলাম ভাইয়াকে ডাকতে,কিন্তু রুমের সামনে এসে ভেতরে যাওয়া সাহস পাচ্ছি না। যদি ঘুম ভেঙেছি বলে বকা দেয় তখন কি হবে?থাক এত ভেবে কাজ নেয় আমি শুধু একটা ডাক দিয়ে চলে আসবো।আর কিছু না ভেবে সোজা চলে গেলাম ভাইয়ার রুমে।রুমে গিয়ে দেখি জনাব উপর হয়ে ঘুমিয়ে আছে। কোন কিছু না ভেবে আমি বিছানার আরেকটু কাছে গেলাম আর আস্তে করে ভাইয়াকে ডাক দিলাম। কিন্তু আমার ডাকের প্রতি উত্তরে তার কোন নড়াচড়া কিছু হলো না!তাই আর কোন উপায় না পেয়ে জোরে চেঁচিয়ে একটা ডাক দিলাম। ভাইয়া দেখি বিছানা থেকে ধরফর করে উঠে বসলেন আর পাশ ফিরে আমার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকালেন,আমি কিছুটা ভয় পেয়ে এক পা পিছিয়ে গেলাম তারপরে,জায়ান ভাইয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলতে শুরু করলাম,

“আসলে আমি ইচ্ছে করে তোমায় ডাকিনি, খালামণি তোমাকে খেতে ডাকতে বলেছিল তাই এসেছি! তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো খাওয়ার জন্য আমি যাই।”

কথাটা বলে যে না আমি এক দৌড় দিব তার আগেই পিছন থেকে জায়ান ভাইয়া আমার হাতটা শক্ত করে ধরলেন আর গম্ভীর গলায় বললেন,

“তোকে কি কেউ কোন ম্যনার্স শেখায়নি যে, কারো রুমে ঢোকার আগে নক করতে হয়?”

আমি ভাইয়া কথা শুনে একটু থতমত খেয়ে গেলাম, এই ছেলে বলে কি! ঘুমন্ত মানুষের কাছ থেকে কিভাবে রুমে আসার জন্য পারমিশন নিব? ধুর এই জন্যই আমি এই রাক্ষসটাকে ডাকতে আসতে চাইনি। কেমন শক্ত করে আমার নরম তুলার মত হাতটা ধরেছে,মনে হচ্ছে হাতটা এখন ভেঙে যাবে। আমি কোনো কথা না বলে, সামনের দিকে তাকিয়ে জায়ান ভাইয়ের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করলাম,কিন্তু এই অ্যানাকন্ডা তো আমার হাত ছাড়ছে না। এখন কি করবো আমি? তখনই হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। আমি হুট করে বলে উঠলাম,

“খালামনি তুমি কখন আসলে?”

আমার কথা শুনে ভাইয়া চমকে গিয়ে আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন আর তাড়াতাড়ি অন্যদিকে ঘুরে বসলো। আর আমি এই সুযোগেই রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে