মনের অন্তরালে পর্ব-০৪

0
1081

#গল্পের_নাম_মনের_অন্তরালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৪

আমেনা সিকদারকে সকালের নাস্তা করিয়ে রুম থেকে বের হয়ে সোজা চলে আসলো রান্নাঘরে।ওড়না টা কোমরে গুজে কাজ করতে শুরু করলো রাতে পরশদের বাসায়ও যেতে হবে তাই সব কাজ একটু একটু তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিচ্ছে।তখনই সেখানে মুখ ভার করে উপস্থিত হয় মারিয়া সিকদার তাকে দেখেও প্রহেলীর কোনো ভাবান্তর হয় না সে নিজ কাজে ব্যস্ত।মারিয়া সিকদার ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,
~যাও তুমি আমি সব করে নিতে পারবো।
প্রহেলী নিশব্দে হেসে বললেন,
~আপনি সব করতে পারবেন তা আমি জানি কিন্তু আপনার করতে হবে না।
মারিয়া সিকদার মেকি হেসে বললেন,
~তোমার অহংকার এই সব আছে বলে একদিন সব ঠিকই ছিনিয়ে নিবো।
প্রহেলী হাতে থাকা পাতিল চুলোয় দিয়ে বললো,
~সময় আসলে সব দেখা যাবে।
মারিয়া সিকদার কিছু বলতে যাবেন তার আগেই কলিংবেল বেজে উঠলো সে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে দরজা খুলে দিলেন।তার সামনে এখন দাড়িয়ে আছে পরশ আর রুমানা তালুকদার প্রহেলীর সাথে কথা বলে জানতে পারে আমেনা সিকদারের অসুস্থতার কথা তাই তারা চলে এসেছে তাকে দেখতে।তাদের দেখে গদগদ হয়ে মারিয়া সিকদার বললেন,
~বেয়ান সাহেব যে আপনি এতো সকালে ভিতরে আসুন।
রুমানা তালুকদার আর পরশ বাসার ভিতরে চলে আসলেন।প্রহেলী ওড়নায় ভেজা হাত মুছতে মুছতে বের হয়ে আসলো রুমানা তালুকদার প্রহেলীকে একবার দেখে মারিয়া সিকদারকে বললেন,
~আমার মেয়েকে তো ভালোই খাটাচ্ছেন চিন্তা করবেন না আমি তাকে রাণীর মতোই রাখবো।
রুমানা তালুকদার যে তাকে খোঁচা মেরে কথা বলেছেন তা মারিয়া তালুকদার ভালোই বুঝতে পেরেছেন।সে হেসে বললো,
~কী যে বলেন আপা,প্রহেলী কে তো আমি আমার মেয়ের মতোই রাখি।
পরশ বিরক্ত হচ্ছে এ মহিলা তার পছন্দ না অতিরিক্ত কথা বলা তার কাজ।
পরশ বিরক্তিকর মুখ নিয়ে প্রহেলীকে জিজ্ঞেস করলো,
~আন্টি কোন রুমে?আমরা তার সাথেই দেখা করতে এসেছি।
প্রহেলী কিছু বলবে তার আগেই মারিয়া সিকদার বললেন,
~আসেন আমার সাথে আসেন।
বলেই সে হাটা ধরলো পরশ আর রুমানা তালুকদারও তার পিছন পিছন চলে আসলেন।প্রহেলী রান্নাঘরে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে চলে গেলো।
আমেনা সিকদার বিছানার সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে রুমে প্রবেশ করলো পরশ আর রুমানা তালুকদার। মারিয়া সিকদার তাদের বসতে বললেন আমেনা সিকদার উঠে বসার চেষ্টা করতেই রুমানা তালুকদার বললেন,
~উঠতে হবে না আপা,আপনার শরীরটা কেমন?
আমেনা সিকদার মুচকি হেসে বললেন,
~ভালো।
পরশ বললো,
~সব টেস্ট ঠিক মতো করা হয়েছে তো আপনার?
আমেনা সিকদার বললেন,
~অবশ্যই।প্রহেলী সব ঠিকঠাক করেছে
মারিয়া সিকদার বললেন,
~আমার আপার সাথে এমনটা যে কেন হলো তা বুঝতে পারছিনা।আমরা সতীন হলেও একদম আপন বোনের মতো থাকি।
মারিয়া সিকদারের কথায় রুমানা তালুকদার বললেন,
~তাতো আমরা সবাই জানি এতে নতুন কী আছে?
মারিয়া সিকদার চুপ হয়ে গেলেন তার কথা শুনে রুমানা তালুকদার আর পরশ কিছুক্ষণ আমেনা সিকদারের সাথে কথা বলে তার রুম থেকে বের হয়ে আসলেন।প্রহেলী তাদের জন্য টেবিলে খাবার সাজিয়ে বললো,
~আন্টি বসে পরুন আপনার জন্য নিজ হাতে আমি সব রেডি করেছি।

______________

প্রহেলীর কথা শুনে পরশ মনে মনে বললো,
~হবু শাশুড়ির জন্য এতো কিছু আর হবু বরের যে আজ জম্মদিন তার খেয়াল নেই ম্যাডামের।
রুমানা তালুকদার চেয়ারে বসে পরশকে বললেন,
~তুইও বসে পর।
পরশ বসে পরলো চেয়ারে প্রহেলী রুমানা তালুকদারকে সযত্নে খাবার বেড়ে দিচ্ছে নয়না পরশকে প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে।পরশ বার বার প্রহেলীর দিকে তাকাচ্ছে নয়না তা বুঝতে পেরে পরশকে বললো,
~জীজু,এতো সুন্দর করে আপনাকে খাবার তুলে দিচ্ছি আর আপনি আপুর দিকেই তাকিয়ে আছেন।
নয়নার কথা শুনে পরশের কাশি উঠে গেলো প্রহেলী পানি এগিয়ে দিতেই সে গটগট করে সব পানি খেয়ে নিলো।নয়না হেসে বললো,
~আপু তোমার জামাইকে একটু সেবা করো তো বেচারা কতোটা দুঃখে আছে।
তখনই সেখানে উপস্থিত হয় জামিলা সিকদার পরশ তাকে থেকে চেয়ার ছেড়ে উঠে তার হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে বললো,
~দাদীজান,আমাকে ভুলেই গেছেন।
জামিলা সিকদার বললেন,
~মনের মানুষকে কী ভোলা যায় নাকি নাতজামাই?
পরশ হালকা হেসে বললো,
~আমি তোমার মনের মানুষ?
জামিলা সিকদার দুষ্ট হেসে বললো,
~আমার না হলেও অন্য কারোর তো বটে।
আড়চোখে প্রহেলীর দিকে তাকিয়ে কথাটা বললেন সে।প্রহেলী দুজনইকেই একটু বকা দিয়ে বললো,
~খাবার রেখে অযথা কথা বলা আপনাদের বদঅভ্যেস।
বলেই সে তরকারির বাটি নিয়ে রান্নাঘরে চলে আসলো আর সবাই সেখানে মুখ টিপে হাসতে লাগলো।
পরশরা রওনা দিলো বাসায় পরশ যাওয়ার আগে প্রহেলীকে তার কেনা শাড়িটা দিয়ে বললো,
~এটি আজ রাতে পরবে আর আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো আন্টিকে নিয়ে চলে আসবে।
প্রহেলী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো পরশরা চলে যেতেই প্রহেলী রুমে এসে শাড়িটা খুলে দেখলো কালো রঙ্গের শাড়িটা অনেক সুন্দর। প্রহেলী সযত্নে শাড়িটা তুলে রাখলো আলমারিতে তারপর সে চলে গেলো নিজ কাজে।
পরশ বাসায় এসে পার্টির সব কাজ দেখছে ফ্যামিলির লোকই পার্টিতে থাকবে আজ।বাহিরের কাউকেই সে ইনভাইট করেনি পরশ ডেকোরেশনের কাজ দেখছিল হঠাৎ তার কাঁধে কেউ হাত রাখলো।পরশ পিছন ফিরে দেখলো প্রলয় দাড়িয়ে আছে পরশ তাকে দেখে হেসে বললো,
~কী রে তুই?তোর না মিটিং ছিল?
প্রলয় বললো,
~কী যে বলিস তোর জম্মদিন আর আমি অফিসে বসে থাকবো?
পরশ বললো,
~প্রলয়,আজকে আমি প্রহেলীকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করবো।
তারপর পকেট থেকে আংটি বের করে বললো,
~এই আংটিটা ওর জন্য এনেছি।
পরশের কথায় প্রলয়ের রাগটা আরো বেড়ে গেলো সে নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,
~অনেক সুন্দর।
পরশ বললো,
~আমি যা করেছি প্রহেলীর ভালোর জন্য করেছি।সময় হলে সব জানতে পারবি।
প্রলয় হেসে বললো,
~সবই জানি।শুধু সময়ের অপেক্ষা
পরশ বললো,
~তোর কী মনে হয় প্রহেলী তোকে বিশ্বাস করবে?
প্রলয় বললো,
~হয়তো না।
পরশ বললো,
~তাহলে এতোটা হাইপার হয়ে লাভ নেই আমি বিয়ের পর সব প্রহেলীকে জানিয়ে দিবো।
প্রলয় বললো,
~আমি প্রহেলীকে পছন্দ করি প্রথম দিন থেকেই যেদিন তোর সাথে ওদের বাড়ি গিয়েছিলাম।
পরশ বললো,
~প্রহেলী তোর মোহ প্রলয়।
প্রলয় রেগে পরশের কলার ধরে বললো,
~একদম আজেবাজে কথা বলবিনা তুই সবসময় বেস্ট জিনিসটাই নিয়ে চলে যাস।তোর সব আছে আমার কী আছে?
বলেই পরশের কলার ছেড়ে দাড়িয়ে পরলো পরশ বললো,
~অবশ্যই তোর জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
এতটুকু বলে পরশ চলে গেলো প্রলয় আকাশপাণে তাকিয়ে বললো,
~একাকিত্ব খুব খারাপ জিনিস তুই বুঝবিনা।

__________

প্রহেলী পরশের দেওয়া শাড়িটা পরে তৈরি হয়ে নিলো।তারপর রুম থেকে বের হতেই সে দেখতে পেলো ফারিহা হলরুমে বসে আছে।প্রহেলী ফারিহার কাছে গিয়ে বললো,
~এই তোর আসার সময়।
ফারিহা বললো,
~শাড়ি ঠিক করতে করতে জান চইলা গেতাসে।
ফারিহার কথা শুনে প্রহেলী হেসে উঠলো তারা সবাই রওনা হলো পরশের বাসার উদ্দেশ্যে।
পরশদের বাসায় সব কাজ শেষ হয়ে গেছে তারা এখন প্রহেলীদের জন্য অপেক্ষা করছে।প্রলয়ও তৈরি হয়ে এসে পরেছে কিছুক্ষণের মধ্যে প্রহেলীরা চলে আসে।পরশ সবাইকে স্বাগতম জানিয়ে ভিতরে নিয়ে আসলো প্রলয়কে দেখে প্রহেলী অনেকটাই চটে গেছে।কিন্তু কিছু বলছেনা সবাই হাসিমুখে কথা বলছে আমেনা সিকদার একপাশে বসে আছে শরীরের কারণেই এইভাবে বসে থাকা।
মারিয়া সিকদার সেই কখন থেকে বকবক করে চলছেন রুমানা তালুকদারের সাথে সে বলছে,
~আপা,আপনাদের বাসাটা অনেকই সুন্দর।
রুমানা তালুকদার বললেন,
~ধন্যবাদ।
মারিয়া সিকদার বললেন,
~প্রহেলী সব গুছিয়ে রাখতে পারবে বলে মনে হচ্ছেনা।ওতো নিজেই অগোছালো মানুষ।
রুমানা তালুকদার বললেন,
~তা আমি আছি কোন?সব শিখিয়ে দিবো।
মারিয়া সিকদার বুঝতে পারলেন এখানে কথা বলে ডাল গলাতে পারবেন না তাই সে চুপচাপ এখান থেকে চলে আসে আর আমরুল সিকদারকে বলে,
~নিজের মেয়ের জন্য তো ঠিকই এতো ভালো ঘর খুজে বের করলে আর আমার নয়নার জন্য কী করেছো তুমি?
আমরুল সিকদার বিরক্ত হয়ে বললেন,
~নয়নার বয়স ১৭ ওকে এখন বিয়ে দিয়ে আমি জেলের ভাত খেতে চাই না।যত্তসব
বলেই সে পরশের কাছে চলে গেলো মারিয়া সিকদার নাক ফুলিয়ে সেখানেই দাড়িয়ে রইলেন।
প্রলয় বাহিরে দাড়িয়ে সিগারেট ফুকছে ভিতরের কোলাহল তার ভালো লাগছেনা।হঠাৎ কেউ মেয়েলি কন্ঠে বলে উঠলো,
~ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
প্রলয় ভ্রুকুচকে পিছন ফিরে তাকালো দেখলো একটা বাচ্চা মেয়ে দাড়িয়ে আছে পরণে তার মেরুন রঙ্গের শাড়ি।প্রলয় চোখ বন্ধ করে ভাবার চেষ্টা করলো মেয়েটা কে?পরক্ষণেই তার মনে পরলো প্রহেলীর বোন নয়না তার সামনে দাড়িয়ে আছে।
প্রলয় হালকা হেসে বললো,
~পিচ্চি মানুষের মুখে বড় বড় কথা ভালো লাগে না।
নয়না রাগ দেখিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,
~একদম আমাকে পিচ্চি বলবেন না
তখনই শাড়িতে পা আটকে সে প্রলয়ের বুকের উপর পরে যায় প্রলয় তাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে যাতে সে পরে না যায়।
এমন ঘটনায় দুজনই একদম অবাক হয়ে যায় নয়না তাড়াহুড়ো করে প্রলয়ের উপর থেকে সরে একপলক প্রলয়ের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে ভিতরে চলে যায়।প্রলয় বাঁকা হেসে সিগারেট মুখে দিয়ে আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

___________________

প্রহেলী ওয়াশরুমে গিয়েছিল শাড়ি ঠিক করতে তখনই কেউ তার হাত ধরে টান মেরে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।প্রহেলী চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো তার এহেন কান্ডে পরশ মুখ টিপে হেসে বললো,
~এতো ভয় পাওয়ার কী আছে আমি তো।
প্রহেলী চোখ খুলে দেখলো পরশ দাড়িয়ে আছে তার সামনে।প্রহেলী বললো,
~এরকম কেউ করে ভয় পেয়ে গেছি আমি।
পরশ প্রহেলীর অনেক কাছে চলে আসলো তারপর বললো,
~আমার সাহসী নারী তাহলে ভয়ও পায়।
প্রহেলী শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~মানুষ তো আমি ভয় তো আমারও আছে।
পরশ আর কোনো কথা না বলে প্রহেলীকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~যাও ছেড়ে দিলাম কিন্তু কিছুদিন পর এই বাহুডরেই তোমার থাকতে।
প্রহেলী লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে চলে আসলো।
সবাই খাবার খাওয়া শেষ করে কেক কাটার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু পরশের কোনো খবর নেই।প্রহেলীও আশেপাশে তাকে খুজতে লাগলো হঠাৎ পরশ এসে প্রহেলীর সামনে দাড়িয়ে পরলো সবাই এখন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রহেলীও অনেকটাই অবাক হয়ে গেছে পরশ তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
~প্রহেলী,আজ আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় একটা কাজ করতে যাচ্ছি।এই প্রথম পরশের বুক কাঁপছে কেন জানিনা হয়তো এরই নাম ভালোবাসা।
পরশের প্রতিটি কথা প্রহেলী এবং বাকি সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে।প্রলয় বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে।পরশ আবারো বললো,
~প্রহেলী,তুমি কী আমার জীবনসঙ্গী হবে?এই অপূর্ণ জীবনটাকে পূর্ণ করে দিবে?

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে