মনের অরণ্যে এলে তুমি পর্ব-২১

0
1132

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২১

” আপনি কি অসুস্থ? ”

হৃদির অর্থহীন প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল হবু এমপি সাহেব। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মোবাইল রাখলো পাশে। শুধালো,

” দেখতে পাচ্ছো না? ”

হৃদি এগিয়ে এলো। বসলো স্বামীর ডান পাশে। নেতিবাচক জবাবে বললো,

” দেখতে তো পাচ্ছি। কিন্তু বুঝতে পারছি না। এই যে আপনি অসুস্থ। মাথায় এতখানি ব্যান্ডেজ নিয়ে ঘুরছেন। তাতে কি হয়েছে? দিব্যি নিজের কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো বিশ্রাম আছে কি? দেখে তো অসুস্থ মনে হয় না।”

মুচকি হাসলো মানুষটি। ওর পানে তাকিয়ে বললো,

” একটুখানি লেগেছে বলে সারাক্ষণ রেস্টে থাকতে হবে এটা তো বাধ্যতামূলক নয়। ”

হৃদি দৃঢ় স্বরে বললো,

” অফকোর্স বাধ্যতামূলক। আপনি এই শরীর নিয়ে সারাদিন টো টো করে বেড়িয়েছেন। আমি ছিলাম না। আর কেউ বাঁধাও দেয়নি। এখন আমি আছি। আদেশ প্রদান করছি এই মুহূর্তে শুয়ে পড়ুন। ইটস্ স্লিপিং টাইম জনাব। ”

এ বলে হৃদি পিছু ঘুরে বালিশ ঠিকঠাক করতে লাগলো। ইরহাম ভীত হবার ভান করে মৃদু স্বরে বললো,

” আস্তে বিবিজান। আস্তে। ভয় পাচ্ছি তো। ”

বালিশ ঠিক করতে করতে থমকে গেল হৃদি। স্বামীর পানে তাকিয়ে অবিশ্বাসের সুরে বললো,

” এমন গাঁ-জাখুরি মন্তব্য গোটা পাড়া কেন এলাকার কেউই বিশ্বাস করবে না। হবু এমপি মহাশয় নাকি তার বউকে ভয় পায়। হাহ্! ”

নিঃশব্দে হাসলো ইরহাম। ততক্ষণে বালিশ ঠিকঠাক। হৃদি স্বামীর দিকে ঘুরে বসলো। নম্র স্বরে বললো,

” এবার শুয়ে পড়ুন। অনেক রাত হয়ে গেছে। ”

আসলেই অনেক রাত হয়ে গেছে। আর বিলম্ব করা উচিত হবে না। আস্তে ধীরে শুয়ে পড়লো ইরহাম। বালিশে ঠেকলো মাথা। হৃদি ওর দেহে পাতলা কাঁথা জড়িয়ে দিলো। কক্ষের আলো নিভিয়ে ডিম লাইট জ্বালালো। নিজে বসলো হালাল সঙ্গীর শিয়রে। ক্ষতস্থান এড়িয়ে আলতো করে মসৃণ কেশে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। মানুষটি বাঁধা প্রদান করতে গিয়েও করলো না। অর্ধাঙ্গিনীর আলতো স্পর্শ বড় আরামদায়ক। অগ্রাহ্য করতে ইচ্ছে করছে না। চুপটি করে সে স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো ইরহাম। কেশের ভাঁজে ভাঁজে আঙ্গুল চালনা করার ফাঁকে হৃদি মিহি স্বরে শুধালো,

” এ ঘটনার পেছনে কে বা কারা জড়িত কিছু জানতে পারলেন? ”

ডিম লাইটের আলোয় ওর পানে তাকালো ইরহাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

” মূল হেতু আজগর সাহেবের দলের গু-ণ্ডা মার্কা ছেলেপেলে। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এরপরও কিন্তু রয়ে যায়। মনে হচ্ছে কিছু তো রয়েছে আমাদের অগোচরে। সামথিং ইজ ফিশি। ”

কেশে আঙ্গুল চালনা করে,

” আচ্ছা ঠিক আছে। ওসব ভেবে মাথায় প্রেশার দিতে হবে না। চোখ দু’টো বন্ধ করুন তো। দোয়া পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যান। ”

মুচকি হেসে সম্মতি জানালো ইরহাম,

” আচ্ছা। তুমিও শুয়ে পড়ো। দেরী করো না যেন। ”

” সে আমি বুঝে নেবো। আপনি অসুস্থ। বেশি রেস্ট দরকার। সকাল হলেই তো আবার দেশ উদ্ধার করতে নেমে পড়বেন। ”

শব্দহীন হাসলো ইরহাম। আস্তে ধীরে আঁখি পল্লব বুজে গেল। দোয়া পাঠ করতে করতে নিদ্রার প্রস্তুতি নিতে লাগলো সে। আর সঙ্গিনী রমণী ব্যস্ত স্বামীর একটুখানি আরাম নিশ্চিত করতে।
.

আঁধারিয়া রজনী। গাড়ির দেহে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি। মুখে তার মেছতার দাগ। ফোনালাপে লিপ্ত তিন বি*ভীষণের মধ্যে একজনের সঙ্গে। সে অসন্তোষ প্রকাশ করে বললো,

” গা ধা র মতো কাম করলি একটা। ইটের টুকরা না মে-রে আস্ত ইট মা”রতে পারলি না? তাইলে তো এক আঘাতেই কাম তামা হয়ে যেতো। ”

” সরি বস। মিস্টেক হইয়া গেছিল গা। চাইছিলাম এক। হইছে আরেক। ” অনুতপ্ত স্বরে বললো তরুণটি।

” হাঁ বুঝছি বুঝছি। কার দৌড় কতদূর জানা আছে। এখন শোন। সাবধানে থাকিস। চৌধুরী যেন কিছু টের না পায়। ”

” চিন্তা কইরেন না বস। কাকপক্ষীও কিছু টের পাইবো না। ”

” বেশি আত্মবিশ্বাস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বুঝলি বাছা? সাবধান। ”

সাবধানী বাণী শুনিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো মানুষটি। শার্টের বুক পকেটে রাখলো মোবাইল। সিগারেটের ধোঁয়া নির্গত করে ভাবনায় মশগুল হয়ে পড়লো।

সম্ভাব্য সমর্থকদের ভোটারে পরিণত করার সবচেয়ে সহজ কৌশল হল স্থানীয় জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। দাতব্য ইভেন্টে স্বেচ্ছাসেবক বা সম্প্রদায়ের সমাবেশে অংশ নেওয়া মানুষের চোখে স্বীকৃতি পাওয়ার দুটি দুর্দান্ত কৌশল। লাইভ প্রশ্নোত্তর, বিতর্ক এবং পরিস্থিতির ভিডিও আপলোড প্রভৃতি হলো সোশ্যাল মিডিয়াতে সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ করার দুর্দান্ত উপায়৷ ইরহাম চৌধুরী এসব কৌশল চতুরতার সহিত অবলম্বন করে চলেছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারে দলীয় কর্মীরা অ্যাকাউন্ট খুলেছে। সেথায় দিনরাত অবিরাম দলের খুঁটিনাটি তথ্য শেয়ার করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণার অগ্রগতি, নির্বাচনী আশ্বাস সব শেয়ার করা হচ্ছে। অনলাইন প্লাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে অগণিত তরুণ জনগণকে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। জনগণের সঙ্গে অতি সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। মোটকথা, তরুণ রাজনীতিবিদ ইরহাম চৌধুরী পুরোদমে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেছে। পিছিয়ে নেই একটুও। এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে আজগর সাহেবের দুশ্চিন্তার কারণ। ওনার এত বছরের সাজানো সিংহাসন একটু একটু করে নড়বড়ে হয়ে উঠছে। যা মানতে নারাজ উনি। তাই তো কুটিল ভাবনায় মশগুল।

নিশুতি রজনী। লিভিংরুমে সোফায় পাশাপাশি বসে হৃদি, ইনায়া। হৃদির হাতে মোবাইল। ইনস্টাগ্রাম স্ক্রল করছে সে। পাশ হতে দেখছে ইনায়া। তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো। সদর দরজার পানে তাকালো হৃদি। উদগ্রীব হয়ে উঠে দাঁড়ালো। মোবাইল সোফাতেই রেখে দ্রুত পায়ে অগ্রসর হলো দরজার দিকে। ইনায়া কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।

দরজা উন্মুক্ত করতেই দেখা মিললো কাঙ্ক্ষিত মানুষটির। একগাল হেসে সালাম দিলো হৃদি,

” আসসালামু আলাইকুম। ”

ক্লান্ত বদনে মুচকি হাসলো ইরহাম।

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ”

” আপনি একটু সোফায় বসুন। আমি এখনই ঠাণ্ডা পানি নিয়ে আসছি। ক্লান্ত বোধ হচ্ছে তাই না? ফটাফট দূর হয়ে যাবে। ”

কিছু বলবার সুযোগ না দিয়েই দ্বার বদ্ধ করে কিচেনে ছুটলো হৃদি। অগত্যা ইরহাম বসলো লিভিংরুমের এক সোফায়। পাঞ্জাবির বুকের ধারের বোতাম দু’টো খুলে ফেলল। প্রচুর গরম পড়েছে। সহসা দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো হতবাক বোনে। করবে না করবে না শেষমেষ প্রশ্ন করেই বসলো ইরহাম,

” এভাবে কি দেখছিস? ”

ইনায়া অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বললো,

” ভাইয়া! এ কি দেখছি? শুনছি? তোমাদের এত ভাব ভালোবাসা হলো কবে? দু’দিন আগেই না ঠুয়াঠুয়ি সম্পর্ক ছিল? তাইলে ক্যামনে কি? ”

এত এত প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেল ইরহাম। বুঝতে পারছে না ছোট বোনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠিক কি বলবে! কতটুকু বলবে। তখনই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপস্থিত হলো হৃদি। স্বামীর পানে ঠাণ্ডা গ্লাসের পানি এগিয়ে দিলো। ইরহাম প্রসন্ন চাহনিতে তাকিয়ে গ্লাস হাতে নিলো। তিন ঢোক এ পান করলো পুরো পানি। বড় তৃষ্ণার্ত ছিল সে। গ্লাস ফেরত দিয়ে ইরহাম ইশারায় শুকরিয়া আদায় করলো। মুচকি হাসলো হৃদি। তখনই সেথায় উপস্থিত হলেন মালিহা। ইরহাম মা’কে সালাম দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলো। দিনশেষে পুত্রকে সুস্থ সবল দেখে সন্তুষ্ট মালিহা। মায়ের দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে ইনায়া এগিয়ে গেল ভাবীর কাছে। ফিসফিসিয়ে শুধালো,

” ভাবী সত্যি জানতে চাই। মিথ্যা বলবে না কিন্তু।‌ কি চলছে এসব? ”

হৃদিও ওর মতো ফিসফিসিয়ে বললো,

” ফগ চলছে। ”

” ভাবী? ” সরু চোখে তাকিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করে উঠলো ইনায়া।

হৃদি ফিসফিসিয়ে বললো,

” ঠিক আছে। সময় করে আড়ালে আবডালে লুকিয়ে বলবো নে। ”

মনঃপুত হলো না কথাটি। মালিহা ওদের ফিসফিসানি কাণ্ড দেখে প্রশ্ন করে বসলেন,

” তোরা দু’জনে কি ফিসফিস করছিস রে? ”

বোকা বনে গেল দু’জনে। হৃদি মেকি হেসে বললো,

” হে হে। সিক্রেট। পড়ে বলবো ঠিক আছে? ”

দুষ্টুমি উপলব্ধি করে মালিহা আর কথা বাড়ালেন না। গেলেন কিচেনে। স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল হৃদি। উফ্!
.

নৈশভোজ সেরে লিভিংরুমে কিছুক্ষণ গল্পগুজবে মগ্ন ছিল হৃদি। কক্ষে ফিরলো এগারোটার পরে। দেখতে পেল ফোনালাপে লিপ্ত মানুষটি রিমোট দিয়ে এসির তাপমাত্রা সেট করছে। হৃদি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তোয়ালে হাতে ফ্রেশ হতে গেল। বেরিয়ে এলো কিছুক্ষণ পর। সিক্ত বদনে তোয়ালে চালনা করে সেটি মেলে দিলো বেলকনিতে। অতঃপর বেলকনির দ্বার বদ্ধ করে কক্ষে এলো। ইরহাম তখন হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে। দেহে জড়ানো পাতলা কাঁথা। মাথায় এখনো মোড়ানো সফেদ ব্যান্ডেজ। হৃদি ফোনালাপে ব্যস্ত মানুষটিকে হাতের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো আলো নিভিয়ে দেবে কিনা। ইতিবাচক মাথা নাড়ল ইরহাম। সম্মতি পেয়ে হৃদি কক্ষের আলো নিভিয়ে ডিম লাইট জ্বালালো। এসে বসলো বিছানায়। স্বামীর কাছ থেকে কাঁথার একাংশ নিয়ে নিজের দেহে জড়িয়ে নিলো। শয্যা গ্রহণ করলো। কিয়ৎক্ষণ বাদে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো মানুষটি। মোবাইল রাখলো বালিশের পাশে। শুয়ে পড়লো অর্ধাঙ্গীর পাশে। হৃদি তার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি করে শুধালো,

” এত রাতে কার সঙ্গে টা ঙ্কি মা”রছিলেন? ”

নিঃশব্দ হেসে ইরহাম বললো,

” টপ সিক্রেট। বউদের সব বলতে নেই। ”

” আচ্ছা? এত গোপনীয়তা যেখানে, সেখানে তো পাশাপাশি শোয়া অনুচিত। উঠুন উঠুন। আমায় ঘুমাতে দিন। ”

ইরহাম উঠলো না বরং আরেকটু নৈকট্যে এলো। আরাম করে শুয়ে বললো,

” বিয়ের দুই মাস পর অবশেষে সিঙ্গেল জীবনের অবসান ঘটেছে। স্বেচ্ছায় আর সিঙ্গেল হতে ইচ্ছুক নই। এখন তো সময় মিঙ্গেল হওয়ার। ”

হৃদি সরু চোখে তাকিয়ে বললো,

” আপনি তো সে-ই একপিস। ওপরে ওপরে সুফিয়ানা, তলে তলে আশিয়ানা। হুঁ? ”

হেসে উঠলো ইরহাম। ওর কাণ্ড দেখে হৃদি অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বললো,

” আপনাকে কেউ জা*দুটোনা করেছে কি? ”

” না তো। কেন? ” ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ইরহাম।

” তাহলে কথায় কথায় হাসছেন যে? আগে তো মুখের ওপর লাফিং গ্যাস ছাড়লেও হাসতেন না। আর এখন কথায় কথায় হাসছেন। আপনার দলের ছেলেপেলেরা দেখলে নির্ঘাত হুঁশ হারাতো। ”

ওর বাচনভঙ্গি দেখে পুনরায় হেসে উঠলো ইরহাম। হৃদি বিড়বিড় করে আওড়ালো,

” এটা উনি হতেই পারেন না। ছোটবেলায় মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাই নির্ঘাত ভুংভাং করতে ফিরে এসেছে। ও এম এ! ”

হৃদি তড়িঘড়ি করে ওপাশ ফিরে শুলো। একাকী বিড়বিড়িয়ে বলতে লাগলো কত কি। সহসা থমকে গেল। রুদ্ধ হয়ে এলো স্পন্দন। পেশিবহুল দু হাতের বলয়ে নিজেকে অনুভব করতে পারছে মেয়েটি। দু’টো শক্তপোক্ত হাত তার গাত্র ছুঁইছুঁই। কটিদেশ ও পৃষ্ঠ সংলগ্ন সে হাত দুটোর উপস্থিতি। একটুখানি দূরত্ব বজায় রেখেও যেন আবদ্ধ করে রেখেছে। ধীরে ধীরে পুরুষালি উপস্থিতি আরো গাঢ় হলো। কর্ণে অনুভূত হলো তপ্ত শ্বাসের আঁকিবুঁকি। শিরশিরানি ছড়িয়ে পড়লো রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আবেশে নিমীলিত হলো নেত্র পল্লব। শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছালো ভারিক্কি স্বরের অনুমতি সূচক শব্দমালা,

” ক্যান আই হাগ ইয়্যু, ওয়াইফি? ”

এ প্রথম কোনো পুরুষের এতখানি ঘনিষ্ঠতা! বাকরুদ্ধ অবস্থা মেয়েটির। বরফের ন্যায় জমে কণ্ঠনালী। কি বলবে সে! হালাল সঙ্গীকে অনুমতি দেবে নাকি ঠেলে দেবে দূরে? বিন্দু বিন্দু স্বেদজলের অস্তিত্ব দেখা দিলো মুখের যত্রতত্র। অবরুদ্ধ কণ্ঠনালী কিচ্ছুটি বলতে পারলো না। শুধু শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছালো প্রসন্ন স্বর,

” নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। এটাই ভেবে নিচ্ছি। ”

পৃষ্ঠের নিম্ন গলিয়ে মানুষটির ডান হাত অগ্রসর হলো অর্ধাঙ্গীর সম্মুখভাগে। ডেবে গেল উদরে। বাঁ হাত আলিঙ্গন করলো কটিদেশ। উদোম বক্ষপটে মিশে গেল মেয়েটির পৃষ্ঠদেশের মসৃণ আবরণ। পেশিবহুল দু হাতে বেষ্টিত হলো কোমল কায়া। স্বামীর অতীব নৈকট্যে দিশেহারা অবস্থা মেয়েটির। ঘন শ্বাস পড়ছে। বদ্ধ অক্ষিপুট। আবেগের অসীম সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। ইরহামের দু হাতের নে’শালো বেষ্টনীতে বন্দী মেয়েটি। সঙ্গিনীর অবস্থা ঠিক অনুধাবন করতে পারছে ইরহাম। তবুও কিঞ্চিৎ ছাড় দিলো না। কোমল কায়াটি নিজ বাহুডোরে বন্দী করে বদ্ধ করলো দু নয়ন। অনুভব করতে লাগলো দু’জনের এ প্রথম কাছে আসা! প্রথম অন্তরঙ্গ সঙ্গ!
.

রাতের আঁধার কেটে নতুন এক দিনের সূচনা। নিদ্রা ভঙ্গ হলো ইরহামের। নড়তে গিয়ে অতি সন্নিকটে অনুভব করলো এক কোমল অস্তিত্বের উপস্থিতি। চমকিত চোখে তাকালো মানুষটি। বাহুডোরে ঘুমন্ত সঙ্গিনীকে দেখে বিগত রাতের স্মৃতি স্মরণে এলো। স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রসারিত হলো অধর। বিগত রাতের নিদ্রা ছিল তার জীবনের অন্যতম সেরা এবং মধুরতম নিদ্রা। হবে না? হালাল সঙ্গিনীর সংস্পর্শে যেকোনো মুহূর্তই সেরা। মধুরতম হয়ে ওঠে। তৃপ্তিময় হাসলো ইরহাম। বিমুগ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে রইলো কিছু মুহূর্ত। অতঃপর মোহাচ্ছন্ন ভাব ভঙ্গ করে হৃদি’কে ডাকতে লাগলো নামাজের জন্য। দুইবার ডাক দিতেই ঘুমন্ত কন্যার নিদ্রা ভঙ্গ হলো। ঘুমঘুম কণ্ঠে শুধালো,

” কি? ”

ঘুমকাতুরে কণ্ঠে ঘা য়ে ল হলো চৌধুরী সাহেব। শুকনো ঢোক গিলে মানুষটি বললো,

” নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে। ওঠো। ”

এ বলে আস্তে ধীরে দু হাতের বেষ্টনী ভঙ্গ করে সরে গেল ইরহাম। সকাল সকাল মেয়েটিকে বিড়ম্বনায় ফেলতে ইচ্ছে হলো না। হৃদি ঘুমকাতুরে কণ্ঠে বললো,

” আপনি ওযু করে আসুন। উঠছি। ”

” হুম। তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো। ”

বিছানা ত্যাগ করে নেমে গেল ইরহাম। আরামের খোঁজে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে তার সহধর্মিণী। মুচকি হেসে মানুষটি ওযু করতে গেল।

চলবে.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে