#গল্পের_নাম_মনের_অন্তরালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৫
পরশের বলা প্রতিটি কথা প্রহেলীকে এক ঘোরে নিয়ে গেছে সে কী বলবে বুঝতে পারছেনা।ফারিহা তার হাতের কনুই দিয়ে গুতা মারতেই প্রহেলীর ঘোর কাটে।সে সামনে বসে থাকা পরশের মুখের দিকে তাকালো মানুষটার চোখে অনেক আশা।প্রহেলী পরশের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাতটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
~আপনার মতো জীবনসঙ্গী সব মেয়েরা কল্পনা করে থাকে আর আমি তো ভাগ্যবতী আপনাকে নিজ জীবনে পেয়েছি।হ্যাঁ আমি আপনার জীবনসঙ্গিনী হতে চাই।
পরশের চোখ দুটো খুশিতে চকচক করে উঠলো সে প্রহেলীর হাতে আংটিটা পরিয়ে দিয়ে বললো,
~ধন্যবাদ আমাকে গ্রহন করার জন্য।
সবাই হাততালি দিয়ে উঠলো তারা দুজন উঠে দাড়িয়ে পরলোকে রুমানা তালুকদার তাদের দুজনকে মন ভরে দোয়া করলো।প্রহেলী মায়ের কাছে গিয়ে বললো,
~আমি কী ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি মা?
আমেনা সিকদারের দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরলো সে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বললো,
~তোর সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারেনা মা।তুই সুখে থাক মা আর কিছু চাই না আমার সন্তানরা সুখে থাকবে এটাই তো আমার চাওয়া।
প্রহেলী মায়ের চোখের পানি মুছে বললো,
~তাহলে কাঁদছো কেন?
আমেনা সিকদার মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
~সুখের কান্না।
নয়না আর ফারিহা পরশকে ঘিরে ধরেছে নয়না বলছে,
~আমাদের না জানিয়ে তলে তলে এতো কিছু?
ফারিহা বললো,
~বউ পেয়ে বোন ভুলে গেলেন?ভালোই এইটাই হয়।
পরশ ভ্রুনাচিয়ে বললো,
~তোমরা ছোট মানুষ এগুলো জেনে কী করবে?
ফারিহা বললো,
~দেখসোস নয়না এখন আমরা ছোট হয়ে গেলাম।
পরশ বললো,
~আচ্ছা ঠিক আছে ভুল হয়ে গেছে এখন কী করতে পারি?
নয়না বললো,
~বিয়ের ডেটটা তাড়াতাড়ি ঠিক করে ফেলবেন আর ৫০০০ টাকা দিলে আমরা সব ভুলে যেতে পারি।
পরশ মাথায় হাত দিয়ে বললো,
~ওরে বাবা এই মেয়ে তো হিটলার।
তখনই কেউ পিছন থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
~বাচ্চা মেয়েকে তুই হিটলার বলছোস?তোর মাথাটা ঠিক আছে তো?
পরশ পিছন ফিরে দেখতে পেলো প্রলয় দাড়িয়ে আছে
নয়না ভেংচি কেটে বললো,
~আপনার মতো বুইড়া বেটা তো সবই বুঝে।
নয়নার কথা শুনে প্রলয় কটমট করে বললো,
~এসব অভদ্র ভাষা একটা পিচ্চি মেয়ের মুখে সোভা পায়না।
প্রলয়ের কথা শুনে নয়না আরো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো সে রাগে গজগজ করতে করতে ফারিহার হাত ধরে বললো,
~এসব অস্বাস্থ্যকর মানুষের আশেপাশে থাকা মোটেও উচিত না চলো আপু এখান থেকে চলে যাই।
বলেই নয়না ফারিহার হাত ধরে টানতে টানতে সেখান থেকে নিয়ে আসে।ফারিহা বললো,
~এরকম কেন করছিস?
নয়না বললো,
~অসহ্য একটা লোক দেখেছো কীভাবে কথা বললো?
ফারিহা বললো,
~বাদ দে এসব কথা ভাবিস না প্রহেলীর কাছে চল।
______________
প্রহেলী এখন রুমানা তালুকদারের রুমে বসে আছে রুমানা তালুকদার তার আলমারি থেকে একটা গহনার বাক্স বের করে প্রহেলীর হাতে দিয়ে বললো,
~এটা তোমার আমি চাই এই গহনাটা এখনই তুমি পরো।
প্রহেলী বললো,
~এখন?
রুমানা তালুকদার বললো,
~আমার জন্য একটু পরে দেখাও।
প্রহেলী মুচকি হেসে গহনার বক্সটা খুলে তা থেকে নেকলেসটা নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে সে নেকলেসটা পরে নিলো।রুমানা তালুকদার বললেন,
~বাহ,তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।যাও সবাইকে দেখিয়ে আসো।
প্রহেলী বললো,
~আচ্ছা।
প্রহেলী রুম থেকে বের হয়ে সোজা হলরুমে চলে আসলো মারিয়া সিকদারের নজর প্রহেলীর উপর পরতেই তার মুখ হা হয়ে গেলো।এতো সুন্দর নেকলেস দেখে তার মুখটা বন্ধই হচ্ছে না প্রহেলী আমেনা সিকদার,ফারিহা,নয়না,আর জামিলা সিকদারকে নেকলেস দেখাচ্ছে।মারিয়া সিকদার এসে প্রহেলীর পাশে বসে পরলো আর নেকলেসের দিকে তাকিয়ে বললো,
~অনেক সুন্দর প্রহেলী তোমারই রাজকপাল। না হলে আমাকে দেখো বিয়ের এতো বছরেও শাশুড়ি একটা সুতা দেয়নি।
জামিলা সিকদার মুখ বেকিয়ে বললেন,
~যে না বউ আমার ওর আবার চাই উপহার।যাও তো সরো এখান থেকে।তোমাকে দেখলেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
মারিয়া সিকদার বললেন,
~বড় বউকে তো কতকিছুই দিয়েছেন আর আমাকে কী দিয়েছেন?
জামিলা সিকদার বললেন,
~তোমাকে কেন দিবো?আমার ছেলে কী তোমায় কম দিয়েছে?
তখনই সেখানে উপস্থিত হয় আমরুল সিকদার আর মাহিন। মাহিন বিড়বিড় করে বললো,
~এখানেও এদের শুরু করতে হলো।
আমরুল সিকদার এগিয়ে গিয়ে বললেন,
~দুজনই চুপ থাকবে।শোনো আমেনা পরশ চাইছে বিয়েটা আগামীকালই হবে তোমার মেয়ের মতামত জানিয়ে দিতে বলো এ বিষয়ে।
আমরুল সিকদারের কথা শোনে প্রহেলী অবাক হয়ে বললো,
~কালকে বিয়ে এতো তাড়াতাড়ি কেন?
আমরুল সিকদার বললেন,
~তা আমি জানিনা।আমার কোনো সমস্যা নেই কালকে বিয়ে হলে বাকিটা তুমি জানো।
প্রহেলী সেখান থেকে চলে যায় পরশকে খুজতে তার যে জানতে হবে কেন এতো তাড়াতাড়ি বিয়েটা হচ্ছে?
পরশ আর প্রলয় ছাদে দাড়িয়ে আছে পরশ শান্তচাহনিতে আকাশপাণে তাকিয়ে আছে।প্রলয় বললো,
~তুই কেন প্রহেলী কে বলছিস না যে তার বাবা তাকে মেরে ফেলার জন্য কতো কি প্লান করেছিল?
পরশ প্রলয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
~পরে জানাবো।
প্রলয় বললো,
~প্রহেলী তোকে ভালোবাসে পরশ।ওকে সব বলে দে
পরশ বললো,
~সময় এলে সব জানতে পারবে।
প্রলয় বললো,
~আমি সবটা না জেনেই তোর উপর সন্দেহ করেছিলাম আমি মনে করেছিলাম যে তুই
পরশ প্রলয়কে কথা শেষ না করতে দিয়েই বললো,
~আমি প্রহেলীর সম্পত্তি নিয়ে ওকে ভোগ করে ছেড়ে দিবো তাই তো?
প্রলয় কিছু না বলে মাথানিচু করে ফেললো পরশ বললো,
~আমরুল সিকদারের সাথে আমি এই ডিল না করলে প্রহেলীকে সে মেরে ফেলতো আর ভালোবাসার মানুষকে চোখের সামনে মরতে দেখতে পারতাম না।তাই আমি আমরুল সিকদারকে ওয়াদা করেছি প্রহেলীর সাথে যেদিনই আমার বিয়ে হবে প্রহেলীর সকল সম্পত্তি তার নামে করে দেওয়া হবে আর সেটা আমি করবো আর প্রহেলী আর প্রহেলীর মায়ের সব দায়িত্ব আমার হবে।
আমি এটা যদি না করতাম তাহলে হয়তো প্রহেলীর লাশ আমাদের সামনে থাকতো।ভাগ্যিস আমার লোকজন এসে আমাকে সব জানিয়ে দিয়েছিল।যেদিন থেকে আমি প্রহেলীকে রাস্তায় দেখি সেদিন থেকেই আমি তার পিছে লোক লাগিয়ে দেই তার বাড়ির প্রতিটা খবর আমার কানে আসা শুরু করে।আর আমরুল সিকদারের ব্যাপারটাও আমার কাছে চলে আসে সেদিনই ওই বদলোকটার সাথে আমি কথা বলি আর তার সাথে এই ডিলটা করি।
প্রলয় নির্বাক হয়ে সব কথা শুনলো আর বললো,
~তুই আরেকটা কথা লুকাচ্ছিস তুইও তো আরো টাকা দিবি সেই লোকটাকে।
পরশ হেসে বললো,
~প্রহেলীর সামনে এসব টাকা কিছুই না।আমি শুধু একটা সুখী সংসার চাই আমার।
____________
প্রলয় বললো,
~তুই সত্যিই প্রহেলীকে ভালোবাসিস।আমি আজ নিশ্চিত হলাম এই ব্যাপারে।
পরশ প্রলয়ের কাঁধে হাত রেখে বললো,
~প্রহেলীকে আমি অনেক ভালোবাসি তাই চাই না ওর মনে কোনো আঘাত লেগে যাক।আমি ওকে সব বুঝিয়ে বলবো।তাই তুই চুপ থাক কয়েকটাদিন
প্রলয় বললো,
~ঠিক আছে।কিন্তু প্রহেলীকে তো তুই নিয়েই নিলি এখন আমার কী হবে?
পরশ হালকা হেসে বললো,
~নয়না কে সেট করে দেই তোর জন্য?
প্রলয় বললো,
~কী যে বলিস বাচ্চা মেয়ে আমাকে কীভাবে handle করবে?
পরশ বললো,
~তাহলে মেয়ে খুজতে হবে।
প্রলয় বললো,
~আমরুল সিকদারকে এভাবেই ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না।
পরশ বললো,
~তার চিন্তা করিস না সময় হলে সব হবে।
তখনই পিছন থেকে প্রহেলী বলে উঠলো,
~কী হবে?
প্রহেলীর কন্ঠ স্বর শুনে পরশ আর প্রলয় পিছন ফিরে তাকালো পরশ একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
~আরে অফিসের কথা বলছিলাম।
প্রহেলী একবার প্রলয়ের দিকে তাকালো প্রলয় পরশকে বললো,
~আমি নিচে গেলাম।
বলেই সে ছাদ থেকে চলে গেলো প্রহেলী বললো,
~পরশ আগামীকাল বিয়ে এসব কী?
পরশ প্রহেলীর কোমড় জড়িয়ে তাকে কাছে টেনে বললো,
~বউকে তাড়াতাড়ি নিজের কাছে আনতে চাই তাই।
প্রহেলী নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
~কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি কেন?
পরশ প্রহেলীকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~আমার ওপর বিশ্বাস আছে প্রহেলী।
প্রহেলী বললো,
~আছে।
পরশ বললো,
~তাহলে আমার কথাটা রাখার চেষ্টা করো।
প্রহেলী আর কিছু বললো না সে বুঝতে পারলো অবশ্যই পরশের কোনো কারণ আছে। প্রহেলী বললো,
~যেটা আপনি ভালো মনে করেন।
পরশ বাঁকা হেসে প্রহেলীকে জড়িয়ে ধরলো প্রহেলীও পরশকে জড়িয়ে ধরলো।
প্রহেলী নিচে নেমে সবাইকে নিজের সিদ্ধান্ত জানালো সবাই খুশি কিন্তু আমরুল সিকদার আজ অনেকই খুশী আপদ দূর হচ্ছে পরশের মনে এখনও একটা প্রশ্ন বার বার আসছে তা হলো নিজ বাবা কেন তার মেয়েকে মারতে চাইবে?পরশের ভাবনার পরিসর অনেক লম্বা তাই শান্তমনে এসব ভাবতে হবে।পরশ আমরুল সিকদারকে রুমে নিয়ে এসে বললো,
~বিয়ে কালকে হচ্ছে কিন্তু আপনার কাজটা হতে একটু সময় লাগবে কিন্তু আমার থেকে যে টাকাটা আপনি চেয়েছিলেন তা আমি আপনাকে পাঠিয়ে দিবো so don’t worry. আর আজকে সবাই আমার বাসায় থাকুক বিয়েটা এ বাসায় হচ্ছে।
আমরুল সিকদার বললেন,
~আমার কাজটা যতদ্রুত সম্ভব করে ফেলো নাহলে অবস্থা করুন হবে প্রহেলী যদি জানতে পারে
পরশ তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
~অতিরিক্ত কথা পছন্দ না আপনাকে একটা প্রশ্ন করার ছিল নিজ মেয়েকে কেন মারতে চেয়েছিলেন এই সম্পত্তির জন্য? নাকি অন্য কারণও আছে?
আমরুল সিকদার রাগান্বিত হয়ে বললেন,
~আমারও অতিরিক্ত কথা পছন্দ না সবার থাকার ব্যবস্থা করো।
বলেই সে গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে যায়।পরশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~সব তো আপনাকে বলতেই হবে।
__________________
আমরুল সিকদার রুম থেকে বের হতেই তার সাথে ধাক্কা লাগে মারিয়া সিকদারের।আমরুল সিকদার কটমট করে তাকিয়ে বলে,
~কী হচ্ছে?
মারিয়া সিকদার শুকনো ঢোক গিলে বললেন,
~কী কথা হচ্ছিল ভিতরে?
আমরুল সিকদার বললেন,
~তোমার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে এমন চলতে থাকলে ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাও বাপের বাড়ি।
বলেই সে গটগট করে চলে যায় মারিয়া সিকদার মনে মনে বলে,
~কোনো কিছু তো পাকাচ্ছেন আপনি তা আমাকে বের করতে হবে।
প্রহেলীর হাতে ফারিহা আর নয়না মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে।পরশ মেহেদী এনে দিয়েছে বউয়ের হাতে মেহেদী লাগানো তার চাই।প্রহেলীর হাতে মেহেদী লাগাচ্ছে আর তারা কথা বলছে ফারিহা বললো,
~কী রে দোস্ত তোর জামাইর একদম একদিনেই বিয়ে করে ফেলবে এতো ধৈর্যহীন কেন?
প্রহেলী বললো,
~তুই গিয়ে জিজ্ঞেস কর।
প্রহেলীর হাতে মেহেদী দেওয়ার পর ফারিহা নয়নার হাতে মেহেদী পরিয়ে দিলো।মেহেদী পরানো শেষ হতেই নয়না বললো,
~আমি দাদীকে দেখিয়ে আসি।
বলেই সে ভো দৌড় প্রহেলী পিছন থেকে বললো,
~আস্তে যা পরে যাবি।
নয়না দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে অন্য রুমে যেতে নিবে তখনই প্রলয়ের সাথে তার ধাক্কা লেগে যায়।নয়নার মেহেদী লাগানো হাত এখন প্রলয়ের সাদা শার্টে।নয়না চোখ তুলে তাকাতেই দেখতে পায় প্রলয়ের রাগী চেহারা তা দেখে নয়না ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে নিবে তখনই প্রলয় নয়নার মুখ চেপে ধরে বললো,
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)