#মধুরেণ_সমাপয়েৎ
#১০ম_পর্ব
সাফওয়ান তখন আয়াতের কাছে এসে ওর মুখটা হাত দিয়ে আলতো করে ধরে। তারপর ধীর গলায় বলে,
– দেখো তোমায় কোন আচ লাগতে দিবো জীবনে, সুখে রাখার সব রকম চেষ্টা আমি করবো। একটাবার বিশ্বাস করে দেখো।
আয়াত হা করে সাফওয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, লোকটা সত্যি বলছে? কি হচ্ছে এসব? ঠিক তখন ই পিছন থেকে হাসির আওয়াজ শুনতে পায় সাফওয়ান। তাড়াতাড়ি আয়াতকে ছেড়ে একটু দূরে দাঁড়ায় সে। আয়াত ও খানিকটা অস্বস্তির মাঝে পড়ে যায়। পেছন থেকে সাফওয়ানের কাজিনরা ফাজলামির স্বরে বলতে থাকে,
– ভাই এক সপ্তাহ ওয়েট কর, বুঝতেছি তোর সইতেছে না। কিন্তু ঘরে সিনিয়র সিটিজেনের অভাব নাই। আমাদের বদলে তারা দেখলে আরেকটা দক্ষযজ্ঞ বাধায় দিবে।
– ওদের হয়ে গেলে যা না, আয়াতের সাথে আমার কথা আছে।
প্রচন্ড বিরক্তিস্বরে সাফওয়ান বলে উঠে। কাজিনদের ভেতর প্রণয় নামের ছেলেটি তখন বুকে হাত দিয়ে মজার ছলে বলতে থাকে,
– আহারে, আমাদের সেলিম আনারকলি; এই জালিম দুনিয়া তাদের ভালোবাসার পথে বাধা হয়ে গেছে। এজন্য বলে প্রেমেরই নাম বেদনা।
– থাপড়া না খাইতে চাইলে ভাগ এখান থেকে। আমি ১০ অবধি গুনবো।
– থাক, আপনি রুমে যান। কালকে আবার সুহানার বউভাত; এখন না ঘুমালে পরে কালকে কষ্ট হবে। আমি রুমে যাচ্ছি। (আয়াত)
– ঠিক আছে।
সাফওয়ানের সাথে কথা বলে আয়াত নিচে নেমে যায়। রুমে শ্বাস ফেলানোর মতো জায়গা নেই, কিন্তু কিছু করার নেই এখানেই ঘুমাতে হবে আয়াতের। সারারাত এপাশ ওপাশ করেই কাটালো সে। ঘুমের ছিটা বিন্দু ও আসলো না চোখে। মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তখন সাফওয়ানের কথাটা কি সে সিরিয়াসলি বলেছে নাকি কাজিনরা চলে আসাতে কথা ঘুরাবার জন্য বলেছে! উফফ আর ভাবতে পারছে না। বিয়েটা হয়তো সত্যি করতে হবে।
তিন দিন পর,
বিকেল ৪টা,
হলুদের শপিং এ সাফওয়ানের পুরো পাল্টনের সাথে আয়াত এবং শারমিন বেগমও বেড়িয়েছেন। শুধু অন্না এবং নিপা বেগম আসেন নি, নিপা বেগমের আয়াতকে কিছুতেই পছন্দ না আর অন্না সেতো তার এতো বছরের ক্রাশ কাম লাভের বিয়ে হয়ে যাওয়ার দুঃখে বাঁচছে না। এই তিনদিন এক মূহুর্তের জন্য সাফওয়ান এবং আয়াত একে অপরের সাথে কথা বলতে পারে নি। যেটুকু পেরেছে সেটা শুধু ফোনে। তাও সাফওয়ানের ফোন তার কাজিনদের হেফাজতেই ছিলো। আয়াতের মাথায় জট লেগে আছে; ইচ্ছে হচ্ছে সাফওয়ানের মাথা ফাটিয়ে দিতে কেনো তার মোবাইল কাজিনদের কাছে রাখতে হবে। ঘর তো নয় মনে হচ্ছে জেলার সব লোক এসে হাজির হয়েছে। দোকানে সকলে শাড়ি সিলেকশনে যখন ব্যস্ত তখন আয়াত এক কোনায় বসে তার ভবিষৎ নিয়ে চিন্তা করতে ব্যস্ত। কেনো যেনো সবকিছু এলোমেলো লাগছে। সাফওয়ানকে যে তার জীবনসঙ্গী হিসেবে অপছন্দ এমন কিছু না; এই শপিং,হলুদ,কাবিন এই ব্যাপারগুলো মন্দ ঠেকছে না কিন্তু মনটা বড্ড অশান্ত হয়ে আছে। এমন তো হবার কথা ছিলো না। ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটছে। সাফওয়ানের প্রতি এলোমেলো অনুভূতির অস্তিত্বগুলো তাকে বারবার শিহোরিত করছে। এই অস্তিত্বগুলোর নাম তার অজানা। একে এই অজানা অনুভূতিগুলো তাকে গ্রাস করছে উপর থেকে ভয় হচ্ছে যদি পুনরায় বিশ্বাসের বদলে অবিশ্বাস এসে ধরা দেয় তখন নিজেকে সামলানো খুব কষ্টদায়ক হয়ে পড়বে। কাধে কারো স্পর্শ পেলে মাথা তুলে তাকায় সে, সাফওয়ান তার সামনে কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আয়াতের ছলছল নয়ন সাফওয়ানের বুকে চিনচিমে ব্যাথার সৃষ্টি করছে। কেনো জানে এই মেয়ের কান্না সাফওয়ানের মাঝে অসহায়ত্বের অনুভূতি জাগায়। কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না তখন। কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেলিনা বেগম আয়াতকে ডেকে উঠে, শাড়ির সিলেকশনের জন্য তার মতামত যে দরকার। বেশ কিছু শাড়ি একেরপর এক তার উপর ট্রায়াল করিয়ে শেষমেশ একটি কাঁচা হলুদ শাড়ি সিলেক্ট করা হলুদের জন্য। এবার বিয়ের শাড়ির পালা, ভারী ভারী কাতান, বেনারসি একত্র করা হয়েছে। আয়াতের ধৈর্যের বাধ ভাঙ্গতে লেগেছে। এমনি ভারী কিছু তার ভালো লাগে না; উপর থেকে এখানে আরদ লাগিয়েছে জমকালো শাড়ির। তখন একয়াতি সিম্পল লাল টকটকে শাড়ির উপর মিহি কাজের একটি শাড়ি এগিয়ে দিলো। শাড়িটি দেখে সেলিনা বেগমের প্রথম বাক্য,
– এটা তো অনেক সিম্পল রে সাফু, তোর এটা ভালো লেগেছে?
– আমার বউ তো, সিম্পলের মধ্যেই গরজিয়াস। আর ওর ওজন দেখছো, তুলোর সাইজের এক রত্তি মেয়ে এই ভারী শাড়ির নিচে ভেটকে পড়ে থাকবে। আমার তখন বউ শাড়িতে খুজা লাগবে। এটাই ঠিক আছে; আয়াত এইটা পড়ে আসো তো।
মনে মনে বেশ শান্তি লাগছে আয়াতের; শাড়িটা আয়াতের ও বেশ ভালো লেগেছিলো কিন্তু মুরুব্বিদের সামনে হবু বউ পক পক করবে টিক মানাবে না। আয়াত যখন শাড়িটি পড়ে সামনে আসে; মুখ যেনো হা হয়ে যায় সবার। উজ্জ্বল লাল রঙে মেয়েটিকে অপ্সরার চেয়ে কম লাগছে না। গায়ের রঙের সাথে রংটি মিশে আছে। এতো সাধারণ শাড়ি ও যে কাউকে এতোটা সুন্দরী করে তুলতে পারে তা আয়াতকে না দেখলে বুঝার উপায় ছিলো না। সাফওয়ানের চোখ আয়াতের মধ্যে আটকে গেছে। শাড়িটাতে আয়াতকে মানাবে এটা তার কল্পনায় ছিলো, কিন্তু এতোটা অপরুপ লাগবে এটা কল্পনার বাহিরে ছিলো; যেনো ফুটন্ত লাল গোলাপ তার সামনে দাঁড়ানো। সবার মিটিমিটি হাসি আর খোঁচার জন্য তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলো সে। এখনও হার্টবিট বেড়েই রয়েছে তার। সাফওয়ানের চোখে আয়াতের প্রতি অনুভূতিগুলো একজন মানুষের সুক্ষ্ণ চোখ এড়ালো না।
রাত ১০টা,
খাবারের পরে ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে আছে সাফওয়ান। পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বিয়ে তো করছে কিন্তু ইফাদ নামক বাধাটা এখনো রয়ে গেছে। ইফাদের ফোন অফ, যোগাযোগের উপায় পাচ্ছে না। বন্ধুদের জানিয়ে দিয়েছে যাতে ইফাদের খোঁজ পেলে তাকে জানানো হয়। এতো দ্রুত এতো কিছু হচ্ছে আয়াতের উপর কতোটা মানসিক চাপ পড়ছে সেটা সাফওয়ানের অজানা নয়। ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে হাজারো প্রশ্নের উত্তর খুজতে ব্যস্ত তখন পেছনে কারোর উপস্থিতি অনুভব করে সে। পেছন ফিরতেই দেখে রবিন দাঁড়িয়ে রয়েছে তার সামনে। মুচকি হেসে প্রশ্ন করলো,
– কিছু বলবেন দুলাভাই?
– পরসু তো শালামশাই এর হলুদ, তিন দিন বাদ বিয়ে; আয়াতকে বলেছো কতোটা ভালোবাসো?
– ভালোবাসা মানে? কি যে যা তা বলছেন দুলাভাই; এটা পরিস্থিতির টানাপোড়নের কারণে করতে বাধ্য হচ্ছি।
– আসলেই কি তাই শালামশাই? বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে তুমি একটু ও ভালোবাসো না আয়াতকে! চোখ বন্ধ করলে মেয়েটা তোমার ভাবনায় বিচরণ করে না, মেয়েটার চোখের পানি তোমাকে একটু ও বিচলিত করে না?
– এটা স্বাভাবিক নয় দুলাভাই? মেয়েটা আমাকে ভরসা করে; ওর ভালোমন্দের খবর রাখাটা আমার দায়িত্ব।
– সত্যি কি তাই সাফওয়ান? আচ্ছা এটা কেনো মনে হচ্ছে তুমি তাকে ভালোবাসো না?
– কারণ এক বা দুই সপ্তাহ একসাথে থাকলে কারোর প্রতি মায়া জন্মাতে পারে ভালোবাসা নয়। ইটস জাস্ট ইনফ্যাচুয়েশন।
– মায়া না থাকলে কারোর প্রতি ভালোবাসা জন্মায়? আচ্ছা সোহাগ আর আমার কাহিনীতেও কি তুমি ইনফ্যাচুয়েশনের থিওরি দিবে? একবার দেখায় ওর প্রতি ভালোলাগা তৈরি হয় তারপর ভালোবাসা, আজ ওর সাথে ছ বছর ধরে সংসার করছি; এখনো ওকে ততোটাই ভালোবাসি। এটাও কি মায়া? শালামশাই ভালোবাসা বলো কিংবা ভালোলাগা সবকিছুতেই মায়াটার গুরুত্ব অনেক বেশি। একটা থাকে শর্ট টাইম একটা সময়ে কেটে যায়, আরেকটা হলো গভীর মায়া যার গন্তব্য ভালোবাসা, বিশ্বাস, সম্পর্ক। আমার যা বলার বলা হয়ে গেছে, তুমি নিজের অন্তরাত্নাকে জিজ্ঞেস করো আয়াতের প্রতি মায়াটা ঠিক কেমন?
কথাগুলো চুপচাপ সাফওয়ান শুনছিলো; রবিনকে এজন্য সাফওয়ানের খুব বেশি ভালো লাগে কারন সঠিক সময়ে সঠিক উপদেশ দেওয়াটা লোকটির বড় গুন। আয়াত নামক নারীটি সাফওয়ানের প্রতিটি চিন্তায় বিচরণ করে; তার হাসি, ছেলেমানুষী সাফওয়ানকে আনন্দ দেয়; সারাক্ষন মেয়েটির আশেপাশে থাকলে মানসিক প্রশান্তি লাগে; মনে হয় যেনো অপূর্ণ হৃদয় পূর্ণতা পাচ্ছে, তার চোখের পানি সাফওয়ানের ভেতরে রক্তক্ষরণ করতে সক্ষম। এই অনুভূতি গুলো কি শুধুই মায়া? মনের এই এলোমেলো ভাবনাগুলোকে সাজাতে পারছে না সাফওয়ান। এখন মনকে শান্ত করতে হলে একটি ঔষধ আছে তা হলো পেইন্টিং। নিজের এলোমেলো চিন্তাগুলি কাগজে তুলতে পারলে হয়তো মন শান্ত হবে!
অপরদিকে,
সুহানার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রয়েছে আয়াত। অনেকক্ষন পর নিরবে একটু নিজের জন্য সময় পেয়েছে; এতোক্ষন আত্নীয়াদের ভেতর থাকতে থাকতে যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছিলো তার।
– কফি?
পাশ ফিরে তাকালে দেখে সোহাগ আর সুহানা দাঁড়িয়ে রয়েছে। মুচকি হেসে তাদের হাত থেকে কফি নিলো আয়াত। পিনপতন নীরবতা, বাড়িতে আয়াত এবং সাফওয়ান ব্যাতীত এই তিনটা মানুষ তাদের সম্পর্কের সত্যতাটা জানে। আয়াতের নিজের কাছেই প্রচুর অস্বস্তি লাগছে। ফট করে সুহানা বলে উঠে,
– ইফাদ ভাইয়ের সাথে তোমার রিলেশনটা কিভাবে শুরু হয়েছিলো আয়াত আপু?
সুহানার প্রশ্নে প্রথমে খুব অপ্রীতিকর অবস্থায় পরে যায় আয়াত। তারপর ধীর কন্ঠে বলতে থাকে,
– ইফাদ আমার সিনিয়র ছিলো, ওর সাথে প্রথম দেখা আর্ট গ্যালারির সামনে। আমার এক বন্ধুর দুলাভাই আর্ট গ্যালারির ম্যানেজমেন্টে ছিলেন। তখন এক্সিবিশন দেখবো বলে সবাই একসাথে গিয়েছিলাম। আরো একটি কারণ ছিলো সেটা হলো সাফওয়ান ভাইয়ের এক্সিবিশন দেখা। উনার ছবিগুলো যখন ফেসবুকে দিতো আমি পাগলের মতো ফলো করতাম। উনি যে আমাদের ক্যাম্পাসের এটা আমার জানাইছিলো না। তারপর কি! এক্সিবিশনে গেলাম। সেদিন ছিলো ২৫শে বৈশাখ; গ্রীষ্মের ফাটা দুপুরে প্রিয় আর্টিস্টের এক ঝলক দেখতে যাওয়া; কিন্তু ভাইয়ের যা পার্ট সে আমাদের সামনেই আসলেন না। বলেন উনি নাকি ছোটখাটো আর্টিস্ট। তুমি বলো সুহানা উনি কি ছোটমোটো আর্টিস্ট কি ট্যালেন্টেড। উনার সুবাদেই ইফাদের সাথে দেখা। সাফওয়ান ভাইয়ের সাথে পরিচিত হবার লোভে ইফাদের সাথে পরিচিতি, ফ্রেন্ড না উনার। তারপর দেখা হতো, কথা হতো। আমাকে সাফওয়ান ভাইয়ের ডিটেইলস বলতো, এভাবেই ভালোলাগা, তারপর ভালোবাসা, রিলেশন।
– তুমি কি ইফাদ ভাইকে ভালোবাসতে নাকি দাদাভাইকে?
সুহানার প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় আয়াত। কি উত্তর দিবে তা জানা নেই তার। বেশকিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে বলে,
– আমি ইফাদকে ভালোবাসতাম
– তুমি আমাকে কনভিন্স করছো নাকি নিজেকে
– সাফওয়ান ভাইকে আমার আর্টিস্ট হিসেবে ভালো লাগে, থাকে না পছন্দের আর্টিস্ট, নায়ক, গায়ক।
– সত্যি কি তাই আয়াত?(সোহাগ)
– তোমরা আমাকে কনফিউস কেনো করছো?
– তুমি ইফাদ আর সাফওয়ানের মাঝে কনফিউজ কেনো হচ্ছো আয়াত। নিজের মনকে জিজ্ঞেস করো, এই চার বছরে ইফাদ তোমার ফিলিং, তোমার ভালোলাগাগুলোকে কতোটা দাম দিয়েছে? তোমাদের রিলেশনে কমিটমেন্ট ব্যাপারটা কি সত্য ছিলো? আর তোমারো কি ইফাদকে ইফাদ হিসেবে ভালো লাগতো? নাকি সাফওয়ানের বন্ধু হিসেবে? এখনো দেরি হয় নি আয়াত নিজেকে প্রশ্ন করো। কাকে তুমি ভালোবাসো? কাকে তুমি বিশ্বাস করো? কার সাথে থাকলে তোমার মনে হবে তোমার কাছে সারা পৃথিবী রয়েছে? তোমার এই মনটা সব কিছু বলে দিবে তোমাকে।
সোহাগের কথাগুলো প্রচন্ড ভাবাচ্ছে আয়াতকে। বেডে এপাশ অপাশ করতে করতে আর না পেরে ছাদের উদ্দ্যেশে রওনা দেয় আয়াত। দরজা খুলে সিড়িতে যেতেই মনে সে যেনো হাওয়ায় ভাসছে। কিছুক্ষণ করে খেয়াল করে দেখে কেউ তাকে কোলে করে ছাদের সিড়ি বাইছে। রাতের অন্ধকারে লোকটির মুখ দেখতে পাচ্ছে না আয়াত। ছাদে নিয়ে লোকটি তাকে কোল থেকে নামালে আয়াত দেখতে পায়……………
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি