#মধুমাস
#পর্ব_৩১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
দুশ্চিন্তায় মূহুর্তেই শ্যামার বুক ধরফর করে,শরীর ঘেমে উঠে।শ্যামার মুখে এমন কথা শুনে ফিরোজ হাসে।কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
“কই আবার লুকাবে!তোমার বুকে লুকাও,খুঁজে পাওয়ার সাধ্যি কারো নেই।”
কথাটা বলে ফিরোজের মুখের হাসি আরো চওড়া হয়।শ্যামা আশ্চর্য হয়ে ফিরোজের দিকে তাকিয়ে থাকে, এমন বিপদের সময় এই লোক হাসে কিভাবে?সে চোখ পাকিয়ে তাকায়।শ্যামার চোখ পাকানি দেখে ফিরোজ হাসে।ইশারায় খাটের নিচে দেখায়।শ্যামা ফিরোজের ইশারা বুঝতে পারে তারপর ঝুলে থাকা চাদর সরিয়ে খাটের নিচে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়,ফিরোজ বউয়ের কথামতো চুপচাপ ঢুকে পরে।শ্যামা নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়,টেবিলের দিকে ছুটে একটা বই খুলে রাখে তারপর দ্রুত দরজা খুলে দেয়।
ফাতেমা বেগম সুচারু চোখে শ্যামার দিকে তাকায়।শ্যামা বললো,
”কি আম্মা?”
“এতো রাতে তোর রুমের লাইট জ্বালানো তাই ডাকলাম।”
শ্যামা হাসিমুখে বললো,
“কতোদিন কলেজে যাই না।আজকে দিনের বেলা ঘুমিয়েছি এখন ঘুম আসছেনা তাই পড়তে বসলাম আর পড়তে ভালো লাগছে এইজন্যই এতো রাত করে পড়ছি।”
ফাতেমা বেগম রুমে ঢুকে।এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
“আচ্ছা।”
শ্যামা সাহস করে বললো,
“তুমি কি থাকবে?থাকলে থাকো।”
ফাতেমা বেগমের মনে কিঞ্চিৎ সন্দেহ ছিলো কিন্তু শ্যামার এই থাকার কথায় যেনো রঙ্গমাখা আলপনায় মেয়েটা এক বালতি পানি ঢেলে দেয়ার সমতুল্য।উনি মাথা নেড়ে বললো,
“না আমি থাকবো না।”
শ্যামা চুপচাপ আবারো টেবিলে বসে পড়ে,কলম দিয়ে খাতায় মনযোগ দিয়ে লেখে যেনো তার মতো মনোযোগী ছাত্রী এই বিশ্ব ভ্রর্মান্ডে একজনও নেই।ফাতেমা বেগম বললো,
“তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়।”
শ্যামা লিখতে লিখতে বললো,
“এই অধ্যায় শেষ করেই শুয়ে পড়বো।”
ফাতেমা বেগম বেরিয়ে বাথরুমের দিকে চলে যায়।শ্যামার বুকটা দরফর করছে,জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।ঠায় টেবিলেই বসে থাকে,উঠে দরজা লাগায় না।ফাতেমা বেগম বাথরুম থেকে যাওয়ার সময় বললো,
“দরজা আটকে নে,এতো রাতে দরজা খুলে রাখা ভালো না।”
শ্যামা উঠে দাঁড়ায় ভাবলেশহীন ভাবে দরজা আটকে দেয়।দরজা আটকে আবারো চুপচাপ কিছুক্ষণ টেবিলে বসে থাকে।ভয়ে কলিজা ফেটে যাবার উপক্রম।শ্বাস পড়ছে জোড়ে।মুখ ঘামে ভিজে একাকার।সে উঠে দাঁড়ায় হাত মুখ ধুয়ার উদেশ্যে কলপাড়ে যায়,স্বামীকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা,কেউ দেখে ফেলার ভ,য় সব মিলিয়ে শ্যামার মাথা ধরে যায়।পরক্ষনেই ভাবলো রুমে গেলেই অতী প্রিয় পুরুষটার হাসিমাখা মুখটা দেখতে পারবে, শক্ত করে জড়িয়ে রাখতে পারবে,আদরমাখা স্পর্শে ছুঁয়ে দেয়া যাবে ;এসব ভাবতেই শ্যামার সব ক্লান্তি,ভ,য়,সংকোচ, খারাপ লাগা নিমিষেই উধাও হয়ে যায়,এসবের বদলে ভর করে একরাশ লজ্জা,কামনা,বাসনা,আর কাছে টানার রিনিঝিনি ভ,য় আর সুখ মিশ্রিত অনুভূতি।
শক্ত-সামর্থ্য শরীর নিয়ে ফিরোজ এই নিচু খাটের তলায় থাকতে পারছেনা,তার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু বউকে কাছে পাওয়ার স্বার্থে এইটুকু কষ্ট করাই যায়।সে অসহায় চোখে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে, শ্যামা বাহিরে গিয়েছে এখনো তাকে বেরোতে বলছেনা তাই সে বেরোতেও পারছেনা।ফিরোজ খাটের নিচে শুয়েই হাসে,তার মতো মানুষ এমন চোরের মতো লুকিয়ে আছে তাও নিজের বিবাহিত স্ত্রীর জন্য!ভাবা যায়?এটাই কি হওয়ার ছিলো?
শ্যামা রুমে এসে দরজা আটকায়।খাটের কাছে নিচু হয়ে বসে ফিরোজকে দেখে।ড্যাবড্যাব করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে,শ্যামার মায়া হলো,লোকটা তার জন্য কতো কষ্ট করছে।সে বললো,
“বেরিয়ে আসেন।”
ফিরোজ আস্তেধীরে বেরিয়ে আসে।মাটির ঘর হওয়াতে শার্টে মাটি লেগে গেছে।ফিরোজ আর শ্যামা শার্টের মাটি জেড়েঝুড়ে পরিষ্কার করে।তারপর দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠে।ফিরোজ শ্যামাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“মনে হচ্ছিলো বউয়ের কাছে আসিনি,গরু চুরি করতে এসেছি। আল্লাহ!”
শ্যামা চুপচাপ ফিরোজের বুকে মিশে থাকে।
“যদি আম্মা দেখে নিতো?”
“দেখলে দেখতো।বিয়ে করা বউয়ের কাছেই তো এসেছি।”
“খুব সাহস তাই না?”
“খুউব।”
“ভ য়ে আমার হাত পা অবশ হয়ে আসছিলো।”
“আমি থাকতে ভ য় কিসের?”
” জানি না।”
ফিরোজ আবারো বিছানায় বসে।আফসোস করে বললো,
“আমার শাশুড়ি আম্মা বোধহয় নানী হতে চায়না,তাইতো এতো ডিস্ট্রাব করছে।”
ফিরোজের কথার ধরনে শ্যামা হেসে ফেলে।ফিরোজ মুগ্ধ হয়,মায়াবতীর মিষ্টি হাসি সব কষ্ট নিমিষেই দূর করে দেয়।এই মিষ্টি আদুরে মেয়েটা তার স্ত্রী ভাবতেই সুখে বুকের খাঁচা ঝনঝন করে উঠে।শ্যামার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তো,শুরু করো।”
ফিরোজ শাড়ি পড়ার কথা বলছে তা বুঝতে পেরেও শ্যামা বললো, “কি?”
“শাড়ি পরা।”
এক রাশ লজ্জা শ্যামার সারা অঙ্গে ঝিলিক দিয়ে যায়।মাথা নেড়ে বললো,
“আপনার সামনে কিভাবে পড়বো?”
ফিরোজ সুন্দর করে হেসে বললো,
“আমি তাকাবোনা।”
“আপনি খারাপ আছেন।তাকাবেন তা আমি জানি।”
“বউয়ের দিকে তাকালে ক্ষতি হয়না।”
“আমার লজ্জা হয়।”
“আচ্ছা আমি চোখ বন্ধ করে ওইপাশে শুয়ে আছি,পরা শেষ হলে বলো।”
ফিরোজ কথামতো ওইপাশে ফিরে শ্যামা পিছন ফিরে শাড়ি পরে,কেনো জানি তার হাত পা কাঁপছে,বারবার ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে।সে ভালো শাড়ি পড়তে পারে না নিজের মতো করে কোনোরকম পরে নেয়।তারপর ফিরোজকে ডাকে।ফিরোজ অতী উৎসাহ নিয়ে তাকায়।তাকিয়ে বললো,
“কি?”
“শেষ।আপনি তাকান’নি শিউর?”
ফিরোজ গভীর চোখে শ্যামার দিকে তাকিয়ে আছে।তার বউ!যাকে ছুঁতেও পারেনি।সে যদি বদ্ধ ঘরে এমন এলোমেলো শাড়ি পরে তাহলে সে না তাকিয়ে পারে?এতোটা শুদ্ধ পুরুষ সে না,সে তাকিয়েছে অনেকবার তাকিয়েছে।
“আমি তাকাইনি,আমার চোখ তাকিয়েছে।এগুলোকে আটকানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু খুব অবাধ্য।”
শ্যামার রাগ হয়, লজ্জা হয়।
“আমি জানতাম আপনি তাকাবেন।”
ফিরোজ উঠে দাঁড়ায়,শ্যামার কাছে এসে বললো,
“একটু তাকিয়েছি।”
তারপর শ্যামার দিকে তাকিয়ে অভিনয় করে বললো,
“রাগ করোনা সুন্দরী গো রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো।”
ফিরোজের গান শুনে শ্যামা হেসে ফেলে।
“আরো সাজা বাকি না?চলো আমি সাজাই।”
শ্যামা মেকাপ দিয়ে সুন্দর করে সাজলে ফিরোজ নিজ হাতে গহনা পড়িয়ে দেয়।আয়নায় দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।ফিরোজের চোখ যায় ফর্সা আদুল ঘাড়ে,ইশ!মেয়েটা এতো আদুরে!সবকিছু যেনো তাকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছে।সে
ঠোঁট দ্বারা উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে নাক চেপে ধরে।শ্যামা কেঁপে উঠে সামনে এগিয়ে সরে যায়।ফিরোজ শ্যামার গাল ধরে বললো,
“যেমন লাগবে ভেবেছিলাম এর চেয়েও বেশী সুন্দর লাগছে।”
শ্যামা এক অভাবনীয় কাজ করে ফেলে নিচু হয়ে ফিরোজের পা ছুঁয়ে সালাম করে ফেলে।ফিরোজ আৎকে উঠে বললো,
“এসব কি?দূর।পায়ে হাত দিলে কেনো?এসব ভালো না,স্বামীকে সম্মান,ভক্তি করতে হলে এই পায়ে হাত দিয়ে বুঝাতে হয় না বরং কাজ কর্মেই স্বামীকে তা অনুভব করানোই শ্রেয়।বুঝেছো?”
“জ্বী।”
“আমি ঠিক তোমাকে জয় করে নেবো।”
শ্যামা অতী ভরসায় ফিরোজের হাত টেনে নিজের হাতে নেয়।
“আমি জানি।”
“এই কয়টা মাস তোমাকে কাছে পেতে খুব ইচ্ছে হতো।তোমার হতো না?”
শ্যামা মাথা দুলিয়ে বললো,
“হুম।”
ফিরোজ চুপচাপ শ্যামার দিকে তাকিয়ে আছে চোখের ভাষা বুকে কাঁপন ধরানোর জন্য যথেষ্ট।শ্যামা মাথা নিচু করে নেয়,আজ ভ,য়ংকর কিছু হবে,এই রাত অন্যসব রাতের মতো না,ফিরোজের সানিধ্যে এই রাত তার চিরাচরিত নিয়ম হারাবে।শ্যামা কেঁপে উঠে।ফিরোজের দিকে তাকানোর সাহস যেনো ছাই হয়ে উড়ে যায়।
হাত পায়ের মৃদু কাঁপন ফিরোজের নজর এড়ায় না,নিজের শরীরে ভয়াবহ তান্ডব বইছে,প্রতিটা রক্তকণিকা হু হু করে বয়ে যাচ্ছে,সামনের মেয়েটা তার জন্য সেজেছে,মেয়েটা একান্ত তার এটা ভাবতেই বসন্ত মনের মাঝে দোলা দিয়ে যায়।শিরশির করে উঠে শরীরের প্রতিটা লোমকূপ।হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে আলতা চোখে পড়ে।
“এই আলতা দেবে না?”
শ্যামা আস্তে করে বললো,
“দেবো,খেয়াল ছিলো না।”
শ্যামা বিছানায় বসে,ফিরোজ আলতার কৌটা হাতে শ্যামার সামনে বসে।দুজনেই চুপচাপ।ফিরোজ শ্যামার নিটোল পা তার পায়ের উপর নেয় তারপর খুব সুন্দর করে আলতা পড়িয়ে দেয়।
আলতা পড়ানো শেষ হলে ফিরোজ তার ইচ্ছে পূরণ করে,নিচু হয়ে পরপর কয়েকটা চুমু দেয় প্রেয়সীর পায়ে,হাত দিয়ে পা আলতো করে ঘষে দেয় যা শ্যামাকে দিশেহারা করে,প্রথম স্পর্শ ভয় মিশ্রীত আদুরে হবে তা সে বুঝেনি।শ্যামার শ্বাস ভারী হয়।দুজনে দুজনের দিকে ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে থাকে।শ্যামা ফিসফিস করে বললো,
“এটা কি করছেন?”
“আদর দিলাম।”
“পায়ে কেনো?”
“তোমার সবই আদুরে লাগে।পা গুলো এতো সুন্দর।”
শ্যামা অবাক হয়ে বললো,
“আপনি…”
“আচ্ছা মাঝে একদিন তুমি বলে এখন আবার আপনি বলো কেনো?তুমিই তো সুইট লাগে,মধুময় লাগে,বউ বউ মনে হয়।”
“আপনি বললে বেশী ভালো লাগে।”
“তাই?”
“হুম।”
“তাহলে আপনিই বলো।”
“আচ্ছা।”
ফিরোজ বললো,
“কষ্ট হচ্ছে।”
“কেনো?”
“তুমি এতো কষ্ট করে সাজলে যা এখনি নষ্ট হয়ে যাবে।”
“কে নষ্ট করবে?”
“আমি।আপত্তি?”
শ্যামা কোনো কথা বলেনা।ফিরোজের দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে আছে।ফিরোজ হেসে ফেলে,সে নিজেও নার্ভাস।হাত বাড়িয়ে শ্যামাকে নিজের কোলে এনে বুকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
“আমার সোনাপাখি,আদুরে বউ।আমি যদি আজকে তোমার সামনে এক গভীর সুখ উন্মোচন করি তাহলে কি তুমি রাগ করবে?সুখে সুখে মরিয়া হয়ে যদি সুখের ভেলা বাসাই কষ্ট পাবে?সমাজের কাছে স্বীকৃতি না দিয়ে আদর দিলে কি আমাকে অবিশ্বাস করবে?আমি তোমাকে ঠিক সসম্মানে আমার ঘরে নেবোই,এইটুকু ভরসা রেখো।আর তোমার মনে যদি কোনো সংশয় থেকে থাকে তাহলে আমাকে বলো,আমি নিজেকে সামলে নেবো,এখনি চলে যাবো।”
ফিরোজ উত্তরের আশায় শ্যামার দিকে তাকিয়ে আছে।শ্যামা শক্ত করে ফিরোজকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“না না।”
“চলে যাব? ”
“না।”
“অনুমতি দিচ্ছো?”
শ্যামা চুপচাপ বুকে পরে থাকে মুখ ফুটে বলতে পারে না নিজের অনুমতি দেয়ার কথা।সে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায়।ফিরোজ যেনো কোমল কোনো ফুল হাতে নিচ্ছে এমন করে শ্যামার মুখটা তার আজলায় নেয়।মুখে হাজারো চুমোয় ভরিয়ে দেয়,নাকে নাক লাগিয়ে বললো,
“ভালোবাসি।”
শ্যামা কথা বলেনা।হঠাৎ করে কারেন্ট চলে যায়,অন্ধকারে দু’জনে একে অপরের সাথে মিশে আছে।শ্যামা মিহি গলায় বললো,
“মোমবাতি আছে রান্নাঘর থেকে জ্বালিয়ে আনি?”
ফিরোজ রাজী হয়না।
“না যেতে হবে না,আবার কেউ দেখে নেবে।”
এই রাত বড়োই মিষ্টি রাত এই রাত সুখের রাত।দুটি দেহ গোপন সব রহস্য একে অপরের কাছে উন্মোচিত হয়।
ফিরোজ প্রতি ক্ষনে ক্ষনে আকুল শ্যামাকে দেখছে,আদরের সীমা অতিক্রম করেছে বহু আগেই,ফিরোজ সুখের রাজ্য পাড়ি দেয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়েছে যেনো।দুজনের শ্বাস ঘন হয়,ফিরোজ জড়ানো গলায় আদুরে বাক্যবাণ ছুড়ে দেয় শ্যামার দিকে যা শুনে শ্যামা লজ্জায় লুকাতে চায়,কেঁপে উঠে,হাফসাফ করে ফিরোজের থেকে নিজেকে সরাতে চায়।ফিরোজের আদুল গা ছুঁয়ে আরো বেশী লজ্জা পায়।শ্যামা ফিসফিস করে ডাকে,
“মধুরাজা।”
ফিরোজ দরদ মিশিয়ে বলে,
“ইয়েস।”
“এত্তো ভালোবাসি।”
ফিরোজ ভালোবাসার চিহ্ন আঁকে।
“আমিও।”
ফিরোজ তার মধুরানীকে অতী যত্নে স্পর্শ করে ,আলিঙ্গনে জড়িয়ে রাখে।
ভালোবাসায় মত্ত হয় দুটো দেহ,রাতকে করে মধুময়,দুজন মানুষের কাছে উন্মোচন হয় ভালোবাসার আরেক নতুন অধ্যায়ের।সুখে হাসে দুটো পাখি,পূর্ণতায় কানায় কানায় ভরে উঠে মনের দ্বারপ্রান্ত। কালবৈশাখী ঝড়ের পরে যেমন সব শান্ত হয়ে যায় ওরা দুজনেও শান্ত হঅয়ে গেছে,শ্যামা লজ্জায় লুকোতে চাইছে ফিরোজ তা দেখে ঠোঁট টিপে হাসে।
শ্যামা ফিরোজের দিকে না তাকিয়ে বললো,
“আপনি এখনি চলে যান প্লিজ।”
“কেনো?”
“আমার লজ্জা লাগছে, আপনি আরেকটুক্ষন আমার কাছে থাকলে আমি নির্ঘাত মা,রা যাবো।”
ফিরোজ শ্যামাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমি তো এখন যাচ্ছি না।”..
“কেনো?”
ফিরোজ কিছু বলে না শুধুমাত্র হাসে যেই হাসি শ্যামার অন্তর কাঁপিয়ে দেয়,দু হাত দিয়ে মুখ লুকিয়ে ফেলে।
চলবে…..
#মধুমাস
#পর্ব_৩২
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
ফিরোজ চলে যাবে,রেডি হয়ে শ্যামার এলোমেলো শাড়িটা গুছাচ্ছে আর বারবার শ্যামার দিকে তাকাচ্ছে।শ্যামা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে ফিরোজকে দেখছে,এইতো কিছুক্ষণ আগেও পাগল মানুষটা তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো পরিস্থিতিতে পরে দুজন আলাদা হয়েছে।শ্যামার খুব কষ্ট হচ্ছে,ইচ্ছে করছে সারা রাত ফিরোজের বুকে চুপটি করে ঘুমাতে,আদুরে হাতে ফিরোজকে ছুঁয়ে দিতে।
ফিরোজ শাড়ি আর অন্যান কাপড় গুছিয়ে টেবিলের উপরে রাখে।
“এগুলো আগামীকাল রাতে ধুয়ে রুমেই শুকিয়ে নেবে তাহলে কেউ দেখবেনা।”
শ্যামা মাথা নাড়ে।ঠোঁট সামান্য নেড়ে বললো,
“আচ্ছা।”
ফিরোজ কিছুটা থেমে বললো,
“অসুস্থ লাগলে আমাকে জানাবে।”
“আচ্ছা।”
ফিরোজ নজর না ফেলে শ্যামার দিকে তাকিয়ে থাকে।এই ঘর থেকে যেতে ইচ্ছে করছেনা,পা গুলো যেনো কোনো দৈব শক্তির সাহায্যে আটকে রাখা হয়েছে।শ্যামার দিকে তাকিয়ে শ্যামার মনোভাব খুব সহযেই বুঝতে সক্ষম হয়।এখনি তার চলে যেতে হবে এটা ভাবতেই বুকে জানা ব্যাথারা জেগে উঠে।মেয়েটা এভাবে তাকাচ্ছে কেনো?এমন দীঘল কালো চোখ নিয়ে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে তাকালে কি সে ঠিক থাকবে? তার কষ্ট হচ্ছে না?ফিরোজ আবারো বিছানায় বসে।
“তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো শ্যামা?আর কি চাই?”
শ্যামার চোখভরে পানি আসে।ঠোঁটের ভাজ মৃদু কেঁপে উঠে,অবুজ বাচ্চার মতো মাথাটা দু’দিকে নাড়িয়ে না করে।
ফিরোজ অপলক তার সুনয়না স্ত্রীর মিষ্টি কোমল মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকে।শ্যামা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায়।ফিরোজ তার কাছে বসায়।
“কি সমস্যা?”
শ্যামা চুপ করে বসে থাকে।ফিরোজ আস্তে করে বললো,
“এমন কান্নাকাটি করছো কেনো?এমন করলে আমার যেতে ইচ্ছে করবে?”
শ্যামা ফিরোজের বুকে মাথা রেখে বললো,
“কান্না করি না। ”
“তা তো দেখতেই পাচ্ছি।”
“ছাড়তেই ইচ্ছে হচ্ছে না।”
ফিরোজ হেসে বললো,
“আমারো যেতে ইচ্ছে করছে না।”
হাসি একটা ছুঁয়াচে জিনিস,ফিরোজের হাসি দেখে শ্যামার ঠোঁটেও হাসি ছড়িয়ে পরে।বউয়ের মুখে এমন মিষ্টি হাসি দেখে ফিরোজ সন্তুষ্ট হয়।কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।বউকে ছেড়ে যেতে একটুও ইচ্ছে করছে না,নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।শ্যামার দিকে তাকিয়ে হাসে,শ্যামাও হাসে।ফিরোজের দুষ্টুমিমাখা হাসি দেখে শ্যামার উপর হঠাৎ করে একরাশ লজ্জা ভর করে,আদুরে কথা,বেশামাল স্পর্শর কথা মনে হওয়াতে মাথা নিচু করে নেয়।ফিরোজ আস্তে করে বললো,
“আচ্ছা,ভালো থেকো।”
শ্যামা মাথা নাড়ে,লজ্জা নিয়েই ফিরোজের দিকে তাকায়।ফিরোজ বউয়ের কাঁচুমাচু মুখ দেখে হেসে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কিছু বলবে?”
শ্যামা ফিসফিস করে বললো,
“এতো কাছে এসেছি বলে ভালোবাসা কমে যাবে না তো!”
ফিরোজ কিঞ্চিৎ অবাক হয়,মেয়েটা কি ভাবছে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে তাকে ভুলে যাবে এমন কিছু?তা না হলে ভালোবাসা কমবে কেনো?সে বললো,
“আমার উপর এই বিশ্বাস?”
শ্যামা আৎকে উঠে।মাথা নেড়ে না ভঙ্গিমা করে বললো,
“বিশ্বাস না করলে কি আর ঘরে আনতাম?”
“দেখো শ্যামা।সোজা কথা বলি,একটা মেয়ে আর একটা ছেলে যখন প্রেম করে তখন তারা না বললেও কিন্তু তাদেরও ইচ্ছে করে একটু দুষ্টুমি করতে,উলটপালট ভাবতে আর সেক্ষেত্রে আমি তোমার হাজবেন্ড।আমি জানি আমি যেমন তোমাকে চাই তুমিও আমাকে চাও,আর এই চাওয়াটা স্বাভাবিক,একে অপরের প্রতি আকর্ষণবোধ করবো এমনটাই কাম্য।আর এই মিলনের ফলে ভালোবাসা কমে না বরং বাড়ে।আমার উপর আস্থা রাখো,রাজার রানীকে সিংহাসনে বসাবই।প্রমিস।”
শ্যামা কিছু বলছে না চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।ফিরোজ আবার বললো,
“আমার কাজে তুমি কি কষ্ট পেয়েছো?আগে বলতে,আমি এতোটাও খারাপ না।”
শ্যামা ফিরোজের ঠোঁট হাত রেখে কথা থামায়।
“আমি কি বললাম আর আপনি কি বুঝলেন!আমি বলেছি ভালোবাসা কি কমে!আর আপনি একটা ভাষণ দিয়ে দিলেন।”
শ্যামার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিরোজ হেসে দেয়,
“আচ্ছা বাবা ভুল হয়েছে।ভালোবাসা কমে না বরং বাড়ে।এই দেখো আজকের এই প্রলয়কারী ভালোবাসার জন্য আমাকে প্রতরাতেই আসতে হবে।”
ফিরোজের কথায় শ্যামা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়।
“মানে?”
ফিরোজ দাঁত কেলিয়ে হাসে।
“কেনো?কোনো সমস্যা?”
“জ্বী, অনেক সমস্যা।চারটা বাজে আরেকটু পরে আজান দিবে।”
“আমাকে তাড়ানোর এতো তাড়া?”
“কেউ দেখলে কি ভাববে?”
“আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো না!আর কখনো পাবে না হুহ।”
শ্যামা হেসে বললো,
“আমি জানি পাবো কি পাবোনা।যান এখন।”
“আচ্ছা।যাচ্ছি।”
★★★
শ্যামার ঘুম ভাঙ্গে একটু বেলা করে।তখন ঘড়ির কাটা দশটা ছুইছুই।ঘুম ভেঙ্গে রাতের কথা ভেবে হাসে,ফিরোজ তাকে সত্য এক সুখের সাথে পরিচয় করিয়েছে যা সব নর নারীর কাম্য।সে চোখ বন্ধ করে ফিরোজের হাসিমুখটা দেখার চেষ্টা করে।সারা শরীরে অজানা শিহরণ নেচে যায়।উঠতে গিয়ে বুঝতে পারে শরীরে নতুন এক ব্যাথার সূচনা,সে চোখ বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়ে।তার মনে হচ্ছে বিছানা থেকে এখনো পাগলাটে পুরুষের গায়ের মিষ্টি সুঘ্রাণ বেরোচ্ছে।দুজনে যা করেছে শ্যামা যানে না কতোটুকু সঠিক কিংবা ভুল কিন্তু সে এটা জানে যে ফিরোজ তার মর্যাদা দেবে,তাকে কষ্ট দেবে না।বিয়ের পর স্বভাবতই ছেলেরা নিজের স্ত্রীর কাছে আসতে চায়,আর সেদিক দিয়ে ফিরোজ তো তার প্রেমিক;পাগলাটে প্রেমিক বিয়ের দুইমাস পেরিয়ে অবশেষে সে এসেছে,ঝড় বয়িয়ে দিয়েছে।
দরজায় ধুমধাম শব্দ হয়,
“শ্যামা! অ শ্যামা!”
শ্যামা ভাবনারা লাইন হারায়।সে উঠে বসে।ঘুম জড়ানো গলায় বললো,
“কি আম্মা?”
“কয়টা বাজে দেখেছিস?উঠে যা এবার।”
“উঠছি।”
“কি ঘুম ঘুমায় কতোবার ডেকে গেলাম।”
“উঠেছি।”
ফাতেমা বেগম চলে গেলে শ্যামা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।গলার কাছে একটা কালসিটে দাগ।হাত দিয়ে ছুঁয়ে লাজুক হাসে।পায়ের আলতা এখনো অক্ষত।শ্যামা ভাবে তার এখন গোছলের প্রয়োজন কিন্তু কিভাবে করবে?
অনেককিছু ভেবে কাপড় নিয়ে কোনোদিকে না তাকিয়ে গোছলখানার দিকে যায়।পথে ফাতেমা বেগম আটকে বললো,
“কই যাচ্ছিস?”
শ্যামা চমকে যায়।যুতসই উত্তর মিলাতে পারে না।
“মাথাটা ব্যাথা করছে ভাবছি গোসল করলে ঠিক হয়ে যাবে।”
ফাতেমা বেগম মেয়ের কপালে হাত রেখে বললো,
“শরীর খারাপ নাকি?”
শ্যামা সরে যায়,তার মনে হচ্ছে ফিরোজ আসার কথা সবাই জেনে যাবে,ফিরোজের গায়ের সুঘ্রাণ সবাই পেয়ে যাবে,ফিরোজের স্পর্শগুলো সবাই দেখে ফেলবে।কথায় আছেনা চোরের মন পুলিশ পুলিশ।সে বললো,
“না শরীর ভালো কিন্তু বেশী ঘুমানোতে মাথা ব্যাথা।”
ফাতেমা বেগম আর কিছু বলার আগে শান্তা এসে বললো,
“মনে রঙ লেগেছে নাকি?পায়ে আলতা পরেছিস।”
শ্যামার মুখে ভ,য়ের ছাপ চেপে আসে।সে বলে,
“কেনো আমি কি খারাপ কাজ করেছি?আলতা পরতে পারি না?”
শান্তা ঠেস দিয়ে বললো,
“বি,চ্ছেদের জ্বালা শেষ?”
ফাতেমা বেগম বললো,
“আহ শান্তা কি বলো এগুলো? আলতা পরাতে কি হয়েছে?নিজের মতো থাকুক না।”
শাশুড়ির উত্তর শান্তার মনমতো হয় না।সে চলে যায়।
সবাই চলে গেলে শ্যামা গোসলে যায়।দুরুদুরু বুকে গোসল করে বের হয়।উঠোনে কাপড় মেলার সময় তার মনে হচ্ছিলো সে যেনো পূর্ণ নারী,আত্মতৃপ্তিতে ঠোঁট থেকে হাসি সরছিলোই না।
ফিরোজ একমনে কাজ করে যাচ্ছে।আজকে তার মন ভিষণ ভালো।মেয়েটা নিশ্চয়ই যাদু জানে।তখনি ফোন বাজে।মোবাইলের দিকে তাকিয়ে অতী কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটা দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠে।
“হ্যালো, মধুমাসের মধুরাজা বলছি।আপনি কে?”
শ্যামা লাজুক হাসে।
“আমি মধুরাজার মধুরানী।”
“সব ঠিকঠাক?”
“হুম।”
“এই সময় ফোন?”
শ্যামা চুপ করে থাকে। ফিরোজ বললো,
“আমায় মিস করছো?”
“হুম।”
“তুমি কি চাচ্ছো আজকেও আসি?”
শ্যামা চাচ্ছে কিন্তু মুখে বলবে কি করে?সে আবারো নিশ্চুপ হয়ে যায়।ফিরোজ বললো,
“আর যাওয়া হবেনা।”
শ্যামা চমকে যায়।
“কেনো?”
“ভালোবাসা কমে গিয়েছে।”
“আপনি খুব খারাপ।”
“জানি।”
শ্যামা আস্তে করে বললো,
“আসলেই ভালোবাসা কমে গেলো?”
ফিরোজ খিলখিল করে হাসে।
“কমেনি বরং বেড়েছে তাই তোমার ভালোর জন্যই। ”
ফাতেমা বেগম রুমে ঢুকে বললো,
“রেডি হ”
কিন্তু শ্যামার হাতে ফোন দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলো।মেয়ের দিকে তাকিয়ে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।মেয়ে কি তবে এখনো হাত ছাড়েনি?
চলবে…….