Monday, October 6, 2025







মধুমাস পর্ব-১২+১৩

#মধুমাস
#পর্ব_১২
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

আজকে শ্যামার দিনটা আগের থেকে অনেক বেশি রঙ্গিন মনে হচ্ছে।সুখে সুখে ডানা ঝাপটাতে ইচ্ছে করেছে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যে কতোরকম অঙ্গভঙ্গি করেছে তা শ্যামা ছাড়া কেউ জানে না।ঠোঁটের কার্নিশে রিনরিনে সুরে সারাক্ষণ গান বাজে,মুখে মুচকি হাসি লেগেই থাকে।গতকাল রাতের মধুর স্মৃতি মনে হয়ে গা শিরশিরে অনুভূতি হচ্ছে অথচ তাদের মাঝে খারাপ কিছু হয়নি হয়েছে ভাবেব আদান-প্রদান।এই ভাবের আদান প্রদানেই সে হাজারো অনুভূতির বহর লুকিয়ে আছে যা শ্যামাকে ক্ষনে ক্ষনে লজ্জা দিচ্ছে;কাঁপিয়ে দিচ্ছে ফিরোজের পাখির সর্বাঙ্গ।শ্যামা চোখ বন্ধ করে বিছানায় পরে থাকে চোখে ভাসে গতোকালের মূহুর্তেগুলো।

ফিরোজ রয়েসয়ে বলে,
“ভালোবাসি আমার গেঞ্জিচোর।”

শ্যামা বোধহয় এতোটাও অবাক হতোনা যতোটা অবাক হয়েছে ফিরোজের এই স্বীকারোক্তি শুনে।অবাকের পাশাপাশি লজ্জা চেপে ধরে তাকে।এতোদিন যাকে পাগলের মতো একান্ত নিজের করে চেয়েছে তার কাছে থেকে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ডাঙ্গায় উঠা মাছের মতো ছটফট করেছে আজকে সেই কাংখিত মানুষটার মুখ দিয়ে ভালোবাসার শব্দগুলো শোনার পরে লজ্জায় শ্যামার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে;একি সাথে খুশীতে পেখম মেলে মন।কোনো কথা বলার শক্তি হারিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।ফিরোজ আস্তে করে বললো,
“কি হলো?”

শ্যামা নিজেকে ধাতস্থ করে,এখন চুপ থাকার সময় না এখন কথা বলার সময়।সে বুঝে পায় না তার এতো লজ্জা আসলো কই থেকে।শুকনো ঠোক গিলে গলা ভিজাতে চায় তারপর থেমে থেমে বললো,
“সত্যি?”

“আমাকে কি মিথ্যুক মনে হয়?”

“না।”

“এতোদিন তো এটা শোনার জন্যই বেশ কসরত করেছো এখন এই সত্য-মিথ্যা যাচাই করছো?”

শ্যামা মাথা নেড়ে না করে।
“যাচাই করবো কেনো?আমার আসলে বিশ্বাস হচ্ছে না মনে হচ্ছে কল্পনা তাই জিজ্ঞেস করেছি।”

ফিরোজ একটা গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।মাথাটা কাত করে শ্যামাকে দেখে বললো,
“বাড়ি যাও গিয়ে একটা ঘুম দাও।সকালে স্বপ্ন না বাস্তব টের পাবে।”

শ্যামা যায় না।পা গুলো পাথরের মতো ভারী মনে হচ্ছে।শ্যামার কোনো নড়চড় নেই দেখে ফিরোজ আবারো বললো,
“যাও।”

শ্যামার মোটেই বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না তার এখন ভ,য়ংকর সব ইচ্ছে করছে।ভ,য়ংকর ইচ্ছটা হচ্ছে, ফিরোজ;তার সদ্য স্বীকৃতি দেয়া প্রেমিক-পুরুষকে শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সাহসে কুলোচ্ছেনা।সেই বার জড়িয়ে ধরাতে যে থাপ্পড় দিয়েছিলো এখনো মনে হলে তার কান টনটন করে উঠে।তাই সে আর ইচ্ছা পূরণের দিকে গেলো না,যদি এই সুখের মূহুর্তে আবারো কান ব্যাথা বানিয়ে দেয়।এই পুরুষের সাথে বিশ্বাস নেই।সে তার ইচ্ছা নিভিয়ে দেয়,আস্তে করে বললো,
“বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না।”

ফিরোজ সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
“কেউ দেখতে পেলে কি অবস্থা হবে জানো?”

শ্যামা কথা বলেনা।চুপচাপ তাকিয়ে আছে।সে নিজেও জানে রাতে দেখা করা খারাপ মানুষ দেখলে কথা রটাতে দেরী করবে না।ফিরোজ চুপ থেকে বললো,
“বাড়ি যাও,ফোন দেবো।অকে?”

শ্যামা মাথা নেড়ে সায় দেয়।শ্যামা বাড়ির দিকে হেটে গেলে ফিরোজও তার বাড়িতে চলে যায়।তার কেমন যেনো লাগছে,কেমন ফাঁকা ফাঁকা অনুভূতি।শ্যামা চোখ বন্ধ করে শুনতে পেলো কাঠের দরজায় ধুমধাম শব্দ করে ফারিয়া সমানতালে ডেকে যাচ্ছে।ফারিয়া এই সময় কেনো?সে উঠে দরজা খুলে দেয়।ফারিয়া হাসিমুখে ভেতরে এসে শ্যামার মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বললো,
“দিনদুপুরে দরজা লাগিয়ে কি করিস?”

শ্যামার মুখে লাজুক হাসি।সে এতোদিন সবকিছু লুকিয়ে রাখতে পারলেও এখন আর লুকিয়ে রাখতে পারছেনা।তার মুখে লাজুক হাসি দেখে ফারিয়ার ভ্রুকুঞ্চন হয়ে যায়।
“এই তুই প্রেম করিস নাতো?”

শ্যামা ভাবলো ফিরোজকে না জানিয়ে কাউকে বলা ঠিক হবেনা।সে মাথা নেড়ে বললো,
“আরে না না।ভালো লাগছিলো না তাই শুয়ে ছিলাম।”

“আচ্ছা।চল মার্কেটে যাবো।কিছু কিনার আছে।”

শ্যামা ফারিয়ার কথামতো রেডি হয়ে মার্কেটে চলে যায়।
“হঠাৎ মার্কেটে যাচ্ছিস কেনো?”

“দরকার আছে।আগে হোটেলে চল টাকা আনবো।”

শ্যামা ভাবে।যদি ফিরোজ থাকে তো!তার কেনো জানি ফিরোজের সামনে যেতে লজ্জা লাগছে কিন্তু দেখার লোভ সামলাতে পারলো না।ধীর পায়ে ফারিয়ার পিছু পিছু হোটেলে গেলো।ভাগ্য বুঝি আজকে শ্যামার পক্ষে ছিলো,ফিরোজ ক্যাশিয়ারে বসে আছে।অন্যদিনের মতো ফারিয়া কাছে গেলেও শ্যামা যায় না।কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকে আর আড়চোখে ফিরোজকে দেখে।

ফিরোজ মুচকি হাসে।শ্যামার এই রূপ তার কাছে অপরিচিত।শ্যামা সবসময় তার সামনে উড়নচণ্ডী ,বেশামাল কিন্তু আজকে এই রূপ,যেনো লাজুকলতা।খারাপ লাগছে না,মুখের লাজুক আভা তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে কাল রাতেই সে নিজ হাতে ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায় রচনা করে এসেছে।আজকে সারাদিন ইচ্ছে করেই ফোন দেয়নি,কেনো জানি দিতে ইচ্ছে করেনি।সারাক্ষণ কথা বললেই কি ভালোবাসা বাড়ে কিংবা দুজনের অনুভূতির মিলন হয়?তার মনে হয় পাঁচমিনিট কথা বললেও তো হয়,প্রেমের আদান প্রদান।সারাক্ষণ কানে ফোন ধরে রাখার মতো পুতুপুতু প্রেমিক সে না।ফারিয়া মোগলাই আনতে ভেতরে গেলো,ফিরোজ এই ফাঁকে ইশারায় শ্যামাকে কাছে ডাকে।
“এই যে আপু!এদিকে!এদিকে আসেন না।”

ফিরোজের কথা বলার স্টাইলে শ্যামা মুচকি হাসে।দুজন দুজনের দিকে তাকায়।
“কি অবস্থা?স্বপ্ন থেকে বেরিয়েছেন?”

“জ্বী।”

“সত্যি ছিলো? ”

শ্যামা গাল ভরে হাসে।
“জ্বী।”

ফিরোজ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে অপলক শ্যামাকে দেখছে।ফিরোজের এই চোখের দৃষ্টির সাথে শ্যামা অপরিচিত।আগে কখনো ফিরোজ এভাবে তাকায়নি,সবসময় রাগী চোখে তাকিয়ে শ্যামাকে মে,রে ফেলতে চেয়েছে আজকেও মে,রে ফেলছে কিন্তু ভালোবাসার ম,রণ।এমন গভীর চোখের দৃষ্টি সরিয়ে শ্যামা হোটেলের বাহিরে চলে আসে।সাথে সাথেই ফোনটা তীক্ষ্ণ স্বরে চেচিয়ে উঠে।রিসিভ করার পরে ফিরোজ বললো,
“চলে গেলে কেনো?”

“আপনি…. ”

শ্যামা সবটা কথা শেষ করতে পারে না তার আগে ফিরোজ বললো,
“আমি!আমি কি?”

“এভাবে তাকাচ্ছিলেন কেনো?আমাকে কি আজকেই প্রথম দেখলেন?”

“প্রেমিকা হিসেবে আজকেই প্রথম দেখা।”

“হুম।”

ফিরোজ কেমন ঘোর লাগা গলায় বললো,
“বলেছিলাম না শ্যামা আমি ভ,য়ংকর প্রেমিক হবো।”

শ্যামা হেসে বললো,
“আমি এমনই চাই।শুধু আমি কেনো সব মেয়েরই এক চাহিদা প্রেমিক ভ,য়ংকর রকম ভালোবাসুক।”

“তাই নাকি?আচ্ছা দেখা যাক সামনে কি হয়।”

“আচ্ছা।”

শ্যামা চুপ করে থাকে।ফিরোজ কিছু বলছেনা দেখে সে পিছু ফিরে দেখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।সে ফিসফিস করে বললো,
“লাভিউ।”

ফিরোজ হাসে।মিষ্টি করে হেসে বললো,
“আচ্ছা।”

ফিরোজের হাসিতে শ্যামা বরাবরের মতো মুগ্ধ।কিন্তু আচ্ছা তো তার উত্তর না।মনটা অন্যকিছু শোনার জন্য মুখিয়ে আছে।সে আবার বললো,
“আই লাভ ইউ।”

“আচ্ছা।”

“এটার উত্তর এটা না তো।”

“কোনটা?”

“আপনি জানেন না?”

“না তুমি শিখিয়ে দেবে?”

শ্যামা বুঝতে পারে ফিরোজ দুষ্টুমি করছে।সে।রাগ দেখিয়ে বললো,
“আচ্ছা বলতে হবে না।”

ফিরোজ বললো,
“আরে রাগ করলে নাকি?কিসের উত্তর দেবো বলো।”

“লাভিউউ। ”

ফিরোজ কেমনতর কন্ঠে জানো বললো,
“লাভিউ টু পাখি।”

এমন মায়াময় কণ্ঠ শুনে নিজেকে ঠিক রাখা যায়?শ্যামার ইচ্ছে হলো ম,রে যেতে
।সুখে সুখে দূর আকাশে উড়ে যেতে।ইশ ভালোবাসায় এতো শান্তি কেনো!ফিরোজটা এতো আদুরে কেনো?শ্যামার বুকটা এতো কাঁপছে কেনো?প্রেমে পড়লে কি সবারই এমন হয়?ফারিয়া এসে বললো,
“দোস্ত আগুন গরম এনেছি খেতে যা লাগবে না,খেলে শেষ হয়ে যাবি।”

শ্যামা পিছনে ফিরে ফিরোজকে আরেকবার দেখে নেয়।হাটতে হাটতে মনে মনে বলে,
‘তোর ভাইয়ের প্রেমের আগুনেই তো আমি শেষ মোগলাই আর কি শেষ করবে?’

চলবে…..

#মধুমাস
#পর্ব_১৩
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

শান্তা আর রিপনের বিয়ে ঘরোয়া ভাবেই হয়েছে।স্বপন ইসলাম ছেলের জন্য পছন্দমতো পাত্রী খুঁজে এনেছেন।বাবার পছন্দের পাত্রী দেখে রিপনেরও খারাপ লাগেনি।তার পছন্দ হওয়াতে বিয়ে হয়েছে।স্বপন ইসলাম আর ফাতেমা বেগম ভেবেছিলেন তাদের পছন্দ করা পাত্রী মান্যগণ্য করবে,আজকালকাল মেয়েরা শশুড় শাশুড়ীদের একদম সম্মান দিতে চায় না।প্রথম বছর খানেক শান্তা নদীর মতো শান্ত থাকলেও আস্তে ধীরে সবাই এই শান্ত নদীর ঢেউ বুঝতে পারলো।শান্তা কখনো তর্ক করেনা কিন্তু কথায় আছেনা গাছের উপর দিয়ে পানি ঢালি নিচে দিয়ে গাছ কাটি শান্তা ওইরকম।শশুড় শাশুড়ির সাথে কখনো তর্ক না করলেও রিপনের কাছে উল্টাপাল্টা লাগিয়ে দেয়,শ্যামার সাথে উপরে উপরে ভালো হলেও মন থেকে একটুও পছন্দ করে না,শ্যামাকে বিয়ে দিয়ে বাড়ি খালি করতে পারলেই যেনো শান্তি।শান্তার এই শান্ত আচরণের ফলস্বরূপ রিপন আজকাল মা বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে,শ্যামাকে কথায় কথায় তেড়ে মা,রতে আসে গালমন্দ করে।ফাতেমা বেগম করুন চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।
শান্তা তার রুম থেকে বেরিয়ে শ্যামার রুমের দিকে তাকায়।শ্যামা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গুনগুনিয়ে গান গাইছে আর কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।গত কিছুদিন ধরে শ্যামা যেনো একটু বেশীই খুশী,ঠোঁটের কোনের হাসি শান্তার নজর এড়ায়নি।কি নিয়ে এতো খুশী!শান্তা সন্ধানী চোখে এগিয়ে যায়।
“ননদীনি….”

শ্যামার গান বন্ধ হয়ে যায়,আড়চোখে তার ভাবীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।সুখীভাবটা কোনোভাবেই মুখ থেকে সরছে না সে চায়না শান্তা মুখের এই অভিব্যক্তি জানুক।সে শান্তাকে ভালো করেই চিনে,এর মুখে মধু অন্তরে বি,ষ।শান্তা বললো,
“এতো সাজো কেনো সুন্দরী?”

শ্যামা মুখে হাসি ধরে রাখে।মাথা দুলিয়ে অভিনয় করে বললো,
“কলেজ যাচ্ছি না!”

“তা বলো।আমি ভাবলাম কোনো প্রেমিক পুরুষের সাথে দেখা করতে যাচ্ছো কিনা।”

শ্যামা মনে মনে খুব চমকায় কিন্তু মুখের ভাব রাখে ভাবলেশহীন।
“দেখা করতে গেলে তুমি জানতে না?”

শান্তা বিছানায় বসে শ্যামার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে শ্যামার মুখের ভাব বুঝতে চাইছে।কিন্তু কিছুই বুঝতে না পেরে হতাশ হয়ে বললো,
“আমি জানবো!আমাকে কিছু বলো নাকি তুমি?”

“প্রেম করলে তো বলবো।”

শান্তা ঠোঁট বাকিয়ে বললো,
“প্রেম করোনা!বললেই হলো? বিশ্বাস করিনা।”

“আসলেই।”

“আমাকেই তো বলবে,আমিই তোমার সুপারিশ করবো।আমাকে ছাড়া আগাতে পারবে নাকি?হুম!”

শ্যামা শান্তাকে আসস্থ করে বললো,
“অবশ্যই বলবো।”

শ্যামা কলেজে চলে গেলেও শান্তা বসা থেকে উঠে না।তার মন বলছে শ্যামা প্রেম করে।এই বয়সটা সেও পার করে এসেছে এমন উতালপাতাল করা মানেই কাহীনি আছে।শান্তার ইচ্ছে হলো রিপনকে বলে দেয় তারপর ইচ্ছামতো একটা মা,র দিক।ননদ টাকে তার কালসা,প মনে হয়,অসহ্য।

শ্যামা রাস্তায় এসে দাঁড়ায়।আজকে ফারিয়ার আগেই সে চলে এসেছে।ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে ফারিয়াকে ফোন দেয়।ফারিয়া জানায় সে নানাবাড়ি থেকে কলেজে যাবে অগ্যতা সে একা একাই কলেজের দিকে হাটে।হাটার এক পর্যায়ে রাব্বি এসে যোগ দেয়।শ্যামা হাসিমুখে রাব্বির সাথে কথা বলছে অথচ রাব্বি কেমন নিশ্চুপ।উশখুশ করছে।শ্যামা প্রথম থেকেই রাব্বিকে লক্ষ করছে কিন্তু মুখে কিছু বলছে না।হঠাৎ রাব্বি শ্যামার পথ আটকে দাঁড়ায় শ্যামা জিজ্ঞাসু চোখে তাকালে রাব্বি হড়বড় করে বললো,
“ভালোবাসি শ্যামা।আজকে একা পেয়ে সত্যিই নিজের অনুভূতি আটকাতে পারছি না।প্লিজ বন্ধু হিসেবে না দেখে জীবনসঙ্গী হিসেবে দেখো।প্লিজ।”

শ্যামা জানতো রাব্বি তাকে পছন্দ করে কিন্তু এভাবে বলার সাহস পাবে ভাবেনি।কিন্তু সে কিছু বলছে না তার মুখে মুচকি হাসি।হি হি করে হাসছেনা এটাই তো অনেক।হাসার মূল কারণ হলো ফিরোজ।রাব্বির থেকে হাত দুই-এক দূরে রক্তলাল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে,রাব্বির বলা সবগুলো কথাই ভালোমতো ফিরোজের কর্ণগোচর হয়েছে।শ্যামাকে এভাবে হাসতে দেখে রাব্বি অবাক হয়।
“এভাবে হাসছো কেনো?আমার জীবনসঙ্গী হবে?জবাব দাও।”

শ্যামা কিছু বলার আগে ফিরোজ রাব্বির কাধে হাত রাখে।গম্ভীর গলায় বললো,
“জবাবটা আমি দেই?”

এমন রোমান্টিক মূহুর্তে এমন দামড়া ছেলের উপস্থিতি টের পেয়ে রাব্বি বিরক্ত হয়।ভ্রু কুচকে ফিরোজের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করে। কাধের অংশে হাতের চাপ তীব্র হচ্ছে সে সরে দাঁড়ায়।গম্ভীরমুখো ফিরোজকে এমন রক্তলাল চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে কেমন ভয় লাগে।শ্যামা তো উনার বোন না তাহলে এই বাধা প্রদানের মানে কি?সে বললো,
“ফিরোজ ভাই?”

ফিরোজ কঠিন গলায় কেঁটে কেঁটে বললো,
“কি রাব্বি!পড়ালেখা বাদ দিয়ে রাস্তাঘাটে মেয়েদের বিরক্ত করা শুরু করলে নাকি?”

“না ভাই পড়ার জন্য কলেজেই যাচ্ছিলাম।”

“শ্যামাকে এসব বললে কেনো?এখন এসবের সময়?”

“শ্যামাও আমাকে পছন্দ করে তাই.”

ফিরোজ সোজা রাগী চোখে শ্যামার দিকে তাকায়।এই মেয়েটা ভারী ধুরন্ধর।ভালোবাসি বলার পর থেকে কেমন নাকে দড়ি লাগিয়ে ঘুরানো টাইপ ভাব নেয়।আর এখন কিনা রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রপোজ খাওয়া হচ্ছে?দেখো!কেমন শয়তানের মতো হাসে।সে চোখ পাকিয়ে বড়ো বড়ো করে তাকায়।
“কি শ্যামা!পছন্দ করো?”

শ্যামার মুখে তখনো মিটিমিটি হাসি।ফিরোজের এই রাগী চেহারা তার কাছে ভালো লাগছে কিন্তু এই প্রশ্নের জবাব উল্টাপাল্টা দিলেই সমস্যা হবে যা শ্যামা চায় না।ফিরোজ তার কাছে কোহিনুরের মতো দামী যা সে অনেক সাধনার পরে নিজের আয়ত্বে আনতে পেরেছে সুতরাং এখন এসব হেলাফেলায় ফিরোজের মনক্ষুন্ন করা যাবে না।শ্যামা মুখের ভাব সিরিয়াস করে মাথা নেড়ে বললো,
“না না আমি পছন্দ টছন্দ করি না।ও মিথ্যা বলছে।”

ফিরোজ রাব্বির দিকে তাকিয়ে বললো,
“শুনলে তো?খালি খালি মেয়েদের বিরক্ত করা ছেড়ে দাও।যাও কলেজে যাও।”

রাব্বি দুঃখি চোখে শ্যামার দিকে তাকায়।তারপর আস্তে করে কলেজের দিকে চলে যায়।রাব্বি চলে যাওয়ার পরে ফিরোজ শ্যামার দিকে তাকায়।কিছু না বলে হনহনিয়ে চলে যায়।শ্যামা কয়েকবার পিছু ডাকে কিন্তু তাকায় না।ফোন দিলে ফিরোজ ফোন কেটে কাটাকাটা অক্ষরে লেখে
‘ফোন দেবে না।’

————–

ফিরোজ তার জীবনে আদর ভালোবাসা কমই পেয়েছে।সারাজীবন তুচ্ছতাচ্ছিল্য পেয়েই জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে।সবাই যখন এমন করতো তখন ফিরোজ বুঝে গিয়েছিলো যে তার আর ভালোবাসা পাওয়া হবে না;সে চুপ হয়ে গিয়েছিলো।মা না থাকলে যেনো কারো আদর পাওয়া উচিত না।ফিরোজ এভাবেই জীবনের ত্রিশটা বছর পার করে দিয়েছে।হঠাৎ করে শ্যামার এমন পাগলামি,মন কেমন করা ভালোবাসা তার কেমন দম বন্ধ লাগে।এতো পাগল পাগল উড়ো আদর যে তার কামনারও বাহিরে ছিলো।জন্ম থেকে অবহেলা পেয়ে আসাই ফিরোজের অভ্যাস হঠাৎ করে শ্যামা এই অভ্যাস পরিবর্তন করে দিচ্ছে।এই যে এখন বাজে রাত দুইটা শ্যামা অনবরত ফোন ম্যাসেজ দিয়েই যাচ্ছে।কেনো এতো গুরুত্ব দিতে হবে?এতো ভালোবাসতে হবে কেনো?মেয়েটা হয়তো ভাবছে;সকালের ঘটনাটাকে ভিত্তি করেই সে ফোন ধরছেনা কিন্তু আসল কারণ হচ্ছে সে ব্যস্ত ছিলো। সে বিবস চোখে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করে।ফোন রিসিভ করেই বালিকার কন্ঠে কান্নার শব্দ শুনতে পায়।ফিরোজ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।মেয়েটা এমন কেনো?কি চায় ও?অন্যসব প্রেমিকদের মতো সারাদিন ফোন দেয় না বলেই এই কান্না?নাকি রাব্বির সাথে দেখে কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়েছে বলেই এই কান্না?সে কিছুক্ষণ পরে বললো,
“তুমি কান্না ছাড়া আর কি পারো শ্যামা?”

শ্যামা সেই সন্ধ্যা থেকে ফিরোজকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে অথচ লোকটা ফোন ধরার কোনো নাম গন্ধ নিচ্ছে না।সে আসলেই রাব্বিকে পছন্দ করেনা মানুষের মনে কি চলে তা কি কেউ জানতে পারে?এর অপরাধ তাকে দেয়া হচ্ছে কেনো?ফিরোজ কেমন জানো ফোন দেয় না,অন্য সবার মতো আদুরে করে ডাকে না।সবমিলিয়ে শ্যামার ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না আসে,তার অবুজ মন বেশী বেশী ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ছটফট করে।ফিরোজের গলার স্বর শুনেই শান্তি লাগে।নাক টেনে নিয়ে বললো,
“কতোগুলো ফোন দিলাম।”

ফিরোজ আস্তে করে বললো,
“ব্যস্ত ছিলাম।”

শ্যামা মরিয়া হয়ে জানালো,
“আমি সত্যিই রাব্বির ব্যাপারে কিছুই জানতাম না।আমাকে বিশ্বাস করেন প্লিজ।”

ফিরোজ ছোট করে বললো,
“করি।”

শ্যামা কথা বলেনা চুপচাপ কাঁদে।এই ছেলেটাকে ভালোবেসে তার মন ভরেনা,একটুও না।
“শোনেন।”

“বলো।”

“আপনি আমাকে ফোন দেননা কেনো?”

“কই ফোন দেইনা?এই যে এখন ফোন দিলাম কথা হচ্ছে না?”

“তা তো আমি ফোন দিলাম আপনি না।”

“তাতে কি?একজন দিলেই হলো।”

“না।”

“কি না?”

“আমার মন ভরেনা তো।”

“কিসে?”

“আপনাকে ভালোবেসে।”

ফিরোজ চোখ বন্ধ করে হাসে।
“কিভাবে ভালোবাসলে মন ভরবে?”

শ্যামা ফিরোজের হাসির শব্দ শুনে।
“দেখা হলে বলবো।”

শ্যামা থেমে বললো,
“আমাকে একটু আদর করে ডাকুন না।”

ফিরোজ জানে শ্যামা জেদী;নিজের জিনিস জোড় করে আদায় করে নিতে পারে।সে আসলেই প্রেমিক হিসেবে আদরমাখা সুরে ডাকে না অথচ মেয়েরা এমন চায়।
“কি বলবো?”

“যা ইচ্ছা।”

“শ্যামা পাখি আমার বুকে আসবে?”

শ্যামা খিলখিল করে হেসে বললো,
“ছি ছি!প্রথম ডাকেই কাছে ডাকার ধান্ধা?”

শ্যামার কথা শুনে ফিরোজ হাসে।
“কি করবো?ত্রিশ বছরের পুরুষের থেকে আর কি শুনবে?আমার তো বয়স’টাই কাছে ডাকার।ওই টিনেজারের মতো প্রেম আমার দ্বারা হবে না।”

শ্যামা আস্তে করে বললো,
“আবার ডাকেন তো।”

এই ছোট মেয়েটা তাকে আয়ত্বে নিয়ে যাচ্ছে,সে শ্যামার কথা কেমন বশীকরণের মতো শুনে।তার বয়সের সাথে এসব আদুরে ডাক কেমন বেমানান কিন্তু ফিরোজ চোখ বন্ধ করে প্রেমিকাকে জিতিয়ে দিতে চায়।
“জান;”

ব্যস!এইটুকু ডাকেই শ্যামার সুখে সুখে উড়ে যেতে ইচ্ছে করলো।অনেকের কাছে এই ছোট ডাকটা সামান্য হলেও তার কাছে আকাশের চাঁদের মতো দামী,তার বয়সটাই যে এমন,আবেগী।সে আবেশে চোখ বুজে ছোট গলায় বললো,
“হুম।”

ফিরোজ জানে শ্যামা তার জন্য কতোটা পাগল,কতোটা মরিয়া।শ্যামাকে এই সামান্য কথাতেই যদি সুখে সুখী করা যায় তাহলে সে রাজী।গলায় মধু মিশিয়ে মধুরাজা ঝংকার তুলে ডাকে,
“আমার পাখি কি জানে আমি আমার চড়ুই পাখিকে কত্তো ভালোবাসি?”

শ্যামা ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয়।কান্নাকান্না গলায় বললো,
“জানি তো।”

এইটুকু সুখে কেউ কেঁদে দিতে পারে? শ্যামাকে যদি ফিরোজ নিজের সর্বস্ব উজার করে ভালোবাসে তাহলে?মেয়েটা কি সুখে সুখে স্ট্রো”ক করে ফেলবে নাকি?সে অবাক হয়ে বললো,
“কাঁদো কেনো?”

শ্যামা সন্তপর্ণে ফিরোজের এই প্রশ্ন এড়িয়ে যায়।সে ভিষণ আদুরে গলায় বলে,
“আপনি আমার রাজা;মধুরাজা।”

এই বাচ্চা মেয়েটার কথাগুলোতে এতো সুখ!শান্তি।ফিরোজ বললো,
“আচ্ছা।”

“আমাকে জলদি বিয়ে করে নিন তো।আপনাকে ছাড়া থাকতে পারছি না।মধুরাজা ছাড়া মধুরানীর ঘুম আসেনা।”

ফিরোজ হা হা করে হেসে বললো,
“মধুরাজার কাছে আসলে আপনার নির্ঘুম অসুখ হবে মধুরানী।”

কেউ একজন খুব গোপনে শ্যামার দরজার পাশ থেকে সরে যায়।ওদিকে শ্যামা ভাসে,ভিষণ ঝড় উঠা সাগরে হাবুডুবু খেয়ে ভাসে।ইশ এভাবে যদি আজীবন ভাসতে পারতো!

চলবে…….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ