মনের অরণ্যে এলে তুমি পর্ব-৩২

0
1130

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৩২ [ প্রেমার্দ্র সে পরশে 🩷 ]

” তুমি! ”

হতবিহ্বল কিশোরী মেয়েটি দ্রুততার সহিত বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। অবহেলিত রূপে বিছানার বুকে পড়ে রয়েছে রাহিদের ফটো ফ্রেমটি। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে আগন্তুক। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দু’জনে। অবনত মস্তকে ইনায়া। হৃদযন্ত্রের অবস্থা বেগতিক। শ্বাস প্রশ্বাসে যাতনা হচ্ছে। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আগন্তুক। বোঝার চেষ্টা করছে সম্মুখে দণ্ডায়মান কিশোরীর মনোভাব।

” এসব কি? ”

গমগমে ভারিক্কি স্বরে আবেগের বাঁধ ভেঙে গেল। নৈঃশব্দ্য ক্রন্দনে দিশেহারা মেয়েটি। জবাবের বদলে ক্রন্দন! মেজাজ বিগড়ে গেল আগন্তুকের। ইনুকে পাশ কাটিয়ে হনহনিয়ে এগিয়ে গেল বিছানার ধারে। হাতে নিলো ফটো ফ্রেমটি। পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখলো ছবিতে থাকা ছেলেটিকে। অতঃপর ধীরজ গতিতে পিছু ঘুরে তাকালো। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো ইনায়ার পৃষ্ঠে। খানিকের নীরবতা ভেদ করে কঠিন স্বরে শুধালো সে,

” পড়ালেখা মাথায় তুলে পিরিত করা হচ্ছে? আবেগ দেখাচ্ছিস? ”

শঙ্কিত হৃদয়ে দণ্ডায়মান ইনায়া। রুদ্ধ কণ্ঠনালী। ভেজা নেত্রপল্লব চুয়ে পড়ছে নোনাজল। মূক এর ন্যায় দাঁড়িয়ে সে। একটিবারের জন্যও পিছু ঘুরে তাকালো না। পূর্ণ দৃষ্টিতে ওর অবয়ব অবলোকন করলো মানুষটি। তপ্ত শ্বাস ফেলে ফটোফ্রেমের কার্নিশ ছুঁয়ে ললাটে মৃদু ঘঁষে নিলো রাহিদ। অতঃপর তেজদীপ্ত চাহনিতে তাকালো। ফটোটি ছুঁড়ে ফেললো বিছানায়। বাঁ হাতে চেপে ধরলো কোমর। মটমট ধ্বনিতে ডানেবায়ে নড়লো ঘাড়। অতঃপর কোমর হতে হাতটি সরিয়ে নিলো। শ্লথ পায়ে এগোতে লাগলো। দাঁড়ালো ইনুর মুখোমুখি। ওর অবনত মুখপানে তাকিয়ে রইলো কিয়ৎক্ষণ। ঝুঁকে গেল স্বল্প। ফিসফিসিয়ে রসিকতার স্বরে শুধালো,

” ইয়্যু লাভ মি বেব? ”

মুখ তুলে তাকালো না মেয়েটি। অপরাধীর ন্যায় দৃষ্টি নত করে দাঁড়িয়ে। কপোল ছুঁয়ে অনবরত গড়িয়ে পড়ছে বারিধারা। জবাব না পেয়ে বিরক্ত হলো রাহিদ। সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ইনুকে প্রদক্ষিণ করে ধীরপায়ে হাঁটতে লাগলো। শূণ্যে ছুঁড়ে দিচ্ছে প্রশ্নের বর্ষণ,

” বয়স কত তোর? হুঁ? এখনো আঠারো হয়েছে? হয়নি। সামনের মাসে বার্থডে। সেদিনের পুঁচকে মেয়ে! কাজিনের প্রেমে আকুলিবিকুল অবস্থা! হাঁ? ”

থেমে গেল রাহিদ। দাঁড়িয়ে ইনুর ডান পাশে। ওর পানে আড়াআড়ি ভাবে তাকালো সে। থেমে থেমে জিজ্ঞেস করলো,

” প্রেম ভালোবাসা বলতে বুঝিসটা কি রে? প্রেমিককে দেখতে ড্যানড্যানিয়ে একাকী টিএসসি যাওয়া। ফটোফ্রেম বুকে জড়িয়ে আবেগমাখা কয়টা ডায়লগ ঝাড়া! ব্যাস এতটুকুই? এটাই তোর সে-ই সো কল্ড লাভ? ”

জবাব মিললো না। রাহিদ তাচ্ছিল্য করে হাসলো। দাঁড়ালো ইনায়া বরাবর। ওর মাথায় আলতো টোকা দিয়ে বললো,

” বয়স কম। বুদ্ধিও কম। এইসব ভালুপাশার পেছনে সময় বরবাদ করে জীবনটা নষ্ট করিস না। ”

হাত সরিয়ে অপ্রসন্ন কণ্ঠে,

” বাপের খাচ্ছিস আবার তারই পয়সা নষ্ট করছিস। ঠু (too) ব্যাড ইনু। এইসব ছাইপাশ ভুলে যা। পড়াশোনায় মন দে। এতে তোর আর তোর ফ্যামিলিরই মঙ্গল। ”

ক্ষণিকের জন্য থামলো রাহিদ। ডান হাতে ব্যাকব্র্যাশ করে চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিলো। পুনরায় ইনুকে কেন্দ্র করে চক্রাকারে হাঁটতে হাঁটতে কিছু স্মরণে আসার ভঙ্গিমায় হঠাৎ বলে উঠলো,

” হ্যা রে! তোর এইচএসসি দেবার ইচ্ছে আছে তো? নাকি স্বপ্নে রাহি ভাইয়ার আণ্ডাবাচ্চা পালা শুরু করে দিয়েছিস? হুঁ? ওসব ভেবে থাকলে ভুলেচুকে গিলে ফেল। ঠিক আছে? এখন হলো পড়াশোনার বয়স। স্টাডি লাইফ। মন দিয়ে সেটাই কর। মাঝেমধ্যে সময় পেলে রাহি ভাইয়ের জন্য সুন্দরী মেয়ের খোঁজ করতে ভুলিস না যেন! ভাইয়ের বিয়ে দিবি না? মাস্টার্স তো শেষের পথে। আর কতকাল সিঙ্গেল থাকবো? হুঁ? এখনই তো সময়, এক থেকে দুই হবার। ঠিক বলেছি না? ”

নিরব রোদনে লিপ্ত কিশোরী। ভঙ্গুর তার হৃদয়। নি-ষ্ঠুর মানব তা টের পেল কি? বোধহয় না। সে স্বরূপ বজায় রেখে বিছানার ধারে গেল। বসলো বাম পায়ের ওপর ডান পা তুলে। আয়েশ করে। মাথা কিঞ্চিৎ পেছনে ঝুঁকে। দু হাতের ভর ছেড়ে রাখা বিছানায়। নেত্রপল্লব বন্ধ করে নম্র স্বরে বললো মানুষটি,

” আশা করি আজকের পর থেকে কখনোই এমন বোকা বোকা কাজকর্ম করবি না। ফোকাস অন ইয়্যর স্টাডি ইনু। ইয়্যু হ্যাভ টু বি সাকসেসফুল ইন লাইফ। ”

অতঃপর মিনিট দুয়েকের নীরবতা। হঠাৎই নীরবতার চাদর হটিয়ে উচ্চ ধ্বনি কর্ণপাত হলো। চোখ মেলে তাকালো রাহিদ। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো ঘরের দরজায়। এখনো নড়ছে দরজাটি। সাক্ষী কারোর চঞ্চল প্রস্থানের। আস্তে ধীরে নিমীলিত হলো তার নেত্র। নি ষ্ঠুর মানব শেষমেষ এক কিশোরী কন্যার নিকটে নি-ষ্ঠুরতা প্রকাশ করেই ক্ষ্যা ন্ত হলো!
.

নিকষকৃষ্ণ রজনী। আরশির সম্মুখে দাঁড়িয়ে হৃদি। হিজাব মুক্ত করলো কেশ। খোঁপা মুক্ত হয়ে পৃষ্ঠে ঝরঝর করে ছড়িয়ে পড়লো কৃষ্ণবর্ণ কেশ। হিজাবটি রাখলো টুলের ওপর। ব্যস্ত হয়ে পড়লো মেকআপ রিমুভার নিয়ে। সযত্নে মুছে নিচ্ছে কৃত্রিম প্রসাধনীর প্রলেপ। ফিরে আসছে প্রাকৃতিক রূপ। সে মুহূর্তে ওয়াশরুমের দ্বার উন্মুক্ত করে বেরিয়ে এলো সুঠামদেহী মানব। উদোম দেহের উপরিভাগ। গলায় জড়িয়ে শুভ্র তোয়ালে। তোয়ালের একাংশ চালিত হচ্ছে ভেজা চুলের ভাঁজে ভাঁজে। আড়চোখে দেখে নিলো আরশির সম্মুখে দণ্ডায়মান শাড়ি পরিহিতা একান্ত নারীকে। দুর্বোধ্য হাসলো মানুষটি। পা বাড়ালো বেলকনিতে। ভেজা তোয়ালে মেলে দিয়ে ফিরে এলো কক্ষে। আঙ্গুলের কারিশমায় ভেজা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,

” স্বামী মহাশয়কে আজকাল ভুলেই যাচ্ছো, তাই না? ”

থেমে গেল হাত। আরশির মধ্য দিয়ে স্বামীর অবয়বে তাকালো হৃদি। রসিকতার স্বরে জবাব দিলো,

” আপনি কি সেফটিপিন যে এখানের বদলে ওখানে রাখলাম আর ভুলে গেলাম? ”

নীরবতাকে আপন করে মন্থর পায়ে এগিয়ে গেল ইরহাম। দাঁড়ালো অর্ধাঙ্গীর পেছনে। আরশিতে দৃশ্যমান হৃদির অবয়ব। রিমুভার ব্যবহার করে প্রসাধনীর সর্বশেষ প্রলেপ মুছে নিচ্ছে সে। কৃত্রিমতা বিহীন প্রাকৃতিক রূপ। উন্মুক্ত দীঘল কালো কেশ। ওষ্ঠরঞ্জনী মুছে ফেলায় হালকা রঙিন ওষ্ঠাধর। কপোলে র’ক্তিম আভা। মোহমায়ায় ঘা য়ে ল হলো এমপি সাহেব। দূরত্ব ঘুচিয়ে আরো নৈকট্যে এলো। ঘন ঘন পড়ছে শ্বাস। বেসামাল নিজেকে ডুবিয়ে দিলো কৃষ্ণবর্ণ কেশরাশি’তে। শক্তপোক্ত হাতের করতলে আঁকড়ে ধরলো বাহুদ্বয়ের কোমল ত্বক। আকস্মিক কাণ্ডে হতবিহ্বল মেয়েটি! থমকে গেল হাত। রিমুভার হাত ফসকে পড়তে গিয়েও পড়লো না। দামামা বেজে উঠলো হৃদয়ে! অনুভব করতে পারছে স্পন্দনের বেগতিক হাল। দীঘল কেশে মুখ ডুবিয়ে মানুষটি। নাসিকা গ্ৰন্থিতে টেনে নিচ্ছে কেশের নিজস্ব সুবাস!
নে শা ধরে যাচ্ছে অন্তঃপুরে। বাহু ছুঁয়ে ছুঁয়ে আবেশি স্পর্শে দু’টো হাত নিম্নে ধাবিত হচ্ছে। খানিক বাদে বাহু মুক্ত হলো। পুরুষালি দু হাত স্থাপিত হলো নির্মেদ কটিদেশে। শাড়ির আবরণ ছাপিয়ে নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে হস্তদ্বয়। অসহনীয় মিঠে যন্ত্রণায় কাতর মেয়েটি। বদ্ধ হলো নেত্রপল্লব। হাত ফসকে পড়ে গেল রিমুভার। কর্ণ গহ্বরে পৌঁছালো ক্ষীণ স্বর,

” একমাত্র স্বামীকে ভুলে অন্যত্র মন দিচ্ছো। এ যে মস্তবড় অপরাধ বিবিজান। ”

রূক্ষ দু হাতের মিষ্টি জ্বা’লাতনে অতিষ্ট রমণী। আঁকড়ে ধরলো খসখসে দু হাত। বাঁধা প্রদানের বৃথা চেষ্টা চালালো। আকস্মিক হস্ত লীলার শিকার হয়ে পিছু ঘুরে গেল হৃদি। বরাবর মুখোমুখি দু’জনে। একজোড়া নে”শাতুর নয়ন স্থির তার পানে। তাকিয়ে নিষ্পলক নেত্রে। লাজে মরি মরি অবস্থা মেয়েটির। লালাভ রঙ ধারণ করলো কপোলদ্বয়। নত হলো দৃষ্টি। লজ্জাবতীর লাজে সম্মোহিত হলো পৌরুষ চিত্ত! মন্থর গতিতে এগিয়ে গেল। ঘুচে গেল মধ্যকার স্বল্প দূরত্বটুকুও। ডান হাতের পাঁচটি আঙ্গুল গলিয়ে দিলো কর্ণ পার্শ্ববর্তী কেশের ভাঁজে। বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁয়ে কপোলের ত্বক। বাঁ হাতে আঁকড়ে ধরে ঘাড়। মুখশ্রীতে তপ্ত শ্বাসের আঁকিবুঁকিতে শিহরিত তনুমন। লজ্জালু দু নয়ন তুলে তাকালো মেয়েটি। নভোনীল আঁখিতে মোহাচ্ছন্ন হলো! চোখে চোখে কথা হলো। লেনাদেনা মনের। প্রিয়তমার মুখের প্রতিটি অংশে চক্ষু বুলিয়ে চলেছে সে। বেকাবু হচ্ছে সত্ত্বা। তবুও থেমে নেই আজ। ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রিয়তমার ওষ্ঠপুটে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো মানুষটি। শিউরে উঠলো মেয়ে। ডান হাতে আঁকড়ে ধরলো স্বামীর বাহু। নখ বিঁধে গেল ত্বকে। সংযমের শেষ ধাপে চরমভাবে ধরাশায়ী হলো ইরহাম। এতদিনের সংযম, প্রতীক্ষা, অভিলাষ সব একত্রে মিলেমিশে একাকার হলো। সন্ধি হলো অধরে অধরে! অপ্রত্যাশিত নৈকট্যে স্তব্ধ হৃদি! ভুলে গেল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে। তখন জাগতিক হুঁশ হারিয়ে প্রিয়তমায় বিভোর এমপি সাহেব। নিমীলিত আঁখি যুগল। সযতনে আগলে নিলো নিজের সনে। বর্ধিত হলো সান্নিধ্য! প্রগাঢ় স্পর্শে শিহরিত রমণীর বুজে গেল অক্ষিপুট। অবচেতন মনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো সে। অনুভব করলো ঘাড় আঁকড়ে ধরা হাতটি এখন স্থাপিত হয়েছে কটিদেশে। গাঢ় হয়েছে বন্ধন! প্রথমবারের মতো প্রগাঢ় উষ্ণতায় মত্ত দু’জনা!

বহমান সময়ের স্রোতে পেরিয়ে গেল কতগুলো দিন। একটু একটু করে দূরত্ব বেড়েছে দু’জনার। একজন ব্যস্ত দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা নিয়ে তো আরেকজন ব্যস্ত দেশসেবায়। আজকাল ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে দু’টো মিনিট প্রাণ খুলে কথা বলা হয় না। হয় না মোহাচ্ছন্ন সাক্ষাৎ। ফজরের সালাত আদায়ের পর সামান্য একটুখানি দেখা। ইচ্ছে থাকলেও তেমন কথা বলা হয়ে ওঠে না। বেশিরভাগ দিন প্রাতরাশ বিনা বেরিয়ে পড়ছে এমপি সাহেব। হৃদিও মন দিয়ে পড়াশোনা করছে। পূর্বের পড়ুয়া ধাঁচ এখন বদলে গেছে। আগে মোটামুটি ফলাফল করলেই হতো। এখন সে শ্বশুরবাড়ি। স্বাভাবিক ভাবেই মনের মধ্যে ভালো ফলাফল করে মুখ উজ্জ্বল করার বাসনা জেগেছে। তাই তো দিনরাত অবিরাম বইয়ে মুখ গুঁজে মেয়েটি। আজকাল
‘ আনন্দাঙ্গন ‘ সে-ই আগের মতো নিষ্প্রাণ হয়ে উঠছে। মধ্যাহ্ন ভোজের পর ননদ ভাবীর গল্পের আখড়া বসে না। হয় না সন্ধ্যার পর টিভি দেখার ফাঁকে নাস্তা খেতে খেতে দুষ্টুমি। অনেক রাত অবধি লেডিস গ্যাং এর আড্ডাও হয়ে উঠছে না আজকাল। ইনায়ার চঞ্চলতাও কেমন হারিয়ে যাওয়ার পথে। জোরপূর্বক নিজেকে স্বাভাবিক প্রদর্শন করার চেষ্টা করছে। হৃদি, মালিহা বার দুয়েক জিজ্ঞেস করেছিল। চতুরতার সহিত প্রকৃত বিষয়টি লুকিয়ে গেল ইনায়া। ওদিকে এমপি সাহেবও বেশ ব্যস্ত দিনযাপন করছেন। ভুলে যাচ্ছেন অর্ধাঙ্গীর সনে একটুখানি সময় কাটাতে। এমন করে অতিবাহিত হলো দুই মাস।

বিগত দুই মাসে পূর্বের ন্যায় তিনবার ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ এসেছিল রাহিদ। ফুপি, ভাবী সবার সঙ্গে দেখা করতে। দেখা হয়েছে বটে। তবে প্রতিবারই অনুপস্থিত ছিল একজন। ইনায়া। রাহিদের উপস্থিতিতে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যেতো ইনায়া। কখনো পড়ালেখার দোহাই দিয়ে ঘরবন্দি কখনোবা কোচিংয়ে। একটিবারের জন্য কিংবা এক সেকেন্ডের জন্যও দেখা হয়নি দু’জনের। পুরোপুরি অজানা অচেনা যেন দু’জনা। বিষয়টি কি কারোর নজরবন্দি হলো না! অদ্ভুত!

পেরিয়ে গেছে দু মাস। সপ্তাহের শেষ রাত আজ। নিস্তব্ধতার চাদরে মোড়ানো ধরিত্রী। গভীর সমুদ্রের বুকে চলমান এক কার্গো জাহাজ। আঁধারিয়া বিপত্তি হটিয়ে সগৌরবে পথ চলছে সে। জাহাজের ওপর তলায় রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কিছু সতর্ক ব্যক্তি। ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে দাঁড়িয়ে তারা। আঁধারের মাঝেও শক্তিশালী দূরবীন দিয়ে চারিধারে সতর্ক নজর বুলিয়ে চলেছে। নিশ্চিত করছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। এভাবে সতর্কতার সহিত জাহাজটি অতিক্রম করলো অনেকটা পথ। এবার এসে গেছে সে-ই সুবর্ণ সুযোগ। তখন মাত্রাতিরিক্ত সতর্ক দৃষ্টিতে দূরবীনের মাধ্যমে আশপাশে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে চারজন। বাকিরা ব্যস্ত প্যাকেজে। নিশ্চিত হয়ে নিলো প্রতিটি প্যাকেজে জিপিএস ট্র্যাকার সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। হাঁ কাজ করছে। তবে দেরী কিসের! আস্তে ধীরে সাবধানী ভঙ্গিতে প্যাকেজসমূহ নিয়ে জাহাজের কিনারায় উপস্থিত হয় বাকিরা। দৃষ্টি নিবদ্ধ নেতাগোছের একজনের পানে। হাতে তার মোবাইল। স্পেশাল অ্যাপে প্রদর্শিত হলো অনুমতি সূচক খুদে বার্তা। নেতৃত্ব প্রদানকারী ব্যক্তি সে খুদে বার্তা দেখে বৃদ্ধাঙ্গুলের ইশারায় সহযোগীদের অনুমতি প্রদান করলো। কর্মে লিপ্ত হলো তারা। মাছ ধরার ভঙ্গিমায় জলের গভীরতায় ভাসিয়ে দিলো একেকটি প্যাকেজ। অতল গহ্বরে ডুবে গেল প্যাকেজসমূহ।

কিছুটা দূরে আঁধারের মাঝে লুকায়িত আরেকটি জাহাজ। মাঝারি আকৃতির। জিপিএস ট্র্যাকার অনুসরণ করে দ্বিতীয় জাহাজটি অগ্রসর হতে লাগলো। অন্ধকার চিঁড়ে খুঁজে পেল জলে ডুবন্ত প্যাকেজসমূহ। সেগুলো বিশেষ কায়দায় তুলে নিলো নিজেদের জাহাজে। এভাবেই চতুরতার সহিত এক জাহাজ হতে আরেক জাহাজে অজ্ঞাত-অদ্ভুদ কিছু প্যাকেজ চালান হলো। আঁধারেই চাপা পড়লো কোনো রহস্যময় জাল।

চলবে.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে