#মধুমাস
#পর্ব_২৯
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শ্যামা নিঃশব্দে আবার তার রুমে ফিরে যায়,শ্বাস আটকে রেখে তার মায়ের কাছে শুয়ে পড়ে।মোবাইলটা বন্ধ করে বালিশের কাভারের ভেতরে রেখে দেয়।চোখ বন্ধ করে ফিরোজকে অনুভব করে,ফিরোজ;তার স্বামী।শ্যামার মনে হয় ফিরোজের হাতের মৃদু ছোঁয়া,তার গায়ের পুরুষালি শক্ত ঘ্রাণ শ্যামার গায়ে আষ্টেপৃষ্টে লেগে আছে,শ্যামা দম ভরে শ্বাস নেয়।তাদের বিয়েটা যদি স্বাভাবিক ভাবে হলে এখন সে ফিরোজের বুকে থাকতো,ফিরোজের পাগলামির সামিল হতো।ফিরোজের পাগলামির কথা মনে হয়ে শ্যামা লজ্জা পায়,এই ছেলে যে তার জন্য এতো পাগল হবে তা সে আগে বুঝেনি।ফিরোজের দুষ্টু আদর,মিষ্টি ছোঁয়া তার অশান্ত হৃদয় শান্ত করে।চোখ বন্ধ করে বৃথা মনের অভিলাষে ফিরোজকে জড়িয়ে ধরে।
ভাগ্যিস কেউ দেখেনি,দেখলে আজকে একদম মে,রেই ফেলতো।
ফিরোজ চুপচাপ বাড়ি আসে,ভেতরের সত্তা হাফসাফ করছে,যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে,আর কিছুক্ষণ থাকলে একটু শান্তি লাগতো কিন্তু এতো রিক্স নিয়ে থাকার কোনো মানে হয় না।কেউ দেখলে হয়তো তাকে কিছু বলবে না কিন্তু শ্যামার উপর দিয়ে তুফান যাবে,সে চায়না শ্যামা বিপদে পড়ুক।ফিরোজ বাড়ি ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।শ্যামা,তার বউ।ফিরোজ ঘুমানোর চেষ্টা করে কিন্তু চোখ বন্ধ করলেও শ্যামা তার চোখের পর্দায় ভেসে উঠে।ফিরোজ ছটফট করে,বাকিটা রাত ঘুমাতে পারে না,ভোরের দিকে সদ্য বিবাহিত পুরুষ বউ না পাওয়ার যন্ত্রণা ভুলে চোখে ঘুম নেমে আসে।
ফিরোজ এখনো মোহাম্মদ আলীর সাথে কথা বলেনা।বিয়ের এক পনেরো দিন চলে গেছে ওই যে প্রথমদিন মেয়েটার সাথে দেখা হলো আর একবারও দেখা হয়নি,যদিও রাতে সামান্য মেসেজ আদান প্রদান হয় কিন্তু এইটুকু মেসেজে কি মন ভরে?মন তো পাগলপারা তার চাওয়া আরেক রকম,পাগলাটে,ক্ষাপাটে রুদ্ররূপ ধারন করতে সে মরিয়া।শ্যামাকে বিয়ে করার পর থেকে দেহ মন তাকে ফুসলিয়ে যাচ্ছে,কাছে পাওয়ার তীব্র বাসনায় অন্তর ক্ষ,ত,বি,ক্ষ,ত হচ্ছে তাইতো আর দেখা করতে যায়নি,যেহেতু দেহ মন জেনে গেছে শ্যামা পুরোপুরি তার তাই আদুরে মেয়েটাকে কাছে পেলে সে দিশা হারায়,নিজের ভারসাম্য হারানোর যোগার হয়।তুলতুলে মেয়েটাকে একেবারে বুকের ভেতরে নিয়ে যেতে সাধ জাগে।পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার জন্য দেখা না করাই ভালো।
এই পনেরো দিন দেখা না করার আরেকটা কারণ হলো কাজের চাপ খুবই বেড়ে গিয়েছে,এমপি মহোদয় নতুন একটা দায়িত্ব তাকে দিয়েছে,ফিরোজ কাজটা সুনিপুণ ভাবে করার চেষ্টায় আছে।কয়েকটা ছেলে তার নাম করে দোকানীদের হু,মকি ধা,মকি দিয়ে টাকা উঠাচ্ছে এই সমস্যাটাও সমাধান করতে হবে,তাছাড়া এগুলোর চেয়ে বড়ো যেই সমস্যাটা তা হলো শ্যামার পরিবারের খুঁজ রাখা উনিশ বিশ হলেই যেকোনো পদক্ষেপ নিতে হবে।ফিরোজ চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে, বউটাকে দেখতে এতো ইচ্ছা করছে।
মোহাম্মদ আলী ছেলের এই নিশ্চুপতা দেখে ভাবেন শ্যামার ভুত বুঝি মাথা নেমে গিয়েছে,কিন্তু ছেলে অভিমানে আছে, এখনো উনার সাথে কথা বলছে না।এখন আর হোটেলেও আসে না বাড়িতে ঠিকঠাক ভাত খায় না।উনি চিন্তা করেন যেহেতু ছেলে আর শ্যামার কথা বলছেনা তাহলে উনিও তুলবেন না।শ্যামার বিয়ের পরে না হয় ফিরোজকে বিয়ে করানোর ব্যাপারটা দেখা যাবে।মানুষের থেকে শুনতে পান প্রতিদিনই শ্যামাকে দেখতে আসছে।
স্বপন ইসলাম হতাশ হয়।বিষন্ন মুখে দরজায় বসে আছে।শ্যামাকে প্রতিদিন একটা দুইটা পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে কিন্তু একটা পাত্রপক্ষও শ্যামাকে পছন্দ করছে না,অথচ অপছন্দ করার মতো মেয়ে শ্যামা না তারপরও কেনো যে অপছন্দ করছে তার কারণটাই কেউ খুঁজে পাচ্ছে না।কতো ভালো ভালো সমন্ধ আসে দেখে যাওয়ার পরে কি হয় যে জানে উনাদের থেকে উত্তর না ই আসে।স্বপন ইসলাম চিন্তা করে দেখে শ্যামা এখন বেশ শান্ত, ওইদিনের পর থেকে আর একবারও ফিরোজের নাম মুখে নেয়নি কিংবা ফিরোজও আর আসেনি, দুজন হয়তো বুঝে গিয়েছে তাদের মিল সম্ভব না তাই দূরে সরে গিয়েছে।এদিক থেকে স্বপন ইসলাম খুশীই হয় কিন্তু উনি নিশ্চিত হতে পারছেনা।স্বামীর কথা মতো ফাতেম বেগম মেয়ের রুমে যায়।
“শ্যামা।”
শ্যামা তখন টেবিলে বসে ছিলো।মায়ের ডাকে উনার দিকে তাকায়।
“সত্যি কথা বল তো।”
“কি কথা আম্মা?”
“ফিরোজের সাথে তুই কথা বলিস?”
“কিভাবে কথা বলবো?”
“তুই কি আসলেই কোনো যোগাযোগ রাখিস না?”
“আশ্চর্য! আম্মা তোমরাই তো চাও যেনো যোগাযোগ না রাখি এখন এসব বলছো কেনো?”
“এমনি বলেছি।তাহলে আমাদের কথামতো বিয়ে করতে তোর কোনো আপত্তি নেই।”
শ্যামা মুচকি হেসে বললো,
“না নেই।”
মেয়ের মুখে মুচকি হাসি সমেত এমন উত্তর শুনে ফাতেমা বেগম আসস্ত হয়ে চলে যায় কিন্তু বিয়ে গুলো কেনো ভেঙ্গে যাচ্ছে সেটাই ভাবে।
শ্যামা বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়।কথাগুলো বলতে যদিও কেমন লাগছিলো কিন্তু ফিরোজের কথামতোই সব বলেছে।শ্যামা উঠে দাঁড়ায়,চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ে।পনেরো দিন হয়ে যাচ্ছে প্রিয় মানুষের মায়াভরা নেশালু চেহারাটা দেখা হচ্ছে না,আদর নিয়ে ছুঁয়ে দেয়া যাচ্ছে না।শ্যামা নিজেও জানে ফিরোজ কেনো আসে না কিন্তু অবুজ মনটা যে বেশামাল আবদার করে,মনের সুক্ষ্ম দেয়াল চিকন কাঠি দিয়ে খুচিয়ে ভাঙ্গতে চায়।ফিরোজের কাছে যাওয়ার ইচ্ছায় সারা শরীরে শিহরণ বয় ছটফটিয়ে উঠে তনুমন,আহা একি উদ্দম যন্ত্রনা।শ্যামা অবশ্য নিজের এই নতুন অসুখের কথা ফিরোজ নামের প্রনয়পুরুষকে বলেনি,আগুনে ঘি ঢালার ইচ্ছে তার নেই, পরিস্থিতি বুঝতে হবে।সব ঠিকঠাক হলে কাছে আসা সময়ের ব্যাপার মাত্র,এর জন্য দুজনকেই ধৈর্য ধরতে হবে।ফিরোজ প্রতি রাতে আদুরে বাক্যবাণে শ্যামাকে জর্জরিত করে দেয়।এসব ভাবতে ভাবতে শ্যামা ঘুমিয়ে পড়ে।
মধ্যরাতে শ্যামার ঘুম ভাঙ্গে।মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে উনি ঘুমাচ্ছে।সে মোবাইল অন করে সময় দেখে,দুইটা পাঁচ।আজকে ফিরোজের সাথে কথা বলা হয়নি।দ্রুত ফিরোজকে ফোন দেয়।
আর তাকে অবাক করে দিয়ে সাথে সাথেই ফোন রিসিভ হয়।
ফিরোজ হেসে বললো,
“কি ঘুমিয়ে গিয়েছিলে?”
শ্যামা দ্রুত হাতে লেখে,
“আমি দেখবো।”
“ভিডিও কল দেবো?”.
” না এমন দেখা না,ছুঁয়ে দেয়ার মতো দেখা।”
ফিরোজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“কি হয়েছে মধুরানীর?”
“আসবেন না?”
“আসছি।পাঁচ মিনিট পরে বের হয়ো।”
শ্যামা পাঁচমিনিট পরে বেরোয়।ফিরোজ উঠোনের কোণে বড়ো বড়ই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে।শ্যামা আশেপাশে তাকিয়ে দ্রুত সেদিকে যায়।দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে,ফিরোজ মাথায় চুমু দিয়ে বললো,
“বেশী মিস করছিলে?”
শ্যামা মাথা নাড়ে।ফিরোজ বুকে জড়িয়ে বললো,
“আমিও।”
“তাই ঘুমাননি?”
“ঘুম আসছিলো না,তোমার কাছে আসার তীব্র ইচ্ছা হচ্ছিলো।”
শ্যামা ফিরোজের মাথাটা টেনে নিজের দিকে এনে চুমু দেয়।নাকে চুমু দিয়ে হাসে। ফিরোজের শ্বাস ঘন হয়,গভীর গলায় বললো,
“শ্যামা,পাখিটা। আমার বাড়ি চলো তো।বউ ছাড়া থাকা অসম্ভব।”
“এতোদিনে তা মনে হলো?”
“আগে তো এই যন্ত্রণা বুঝি নি।”
চলবে……..
#মধুমাস
#পর্ব_৩০
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
সময় সময়ের গতীতে ছুটে চলে।সময়কে আটকানোর ক্ষমতা এই পৃথিবীতে কারো নেই তাইতো সবাইকে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়।
স্বপন ইসলাম মেয়ের জন্য অনেক পাত্রপক্ষ দেখে কিন্তু কেনো জানি কেউ’ই হ্যাঁ বলে না।এদিক দিয়ে শ্যামাকেও কিছু বলা যাচ্ছে না,পাত্র আসলে মেয়ে কোনো বাহানা ছাড়াই সুন্দর করে সেজে সামনে আসে তাছাড়া ফিরোজের সাথেও যোগাযোগ নেই তাহলে বিয়ে না হওয়ার কারণটা কি?উনি কোনো সমাধান খুঁজে পায় না।
রিপন চিন্তিত্ব হয়ে বললো,
“আব্বা,আমার মনে হয় কলকাঠি ফিরোইজ্জাই নাড়তেছে,একটা শিক্ষা দিয়ে দেই।”
স্বপন ইসলাম গম্ভীর গলায় বললো,
“এসব নেতা ফেতার সাথে লাগতে যেও না পরে দেখা যাবে মেয়ের চরিত্রে কলঙ্গ ছিটিয়ে দিয়েছে।”
“কিন্তু বিয়ে ভাঙ্গছে কেনো তাহলে?”
“কি জানি!যখন হওয়ার তখন হবে।”
আজকে রাতে ফাতেমা বেগম শ্যামার রুমে আসে।সহয গলায় বললো,
“আমি আশা করি তুই আগের শ্যামা হয়ে গিয়েছিস।”
শ্যামা সুবোধ বালিকার মতো বললো,
“জ্বী আম্মা।”
“ফিরোজ যে তোর জন্য না এটা যে বুঝতে পেরেছিস তাই অনেক।”
শ্যামা মাথা নাড়ে।ফাতেমা বেগম বললো,
“আমি আর তোর সাথে থাকবো না,তোর আব্বার শরীর ইদানীং ভালো যাচ্ছে না, আশা করি উল্টাপাল্টা কিছু করবি না।”
শ্যামা কি বলবে বুঝতে পারে না।আস্তে করে মাথা দুলায়।ফাতেমা বেগম চলে যায়।শ্যামা সোজা হয়ে শুয়ে থাকে,তার আম্মা আর তার সাথে থাকবে না এটা ভাবতেই মনের দেয়ালে হুড়মুড় করে অসংখ্য প্রজাপতি ডানা ঝাপটে যায়।উঠে দরজা আটকে আসে।টেবিলের লুকানো স্থান থেকে মোবাইল বের করে সুইচ অন করে।
তার আর ফিরোজের বিয়ের দুই মাস পেরোলো।এই দুই মাসে দুজন দুজনার আরো আপন হয়েছে,কিভাবে এক হওয়া যায় সেই চিন্তায় মশগুল থেকেছে।লুকিয়ে চুড়িয়ে ফোনের মৃদু কথাবার্তা গভীর থেকে অতল জলে গিয়ে পৌছেছে, অবশ্য সব বেশামাল কথা ফিরোজের ডিকশনারী থেকেই আসে ;শ্যামা শুধু হু হ্যাঁ করেই শেষ।দুজনের খুচরো আদরের লেনাদেনা হয়,ফিরোজের আবদারে নিলজ্জ শ্যামাও নুয়ে পড়ে,মাথা নিচু করে লুকানোর জায়গা খুঁজে বেড়ায়।কিন্তু দুজনেই বুঝে তাদের চাওয়া পাওয়া,কাছে আসার তীব্র ইচ্ছা,একটু ছুঁয়ে দেয়ার আকাঙ্খা।এসব ভাবা ভুলের কিছু না ফিরোজ তার স্বামী।শ্যামা চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।বুকটা ছটফট করছে।বারোটা বাজার সাথে সাথে ফিরোজ ফোন দেয়,শ্যামা আজকে আর হেডফোন গুঁজে না,ফিরোজ মিহি গলায় বললো,
“আমার সোনাবউ কি করে?”
শ্যামা সবসময় মেসেজ পাঠায় কিন্তু আজকে মেসেজ পাঠালো না,কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
“আপনার বউ আপনার কথা ভাবছে।”
শ্যামাকে কথা বলতে দেখে ফিরোজ লাফিয়ে উঠে বসে।উত্তেজিত গলায় বললো,
“আম্মা কাছে নেই?”
“না,আব্বা অসুস্থ তাই আম্মা আর আমার সাথে থাকবেনা।”
ফিরোজ উত্তেজিত হয়ে বললো,
“সত্যি?”
শ্যামা ফিরোজের কথার ধরন দেখে হেসে বললো,
“জ্বী।”
ফিরোজ দম আটকে বললো,
“তাহলে আমি আসি?”
“কোথায়?”
“তোমার কাছে। ”
শ্যামা ধমকে বললো,
“এই!একদম না, দুষ্টু পুরুষ।”
ফিরোজ আফসোস করে বললো,
“কিরে ভাই!কতোদিন হলো বিয়ে হয়েছে এখনো বউয়ের কাছেই যেতে পারলাম না,একটু এই সেই কতোরকম আদর আছে তা তো কিছুই করতে পারলাম না ,তুমি এতো নিষ্ঠুর;
পাষান মহিলা।দয়া মায়া নেই নাকি? ”
শ্যামা ফিরোজের বুকের উত্থান পাতান ঠিক টের পায়,কিন্তু সংকোচ, ভ,য়ও পায়।ফিরোজের কথা শুনে হেসে বললো,
“না।মায়া নেই।”
ফিরোজ কিঞ্চিৎ অভিমান করলো।
“এই কথা মনে থাকবে তো?থাকলেই হলো।”
“আচ্ছা।”
“তুমি জানোই না আমি কতো সুন্দর হয়ে গিয়েছি,আজকে আসলে দেখতে পারতে।”
“আমি দেখতে চাই না।”
ফিরোজ আফসোস করে বললো,
“আমার কপালে কি এমন কঠিন বউ ছিলো?হায় কপাল।”
শ্যামা আহ্লাদী গলায় বললো,
“ভালোবাসি গো মধুরাজা।”
ফিরোজ শান্তস্বরে বললো,
“মিঠা কথায় চিড়া ভিজবেনা।বুঝেছো সুন্দরী?”
“না এতোশত বুঝিনা।”
“তাহলে আমাকে বুঝানোর সুযোগ দেয়া হোক।আশা করি আমি ভালো বুঝাতে পারবো।”
“দরকার নেই।”
ফিরোজ হতাশ গলায় বললো,
“শোন মেয়ে ফ্রী ফ্রী উপদেশ দেই,স্বামীকে এতো কষ্ট দেয়া ভালোনা,গুনাহ হয় বুঝেছো?”
“বুঝেছি।”
“বুঝলে তো আমার আসার কথা।রাইট?”
“জ্বী না।আপনার এখন ঘুমানোর কথা।আমিও ঘুমাবো।”
ফিরোজ চুপ করে থাকে।অভিমানে তার বুকটা ভার লাগছে,মেয়টা কি কিছু বুঝে না?
শ্যামা স্বামীর মন খারাপের মৃদুমন্দ বাতাসের রেশ টের পায় কিন্তু সে নিরুপায়।বুঝানোর ভঙ্গিতে বললো,
“আজকে রাখি?হঠাৎ যদি আম্মা চলে আসে তো।”
ফিরোজ বললো,
“আচ্ছা।”
চারপাঁচ দিন পরেও যখন ফাতেমা বেগম আর শ্যামার সাথে ঘুমাতে আসে না তখন শ্যামা বুঝে আর আসবে না।এক রাতে শ্যামার ফিরোজকে বেশী মনে পড়ে কিন্তু ফিরোজকে বুঝতে দেয় না।কিছুক্ষণ পরে ফিরোজ ফোন দিয়ে বললো,
“ম্যাম আপনার দরজার সামনে পার্সেল রাখা দয়া করে কেউ দেখে নেয়ার আগেই মহারানীর দরজা খুলে পার্সেল ভেতরে নেন।”
শ্যামা ঝটপট দরজা খুলে একটা বড়োসড়ো প্যাকেট পায়।হাতে নিয়ে দ্রুত দরজা বন্ধ করে বললো,
“এটা কি?”
“শাড়ি।”
“আপনি এসছিলেন?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে দেখা করলেন না?”
“দেখা করলে বেশ খারাপ হয়ে যেতাম তাই। ”
“গুড বয়।”
শ্যামা লাউডস্পিকারে দিয়ে শাড়িটা বের করে।ফিরোজের থেকে দেয়া প্রথম উপহার।উপহার পেতে সবারই ভালো লাগে শ্যামাও খুশী হয়।লাল জামদানী শাড়ি,সাথে মিলিয়ে কানের দুল,গলার হার,রুপার নুপুর,আলতা রাখা।সে খুশীতে বাকবাকুম হয়ে বললো,
“খুব সুন্দর।”
“ধন্যবাদ ম্যাম।একটা চিরকুট আছে এটা পড়ুন আর… আর… থাক আর কিছু বলতে হবে না আমার বউ বুদ্ধিমতী।তাই না?”
শ্যামা ফোন কেটে দেয়।চিরকুট বের করে পড়ে,
মধুরানী,
প্রিয়তমা,আমাকে খুব বেশী ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়না?তোমার না হলে না হতে পারে কিন্তু এই পুরুষের খুব ইচ্ছে হয়।তুমি আমার বউ না!এতো কিসের ভ,য়?বিশ্বাস করোনা আমাকে? আমার বউকে লাল শাড়ীতে দেখার তৃষ্ণায় বুক ছটফট করে।তাইতো এই শাড়ী পাঠালাম,পছন্দ হয়েছে?রানীকে খুব মানাবে আমি জানি।এটা পড়লে তোমার রাজা রাজ্য জয়ের মতো খুশী হবে, কিন্তু একটা শর্ত আছে। শর্ত হচ্ছে আমি আসার পরে শাড়ি পড়বে,আমি একটুও জ্বালাবো না প্রমিস,একদম ভালো ছেলে হয়ে চোখ বন্ধ করে রাখবো।শুধু নিজের হাতে তোমার কোমল পায়ে আলতা পড়াবো।সবশেষে একটা কথাই বলতে চাই কালকে তোমার রাজা কোনো প্রহরীবিহীন তার রানীর কাছে আসবে।বুঝা গেলো তো?
ভালোবাসা পাঠালাম এক আকাশ; মুঠো পুড়ে বুকে মিশিয়ে নিও সোনা।”
শ্যামা লজ্জায় রাঙ্গা হয়।শাড়ীটা বুকে চেপে বসে থাকে।পরের সারাটাদিন ছটফট করে কাটায়।রাতের পরে কেমন উশখুশ করে।বারোটায় ফোন আসে।শ্যামা একটা হলুদ থ্রীপিস পড়ে আছে।সে দরজা খুলে দেখে অন্ধকার গায়ে মেখে তার বিবাহিত বর দাঁড়িয়ে আছে।শ্যামাকে দেখে ফিরোজ মিষ্টি হেসে বললো,
“আসসালামু আলাইকুম হলুদপরী।”
ফিরোজ বিসমিল্লাহ বলে ভেতরে ঢুকে।শ্যামা দুরুদুরু বুকে আশেপাশে তাকিয়ে দরজা আটকে দেয়।
“আপনার একটুও ভ,য় লাগলো না?যদি আব্বা বা ভাইয়া দেখতো।”
ফিরোজ আয়েশ করে খাটে বসে গায়ের শার্ট পেছনে ঠেলে দেয়।
“শশুড়ের ভ,য়ে বউয়ের কাছে আসবো না?তা কি করে হয়।”
শ্যামার লজ্জা লাগছে,লজ্জায় লুকাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু যার জন্য এই লজ্জার সমাহার সে’ই ভাবলেশহীন হয়ে আছে।ইতোমধ্যে সে খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়েছে।তার ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে যেনো অনেকবার এসেছে এই ঘরে।শ্যামা উশখুশ করে বললো,
“হুহ।”
ফিরোজ হেসে বললো,
“আরে!তুমি কি আমাকে লজ্জা পাচ্ছো মধুরানী?”
“আপনাকে লজ্জা পাবো কেনো?লজ্জা পাচ্ছি না।”
ফিরোজ গালে হাত দিয়ে বসে বললো,
“আচ্ছা,সাহসী রমনী।এবার শুরু করেন তো।”
“কি?”
“শাড়ী পড়া।”
“অসম্ভব।”
ফিরোজ উঠে দাঁড়ায়।
“অসম্ভব!তাহলে আমিই পড়াই কি বলো সুন্দরী! ”
শ্যামা পিছিয়ে যায়।ফিরোজ এগুনোর আগেই দরজায় শব্দ হয়।ফাতেমা বেগম শব্দ করে ডাকলেন,
“শ্যামা দরজা খুল।”
শ্যামা আর ফিরোজ স্তব্ধ হয়ে যায়। শ্যামা ফিরোজের হাত ধরে টানতে টানতে ঘরের এইপাশ ওইপাশ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“আল্লাহ!এত্তোবড়ো জামাই কই লুকাবো?”
চলবে…..