#মনের ক্যানভাসে🌼
#পর্ব:১
#Tabassum Ferdous Samiya
“স্কুল থেকে বাসায় ফিরে একজন মানুষকে খুঁজছি তা হলো আমার বড় খালামনি। কিন্তু তাকে কোথাও পেলাম না!তাই সেখান থেকে আপুর কাছে গেলাম; আপু কে কিছু প্রশ্ন করার ছিল যার উত্তর আমি কিছুতেই মেলাতে পারছিনা।
‘দেখি আপু তার রুমে বসে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে।আমাকে দেখে ফোনটা কেটে দিলো আর বলো,
“কিরে তুই এই সময় বাসায় আসলি কেন বলতো স্কুল তো বিকেলে ছুটি হবে?”
‘আপু তোমার সাথে একটা জরুলি কথা আছে আমার!
“কি এত জরুলি কথা বলতো শুনি?”
‘বসন্তের হিমেল হাওয়া মাঝে নাকি অদ্ভুত একটা প্রেম প্রেম গন্ধ পাওয়া যায় এই কথাটা কি সত্যি আপু?
“হঠাৎ এই কথা তোকে কে বললো?”
‘আজকে স্কুলে আমার এক ফ্রেন্ড বলল;ওর মনে নাকি বসন্ত বাতাসের হাওয়া লেগেছে আর সেই হাওয়াতে নাকি প্রেম ছিল!
“আচ্ছা আর কি বলেছে তোর ওই ফ্রেন্ড?”
‘আরো তো অনেক কথা বললো কিন্তু আমার তো এত কথা মনে থাকে না।
“ঠিক আছে আর কষ্ট করে মনে করতে হবে না।এখন যা ফ্রেশ হয়ে আয়।”
‘ফ্রেশ তো হব কিন্তু তার আগে বলো সত্যি কি বসন্ত বাতাসে প্রেম থাকে?
“বসন্ত বাতাসে প্রেম থাকে কিনা ঠিক বলতে পারবো না, কিন্তু শুনেছি প্রেম পড়লে নাকি মানুষের মনে এই সব নানান রকম চিন্তা ভাবনা কাজ করে যে বাতাসে প্রেম ভেসে বেড়ায়।”
‘আচ্ছা আপু তোমার মনেও কি এই সব চিন্তা ভাবনা ঘুরে বেড়ায়?
“এই তুই এত বেশি কথা বলিস কেনো রে যা ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি তোর বড় বোন লজ্জা করে না তোর আমার সামনে প্রেম ভালোবাসা নিয়ে কথা বলতে।”
‘আমি তো এমনি জিজ্ঞাসা করেছিলাম আর কি;তুমি এমন রাগ করছো কেন আপু?ঠিক আছে আমি আর এই ব্যাপারে কোনো কথা বলবো না।’
“শোন তুই এখনো অনেক ছোট তাই এই সব কথা বলবি না।বড় হলে নিজে থেকেই সব বুঝবি তাই এখন এই সব কথা বাদ দে।”
‘আচ্ছা আমি যাই ফ্রেশ হয়ে আসি আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে!
“তুই যা আমি তোর খাবার বেড়ে দিছি।”
‘কথা গুলো বলে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে।’
‘আমি সায়রা এই বার এসএসসি পরীক্ষা দিবো; ছোট থেকেই আমি খালামনির বাসায় থাকি এর কারণ হলো, আমার নিজের বলতে কেউ নেই।শুনেছি আমার আব্বু আম্মু আমাকে ছোট রেখে কোথায় যেনো চলে গেছেন!তাদের কোনো খোঁজ,খবর পাওয়া যায়নি।তখন থেকেই আমি তাদের সাথে থাকি।আর এত খন যার সাথে কথা বললাম সে হলো আমার খালামনির মেয়ে নাদিরা আপু।সে এই বার মাস্টার এ ভর্তি হয়েছে; খালামনির দুই ছেলে মেয়ে।মেয়ে বড় আর ছেলে ছোট ।ভাইয়া এই বার অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়েন। আর আমার খালু তিনি কাজের সূত্রে বাহিরে থাকে।
‘ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আপু খাবার বেড়ে টেবিলে বসে আছে।আমি খাবার টেবিলে বসে আপু কে বললাম,__
“আপু খালামনি কোথায় গেছে?”
“আম্মু নানুদের বাসায় গিয়েছে আজকে আসবে না ফোন করে বললো।”
“ওহ,তুমি কি কোথাও বেড় হবা এখন?”
“হম , একটু তোর ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যাবো।অনেক দিন হলো দেখা করি না, তার জন্য ভাবলাম দেখা করে আসি।”
‘আচ্ছা তাই তো বলি আপুমনি আজ এত সাজগোজ করেছে কেনো!তা কি রান্না করে নিয়ে যাচ্ছো ভাইয়ার জন্য?’
“বিরিয়ানি তোর ভাইয়া অনেক পছন্দ করে; আর তোদের জন্যও রাখা আছে কিচেনে পড়ে খেয়ে নিছ!”
‘আচ্ছা যাও তাহলে লেট হয়ে যাবে তোমার।’
“ওকে তোরা কিন্তু দুজন ঝগড়া করিস না আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।”
‘আমি কখনো ঝগড়া করি না তোমার ভাই এর সাথে।’
“হয়েছে আমি তোমাদের দুজনকে খুব ভালো করে চিনি ,বোইন আর সাফাই দিতে হবে না। তুই তাহলে থাক আমি যাই আর জায়ান আসলে দরজা খুলে দিছ। আর হ্যাঁ; অপরিচিত কোন লোক আসলে আগে দরজা খুলবি না জায়ান থাকলে ওকে বলিস খুলে দিতে।
‘আচ্ছা ঠিক আছে এবার তুমি যাও তো অনেক লেট হয়ে যাচ্ছে তোমার।’
“ওকে টাটা।”
“নাদিরা আপুর আকদ হয়েছে অনেক আগে রাফসান ভাইয়ার সাথে। শুধু আপুর পড়াশোনার জন্য উঠিয়ে নিয়ে যায়নি এখনো। মাস্টার্স কমপ্লিট হলে আপুকে রাফসান ভাইয়াদের বাসায় উঠিয়ে নিয়ে যাবে।”
‘আপু চলে গেল এখন আমি একা বাসায় কি করব সারাদিন! ওই রাক্ষস টা তো বাসায় নেই।;আর থাকলেই বাকি আমার সাথে তো সে কথা বলে না প্রয়োজন ছাড়া। সেই ছোট থেকে দেখছি লোকটার মাঝে কোন পরিবর্তন নেই।আগেও কথা বলতো না এখনো প্রয়োজন ব্যতীত কথা বলে না।আমি না ঠিক বুঝতে পারিনা, জায়ান ভাইয়া কেন আমার সাথে বেশি কথা বলে না?কেমন যেন লোকটা গম্ভীর কিন্তু তাও ;কেন জানি না লোকটা কে আমার প্রচন্ড ভালো লাগে।আমার মনে হয় এমন গম্ভীর ভাবেই তাকে মানায়। ছেলে মানুষ এমন অ্যাটিটিউড তো থাকবেই।’
‘আমার ভাবনার মাঝে কলিং বেলটা বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখি জায়ান ভাইয়া ;ঠিক প্রতিদিনের মতন আজও একবার চোখ তুলে তাকালো আমার দিকে। ভেতরে এসে আমাকে বলল,___
“আপু কোথায়?”
‘আপু একটু ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেছে একটু পরেই চলে আসবে বলল।’
“আচ্ছা তুই স্কুল থেকে কখন ফিরেছিস?”
‘ দুপুরে, তোমাকে খেতে দেই তুমি তো দুপুরে বাসায় ছিলে না? বাহিরে তো কিছু খাওনি বলে মনে হচ্ছে?,
“ইদানিং, দেখছি তুই সবার মনের খবর রাখতে শুরু করেছিস ভালো; আমার খিদে নেই আমি এখন খাবো না।”
‘কেন দুপুরেও তো কিছু খাওনি এখন ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু হলেও খেয়ে নাও; আপু সবার জন্য বিরিয়ানি রান্না করেছে!,
“তোর আমাকে নিয়ে এত ভাবতে হবে না।যার সাথে সারাদিন হেসে হেসে কথা বলছিলি তার কথা বেশি করে ভাব।”
‘আজব আমি আবার কার সাথে হেসে হেসে কথা বললাম?’
“কার সাথে কথা বললি তা তো আমার থেকে ভালো তুই বলতে পারবি।আমি তো আর তোর সাথে স্কুলে পড়ি না!”
‘তাহলে তুমি কিভাবে জানলে যে আমি স্কুলে করো সাথে হেসে কথা বলেছি?,
“আমি কিভাবে জানলাম সে,কথা তোর জানতে হবে না।শুধু একটা কথা মাথা রাখবি আমি যদি আর রিফাতের সাথে তোকে কথা বলতে দেখি তাহলে; তোর জন্য সেটা খুব একটা ভালো হবে না।”
‘কথাটা বলেই জায়ান ভাইয়া চলে গেলেন তার রুমে। আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলেন না আর। আমি তো একটা কথাই বুঝতে পারছি না যে, ভাইয়া কিভাবে রিফাতে কথাটা জানতে পারলো?আর আমি যার সাথে মন চায় কথা বলবো কিংবা হাসবো তাতে জায়ান ভাইয়ের কি?,
‘উনি তো আমার প্রশ্নের উত্তরই দিলেন না! আমি তো স্কুলে ছিলাম তাহলে;ভাইয়া কিভাবে দেখলো রিফাতের সাথে হেসে কথা বলতে? যদি স্কুলের বাহিরে অথবা, রাস্তায় কোথাও দেখতে তাহলে না হয় আমি বুঝতাম যে রাস্তায় দেখেছে আমাদের। কিন্তু, আমি তো স্কুলের বাহিরে রিফাতের সাথে কথা বলিনি; তাহলে ভাইয়া কিভাবে জানলো? এতগুলো প্রশ্ন প্রশ্নই থেকে গেল উত্তর আর জানা হলো না!
‘লোকটা তো কিছু খাবে না বললো তাহলে এখন কি করবো?আমি কি আর একবার ডাক দিবো ভাইয়া কে ?আচ্ছা বলেই দেখিনা আর একবার খাবে কি না!আমি ভাইয়ার রুমের সামনে গিয়ে ডাক দিলাম,___
‘ভাইয়া তুমি কি সত্যি খাবে না?অল্প কিছু হলেও খেয়ে যাও এমন করো কেন!
“তোকে আমি বললাম না আমি এখন খাবো না তাও, কেনো এত কথা বলিস তুই?ভালোভাবে কথা বললে কানে যাই না তোর!
‘আমি তো তোমার ভালোর জন্যই বলছিলাম তাও, কেনো এত রাগ দেখাও আমার উপরে?
“তোকে কি আমি আমার ভালো ভাবতে বলেছি; তাহলে এত ভাবতে আসিছ কেনো!যা এখন আমার রুমের সামনে থেকে আর একটাও কথা বলবিনা চুপচাপ যা তো।”
“এই মেয়ের সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, কয়েকদিন ধরে এ খেয়াল করছি ব্যাপারটা আমি। রিফাতের সাথে বেশ ভাব হয়েছে তোর তাই না? এই ভাব কিভাবে কমাতে হয় ,তা আমার খুব ভালো করে জানা আছে। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ অনেক ছাড় দিয়েছি; এবার পালা শক্ত করে বাধার কথাটা বলে জায়ান একটা বাঁকা হাসি দিলো।”
‘কথাটা বলেই জায়ান ওয়াশরুম চলে গেল।’
‘সন্ধ্যা তখন সাতটা আমি আর আপু ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছি ;এমন সময় হঠাৎ জায়ান ভাইয়া আসলেন আর বললেন,___
“আপু কালকে বাসায় আমার কিছু ফ্রেন্ড আসবে।”
“কখন আসবে সবাই আর কই জন আসবে?”
“এই ধর চার,পাঁচ জন রাতে ছাদে বারবিকিউ পার্টি করবো।”
“আচ্ছা আসতে বলিস তার আগে আব্বু,আম্মু কে বল দেখ তারা কি বলে!”
“ওকে,আম্মু কি কালকে আসবে নানুদের বাসা থেকে?”
“হ্যাঁ, তাই তো বলল কালকে সকালে চলে আসবে।”
“আচ্ছা,সায়রা তুই পড়া বাদ দিয়ে এখানে বসে কি করছিস যা পড়তে বস?”
‘আমি তো একটু আপুর সাথে কথা বলছিলাম পরে পড়তে বসবো।’
“না এখনি পড়তে বসবি যা এখন এই খান থেকে।”
‘আমি আমার হাত পা দিয়ে বসে আছি ;তোমার কি সমস্যা তুমি যাও পড়তে বসো। সব সময় শুধু পড়া পড়া করে ভাল্লাগেনা আর।’
“ঠিক আছে পড়তে ইচ্ছা না করলে তোকে বিয়ে দিয়ে দিবো;একটা বুড়ো আঙ্কেলের সাথে!তখন আর পড়তে হবে না। বসে বসে সারাদিন আঙ্কেলের সাথে গল্প করিস!”
‘আমাকে নিয়ে তোমার এত ভাবতে হবে না যাও তো। আর তুমি নিজের চিন্তা কর।’
‘আমি আর কিছু বলতে যাব তার আগেই জায়ান ভাইয়া আমার দিকে রাগে চোখ করে তাকালেন আর বললেন ,___
“এখনই পড়তে বসবি আর একটা কথাও না।”
‘আমি ভয়ে আর কিছু বলতে পারলাম না। তাই চুপচাপ সেখান থেকে উঠে পড়তে চলে গেলাম পড়তে।’
“জায়ান তুই সব সময় মেয়েটার সাথে এমন করিস কেন? মাত্র এসে বসেছিল মেয়েটা!”
“আপু তুই আর ওকে আস্কারা দিয়ে মাথায় তুলিস না; তোর আর আম্মু জন্য ওর পড়াশোনার এত খারাপ অবস্থা। আজকে আমি ওদের স্কুলে গিয়ে ছিলাম, সায়রার ম্যাথ টিচার ফোন দিয়ে ছিল! পরে সেখানে গিয়ে জানতে পারি সায়রা ম্যাথ সাবজেক্টে ফেল করেছে। তাহলে এখন তুই বল এমন করে পড়লে; সায়রা কখনো এসএসসি পাস করতে পারবে?”
“কি বলিস,তাই বলে ফেল করবে? এত খারাপ স্টুডেন্ট তো মনে হয় না!
“হ্যাঁ, অনেক খারাপ রেজাল্ট হয়েছে এখন থেকে আমি সায়রাকে প্রতিদিন রাতে দুই ঘন্টা করে ম্যাথ আর ইংলিশ সাবজেক্ট পড়াবো। আর সায়রা যদি ভালোভাবে আমার কাছে না পড়তে চায় তাহলে;ওর কপালে দুঃখ আছে। আর তোরা যদি তখন আমাকে কিছু বলতে ,আসিছ তাহলেও আমি কারো কথা শুনবো না দ্যাটস ফাইনাল।”
“আচ্ছা তুই পড়লে তো আর কেন সমস্যা থাকবে না ভালোই হবে।”
“ঠিক আছে তোরা তাহলে বাসায় থাক, আমি একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি।”
“ঠিক আছে ,সাবধানে যাস আর তাড়াতাড়ি চলে আসিছ বেশি দেরি করবি না কিন্তু!”
“কথাগুলো বলেই জায়ান বাইরে চলে যায়।”
#চলবে।