#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৬ ( প্রথমাংশ )
” বন্ধুগণ! এই মাত্র আমাদের মাঝে হাজির হয়েছেন মিস ঢঙী শেখ। শীঘ্রই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন উনি। ওনার জন্য জোরে এক হাততালি হয়ে যাক? ”
ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিমায় নিজস্ব অনুভূতি পেশ করলো মিনহা। ওর কথায় পরিহাস স্পষ্ট। তা কি হৃদি বুঝতে সক্ষম হলো? সে হাসিমুখে এগিয়ে গেল মিনহার পানে। ওর এলোকেশ কানের পিঠে গুঁজে ডান হাতে আলিঙ্গন করলো গলা। মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বললো,
” নিজেকে বড় যে বলে বড় সে নয়
অন্যকে ঢঙী যে বলে ঢঙী সে হয় ”
বিহ্বল হলো মিনহা! মেয়েটা এসব কি বলছে! মিনহা’র সঙ্গীরা মুখ টিপে হাসছে। পারছে না বান্ধবীর ভয়ে সশব্দে হাসতে। হৃদি আস্তে করে মিনহার গলা ছেড়ে মুখোমুখি দাঁড়ালো। হাসিমুখে টানা-টানা স্বরে বললো,
” শুনলে তো ডার্লিং? অ্যাক্চুয়াল ঢঙী ঠিক কে? ”
মিনহা শক্ত কণ্ঠে শুধালো, ” তুই কি আমাকে ঢঙী বলছিস? ”
হৃদি জিভ কেটে নেতিবাচক মাথা নাড়লো। ধীরপায়ে পিছিয়ে গেল কয়েক কদম। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো মেয়েটির পানে। প্রাশ্চাত্য সংস্কৃতি হতে অনুপ্রাণিত হয়ে তেমনই আধুনিক পোশাক পরিহিতা মেয়েটি। মুখে কৃত্রিম প্রসাধনীর বেশ চকচকে প্রলেপ। ঢঙী বলাই চলে। হৃদি মৃদু হেসে বললো,
” অন্যকে ঢঙী যে বলে ঢঙী সে হয়। সো আমি কিছুই বলিনি। বরং তুই বলেছিস। তাই বলছি কি ময়না। নিজেকে একবার আয়নায় দেখ। তারপর আমাকে। বুঝতে পারবি কে ঢঙী আর কে নয়। ওকে? ”
মিনহা ওর পানে এগিয়ে এলো। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নয়নে নয়ন স্থির রেখে বললো,
” এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। হাফ বিয়াইত্তা হয়ে গেছিস। এজন্য খুব ভাব বেড়ে গেছে তাই না? সাপের পাঁচ পা দেখে নিয়েছিস? ”
হৃদি বিস্মিত কণ্ঠে শুধালো,
” ও মা! সাপের পাও আছে? জানা ছিল না তো। অ্যাই তুই জানলি কি করে? স্বচক্ষে দেখেছিস বুঝি? ”
মিনহা ওর মুখের সামনে তর্জনী তাক করে হিসহিসিয়ে বললো,
” একদম কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবি না। ”
” ঘোরানো প্যাচানো আমার স্বভাব নয়। তোর। নাউ এক্সকিউজ মি প্লিজ। ক্লাস আছে। ”
কোনোরূপ জবাবের অপেক্ষা না করে নিজ ডিপার্টমেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলো হৃদি। কিছুটা পথ অতিক্রম করতেই নাদিরা, দিয়া এবং ইভার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। নাদিরা জিজ্ঞেস করলো,
” ওই মিনহা কি বলছিল রে? ”
ওদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হৃদি দৃষ্টি সীমার বাহিরে চলে গেল। পেছনে রয়ে গেল ক্ষি প্ত মিনহা। হৃদিকে তার দু চোখে সহ্য হয় না। আস্ত এক ঢঙী শেখ।
•
ইরহাম এবং হৃদির বিয়ে আর মাত্র কিছুদিন পর। বিবাহের আয়োজন পুরোদস্তুর চলমান। শপিং চলছে মনপ্রাণ ঢেলে। সঙ্গী রূপে হৃদি নিজেও রয়েছে। নিজে উপস্থিত থেকে প্রি ওয়েডিং এবং পোস্ট ওয়েডিং ফাংশনের পোশাক নির্বাচন করছে। তেমনিভাবে আজোও শপিংয়ে এসেছে হৃদি এবং তার পরিবার। লেডিস জোনে মা, চাচি এবং বড় বোনের সাথে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের জন্য পোশাক দেখছে মেয়েটা। সেলস্ ম্যান ওর পছন্দমত পোশাক বের করে দেখাচ্ছে। দেখাদেখির এক পর্যায়ে একটি মাস্টার্ড ইয়েলো রঙা পোশাক দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। হৃদি সেলস্ ম্যানকে সেটি দেখাতে বললো। উনি পোশাকটি বের করে ওর সামনে উপস্থাপন করলেন। প্রসন্ন চিত্তে পোশাকে স্পর্শ করলো মেয়েটি। অমনি তাতে বাঁধা পড়লো। ডান পাশে দাঁড়িয়ে ছিল রাঈশা। অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বলে উঠলো,
” এসব কি দেখছিস? কেমন ক্ষ্যা ত লাগছে। ভালো জিনিস দেখতে পাচ্ছিস না? ”
মলিন হলো বদন। মিহি স্বরে হৃদি বললো,
” এটা সুন্দর আছে আপু। দেখ। ”
” দেখেছি। হলুদে এখন এসব আওফাও ড্রেস পড়বি? তোর চয়েজ বরাবরই লো ক্লাস। দেখি সর তো। আমাকে দেখতে দে। ”
মনটা বড় খারাপ হয়ে গেল। কালো মেঘে ছেয়ে গেল হৃদয়। ফারহানা এবং নাজরিন কাছাকাছি না থাকায় এসব টেরও পেলেন না। রাঈশা ঘুরে ঘুরে বেশকিছু পোশাক দেখতে লাগলো। তন্মধ্যে নাজরিন একটি পোশাক দেখলেন। সেটি বেশ সুন্দর। হৃদিরও পছন্দ হলো। তবে মনের গহীনে রয়ে গেল মাস্টার্ড ইয়েলো রঙা পোশাকটি। শেষমেষ পছন্দের পোশাকটি আর ক্রয় করা হলো না। অপূর্ণ রয়ে গেল ক্ষুদ্র ইচ্ছেটুকু। আজকের শপিং সমাপ্ত হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শপিংমল হতে বেরিয়ে এলো মেয়েটি।
রাতের শহর। আলো ঝলমলে পরিবেশ। মানুষজনের উপস্থিতিতে গিজগিজ অবস্থা। তারা সকলে উঠে বসলো উবার এ। পথচলা আরম্ভ হলো। হৃদি মনোনিবেশ করলো মোবাইলে। কখন যে মন খারাপের রেশ মুছে গেল টেরও পেলো না। সে যে এমনই। মন্দ লাগা তাকে বেশিক্ষণ গ্রাস করতে ব্যর্থ।
•
নিকষকৃষ্ণ রজনী। রাতের ভোজন পর্ব চলছে। নীরবতায় আচ্ছাদিত ডাইনিং রুম। হৃদি বিরস বদনে মা-বাবার পানে তাকালো। অতঃপর খেতে মনোনিবেশ করলো। এ যে নিত্যদিনের চিত্র। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। সঙ্গীহীন সে বড় একলা। শুধু টুং টাং প্লেট-চামচের ধ্বনি। যথাসম্ভব দ্রুত ভোজন পর্ব সম্পন্ন করে উঠে পড়লো মেয়েটা। সেথা হতে বেসিনের ধারে অগ্রসর হলো।
কক্ষে এসে হাঁফ ছাড়ল হৃদি। বাতায়ন হতে পর্দা সরিয়ে কক্ষের আলো নিভিয়ে দিলো। বহিরাগত স্বল্প কৃত্রিম আলো প্রবেশ করতে লাগলো অন্দরে। বিছানায় হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসলো মেয়েটি। ডান পাশ হতে রিমোট নিয়ে টিভি অন করলো। উপভোগ করতে লাগলো রণবীর সিং এর মুভি ‘সিম্বা’। টেরও পেলো না কখন তার মোবাইলে অপরিচিত নম্বর হতে খুদেবার্তা এলো। যাতে রয়েছে ক্ষুদ্র দু’টো বাক্য।
” এখনো সময় আছে। ব্যাক অফ। ”
কে এই অপরিচিত ব্যক্তি? কি তার উদ্দেশ্য? এমনতর খুদে বার্তার পেছনে লুকায়িত রয়েছে কি ভিন্ন কিছু?
•
আর মাত্র চারদিন। অতঃপর সেই পবিত্র হালাল লগ্ন। এক সুতোয় বাঁধা পড়তে চলেছে দু’জনে। বন্ধু – বান্ধবদের সঙ্গে আজকের দিনটি মনের মতো করে উপভোগ করলো হৃদি। আর তো মাত্র চারদিন। এরপর সিঙ্গেল জীবন সমাপ্ত হয়ে মিঙ্গেলের আগমন। তাই আপাতত দিনগুলো পুরোপুরি উপভোগ করে চলেছে। বিশেষত বন্ধুবান্ধব এবং চাচাতো দুই বোনের সঙ্গে। আজো ঘোরাঘুরি করতে করতে গোধূলি নেমে এলো ধরনীতে। লেডিস ওয়াচ বলছে সময় এখন সাতটা বেজে পনেরো মিনিট। রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে হৃদি। চিন্তিত বদনে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
” উফ্! কতটা সময় পেরিয়ে গেছে। বাড়ি গেলে আম্মু তো পা’ক্কা ঝাঁ!টাপেটা করবে। কি যে করি? ”
জনশূন্য রাস্তায় ভাবনায় তলিয়ে মেয়েটি। আকস্মিক ভাবনায় ছেদ পড়লো। ঠিক সম্মুখে এসে দাঁড়ালো মেরুন রঙের টয়োটা প্রিমিও। অপ্রত্যাশিত এহেন কাণ্ডে বেশ ভয় পেল মেয়েটা। বক্ষস্থলে হাত রেখে ঘন শ্বাস ফেলতে লাগলো। তন্মধ্যে ঘটলো আরেক কাণ্ড। ড্রাইভিং সিটের পাশের ডোরটি উন্মুক্ত হলো। একের পর এক কাণ্ডে হৃদি দিশেহারা প্রায়। এ কে রে ভাই? হুটহাট গাড়ি নিয়ে উদয় হচ্ছে। আবার দরজাও খুলে দিচ্ছে। পরিচয় তো জানতেই হচ্ছে। হুম। যেই ভাবা সেই কাজ। স্বল্প অবনত হয়ে হৃদি শিকারি চোখে গাড়ির চালকের পানে উঁকি দিলো। ঠিক সে মুহূর্তে চালকের আসনে বসে থাকা মানুষটিও এদিকে অর্থাৎ বাঁয়ে তাকালো। নয়নে নয়ন মিলিয়ে গেল সহসা। হকচকিয়ে গেল মেয়েটি। দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়ালো। এ কি অনাকাঙ্ক্ষিত কাণ্ড! ইনি এখানে কি করছেন! ভাবনার মাঝে কর্ণ কুহরে পৌঁছালো পুরুষালি ভারিক্কি কণ্ঠস্বর,
” গেট ইন দ্যা কার। ”
হৃদি জোরপূর্বক হেসে গাড়ির পাশে দাঁড়ালো। বুঝতে পারছে না ঠিক কোথায় বসবে। সামনেই নাকি পেছনে!
” গাড়িতে উঠতে বলেছি বোধহয়! ”
” জ্ জ্বি জ্বি। ”
ইতস্তত ভাব এক পার্শ্বে রেখে ইরহামের পাশের সিটেই বসলো। বন্ধ করলো কার ডোর। ধীরে ধীরে চলন্ত রূপ ধারণ করলো টয়োটা প্রিমিও টি। হৃদি শুকনো ঢোক গিলে বোকা হাসি উপহার দিলো। মৃদু স্বরে শুধালো,
” আপনি এখানে? কোনো কাজে এসেছিলেন বুঝি? ”
ওপাশ হতে জবাব এলো না।
” বুঝতে পারছি। কাজেই এসেছিলেন। আমিও কাজেই এসেছিলাম। ”
পরক্ষণেই প্রকৃত সত্য প্রকাশ করে বসলো,
” মানে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে। ও-ই আর কি। ক’দিন পর তো বিয়ে। তাই ধুমছে ঘোরাঘুরি করছি। এরপর যদি.. ”
ইরহাম ওর পানে আড়চোখে তাকাতেই মেয়েটা থেমে গেল।
” কিছু না। কিছু না। ”
কয়েক মিনিটের বিরতি। অতঃপর,
” তা ইলেকশনের প্রস্তুতি কেমন চলছে? খবর পেলাম কয়েক মাস পরে নাকি ইলেকশন? ”
ইরহাম এবার পূর্ণ অথচ কেমন অদ্ভুত চাহনিতে তাকালো। তা লক্ষ্য করেও হৃদি নিজের মতো বলে গেল,
” ইলেকশন বলে কথা। ফার্স্ট ক্লাস প্রস্তুতি নেবেন। আপনাকে ই বিজয়ী হিসেবে চাই। বুঝেছেন? কোনো মতে হেরে যাবেন না যেন। ”
কুখ্যাত উপদেষ্টা হৃদি শেখ নিজের মতো করে উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে। আকস্মিক থেমে যেতে বাধ্য হলো। কর্ণ কুহরে পৌঁছালো সাবধান বাণী,
” বেশি কথা পছন্দ নয়। ”
হৃদি কেমন দুঃখী চাহনিতে তাকালো। অধরে লেপ্টে থাকা হাসিটুকু মিলিয়ে গেল হাওয়ায়। তার ভাগ্যেই এমন ফুলস্টপ জামাই ছিল! এ যে ঘোর অন্যায় অবিচার। এ অবিচারের বিচার চাইতে আঁধারে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো মেয়েটি। কয়েক মিনিটের নীরবতা। অতঃপর,
” আচ্ছা আপনার গায়ে হলুদ হচ্ছে তো? আপনি ঠিক কেমন আউটফিট নিয়েছেন? আমি তো একটা.. ”
আকস্মিক ব্রেক। থেমে গেল চলন্ত গাড়ি। হৃদি মুখ থুবড়ে পড়তে গিয়েও পড়েনি। সিটবেল্ট না থাকলে যা হয় আর কি। মনে মনে আচ্ছা মতো গা’লমন্দ করে সোজা হয়ে বসলো মেয়েটা। জানালা গলিয়ে বাহিরে তাকাতে লক্ষ্য করলো অ্যাপার্টমেন্ট পৌঁছে গেছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে গাড়ি হতে নেমে এলো মেয়েটি। পিছু ঘুরে মানুষটির পানে এক পলক তাকিয়ে ভেংচি কেটে প্রস্থান করলো। ধন্যবাদ তো বহু দূরের কথা। ওর গমন পথে শূন্য চাহনিতে তাকিয়ে রইলো ইরহাম। অতঃপর গাড়ি ঘুরিয়ে সেথা হতে চলে গেল।
•
তমস্র রজনী। অ্যাপার্টমেন্টের ছাদ আজ হলদে আভায় সুসজ্জিত। সকলের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো একটি কারুকার্য খচিত আকর্ষণীয় দোলনা। বৃহৎ আকৃতির দোলনাটি গাঁদা ফুলের সমারোহে সজ্জিত। অগণিত গাঁদা ফুলের উপস্থিতি যেন দোলনার ব্যাকড্রপ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিছু ঝুলন্ত ফুলের বল দোলনার আকর্ষণ আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছে। কমলা রঙে আবৃত দু’টো কুশন স্থান পেয়েছে দোলনায় বসার স্থানে। সকলের মধ্যমণি হয়ে বসে হবু কনে হৃদি। পড়নে তার এমব্রয়ডারিকৃত হলুদ রঙা লং ফ্লারেড আনারকলি পার্টিওয়্যার। দীঘল কালো কেশ উন্মুক্ত হয়ে পৃষ্ঠে ছড়িয়ে। দু কানে শোভা পাচ্ছে পুষ্পের মিলনমেলায় তৈরিকৃত কানের দুল। দু হাতে ব্রেসলেটের ন্যায় জড়িয়ে পুষ্প মালা। গৌর বর্ণের মুখশ্রীতে মানানসই কৃত্রিম প্রসাধনীর ছোঁয়া। অসাধারণ লাগছে দেখতে!
রাঈশা বোনের বাঁ কপোলে হলুদ ছুঁয়ে দিলো। অধরে জোরপূর্বক হাসির রেখা। বিলম্ব না করে সরে গেল সে। এবার হাজির হলো দুই বোন। নীতি এবং নিদিশা। হলুদে রাঙা হলো হবু কনের অবয়ব। মেয়েলী সমস্বরে চলছে গানের শব্দমালা,
‘ গতরে হলুদো লাগাইয়া কন্যারে
সাজাও বধূরো সাজে মিলিয়া
আতরো গোলাপো লাগাইয়া কন্যারে
সাজাও বধূরো সাজে মিলিয়া ‘
বান্ধবীরা দুষ্টুমি করে পুরো মুখ হলদে রঙা করে তুললো। হাসিঠাট্টা আয়োজনে অতিবাহিত হলো কয়েক ঘণ্টা। ঘড়ির কাঁটা তখন এগারোর কাছাকাছি। ফারহানা বাধ্য হয়ে ছাদে এলেন। সাথে নাজরিন। এক ধমকেই আড্ডাখানা ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল। গড়িমসি করে ছাদ হতে নেমে এলো ওরা। সমাপ্ত হলো এক দিন। অপেক্ষা নতুন দিবা। এক নয়া সূচনার।
চলবে.
#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৬ ( শেষাংশ ) [ বিবাহ বন্ধনে দু’জনে ]
শুধুমাত্র আজ রাতটি। একাকী জীবনের অবসান। সূচনা এক নয়া জীবনের। ইরহাম ও হৃদির বিবাহ আগামীকাল। বিষয়টি যতবার মনের গহীনে প্রতিধ্বনিত ততবারই পুলকিত হচ্ছে গোটা তনুমন। নরম তুলতুলে বালিশে আয়েশ করে শুয়ে মেয়েটি। হাতে স্মার্টফোন। তাতে প্রদর্শিত হচ্ছে প্রি ওয়েডিং ফাংশন সমূহে ক্যাপচারকৃত অসংখ্য ফটো। একের পর এক ফটো স্লাইড করে চলেছে মেয়েটি। দেখছে সকলের খুশি। হাসিমুখ। ফটো দেখতে দেখতে কয়েক মাস পূর্বের একটি ফটো দৃশ্যমান হলো। তাদের ফ্যামিলি ফটো। ফারিজা’র জন্মদিনে তোলা। আম্মু, আব্বু কিছুতেই ফটো তুলতে চাইছিল না। বলেকয়ে শেষমেষ ফারিজাকে হাত করে রাজি করানো হয়েছিল। এ ফটোতে তারা পরিবারের সদস্যরা সবাই উপস্থিত। আম্মু, আব্বু, চাচু, চাচি, বোনেরা সবাই। কি সুন্দর মুহূর্ত! প্রাণে যেন আনন্দময় তরঙ্গ বয়ে যায়। ফটোটি একমনে দেখতে দেখতে ভাবনায় তলিয়ে গেল হবু বধূ। আজকের রাতটি শুধু। এরপর সে চৌধুরী পরিবারের নববধূ। মিস্টার ইরহাম চৌধুরীর সহধর্মিণী। কারোর পুত্রবধূ, কারো ভাবী, কারোর নাতবউ। অজান্তেই ধীরে ধীরে আপন নীড়ের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হবে। তার আপনজন হিসেবে পরিচিতি পাবে ওই পরিবার। আম্মু, আব্বু জন্ম দিয়েও পর হয়ে যাবে। এ বাড়িতে আসতে, সময় কাটাতে বোধহয় শ্বশুরবাড়ির অনুমতি লাগবে। আসলেই কি এমনটি হবে? তবে গল্প, উপন্যাস, টিভির পর্দায় যে ভিন্ন কিছু দেখায়! বিবাহ পরবর্তী জীবন তো বড় মধুর। সুখময়। তাই নয় কি!
ভাবনায় মশগুল মেয়েটি অবচেতন মনে ছটফট করে উঠলো। বক্ষমাঝে অসহনীয় পীড়া। অশ্রু মালা চোখের কিনারে আন্দোলনরত। যেকোনো মুহূর্তে সবটুকু বাঁধা পেরিয়ে গড়িয়ে পড়বে অবিরাম। আব্বু আম্মুর ফটোটি জুম ইন করে দেখতে লাগলো হৃদি। ঝাপসা হয়ে আসছে দৃষ্টি। বুকের ভেতর বড় জ্বা’লা পো ড়া করছে। আপনজনকে হারানোর ভয় জেঁকে বসছে প্রবল রূপে। টুপ করে দু ফোঁটা অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়লো। অধর কা’মড়ে নিজেকে সামলানোর বৃথা প্রয়াস চালালো মেয়েটি। অস্বস্তি, যাতনায় পি ষ্ট হয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো। বারকয়েক ঢোক গিলে গণ্ডস্থলে স্বল্প শান্তি নামিয়ে আনলো। তবে শান্তি মিললো না অন্তরে। মোবাইলটি বিছানার একাংশে ফেলে বিছানা ত্যাগ করে নেমে এলো মেয়েটি। দ্রুত কদম ফেলে কক্ষ হতে বেরিয়ে গেল। স্বল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেল মা-বাবার কক্ষের ধারে। বদ্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এবার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারালো। নিঃশব্দে ক্রন্দনে দিশেহারা হলো কোমল কায়া। কপোলের কোমল ত্বক সিক্ত হতে লাগলো অশ্রুতে। র’ক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো আঁখি জোড়ার সফেদ অংশে। আব্বু আম্মুর কাছে ছুটে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে অন্তর। আম্মুর কোলে মাথা রেখে সবটুকু অস্বস্তি, দুঃখ দূরীকরণ করতে উদগ্রীব তনুমন। তবে এখন কি তা সম্ভব? রাত যে অনেক। নিদ্রায় তলিয়ে তারা। ডাকলে কি শুনবে? নেত্র গড়িয়ে নোনাজল বর্ষিত হতে লাগলো। একরাশ আকুলতা, যাতনা ভেতরে দা’ফন করে নিজ কক্ষের উদ্দেশ্যে মন্থর গতিতে হাঁটতে লাগলো হৃদি। এলোমেলো তার পথচলার ধরন। দেখতে বড়ই দুঃখিনী, অগোছালো লাগছে।
•
‘ সুখনীড় ‘ অ্যাপার্টমেন্টের ছয়তলায় আজ আনন্দঘন, উত্তেজনাময় পরিবেশ। অতি ব্যস্ত রায়হান-ফারহানা দম্পতি। আজ যে তাদের কনিষ্ঠ কন্যা হৃদির বিয়ে। পবিত্র এক বাঁধনে বাঁধা পড়তে চলেছে অগোছালো, সহজ-সরল, চঞ্চল মেয়েটি। ভোরবেলা হতেই ফ্লাটে জমজমাট আবহাওয়া। বাড়ির নারী সদস্যরা নিজ নিজ কর্মে লিপ্ত। পুরুষরাও থেমে নেই। তাদের কর্ম সম্পাদন করে চলেছে নিষ্ঠার সহিত। খুদে সদস্যরা ছোটাছুটি করছে এদিক ওদিক। উপভোগ করে চলেছে বিয়ে বাড়ির আনন্দঘন পরিবেশ।
নিজ কক্ষে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে হৃদি। নিদ্রায় বুঁজে আসছে আঁখি পল্লব। বিপরীত দিকে পাশাপাশি বসে নীতি এবং নিদিশা। নীতির হাতে খাবারের প্লেট। সে মোলায়েম স্বরে বলে চলেছে,
” হৃদু বুইন আমার! খাবারটা খেয়ে নে। কতগুলো বেজে গেছে। চাচি টের পেলে কিন্তু খুব বকবে। খেয়ে নে না। ”
নিদ্রায় মগ্ন মেয়েটি অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো, ” হু.. ”
আবার ঘুম। নীতি পড়েছে ফ্যাসাদে। এই কুম্ভকর্ণকে এখন জাগাবে কি করে? আচ্ছা মুসিবত তো! এ মুসিবত হতে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলো রাঈশা। সে ব্যস্ত ভঙ্গিতে কক্ষে প্রবেশ করেই চমকালো! হৃদি এখনো ব্রেকফাস্ট করেনি! মুহুর্তেই মেজাজ বিগড়ে গেল। বিছানার ধারে ছুটে এলো সে। নিদ্রাচ্ছন্ন মেয়েটির ডান বাহু ধরে এক ঝটকায় বসিয়ে দিলো। শক্ত কণ্ঠে ধমকে উঠলো,
” এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস? খাবি কখন আর গোসল করবি কখন? ওঠ বলছি। ”
আকস্মিক কাণ্ডে হকচকিয়ে গেল হৃদি। নিদ্রা পলায়ন করলো পেছনের দরজা দিয়ে। রাঈশার এমন অবতারে নীতি কাঁচুমাচু করে বললো,
” আপু ও-ও খাচ্ছিল। ”
” চুপ। কত যে খাচ্ছিল, দেখেছি। ”
হৃদির পানে তাকিয়ে,
” আর তুই? পাঁচ মিনিট সময় দিলাম। চুপচাপ খেয়ে নে। নইলে ভালো হবে না এই বলে রাখলাম। ”
গটগট করে সেথা হতে প্রস্থান করলো রাঈশা। আজকের দিনেও এমনতর আচরণ! না চাইতেও হবু কনের নেত্রকোণে জমায়িত হলো অশ্রু বিন্দু। তা লক্ষ্য করে মলিন হলো নীতি, নিদিশার বদনখানি।
.
‘ আনন্দাঙ্গন ‘ এ আজ সত্যিই আনন্দমেলা বসেছে। বাড়িতে নতুন সদস্যের পদার্পণ হতে চলেছে। সে উত্তেজনায় মশগুল মালিহা, ইনায়া। সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা রাজেদা খানম লিভিং রুমের এক সোফায় বসে। অভিজ্ঞতার আলোকে তত্ত্বাবধায়ন করছেন সকল আয়োজন। সে-ই মতো কর্ম লিপ্ত উপস্থিত নারীগণ। পুরো বাড়িতে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। দেখতে বড় ভালো লাগছে। নজরকাড়া সে আয়োজন! তবে এতকিছুর ভিড়ে নির্লিপ্ত, নিষ্প্রাণ দু’জন। বাপ বেটা যুগল। দু’জন ভিন্ন ভিন্ন দুই কারণে এমনতর আচরণ করছে। এজাজ সাহেব এ মুহূর্তে নিজ কক্ষে। অফিসিয়াল কর্মে নিজেকে নিযুক্ত রেখেছেন। আর ইরহাম?
বাহিরের কর্ম সম্পাদন করে সদ্য কক্ষে প্রবেশ করলো মানুষটি। এ নিয়ে মালিহা কম চেঁচামেচি করেননি। আজ যার বিয়ে তারই খোঁজ নেই। নিজের মতো ঘুরছে, ফিরছে, কাজ করছে। দেখা পাওয়া মুশকিল। তবে এসবে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করলো না ইরহাম। নিজের মতো করে কক্ষে প্রবেশ করলো। গোসল সেরে সতেজ দেহে বেরিয়ে এলো। সমতল আরশির সম্মুখে দাঁড়িয়ে তোয়ালে চালনা করে চলেছে সিক্ত কেশে। উদোম তার দেহের উপরিভাগ। নিম্নে কটন চেক পাজামা। এমন মুহূর্তে বিপ বিপ শব্দে আলোড়ন সৃষ্টি করলো ক্ষুদ্র যন্ত্রটি। জানান দিলো কেউ যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক। বাঁ হাতে তোয়ালে চালনা করতে করতে বিছানার ধারে এগিয়ে গেল ইরহাম। ডান হাতে মোবাইল নিতেই কুঞ্চিত হলো ভ্রু যুগল। কলার আইডি যে অনাকাঙ্ক্ষিত! অপ্রত্যাশিত! তবুও কল রিসিভ করলো সে।
” আসসালামু আলাইকুম। ”
” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কেমন আছো বেটা? ”
লম্বা এক সালাম দিয়ে হালচাল জিজ্ঞেস করলেন আজগর সাহেব। ইরহামের অধরে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। দুর্বোধ্য সে হাসির রেখা।
” এই তো আলহামদুলিল্লাহ্। আল্লাহ্ যেমন রেখেছেন। তা হঠাৎ করে জনগণের নেতাজী আমাকে স্মরণ করলেন যে? কোনো দরকার? ”
আজগর সাহেব প্রশস্ত হাসলেন।
” দরকার ছাড়া বুঝি স্মরণ করতে মানা? তা শুনলাম বিয়ে করছো। নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন। ”
” শুকরিয়া। ”
” হু। ভালোই করছো বিয়ে করে। আর কতকাল একা থাকবে বলো? এবার বরং বিয়েশাদী করে সংসারী হও।”
” জ্বি নিশ্চয়ই। বিয়ে তো করার ই ছিল। আফটার অল আমি তো আবার অন্যদের মতো হালাল ছেড়ে হা’রামে গা ভাসাতে পারি না। এছাড়াও বিয়ের বয়স হয়েছে। শেষমেষ বুড়ো বয়সে বাহিরে চুকচুক করবো নাকি? ”
সুক্ষ্ণ খোঁচাটা ঠিক জায়গামতো লাগলো। আজগর সাহেব গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন,
” মুখ সামলে কথা বলো চৌধুরী। ”
” জ্বি মুখ সামলেই বলছি। বেসামাল হলে তো অন্যদের ই অসুবিধা। যাই হোক। শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ। পারলে বিয়েতে আসবেন। পেট ভরে খেয়েদেয়ে চলে যাবেন। ”
” পেট ভরে খাওয়ার জন্য চৌধুরীদের দ্বারস্থ হতে হবে এমন দিন এখনো আসেনি। আর আসবেও না বুঝতে পেরেছো বাছা? যাই হোক। বিয়েশাদী করে মন দিয়ে ঘরসংসার করো। ওসব ইলেকশন টিলেকশনের চিন্তা ছেড়ে দাও। নতুন বউকে নিয়ে ঘোরো। হানিমুন মানাও।”
” বউকে নিয়ে হানিমুন করার জন্য ঘুরতে যেতে হবে এমনটা তো অবশ্যই নয়। স্বামী স্ত্রী একসাথে থাকলে ভাঙা ছাদের নিচেও হানিমুন করা যায়। যাই হোক। সবাই তো আর সব বোঝে না। এখন তাহলে রাখছি? বুঝতেই পারছেন বিয়ে বলে কথা। ”
কিছু বলবার সুযোগ না দিয়ে,
” ওহ্ হাঁ। বিয়ে হয়েছে বলে ইরহাম চৌধুরী ভেজা বেড়াল হয়ে গেছে এমন ভাবনা আনবেন না যেন। ইনশাআল্লাহ্ নির্বাচনী প্রচারণাকালীন সময়ে দেখা হচ্ছে। রাখছি। আসসালামু আলাইকুম। ”
কল কেটে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো মানুষটি। ততক্ষণে সিক্ত কেশে তোয়ালে চালনা সমাপ্ত হয়েছে। ভেজা তোয়ালে যথাস্থানে রেখে ঘরের পোশাক পরিধান করে নিলো সে। চোখে রিমলেস চশমা পড়ে বেরিয়ে এলো কক্ষ হতে।
.
সান্ধ্যকালীন প্রহর। দিবাশেষে আপন নীড়ে ফিরছে মুক্ত বিহঙ্গের দল। সতেজ পবনে শিহরিত তনুমন। আনন্দাঙ্গনের বাহিরে অপেক্ষারত বরযাত্রীর গাড়ি। এক সারিতে দন্ডায়মান গাড়িগুলো। এজাজ সাহেব অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসবে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। ওনারা অপেক্ষায় বর এবং তার ছোট বোনের জন্য। অপেক্ষার প্রহর শেষে বেরিয়ে এলো ইরহাম। সঙ্গে বন্ধু তাঈফ। মেরুন রঙের শেরওয়ানি পরিহিত মানুষটি। চোখে রিমলেস চশমা যার আড়ালে লুকায়িত নভোনীল চক্ষু জোড়া। হালকা চাপদাড়ির উপস্থিতি গুরুগম্ভীর মুখশ্রীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে চলেছে। বাঁ হাতে রিস্ট ওয়াচ। পায়ে নবাবী শ্যু। গৌর বর্ণের দেহে এমনতর সজ্জা বেশ মানিয়েছে! মালিহা খুশিমনে এগিয়ে গেলেন।
” মাশাআল্লাহ্! আমার ইরুকে আজ খুব সুদর্শন লাগছে! কারোর নজর না লেগে যায়। ”
পুত্রের ললাটে চুম্বন এঁকে দিলেন উনি। ইরহামের অধরকোণে অতি সুক্ষ্ণ হাসির রেখা ফুটে উঠলো। এদিকে ইনায়া এখনো অনুপস্থিত দেখে রাহিদ বাড়ির অন্দরে প্রবেশ করতে বাধ্য হলো।
লিভিং রুমে পৌঁছাতেই দেখা মিললো ইনায়ার। লেহেঙ্গা পরিহিতা ললনা হিজাব ঠিক করতে করতে এগিয়ে আসছে। রাহিদ দিলো চটাপট এক ধমক।
” এতক্ষণ লাগে আটা ময়দা মাখতে? সবাই যে অপেক্ষা করছে সে খেয়াল নেই? চল তাড়াতাড়ি। ”
” রাহি ভাইয়া! আ আমি তো..”
কিচ্ছুটি শুনলো না রাহিদ। বড় বড় কদম ফেলে বেরিয়ে এলো। মলিন বদনে পিছু নিলো মেয়েটি। সকলে গাড়িতে বসলে কার ডোর উন্মুক্ত করে নিজ আসন গ্রহণ করলো বর। বরযাত্রী নিয়ে চলতে আরম্ভ করলো গাড়ি।
.
লিভিং রুমে উপস্থিত বরযাত্রীর একাংশ। বাকিরা ছাদে। যেখানে অনুষ্ঠানের মূল আয়োজন করা হয়েছে। বড় একটি সোফায় বসে ইরহাম। ডান পাশে ইনায়া। বামে রাহিদ। তাঈফ দাঁড়িয়ে মালিহার পাশে। সকলের মধ্যমণি কাজী সাহেব। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন উনি। রাশেদ সাহেব ওনাকে নিয়ে কনের কক্ষে অগ্রসর হলেন।
কনের বিপরীত দিকে বসে কাজী সাহেব। উনি কোমল স্বরে বললেন,
” বলো মা কবুল। ”
সে আকাঙ্ক্ষিত মূহুর্ত আজ উপস্থিত। কাজীর কণ্ঠ যেন শুধু কর্ণ নয় বরং হৃদয়ে কড়া নাড়ছে। ধুকপুক ধুকপুক করছে হৃৎপিণ্ডে। সমস্ত উত্তেজনা, আনন্দ এক লহমায় উধাও। আছে শুধু একরাশ চিন্তা, ভীতসন্ত্রস্ত ভাব এবং আপনজনকে ছেড়ে যাওয়ার যাতনা। থেমে থেমে কম্পিত হচ্ছে অন্তঃস্থল। কাজীর ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেল নববধূ। ওর কাঁধে হাত রেখে অনুমতি এবং ভরসা দুইই প্রদান করলেন ফারহানা। মায়ের পানে একপলক তাকিয়ে সে-ই তিন বর্ণের শক্তিশালী, মধুর শব্দটি উচ্চারণ করলো হৃদি।
” কবুল। ”
” আবার বলো মা। ”
” আলহামদুলিল্লাহ্ কবুল। ”
ভেতরকার অস্থিরতা, ভীত ভাব, সবটুকু উত্তেজনা লুকায়িত রেখে তিনবার কবুল বলে, মহান রবের নাম স্মরণ করে পবিত্র এক বন্ধনে আবদ্ধ হলো দু’জন। অপরিচিত, ভিন্ন মানসিকতার অধিকারী, সর্বোপরি দুই মেরুর দু’জনে এক সুতোয় বাঁধা পড়লো। দুইধারে উপস্থিত সকলে আলহামদুলিল্লাহ্ বলে রবের শুকরিয়া আদায় করলো। আজ থেকে হৃদি শেখের অন্যতম পরিচয় সে ইরহাম চৌধুরীর সহধর্মিণী। তার অর্ধাঙ্গী। কেমন হতে চলেছে ভিন্ন পথের এই দুই পথিকের পথচলা?
চলবে.